নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৩৯+৪০

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৯

এই মূহুর্তে থমকে গেছে সবকিছুই। কেমন যেনো নিস্তেজ সব। কেমন নিষ্প্রাণ, রাস্তার আনাচে কানাচে সবদিকেই প্রচুর মানুষ। সবার মাঝে কেমন এক গম্ভীরতার ছাপ। তখনই কয়েকটা ফরেইন পুলিশের গাড়ি রেড এলার্ট বাজিয়ে আসে। সব জায়গায় কেমন এক হৈচৈ পরে গেছে। পুলিশ অফিসার মুখের কাছে মুঠোফোন এনে দ্রুত এম্বুলেন্স কে ফোন করে। আর এইদিকের রাস্তা পুরো বন্ধ করে দিতে বলে। চারিপাশে শুধু পুলিশের এলার্ট বাজানোর শব্দ। আব্রাহামের গার্ড”রা সব মানুষ কে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। যে জায়গায় এক্সিডেন্ট হয়েছে অর্থাৎ এক্সিডেন্ট স্পোট সেখানে বাউন্ডারি দিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ এর ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। আর এই সবকিছুর ঠিক মাঝে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম। তার কান দিয়ে যেনো কোন কথাই যাচ্ছে না, কারো কোন কথাই শুনছে না সে। নিজের আশেপাশের সবকিছুই কেমন সাদা-কালো দেখাচ্ছে তার কাছে। সবকিছুই তার দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে শুধু আইরাতের গাড়ির এক্সিডেন্ট আর বাইরে বের হয়ে থাকা তার রক্তমাখা হাত টা বাদে। অগোচরেই আব্রাহামের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরে এক ফোটা নোনাজল। বুকটা যেনো ভেঙে মূহুর্তেই চুরমার হয়ে গেলো। আব্রাহাম কাপা কাপা পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে যায় কিন্ত পারে না। পা যেনো আর চলে না। তখনই একটা বিশাল আকারের গাড়ি এসে এক্সিডেন্ট করা গাড়ির পেছনে দাঁড়ায়। উল্টে যাওয়া গাড়ি উঠিয়ে আস্তে করে ঘুড়িয়ে দেয়। এতে গাড়ি সোজা হয়ে যায় এবং উইন্ড দিয়ে আইরাতের মুখ টা স্পষ্ট দেখা যায়। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে তার, কপালের বেশ অংশ কেটে গেছে, গলার পাশে ফর্সা দিকটায় খানিক কাচ ঢুকে আছে, সেখান থেকে বেয়ে বেয়ে রক্ত ঝড়ছে। নাক-ঠোঁটের কাছে রক্ত। হাতের অনেক জায়গায় ক্ষত। রক্তে দুহাত লাল আর তাতে আইরাত চোখ বন্ধ করে নিস্তেজ হয়ে ড্রাইভিং সীটে বসে আছে। এতোই জোরে ধাল্লা লেগেছে যে সীট বেল্ট টা ছিড়েই গিয়েছে। আইরাত ড্রাইভিং করছিলো। কিন্তু সাইড মিররে সে দেখে যে একটা কালো গাড়ি তাকে ফলো করছে অনেকক্ষন যাবত। আইরাত যেদিকে গাড়ি মুভ করছে সেই গাড়ি টাও ঠিক সেইদিকেই যাচ্ছে। আইরাত তা দেখে খানিক কপাল কুচকায়। অতঃপর গাড়ি ইউ টার্ন নিয়ে অন্য এক খোলা রোডে নিয়ে চলে যায়। তখনই সেই গাড়িটা তাদের স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে আইরাতের গাড়ি কে পেছন থেকে দেয় এক ধক্কা মেরে। ব্রেকের ওপর থেকে নিজের কন্ট্রোল সরে গেলে পরমূহুর্তেই সামনে দানব আকৃতির একটা ট্রাক আসে। ভর পেয়ে আইরাত স্টেয়ারিং এর ওপর থেকে দুহাত উঠিয়ে দিয়ে নিজের সামনে ধরে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না। খারপ ভাবে তার এক্সিডেন্ট হয়। আর দরুন গাড়ি আধো ভাঙা হয়ে যায় আর উল্টে পরে যায়। অনেক ক্র‍্যাশ খেয়েছে। দূর থেকেই আইরাত কে গাড়ির ভেতরে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত অবস্থায়। আর আইরাত কে এমন অবস্থায় দেখে আব্রাহাম এক পাগল উন্মাদ হয়ে গেলো। নিজেকে আর নিজের মাঝে খুঁজে পাচ্ছে না সে। আইরাতের এত্তো বড়ো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তা যেনো মেনেই নিতে পারছে না আব্রাহাম। বলতে ইচ্ছে করছে যে সে যা এই মূহুর্তে দেখছে তা সম্পূর্ণই মিথ্যে। এভাবে আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম চিল্লিয়ে ওঠে…

আব্রাহাম;; আইরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াত!!

