#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-33
মেহেরাব আধ শোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। যেন সে নির্বিকার। যখন ওর জ্ঞান ফিরলো সামনে বাবা কে দেখতে পেয়েছিল। বাবা কে দেখে খুশি লাগছিল, কিন্তু আরচোখে মোম কে খুঁজছিল।মোম কোথায়,কথাটা কাউকে বলতে পাচ্ছিল না সে। সংকোচ লাগছিল। মোম তুমি কোথায়? বার বার সে বলছিল কথাটা মনে মনে।
মেহেরাবের বাবা হঠাৎ সবাই কে ক্যাবিন থেকে চলে যেতে বলেছিল। মেহেরাবের সাথে কি যেন প্রাইভেট কথা ছিল।
সবাই চলে গেলে মেহেরাবের বাবা বলল- মাই লিটল প্রিন্স কেমন বোধ করছে?
মেহেরাব হাসি দিয়ে বলল- মোম কোথায়?
-চোখ খুলতে না খুলতেই মেয়েটার কথা ভাবছো?
-মেয়েটা আমার ওয়াইফ।
-আমি তোমার জন্মদাতা পিতা। আমার বয়স হয়েছে। দূর্বল শরীর।
কতদিন পর আমাদের দেখা হয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা আছে তোমার?
-সরি ড্যাড।
-ইট’স অলরাইট।
তুমি রেস্ট নাও। যত দ্রুত সম্ভব তোমাকে বাসায় নিয়ে যাব।
-ড্যাড ও কোথায়?
ছেলের মাথায় তিনি হাত বুলিয়ে বলল- সময় হলেই জানবে।
ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যাচ্ছিল। মেহেরাব একটু পর পর ডক্টরকে জিজ্ঞেস করছিল কটা বাজে।
মোমের কথা বাবা কখন বলবে তার জন্য ওয়েট করছিল সে। স্যালাইনের সূচ টা খুলে ফেলে নিজেই মোম কে বের করতে চেয়েছিল সে। শুধু বাবার কারণে পারলো না। বাবার বয়স হয়েছে। এখন কোন পাগলামি করতে চাচ্ছে না মেহেরাব। যেটা দেখে বাবা কষ্ট পাবেন।
মোমের জন্য ভেতরাটা কেমন যেন করছে। হার্টবিট দ্রুত বাড়ছে। আর কিছুক্ষণ পর বুক থেকে হার্ট বের হয়ে আসার উপক্রম ।
-ডক্টর কটা বাজে?
-আধ ঘন্টায় কথাটা ১৭ বার বলেছেন।
-সরি।
ডক্টর মিষ্টি করে হাসি দিলো।
ডক্টর যখন মেহেরাব কে খাইয়ে দিচ্ছিল তখন বাবা সামনেই বসে ছিল। মেহেরাবের সমস্ত এটেনশন ছিল বাবার উপর। বাবা কখন সত্যি টা বলবে তার জন্য অস্থির সে।
খাওয়া শেষ হলেই বাবা শান্ত ভাবে বলল- তোমার মম ছিল একরোখা টাইপের।
তুমি কি জানো তোমার ওয়াইফও একরোখা টাইপের?
-জানি।
-তুমি মেয়েটা কে অনেক ভালোবাসো সেটা বুঝতে পেড়েছি।
-ড্যাড আসল কথা বলো?
-খাঁচার পাখি পুষে রাখতে নেই বন্দি করে। মুক্ত করলেই তাতে আসল সুখ।
-ড্যাড কোথায় ও?
-তুমি ওকে নিশ্চয়ই ভুলতে যেতে পারবে মাই চাইল্ড ।
তোমার মায়ের মতো সেও তোমাকে ডিভোর্স লেটার দিয়ে চলে গিয়েছে।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না?
