নিশ্বাস পর্ব ১৬

#নিশ্বাস
#পর্ব_১৬
#লেখক_Mohammad_Asad

ছাদিক এবং নিশাত দুজনে একটা বাসায় উঠেছে, বেশ ভালোই আছে দুজনে। তবে আম্মু একটুও ভালো নেই। ছাদিকের কথা অনেক মনে পড়ছে আম্মুর।
“ছেলেটা যখন ছোট ছিলো আমার কাছে আম্মু আম্মু করে আসতো সবসময়। আজ বড় হয়েছে, সবকিছু বুঝতে শিখেছে। বিয়ে করেছে। অনেক বড় হয়ে গেছে। তাছাড়া নিশাত মেয়েটাও তো খারাপ না। কাজের মেয়ে বলে কতই না অপমান করেছি নিশাতকে, তবুও একটুও প্রতিবাদ করেনি নিশাত। এরকম লক্ষি একটা মেয়েকে কেন বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলাম আমি? আমি শুধু শুধু ছাদিককে জোর করলাম।
.
.
এদিকে ছাদিক অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, নিশাত পার্শেই দাঁড়িয়ে আছে।
-এই যে মহারানী আমার টাইটা লাগিয়ে দেও দেখি।
-উঁহু ঠিক আছে,

নিশাত মুখটা গোমড়া করে ছাদিকের শার্টের টাইটা ঠিক করে দেয়। ছাদিক নিশাতের কোমড় জরীয়ে ধরে, মিষ্টি হেঁসে বলে।
-আমি রাতে ফিরবো, তুমি চুপটি করে রুমের মধ্যে বসে থাকবে কেমন! কোথায় যাবে না। ভয় করলে আমাকে ফোন করবে।
-ইসস আপনি না, আমার ভয় করবে কেন?
-তোমার ভয় করেনা তাই না,
-হুঁ
-আমার বউটা দেখছি অনেক সাহসী।
-জ্বি হ্যাঁ আপনার বউ অনেক সাহসী এবার অফিসে যান।
-উমমমমমম্মা “নিশাতের ঠোঁটে চুমু দেয় ছাদিক।

ছাদিক রুম থেকে বের হয়ে যাবে, তখন নিশাত বলে।
-আপনি না অনেক পাজি একটা ছেলে।

ছাদিক মিষ্টি হেঁসে অফিসে চলে যায়। ছাদিক অফিসে গেলে নিশাত রুমের মধ্যে একা বসে থাকে।
আজ দিয়ে ১মাস হচ্ছে নিজেদের বাড়ি থেকে চলে এসেছে ছাদিক এবং নিশাত। মা-বাবা একটি বারের জন্য খোঁজ নেয়নি। নিবে বা কি করে ছাদিক অভিমান করে আম্মুর সঙ্গে কথা বলতেও লজ্জা করে এখন। তবে মনটা কেন যানি মা-বাবার কথা বলে, কতদিন ধরে দেখিনা তাদের মুখ।
.
.
কয়দিন আগে রাইসুলের সঙ্গে ছাদিকের দেখা হয়েছিল। রাইসুল ভাইয়া বলেছিলো।
-ছাদিক,
“পিছন থেকে যখন ঘাঁড়ে হাত দেয় রাইসুল তখন অনেকটায় ঘাঁবড়ে যায় ছাদিক। পিছনে তাকিয়ে দেখে রাইসুল ভাইয়া দাঁড়িয়ে।
-ভাইয়া তুমি,
-হ্যাঁ আমি, তুই কেমন আছিস? আর নিশাত কেমন আছে?
-জ্বি ভাইয়া আমরা দুজনে অনেক ভালো আছি। আম্মু কেমন আছে?
-এইতো আম্মু ভালোই আছে।
-আর আব্বু,
-আব্বু তো সবসময় বলে, ছাদিক এবং নিশাত দুজনকে ফিরিয়ে আনতে। তবে আম্মুর জেদ যানিস তো।
-হুম
-তবে একটা মজার ব্যাপার কি যানিস?
-মজার ব্যাপার, কি ভাইয়া?
“রাইসুর মুচকি হেঁসে বলে”
-আম্মু তোর ছবি নিয়ে কান্না করে।
-মানে কি ভাইয়া,
-হ্যাঁ রে সত্যি বলছি, তাহলে শোন,
‘কালকে আমি আম্মুর রুমে যখন গিয়েছিলাম তখন দেখলাম আম্মু তোর ছবি নিয়ে কান্না করছে। আমাকে দেখে আবার ছবিটা লুকিয়ে রাখে।
-তারপর কি হয়েছে ভাইয়া?
-তারপর আর কি আম্মু অনেক অযুহাত দিতে থাকে।
“ছাদিক মুচকি হেঁসে উঠে রাইসুল ভাইয়ার কথা শুনে। তাহলে আম্মু উপরে আগুন, ভিতরে ঠিক সেই আমার আম্মু,। রাইসুল ভাইয়া বলে,
-আর কয়দিন চুপটি করে থাক। আম্মুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবি না। দেখবি আম্মু সব অভিমান ভেঙে তোকে নিয়ে যাবে বাড়িতে!
-হ্যাঁ ভাইয়া তাই যেন হয়, আচ্ছা ভাইয়া ভাবি কেমন আছে?
-তোর ভাবি তো ভালোই আছে। তবে, সবসময় নিশাতের কথা বলে।
.
.
এদিক রুমের মধ্যে বসে আছে নিশাত। একা একা রুমে বসে থাকতে একদম ভালো লাগছে না নিশাতের। দরজায় কে যেন টুকা দিচ্ছে। নিশাত দরজা খুলে দেখে বাড়ির মালিকের ছেলে।
-আপনি এইসময়!
-হ্যাঁ
-কি জন্য এসেছেন?
-ভাবি আজ দিয়ে ১মাস হয়েছে আমাদের বাসায় আছেন আপনারা ভাড়াটা নিতে এসেছি।
-আমার কাছে তো ভাড়ার টাকাটা নেই। ছাদিক আসলে টাকাটা দিয়ে দিবে।
-কি বলেন ভাবি? আব্বু বললো এখনি ভাড়াটা নিয়ে যেতে!
-আমার থেকে তো টাকা নেই, রাতে ফিরবে ছাদিক, তখন নাহয় টাকাটা নিয়ে নিবেন।