বিকট এক চিৎকার দিয়ে আব্রাহাম দৌড়ে আইরাতের গাড়ির দিকে যেতে লাগে। তবে একজন গার্ড এসে আব্রাহাম কে আটকে দেয়।

গার্ড;; স্যার স্যার প্লিজ স্যার নিজেকে সামলান স্যার প্লিজ। সেখানে যাওয়া টা ঠিক হবে বলে মনে হয় না স্যার প্লিজ স্যার।

আব্রাহাম গার্ড কে দেয় এক ধাক্কা। তাকে সরিয়ে দিয়ে আব্রাহাম আবার ছুটে চলে যায়। আব্রাহামের যাওয়ার আগে একজন পুলিশ অফিসার এসে আইরাতের গাড়ির দরজা খুলে দেয়। সীট থেকে বাইরে পাশে পরে যেতে ধরলে আব্রাহাম ছুটে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে আইরাত কে খপ করে ধরে ফেলে। আইরাত পরে যায় আব্রাহামের বুকের ওপর। আব্রাহাম পুরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে। মূহুর্তেই আইরাতের রক্তে আব্রাহামের পরনে থাকা সাদা শার্ট টা ভিজে গাঢ় লাল হয়ে যায়। আব্রাহামের হিতাহিত জ্ঞান নেই আজ-এখন। নিজের বাহুতে আইরাতের মাথা টা নিয়ে নেয়। হাত দিয়ে তার মুখে আছড়ে পরা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। আইরাতের গালে ধরে ধরে চিল্লিয়ে যাচ্ছে।

আব্রাহাম;; আইরাত, আইরাত বেবিগার্ল। আইরাত জান আমার চোখ খুলো প্লিজ। আইরাত আমাকে শুনতে পারো কি তুমি আইরাত। আইরাত চোখ খুলো, আইরাত। আমার দোষ সব আমার দোষ। আমি কেনো, কেনো আমি তোমাকে বাইরে বের হতে দিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম যে তুমি হোটেলের কোথাও-ই ঘুরবে আমি তো, আমি, আমি তো জানি না যে তুমি বাইরে আসবে। গার্ড নিয়ে সাথে কেনো এলে না। আইরাত আমি মরে যাবো আইরাত আমি সোজা মরে যাবো। আমি এক জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো আইরাত। আইরাত আমাকে এভাবে প্লিজ মেরে ফেলো না তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না, যেতে পারো না। তুমি চলে গেলে আমার মরণ ছাড়া কোন উপায়ই থাকবে না আর আইরাত। আইরাত বেবিগার্ল চোখ খুলো প্লিজ। আইরাত জান আমার কথা বলো। আইরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াত।

আব্রাহামের আশেপাশে কোন খেয়ালই নেই আজ। পাগল হয়ে আইরাতের ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিজের বাহুতে নিয়ে পাগলের মতো চিল্লিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ অফিসার রা চেয়েও কিছুই বলতে পারছে না। কারণ অবস্থা টাই হাতের বাইরে। আব্রাহাম কে কেউ আজ পর্যন্ত এমন করতে দেখে নি কখনোই না। তাতে যত বড়োই কান্ড হয়ে যাক না কেনো। কেউ আজ পর্যন্ত আব্রাহাম কে এমন করতে দেখে নি। এতো স্ট্রোং একজন মানুষ কে এভাবে ভেঙে পরতে দেখে কারই না খারাপ লাগবে। কেউ কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। গার্ড রা সবাই আফসোস নিয়ে তাকিয়ে আছে। তখনই এম্বুলেন্স আসে। দ্রুত আইরাত কে হস্পিটালাইসড করতে হবে। ওয়ার্ড বয় রা এসে যেই না আইরাত কে ধরে এম্বুলেন্সের ভেতরে নিয়ে যেতে ধরবে তখন আব্রাহাম রেগে আগুন হয়ে যায়। সে উঠে আইরাত কে পাজাকোলে তুলে নেয়। তারপর দ্রুত গিয়ে নিজের গাড়িতে তুলে নেয়। এম্বুলেন্সে আইরাত কে সে উঠতে দিবে না। আইরাত কে দ্রুত বসিয়ে সেও শার্টের হাতা গুলো আরো গুটিয়ে নিতে নিতে গাড়িতে এসে ড্রাইভিং সীটে উঠে বসে পরে। রক্তে আব্রাহামের সাদা শার্ট শেষ। আইরাত অজ্ঞান হয়ে তার পাশেই বসে আছে। ঝড়ের গতিতে আব্রাহাম গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। এম্বুলেন্সের ওপরে আব্রাহামের বিশ্বাস নেই যদি একবার ট্রাফিং জ্যামে পরে যায় তাহলে শেষ। আর জ্যামে আটকে বসে থাকবে সেই সময় টুকু এখন আইরাতের কাছে নেই। আব্রাহাম ড্রাইভ করছে আর আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। আইরাত কে তার এক হাত দিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। এই মূহুর্তে আব্রাহামের প্রচুর কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্না করছে না। একহাত দিয়ে আইরাত কে বুকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। এক ঘন্টার রাস্তা মাত্র বিশ মিনিটে পাড়ি দিয়ে এসেছে সে। হস্পিটালের সামনে গাড়ি থামতেই আব্রাহাম আইরাত কে সীটে আস্তে করে বসিয়ে নিজে চট জলদি গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাতের পাশে দরজা খুলে আবার তাকে পাজাকোলে তুলে নেয়। আব্রাহাম কে এই অবস্থায় দেখেই আশেপাশের মানুষ পুরো ‘থ’। গলা ফাটিয়ে “ডক্টর” কে ডেকে ডেকে হস্পিটালের ভেতরে যাচ্ছে আব্রাহাম। ভাগ্য ভালো হস্পিটালে তখন সিনিয়র ডক্টর ছিলো৷ এভাবে কারো গলা শুনেই পুরো হস্পিটালের মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। আর আব্রাহামের কোলে এভাবে একটা মেয়েকে রক্তমাখা অবস্থায় দেখে ডক্টর তড়িঘড়ি করে তার কাছে পৌঁছে যায়।

ডক্টর;; Abraham sir, what happened to her?

