নিয়তি পর্ব -২২ ও শেষ পর্ব

#নিয়তি
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
#পর্ব——২২
____°____°_°°°°°°°°°°
(★ অন্তিম পর্ব)★

সবাই অধির আগ্রহে দারিয়ে আছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে..
একটু আগেই নন্দিনিকে ভিতরে নেয়া হয়েছে, ডক্টর ফারহানাই অপারেশন টা করবে, তবে বারন করেছিলো নন্দিনিকে যে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব তাহলে…
নন্দিনি কারো কথা শুনেনি তার একটাই কথা আজকেই আমার মেয়েকে দুনিয়ায় আনবো বাস, তুর্জ পেরে উঠেনি নন্দিনির জিদের কাছে, এত জিদ করে কেন যে মেয়ে টা আল্লাহ জানে পেটেরটা এমনই হয় নাকি…..সালাম সাহেব কহিনুর বেগম / শিলা বেগম সপ্না সোহাম সবাই উপস্থিত সেখানে।
বড় জেঠু আর জেঠিমা রাও আসছে রাস্তায় আছেন।

অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার আগে তুর্জের কলারটা চেপে ধরে নন্দিনি রাগি লুক নিয়ে বলে গেছে আমার জদি কিছু হয় তাহলে আবার বিয়ে জেনো না করা হয়!!

এত টেনশনের মধ্যেও সবার মুখে হাসি ফুটেছিলো কি বাচ্চামু কথাই না বলে নন্দিনি,
তুর্জ নন্দিনির মাথায় নিজের মাথাটা টুকা দিয়ে উহুম করবনা…

নন্দিনি হালকা হাসির ভাব নিয়ে বললো এমনতো বলবেনই আপনি তো চানই আমি মরি,
আপনার সায়মা মরার পরও তো বিয়ে করতে চান নি, তার পর আমি এলাম আমিও আপনার জীবন হয়ে গেলাম, এবার আমি গেলে হয়তো অন্য কেও চলে আসবে…..
একেই তে এত টেনশনে হাত পা কাপছে নন্দিনির জেনো কিছু না হয়, তাও সে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে,

নন্দিনি ভিতরে ঢুকতে গিয়েও আবার ফিরে এসে তুর্জকে জরিয়ে ধরে বলেছে কিছু হবেনা আমার অযথা টেনশন নিবেন না, দেখবেন আমি আর আমাদের মেয়ে সুস্থ ফিরবো…

নন্দিনির এই ভরসা দেয়ায় তুর্জের মন টা কিছুটা হলেও হালকা হয়ে এসেছে….

~~~~~

ঘন্টা খানেক পর শিলা বেগমের কোলে কান্না করেই যাচ্ছে এক অবুঝ শিশু, মাএ নার্স এনে কোলে দিয়ে গেছে..
নন্দিনিও সুস্থ কেবিনে সিফ্ট করতে একটু সময় লাগবে, শুধু বাচ্চাটাকে দিয়ে গেছে…

সবাই আদরে আদরে ভরে দিচ্ছে,তুর্জ দূর থেকে মেয়েকে দেখে আবার নন্দিনিকে দেখার আাশায় দারিয়ে আছে…

তুর্জ আর নন্দিনির মেয়ে হয়েছে… কহিনুর বেগমের চোখের পানিতে দুই এক জন ভেসে জেতে পারে,উনাদের এক মাএ মেয়ের অংশ এই পিচ্ছিটা, দেখতে হুবহু নন্দিনির মায়াবি মুখটা, তবে তুর্জের থুতনিতে একটা ছোট্ট তিল আছে,সেই তিলটা নিয়ে এসেছে মেয়েটা….

তুলি সবাইকে বাধা দিয়ে বললো ও আমাল বোন আমি ওকে কোলে নিবো বাবাই দাও না বোনকে এমন তুতলা তুতলা কথায় সবার মন ভরে যায় কহিনুর বেগম তুলিকে কোলে নিয়ে বললো ও তো এও ছোট্ট আগে বড় হক না তার পর তুমি নেবে…

কখন থেকে তুলি তার ছোট্ট বোনটাকে দেখেই যাচ্ছে, এত ক্ষন শুধু কেদেই যাচ্ছিলো তবে তুলির দিকে ফেল ফেল করে চেয়ে রয়েছে…

অবাক করা কান্ড এটা ছিলো এই মাএ জন্ম নেয়া ছোট্ট শিশুটা কি করে তুলির আজ্ঞুল টা ধরে রেখেছে….
সবাই বেশ করে বলা বলি করছে দুই বোনের ভালোবাসা কেও বুঝবেনা, নয়তো কারো কোলে শান্ত হয় নি এখন বোনকে দেখে কি সুন্দর তাকিয়ে আছে দেখো না….
তুলিতো সেই তুতলা তুতলা কথা বলেই যাচ্ছে তাতো এই ছোট্ট শিশুটা কিছুই বুজতে পারছে না..

