নিয়তি পর্ব -১২

#নিয়তি
#সেলিনা আক্তার শাহারা
#পর্ব—–১২

_________________

কাজের মেয়ে দরজা খুলতেই এনি হাজির!!!

সবাই কিছুটা বিচলিত তবে সপ্না খুব চটেও আছে কারন এনি মেয়েটা সুবিধার নয়,
সব সময় ছেলেদের সাথে চিপকে থাকার স্বভাব।

এনি এসেই তুর্জের চেয়ার টার পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পরে।
সোহাম এনির আসার কারন জানতে চাইলে,
এনি মুচকি হাসি দিয়ে বললো স্যার আসলে সেদিনের দুজনের পার্সপোর্ট আর কাগজ গুলো আমার কাছে জমা দিয়েছে তাই দিতে এলাম…

নন্দিনির রাগও কম নয় সে কিছু বলতেও পারছেনা, তবু হালকা হাসি হেসে বললো তাতো একটু পর ভাইয়া অফিসে গেলেই দিতে পারতেন এখানে কেন শুধু শুধু কষ্ট করে এলেন?

এনি বেশ বুঝতে পারছে তুর্জের বৌ টা বহুত চালাক তাই আর এখানে তার কোন কেরামতিই চলবে না,

শিলা বেগম খেতে খেতে বললো ঠিক আছে এসেছো যখন নাস্তা করে নাও,

এনিও জোরসুর হয়ে প্লেট টা কাছে এনে নিয়েছে,
নন্দিনি তুর্জের পাশে না বসায় এনি সোজোগটা পেয়েছে তুর্জের পাশে বসার,
না তা তো হয় না এই ডাইনিটা কে সরাতেই হবে,
নন্দিনি তুর্জের পাশের চেয়ারের কাছে এসে খুব সুন্দর করে বললো, এটা আমার চেয়ার আপনি ঐখানটায় বসুন মেহমান রা এখানে বসে!!!!!

এতে এনি অপমান বুধ করলো, তবে নন্দিনি তা পাওা দিলো না আর তুর্জ বেশ খুশিও হল,

এনি আর নাস্তা খেতে বসলো না।
সোজা সোফায় বসে পরল,অবশ্য শিলা বেগম আর ডাকলনা কারন সপ্না আর নন্দিনির পছন্দ হচ্ছেনা এনিকে আর তুর্জের বা সোহামের সাহস নেই কিছু বলার।
তুর্জ আবার চামচ দিয়ে খেতে গেলে চামচটা পরে গেলে এনি এক দৌড়ে তুর্জের কাছে এসে বললো আরে আরে স্যার আপনার হাতে তো ব্যাথা পেয়েছেন বলেই তুর্জের হাতটা ধরে ফেলেছে,

তবে নন্দিনির গরম চোখ দেখে তুর্জ বার বার ঢুক গিলছে, ঝট করে হাতটা সরিয়ে নিয়ে এলো তুর্জ,

নন্দিনিও দাতঁ কিরমিরি হাসি দিয়ে তুর্জের মুখের সামনে খাবার ধরল,

শিলা বেগম আর একদন্ড দেরি করল না তুলিকে নিয়ে উঠে গেলো,
সপ্না খাচ্ছে কম আর বির বির করছে বেসি, সোহামের গলা দিয়ে খাবার নামছে না শুধু ঘামছে এনি বার বার সোহাম কে ছাদে যেতে ইশারা করছে,
সপ্না এই দৃশ্য না দেখলেও আরেক জন ঠিক খেয়াল করছে।

তুর্জ আপন মনে খাচ্ছে আজ বিয়ের এত দিন পর নিজের বৌ এর হাতে খাচ্ছে বেশ ভালোই লাগছে,
খাওয়া শেষে তুর্জ রুমে জেতেই নন্দিনিও তুর্জের পিছু নেয় কারন না জানি এনিটা ওর সাথে জাওয়া ধরে।

তুর্জ রুমে গিয়ো ওয়াস রুম থেকে এসে তোয়ালেটা সোফায় রেখে শার্ট পরছে,
নন্দিনির কি জেনো মনে পরতেই বাহিরে চলে আসে,

তুর্জও রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে,
কিন্তু নন্দিনি রুমে ঢুকতেই চোখ আসমানে, কারন তুর্জ এই মাএ তোয়ালেটা দিয়ে মুখ মুছেছে, আর সেই তোয়ালেটা এনি নিজের গালে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে হাসছে!!!

