#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -১০
ঘরজুড়ে বিরাজ করছে প্রখর নিস্তব্ধতা। ইনায়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
সকাল সাতটার দিকে ইনায়ার চাচা এসেই দেখে মেইন ডোর খোলা। সাথে সাথেই মনে ভয়ের আভাস জাগলো। বুকটা মোচর দিয়ে ওঠে। বাড়িতে তার স্ত্রী, কন্যা আর ভাতিজি। খারাপ কিছু হয়নি তো! বাড়ির ভেতরে এসেই নিজের ঘরে ঢুকে দেখে তার আর কন্যা গভীর নিদ্রায় বিভোর। অন্তরে হালকা স্বস্তির উপস্থিতি টের পেয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।
স্ত্রীকে জাগাতেই সে চোখ কচলে রাগী চোখে তার স্বামীর দিকে তাকালো। কয়েকদিন ধরে না বলে কোথায় কোথায় যেন চলে যায়। কিছু জিজ্ঞেস করলে এমন ভাব করে যেন ও শুধু শুধু এতো টেনশন নিচ্ছে। দুটো মেয়েকে চোখে চোখে রাখা এতই সোজা নাকি! ইনায়ার জ্বরটাও কাল রাতে বেড়ে গেছিলো। কথা হয়েছিল সকালে একবার ডাক্তার দেখাবে। মেয়েগুলো একটাও কথা শুনবে না। দুটোই বদের হাড্ডি! কতো করে বললো কালই একবার ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু মেয়ের এককথা, তার বাবা না আসলে ডাক্তার দেখাবে না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে আজকের জন্য রাজি করিয়েছে। ইনায়ার কিছু হলে নিজের ভাসুরকে কি জবাব দিত!
ইনায়ার ঘরে গিয়ে দেখে ঘর সম্পূর্ণ খালি। বাথরুমেও নেই। এইতো রাতেও ইনায়ার সাথে কথা হলো। কয়েকদিন ধরেই বেশ দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন মনে হচ্ছিল ওকে। চঞ্চল মেয়েটা হঠাৎ করেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেল। ইনায়ার চাচী মনে করেছিল হয়তো জ্বরের জন্য এমন হচ্ছে।
ইনায়ার ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞেস করেও কোন খবর পাওয়া যায়নি। এক রাতের মধ্যেই কোথায় গেল ও!
পুলিশ কমপ্লেন করার সিদ্ধান্ত নিল সবাই। প্রতিবেশিদের কেউ কেউ বিষয়টা টের পেয়ে একেকজন নানান কথা উঠাচ্ছে। আরিফা এতক্ষণ চুপচাপ ওর বাবা মাকে ছুটোছুটি করতে দেখলেও হঠাৎ করে ফুপিয়ে বললো,
-“আমি ঐ গাড়িটায় কাঁদা ছুড়েছি দেখে আপুকে নিয়ে গেছে তাই না!”
আরিফার কথায় একটু নড়েচড়ে বসলো ইনায়ার চাচা। আরিফার মা আরিফার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
-“কোন গাড়ির কথা বলছো তুমি?”