~~~
কিছুক্ষন পর
নন্দিনিকে কেবিনে সিফ্ট করা হয়েছে, তুর্জ নন্দিনির হাত টা চেপে ধরে তাকিয়ে আছে..

নন্দিনি তুর্জের দিকে তাকিয়ে বললো কি হল কাদঁছেন কেন??
আমাদের মেয়েকেতো একবার দেখান!!!

শিলা বেগম বাচ্চাটিকে নন্দিনির দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো নাও বৌ মা তোমার মেয়ে…

নন্দিনি বাচ্চাটিকে না দেখেই তুর্জকে বললো নিয়ে যান ওকে,
ওর কাছে নিয়ে যান যে ওর নাম ঠিক করে রেখেছে,
যে ওকে দেখতে না পারার শুকে ভুগছে..

যে নাকি ছবির সব অংশ পূরন করেনি, ওর কাছে নিয়ে বলুন ছবিটা পরিপূর্ন করতে..
সেই বেঈমান কে গিয়ে বলুন আমি এত অকৃতজ্ঞ নই, দেখে যেতে দিন তার#নিয়তি কে

কেও না বুজলেও নন্দিনির পরিবার আর তুর্জ বেশ বুঝতে পেরেছে নন্দিনি কার কথা বলছে,কার জন্যই এত তুর জুর নিজের মেয়েকে দুনিয়ায় আনার জন্য!!!

তবে কি করে সব টা জানলো??
~~~

উপরের ফ্লোরে নিলয় বসে আছে তার ডাক্তাররা সকল প্রসেস শেষ করে কাগজ পএ তার মা বাবাকে দিয়ে দিলো,কিছুক্ষন পরই এমবুলেন্সে করে তাকে এয়ারপোর্টে পাঠানো হবে……

~~~
দরজার বাহিরে কারো কান্নার শব্দে সবার নরজ পরে বাহিরের দিকে..
তুর্জের কোলে একটা ছোট্ট শিশু কান্না করছে..
তবে কার সেটাও সবাই বুঝতে পেরেছে, নিলয় বিছানা ছেরে ছুটে এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদরে ভরে দিয়েছে…

ওকে নিয়ে এখানে কি করে এলেন আর.. নন্দিনি!!

নিলয়ের বিচলতা দেখে তুর্জ নিলয়ের কাছে এসে বললো চিন্তা নেই আপনাকে শেষবারের মত দেখাবে বলে সে আজ দিয়েপাঠিয়ে ছে।
.

নিলয়ের চোখের পানিতে বাচ্চার কপাল ভিজে গেছে,তুর্জ ঝটপট করে নিয়তির কপালটা মুছে দিয়ে বললো ভয় নেই সে ভালো আছে যার ভালোথাকার কামনায় আপনি তিলে তিলে শেষ হচ্ছেন!!!!
~~~

তুর্জ নন্দিনিকে বলেছিলো নিলয়কে একবার দেখবে কিনা.. নন্দিনি সোজা উওর দিলো কখনো না,সে আমার উপর ভরসা রাখতে পারেনি নিজের সবটা লুকিয়ে চুরের মত ঘুরে বেরিয়েছে তাকে সেভাবেই থাকতে দিন আমি চাইনা আর ওর মুখ দেখতে ওকে গিয়ে বলে দিন আমি বেশ আছি খুব ভালো….
~~~

নিলয় চলে গেছে বহু আদর করেছে নিয়তিকে আর বেশ খুশিও হয়েছে তার নন্দিনির মেয়েকে দেখতে পেয়ে,আর তার দেয়া নামটাই রেখেছে তারা…

~~

নন্দিনি নিশব্দে কাদঁছে, তুর্জ চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো কেদোনা আমার জন্য নয় যার জন্য কাদঁছো তার জন্য হলেও শান্ত হও প্লিজ…

~ কহিনুর বেগম তুর্জের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে, কারন তিনি পারেন নি সবটা লুকাতে সব বলে দিয়েছে নন্দিনির কাছে….