আব্রাহাম;; She had a bad accident, check her out…

ডক্টর দ্রুত একটা বেড নিয়ে এসে তাতে আইরাত কে শুইয়ে দিয়ে নিয়ে যায়। একজন নার্স এসে আব্রাহাম কে কিছু শান্তনা পূর্ন কথা বলে যায়। আইরাতের অবস্থা প্রচুর ক্রিটিকাল। রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক। তাকে আইসিইউ তে নিয়ে যাওয়া হয় (ইমারজেন্সি)। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে ভয়ে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে। এক হাত কোমড়ে রেখে আরেক হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপালের পাশে জমে থাকা ঘাম বিন্দু টুকু মুছে নেয়। আইরাত কে যে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার দরজাতে বড়ো আকারের একটা কাচের গ্লাস দেওয়া ছিলো। যা দ্বারা ভেতরের সবকিছুই দেখা যায়। আব্রাহাম কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে কাচের গ্লাস দিয়ে ভেতরে দেখতে লাগে। আইরাতের অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। নার্স আর ডক্টর রা ছুটে ছুটে কাজ করছে। তুলি দিয়ে ব্লাড গুলো পরিষ্কার করছে। আর আব্রাহাম এগুলো উইন্ড গ্লাস দিয়ে দেখছে। নিজের ভেতরে যেনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে আব্রাহামের। আইরাত কে আব্রাহাম কি পরিমান ভালোবাসে তা ভাষায় প্রকাশ করা বড্ড বেশিই দায়। অনেক কষ্টে পাওয়া আইরাত কে তার, হারাতে চায় না। হারিয়ে গেলে হয়তো সেইদিনই নিজের মৃত্যু কে স্বজ্ঞানে বরণ করে নিতে হবে আব্রাহামের। আব্রাহাম কল্পনাতেও ভাবে নি যে একদিন আইরাত কে সে এই হালে খুঁজে পাবে। নিজেকে বড়ো একা লাগছে আজ। খুব বেশিই খারাপ লাগছে। সবকিছু দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। এভাবে আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম তার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুখে চেপে ধরে কেদে দেয়। কথায় বলে যত কঠিন অবস্থাই হোক না কেনো ছেলে দের নাকি কাদতে নেই। কিন্তু এটা ভুলে যায় যে ছেলেরাও মানুষ, ফিলিংস তাদেরও আছে। আব্রাহামের চোখ দিয়ে অঝোড় ধারায় পানি গড়িয়ে পরছে৷ খুব করে কাদছে সে। ভয় সবদিক থেকে বাজেভাবে গ্রাস করে নিয়েছে তাকে, আইরাত কে হারানোর ভয়। আব্রাহাম বসে পরে ধপ করে। দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে নিচু হয়ে যায়। আব্রাহাম কাদছে ভাবতেই কেমন একটা মায়া কাজ করে। কাকতালীয় ভাবে তখন আব্রাহামের দাদি ইলা ফোন করে বসে তার কাছে। ফোন কয়েক বার বেজে কেটে যায় আপনা আপনিই । কেননা এখন কোন রকম কোন কথা বলার অবস্থায় আব্রাহাম নেই, তার তেমন মন-মানসিকতা বিদ্যমান নেই এখন। ৩য় বারের সময় ফোন বের করে সামনে আনতেই দেখে তার দাদি ইলা। আব্রাহাম যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। বাসায় কাউকে ভুল করেও এইসবের বিষয়ে জানতে দেওয়া যাবে না তাহলে ওদিকে সবার নাজেহাল দশা হয়ে যাবে। ডান হাতে ফোন নিয়ে বাম হাত দিয়ে দুচোখ মুছে নেয়। স্বাভাবিক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।

আব্রাহাম;; হ হ হ্য হ্যালো…

ইলা;; হ্যালো আব্রাহাম সোনা কেমন আছিস? আসলে কি আমি জানি যে তোরা দুই ল্যায়লা-মাজনু একই সাথে আছিস কিন্তু কি করবো বল কথা বলতে ইচ্ছে করে তো তাই ফোন দিয়ে বসলাম। আচ্ছা কেমন আছিস তোরা? কি করিস? খাওয়া-দাওয়া ঠিক ভাবে করছিস তো? শোন আইরাতের মা অনামিকা কে না আমি এনে পরেছি আমাদের বাসায়। কারণ সেও তার বাড়িতে একা আর আমিও একা। একা একা আর কি করবো তাই নিয়ে এসে পরেছি। ভালো করেছি না বল! যাই হোক আইরাত কোথায় রে? কেমন আছে ও? আচ্ছা তোর সাথেই পরে কথা বলবো আগে আইরাত কে দে তো দেখি। আমি ওকে মিস করি খুব। কথা বলবো দে দে আগে ওকে দে।

আব্রাহাম;; দ দ দাদি, দাদি আস আসলে আমি তো একটু বাইরে এসেছি তো। আমি বাসায় নেই। আমি য য যক যখন বাসায় যাবো তখন আ আই আ আইরাতের সাথে কথা বলিয়ে দিবো তোমার।

ইলা;; আব্রাহাম! সোনা কি হয়েছে তোর! গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো? ঠিক আছিস তো তুই?

