নিস্তব্ধ বিচরণ,পর্ব-১৯+২০

#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -১৯

ফ্লোরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে রেহানের ফোন। যদিও সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই রেহানের। স্থির হয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে থাকা ইনায়ার পাশে বসলো ও। ইনায়ার অশ্রুশিক্ত নয়ন ভাঙা ফোনটার দিকেই অটল।
-“আপনার মতো এতো সম্মানিত ব্যাক্তির আমার ওপর এতো দয়া দেখানোর কারণ জানতে পারি?”
রেহান ইনায়ার হাত ধরতে গেলে ছিটকে সরে যায় ইনায়া। রেহান বারান্দায় যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইনায়া রেহানের ফোন চেক করতে হাতে নেয়। মেসেজ বক্সে আননোন নাম্বার থেকে আসা বেশ কিছু মেসেজ দেখে যেগুলো দুপুরে সেন্ড করা হয়েছে। তারমধ্যে একটা ভিডিও দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় ও। ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে সব। সাথে সাথে ফোনটা ছুড়ে মারে ইনায়া। দেয়ালে বারি খেয়ে ছিটকে পড়ে সে ফোন।

-“আপনি যদি আসল খুনিকে ধরিয়ে না দেন তাহলে এই ভিডিও সাদাফ ভাইরাল করবে তাই তো!”
নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো ইনায়া। হয়তো কোথাও জমে আছে চাপা ক্ষোভ।

-“বিশ্বাস করো, আমি এসবের কিছুই চাই নি! আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইনি। আমি যদি জানতাম ঐ সাদাফ এমন করবে তাহলে কখনোই জেল থেকে বের হতে ওকে সাহায্য করতাম না! আমি শুধু সত্যিটা জানতে চেয়েছিলাম তোমার বাবার কাছ থেকে। পিঠপিছে সাদাফ এতটা নীচ হয়ে উঠবে কল্পনাও করিনি!”
রেহানের একনাগাড়ে বলা কথাগুলো শুনে কিছু বললো না ইনায়া। কেন যেন অসাড় মনে হচ্ছে নিজেকে। কোন অনুভূতি হৃদয়ে কাজ করছে না। না ভয়, না আতঙ্ক আর না কষ্ট। ভাবলেশহীন চোখে উঠে বালিশে মাথা রাখতেই মাথাটা কেমন ঝিমিয়ে এলো।যেন আধার এসে জায়গা করে নিল চোখের আলোয়।

সকালে বেশ স্বাভাবিক ব্যাবহার করছে ইনায়া। রেহান বেশ দুশ্চিন্তা নিয়েই ড্রইংরুমে বসে ছিল। ইনায়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও লাভ হলো না। ও এমন ভান করছে যেন রাতে কিছুই হয়নি। রিয়াদ খান সেই কখন বেরিয়েছে। ইয়াসমিন রেহানের সামনে কফির কাপটা রাখতেই ধীর কন্ঠে মা বলে ডেকে ওঠে রেহান। ইয়াসমিন কিছুসময়ের জন্য থেমে গেলেও রেহানের দিকে তাকালো না।
-“শুধু দাদীর কথা ভেবে এখানে কয়েকদিন আছি। চিন্তা করো না, কোন খুনি সারাজীবন এই বাড়িতে থাকতে আসে নি!”

-“কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!”
কম্পিত গলায় কথাটা বলেই রেহানের চোখের সামনে থেকে সরে আসলো ইয়াসমিন। পেছনে ফেলে গেল অশ্রুশিক্ত চোখে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হওয়া ছেলেকে। নিজেকে দোষ দেয়া ছাড়া হয়তো কিছুই করার নেই তার। ছোটবেলায় ছেলেটাকে একা ছেড়ে দেয়া অনেক বড় ভুল ছিল ওর। বোর্ডিং স্কুলে যাওয়ার পর থেকে রেহানের রাগের পরিমাণ আরও ভয়ংকর হতে শুরু করে। রেহানের করা সব ভুল অপরাধ কাজে টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করতো রিয়াদ। একদম কড়া শাসন থেকে শাসন করাই ছেড়ে দেয় সে। শাস্তি হিসেবে শুধু দূরে রাখে ওর পরিবার থেকে। রিয়াদের মুখের ওপর কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু ইয়াসমিন তো বুঝতো ঐসময় রেহানের ওর বাবা মায়ের সান্নিধ্যের কতটা প্রয়োজন ছিল। সঠিক শাসনের প্রয়োজন ছিলো।
এখন আফসোস করে কী হবে! রেহান হয়তো মনে করে ইয়াসমিন ওর থেকে ঘৃণার তাড়নায় দূরে থাকে। কিন্তু এই মুহুর্তে অপরাধবোধের পাল্লাটাই যে বেশি!

