নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৩৭+৩৮

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৭

সম্পূর্ণ এক অন্ধকার রুমে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে আতিক কে। নিভু নিভু ভাবে চোখ মেলে তাকায়। মাথা যেনো সারা দুনিয়া চক্কর দিচ্ছে। ভনভন করে ঘোরাচ্ছে। দেহে বিন্দু মাত্র শক্তি পাচ্ছে না। ঘাড় টা খানিক ওপরে তুলতেই ঘাড়ের ডান দিকটায় বেশ ব্যাথা অনুভব করে আতিক। হাত দিয়ে ঘাড়ে ধরতে যাবে কিন্তু তা পারে না। খেয়াল করে দেখে তার হাত তো বাধা চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে। আস্তে আস্তে ঘাড় বাকিয়ে নিজের আশে পাশে দেখে। একটা গোডাউনের মতো ঘর। বেশ পুরনো বলে মনে হয় এটা। কতো খারাপ জায়গায় ঘুরেছে সে তবে এর আগে এখানে এসেছে বলে মনে পরে না। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে, মুখটা কেমন মূহুর্তেই ফ্যাকাশে বর্ণ হয়ে গেছে। মাথা তুলে ওপরে তাকাতেই দেখে একটা হলুদ কালারের বাতি রয়েছে যা পুরো ঘর কে আবছা আলোকিত করে রেখেছে। পরমূহুর্তেই তার মনে পরে যে সে তো ক্লাবে ছিলো তাহলে এখানে এলো কি করে! চোখের সামনে সব কেমন আধো আধো ভাবে ভাসতে লাগলো। তার ক্লাবে দাঁড়িয়ে থাকা তখনই পেছন থেকে তার ঘাড়ে কারো ইঞ্জেকশন পুশ করা ব্যাস আর কিছু মনে নেই তার। আতিকের খেয়াল আছে বেশ যে সে বারো টার সময় ক্লাবে ছিলো। হাতে তার ঘড়ি পরা ছিলো যার দরুন সময়ের দোটানায় আর তাকে পরতে হলো না। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত বাজছে আড়াই টা। মানে বারো টা থেকে শুরু করে আরো আড়াই ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরেছে। আতিক এবার নড়াচড়া শুরু করে দেয়। তাকে এখান থেকে বের হতে হবে। চেয়ারে বাধারত অবস্থাতেই বেশ নড়াচড়া করে যাচ্ছে সে। কিন্তু তখনই কারো ভারি কদমের আওয়াজ তার কানে আসে। নিস্তব্ধ রুমে পায়ের আওয়াজ সুস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আতিক ছোট ছোট চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। অন্ধকারে শুধু পায়ের অংশ টুকুই দেখা যাচ্ছে ব্যাক্তি টির। আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে এলে এবার মাথার অংশ টুকুও চোখে পরে তবে তার চেহারা না।

আতিক;; ক ক কে আ আপনি? আমি কি করেছি যে আ আ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো? কে আপনি?

এবার সে আলোতে এগিয়ে এসে একটা চেয়ার হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঠাস করে রেখে দেয়। তাতে বসে এক পায়ের ওপরে হাত রেখে দেয়। আরেক হাত দিয়ে মাথার ওপর থেকে হুডি টুকু পেছনে ফেলে দেয়। শক্ত ভাব মুখে নিয়ে সামনে তাকায়। আব্রাহাম সে, আর আব্রাহাম কে দেখে আতিক স্বভাবতই কপাল কুচকে ফেলে।

আতিক;; আপ আপনি? স্যার আমাকে কেনো নিয়ে এসেছেন আমি কি করেছি? আর, আর আপনিই কি আমাকে….

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমিই ইঞ্জেকশন পুশ করেছিলাম তোকে। সেটা অজ্ঞান করার ইঞ্জেকশন ছিলো। চিন্তা করিস না মরবি না তুই।

আতিক শুকনো ঢোক গিলে কেননা আব্রাহাম যে আসলে কেমন প্রকৃতির লোক সে তা জানে বেশ ভালো করেই।

আব্রাহাম;; আসলে ভালো কথার মানুষ না তুই বুঝলি তাই সম্মান দিয়ে আর কি হবে।

আতিক;; আমাকে যেতে দিন স্যার।

আব্রাহাম;; হুমম অবশ্যই যেতে দিবো। তোকে এখানে ধরে বেধে রেখে দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই। তবে তার আগে আমার সব প্রশ্নের জবাব দে।

আতিক;; কি স্যার?

আব্রাহাম দুহাত এক করে গম্ভীর মুখে ঝুকে পরে।

আব্রাহাম;; কোহিনূর কোথায় আর কার কাছে আছে?

আব্রাহামের কথা শুনতেই আতিকের চোখ কপালে ঠেকে যায়।

আতিক;; স্যার আমি এইসবের কিছুই জানি না। আমি কি করে বলবো।

আব্রাহাম;; দেখ আমার সামনে ভোলা সাজার ট্রাই তো তুই করিসই না। কাজে দিবে না। বললাম তো যে তোকে কিছুই করবো না। বিনা আচড়ে সহি-সালামত বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবো তবে তার আগে আমি যা বলি তার ঠিক ঠিক উত্তর দে।

আতিক;; আমি সত্যিই কিছু জানি না।

তখনই একটা গার্ড এসে আব্রাহামের সামনে একটা কালো কালারের বক্স রেখে যায়। আর আব্রাহাম তা খুলে ভেতর থেকে একটা ছোট কাচের শিশি বের করে আর একটা খালি ইঞ্জেকশন বের করে। কোন কথা ছাড়াই সেই কাচের শিশি থেকে তরল কিছু পদার্থ ইঞ্জেকশনের ভেতরে ভরে নিতে লাগে। আতিক এইসব কিছু না বুঝে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…

আতিক;; স স্যার, স্যার কি কি করছেন আপনি?