( এই মেয়েটা কি চায় সোহাম ভাইয়ে কি সব বাজে ইশারা করছিলো, আবার এখানে এসে তুর্জের সাথে এমন টা)

তবে আর বাড়তে দেয়া ঠিক হবে না,
নন্দিনি রাগে তেরে আসে এনির দিকে,
হাত থেকে তোয়ালেটা ছো মারতেই এনি চোখ খুলে ফেললো,তবে এবার ভেজা বিড়ালের মতই মুখটা তবে তেমন ভয় পেয়েছে বলে মনে হয় না,
নন্দিনি বহু কথাই শুনালো,লজ্জা নেই পর পুরুষের সাথে এখাবে মিশতে? আর এই তোয়ালে নিজের সাথে জরিয়েই বা কেন রেখেছন? উওর দিন।

সপ্না নন্দিনির রুমের কাছ দিয়েই যাচ্ছিলো চেচামেচিতে ওর রুমে ঢুকতেই বুঝতে পারলো এনি কিছু করেছে, তবে সপ্না কিছু কারনে এনি কে পছন্দ করে না, তবে আজ হাতে নাতে এই কান্ড ধরা পড়ায় বেশ করে অপমান করেছে সপ্না যা নয় তাই বলেছে,
নন্দিনিও ছার দেয় নি, তবে নন্দিনি একটা জিনিস বুঝতে পারল না সপ্না ভাবি এত চটে গেলো কেন? মনে হচ্ছে বহু হিসাব নিকাশ এনির সাথে আনেক আগে থেকেই,৷

এনি একটা শব্দ করে নি মাথা নত করে সব কথা গুলো এক কান বন্ধ করেই শুনছিলো, কারন কথা গুলোর জবাব তো দেয়া হবে আজ না হয় কাল, তাই কথা গুলো কানে ও মনে গেথে রাখা চাই তো………

এনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও বেশ একটা রহস্য ময় হাসি হেসে গিয়েছে আর প্রতিজ্ঞা করে গেছে, একটা দিন আসবে যে দিন এবাড়িতে আমি আসব কিন্তু কারো সাদ্ধ হবে না আমাকে তারানোর,
শুধু সবাই চেয়ে চেয়ে দেখবে আমার খেলা………

~~~~~~~~

তুর্জ অফিসে সোহাম বাড়িতে নেই শিলা বেগম ও একটু বেড়িয়েছে,
সপ্না আর নন্দিনিও প্লেন করলো একটু ঘুরে আসা যাক…

যেহেতু সপ্নার বাপের বাড়ি যেতেই ১ দিন লাগে সেখানে জাওয়া সম্ভব নয় ,
তাই নন্দিনিদের বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসারও সোজগ হয়েছে, তাই তোর জোর দিয়েই ২ জনে তৈরি হয়েছে,

সারা দিন ঘুরে বাড়ি ফিরতেই দেখে তুর্জ আর শিলা বেগম বাড়ি চলে এসেছে, এবার দুজনই মাথা নত হয়ে দারিয়ে আছে, কারন একবার বলে জাওয়া উচিত ছিলো কিনা। এবার হয়তো বকা খেতে হবে।

কিন্তু শিলা বেগম কোন কথাই বললো না কারো সাথে, তুর্জও বেশ রাগ তবে একবার কল করেও জানতে চায় নি নন্দিনি কোথায়, কারন সে সালাম সাহেব কে আগেই কল করে জেনেছিলো, আর খুব ভালো করেই জানত মোল্লার দৌড় মসজিত পর্যন্ত জাবে আর কই???

তবে শিলা বেগম বেশ রাগ হয়েছে তা উনার মুখ দেখেই বুঝা গেলো,আর কারো সাথে কথা ও বললোনা।

“””””——–

বেশ কয়েক দিন ধরে সোহাম বাড়ি আসে কম, মাঝে মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে জায় কে জানে তবে বহু কথা কাটা কাটি হয় সপ্না আর সোহামের মধ্যে, দিন দিন সোহাম কেমন পালটে যাচ্ছে, সপ্না বহু বলেছে এনিকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পি এ রাখতে, এটা বললেই ঝগরা আরো বেড়ে জায়,তাই সপ্না কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে,সোহামের সাথে।

এদিকে তুর্জ আর নন্দিনির সম্পর্ক টা একটা দড়ির মত ঝুলছে, না বেয়ে উঠছে না নামছে মাঝ খানে আটকে আছে, তবে তুর্জ বেয়ে উঠতে চাইলেও বার বার দড়িটা নাড়া দিয়ে সেই আগের জায়গার তুর্জকে নামিয়ে দেয়।

দুজনের মধ্যে তো কথা বলাও বন্ধ হয়ে গেছে ধিরে ধিরে তুর্জ কথা বলতে আসলে কোন উওর পায় না বলে সেও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে,

নন্দিনির মন জয় করতে বহু চেষ্টাই করেছে সায়মার ছবি গুলো নিজ হাতে নামিয়ে আলমাড়িতে তুলে রেখেছে, আর সেই জায়গায় তুর্জও নন্দিনির বিয়ের ছবি তুলির ছবি, আর তাদের তিন জনের একটা ছবি ঝুলিয়েছে, সে দিন বেশ খুশিও হয়েছিলো নন্দিনি তবে খুশি টা প্রকাশ পায় নি,।