রেহান অফিসে যেতেই ইয়াসমিনকে ধরে বসলো ইনায়া।
-“মা, একটা কথা ছিল!”
বেশ সতর্ক কন্ঠে বললো ইনায়া।
-“কি হয়েছে?”
চায়ে চুমুক দিয়েই ইনায়ার দিকে তাকালো ইয়াসমিন। ইনায়ার মুখটা সকাল থেকেই শুকনো মনে হচ্ছে। কিছু বলবে বলবে ভেবে আর বলা হয়নি।
-“আপনার কেন নিজের ছেলেকে খুনি মনে হয়?”
বিস্ময় প্রকাশ পায় ইয়াসমিনের চেহারায়। মুখটাও যেন কেমন শুকিয়ে গেল।
-“মা বলেছিলো তুমি এ ব্যাপারে কিছুই জানো না।”
-“জানতাম না! এখন জানতে চাই!”
-“কি বলবো আমি! রিয়াদ একজন সাক্ষীকে টাকা অফার করেছিলো সেটা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। সবটা না জেনেই ভুল ধারণা পুষেছিলাম আমি! রেহানের বাবা মনে করেছিলো রেহানই হয়তো খুনটা করেছে তাই টাকা অফার করেছিলো। সেই লোক টাকাটা নেয়নি। আমিই পুরোটা বিষয় না জেনে ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম এবারও হয়তো রেহানের কোন অপরাধ ঢাকতে চায় রিয়াদ। আর ততক্ষণে রেহান আমার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে। বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ছেলেটা অভিমান করে। লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারি না আমি!”

-“আপনি আপনার ছেলেকে বলেননি কেন আমার বাবা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে কোন টাকা নেয়নি!”
ইনায়ার দিকে অবাক চোখে তাকায় ইয়াসমিন।
-“তোমার বাবা?”
ইয়াসমিন হঠাৎ এভাবে চমকে ওঠায় ইনায়া কিছুটা নড়েচড়ে বসে। ইয়াসমিন আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারিয়া এসে ইয়াসমিনের কোলে চড়ে বসলো।
-“আমরা এই বিষয়ে পরে কথা বলবো!”
ধীর কন্ঠে বললো ইয়াসমিন। ইনায়াও মারিয়ার সামনে কিছু বললো না। তবে ইয়াসমিনের প্রতিক্রিয়ায় যতটুকু বুঝেছে সেই সাক্ষী যে ইনায়ার বাবা ছিল সেটা হয়তো ইয়াসমিন জানতো না।

জান্নাত এসেই ইনায়াকে টেনে রেহানের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালো।

-“প্রচন্ড কৌতুহলী মেয়ে তুমি!”

-“শুধুমাত্র কৌতুহলে আমি এসব করছি! আমার মৃত বাবার সম্পর্কে কিছুই জানার অধিকার কি আমার নেই!কেউ আমার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিলে আমি নিশ্চয়ই চুপচাপ বসে থাকবো না। এই সব কিছুতে আমিও জড়িত।”

-“কখনও কখনও কিছু সমস্যার সমাধান আমাদের চোখের সামনেই থাকে। আমরাই বুঝতে পারি না!”

-” কি বলতে চান আপনি?”

-“ভুল বুঝাবুঝির সমাধান ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করে খুব সহজেই করা যায়। কিন্তু সেখানেই পিছিয়ে যাই আমরা। মানুষের চোখও ধোঁকা দিতে পারে । আমরা অনেক সময় সেটা মানতে পারি না। আর না তিল তিল করে পুষে থাকা দূরত্ব, ধোঁকা, ভুল মানসিকতাকে এতো সহজে ছাড়তে পারি!এই বাড়িতে তাই হচ্ছে। হয়তো তোমার মনেও!”

-“কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না আমি!”
জান্নাত মলিন হেসে বললো,
-” হুট করে কারো সম্পর্কে কোন ধারণা এনে বসো না। মানব মন বড়ই বিচিত্র। কার মনে কি আছে সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।”

জান্নাত চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল ইনায়া। সাদাফ ওর এতো বড় ক্ষতি করে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে সেটা ইনায়া মেনে নেবে না!
হঠাৎ করেই ড্রেসিং টেবিলের ওপর একটা ডায়েরি লক্ষ্য করলো ইনায়া। রেহান তো নিজের পারসোনাল ডায়েরি যেখানে সেখানে ফেলে রাখে না। ইনায়া উঠে ডায়েরিটা হাতে নিতেই একটা ভাজ করা কাগজ নিচে পড়লো।