আব্রাহাম তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

আব্রাহাম;; আরেহ চিল, বেশি কিছু না এই ইঞ্জেকশন টা শুধু তোর বডিতে পুশ করবো আর তারপর! তারপর তুই কাতরাতে কাতরাতে মারা যাবি ব্যাস আর কিছুই না। লাইক বিষাক্ত এসিড ছুরে দিলে যেমন হয় তোরও তেমন হাল হবে তারপর শেষ তুই।

আব্রাহামের কথা শুনে আতিকের কলিজার পানি শুকিয়ে যায় কারণ আব্রাহাম যা বলে সে আসলেই তা করে ছাড়ে। আর এখন আব্রাহামের মতিগতি একদম সুবিধের লাগছে না। আতিক আগে থেকে আরো জোরে নড়াচড়া শুরু করে দেয়।

আতিক;; স্যার স্যার প্লিজ স্যার আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কিছুই করি নি আর সত্যিই কিছুই জানি না।

আব্রাহাম;; মরণ কাছিয়ে এলো তাও মিথ্যের পর মিথ্যে বলেই যাচ্ছিস।

আতিক;; স্যার ছেড়ে দিন প্লিজ।

আব্রাহাম;; আগে বল তুই এখানে কি করিস? আমেরিকা কেনো এসেছিস?

আতিক;; স্যার আমাকে আসতে বলেছিলো।

আব্রাহাম;; কে?

আতিক;; ____________________

আব্রাহাম;; বল।

আব্রাহাম আতিকের গলা চেপে ধরে। আতিক চোখের মনি উল্টিয়ে দেয়, শ্বাস যেনো এই ফুরিয়ে এলো। দম যখন যায় যায় অবস্থা তখন আব্রাহাম তার হাত সরিয়ে ফেলে। কাশতে কাশতে অবস্থা অনেক খারাপ তার।

আব্রাহাম;; বলে ফেল দ্রুত।

আতিক;; ____________________

আতিক যখন তাও কিছু বলে তখন আব্রাহাম হাল একদম ছেড়ে দিয়ে ইঞ্জেকশন টা আতিকের বাহুতে সোজা লাগিয়ে দেয়। ইঞ্জেকশনের শুইটা শুধু লেগে রয়েছে আতিজের বাহুতে এখনো চাপ দিয়ে তরল পদার্থ টুকু বডির ভেতরে দেওয়া হয় নি। নিজের দেহে যে ইঞ্জেকশন টা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখেই আতিক ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দেয়। আর হ্যাঁ আব্রাহাম যা বলেছিলো তা আসলেই সত্যি কেননা কাচের শিশির ওপরে একটা সাদা মাথার খুলির নকশা দিয়ে অতিমাত্রায় বিষাক্ত চিহ্ন দেওয়া। এবার আর আতিক থাকতে পারে না জীবনের মায়ায় পরে তড়িঘড়ি করে বলে….

আতিক;; আমি জানি, আমি জানি। হ্যাঁ আমি এসেছি এখানে কোহিনূর বিষয়েই। আমাকে, আমাকে তায়াফ খান এখানে আসতে বলেছিলো। আর কোহিনূরের আসল চোর আর কেউ না ওই তায়াফ খান নিজেই। সে, সে আপনার ব্যাপারে সব খবরই নিয়েছে। সে ওই সেভেন স্টার হোটেলেই আছে। আর সে, সে শুধু আপনার না বরং আপনার বউ আইরাত ম্যামের বিষয়েও অনেক খবর নিয়েছে।

আব্রাহাম;; এর জন্যই বলে ”সময় থাকতে কদর করতে শেখো”। আগেই বলেছিলাম যে বলে দে বলে দে বললি না তুই। নিজের পায়ে কোড়াল নিজেই মারলি। এই সামান্য কথা টুকু যদি কয়েক সেকেন্ড আগেও বলতি আজ তুই বেঁচে থাকার খাতায় থাকতি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এখন আর লাভ নেই বলে।