আব্রাহামের চোখ আর বাধ মানছে না এখন।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ হ্যাঁ আমার বুড়ি আমি, আমি ঠিক আছি একদম। আর ওইতো আইরাত, আইরাত আর আমি মিলে না অ অ অনেক আইসক্রিম একসাথে খেয়ে নিয়েছিলাম তো তাই, তাই আর কি গলা এমন শোনাচ্ছে ভেঙে গিয়েছে। ঠিক আছি আমি।

ইলা;; ধুর তোরা দুটো কি যে করিস না। বড়ো হবি কবে তোরা। আইরাতের সাথে সাথে তুইও ছেলেমানুষী আর ছাড়লি না। আচ্ছা শোন ভালো থাকিস। আর আমার আইরাত কে জ্বালাতন করবি না। ওকে দেখে রাখবি। একটা আচড়ও যেনো ওর ওপরে না আসে বুঝেছিস!

আব্রাহাম;; আমার ক্ষমা করো দাদি, আমি ব্যার্থ। তোমার কথার মূল্য আমি রাখতে পারি নি।

ইলা;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; ভালো থেকো আমার বুড়ি।

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়, কেদে দেয়।
ফোনের ওয়ালপেপারে আইরাতের ছবি ভাসছে। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে তাতে ছুইয়ে দিচ্ছে। আব্রাহাম নিজের দিকে তাকায়। নিজের গায়ে আইরাতের রক্ত। চোখ বন্ধ করে বড়ো বড়ো বেশকিছু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। তখনই আব্রাহামের মাথায় তায়াফের খেয়াল আসে আর যে লোকগুলো আইরাতের এক্সিডেন্ট করিয়েছে তাদের কথা আসে। আব্রাহামের মাঝে এখন কোন ভাব নেই। রাগ এতো টাই বেড়ে গিয়েছে যে সে রিয়েক্ট করতেই ভুলে গেছে। কিছু সময় পর আইরাতের কেবিন থেকে একজন নার্স বের হয়ে আসে আব্রাহামের কাছে চলে যায়।

নার্স;; স্যার, স্যার।

আব্রাহাম চোখ তুলে নার্সের দিকে তাকায়। তবে আব্রাহাম যে দেখে নার্সের নিজেরই ভয়ে গা হীম হয়ে আসে, শুকনো ঢোক গিলে। আব্রাহামের চোখ গাঢ় লাল। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে রাগে থরথর করে কাপছে সে। কপালের, হাতের রগগুলো কেমন ফুলে গেছে। নার্স কিছু না বলেই আবার সোজা কেবিনের ভেতরে চলে যায়। তার পরেই ডক্টর বাইরে আসে।

ডক্টর;; আব্রাহাম স্যার!

আব্রাহাম;; জ্বি।

ডক্টর;; ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি!

আব্রাহাম;; হুয়াট?

ডক্টর;; মেয়েটা আপনার কে হয়?

আব্রাহাম;; আমার বউ, আমার পুরো দুনিয়া ওই মেয়ে।

আব্রাহামের কথা শুনে ডক্টর বেশ অবাকই হয়।

ডক্টর;; জ্বি ধন্যবাদ। আসলে ম্যামের অনেক রক্ত গিয়েছে। রক্ত লাগবে।

আব্রাহাম;; আমার আর আইরাতের ব্লাড গ্রুপ সেইম।

আব্রাহাম মাথা তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে ডক্টরের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; দরকার পরলে আমার বডির পুরো ব্লাড আপনি নিয়ে নিন কিন্তু যে করেই হোক যেভাবেই হোক আমার আইরাত সেইফ থাকা চাই। তাকে একদম সুস্থ চাই আমার, ডু ইউ গেট দ্যাট!

ডক্টর;; জ জ্ব জ্বি স্যার।

আব্রাহাম কে নিয়ে একটা কেবিনে চলে যায় ডক্টর। প্রায় তিন ব্যাগ রক্ত নেওয়া হয়েছে আব্রাহামের বডি থেকে। বর্তমানে আইরাত কে হস্পিটালের ড্রেস পরিয়ে দিয়ে রেখেছে। হাতে ব্লাডের কানেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। কপালে-গালে ব্যান্ডেজ করা। গলার দিক টায় যেখানে কাচ বিধে ছিলো সেখানে বড়ো ব্যান্ডেজ রয়েছে। ঠোঁটের পাশে বেশ টুকু কেটে গিয়েছে। আব্রাহাম এক নজর আইরাত কে দেখে দ্রুত পা ফেলে হস্পিটাল থেকে বের হয়ে পরে। সবাই কে, সবাই কে এত্তো পরিমাণে জঘন্য-বিচ্ছিরি মৃত্যু আব্রাহাম দিবে যে তাদের মরণ দেখে রাস্তার কুকুর অব্দি কাদবে। সব ধ্বংস করে দিবে। পুরো হস্পিটালের বাইরে কমপক্ষে শত গার্ড দিয়ে রেখেছে। সিনিয়র থেকে সিনিয়র ডক্টর দের ডেকেছে আব্রাহাম আইরাতের ট্রিটমেন্টের জন্য। হস্পিটালের বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পরে। আইরাতের রক্ত মাখা শার্ট টা আর খুলে না আব্রাহাম তার গা থেকে। তার ওপরেই হুডি টা পরে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। মুখে কোন হাবভাব নেই তার। প্রচন্ডরকম ভাবে রেগে আছে। এমনকি তার রাগের ভয়ে কেউ তার সাথে ঠিক ভাবে কথাও বলে নি। আব্রাহাম চলে যায়, আজ পুরো কিয়ামত হয়ে যাবে।