বাড়ির মালিকের ছেলে বাড়ি ভাড়ার টাকা চেয়ে বসে। তবে সত্যি বলতে নিশাতের কাছে ভাড়ার টাকাটা নেই। তাই বলে নিশাত, “ছাদিক আসলে ভাড়ার টাকাটা দিয়ে দিবে। বাড়ির মালিকের ছেলে নিশাতের সঙ্গে খারাপ আচ্যারণ করে তার বদলে উপহার পায় ২টা থাপ্পড়।

বাড়ির মালিকের ছেলে রিয়াদের গালে ২টা থাপ্পড় দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয় নিশাত। দরজাটা ভিতর থেকে লেগে দিয়ে রুমে বসে থাকে নিশাত। দরজাটা বারবার ধাক্কা দিতে থাকে রিয়াদ অনেকটাই রেগে।

তখন বাজে বেলা ১১টা নিশাত ছাদিকের ফোনে কল করে।
-আসসালামু আলাইকুম,
-উলাইকুম আস্সালাম, কি হয়েছে নিশাত এই অসময়ে ফোন দিয়েছো কেন?
“নিশাত হুঁহুঁ করে কান্না করতে থাকে ছাদিক অনেকটাই চিন্তাত হয়ে বলে”
-কি হয়েছে নিশাত, কোন সমস্যা?
-“নিশ্চুপ”
-কান্না করছো কেন?
-আমার সঙ্গে বাড়ির মালিকের ছেলে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছে।
-মানে?
-হুঁ, আমার শরীলে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে পযন্তু। তবে থাপ্পড় দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছি।
-ভালো করেছো। তুমি চুপটি করে রুমে বসে থাকো রুম থেকে বের হবে না একদম। রাতে বাসায় যাবার পর দেখাচ্ছি।
“নিশাত হুঁহুঁ করে কান্না করে বলে”
-এখন একটু বাসায় আসতে পারবে?
-এইসময়!
-হুঁ
-আচ্ছা দেখছি।
-আসো প্লিজ, ছেলেটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-আচ্ছা যাচ্ছি তুমি দরজা খুলো না।
.
.
ছাদিক অফিস থেকে ফিরে দেখে দরজার সামনে কেউ নেই! দরজায় টুকা দিতে থাকলে নিশাত ভয় পেয়ে যায়। আরেকটু আগে দরজায় টুকা দিতে দিতে চলে গেছে রিয়াদ, আবার এসেছে হয়তো। নিশাত চুপটি করে বসে থাকে রুমের মধ্যে।

ছাদিক নিশাতের ফোনে একটা মেসেজ করে। নিশাতের ফোনটা টেবিলে ছিলো মেসেজের শব্দ পেয়ে ফোনটা হাতে নেয়, দেখে ছাদিক মেসেজ করেছে।
-নিশাত আমি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি দরজাটা খুলে দেও প্লিজ।

নিশাত দৌড়ে দরজাটা খুলে দেয়, দরজাটা খুলে দিয়ে ছেলেটাকে জরীয়ে ধরে দুইহাত দিয়ে। ছাদিক নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক জল টলমল করছে।
-আরে আরে তুমি কান্না করছো কেন?
“নিশাত কিছু বলছে না শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।”

ছাদিক রুমের দরজাটা ভিতর থেকে লেগে দেয়। নিশাতের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনতে থাকে।

*নিশাত বাবা-মাকে হারিয়ে ছাদিকের বাড়িতে এসেছিলো। বাইরের চিত্রটা দেখার সাহস হয়ে উঠেনি কখনো। জানালা দিয়ে যা দেখেছে তাই ছিলো আবদ্ধ। আম্মু, অথবা ভাবি কেউ গালি দিলে, মুখ টেপে কান্না করতো মেয়েটা। নিশাতের চোখের জল দেখলে কেউ কষ্ট পেতো না। এখন কষ্ট পায় কেউ একজন অনেক কষ্ট পায়। ছাদিকের আব্বু নিশাত মেয়েটাকে প্রথম থাকেই ভালোবাসতো। আব্বু সবসময় নিজের মেয়ে মনে করতো নিশাতকে।

নিশাতের চোখে জল দেখে ছাদিকের কেন যানি বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। নিশাতের চোখের জল মুছে দেয় ছাদিক।
-নিশাত
-হুঁ
-আজকে কি রান্না করেছো?
-আজকে তো রান্না করি নাই।
-কেন, কেন?
-আমার ভয় করছিলো বাইরে যেতে। ছেলেটা যদি আবার খারাপ কাজ করতে চায়।
-দুপুর ১টা বেজেছে, আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি তুমি রুমে বসে থাকো আচ্ছা।
-আচ্ছা,
-বিকেলে ছেলেটাকে শাস্তি দিবো কেমন!
-আচ্ছা,
-একটা কাজ করো, তুমি গোসল করে এসে রুমে নামাজ পড়ে নেও, আমি এই যাচ্ছি আর এই আসচ্ছি।
-আচ্ছা,

“চলবে?”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here