আব্রাহাম ইঞ্জেকশন টার শেষের অংশে ধরে তার ভেতরে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যাল টুকু আতিকের বডিতে পুশ করে দেয়। ইঞ্জেকশন টা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়। ২-১ মিনিট পরই আতিক কেমন পাগল উন্মাদের মতো আচরণ করতে লাগলো। শরীরে কেমন যেনো এক জ্বালাপোড়া করতে লাগলো তার। হাত-পা যে দড়ি দিয়ে বাধা ছিলো তা টান টান করতে লাগলো যেনো এই ছিড়ে যাবে। আব্রাহাম হুডি টা আবার তার মাথায় মুড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যে রুমে আতিক ছিলো সে রুমের বাইরে লক করে রেখে যায় আর আগামী এক ঘন্টা অব্দি কোন গার্ড কে সেই রুমে যেতে মানা করলো। আর রুমের ভেতরে চলছে এক ভয়ংকর কান্ড। আতিক তার শরীরের বাধন গুলো খুলেই ফেলেছে। চোখ যেনো মেলে তাকাতে পারছে না সে, সব কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে। চেয়ার থেকে পরে গিয়ে নিচে হাটু গেড়ে বসে পরে আতিক। সারা শরীরে এক তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে যা সহ্য করা এক কথায় অসম্ভব। হঠাৎ আতিকের শরীরের এক একটা অংশ আপনা আপনিই এসিড ছুড়ার মতো জঘন্য হয়ে আসতে লাগলো। দেহ বেয়ে বেয়ে রক্ত ঝড়ছে। গলা ফাটিয়ে দিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে সে। বাইরে যে গার্ড রা ছিলো তারাও বুঝতে পারছে যে আতিকের অবস্থা খারাপ। সারা শরীর যখন রক্তে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আসে তখন আতিক একাই ফ্লোরে লুটিয়ে পরে। শরীরের মাংস ক্ষয়ে ক্ষয়ে পরছে। গলার জায়গা টাও বিচ্ছিরি হয়ে গেছে এতোটাই বিচ্ছিরি যে এখন গলা দিয়ে একটা টু শব্দও বের হচ্ছে না। নিঃশব্দে কাতরাতে কাতরাতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে আতিক। ভেতরে সবকিছু শান্ত শুনে আর এক ঘন্টার বেশিই অতিবাহিত হয়েছে বলে বেশ কিছু গার্ড রুমের ভেতরে যায়। গিয়ে দেখে আতিক কে আর চেনার উপায় নেই। এমনকি শরীরের হাড্ডি অব্দিও দেখা যাচ্ছে। আতিকের মৃত শরীর কে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন এটাকে ঠিকানা লাগানোর পালা।


অন্যদিকে রাত প্রায় শেষের দিকে এখন আর আব্রাহাম বাইরে না থেকে সোজা হোটেলে রুমে চলে যায়। নিজের কাছে ডুপলিকেট চাবি ছিলো তা দিয়েই রুমের ভেতরে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত তার বুকের ওপর একটা বই রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। হয়তো পড়তে পড়তে চোখে ঘুমের রেশ নেমে আসে আর তখনই ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে। আব্রাহামের মেজাজ বেশ চড়া ছিলো কিন্তু রুমে এসে ঘুমন্ত আইরাতের মুখ দেখে সব রাগ নিমিষেই ঠান্ডা পানি। নিজের ওপর থেকে হুডি টা খুলে একটা সিংগেল সোফার ওপরে রেখে দেয়। এশ কালারের শার্টের হাতা গুলো গুটিয়ে নিতে নিতে আইরাতের কাছে যায়। আস্তে করে আইরাতের হাত সরিয়ে তার বুকের ওপর থেকে বই টা নিয়ে নেয়। দেখে এটা একটা ম্যাগাজিন আর ম্যাগাজিন টা আব্রাহামেরই। মানে আব্রাহাম কে নিয়েই লিখা আর কি। তা দেখে মুচকি হাসে সে। আইরাতের দুপাশে নিজের হাতের ওপর ভর দিয়ে তার কপালে চুমু একে দেয়। আইরাতের পাশে বসেই হাত দিয়ে গালের পাশে আলতো হাতে ছুইয়ে দিতে লাগে। আইরাত ঘুমের মাঝে কিছুটা নড়েচড়ে আব্রাহামের হাতটা আকড়ে নিয়ে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে। কি যে মায়াময়ী লাগছে আইরাত কে। আব্রাহাম কিছুক্ষণ এক মনে আইরাতের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম ঘুমের মাঝেই আইরাতের ঠোঁট দুটো আকড়ে ধরে। ঘুমের মাঝে নিজের ওপরে কারো খানিক ভর অনুভব করতে পেরেই আলতো করে চোখ মেলে তাকায় আইরাত। হোস আসতেই বুঝে যে তার ঠোঁট গুলো আব্রাহামের দখলে। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। হাত দিয়ে আব্রাহামকে কিছুটা দূরে ঠেললেও সে সরে না। উল্টো একহাত আইরাতের পিঠ পিছে রেখে দেয়।
আইরাতও তার হাত টা এবার আব্রাহামের কাধের ওপর রেখে দেয়। কিছুক্ষন পর আব্রাহাম আইরাতের ওপর থেকে সরে আসে। মাথা তুলে দেখে আইরাতের সামনের চুলগুলো এসে তার মুখের ওপরে পরেছে। হাত দিয়ে তা সরিয়ে দেয়।

আইরাত;; কখন এলেন?

আব্রাহাম;; মাত্রই।

আইরাত;; এতো দেরি!

আব্রাহাম;; কাজ শেষ করে এলাম বেবিগার্ল।

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; আমায় মিস করছিলে?

আইরাত;; অনেক বেশিই। এর জন্য আপনার ম্যাগাজিন নিয়ে আপনার বিষয়ে পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পরেছি।

আব্রাহাম;; সরি জান আমার দেরি হয়ে গেছে।

আইরাত;; ইট”স ওকে। আসুন খেয়ে নিন।

আব্রাহাম;; যা খেয়েছি তারপরেও আরো কিছু খেতে হবে বলে মনে হয় না।

আইরাত বুঝলো যে আসলে আব্রাহাম কি বলেছে।
আব্রাহাম ফ্রেশ হয়ে এসে তাও আইরাত জোর করেই কিছু খাইয়ে দেয় তাকে। আব্রাহাম আইরাত কে পাজাকোলে তুলে নিয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পরে। আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে আর আইরাত তার হাত আব্রাহামের মাথার ওপর হাতিয়ে দিতে লাগে। এক সময় দুজনেই ঘুমিয়ে পরে।