।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪০

আব্রাহাম হস্পিটাল থেকে বের হয়ে সোজা হোটেলে চলে যায়। সেখানে আব্রাহামের আন্ডারে যতগুলো গার্ড ছিলো সবগুলো কে এলার্ট করে দেওয়া হয়৷ পাতাল থেকে হলেও যারা আইরাতের এক্সিডেন্ট করিয়েছে তাদের খুঁজে ধরে নিয়ে আসতে বলে। আব্রাহাম নিজের রুমে চলে যায়। মাথা টা কেমন ধরেছে তার। বারবার আইরাতের চেহারা টা চোখের দেওয়ালে ভেসে বেড়াচ্ছে। রুমে এসে আব্রাহাম চারিদিকে চোখ বুলায় একবার। সবদিকে আইরাতের স্মৃতি জড়িয়ে আছে৷ হাত দিয়ে ঠেলে মাথার ওপর থেকে হুডি টা ফেলে দেয়৷ হুডি সম্পূর্ণ খুলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আইরাতের রক্তে ভেজা শার্ট টা তার গায়ে। হাত দিয়ে একবার একটা ছুইয়ে দেয়। রক্তমাখা আইরাত কে নিজের বাহুতে নিয়ে চিল্লিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সাদা-কালো আকারে চোখের দর্পণে ভাসছে তার। কয়েক ঘন্টা আগেও আইরাত ভালো ছিলো, তার সাথেই ছিলো। তরতাজা একটা মেয়ে এখন মৃত্যুর মুখে। জীবন-মৃত্যুর মাঝে ঝুলছে সে। পুরো রুমে আইরাতের হাসির আওয়াজ যেনো বাজছে। আইরাত যে এখান থেকে ওখানে দৌড়াদৌড়ি করতো তা মনে পরছে। আব্রাহাম আর এতো প্রেসার সহ্য করতে না পেরে পাশে হাতের কাছে থাকা একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস তুলে আয়নাতে ছুড়ে মারে। মূহুর্তেই ঝরঝর করে আয়নার কাচ সম্পূর্ণ ভেঙে নিচে পরে যায়। আব্রাহাম তার দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে পরে৷ কিছুক্ষণ এভাবে বসে থেকে উঠে দাঁড়ায়। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে পরেছে তার৷ রাগে যেনো শরীরের রক্ত টগবগ করছে। যাই হয়ে যাক আজ তো তায়াফ কে খুন করেই দম নিবে সে। চোখ তুলে ওপরে তাকায়। চোখে অশ্রুবিন্দু আর মুখে রাগের সংমিশ্রণ। কোন কথা ছাড়াই রিভলবার টা বের করে হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহামের গায়ে এখনো ওই রক্ত মাখা শার্ট টাই। এটা পরেই বাইরে বের হয়েছে৷ যেদিক দিয়ে যাচ্ছে সেদিকেই মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত নজরে। অনেকে তো আবার ভয়ের চোটে তার কাছ দিয়েও যেতে চাইছে না। গাড়িতে উঠে তায়াফের বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগে। গাড়ি না যেনো ঝড় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ তায়াফের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পরে। তায়াফের বাড়ির সামনে কিছু গার্ড ছিলো। আব্রাহাম কে এমন লুক নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখেই তারা কয়েক কদম হেঁটে যায়। আর আব্রাহাম বিনাবাক্যে তাদের গুলি করে দেয়। এক লাথি দিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরে। তবে গিয়ে দেখে কেউ নেই। বাড়ি পুরো ফাকা৷ সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে রুমে গিয়েও দেখে কেউ নেই। তায়াফ কে না পেয়ে তো আব্রাহামের মাথা আরো বেশি গরম হয়ে যায়। দ্রুত বাইরে বের হয়ে দেখে প্রায় সবাই গুলি খেয়ে নিচে পরে আছে তবে একটা গার্ড নিচে শুয়েই কাতরাচ্ছে। আব্রাহাম তার কাছে গিয়ে কলার খামছে ধরে দাঁতের চোয়াল শক্ত করে বলে….

আব্রাহাম;; তায়াফ কোথায়? বল তায়াফ কোথায়? জলদি বল ****** নয়তো যতটুকু জীবন বাকি আছে সেটুকুও নিয়ে নিবো বল।

