নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব-২১+২২

#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -২১

মিটিং রুমের একদিকে ঠকঠক আওয়াজে বিরক্ত হয়ে ক্রোধ দৃষ্টি রেহানের দিকে নিক্ষেপ করে রিয়াদ। প্রায়ই রেহানের এই বদঅভ্যেসে সবাই বিরক্ত। রেহান তার বাবার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। চাহনি জুড়ে যেন কোন কিছুর অপেক্ষা। একপ্রকার বিরক্ত হয়েই রিয়াদ এক গাদা ফাইল টেবিলে বেশ আওয়াজ করে রাখতেই থেমে যায় রেহান।
-“ছোট বাচ্চা নও তুমি! বয়স ত্রিশের কাছাকছি হতে চললো তাও এই বদঅভ্যেস আর গেলো না!”

রেহান কিছু না বলে চুপচাপ সোজা হয়ে বসলো। অফিস টাইম অনেক আগেই শেষ। শুধুমাত্র রেহানকে রিয়াদ বসিয়ে রেখেছে কোন জরুরি কাজে। এক দুইবার ইনায়াকে ফোন করলো কিন্তু কিছুক্ষণ বেজেই ফোন কেটে যাচ্ছে প্রত্যেকবার। মনটা কেমন অদ্ভুত রকম অশান্ত হয়ে আছে। ঘড়িতে সময় রাত নয়টা। রেহানের অস্থিরতা দেখে রিয়াদের বিরক্তির পরিমাণ যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে। যা ইচ্ছে তাই করবে! বাবা মায়ের মতামতের কোন মুল্যই যেন নেই ওর কাছে! ইনায়া মেয়েটাকেও সুবিধার মনে হয় না! ছেলের এই অধঃপতন আর মানতে পারছে না রিয়াদ!

রেহান কেবিনের থাই গ্লাস থেকে নিচে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো ইনায়া নিচে দাঁড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছে। আর যেই লোকের সাথে কথা বলছে সে কিছুটা কাচুমাচু হয়ে আছে। রেহান ভ্রু কুঁচকে আছে। ইনায়া এখানে কী করছে! এই মেয়েকে একা বাহিরে যেতে নিষেধ করেছিলো রেহান!
রেহানকে ক্ষুব্ধ হয়ে ইনায়ার দিকে আসতে দেখেই লোকটা দৌড়ে পালালো। তবে ইনায়ার তাতে কোন হেলদোল নেই। ক্ষুব্ধ চোখের বিপরীতে নির্লিপ্ত চাহনি ছুড়ে মারে ও।
-“কী করছো এখানে তাও এতো রাত করে? বারণ করেছিলাম না আমি?লোকটা কে?”
ইনায়া রেহানের ক্রোধমিশ্রিত চিৎকার কন্ঠে করা প্রশ্নের কোন জবাব দিলো না। শুধু এক দৃষ্টিতে রেহানকে পর্যবেক্ষণ করছে। অনুভুতিহীন চেহারার মাঝে কোন কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না রেহান। রেহানের চিৎকার সংযুক্ত আচরণে আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে ছিল ওদের দিকে। কোনমতে নিজেকে সামলে ইনায়ার হাত ধরে পার্কিং প্লেসে নিয়ে গেল রেহান।

গাড়িতে বসাতেই নিজের সিটবেল্ট নিজের থেকে লাগিয়ে নিলো ইনায়া। এতক্ষণ যে রেহান ইনায়াকে নিয়ে এই পর্যন্ত এনে গাড়িতে বসালো তাতে আলাদা কোন প্রতিক্রিয়াই দেখা গেলো না ইনায়ার মাঝে। ভয়ও নেই! ইনায়ার এই স্বাভাবিক আচরণও কেন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে রেহানের কাছে। কারণটা এই মুহুর্তে রেহানেরও অজানা।

প্রায় পাঁচ মিনিট যাবৎ শান্ত চোখে ইনায়াকে দেখছে রেহান। এই পাঁচ মিনিটে রেহানের চাহনি বুঝতে পারলেও ইনায়ার মুখে কোন কথা নেই!
-“কাগজটা পেয়েছো?”
ইনায়ার দৃষ্টি সামনেই আটকে আছে। রেহানের ধৈর্যও ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার পথে। একপর্যায়ে ইনায়াকে হেঁচকা টানে নিজের দিকে ফেরায় রেহান।