~~~~~~আরো তিন মাস কেটে গেছে, সোহাম ২ দিন একনাগারে বাড়ি ফিরেনি, সপ্না দিন দিন নাওয়া খাওয়া ছেরেদিচ্ছে,
শিলা বেগম আর চুপ থাকার পাএ নয় কেন এসব হচ্ছে ওদের মাঝে কেন?

তুলিকে নিয়ে একটু কথা হয় নয়তো সপ্না তেমন কথাও বলেনা, নন্দিনির বেশ মুড অফ থাকে,
সপ্নার সাথে আড্ডা না দিতে পেরে বড্ড একা হয়ে গেছে, আজ কাল অযথাই রেগে জায় কাজের মেয়েদের বহু হেনস্তা করে,

মাঝে মাঝে তো তুলিকেও ধমক দিয়ে বসে, তখন তুলি কান্না করলেই ওর কষ্ট আরো বেড়ে যায়,

এই খিট খিটে মেজাজ আগেও ছিলো, তবে এতটা নয়, এখন তো সবাই ভয়ও পায় নন্দিনিকে, ওকে দেখলেই কাজের লোকেরা ছোটা ছুটি শুরু করে, সপ্না বেশির ভাগ তার রুমেই থাকে, রান্নার সময় টা বের হয়, তবে খাওয়ার সময় পাওয়া জায় না,

সোহামের মনটাও তো শান্ত নয় কি করবে সে তো চায়নি এমন টা, আসলে সেও একটা চুড়া বালিতে ফেসে গেছে।
না পারছে বলতে না পারছে ছারতে, সপ্নার সাথে বিয়ের এত বছরেরও চোখ মুখ কালো করে কথা বলে নি, কিন্তু আজ নিয়তির কি লিখল সেই সোহাম কিনা সপ্না কে দুচোখের বিষের মত লাগছে, তা সোজা বলেই দিলো।

এদিকে তুর্জ রোজ চকলেট আনে আইস্ক্রিম আনে, কারন নন্দিনির পছন্দ, তবে দুনিন ধরে এগুলো আনলেই তুর্জের মুখে ছোরে মারে এগুলো কি খাওয়া জায় নাকি??

কি বিস্রি ছি, আজ কাল তুর্জ ভয়ে ভয়ে থাকে আরো বেশি.. কারন এখন তো সবার সামনেই যা খুশি তাই বলে দেয়।

টক খেতে বহু মন চাইলে তুর্জকে কল করে তেতুলের জন্য। সারা বাজার ঘুরে না পেয়ে সেদিন আর বাড়ি ফিরার সাধ্য হয় নি।
তাই অফিসেই শুয়ে ছিলে,
,,,,,,,,,,
আজ কাল শিলা বেগম নন্দিনির এমন আচরনে বড় নারাজ, তবে এর তো একটা কারন হবে তাই ডাক্তারের কাছ জাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলে, তাতেও চটে গেলো — মা আপনার মনে হয় আমি পাগল?? ডাক্তারের কাছে কেন জাবো?