গার্ড;; উ উন উনি, উনিহ এয়ারপোর্টে।

আব্রাহাম;; এয়ারপোর্টে কেনো? বল

গার্ড;; উনি হয়তো দ দ দে দেশে ফ ফিরে যাবেন ত তাই।

আব্রাহাম উঠে ওই গার্ডের মুখ বরাবর দেয় এক লাথি মেরে, দাঁত তো অবশ্যই ভেঙেছে। দ্রুত কদম ফেলে আবার এসে গাড়িতে উঠে বসে। যেখানে এয়ারপোর্টে যেতে লাগতো ঘন্টা খানিক সময় সেখানে দশ কি পনেরো মিনিটে এসেছে সে। এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়ি থামিয়ে নেমে পরে। স্বজোরে গাড়ির দরজা লাগিয়ে ভেতরে আসতে ধরে। তবে ভেতরে প্রবেশ করার সময় সিকিউরিটি গার্ড রা থামিয়ে দেয়। আব্রাহাম কপাল কুচকে একবার সিকিউরিটি গার্ডের দিকে তাকায় আরেকবার তার হাতের দিকে। আব্রাহাম কিছু বলে না শুধুই দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু তখনই সিনিয়র একজন এসে তড়িঘড়ি করে ওই গার্ড কে সরিয়ে দেয়। তারপর ক্লিয়ারলি সব বলে। জীবন বাঁচাতে চাইলে যেনো আব্রাহাম কে ভেতরে আসতে দেয়। কিছু কড়া কড়া কথা বলে সিকিউরিটি কে সিনিয়র কর্মকর্তা এসে। তারপর সিকিউরিটির কিছু বলার আগেই আব্রাহাম রেগে ভেতরে এসে পরে। আব্রাহাম কে রক্তমাখা শার্ট পরে থাকতে দেখে এবং হাতে রিভলবার দেখে সাধারণতই ভরকে যায় সবাই। এভাবে আব্রাহাম কখনোই কারো সামনে আসে নি। আর এমন করে পাবলিকের সামনে আসাটাও যে ভালো দেখায় না। তবে এই মূহুর্তে মাথায় রক্ত চেপে বসে আছে তার। আমজনতার যেনো কোন সমস্যা না হয় তাই আব্রাহাম মেনেজার কে বলে দশ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্ট ফাকা করে দিতে বলে। এয়ারপোর্ট থেকে সবাই কে চলে যেতে বলে এবং সব ফ্লাইটগুলো ক্যান্সেল করে দিতে বলে। এতে যার যত টাকা ক্ষতি হবে সব আব্রাহাম দিবে। আব্রাহামের কথা মতো বেশ কিছু সময়ের মাঝেই পুরো এয়ারপোর্টে ফাকা হয়ে গেলো। এবার আব্রাহাম শুধু হাতে গান নিয়ে হেঁটে চলেছে।

অন্যদিকে তায়াফ একদম ফুল বডি মুখ সব ঢেকে তারপর এসেছে। একে তো একটা মেয়েকে খুন করার চেষ্টা করেছে আর দ্বিতীয় হীরে নিয়ে ভাগছে। তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে তার। তবে একটা জিনিস তায়াফ কে অবাক করে তা হচ্ছে মূহুর্তেই এয়ারপোর্ট এমন খালি হয়ে কেনো গেলো! তার ফ্লাইট আছে, সময় প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে এর মাঝে এনাউন্সমেন্ট কিছুই করা হলো না। তায়াফ বসে ছিলো তবে এভাবে আর বসে থাকতে না পেরে তায়াফ উঠে পরে। হাতে নিজের ব্যাগ টা নিয়ে মাথা কিছুটা নুইয়ে যাচ্ছে। পুরো ফাকা এয়ারপোর্টে হেঁটে যেতে যেতেই হঠাৎ পাশ থেকে কাউকে চোখে পরে তায়াফের। সে পাশ কাটিয়ে চলেই যেতো কিন্তু সেটা যেনো তার চোখে বাধে। তায়াফ থেমে গিয়ে কপাল কুচকে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। পাশে তাকাতেই কপালের ভাজ দ্বিগুণ হয় তার। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। একটা কালো প্যান্ট আর ধবধবে সাদা শার্ট পরনে। যে শার্টে আইরাতের রক্ত লেগে আছে। তায়াফের নজর যায় আব্রাহামের হাতের দিকে। রিভলবারের ট্রিগার ঘুরিয়ে যাচ্ছে সে। তায়াফের যা বুঝার তা সে বুঝে গেলো। আব্রাহাম কে দেখে তার হাত থেকে ব্যাগ টা নিচে পরে যায়। তায়াফ ঘুরে দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসতে নিবে তখনই আব্রাহাম সোজা তায়াফের বাম পা বরাবর দুটো গুলি চালিয়ে দেয়৷ দুটোই তার পায়ে লেগেছে। ধিরিম করে পরে যায় সে। একদম জনমানব হীন ফাকা জায়গায় বুলেটের আওয়াজ যেনো সুস্পষ্ট। তায়াফ নিচে পরে কাতরাতে লাগে৷ তখনই আব্রাহামের পেছন থেকে কতোগুলো গার্ড আসে তারা এসেই তায়াফের কলার খামছে ধরে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগে। আর আব্রাহাম তায়াফের ব্যাগ টা নিয়ে নেয়। এখানেই হয়তো হীরে আছে। গার্ড রা তায়াফ কে নিজেদের সাথে গাড়িতে তুলে নেয়। তায়াফের পা থেকে রক্তে যেনো সব ভিজে যাচ্ছে আর আব্রাহাম গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসে। কিছুসময় পর আব্রাহামের কাছে একটা ফোন কল আসে। আব্রাহামের গার্ড রা ওই লোকগুলো কে ধরে ফেলেছে যারা আইরাতের এক্সিডেন্ট করিয়েছিলো। তারা মোট চারজন ছিলো। আর আব্রাহাম যেভাবে নিজের সব গার্ড দের কে সবদিকে খোঁজে পাঠিয়ে দিয়েছে তাতে তাদের ধরা তেমন কোন একটা বড়ো ব্যাপার না। কয়েক ঘন্টার মাঝেই তারা হাতের নাগালে।

গার্ড;; স্যার ধরে ফেলেছি। ওরা চারজন মোট। এখন এদের আপনার কাছে নিয়ে আসবো কি!