-“সমস্যা কী তোমার?”
ইনায়ার বাহু অনেকটা শক্ত করে ধরায় ওর মুখের প্রতিক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। কিন্তু ইনায়া নিজেকে ছাড়ানোর কোন চেষ্টাই করলো না! তীক্ষ্ণ নজরে রেহানের চোখে চোখ রাখলো ও। রেহান ইনায়ার বাহু থেকে হাত সরিয়ে ওর চোখের নিচে স্পর্শ করতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে ইনায়া। কিন্তু এইবারও সরে যায় নি ও!
-“তোমার চোখ কিন্তু মিথ্যে বলছে না ইনায়া!”
ইনায়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া এক ফোটা অশ্রু মুছে ধীর কন্ঠে বললো রেহান।

-“বিশ্বাস করো আমাকে?”
-“জানি না।”
ইনায়ার অস্ফুট কন্ঠের ভারে অনেক কিছুই যেন বুঝে নিলো রেহান। ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম হাসি নিয়ে ইনায়ার কাছ থেকে সরে এসে গাড়ি স্টার্ট করলো ও। রেহান গাড়ি স্টার্ট করতেই কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে ইনায়া।
-“ভেবো না যে, আমার প্রশ্ন শেষ। রাস্তায় সিনক্রিয়েট করার কোন ইচ্ছে আমার নেই!”
-“রাস্তায় মানুষের ওপর কাদা পানি ছিটকে মারাটা সিনক্রিয়েট না! কাউকে ফলো করাটা অসভ্যতামি না!”
হুট করেই ক্রোধের তাড়নায় মুখ ফসলে কথাটা বলে দিলো ইনায়া। আর সাথে সাথেই রেহান গাড়ি রাস্তার একসাইডে ব্রেক করলো।

-“ইনায়া তোমাকে ফলো করার কোন ইচ্ছে আমার ছিলো না। আমি শুধু আমার গাড়ি নিয়ে তোমার বাড়ির সামনে যেতাম। তুমি কোথায় যাচ্ছো, কি করছো তাতে আমার কোন মাথাব্যাথা ছিলো না।”

রাগী কন্ঠে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ওঠে রেহান। ইনায়া আর কিছু বললো না। এমনিও এই বিষয়ে এই মুহুর্তে রেহানের সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছা ইনায়ার নেই। ইনায়ার শান্ত মুখ দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল রেহান। সারাদিন ধরে বৃষ্টি পড়েছে আজ। রাস্তাও কর্দমাক্ত। এইদিকে নেই কোন মানুষের আনাগোনা। রেহান ইনায়ার দিকে এসে গাড়ির দরজা খুলে ওকেও বাইরে নিয়ে এলো। ইনায়া ভ্রু কুঁচকে আশপাশটা দেখছে। শুনশান ভয়ংকর পরিবেশ। ইনায়া এইবার একটু বেঁকে বসলো। রেহানের থেকে হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হলো না। কয়েক পা সামনে যেতেই একটা লেকের সামনে এসে থামলো রেহান। দুইজনই ভিজে একাকার। ল্যাম্পপোস্টের আলোটাও বেশ ক্ষীণ। জনমানবহীন লেকের একপাশে রেহান বসলো আর পাশে ইনায়াকে বসালো।

-“কোথায় গিয়েছিলে আজকে? তোমার না পা মচকে গেছে?”
ইনায়ার হাতটা এখনও শক্ত করে চেপে ধরে আছে রেহান। পরিবেশটাও যেন বেশ ঠান্ডা। থরথর করে কাঁপছে ইনায়া।
-“পা এতোটাও মচকায়নি যে হাঁটতে পারবো না!”
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ইনায়া। তবে তা ভয়ে নাকি ঠান্ডায় সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না রেহান।
-“এখানে কেন আমরা?” আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে ইনায়া।
রেহান মৃদু হেসে বললো,
-“আমি সতর্ক করেছিলাম তোমাকে! করিনি!”
ধীর কন্ঠে লেগে আছে হুমকির আভাস। ইনায়ার মনে লুকিয়ে থাকা ভয়টা আরও বাড়ছে। রেহান সেটা বুঝতে পেরেই সশব্দে হাসতে শুরু করলো।
-“আমাকে ভয় পাও তুমি! কিন্তু রাত করে একা বাহিরে পা রাখতে ভয় করে না তোমার! তোমার যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য নিজেকে তোমার থেকে দূরে দূরে রেখেছি আমি! আর তুমি রাত করে একা বাহিরে বেড়িয়ে গেলে!
ধীর কন্ঠটা যেন ক্রমাগত চিৎকারে পরিণত হচ্ছে। ইনায়ার গাল চেপে ওর মুখটা নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো রেহান।
-“আমি এতোটাও নরম মানুষ না ইনায়া যতটা আমি তোমার সামনে থাকার চেষ্টা করি! আমার ধৈর্য নিয়ে খেলতে যেও না। আমি এমন কিছুই করতে চাই না যা নিয়ে আমাকে পরে রিগ্রেট করতে হয়!”