চলবে…

#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#তানজিলা
#পর্ব -২০

-“তোমাকে কিছু বলার সুযোগ তো পাচ্ছি না তাই এই পন্থা নিতে হলো। জানিনা এতে তুমি তোমার মনে স্বস্তি পাবে কি-না। আমার ধারণা ছিল সত্যিটা থেকে দূরে থাকাই তোমার জন্য ভালো। কিন্তু শেষপর্যন্ত তোমার জেদের কাছে হার মানলাম। সাদাফের সাথে আমার যখন পরিচয় হয় তখন আমি বেশ ছোট ছিলাম। তবে সেই বিভৎস স্মৃতি আজও মনে আছে। বাচ্চা পাচারকারী চক্রের কবলে পরেছিলাম একবার। আমার বয়সী আরও অনেকেই ছিল সেই অন্ধকার বদ্ধ জায়গায়। তাদের মধ্যে একজন ছিল সাদাফ। চোখের সামনে কত জনকে মরতে দেখেছি হিসেব নেই। আমার নিজেরও মনে হয়েছিলো আমি হয়তো ফিরতে পারবো না! হয়তো আসলেই পারি নি। বেঁচে ফিরলেও সেই ভয়ংকর অনুভূতি মস্তিষ্কে গেঁথে আছে। আমি মনে করেছিলাম সাদাফ মারা গেছে। দুই বছর আগে হঠাৎ করেই সাদাফের সাথে দেখা হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি আমি! যদিও সাদাফ আগের থেকে অনেক বদলে গেছিলো। মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসে জানতাম কিন্তু এতটা…!”

হঠাৎ কেউ এক কাপ চা চোখের সামনে রাখতেই কিছুটা চমকে উঠে কাগজটা ডায়েরিতে রেখে দিল ইনায়া। জান্নাত ইনায়ার হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিয়ে। বিছানায় বসে পড়লো। রেহানের ডায়েরি ইনায়ার হাতে দেখে জান্নাতের চোখে যে বিস্ময় ছিলো সেটা ইনায়া বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। তবে এই মুহুর্তে জান্নাত নিজের কাজ নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু ইনায়ার মনটা তো রেহানের ডায়েরিতেই পড়ে আছে। চা টাও ঠান্ডা হতে চললো। ফুল হাতা ড্রেসের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে রেখেছিল ইনায়া। জামার হাতাটা একটু উঠে ছিল যেটা ইনায়া খেয়াল করেনি।
জান্নাতের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই হাতে থাকা সুস্পষ্ট দাগগুলো ঢেকে ফেললো ইনায়া। জান্নাত মৃদু হেসে বললো,
-“আমি চেয়েছিলাম রেহান তোমাকে কথাটা বলুক।”
ইনায়া আনমনে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“আমি হয়তো সত্যি পাগল হয়ে গেছি!”
-“তোমার তাই মনে হয়?”
-“আমি জানি না! কখনও নিজেকে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মনে হয় আবার কখনও না!”

ইনায়া এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো। জান্নাতকে বেশ মনোযোগ সহকারে ওর কথা শুনতে দেখে ইনায়া খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে চুপ হয়ে গেল।
-“সরি আপু, আমিও না এসব বলে আপনাকে বিরক্ত করছি!”
জান্নাত এবার একটু শব্দ করেই হাসলো।
-“তোমার কথা শোনা তো আমার দায়িত্ব! আফটার অল ইউ আর মাই নিউ পেশেন্ট!”
ইনায়ার ভ্রু কুঁচকে এলো। পেশেন্ট মানে!
-“কাল থেকে তোমার ট্রিটমেন্ট শুরু হতে পারে। কোন প্রবলেম হলে ফোন করতে পারো।”
কিছুটা অবাক কন্ঠে ইনায়া বলে উঠলো,
-“আজব তো! আমি কখন থেকে আপনার পেশেন্ট?”
জান্নাত নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,
-“বলতে পারো এখন থেকেই! এন্ড ট্রাস্ট মি জেদ কিন্তু আমারও কম না!”
ইনায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জান্নাত উঠে হনহন করে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ইনায়াও রুম থেকে বেরিয়ে জান্নাতের পিছু নিলো।

জেরিন বেগম মুখটা শুকনো করে খাটে বসে আছেন। জান্নাতকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে বসলেন।
-“কি হলো দাদী? তোমার জন্য আজকে ছুটি নিয়ে দেখা করতে এলাম! তাও এমন করছো!”
জান্নাতের ছুটি নেয়ার বিষয়টা শুনে মুখ ঘুরিয়ে একবার জান্নাতের দিকে তাকালো জেরিন বেগম। খুশী হলেন না-কি বোঝা যাচ্ছে না। তবে জেরিনের চাহনি দেখে যা বুঝার বুঝে নিলো জান্নাত। ইনায়া চুপচাপ জেরিনের পাশে বসে দাদী নাতনির কান্ড দেখছে।
-“তোমার জন্য খিচুড়ি রান্না করে এনেছি। আর মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে হবে না!”
খিচুড়ির কথা শুনেই জেরিনের চোখটা চকচক করে উঠলেও পরক্ষনেই দাত কটমট করে বললো,
-“সারাদিন এখানে বসে থাকতে কার ভালো লাগে! তোরা পারলে আমাকে নিয়ে বাইরে চল। বিরক্ত হয়ে গেছি আমি!”
______________________