মোম এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রয়েছে বাবার দিকে।
-এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।
সে তোমাকে ভালোবাসে যতটা তারচেয়ে বেশি ফ্যামিলি কে ভালোবাসে। সে ফ্যামিলি চুজ করেছে। তোমার মতো একজন কে নয়।
এই নাও তোমার ওয়াইফের সাইন করা ডিভোর্স পেপার।
মোমের সাইন চিনতে পারলো মেহেরাব। সাইনটা তে হাত বুলাল সে কয়েকবার। যেন মোমের গায়ে হাত বুলাচ্ছে অনুভূতি টা এমন।
-ও তো চলে গিয়েছে। একদিন তো ওকে ভুলে যাবে আশা করি ওর তোমাকে দেওয়া জিনিস গুলোও ভুলে যাবে। যেমন ধর্ম। আমার আমার আগের লিটল প্রিন্স কিং ফায়ার কে দেখতে চাই। সেই প্রাণবন্ত আগুন। পার্টিতে যে সবসময় মেতে থাকতো ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে। লক্ষ লক্ষ ডলার যে উড়িয়ে দিতো পার্টিতে। আরে বাবা, আমার একটা মাত্র সন্তান। তুমি উড়াবে নাতো কে উড়াবে? এতোকিছু তো তোমার জন্য । তোমার জন্যই তো আমার সম্পত্তির পাহাড়।
মেহেরাব বাবার দিকে তাকিয়ে মোমের কথা ভাবছে। মোমের নিশ্চয়ই সাইন করতে খুব কষ্ট হয়েছে। মোমের কষ্টের অনুভুতি টুকু অনুভব করতে পাচ্ছে মেহেরাব।
– মাই ডিয়ার আগুন,তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
-ইয়েস। মেহেরাব।
-হোয়াট?
-আমার নাম মেহেরাব।
ধর্ম মোমের একার না, ধর্মটা আমারও। মোম কে ভোলার সাথে ধর্মকে ভোলার প্রশ্নই আসেনা।
-তুমি কিন্তু ভুল করছো। ধর্ম হলো দূর্বলদের খড়কুটো। যেটা আঁকড়ে ওরা বাঁচতে চায়। সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই। ধর্ম মানলে আরাম আয়েশের বিলাসিতার জীবন তোমাকে ত্যাগ করতে হবে।
-আমি ত্যাগ করব।
-তোমার কষ্ট হবে।
-সহ্য করব কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা আমার পাশে আছেন। মৃত্যুর পরের জীবনে আমি আমার যথাযথ পুরস্কার পাব। ইনশাআল্লাহ ।
-কতবার একটা কথা বোঝাব সৃষ্টি কর্তা বলে কিছু নেই। মৃত্যুর পরের জীবন বলতে কিছু নেই।
-ড্যাড চুপ করো তুমি। পাপ বাড়িওনা। তুমি জানো সৃষ্টি কর্তা আছেন কিন্তু তা স্বীকার করছো না কারণ সৃষ্টি কর্তা কে মানলে সৎ ভাবে চলতে হবে। ভোগ বিলাসের রঙিন দুনিয়া ছেড়ে সাদামাটা জীবন ধারণ করতে হবে। ড্যাড তুমি জানো না দুনিয়ার কষ্ট থেকে মৃত্যুর পরের জীবন কতটা কষ্টের। দুনিয়ার বিলাসিতায় ডুবে থেকে সৃষ্টি কর্তাকে ভোলার জন্য শেষ বিচারের দিন চরম মূল্য দিতে হবে। আমার দুনিয়ার বিলাসিতার দরকার নেই ড্যাড।
কেমন হবে বিচার দিবস ?
