#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -২৩
রিয়াদ খবরটা দেয়ার পর কেউই কোন কথা বলেনি। অদ্ভুত নিস্তব্ধতার রাজ্য মনে হচ্ছে বাড়িটিকে। ইনায়া নিজের দিকে বেশ কয়েক জোড়া দৃষ্টি লক্ষ্য করলেও চোখ তুলে আর তাকালো না।
রিয়াদ একটু পর পরই রেহান আর ইনায়ার দিকে আড়চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। কাল রাতে ইনায়াকে অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে রিয়াদও দেখেছিলো। তবে সে রাত বাড়ি ফেরা হয়নি রিয়াদের। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই ক্রোধের মাত্রা তড়তড় করে বেড়ে যায়। ছোটলোকেরা অল্প টাকায় কখনও সন্তুষ্ট হয় না!
-“কিছু খাচ্ছো না কেন?”
ইয়াসমিন ধীর কন্ঠে কথাটা বলতেই তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো ওর দিকে রিয়াদ। রিয়াদের নজর দেখে আর কিছু বলার সাহস হলো না ইয়াসমিনের।
এই বাড়িতেও ছোটখাটো একটা লাইব্রেরি আছে। যদিও তা তুলনামুলক ভাবে বেশ ছোট। বেশ ফুরফুরে মেজাজে বইগুলো ঘাটাঘাটি করছে ইনায়া।
-“সকাল সকাল তোমাকে ডিসটার্ব করতে চলে এলাম!”
ইনায়া জান্নাতের দিকে না তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
-“সেটা হয়তো কিছুক্ষণ পর বোঝা যাবে, কে কাকে ডিসটার্ব করে!”
ইনায়ার উত্তরে অবাক হলেও সেটা মুখে প্রকাশ করলো না জান্নাত। বারান্দায় এসে বসলো দু’জন। মেইড এসে দুই কাপ চা ওদের সামনে রেখে চলে গেল। আজ আর বৃষ্টি হচ্ছে না। তবে দক্ষিণা বাতাসের প্রকোপ বেশিই মনে হচ্ছে।
-“আপনি আমাকে একটা কথা বলেছিলেন মনে আছে? মানব মন বড়োই বিচিত্র। আসলেই তাই, সামনে থাকা মানুষের গায়ের আঘাত খুব সহজেই চোখে শুধু নিজেরটা না। তিল তিল করে গড়ে ওঠা কিছু অভ্যাস কখন যে গলায় কাটা হয়ে বিঁধতে থাকে বোঝাই যায় না!”
একটু নড়েচড়ে বসলো জান্নাত। জামার হাতাটা ঠিক করেই মুখে হাসি এনে বললো,
-“হঠাৎ এতো কাব্যিক ভাষায় কথা বলছো যে!”
ইনায়া চায়ের কাপটা রেখে জান্নাতের হাতে একবার চোখ বুলালো। পরক্ষণেই মৃদু হেসে বললো,
-“কি করবো বলুন! আপনার ভাইয়ের ঘরে বই আর বই। যদিও বিষয়টা খারাপ না। অবসরে ভালোই সময় কাটানো যায়!”
-“কেন, তোমার বই পছন্দ না!”
-“এই প্রশ্নের জবাব বইয়ের বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে!সেই সকাল থেকে এডভেঞ্চার আর ভ্রমনজাতীয় বই দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে গেছি!”
জান্নাত এক ভ্রু উচু করে ইনায়াকে বললো,
-“আই এম নট সারপ্রাইজড! পায়ের ব্যাথা কমেছে?”
-“হয়তো!”
-“তোমাকে আজ বেশ অন্যরকম মনে হচ্ছে ইনায়া! কিছুটা ভয়ংকর!”
জান্নাতের মজার ছলে বলা কথায় এক উদ্ভট কান্ড করে বসলো ইনায়া। ফুলের টব থেকে ফুলগুলো রেখে বললো,
-“কেন? ভয় হচ্ছে? এই টবটা যদি এখন আমি আপনার দিকে ছুড়ে মারি?”
ইনায়া খালি টব টা জান্নাতের দিকে ছুড়ে মারার মতো ভঙ্গি করতেই সশব্দে হেঁসে উঠলো জান্নাত।
-“খুব বাজে মজা করতে পারো তুমি। তবে যতটুকু তোমাকে চিনেছি কারও ক্ষতি করার মানসিকতা তোমার আছে বলে আমার মনে হয়নি!”
ইনায়ার মুখে এবার বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো।
-“আপনার ধারণায় একটু ভুল আছে!”
-“কি হচ্ছে এখানে?”
জেরিনের আওয়াজ শুনে দুইজনের চোখ সেদিকে গেল। জেরিনকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে।
-“আমরা তো গল্প করছিলাম! তুমি এই শরীর নিয়ে এই পর্যন্ত আসতে গেলে কেন?”