মারিয়াকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় ইনায়ার সাথে কোন কথা বলতে না পারলেও ইয়াসমিনের মুখে লেগে আছে দুশ্চিন্তার ছাপ। শীতল হাওয়ায় মুখোরিত পরিবেশ। কিছুক্ষণ আগেই নেমেছিল ঝুম বৃষ্টি। এখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। নিজের অশান্ত মন নিয়ে ইনায়া নিজের ঘরে এসে কাগজটা খুলে আবারও পড়তে শুরু করলো।

-“আনিসা খাতুন হত্যাকান্ডের আগে আমার সাথে তার তুমুল কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমাকে চড় মেরে বসায় নিজেকে সেদিন কন্ট্রোল করতে পারিনি। সবার সামনে তাকে থ্রেট দিয়ে বসি। যদিও কোন কিছুই আমি ঠান্ডা মাথায় বলিনি। পরবর্তীতে বাবা তাকে চাকরি থেকে বের করতে চাইলেও আমিই তা করতে দেয় নি। তারপর দিন বিকেলে সাদাফ আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমরা করিডোরে একা ছিলাম। সাদাফের ফোনে কল আসায় ও কিছুদূর চলে যায়। কিছুক্ষণ পর চিৎকারের আওয়াজ শুনে আমি দৌড়ে ছুটে যাই সেখানে। সেদিকে যেতেই দেখি সাদাফ আমার পিছু পিছু আসছে। তোমার বাবা আনিসা খাতুনের রক্তাক্ত শরীর দেখে চিৎকার করে উঠেছিলেন। শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল না। হসপিটালে পৌঁছতেই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তোমার বাবার মাথায় কি চলছিলো আমি জানি না। যেখানে সবাই আমাকে সন্দেহ করছিলো তোমার বাবা হুট করে পুলিশের কাছে সাদাফের নাম বলে বসে। যদিও পুলিশ ইনভেস্টিগেশনের সময় আমি বলেছিলাম সাদাফ আমার সাথে করিডোরে ছিলো। কিন্তু ওই কিছুসময়ের জন্য আমার চোখের আড়ালে গেছিলো সেই জোরেই সাদাফকে ছাড়া হলো না।

সাদাফ গ্রেফতার হওয়ার পর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। যদিও সেটা সফল হয়নি। আমার মনেও ছিল দ্বিধা। সাদাফের ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল বেশ ভয়ংকর। এর আগেও মার্ডার কেসে ফেঁসেছিলো। শুধুমাত্র প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়েছে। এইবার কেউ সাক্ষ্য দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে তাই এই সুযোগে আরও অনেকেই সাদাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকে।

তোমার বাবা চাকরি ছাড়তেই আমার মা হুট করে আমাকে দোষারোপ করতে শুরু করলো। সে নাকি জানে আমি খুন করেছি আর তা ঢাকতে তোমার বাবাকে টাকা দিয়েছি। কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার সন্দেহের কাটা গিয়ে পড়ে তোমার বাবার ওপর। এবার মনে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে তোমার বাবাকে খুঁজতে শুরু করলাম। তোমার বাড়ির সামনে এই আশায় যেতাম যদি অন্তত তোমার সাথে দেখা করতে আসে তোমার বাবা! কিন্তু তা হয়নি। সাদাফ জেল পালিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। যদিও ও কোথায় যেতে পারে সে নিয়ে কিছুটা ধারণা আমার ছিল। হঠাৎ করে খবর পেলাম তোমার কিডন্যাপিং এর কথা। প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি হয়তো তোমার বাবার কাছে আছো। তোমাকে খুঁজতে শুরু করলাম এইবার। সেইমুহুর্তে সাদাফ যে এমনটা করতে পারে মাথায় আসে নি। সেদিন সাদাফকে খুঁজতে যেয়েই তোমাকে ঐ ঘরে পাই আমি। তোমার তো জ্ঞানও ছিলো না। ভিষণ ঘৃণা হচ্ছিলো নিজের ওপর সেদিন। এই সাদাফকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আমি! সাদাফ এখনও পলাতক। আনিসা খাতুনের খুন না করলেও আরও অনেক অপরাধের বোঝ জমা আছে ওর ঘাড়ে! হয়তো ওর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস করার ফল পাচ্ছি আমি!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here