শিলা বেগম আর একটা কথাও বলে নি, তাই নন্দিনির মাকে কল দিয়ে সব জানায়,

কহিনুর বেগম সব শুনে কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেলো, তবে সালাম সাহেব কে জানানো ঠিক মনে করল না, কারন এমনিতেই অনেক টেনশনে আছে,

…………

বিকেলে তুলিকে নিয়ে নিচের বাগান টায় হাটছে নন্দিনি, সেখানে জবা ফুল দেখেই উদাস মনটা আবার চুলবুলিয়ে উঠলো,কারন নিলয়ের খুব পছন্দ জবা ফুল, রোজ নন্দিনির সাথে দেখা করার সময় জবা ফুল এনে নন্দিনির বেনুনিতে গুজে দিতো,
নন্দিনি নিয়লকে খুব খেপাতো, বলতো এত এত ফুল থাকতে কি জবা ফুল পছন্দ হয় তোমার??

নিলয়ে নন্দিনির চুলে হালকা টান দিয়ে বলতো সবার পছন্দ তো এক নয়, তোমায় সারা জীবন বেনুনি তে জবা ফুল দিয়েই কাটাতে হবে,
কতইনা ভালো ছিলো সময়টা সব মিথ্যা হয়ে গেলো, সব আশা সব শেষ, এতই কি ঘৃন্না করে আমায় তাই এতটা মাসে একবার দেখা তো দূর একটা কলতো দিতে পারত?
একটা কুকুর পুশলেও তো মায়া হয় , আর এত দিনের ভালোবাসার বিনিময়ে একটু খুজ তো নিতেই পারত….

উদাসি হয়েই সারা বেলাটা কাটিয়ে দিয়েছে,
রাতে খাতেও আসেনি আর তুর্জ ডাকার সাহস পায় নি,
আর সপ্না যাই একটু বন্ধুত্ব পাতিয়ে ছিলো নন্দিনির সাথে, এখন সপ্নার মনটাও ভালোনা, কারন সোহাম দিন দিন সপ্নাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে,
রাতে রুমে থাকে কম কে জেনো ফোন দিলেই রুম ছেরে বেড়িয়ে জায়।

তার পরও শিলা বেগম তুর্জের হাতে এক প্লেটে খাবার দিয়ে বললো রুমে নিয়ে রেখে দিস খিদে পেলে নিজেই খেয়ে নেবে।

তুর্জ খাবার টা রেখে শুয়ে পরেছে অনেকক্ষন এদিকে নন্দিনির বেশ খিদে পেয়েছে, হঠাৎ করেই এমন হয় কখনো খেতে ইচ্ছা হয় না, আবার মাঝে মাঝে এত খিদে পায় মন চায় গাছ পালাও খেয়ে ফেলতে পারবে।

……… হালকা হালকা শীত আনাগুনা দিচ্ছে তাও এত নয় যে গায়ে গরম কাপর জরিয়ে শুতে হবে,,

তবু তুর্জ পাতলা একটা চাদর নিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে নিয়েছে, কারন নন্দিনি উঠে আস্তে আস্তে খাবারের দিকে এগুচ্ছে,
আর তুর্জকে জেগে থাকতে দেখলে হয়তো খাবেনা,

নিজের চোখ মিছে মিছে বন্ধ করেও রাখতে পারবে না তাই এই পদ্ধতি নেয়া।

লাইট আর অন করে নি নন্দিনি কারন তুর্জ জদি জেগে জায়??

ডিম লাইটের আলোতে বসেই খাবার টা নিয়ে গপ গপ করে খাচ্ছে,
মুখে এত টাই খাবার গুজেছে জে গিলতে গিয়েই বিষম খেয়েছে প্লেটটা হাত থেকে রেখে পানির গ্লাসটা খুজছে আর কাসছে,
তবে অন্ধকারে তেমন দেখা জাচ্ছেনা,
হঠাৎই গ্লাসটা মুখের সামনে চলে এলো,নন্দিনির আর চারপাশ না দেখে গ্লাসটা নিয়ে পুরো পানিটা খেয়ে নিয়েছে,

পানি খাওয়া শেষ হতেই রুমের লাইটটা জ্বলে উঠলো, সব থেকে নন্দিনি অবাক উনি পানি নিয়ে এলেন কিভাবে????

এই বুড়োটা তো ঘুমিয়ে ছিলো, তাহলে কি ঘুমানোর নাটক করেছে,!!!

……

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here