জান্নাতের মিষ্টি ভাষার জবাবে কোন কিছুই বললো না জেরিন। শুধু জান্নাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
-“আগেই বলেছি না এসব পাগলামি বাইরে রেখে এই বাড়িতে ঢুকতে। এই সুস্থ সবল মানুষটাকে তোর পাগল মনে হয়! কয়েকদিন পর হয়তো দেখা যাবে তুই আমাকেও পাগল প্রমান করবি! এইসব পাগলের ডাক্তারদের ভালো করে চেনা আছে আমার। এরা মানুষ না এরা কষাই!”
দাঁতে দাঁত খিঁচে কথাগুলো বললো জেরিন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যেতে চাইলেই জান্নাত গিয়ে জেরিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পায়ের দিকে তাকাতে মনে হলো খানিকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে জেরিন।
________________________________
-“দুয়ার মেলে বাইরে পা রাখার ভয় যেখানে, দেশ বিদেশ বিচরণের কল্পনা কি সেখানে বিলাসিতা নয়!”
রেহান এক ভ্রু উঁচু করে সামনে বসে থাকা বইয়ের পাতায় চোখ রাখা মানবীর দিকে তাকালো।
-“একটা বই বের করলেই তো পারো, ইনায়ার অদ্ভুত উক্তিমালা! নামটা সুন্দর না! এতে কেউ কিছু শিখুক আর না শিখুক মাথার তার ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল!”
রেহানের খোঁচা দিয়ে বলা কথায় ইনায়ার ওপর তেমন প্রভাব তো পড়লোই না উল্টো রেহানকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে বই পড়ায় মনোযোগী হলো। রেহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই মেয়েদের মন ওর পক্ষে বোঝা আসলেই সম্ভব না! রেহানকে দেখেও প্রচন্ড ক্লান্ত মনে হচ্ছে। গোসল সেরে বেরোতেই দেখে ইনায়া এখনও একই জায়গায় বসে আছে। তবে বইটা সাইডে রাখা। কি নিয়ে যেন গভীর চিন্তায় পড়ে আছে। রেহান হঠাৎ করেই ইনায়ার কপালে হাত রাখতেই অনেকটা হকচকিয়ে গেল ইনায়া।
-“এতো লাফাচ্ছো কেন? জ্বর আছে না-কি দেখছি?”
ইনায়া শান্ত হয়ে বসতেই রেহান থার্মোমিটার নিয়ে এলো। জ্বর মেপে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ও।
-“কাল কোথায় বেরিয়েছিলে?”
-“মনে হয় খুন করতে!”
নির্লিপ্ত ভাব এনে জবাব দিলো ইনায়া।
-“আমাদের বিয়ের কয় মাস হতে চললো মনে আছে ইনায়া?”
-“দুই মাসের বেশি হবে! কেন বলুন তো! ছেড়ে দেবেন আমাকে?”
ছেড়ে দেয়ার কথা শুনতেই মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল রেহানের। গলায় কাঠিন্য ভাব এনে বললো,
-“রেহান ছাড়ার জন্য কারও হাত ধরে না! আর তোমাকে তো একদমই না! আর এই সময়ের মধ্যেই তোমাকে যথেষ্ট চেনা হয়েছে আমার! তাই উল্টোপাল্টা বলে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করো না! কাল অফিসে আসার আগপর্যন্ত কোথায় ছিলে? আর লোকটা কে ছিলো?”
যেন অধৈর্য্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে রেহান। বিষয়টা লক্ষ্য করে ইনায়া ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-“কি অদ্ভুত না ব্যাপারটা! গতকাল পর্যন্ত আমি প্রশ্নের পাহাড়ে ডুবছিলাম। আর আজ আপনি! আমার তো বেশ লাগছে ব্যাপারটা!”
হুট করে হেঁচকা টানে ইনায়াকে নিজের দিকে নিয়ে এলো রেহান। এতক্ষণ যাবৎ জমিয়ে রাখা ক্রোধে আঁখি জোড়া ভরে উঠলো,
-“এই মেয়ে, ভালো ভাবে কথা বললে কথা কানে যায় না তোমার! ঠ্যাং ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো বলে দিলাম! ভালোয় ভালোয় বলো লোকটা কে ছিলো?”