তবে ভালো করেছেন মা এটা খুব ভালো হয়েছে নয়তো সবার বুকেতো একটা পাথর চাপা থেকেই জেতো…

~~~~~

ছয় মাস হয়ে গেছে নিয়তি ও ধিরে ধিরে বসতে শিখছে তুলিতো নিয়তিকে চোখে হারায় মনে হয় এটা ওরই মেয়ে বোনের জন্য এত দরদ খুব কমই দেখা যায়..

নন্দিনি এখন নিলয়ের কথা মনে হলে কাদেঁনা বরং হাসে খুব হাসে কি মানুষটা ছিলে সে, নিজের সবটা দিয়ে শুধু ভালোই বেসে গেছে বিনিময়ে কিচ্ছুটি চায় নি, আর চেয়ে রয় তার আকা ছবিটার দিকে।

কে জানে এখনও ওর শ্বাসটা চলছে কিনা নাকি আর নেই..
তবে মনের ভিতরে একটা আশা বাধা হয়তো সে ফিরে আসবে আমার এসে জীবনে দেখা দিবে….. সত্যি কি এমন টা হবে??
নাকি সব মিথ্যা আশাই রয়ে জাবে, নন্দিনি নিলয়কে দেখতে না চাইলেও শেষ বার চুপি চুপি ওকে দূর থেকে দেখে গেছে নিলয়, তা নন্দিনিও বেশ বুঝতে পেরেছিলো,কারন নিলয়ের শরিলের যে একটা গন্ধ আছে তা তে কখোনই ভুলার নয় আর সেই গন্ধটা সে খুব কাছ থেকেই পাচ্ছিলো…গল্পের আসল লেখিকা সেলিনা আক্তার শাহারা

~~
তুর্জ রুজ সকালে দুই মেয়েকে নিয়ে না হেটে আসলে তার দিনটাই ভালো জায় না..
নন্দিনি আজকাল বেশ ব্যাস্ত সপ্নার ছেলে হয়েছে ১ মাস হল। তাই ওতো কোন কাজ করতে পারেনা, তাই পুরো সংসারটাকে নিজেই সামলাচ্ছে…
সপ্নার ছেলের নাম রেখেছে রাহুল,বেশ দেখতে হয়েছে বটে… পুরো বাবার মত।

সালাম সাহেব তার সমস্ত সম্পত্তি বাড়ি গাড়ি যা আছে সব তুলি আর নিয়তির নামে সবটা লিখে দিয়েছে, গল্পের আসল লেখিকা সেলিনা আক্তার শাহারা,এই নামেই পেজ।
তুর্জ বার বার মানা করা সত্বেও এমনটা করেছে,
সালাম সাহেব তুর্জকে বলেছে তাহলে এগুলো কি করবো??
আমার মেয়ে সব পেতো আর তার পর ওরা, আমার নাতিন রা, আর আমি তাদের দিয়েছি আমার দুই নাতিন বড় আদরের গো তাই…

তুলির আসল নানা নানি আসলে পরিচয়টা দেয় না, বলে অনেক দূরের আত্ব্যিয় তোমার নানা নানু হই!!

তুলিও তাই মানতে শুরু করে, তবে নিয়তিকে দুচোক্ষে দেখতে না পারলেও মুখে কিছুই বলে না….
কত কিছুই আনে তবে নিয়তিকে দেয় না সব তুলির জন্য,
আর এদিকে নন্দিনির মা বাবা কত আদর করে তুলিকে দুজনে নিজের নাতিন মনে করে।
~~~

বছরের চাকা বেশ ঘুরছে তো।

সব তো ঠিকই চলছিলো,
তুর্জ বেশ চনচল হয়ে গেছে নন্দিনিকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে…
নন্দিনি ও বেশ বুঝতে পারছে হয়তো কোন বায়না আছে তা কি বলে ফেলুন না!!