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল
আজীম।
মহান আল্লাহ বলেন,
১। সেদিন সকলে একত্রিত হবে(সুবহানআল্লাহ) [সূরা আন’আম-২২]
২। দুনিয়ার জমিন হবে রুটির ন্যায়(লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ)[মিশকাত ৫২৯৮]
৩। মানুষ নগ্নপদ, নগ্নদেহ খতনাবিহীন সমবেত হবেন(আলহামদুলিল্লাহ)
[বুখারি,মুসলিম]
৪। কেউ কারও প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার অবকাশ পাবে
না(আল্লাহু আকবার)[মিশকাত-৫৩০২]
৫। কাফেরদেরকে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে একত্রিত
করা হবে(আল্লাহ্)[মিশকাত ৫৩০৩]
৬। প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন লোক জাহান্নামী বলে
ঘোষিত হবে(সুবহানআল্লাহ) [বুখারি-৪৭৪১]
৭। ঐদিন মানুষ ঘর্মাক্ত হবে, এমনকি ঘাম তাদের কান
পর্যন্ত পৌছাবে(আল্লাহু আকবার) [বুখারি]
৮। সূর্যকে অতি নিকটে আনা হবে এবং মানুষের আমল
অনুপাতে ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে(সুবহানআল্লাহি ওয়াবি হামদিবি,সুবহান আল্লাহিল আজিম) [বুখারি,মুসলিম]
৯। দুনিয়াতে যারা আল্লাহর জন্য সিজদা করেনি
কিংবা লোক দেখানোর জন্য সিজদা করেছে তারা
সেদিন আল্লাহকে সিজদা দিতে পারবে না(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা:)
[সূরা কালাম ৪২-৪৩]
১০। মুমিনদের হিসাব হবে মুখোমুখি(আলহামদুলিল্লাহ) [মিশকাত]
১১। যার হিসাব পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক
্ষানুভাবে যাচাই করে
হবে, সে ধবংস হবে(সুবহানআল্লাহ) [মিশকাত৫৩১৫]
১২। ঐদিন মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে(আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার) [সূরা
ইয়াসিন-৬৫]
১৩। হাত, পা, কান, চক্ষু এবং চামড়া মানুষের বিরুদ্ধে
সাক্ষ্য দিবে(আল্লাহু আকবার)[সূরা নুর ২৪]
১৪। সে দিনের সময় সীমা হল ৫০ হাজার বছরের
সমান(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা:) [মুসলিম, মিশকাত ১৭৭৩]
১৫। তবে ঐ দিন মুমিনের জন্য একটি ফরজ সালাত
আদায়ের সময়ের ন্যায় মনে হবে(আলহামদুলিল্লাহ) [বায়হাকী,
মিশকাত ৫৫৬৩]
.
এখনি সময় আল্লাহ কে চেনার ,নামাজ কায়েম করো,আল্লাহ্র পথে ফিরে এসো ।একবার কবরে গেলে আর ফেরা হবে না,তাই প্লিজ নামাজ পড়।
-পৃথিবীর সকল সত্যির চেয়ে সত্যি হলো ইসলাম ধর্ম।
.