রেহানকে রাগতে দেখে ম্লান হেসে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো ইনায়া।
-“একটা কথা জানেন তো অতিরিক্ত রাগ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। বলতে গেলে চোখ থাকতেও অন্ধ! আপনার ওপর একসময় ভিষণ রাগ উঠতো। আমার তো মনেই হয়েছিল কেউ জোর করে আপনাকে বিয়ে করিয়েছে। কথায় কথায় রাগে গর্জে ওঠা মানুষকে জোর কিভাবে করা যায় মাথায় আসতো না আমার। কিন্তু একটা সময় আমার ধারণা বদলাতে শুরু করলো। এতোদিন আমি যতটা অন্ধকারে ছিলাম ঠিক ততটা অন্ধকারে হয়তো আপনিও ছিলেন, আর সেটা এই মুহূর্তে আপনার নিজেরও জানা নেই!”
ইনায়ার গালে আলতোভাবে হাত রাখলো রেহান। ধীরে ধীরে অনেক পরিবর্তন আসছে ইনায়ার মধ্যে। সেটা ভালো না-কি খারাপ বুঝতে পারছে না রেহান। আর না ইনায়ার কথার মারপেঁচ বুঝতে পারছে! রেহানের হাতের ওপর হাত রেখে বালিশের নিচ থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে রেহানের হাতে ধরিয়ে দিলো ইনায়া।
-“কখনও কখনও খুব কাছের মানুষকে চিনতেও ভুল হতে পারে! একই ছাদের নিচে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে ভাবনার বাইরেও থাকতে পারে ভিন্নতা! এখন যদি আমি বলি এই বাড়িতে সত্যিই কোন খুনি আছে আমাকে বিশ্বাস করবেন?”
চলবে…
#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -২৪
বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেসের ফাইল ঘাটাঘাটি করছে থানার ওসি তামিম শিকদার। হুট করে ফোন বেজে ওঠায় ফোন তুলে কিছুটা ক্লান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো,
-“মারিয়া ঘুমিয়েছে?”
-“হ্যা ঘুমিয়েছে। তোমার কী আরও লেট হবে?”
-“হুমম।”
জান্নাতকে আর কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো তামিম।
মারিয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকাতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো জান্নাতের। হাতের দাগটা অনেকখানি মিশে গেছে।
অনেক ধরণের মানুষের সাথে মিশেছে ও ইতিমধ্যে। যেই হেলথ অরগানাইজেশানে কাজ করে তা মূলত শিশু আর মহিলাদের জন্য। তাদের মুখের দিকে তাকাতেই অনেক সময় মনে হয় যেন নিজেকে দেখছে। বেশিরভাগই শিশু নির্যাতন, প্রতারণা কিংবা ডমেস্টিক ভায়োলেন্স স্বীকার। যাদের জন্য সমাজে অনেকে দেয় বিভিন্ন পরামর্শ। কেউ কেউ বলে মানিয়ে নাও, থেকে যাও, আর কোন পথ খোলা নেই আবার কেউ কেউ বলে ছেড়ে দাও এমন সংসার যেখানে তোমাকে প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হতে হয়! তাই আজ পর্যন্ত ওর কাছে আসা রোগীদের কখনই এর মধ্যে কোন পরামর্শ দেয়নি ও। পরামর্শ দেয়ার অধিকার যে সবার নেই!
___________________________________________
রাত অনেক হওয়ায় এতক্ষণে অনেকেই চলে গেছে নিজ নিজ বাড়ি। তবে নিহাল এখনও পুলিশ স্টেশনের বাইরে টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছে। আজ পুরোদিন ধকল গেছে ওর ওপর দিয়ে। চোরাকারবারি গ্যাঙের একজন সদস্যদের লাশ খুবই বিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অনেকদিন ধরেই ওয়ান্টেড লিস্টে ছিল সাদাফ। কিন্তু বারবার হাতের নাগালের বাইরে চলে যেত পুলিশের। এখন ধরা তো পড়লোই কিন্তু লাশ হয়ে। ধারণা করা হচ্ছে যে গ্যাঙেরই কোন লোকের হাতে খুন হয়েছে হয়তো!
বেশ রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এই চায়ের দোকানটা তবে বৃষ্টি বাদলের দিন বাদে। যদিও একদিক দিয়ে ভালোই হয়। অনেক সময় কাজের তাগিদে রাত পর্যন্ত পুলিশ স্টেশনে থাকার প্রয়োজন পড়ে যায়। মামার হাতের এক কাপ কড়া চায়ের প্রয়োজন সে রাতগুলোতে বেশিই পড়ে। চায়ে চুমুক দিতেই সামনে বসে থাকা ভদ্রলোককে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো নিহালের। সাদা শার্ট পরিহিত এই মানুষটাকে এর আগেও পুলিশ স্টেশনে দেখেছে নিহাল। তবে নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। আর এই মুহুর্তে বেশ বিব্রত বোধ করছে নিহাল। কারণ সেই সামনে বসে থাকা মানবের কটাক্ষ দৃষ্টি। যার কারণ ধরতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে নিহালকে। নিহালের বিব্রত মুখটা দেখে মনে হলো লোকটা বেশ মজাই পাচ্ছে। কটাক্ষ দৃষ্টির মাঝে ঠোঁটে বেশ অদ্ভুত ভঙ্গিতে ভেসে উঠলো বক্র হাসি। নিহালের মেজাজটা এবার মাথায় চড়ে বসলো। দেখে তো পাগল মনে হচ্ছে। তাও নিজের রাগ সংযত করে গলায় কাঠিন্যের ছাপ এনে বললো,
-“আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!