পরেরদিন সকালে উঠেই আব্রাহাম দ্রুত গতিতে কনফারেন্স রুমে চলে যায়। আশেপাশে তার অনেক গার্ড। চারিদিকে শুধু মিডিয়ার লোকজন যাদের হাতে বড়ো বড়ো সব ক্যামেরা। আব্রাহাম কে আসতে দেখে তারা যেনো আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। কিন্তু সব কিছু বাদ দিয়ে আব্রাহাম মিটিং রুমে চলে যায়। সবকিছু ঠিকই আছে। সবকিছু একদম প্ল্যান মতো চলছে। আর সেই হিসেবে নকল কোহিনূরও আছে যা মূলত সবার কাছেই আসল। কনফারেন্স রুমে আব্রাহাম কে আসতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পরে। সবকিছু ঠিক ঠাক আছে দেখে আব্রাহাম মিটিং স্টার্ট করে।

আব্রাহাম;; Topping our list of the most expensive diamonds in the world is
”The Legendary Koh-I-Noor”

আব্রাহামের এই বলতেই একটা ভারি কালো কালারের বক্স থেকে ওপরে আপনা আপনিই উঠে আসে কোহিনূর হীরে। যা টেবিলে সবার ওপরে রাখা। চিকচিক করছে, চোখ ধাধানো। সবার নজর এখন তার দিকেই। আর এই কনফারেন্স লাইভ হচ্ছে। মিডিয়া/প্রেস সবাই এটা দেখতে পারছে। আর এক লাইভে আব্রাহামের এই প্রেজেন্ট করা হীরে তায়াফের চোখেও পরে। এটা দেখে তো তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। চোখে-মুখে তার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।


।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৮

প্রায় দেড় ঘন্টা পর কনফারেন্স শেষ হয়। এর মাঝেই আব্রাহাম কোহিনূরের যাবতীয় সব বিষয়-বস্তু ক্লিয়ার করে বলে দিয়েছে। সবাই কেমন এক দোটানার মাঝে ছিলো যে কোহিনূর যদি এখানে থেকে থাকে তাহলে চুরি হওয়ার ব্যাপার টা কি তবে মিথ্যে! কিন্তু এতো বড়ো একটা মিথ্যে কেনোই বা এভাবে কেউ ছড়াবে। আব্রাহাম প্রেজেন্টেশন টাই করেছে এমন যে সেটা আসল মানতে বাধ্য সবাই। অবশেষে আব্রাহাম মুখ ফুটে এও বলে দেয় যে কোহিনূর কখনো চুরিই হয় নি। মিটিং শেষে আব্রাহাম রুম থেকে বের হয়ে পরে। বাইরে আসতেই একঝাক মিডিয়ার লোক তাকে ঘিরে ফেলে। তবে গার্ডরা বাকিসব সামলায়। আব্রাহামের চোখে তায়াফ কে পরলেও সে যেনো তাকে এড়িয়ে চোখে গ্লাস পরে গাড়িতে উঠে পরে। এদিকে তায়াফের দৃঢ় বিশ্বাস যে কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই। কেননা সে এতো চালাকি করে এতো ছলচাতুরি করে কোহিনূর চুরি করেছে। আর এখন কিনা এটাই নকল। প্রশ্নই আসে না। কোহিনূর মূলত যেখানে থাকে অর্থাৎ এটাকে যে জায়গায় হাজারো গার্ড+সেইফটি দিয়ে যেই প্যালেসে রেখে দেওয়া হয়েছে সেখানে থাকবে নকল কোহিনূর। এটা অসম্ভব। আর তায়াফের কাছে যদি আসল কোহিনূর টাই থাকে তাহলে আব্রাহামের কাছে এলো কি করে! আর আব্রাহাম এতো বড়ো একজন ব্যাক্তি হয়ে ভুয়া খবর এভাবে পাবলিক করবে প্রশ্নই আসে না। তায়াফ সেখান থেকে এক প্রকার গা ঢাকা দিয়েই এসে পরে। বাইরে রিসোর্টের দিক টায় এসে পরলে ফোন বের করে দ্রুত আতিকের নাম্বারে ডায়াল করে। ফোন বাজছে তবে ধরে না। ফোন দিতে দিতে এক সময় ফোন বন্ধই দেখানো শুরু করলো। রাগের মাত্রা বাইরে চলে গেলে তায়াফ ফোন টা তুলে দেয় এক আছাড় মেরে ভেঙে। তায়াফের নিজের রুমে চলে যায়। সে যেনো আর এক মূহুর্তের জন্যও শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারছে না। এটা তো আমেরিকা, রাশিয়ান কিছু নামিদামি লোকের কাছে তায়াফের এই হীরে দিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো। অর্থাৎ তাদের হাতে চালান করে দিয়ে এক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছিলো সে। সে চাইছিলো যত দ্রুত সম্ভব এই হীরে তাদের হাতে তুলে দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে খুব শীঘ্রই এখান থেকে দূর কোথাও পালিয়ে যাবে। ধরা একবার খেলে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত। কিন্তু এখন সেটাও করতে পারছে না স্পেশালি আজ আব্রাহামের এই মিটিং এর পর থেকে। রাশিয়া থেকে তায়াফের কাছে অনেক কলও এসেছে কিন্তু একটাও সে আর রিসিভ করে নি। রুমে গিয়ে ল্যান্ডলাইন থেকে তায়াফের আরো বাকি কিছু চেনা-পরিচিত মানুষের কাছে ফোন দেয়।

তায়াফ;; হ্যালো।

— আপনি?

তায়াফ;; আব্রাহাম চৌধুরীর লাইভ দেখেছেন আজকে?