__________________________________
হুঁশ ফিরতেই কারো কথা বলার আওয়াজ পেল ইনায়া। প্রচন্ড মাথাব্যাথাকে উপেক্ষা করেই পিটপিট করে চোখ খুললো। চাইলেও নড়তে পারছে না। চেয়ারে বাধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে আঁতকে উঠলো ইনায়া। ও তো ওর বাবার সাথে দেখা করতে বেরিয়েছিল৷ তারপরের কোন স্মৃতিই যেন মস্তিষ্ক হতে ওর কাছে ধরা দিচ্ছে না। সাইডে ভাঙা কাঠের জানালার ছিদ্র ভেদ করে কিঞ্চিত সূর্যের কিরণ ওর সামনে এসে পড়েছে। দরজার দিকে কারও ছায়া দেখা যাচ্ছে। মুখ খুলে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে মুখটা বাঁধা। কথা বলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা কেমন গোঙানির মতো আওয়াজে পরিণত হচ্ছে।
অসাড় হয়ে আছে পুরো শরীর। হাত পা এতটাই শক্ত করে বাঁধা যে দেহে রক্ত সঞ্চালনও যেন ধীর হয়ে আসছে।
ইনায়ার গোঙানির আওয়াজ বাড়তেই ছায়াটা হঠাৎ করে যেন থমকে গেল। বাইরে যার সাথেই কথা বলছিল তা থামিয়ে দিল।
কালো মাস্ক পরিহিত এক ব্যাক্তি রুমে প্রবেশ করতেই ইনায়া বুঝতে পারলো এতক্ষণ এই লোকের ছায়াই দরজার দিকে দেখা যাচ্ছিলো। লোকটাকে এগিয়ে আসতে দেখে হঠাৎ নিজেকে গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে ইনায়া। ফলে চেয়ার সহ উল্টে নিচে পড়লো ও। আচমকা এভাবে পড়ে যাওয়ায় হাতে ভিষণ চোট লেগেছে। মাথায় অস্বাভাবিক জ্বালা হচ্ছে। লোকটা শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে ইনায়ার সমস্ত গতিবিধি লক্ষ করছে। চেয়ার সহ নিচে পরে থাকা মানবীকে দেখে লোকটার চোখে যেন কোন প্রতিক্রিয়াই নেই।এক দৃষ্টিতে সামনে ছটফট করতে থাকা ইনায়ার চোখে তাকিয়ে আছে। এভাবে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলে লোকটা এক টানে চেয়ার দাড় করায়। ইনায়ার মুখ থেকে কাপড়টা খুলে ওর গাল শক্ত করে চেপে ধরে প্রশ্ন করে,
-“হাবিব কোথায়? তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো না!”
-“আ…আমি জানি না!”
সাথে সাথেই নিজের গালে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো ইনায়া। একটা চড় মেরেও যেন লোকটা ক্ষান্ত হয়নি। আঘাত প্রাপ্ত গালে আরও জোরে চেপে ধরলো। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো ইনায়া।
-“ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম। আই হেট দ্যাট! খুবই সিম্পল একটা প্রশ্ন ছিল। উত্তর দিলেই অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হবে তোমাকে…হয়তো!”
শেষের বাক্যতা বলার সময় কন্ঠে কেন যেন খারাপ কোন ইঙ্গিত পাচ্ছে ইনায়া। লোকটা ওর বাবাকে কেন খুঁজবে! ইনায়া তো ওর বাবার সাথে দেখাও করতে পারেনি। ও নিজেও জানে না ওর বাবা কোথায়। আর জানলেও এই হিংস্র লোককে কখনও বলবে না।
-“আমি সত্যি কিছু জানি না!”
অনেক কষ্টে কথাটা উচ্চারণ করতেই লোকটা ওকে ছেড়ে উন্মাদের মতো উচ্চশব্দে হাসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ওর গালে হাত রেখে নরম কন্ঠে বললো,
-“আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে যেও না!”
ইনায়ার ইচ্ছে করছে ঐ হাত ওর গাল থেকে সরিয়ে দা দিয়ে এক কোপে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে। গা গুলিয়ে আসছে ওর। ইনায়ার অস্বস্তি খেয়াল করে লোকটা ইনায়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
-“এখনি এই অবস্থা!”
ইনায়া সাথে সাথে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো। অসহায়ত্বের শেষ সীমানায় যেন পৌঁছে গেছে। লোকটা আর কিছু না বলে ইনায়ার বাঁধন খুলতে শুরু করলো। মুহূর্তেই ও কিছুটা সচেতন হয়ে গেল৷ এই হয়তো সুযোগ!