মৃদু হেসে চায়ে চুমুক দিলো লোকটা। শান্ত কন্ঠে বললো,
-“এখানে চা খেতে আসা প্রত্যেককেই আপনি চেনেন বুঝি!”
কিছুটা থতমত খেয়ে বসলো নিহাল। তবে চেহারায় ফেলে ওঠা কাঠিন্য ভাবটা বজায় রেখেই ও বললো,
-“আপনার পাশে বসে থাকা লোকটিকেও আমি চিনি না। কিন্তু তাকে তো আমি কোন প্রশ্ন করিনি। এখানে উপস্থিত সবার মধ্য থেকে শুধু আপনাকেই এই প্রশ্নটা আমি এমনি এমনি তো করিনি। বিষয়টা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন জনাব!”
-“স্নিগ্ধ।”
-“জি?”
-“আমার নাম স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধ মাহমুদ।”
-“আমি নিহাল আহমেদ…!”
-“আমি জানি!”
খালি কাপটা দোকানে রেখেই নিহালের চোখে চোখ রেখে স্নিগ্ধ নিজের ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে পুলিশ স্টেশনের দিকে যেতে শুরু করলো।
তামিম নক না করেই রুমে ঢুকে পড়ায় বেশ বিরক্ত হয়েই সেদিকে তাকালো তামিম। নিহালও স্নিগ্ধর পিছু পিছু এসে পড়লো,
-“স্যার আমি বারণ করা সত্ত্বেও লোকটা…”
তামিমের তীক্ষ্ণ চাহনি নজরে পড়তেই চুপ হয়ে গেল নিহাল। মনে মনে হালকা ফুঁসছে। সিনিয়র দেখে মুখের ওপর কিছু বলে না। ওর জানামতে তামিম লোকটা প্রচন্ড ঘাড়ত্যাড়া আর মেয়েবাজ! আর নিহালের ওপর পারলে কাজের অর্ধেক চাপ ছেড়ে দিয়ে ফালতু ফোনালাপেই ব্যাস্ত থাকবে! তবে সাদাফের কেসটার ব্যাপারে নিহালকে কোন হস্তক্ষেপ করতে দেয় নি তামিম। নিজেই সামলাচ্ছে! নিহাল কিছু বললেই ছ্যাত করে উঠে। নিজের মুখ বন্ধ করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নিহাল।
স্নিগ্ধ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে টেবিলে কিছু কাগজপত্র আর একটা পেনড্রাইভ রেখে চেয়ারে বেশ আরাম ভঙ্গিতে বসলো।
-” অন্ধ স্বজনপ্রীতির মোহে নিজের জীবনটা অন্ধকারের দিকে নিশ্চয়ই ঠেলতে চাইবেন না আপনি! এইগুলো শুধু কপি, মেইন প্রমানগুলো এখনও আমার হাতে আছে। আর সেগুলো দিয়ে আমি ঠিক কী কী করতে পারি তা নিশ্চয়ই আপনাকে ভেঙে বলতে হবে না!”
___________________________________________
ফোনে কথা বলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল ইয়াসমিনের। রিয়াদের কন্ঠে লেগে আছে রাগের রেশ। ইয়াসমিনকে বসতে দেখেই কল কেটে সাইডে রাখলো ও।
-“ইনায়া মেয়েটা বড্ড বাড় বেড়েছে!”
দাঁতে দাঁত চেপে বললো রিয়াদ।
-“এতো টেনশন করার কিছু নেই! আর ওকে তো আমি পুরো কথাটা বলিনি!”
-“আমাকে শেখাতে এসো না ইয়াসমিন! বাপের মতো পাখা গজিয়েছে!”
রিয়াদের শেষের কথাটায় কেন যেন খটকা লাগলো ইয়াসমিনের। কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। নিজেই ভেতরে নিজের জন্য এক অদ্ভুত তাচ্ছিল্য খুঁজে পাচ্ছে ও। এতোদিনে মুখ খোলার সাহস হয়নি এখন আর কী হবে! শুধু শুধু নিজের ছেলেমেয়েদের ওপর রাগ ঝাড়তে পারে ও আর কিছুই না! হঠাৎ করেই রেহানের রুম থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ শুনে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো রিয়াদ সাথে ইয়াসমিনও!
চলবে…