আব্রাহাম;; না

গার্ড;; এদের কি করবো স্যার?

আব্রাহাম;; ওদের প্রত্যেকটার মাথা শরীর থেকে আলাদা হওয়া চাই।

গার্ড;; স্যার…

আব্রাহাম;; একটারও মাথা যেনো আর তাদের ঘাড়ের ওপর না থাকে। সবগুলোর মাথা ধর থেকে আলাদা করে দাও। তারপর তাদের লাশ আবার তাদের সেই গাড়িতে ভরেই তাতে পেট্রোল ঢেলে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে খাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দাও। যেনো তাদের কাক-পক্ষীও খুঁজে না পায়।

গার্ড;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আব্রাহামের গাড়ি আগে আগে যাচ্ছে আর তার পেছনের গাড়িতে তার গার্ড রা তায়াফ কে ধরে নিয়ে আসছে। দেখতে দেখতেই তারা পৌঁছে যায় একটা আধো ভাঙা বাড়ির দিকে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়েই গার্ড রা তায়াফ কে ঘাড় ধরে টেনে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। তারপর আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে নেমে পরে। ভেতরে চলে যায়। তায়াফ কে একটা চেয়ারের সাথে বেধে বসিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে তার পায়ে যে গুলি লেগেছে তার ব্যাথায় আসর হয়ে যাচ্ছে সে। আব্রাহাম এসে তায়াফের সামনে বসে। তায়াফ ব্যাথায় ছটফটিয়েই যাচ্ছে। আব্রাহাম তার একহাত হাটুর ওপর রেখে গান দিয়ে নিজের দিকে দেখিয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; দেখ আমার দিকে তাকা। দেখ এই যে এই রক্তগুলো যে দেখছিস না এইসব, এইসব আমার আইরাতের। একটা হাসিখুশি মেয়ে কে এখন তুই মৃত্যুর মুখে বসিয়ে রেখেছিস। তোর ওপরে তো জেদ আমার আগে থেকেই ছিলো হীরে নিয়ে। কিন্তু তা এখন তুই ডাবল করে দিয়েছিস একমাত্র আইরাত কে নিয়ে। আরে আইরাত তো এটাও জানে না যে তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে। কিন্তু তুই টার্গেট করলি ওকে। তুই জানিস আইরাত আমার কে হয়? আমার বিয়ে করা বউ হয় ও। আমি জাস্ট ভাবতে পারি না তুই আমার আইরাতের দিকে নজর দিয়েছিস।

আব্রাহাম আরেকটা গুলি তায়াফের হাটু বরাবর করে দেয়। এতে কাপড় ভেদ করে গুলি হাটুতে লেগে ছিটকে ওঠে। হাটুর খুলিই উড়ে গেছে। আব্রাহাম রেগে গর্জন করে ওঠে চেয়ার তুলে এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। সব গার্ড রা এতে হালকা চমকে ওঠে। দুহাত বেধে মাথা নিচু করে রেখেছে তারা। আব্রাহাম নিজের হাত থেকে রিভলভার দূরে ছুড়ে মারে। তারপর হাতের আঙুলে স্টীলের কাটা কাটা ধারালো ব্রোজ প্যাচিয়ে নিতে নিতে তায়াফের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার বুকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঘুষি মেরে দেয়। তায়াফের গায়ের শার্ট ছিড়ে তার শরীর কেটে যায়। আব্রাহাম তায়াফের মুখ টা চেপে ধরে ওপরে দিকে করে ধরে…

আব্রাহাম;; এই চোখ দুটো, এই চোখ দুটো দিয়েই তুই আমার আইরাতের দিক তাকিয়েছিলি তাই না। এই চোখ গুলো দিয়েই।