চলবে…
#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -১১
ছুরির ধারে গলায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করছে ইনায়া। আর সহ্য করতে পারছে না। দুইদিন যাবৎ এই অন্ধকার ঘরে না খেয়ে কাটিয়েছে ইনায়া।
শরীরে আর কোন জোর অবশিষ্ট নেই। চিৎকার করতে চেয়েও পারছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
-“আমি সত্যি কিছু জানি না। প্লিজ আমাকে যেতে দিন!”
ইনায়ার এই আকুল আবেদন যেন লোকটিকে পৈচাশিক আনন্দ দিচ্ছে। ইনায়ার গলা থেকে ছুরিটা নামিয়ে ঘরে আলো জ্বালিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
-“অনেক সহ্য করেছি আর না। কিছু বলবে না তো! ঠিক আছে, হাবিব সাহেবকে একটা স্পেশাল গিফট দিতে চেয়েছিলাম সামনাসামনি। কিন্তু আফসোস! গিফটটা হয়তো সামনাসামনি দিতে আরও সময় লাগবে!”
লোকটার মুখে মাস্ক থাকার কারণে পুরো চেহারা না দেখতে পেলেও চোখে স্পষ্ট হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছে ইনায়া। সবকিছু দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। এই হয়তো চোখ খুলে নিজেকে নিজের বাড়িতে খুঁজে পাবে ইনায়া। কিন্তু তা আর হলো না। ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে ও।
-“আমি সত্যি কিছু জানি না। প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করবেন না! আমি আপনার ব্যাপারে কাউকে কিচ্ছু বলবো না!”
ইনায়ার অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে লোকটার চোখ কিছু সময়ের জন্য নরম হয়ে গেল। ইনায়ার মনে কিছুটা আশা জমলেও তা স্থায়ী হলো না। মুহূর্তেই আবারও হিংস্র রূপ ধারণ করে লোকটা ওর দিকে আগাতে শুরু করলো। ইনায়া চোখ বন্ধ করে আরও পিছিয়ে দেয়ালের সাথে মিশে যাচ্ছে। হাত পা বারবার মোচড়ানোর কারণে খানিকটা ছিলে গেছে। সেদিকে কোন ভ্রু ক্ষেপ নেই ওর। শুধুমাত্র পালাতে চেয়েছিল বলে ইনায়ার হাতে পায়ে ছুরি চালানো হয়েছিল। ব্যান্ডেজ ভেদ করে খানিকটা ছোপ ছোপ রক্তের ছাপ ফুটে উঠেছে।
_______________________
অসার হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে ইনায়া। চোখগুলো খোলা থাকলেও সম্পূর্ণ প্রানহীন অনুভূতি লেপ্তে আছে সেখানে। যেন শুধু নিশ্বাসটাই নিচ্ছে। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা নিমেষেই ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। এখন যেন শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা। পারলো না নিজের সম্মান রক্ষা করতে!
-“কে গ্রহন করবে তোকে! এখন তো সারাজীবন ধর্ষণের ট্যাগ নিয়ে বাঁচতে হবে ! অনেক জ্বালিয়েছে তোর বাপ।”
ইনায়ার দৃষ্টি এখনো সিলিং ফ্যানের দিকে আটকে আছে। মুখ দিয়ে একটা টু শব্দও বের হচ্ছে না। নিশ্বাসের উপস্থিতি বুঝতে না পারলে লোকটা ধরেই নিতো ইনায়ার দেহে আর প্রাণ অবশিষ্ট নেই।
লোকটা ইনায়ার নিশ্বাসের গতিবিধি লক্ষ করে
আচমকা ইনায়ার চুলের মুঠি শক্ত করে টেনে ধরে উন্মাদের মতো হাসছে। না চাইতেও ইনায়ার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ শোনা গেল। তা দেখে যেন আরও পৈচাশিক আনন্দ পাচ্ছে জানোয়ারটা।
-“এ সমাজে ধর্ষিতা নারীর কোন স্থান নেই। তোর প্রিয় চাচা চাচীও সমাজের চাপে তোকে একঘরে করে রাখবে। একটা সময় পর তোর পাশে কেউ থাকবে না। তোর বাপতো তোকে ফেলেই পালিয়েছে। দেখি কতদিন লুকিয়ে থাকতে পারে। একবার ভিডিও ভাইরাল হলেই….!”