— দেখলাম।

তায়াফ;; কি হচ্ছে কি এইসব? কোহিনূর আব্রাহাম চৌধুরীর কাছে কীভাবে এলো?

— ওয়াহহহ, চোরের মায়ের দেখি আসলেই বড়ো গলা।

তায়াফ;; মুখ সামলে।

— দেখুন মিস্টার খান, কোহিনূর চুরি করলেন আপনি তাহলে খুব স্বাভাবিক সেটা আপনার কাছেই থাকবে। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর হাতে কি করে গেলো কীভাবে গেলো তা আমরা কি করে জানবো? আর আদৌ কি আপনি কাজটা ঠিক করে করতে পেরেছিলেন বলুন তো! কোহিনূর কি আসলেই আপনি ওই প্যালেস থেকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন নাকি সব সেইফটি আর গার্ড দেখে দৌড়ে পালিয়ে ভেগেছিলেন কোনটা!?

তায়াফ;; মোটেও না কিন্তু কোহিনূর আমার কাছেই আছে।

— কে জানে সেটা আসল নাকি নকল। আমার জানা মতে আব্রাহাম চৌধুরী মাত্রাতিরিক্ত বিচক্ষণ একজন ব্যাক্তি। উনি এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিক নিয়ে আজ লাইফে এসে এভাবে মিথ্যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মিটিং করবে বলে মনে হয় না।

তায়াফ;; তার মানে?

— মানে হয়তো আপনার কাছেই যে হীরে আছে তাই নকল আর আব্রাহাম চৌধুরীর কাছে যা আছে তাই আসল।

তায়াফ;; কিন্তু প্যালেসে কেনো কেউ নকল হীরে রাখবে?

— আমরা তা জানি না।

তায়াফ;; আচ্ছা এই আতিক কেনো ফোন ধরছে না?

— সে বেঁচে থাকলে তো ফোন ধরবে।

তায়াফ;; মানে?

— মানে আতিক আর বেঁচে নেই। মারা গেছে সে।

তায়াফ;; কিহহ? কিসব যা তা বলছেন? কীভাবে মারা গেলো? কবে?

— উনার লাশ ভয়াবহ রকমের খারাপ অবস্থায় পাওয়া গেছে।

তায়াফ;; কিন্তু…

— আর হ্যাঁ জেনে অবাক হবেন যে আতিকের সাথে যে কাজ করতো বিজয় আরকি সেও কিন্তু মারা গিয়েছে।