______________________________________

বৃষ্টিতে ভিজে হলেও ভীর করে দাঁড়িয়ে আছে একদল মানুষ। কৌতুহল, আতঙ্ক অথবা ভয় একেকজনের মুখে একেক ধরণের অনুভুতি। চিপা গলির একপাশ সম্পূর্ণ আটকে দিয়েছে পুলিশ যাতে কোন জনসাধারণ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে।

নিহাল আহমেদ নতুন জয়েন করেছে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে। সেরকম কাজে এখন পর্যন্ত জড়াতে হয়নি। আজ প্রথম কোন খুনের কেসের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওকে! লাশ দেখেই কিছুদূর এগিয়ে গরগর করে বমি করতে শুরু করলো নিহাল। এমন বিভৎস লাশ ও এর আগে কখনও দেখেনি!
লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে গেছে কিছু কিছু জায়গায়। আর তাতে মিশ্রিত হয়ে আছে লাল রক্তের বন্যা!

চলবে…

#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব-২২

চোখের ভিরে আটকে গেছে সেই কবেই। হৃদয় গহীনে পুষে থাকা রাগটাও গলতে শুরু করেছে। আগে সেই ভীতু চোখ দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেও ইদানিং বদলে যাচ্ছে অনেক কিছুই। রেহানের প্রতি কোন ভয় ইনায়ার চোখে আর নেই। আর না ওর স্পর্শে ছিটকে সরে যাচ্ছে ও। কিন্তু তারপরও কোথাও যেন একটা জড়তা রয়েই গেছে। অদৃশ্য জড়তা। খুব কাছাকাছি থেকেও যেন দূরত্বের পাল্লা ভারী হচ্ছে। হঠাৎ করেই ইনায়ার কম্পিত ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে রেহান। বৃষ্টি কণার সাথে মিশে যাচ্ছে ইনায়ার চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু। ইনায়াকে চোখ বন্ধ করতে দেখে মৃদু হাসলো রেহান। সেই দিনও চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি বিলাশে হারিয়ে যাওয়া এক রূপসী দেখে কিছু সময়ের জন্য নিজেকেও হারিয়েছিলো। বিষয়টা অনিচ্ছাকৃত হলেও সেই মুখটা ওর মস্তিষ্কে প্রচন্ড বাজে ভাবে গেঁথে গেছে। আজ সেই মুখটা যেন সামনে থেকেও নেই। ইচ্ছে করছে আরও কিছু সময় এখানে থাকতে! মন ভরে দেখবে প্রেয়সীকে। ক্ষতি কী! কিন্তু এই মুহুর্তে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করাটা বেশি জরুরি।

-“আমি নিজেকে কখনোই সম্পূর্ণ সেলফলেস মানুষ বলবো না । হয়তো জেলে যেতে হয়নি কিন্তু পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত ঠিকই যেতে হয়েছে। যে পাপ আমি করিনি সেই পাপের বোঝা কিছু সময়ের জন্য হলেও আমাকে বহন করতে হয়েছে। এতো সহজে তা ভুলে যেতাম আমি! সবার দেয়া অপবাদ সহ্য করলেও নিজের মায়ের দেয়া অপবাদ কি করে সহ্য করতাম! ইনায়া প্লিজ এই বিষয়গুলো নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। ভুলে যাও! সাদাফের ব্যাপারেও কোন চিন্তা তোমাকে করতে হবে না!”

-“কোনটা ভুলে যাবো! নিজের বাবার মৃত্যু ভুলে যাবো! নিজের সম্মান হারানো ভুলে যাবো! একটু একটু করে প্রতিনিয়ত নিজেকে হারিয়ে ফেলাকে ভুলে যাবো!”
কঠোর আক্ষেপ জড়িয়ে থাকা কন্ঠে করা প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারলো না রেহান। ইনায়ার গাল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ও। ইনায়া আরও বললো,

-“আমার পক্ষে ভুলে যাওয়া তো এই মুহুর্তে সম্ভব না! সাদাফের মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নেয়ার প্রশান্তি আমার সহ্য হবে না!”
মুখে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে আছে ইনায়ার। যেন কোন উন্মাদনার নেশায় মেতেছে ও! কিন্তু এই উন্মাদনায়ও কোন চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। একটু আগ পর্যন্ত গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়লেও এখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। একটু পর পর কম বেশি হচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণ। রেহান উঠে দাঁড়ালেও ইনায়া জেদ ধরে ওখানেই বসে রইলো।
-“সারারাত এখানে থাকবে?”
শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশে শুধু ঝুমঝুম বৃষ্টির আওয়াজ। ইনায়াও চোখটাও কেমন করে যেন পিটপিট করছে।