ইনায়ার গা গুলিয়ে বমি আসছে। তীব্র ঘৃণা জন্মাচ্ছে মনে। নিজের প্রতি। আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না ওর। এই বিষাক্ত অনুভূতি নিয়ে কিভাবে বাঁচবে ও!
হঠাৎ বাইরে কারও পায়ের আওয়াজ পেয়ে ইনায়াকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো লোকটা। চোখে মুখে স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ। একবার ইনায়ার রক্তাক্ত শরীরের দিকে নজর দিয়ে ঘরের পিছনের দরজার দিকে ছুটে গেল লোকটা।
তখনই দরজা খোলার আওয়াজ ইনায়ার কানে এলো। ভয়টা যেন মনে আবারও জেগে উঠলো। চেষ্টা করেও মেঝে থেকে নিজের শরীরটা টেনে উঠাতে পারছে না। হাতের ক্ষতটা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। চোখের আলোটাও যেন নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
____________________________
কোন একসময় প্রাণোচ্ছল থাকা তরুণী এখন যেন সম্পূর্ণ নির্বাক। হাজার চেষ্টা করেও কেউ ওকে কান্না করাতে পারেনি। সেদিনের পর চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে ইনায়া। শুধু নিজের বাবার খোঁজ করতো। কিন্তু কেউ কিছু বলতো না।
কয়েকদিন পরই ওকে খবর দেয়া হয় ওর বাবা খুন হয়েছে। সাথে সাথেই জ্ঞান হারায় ইনায়া।
শারীরিক ক্ষত একসময় শুকিয়ে গেলেও মনের ক্ষতটা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যাকেই সামনে পায় জিনিসপত্র ছুড়ে মারে। এইতো সেদিনের কথা,
সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছিল। বৃষ্টির ঝুপঝুপ আওয়াজে ইনায়া যেন এক অন্য দুনিয়ায় পা রেখেছে। সেখান থেকে একদমই বের হতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বাস্তবতা থেকে তো এতো সহজে রক্ষা নেই। শত শত বিষাক্ত অনুভূতি যেন ঝাক মেরে অপেক্ষা করছে ওর মনে। যেটা মানুষের কাছে গুরুত্বহীন।
নিজেকে আয়নায় দেখতেও বড্ড ঘৃণা হয়। কারো নোংরা স্পর্শ লেগে আছে এ শরীরে। চাইলেও তা দূর হবে না।
আরিফার খালা সাইমা সেই কখন থেকে ইনায়ার ঘরে বসে আছে।ইনায়ার সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। হয়তো আবার কিছু শুনতে হবে আজ। কিন্তু তাতে কি? ও তো নষ্ট। এমন মেয়েদের কোন অনুভূতি থাকতে নেই। যা হয়েছে সব দোষ হয়তো ওর।
ইনায়ার আজকাল কারও সামনে যেতে ইচ্ছে করে না। সারাদিন দরজা আটকে সেই চার দেয়ালেই আবদ্ধ। কিন্তু যে এর জন্য দায়ী সে একদম মুক্ত!