তায়াফ ফোন কেটে দেয়। এতো কিছু হয়ে গেলো আর সেখানে সে এইসবের কিছুই জানে না। তায়াফ তার অন্য এক রুমে চলে যায়। ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে একটা লকারের লক খুলে ফেলে। তার ভেতরে আবার এক পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলে ফেলে। অতঃপর বের হয়ে আসে মহা মূল্যবান এক পাথর যার নাম কোহিনূর। তায়াফ তা হাতে তুলে নেয়। সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে লাগে। এই হীরে টার জন্যই আজ এতোকিছু। হীরে টা খুব সাবধানে হাতে নিয়ে তায়াফ বসে পরে৷
হীরে টা যে প্যালেসে ছিলো সেই প্যালেসেরই একজন গার্ড ছিলো তায়াফ। হীরে যে কক্ষে সুরক্ষিত ছিলো সেই কক্ষেরই তায়াফ গার্ড ছিলো। খুব সুক্ষ্ম ভাবেই তায়াফ হীরের যাবতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো রপ্ত করে নেয়। সে মূলত সেখানে গিয়েই ছিলো হীরে চুরির উদ্দেশ্যে। সেখানে যখন তায়াফ গার্ডের চাকরিরত অবস্থায় ছিলো তখন তার সব বায়ো ডাটা সবই ফেইক ছিলো। এমনকি তায়াফের নাম অব্দি মিথ্যে ছিলো। সেখানের একজন উচ্চ পদস্থ মেনেজার ছিলো। প্যালেসের ভেতরে অর্থাৎ কোহিনূর হীরে যে রুমে আছে সেই রুমে যাওয়ার জন্য যে পাসওয়ার্ড দরকার পরতো তা একমাত্র তিনিই জানতেন। উনি মিস্টার. ডজান আলবাট্রা। ডজান আলবাট্রা যখন সবকিছু পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে প্যালেসের ভেতরে যান। তখন তায়াফের নজরে তা পরে। হীরের কক্ষের সামনের পাসওয়ার্ড প্ল্যাটে সঠিক পাসওয়ার্ড দিয়ে ডজান হীরের মূল কক্ষে প্রবেশ করেন। আর রুমে সেইফটির জন্য যে রেড ল্যাজার লাইট দেওয়া থাকে তখন তা বন্ধ ছিলো। আর রইলো সিসিটিভি ক্যামেরার কথা তো তখন তার কানেকশন অর্থাৎ মনিটর রুমের সব ফুটেজ ডিসেবল করে দেওয়া হয়। তায়াফ নিজেই করেছে সব। ডজান আলবাট্রার পিছে কয়েকজন গার্ড ছিলো। তাদের সাথে নিজের গা মিশিয়ে হীরের রুমে তায়াফও প্রবেশ করে। তবে রুমে প্রবেশ করার আগে তায়াফ তার নিজের সাথে “Cyanide” নামক এক মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত মেডিসিন নিয়ে যায়। এই বিষাক্ত মেডিসিন টা আসলে অনেক দুষ্প্রাপ্য। তবে একবার যদি এটা কারো বডিতে যায় তাহলে নির্ঘাত মৃত্যু। এটা গ্যাস হিসেবেও পাওয়া যায়। আর তা একবার নাক-মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করলে মৃত্যু অনিবার্য। প্ল্যান মুতাবিক তায়াফ তার সাথে করেই সেই বিষাক্ত মেডিসিন নিয়ে আসে। তবে তায়াফের শুধু দুচোখ বাদ দিয়ে সারা মুখ মোটা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিলো। নিজের আশেপাশে সবকিছু ভালো করে খেয়াল করে নেয়। দেখে বাকি গার্ড গুলো কঠিন মুখ করে একদম সোজা হয়ে হাতে বিশাল বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ডজান একটা কাচের বক্স থেকে খুব সাবধানে হীরে টা নিয়ে নেয়। কীভাবে খুলতে হয় তায়াফ সেটাও দেখে নেয়৷ ডজানের হীরে টা হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই তায়াফ তার পেছন থেকে গ্যাসীয় বিষাক্ত কেমিক্যাল টুকু বের করে তার মুখ খুলে দেয়৷ ২-৩ সেকেন্ডের মাঝেই পুরো রুমে ব্যাপকভাবে ধোঁয়া ছড়িয়ে পরে। এতোই বেশি ধোঁয়া যুক্ত হয়ে যায় যে একহাত দূরত্বের জিনিস অব্দিও দেখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। গার্ডরা সব বাজেভাবে কাশতে কাশতে ফ্লোরে লুটিয়ে পরে। তাদের নাক-মুখ দিয়ে সাদা ঝাঝ বের হয়ে পরে। তাদের মাঝে ডজান আলবাট্রাও ছিলেন। সেই কক্ষে ডেঞ্জার এলার্ট বাটন ছিলো। আগুন লাগলে বা অন্য কোন গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে সেই এলার্ট বাটন একা একাই সিগনাল দেওয়া শুরু করে। তার তীব্র শব্দ চারিদিকে বাজতে লাগে। আর কেমিক্যাল আস্তে আস্তে যত ছড়াচ্ছিলো ততই তায়াফ হীরের দিকে কয়েক পা কয়েক পা করে এগোচ্ছিলো। সব যখন একদমই হাতের বাইরে চলে যায় তখন এর মাঝেই তায়াফ কাচের ভেতরে থাকা হীরে নিয়ে দ্রুত গতিতে বাইরে এসে পরে। যতক্ষণে পুলিশ এবং বাকি সবাই হীরের ওই রুমে যেতো ততক্ষণে তায়াফ সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। কয়েকজন গার্ড মারা যান এবং ডজন আলবাট্রা গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন। তারপর থেকেই তায়াফ এই হোটেলে আছে কিছুটা গা ঢাকা দিয়েই। আর তখন থেকেই নিউজে ধুম ছড়ায় কোহিনূর চুরি হয়ে যাওয়ার৷
তায়াফ এগুলোই ভাবছিলো তখনই তার কাছে ফোন আসে। ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভেঙে যায় তার। ফোনের স্ক্রীনে আননোন বাম্বার দেখে কি
পাল কুচকায়৷

তায়াফ;; হ্যালো।

— স্যার৷

তায়াফ;; আরে তুই! কি খবর তোর?

যে তায়াফ কে ফোন করেছে সে তার সাথেই কাজ করে। আসলে যাবতীয় সব ইনফরমেশন সেই কালেক্ট করে দেয় তায়াফ কে।

তায়াফ;; কিরে বল।

— স্যার, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি আপনার কাছে যে কোহিনূর আছে সেটা আসল নয় নকল। আর, আর আব্রাহাম স্যারের কাছে যে কোহিনূর টা আছে সেটাই আসল।

তায়াফ;; কিহ?

— জ্বি স্যার। আমি সিওর।

তায়াফ রাগে ফোন কেটে দেয়। তাহলে এতো কষ্ট করে যে হীরে চুরি করলো এতো প্রি প্ল্যান করা সব কিছু এভাবে ভেস্তে গেলো। এটা যেনো মেনেই নিতে পারছে না তায়াফ। আর অন্যদিকে যে লোকটা তায়াফ কে ফোন করেছিলো সে আসলে মিথ্যে কথা বলেছে৷ আব্রাহামের কাছে নকল হীরে তায়াফের কাছেই আসল। তবে তায়াফ কে ভুল বুঝানোর জন্য মিথ্যে তাকে বলতেই হয়েছে এছাড়া যে কোন উপায় ছিলো না তার কাছে। কেননা আব্রাহাম তার মাথার পাশে রিভলবার তাক করে ধরে রেখেছে। তায়াফের সব লোক এখন বর্তমানে আব্রাহামের আন্ডারেই। আব্রাহাম তায়াফের ওই লোককে আগে তুলে নিয়েছে তারপর অনেক শাসিয়েছে৷ অতঃপর জীবনের মায়ায় পরে গুলির ভয়ের ওপর তায়াফ কে তাকে মিথ্যে কথা বলতেই হয়েছে৷ তায়াফ ফোন কেটে দিতেই আব্রাহাম রিভলভার টা নামিয়ে নেয়৷

— স্যার, স্যার আপনি যেভাবে বলতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই বলেছি স্যার। প্লিজ এবার আমাদের ছেড়ে দিন স্যার প্লিজ।