যতদিন নিশ্বাস নেব ততদিন বলব-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
মেহেরাবের বাবা ঘাবড়ে গেলেন ছেলের বলা কথা শুনে। তবে কি… না না ধর্মকে মানা যাবে না। যেটা তিনি দেখেন নি সেটা মানবেন না তিনি। তার কাছে ইহকালের আরাম আয়েস সকল কিছুর উর্ধ্বে । [ নাস্তিকরা ধর্ম সম্পর্কে জানে কিন্তু স্বীকার করতে চায়না,স্বীকার করলে আরাম আয়েসি জীবন ছাড়াতে হবে এজন্য তারা তালবাহানা করে, মেহেরাবের বাবাও এরকম মানুষ ]
-তুমি কিন্তু আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছো।
তোমার এসব সহ্য করেছি এতোদিন।
আমার ছেলে হয়ে তুমি কিনা দূর্বলদের খড়কুটো আঁকড়ে ধরেছো। শেম অন ইউ।
-আমি তোমার আগে মহান আল্লাহ তায়ালার বান্দা।উনার বান্দা উনার এবাদত করবে সেটাই স্বাভাবিক। ধর্ম বান্দা কে শক্তি যোগায়, দূর্বল নয়। তোমার কাছে যতটা ক্ষমতা রয়েছে তারচেয়ে বেশি ক্ষমতা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে। উনার ক্ষমতার কোন পরিমাণ নেই। সীমাহীন ক্ষমতা। যেটা আমার তোমার মতো ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের মানবের মাথায় ঢুকবে না। আমাদের বোঝার বাহিরে।
আর হ্যাঁ নেক্সট সংযত হয়ে কথা বলবে পবিত্র ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে। তা না হলে ভুলে যেতে হবে তুমি আমার বাবা। সবার আগে মহান আল্লাহ তায়ালা। ধর্মের কারণে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করা জায়েয।
মেহেরাবের বাবা চুপচাপ ছেলে কে দেখছেন। তিনি চিনতে পাচ্ছেন না ছেলে কে। ছেলের জন্ম থেকেই তিনি ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ক্ষমতা কে চিনিয়ে ছিলেন। আর আজ কিনা ক্ষুদ্র একটি মেয়ের কারণে সবকিছু ছেড়ে ধর্ম কে আঁকড়ে ধরেছে তার ছেলে। কি আছে মেয়েটির মধ্যে ?
নিশ্চয়ই এমন কিছু আছে যার জন্য ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে ক্ষমতাবানদের একজন ক্ষমতাবান আসলাম আর তার ছেলের মতো গোঁয়ার এক ছেলে কিনা মেয়েটির জন্য পৃথিবীর সকল ঐশ্বর্য এমনকি সবচেয়ে দামী নিজের জীবনটা দিতেও এক মূহুর্ত ভাবছেনা?
.
বিশাল দস্তরখানা বিছানো হয়েছে খাবার ঘরে।
কাজের লোকেরা একে একে দস্তরখানা ভরে ফেলেছে মজার মজার বাঙালি খাবার দিয়ে।এতো মজার মজার জিহ্বায় পানি আসার মতো খাবার যে মোম গুনেও শেষ করতে পারবে না। গন্ধে চারদিক মৌ মৌ করছে। মোমদের মফস্বলের জমিদার বাড়িটা ভরে গিয়েছে লোকজনের সমাগমে।
ময়মনসিংহ থেকে প্রায় সকল আত্মীয় ভিড় করছে মোম কে দেখতে।