আচ্ছা শুনোনা তুলিতো ৬ বছর হয়ে গেছে আর নিয়তিও বেশ বরো হয়েছে ৪ বছরে ডাকা ডাকি করছে বটে

তা চলোনা ওদের একটা ভাই এনে দেই!!

নন্দিনির চোখ গরম হয়ে এসেছে কি??
আরে রাগ হও কেন? ওদের খেলার সাথি আর কি!!!

নন্দিনি তুর্জকে ধাক্কা দিয়ে শরিয়ে উঠে বললো হ্যা কেন নয়, ওদের খেলার জন্য একটা আবার ওটার খেলার জন্য আরো একটা তাই তো!!

তুর্জ খুশিতে লাফাতে লাফাতে বললো আমার কোন আপত্তি নেই…

কিল ঘুসি কোন দিন না খেয়ে ঘুমিয়েছন!!
তুর্জ হাসি দিয়ে বললো আরে ঘুমাবোতো আগে আদর করব তার পর ঘুমাবো… না হয়…

~~~

তুলির আত্বা নিয়তি, সে যা চায় সবটা লুটিয়ে দেয় তুলি,
শিলা বেগম বেশ খুশিও হয়,, দুই বোনের ভালোবাসা দেখে।

তবে দুই বোন রাহুলকে যা মাইর দেয় রাহুলটাও বেশ পাজি হয়েছে ঠিক তার বাবার মত,সোহাম নিয়তি আর তুলিকে খুব আদর করে রাহুলের মতই ওরাতো তারই সন্তান। নিয়তি যতটা চন্চল ততটাই তুলি শান্ত, নিয়তি রাহুলের চুল ছিরেনা এমন দিন নেই। লেখিকা সেলিনা আক্তার শাহারা।
তবে রাহুল কারো কাছে বিচার দিয়ে কোন ফল পায় না, নিয়তি তো সপ্নার আদরের মনি।

একদিন তুলির পছন্দের পুতুলটা নিয়তি নিয়ে ছিরে ফেলেছে দিয়েছে,

তুলিও খুশি রাগ হয় নি, তুলি এটা কাওকে ছুতে দেয় না তবে নিয়তির জন্য অন্য কথা…

সে বলে সব দিয়ে দেবো আমার বোন তর যা চাই আমি সব দিয়ে দেবো বললে আমার কলিজাটাও,,

সালাম সাহেব তুলির মাথায় হাত দিয়ে বললো দিবিতো তুলি??

অবুঝ তুলি সালাম সাহেবের দারি ধরে বললো হ্যা নানা হ্যা… এই তুলির ভালোবাসা না ওর কান্নার কারন হয়.. না জানি নিয়তির কোন খেলায় দুইবোনের জীবনে খেলে।

,,,
তুর্জ অফিস সেরে সেই আবার একই পশ্ন এই নন্দিনি বলোনা আমাদের ছেলেটা কবে আসবে??

সে তো তরকারি নাড়া রেখে তুর্জের পিছনে ছুটছে আজ পেলে খুন করে দেবো..

তুর্জ নন্দিনিকে ঝট করে কোলে তুলে বললো এবারও জোরই করতে হবে বুঝেছি..

বলেই রুমে নিয়ে গেলো….
রুমে দরজা লক করতেই নন্দিনি তুর্জের কলার চেপে বললো একদম কাছে আসা চলবেনা কিন্তু…

হা হা হা কাছে টেনে এনে আবার দূরে জেতে বলছো… এই দাও না একটা ছেলে..
দুটো মেয়ে একটার নামও আমি রাখতে পারলাম না একটা মা তো আরেকটা নিলয়..
তাহলে আমি??
তুর্জের এত আবেগ দেখে নন্দিনি ওর কাছে এসে বললো তাহলে তো দিতেই হয় একটা ছেলে এনে…

★ কেমন সাজাতে পেরেছি জানিনা, তাই বলবেন ভালো খারাপ সবটাই। এখন তুলি আর নিয়তি দুই বোনের জীবনি শুরু হবে হয়তো কিছুটা ভিন্ন★
নিলয়ের ফিরে আসা হবে কি না সে আশায় থাকা নন্দিনি আজও পথ চেয়ে আছে।
💓💓💓💓

(সমাপ্তি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here