আব্রাহাম;; আমি কাঁচা কাজ করি না।

এই বলেই আব্রাহাম তাকে গার্ড দের দিকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে দেয়। আর গার্ড গুলো তাদের সবাই কে এখান থেকে নিয়ে চলে যায়৷ যাক অর্ধেক কাজ তো হলো। এবার আব্রাহামের ফাদে তায়াফের পা দিতে বেশি একটা দেরি নেই। সেইদিন টা এভাবেই যায়।


দেখতে দেখতেই মাঝখানে কেটে যায় আরো দুদিন। আব্রাহাম প্রচুর ব্যাস্ত থাকে, আইরাতও তা বুঝে। আর আইরাত সবকিছুই জানে৷ আইরাত চোখে মোটা ফ্রেমের এক চশমা পরে বসে বসে ল্যাপটপ ঘেটে যাচ্ছে আর আব্রাহাম করিডরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে৷ হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ফোন ধরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওপর পাশ থেকে বলে ওঠে…

তায়াফ;; একটা বাজি লাগানো যাক!!

আব্রাহামের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা তায়াফ ছাড়া আর কেউ না।

আব্রাহাম;; চোরে রা আর পারেই বা কি!

তায়াফ;; Big shift road no. 11, আগে আসুন তো।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। রুমে এসে আব্রাহাম কে রিভলবারে বুলেট লোড করতে দেখে আইরাত ড্যাবড্যাব করে তাকায়।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; বলো জান।

আইরাত;; কোথায় যাচ্ছেন?

আব্রাহাম;; একটু কাজে। ফিরে আসবো জলদিই।

আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম রিভলবার প্যান্টের পিছনে নিচ্ছিলো তখন আবার আইরাত ডাক দেয়।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আমি কি বাইরে যেতে পারি!

আব্রাহাম;; কোথায়?

আইরাত;; না মানে রুমে বসে বসে না আর ভালো লাগে না তাই বলছিলাম যে আমি কি একটু ঘুড়তে যাওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারি!

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। তার হাত আইরাতের কানের পিছে রেখে কপালে চুমু একে দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ বেবিগার্ল যেতে পারো তবে সাবধানে যেয়ো।

আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম আইরাত কে বলে বের হয়ে পরে৷ আর এদিকে আইরাত তো হেব্বি খুশি। সে ভেবেছিলো যে আব্রাহাম তাকে মানা করবে বাট সে এমন কিছুই বলে নি। আইরাত বিছানার ওপর দাঁড়িয়েই মাথা থেকে কাটা টা খুলে দেয়। ফলে পিঠের পেছনে চুলগুলো সব ঝরঝর করে ছড়িয়ে পরে। সেও রেডি হয়ে নেয় বাইরে ঘুড়তে যাবে বলে। একটা সুব্দর দেখে গোলগাল জামা বের করে পরে, চুলগুলো সুন্দর করে ছেড়ে দেয়। কানে ছোট ছোট ঝুমকা পরে নেয়। হাতে একটা ব্রেস্ল্যাট পরে, তারপর একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে পরে। পার্কিং প্লেসে এসে আব্রাহামের একটা গাড়ি নিয়ে নেয়। সে আজ সাথে করে কোন গার্ড বা ড্রাইভার কে নিবে না মানে নিবে না বলে ঠিক করে। গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়। ইচ্ছে মতো ঘুড়বে আজ। তবে আইরাতের চলে যাওয়ার আরো ঘন্টা খানিক পর আব্রাহাম হোটেল থেকে বের হয়। মানে সেখানের কিছু কাজ শেষ করে তারপর আব্রাহাম বাইরে এর হয়ে আসে৷ বাইরে এসে গাড়িতে উঠে বসে পরে। সেও নিজের সাথে আজ আর কোন গার্ড কে নেয় না। প্রায় ঘন্টা খানিক পর তায়াফের বলা জায়গা তে এসে থামে। এখানে একটা বেশ বড়ো আকারের বাড়ি রয়েছে। সবদিক টা ভালো করে লক্ষ্য করে ভেতরে চলে যায়৷ বাড়ির ভেতরে গিয়ে হলরুমে আব্রাহামের পা রাখতেই তার চোখে পরে কোহিনূর হীরে কে৷ হলরুমের ঠিক মাঝ বরাবর হীরে টা কেমন জলজল করে ঘুরছে। আব্রাহাম কয়েক কদম এগিয়ে যায়।

তখনই তায়াফের কর্কশ কন্ঠস্বর।

তায়াফ;; আরে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী যে।

আব্রাহাম;;

তায়াফ;; আসুন আসুন।

আব্রাহাম;; কেনো ডেকেছিস?

তায়াফ;; আরে কেনো আবার কোহিনূর এর জন্য। যার জন্য এতো কিছু করতে হচ্ছে আপনাকে।

আব্রাহাম;; নকল কোহিনূর নিয়ে কি করবো কি আমি?

তায়াফ;; আসলে যতটা গাধা আমাকে মনে করেন আমি আসলে ততটা গাধা নই। এই কোহিনূর আসল আর আপনার টা নকল৷

আব্রাহাম;; কোন প্রমাণ আছে কি তার?

তায়াফ;; বুঝি আমি। প্যালেসে এতো পাহারা দিয়ে, এতো প্রোটেকশন দিয়ে তো আর নকল হীরে কে রাখবে না তাই না।

আব্রাহাম;; হয় কি জানিস! ডেট ওভার জিনিস কেও খাঁটি জিনিস বলে যেখানে চালিয়ে দেওয়া হয় সেখানে এ আর এমন কি।

তায়াফ;; এই এত্তো মূল্যবান জিনিস আপনার কাছে “এমন কি” হয়ে গেলো!