মোমের পূর্ব পুরুষরা জমিদার ছিলেন এই অঞ্চলের। মোমের বাবার শরীরে জমিদারের রক্ত বইছে। জমিদার প্রথা এখন না থাকলেও তিনি কোন জমিদার থেকে কম নন। উনার ক্ষমতার দাপটে আশেপাশের মফস্বল গুলে কাঁপে।বিশাল দেহের,বিশাল সুন্নতি দাঁড়ি সুদর্শন চেহেরার অধিকারী তিনি। সব সময় ধবধবে একটা চাদর ঘাড়ে ফেলে অনেক লোকজনদের নিয়ে চলেন তিনি। নিয়মিত মসজিদে আজান দেন তিনি। মুখে সব সময় ধর্মের বাণী। এই অঞ্চলের সবাই তিনি বলতে প্রাণ। সবাই উনাকে ভয়ের থেকে বেশি ভালোবাসে। আদরের মেয়ে কে বাহিরে পড়তে পাঠিয়েছিলেন, যেন মফস্বলের আরও ছেলেমেয়েরাও উনার মেয়ে কে দেখে উচ্চশিক্ষা নিতে বাহিরে যাওয়ার সাহস করেন। তিনি তার মফস্বলের সকল কে উচ্চশিক্ষিত দেখতে চান। মেয়েটা চলে এসেছে পড়াশোনা ছেড়ে, তিনি ভাব দেখাচ্ছেন রেগে আছেন এমন। আসলে তিনি মনে মনে খুশি হয়েছেন মেয়ে কে দেখে। জীবন তো চলে যাচ্ছে না, লম্বা সময় পড়ে আছে পড়াশোনার। পরে একসময় মেয়েকে আবার পাঠাবেন লন্ডনে। এখন কিছুদিন মেয়েটা কে নিয়ে ভালো কিছু সময় কাটানো যাবে। আজ তিনি অনেক খুশি, খুশিটা সবার সাথে ভাগ করতে চান তিনি, তাই পুরো মফস্বল কে নিজ বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছেন। লোকজনের সমাগমে নিরব দালানটা খুশির আমেজে ভরে গিয়েছে। বৈঠকখানার ওখানে রান্না করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ থেকে তিনি বিখ্যাত সব বাবুর্চিদের আনিয়েছেন। সবাই ব্যাস্ত। শুধু উনার কোন কাজ নেই। উনি হেঁটে হেঁটে সবকিছু দেখছেন, আবার একটু পর পর অন্দরমহলে গিয়ে মেয়েকে ধমকানোর ছলে এক পলক দেখে আসছেন।
-এটা ঠিক না। পড়াশোনা ছেড়ে চলে আসা উচিৎ না।
কাজটা অন্যায়।
-তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছিল বাবা।
মোমের সরল মুখখানার দিকে না তাকিয়ে আরও কিছুক্ষণ ধমকিয়ে তিনি চলে এলেন।
চোখ থেকে আনন্দে পানি চলে এসেছে উনার, মেয়েটা লন্ডনে গিয়েও আদবকায়দা ভুলেনি। যতবার মেয়েটার সামনে
যাচ্ছেন ততবার মেয়েটা তাকে সালাম দিচ্ছে। মাথানিচু করে কথা বলছে। বার বার বলছে, বাবা তোমার শরীর ভালো? এখনো মেয়েটা তাকে ভীষণ ভালোবাসে সেটা ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠেছে। মেয়েটা কে কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করছে। ছোটবেলায় কোল থেকে মেয়েটা কে নামানো যেতোনা। সারাক্ষণ বলতো-আমাকে আরেকটু আদর করো বাবা। মেয়েটা বড় হয়ে যত ঝামেলা। একটু কোলে নেওয়া দূরে থাক মিষ্টি দুটো কথাও বলতে সংকোচ লাগে। সবাই উনাকে ভয় পান, তিনি মাঝেমধ্যে ভয় পান মেয়েকে এটা তিনি স্বীকার করেন।
কাতলমাছের মাথাটা মোমের প্লেটে দেওয়া হয়েছে । প্লেটে মাথাটা ধরছে না। আরও বড় প্লেট রাখা হলো।
মোম খেয়ে কূল পাচ্ছে না। মোমের সাথে তার ভাই বসেছে খেতে।
-ভাইয়া একটু হেল্প করো না।
– রাজকন্যা একজন পাদুকার কাছে হেল্প চাচ্ছে যে?
-পাদুকা টা কে?