গাড়িতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে ইনায়া। এখনও কিছু পথ বাকি। ফোন বের করতেই সময় দেখে নিলো রেহান।রাত বারোটার কাছাকাছি সময়। ইনায়ার গায়ের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে ইনায়াকে আর ডেকে তুললো না রেহান। কোলে নেয়েই গেটের সামনে যেতেই দেখে ইয়াসমিন আগে থেকেই গেটের সামনে অপেক্ষা করছে। খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে ওকে। ইয়াসমিন আগে থেকেই জানালা দিয়ে বাইরের দিকে লক্ষ্য রাখছিলো।

সেই রাতেই হাড় কাঁপিয়ে জ্বর এলো ইনায়ার। কোনমতে জামাকাপড় বদলেছে। ইয়াসমিন জোর করে ইনায়াকে কিছু খাইয়ে দিল। জ্বরের ঘোরে কী সব উল্টোপাল্টা বকছিলো। বলতে গেলে ইনায়াকে খাওয়াতে গিয়ে রেহান আর ইয়াসমিনকে একপ্রকার যুদ্ধই করতে হলো।

ঔষধ খেয়েই ঘুমে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে ইনায়া। রেহান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে ইয়াসমিন বিছানার একপাশে বসে আছে অনেকটা ইতস্ততভাবে।
-“রেহান, একটু বাইরে আয়!”
এতটুকু বলেই ইয়াসমিন হনহন করে বেরিয়ে গেল। রেহান একনজর ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখে ওর মায়ের পিছু পিছু গেলো।

ইয়াসমিন রেহানের চোখের দিকে পর্যন্ত তাকাচ্ছে না। প্রায় পাঁচ মিনিট নিরবতায় দাঁড়িয়ে থাকার পর রেহান নিজেই বলে উঠলো,
-“কিছু বলবে?”
রেহানের অধৈর্য কন্ঠে টনক নড়লো ইয়াসমিনের।
-“রাতে খেয়েছিস কিছু? যা টেবিলে বস, আমি খাবার আনছি!”

রেহান কিছুক্ষণ ইয়াসমিনের দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকালো। যেন কিছুই বুঝতে পারছে না। রেহানের এই অবিশ্বাসের চাহনিকে উপেক্ষা করেই ইয়াসমিন নিজের হাতে রেহানকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর রেহান চুপচাপ নিজের মায়ের গতিবিধি দেখছে। এমুহূর্তে রেহানকে দেখতে কোন ছোট বাচ্চার থেকে কম লাগছে না।

-“কোন সম্পর্কে কখনও জড়তার জায়গা দিতে নেই! নাহলে ধীরে ধীরে সবচেয়ে প্রিয় সম্পর্কেও মরিচা লাগতে সময় লাগে না! পারলে তোর মাকে ক্ষমা করিস!”
রেহান একদৃষ্টিতে ওর সামনে দাড়িয়েছিল থাকা ক্রন্দনরত মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানকে কিছু বলতে না দেখে ইয়াসমিন একহাতে চোখ মুছে যেতে নিলেই রেহান হুট করে জড়িয়ে ধরে ওর মাকে। কেউ কোন কথা বলছে না। অনেক দিন পর শুধু মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে করছে!
___________________________

সকালের দিকে জ্বর অনেকটাই কেটে এলো ইনায়ার। জেরিন আজ ড্রইংরুমে এক বস্তা বিস্ময় নিয়ে বসে আছে। ইয়াসমিন নিজের হাতে আজকে রেহানকে খাওয়াচ্ছে। শুধু জেরিন না বাকিদেরও একই অবস্থা!
-“আমি কী দোষ করেছি?”
রেহান ভ্রু কুঁচকে নাজনীনের দিকে তাকালো আর নাজনীন তাকিয়ে আছে ইয়াসমিনের দিকে। এদিকে রিয়াদও ফোন ঘাটতে ঘাটতে খাবার টেবিলে এসে বসলো,
-“কাল রাতে পাশের এলাকায় একটা লাশ পাওয়া গেছে!”
গম্ভীর কন্ঠ কানে এতেই সবার চোখ রিয়াদের দিকে গেলো।
-“তোর পরিচিত কেউ?”
প্রশ্নটা করলো জেরিন। রিয়াদ সচরাচর খাবার টেবিলে দরকার ছাড়া তেমন কথা বলে না। হঠাৎ করেই খানিকটা আশঙ্কা জমে গেলো সবার মনে। শুধুমাত্র ইনায়াই ওর মতো করে নিঃশব্দে খাচ্ছে। রিয়াদ ইনায়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“লাশটা সাদাফের!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here