আব্রাহাম;; হাহ, মানুষের জীবনের থেকে মূল্যবান আর কিছুই না।

তায়াফ;; আর যদি এই জীবন টাই নিয়ে নেই তো!

আব্রাহাম;; মানে?

তায়াফ;; আচ্ছা ধরেই নিলাম যে আপনার কাছের হীরে আসল আর আমার টা নকল। এখন কথা হচ্ছে যে হীরে টা আমার চাই।

আব্রাহাম;; বদলে আমি কি পাবো?

তায়াফ;; যা চাবেন।

আব্রাহাম;; তোর মরণ চাই।

তায়াফ এবার এক অট্টহাসি দেয়।

তায়াফ;; আমি আমার কাছের এই হীরে আপনাকে দিতে পারি তবে এক শর্তে।

আব্রাহাম;; কি?

তায়াফ;; একটা মেয়ে কে দেখেছি আমি সেই হোটেলেই। অনেকবার তো আপনার সাথেই দেখেছি।

আব্রাহাম কপাল কুচকায়।

তায়াফ;; প্রথম দেখি রিসোর্টে। জীবনে কতো মেয়ে কে দেখেছি তবে তার মতো ভালো আমার একটা কেও লাগে নি।

আব্রাহাম;; কে?

তায়াফ;; নাম আইরাত। আমার চাওয়া খুব সাধারণ। আমি হীরে চাই। আর তা যদি না পাই তাহলে আমি ওই মেয়ে টাকে চাই। আর হীরে আপনি নিয়ে যেতে পারেন।

আব্রাহাম ঝড়ের গতিতে গিয়ে তায়াফের কলার খামছে ধরে৷ চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না আব্রাহামের। রাগ হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।

আব্রাহাম;; অবশ্যই কোন এক ফুটপাতের জারজ সন্তান তুই তাই কোন মেয়ের দিকে এভাবে নজর তুলে তাকাস।

তায়াফ;; তা নাহলে হীরেও যাবে আর এই মেয়ে টাকেও যেতে হবে।

আব্রাহাম;; কি বলতে কি চাচ্ছিস তুই!

তায়াফ;; মেয়ে টাকে মেরে ফেলবো আমি।

আব্রাহাম;; তা তো তুই ভুলেই যা। না হীরে তোর হবে আর না ই তুই বেঁচে থাকবি। আর রইলো ওই মেয়ের কথা তা তো তুই ভুল করে স্বপ্নেও ভাবিস না।

তায়াফ;; এক্সিডেন্ট!

আব্রাহাম এবার তায়াফের কলার হালকা করে ছেড়ে দিয়ে কপালের ভাজ দ্বিগুণ করে তাকায়।

তায়াফ;; খোঁজ নিয়ে দেখুন এখনো ওই মেয়ে বেঁচে আছে কিনা!

আব্রাহামের বুকটা কেমন ধক করে ওঠে। তখনই তার মনে পরে যে আজ আইরাত তার কাছে বাইরে যাওয়ার কথা বলেছিলো। আব্রাহামের টেনশন আরো বেড়ে যায়। তখনই তায়াফের ফোনে ফোন আসে। এক শয়তানি হাসি দিয়ে তায়াফ ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দেয়। ওপর পাশ থেকে কন্ঠ ভেসে আসে।

— স্যার, কাজ হয়ে গেছে। যেই মেয়েকে ফলো করে এক্সিডেন্ট করাতে বলেছিলেন তার এক্সিডেন্ট করে দিয়েছি। অনেক বাজে ভাবেই।

তায়াফ;; নাম কি মেয়ের?

— আইরাত।

আব্রাহামের পায়ের নিচ থেকে মাটি যেনো সরে যায়৷ নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সে যেনো বর্তমানে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যাচ্ছে৷ তার রাগের মাত্রা এখন পরিমাপ করা যাবে না। তবে এখন রাগের থেকে বুঝে শুনে কাজ করা টাই বেশি শ্রেয়। আব্রাহাম বেশি কিছু না বিকট এক গর্জন দিয়ে তায়াফের কলার ধরে শুধু তার মুখ বরাবর এক ঘুষি দিয়ে দেয়। ছিটকে যায় রক্ত। ব্যাস আর কিছুই বলে না সোজা ছুটে বের হয়ে যায় সেই বাড়ি থেকে৷ আর তায়াফ নিচে বসে আছে মুখ দিয়ে অনরগল রক্ত ঝড়ছে তার। আব্রাহাম বাইরে এসে গাড়িতে উঠে বসে হাওয়ার বেগে ছুটে যাচ্ছে৷ রাস্তা তেই আব্রাহামের একজন গার্ড ফোন করে। রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে হাপাতে হাপাতে বলে ওঠে “আইরাতের এক্সিডেন্ট হয়েছে”। আব্রাহাম দিন-দুনিয়ার কথা ভুলে গিয়ে ছুটে যাচ্ছে৷ গার্ড তাকে একটা রোডের নাম বলে সেখানেই আব্রাহাম আসে৷ গার্ড রা চারিপাশে দাঁড়িয়ে আছে৷ এখানে অনেক মানুষের ভীড়ও জমে গেছে৷ আব্রাহাম গিয়ে শুধু দেখে যে রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটা আধো ভাঙা গাড়ি উল্টে আছে। আর তার মাঝখানে অর্থাৎ উইন্ড এর দিক টায় একটা রক্তমাখা হাত বের হয়ে আছে। এটা দেখেই আব্রাহামের কলিজায় এক মোচড় দিয়ে ওঠে।





চলবে~~


চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here