-ইশশ,সেই গর্দভ যে গর্দভ রয়ে গেলি।
তুই যা বাবার একমাত্র রাজকন্যা সেটা তো সবাই জানে। পড়াশোনা না করে গর্দভ হয়ে ফিরে এলি বলে তোর জন্য এতো আয়োজন।হাতির মাথা যদি খাওয়া যেত তো তোকে হাতির মাথায় খেতে দেওয়া হতো। আর আমি যদি সায়েন্টিস্ট আইনস্টাইনও হয়ে যাই একটা মলা মাছের মাথাও জোটে না। আমি তো এই বাড়ির মহা পাদুকা। হা! হা!হা!।
মোম কথা শুনে রাগ করেছে এমন একটা ভাব করে খাচ্ছে।
খাবার ঘরের জানালার আড়ালে দাড়িয়ে ছেলেমেয়ের খাওয়া দেখছে সে। ভাইবোনদের দুষ্টুমি গুলো শুনতেও ভালে লাগছে। সংকোচের কারণে দুষ্টুমি তে ভাগ নিতে পাচ্ছেনা এজন্য একটু কষ্টও হচ্ছে।
মোমের বাবার ২য় স্ত্রী মোমের বাবার কাছে এসে বললেন- ভেতরে চলুন। ওদের সাথে খেতে খেতে গল্প শুনবেন।
-গল্প শোনা ছাড়াও আমার বহু কাজ আছে।
-দেখতেই পাচ্ছি। লুকিয়ে লুকিয়ে ছেলেমেয়ে কে দেখাই তো কাজ।
-বেশি কথা বলো তুমি। মেয়েটার কিছু লাগবে কিনা দেখ। কতদিন পর এলো মেয়েটা। তোমরা কেও ওর যত্নই নিচ্ছো না। দুঃখজনক।
-মানুষ যে নিজের ছেলেমেয়েকে দেখে
ছেলেমেয়ে কে দেখে এতো লজ্জা পায় সেটা জানতাম না।
-শোন, মুক্তাগাছার মণ্ডা গুলো মেয়ে কে খাবার শেষে দিও। মেয়েটার খুব পছন্দ। কতদিন খেতে পারেনি বেচারি।
-আপনারও তো পছন্দ। নেবেন একটা? মেয়ে খেতে পারেনি বলে আপনিও তো খান নি।
-আচ্ছা দাও খেয়ে দেখি।
আর শোন, ছেলেটাকেও দিও, ওরও পছন্দ। ছেলেটা দিনদিন তোমার আদর পেয়ে বাঁদরে পরিণত হচ্ছে। দুঃখজনক।
মোমের প্লেটে মণ্ডা দেওয়া হয়েছে। মন ভরে তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। মোমের ভাইও খাচ্ছে। মোমের ছোট মাও এই মণ্ডা খেতে ভালোবাসে। মোমের বাবা তো একবারও বলল না তাকে খেতে। এটা ভেবেই মনটা খারাপ হচ্ছে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মোম একটা মণ্ডা ছোট মায়ের মুখের সামনে ধরলো।
-না মা তুমি খাও। তোমার বাবা তোমার জন্য এনেছেন।
আড়ালে চোখের পানি মুছলেন তিনি। মোম নিজের মেয়ে না হলেও তিনি নিজের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসেন মোম কে।
মোম দাড়িয়ে আছে দোতলার বেলকুনিতে। বেলকুনি থেকে বক্ষ পুত্র নদ দেখা যায়। নদের হিমেল হাওয়ায় ভরে উঠেছে বেলকুনি। আকাশের তারা ভরা চাঁদের আলোয় নদের বালি গুলো ঝিলমিল করছে। আলোময় হয়ে উঠেছে চারপাশ। ময়মনসিংহের আসল সৌন্দর্য রাতের নদ দেখার ভেতর।
মানুষের মাঝে ছিলো বলে মোম তার ভেতরের হাহাকার গুলো টের পাচ্ছিল না। যখনই বেলকুনিতে দাঁড়ালো তখনই টের পেলো। চারদিকে কি শূন্য তা। মেহেরাব শূন্যতায় ডুবে আছন্ন হয়ে আছে। নিজ বাড়িতে ফিরেছে সে। আসা থেকেই দরজা বন্ধ করে আছে। এখন বিকেল।
মেহেরাবের বাবা ছেলের রুমে কয়েক বার নক করেছেন। ভেতর থেকে আওয়াজ নেই। একটু ভয় পেলেন তিনি। মেহেরাবের ক্ষোভ সম্পর্কে তিনি অবগত। যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে। দরজা ভেঙে রুমে ঢুকলেন তিনি।চোখ বুলালেন রুমে। রুমে ঢুকে তিনি প্রচন্ড শকড হলে।
.
.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
৩৩। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ করো না। [সূরা নিসা ৪:২৯]
.
.
চলবে……💔💔💔