না না কি ভাবছে ইনায়া! নিশ্চয়ই ওরই কোন দোষ ছিল। নাহলে এমন হবে কেন? এমনটাই তো বলে সবাই।
এক সময় ইনায়ার মনে হল সাইমা ওর দিকে তাকিয়ে খুব বিশ্রীভাবে হাসছে। যেন ওর অবস্থার জন্য ওকে ঠাট্টা করা হচ্ছে। রাগে দুই চোখ লাল হয়ে গেল। হাতের কাছে একটা গ্লাস নিয়ে সজোরে সামনের একটা দেয়ালে ছুড়ে মারলো ইনায়া।
সাইমা চিৎকার দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আর সবাই আওয়াজ শুনে ইনায়ার ঘরে চলে আসে।
ইনায়া তখনও চোখ গরম করে সাইমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর বিড়বিড় করে বলছে,
-” হাসবিনা একদম হাসবিনা। ”
এই কথা শুনে সাইমাও অনেক কথা শুনাল সে তো এই ঘরে এসে ইনায়াকে একটা কথাও বলেনি। আর এই মেয়ে! ইনায়ার চাচী এসে ইনায়ার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়। ইনায়া ছলছল চোখে ওর চাচীর দিকে তাকায়। গালটা লাল হয়ে গেছে। সাইমা ততক্ষণে বেড়িয়ে যায়।
ইনায়ার চাচী ইনায়াকে মারতেই থাকে। ইনায়া দুই হাতে নিজের মাথা আগলে বসে আছে। একটা টু শব্দও করছে না।
তখনই প্রিয়া ইনায়ার মামাতো বোন এসে ইনায়ার চাচীকে থামায় আর টেনে ইনায়ার ঘর থেকে নিয়ে এল। ইনায়া এখনও চুপচাপ বসে আছে। এক দৃষ্টিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।
ইনায়ার চাচী রাগে গজগজ করে বলতে থাকে,
-” আমার পুরা সংসারটা শেষ। আর এই মাইয়া তেজ দেখায়! ওর তেজ কেমনে বাইর করা লাগে আমার ভালো করে জানা আছে। ”
পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করলো ইনায়া। বিশেষ করে কোন পুরুষ মানুষকে আশেপাশে সহ্যই করতে পারতো না। একদিন নিজের চাচার দিকে ফুলের টব ছুড়ে মারায় ওর চাচী এসে ইনায়ার গালে আবারও সজোরে এক থাপ্পড় মেরে বসলো।
-“আমার সংসারটা শেষ করে এখন খুনখারাবিতেও নামবি তুই! এই মেয়েকে ঘরে রাখতে পারবো না আমি! বের করো একে! ঘরে আরও একটা মেয়ে আছে। ঘর থেকে শান্তিতে বের পর্যন্ত হওয়া যায় না।”
কর্কশ কন্ঠে বলা তিক্ত কথাগুলো শুনে নিজের কান চেপে ধরলো ইনায়া। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে শুরু করলো। দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ ওকে মারতে চাইছে। আরিফা আগে চুপচাপ ইনায়ার পাশে এসে বসে থাকতো। কথা বলার চেষ্টা করতো। কিন্তু সেদিনের পর থেকে আর ইনায়ার সামনেও আসেনি। এরমধ্যে শুধু ইনায়ার চাচাই ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করেছে।
কয়েক মাস পর ইনায়ার চাচা ইনায়ার রুমে এসে বিছানার এক পাশে বসলো। অনেকটা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই নিজেকে গুটিয়ে ফেললো ইনায়া। ইদানিং জিনিসপত্র ছুড়ে মারার অভ্যেসটা না থাকলেও কোন এক অজানা ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে ইনায়া। ঘুমের মধ্যে প্রায়ই চিৎকার করে ওঠে। যেন কেউ ওকে মেরেই ফেলছে। পুলিশ ওই রেপিস্ট আর খুনিকে তো ধরেই নি। এমনকি ইনায়ার বাবার মৃত্যুটাকেও ধামাচাপা দিয়েছে। ইনায়ার পাগলামি সবার চোখে পড়লেও ওর ভেতরে গুমরে গুমরে মরে যাওয়া সত্তা কারও মস্তিষ্কে জায়গা নেয়নি। ইনায়ার চাচা একটা শুকনো কাশি দিয়ে বললো,
-“আমি চাই তুমি বিয়েটা করে ফেলো!”
চলবে…