আব্রাহাম সাইকো হয়ে গেছে। রাগে পাগলের মতো এদিকে ওদিকে তাকাতাকি করছে। কি থেকে কি করবে তায়াফ কে সে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে হাতের কাছে একটা মোটা রড পায়। সেটা খানিক ওপরে তুলে আবার নিজের হাতে নিয়ে নেয়। বাম হাত দিয়ে তায়াফের মুখ চেপে ধরে ওপরে তুলে ডান হাত দিয়ে রড টা ধরে একবারেই তায়াফের বাম পাশের চোখের একদম ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। জ্যান্ত অবস্থায়৷ তায়াফ নিজের অন্তর-আত্না ছেড়ে দিয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। রক্ত তার গা বেয়ে বেয়ে পরছে। পরক্ষণেই আবার বাম পাশের চোখ থেকে রড তুলে নিয়ে ডান পাশের চোখেও এক নিমিষেই ঢুকিয়ে দেয়। এবার রড যেনো চোখের ভেতর টা একদম ভেদ করে মাথার পেছন দিয়েই বের হয়ে গেছে। রক্তের ধারা। একজন গার্ড তো এগুলো আর দেখতে না পেয়ে মুখ কুচকে দিয়ে রুম থেকে বেরই হয়ে গেছে। আর আব্রাহাম কে দেখে মানুষ সোজা কথা এখন ভয়ে মরে যাবে। কাপছে সে রাগে। মুখের পুরো ভাবই পালটে গেছে তার। তায়াফের হাত পা সব বাধা তাই তার কাছে এখন করার মতো কিছুই নেই। শুধু চিৎকার করা ছাড়া৷ আব্রাহাম এবার গার্ড কে বলে দুই ড্রাম পেট্রোল নিয়ে আসতে বলে। পেট্রোল এনে তার সবগুলো তায়াফের ওপরে ঢেলে দেয়। রক্ত আর পেট্রোলে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। রুমের যতগুলো ইলেকট্রিক ওয়ার ছিলো সেগুলোর কানেকশন খুলে নিয়ে আসতে বলে। সবকিছু আনার পর নিজের কোমড়ে দুহাত দিয়ে দাঁড়ায়। তায়াফের দিকে এক নজর তাকায়। দেখে তায়াফের চোখ দুটো আর নেই। মুখ রক্তাক্ত। পেট্রোল ভেজা অবস্থায় চেয়ারে বসে শুধু ব্যাথায় গোঙাচ্ছে। তায়াফের বলা আগের কথা গুলো এখন আব্রাহামের মাথায় ঘুরছে। সাহস কতো বড়ো আইরাতের দিকে নজর দেয় সে। আব্রাহাম লাথি দিয়ে এক বড়ো কাচের টেবিল ভেঙে ফেলে। তারপর বিশাল দেখে এক কাচের টুকরো নিয়ে তায়াফের দিকে এগিয়ে গিয়ে চুল ধরে ওপরে তুলে বিনাবাক্যে তার গলার শ্বাসনালি তে ছুরির মতো বিধিয়ে দেয়। এক বারেই পুরো কাচের টুকরো ঢুকিয়ে দিয়েছে গলায়। তায়াফ কে তিলে তিলে মেরে ফেলছে সে। ঘেমে গেছে আব্রাহাম। ফুসতে ফুসতে অবশেষে গিয়ে একটা গার্ডের হাত থেকে ইলেকক্ট্রিক ওয়ার গুলো নিয়ে নেয়। তায়াফের কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখে তার মাঝে এখনো জীবন বাকি আছে। অবস্থা তার জঘন্য। তায়াফ একটা চেয়ারে হাত-পা বাধারত অবস্থায় দুচোখ নেই, এমনকি ডান চোখে রড বিধে আছে যা পেছনে মাথা ভেদ করে গেছে। গলায় কাচের টুকরো বিধে আছে, গায়ে হাজারো আচড়, তার ওপর পেট্রোল দিয়ে শরীর ভেজা। আব্রাহাম এবার খুব কষ্টে কিছুটা শান্ত হয়, ইলেকক্ট্রিক ওয়ার গুলো আস্তে করে নিয়ে গিয়ে তায়াফের ওপরে রেখে দেয়। তারপর তায়াফের কলার খামছে ধরে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; আমার জান, আমার জীবন, আমার দুনিয়া, আমার অস্তিত্ব, আমার প্রাণভোমরা, আমার ভালোবাসা, সব আইরাত। ও পুরোপুরি আমার শুধুই আমার।

তায়াফ শুধু গোঙাচ্ছে মরণ যন্ত্রণায়।

আব্রাহাম;; “কসম লাগে খোদার কেউ যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে তাহলে তাকে এমন মৃত্যু আমি দিবো যে ‘মৃত্যু’ নিজেই ওকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে”। যা আজ তোকে আমি দিলাম।

এই বলেই আব্রাহাম ধাক্কা দিয়ে দেয় তায়াফ কে। তার থেকে বেশ দূরে সরে এসে ইলেকট্রিক ওয়ারের যে সুইচ ছিলো তা অন করে দেয়। অন করে দেওয়ার সাথে সাথেই যেনো তায়াফ চিৎকার দিয়ে ওঠে। একে তো প্রট্রোল দেওয়া তার ওপরে ভেজা অবস্থায় ইলেকট্রিক শক। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে তায়াফ চেয়ারে বসে থেকেই। গা যেনো পুড়ে গিয়েছে তার। আর তার এই নির্মম মৃত্যু দেখে এক পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে আব্রাহাম। মৃত্যুর কোলে গড়িয়ে পরে তায়াফ নামক জানোয়ার। আব্রাহাম একটা সাদা কাপড়ে নিজের রক্ত মাখা হাতটা মুছতে মুছতে বের হয়ে পরে সেই বাড়ি থেকে। সব ঠিক করে নিতে বলে গার্ডদের কে।

আব্রাহাম;; এই বাড়ি দেখে এমন মনে হওয়া চাই যেনো এখানে কেউ কিছু করেই নি, কিছুই হয় নি। ক্লিয়ার!

গার্ড সব মাথা নাড়ায়। আব্রাহাম কে কেউ এখন দেখে বলবে না যে সে কিছু করেছে। এমন একটা ভাব। খুব শান্ত মস্তিষ্কের একজন। আব্রাহাম গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পরে। একটু শান্ত হয়ে বসে। পরণে সেই কখন থেকে আইরাতের রক্তে ভেজা শার্ট টাই। এক হাত স্টেয়ারিং এর ওপরে রেখে আরেক হাত দিয়ে নিজের চোখ চেপে ধরে। এবার যেনো একটু নিজের মাঝে শান্তি পাচ্ছে। আইরাতের কাছে যেতে হবে তার। আইরাতের কথা মনে পরছে খুব করে। আব্রাহাম চট জলদি সেভেন স্টার হোটেলে নিজের রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসে পরে আবার হস্পিটালে। হস্পিটালে যাওয়ার সাথে সাথেই ডক্টর তার দিকে এগিয়ে আসে,, ম্লান হাসে। আব্রাহাম আইরাতের কেবিনের দরজার কাছে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে হস্পিটালের বেডে। মুখে তার অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। মাথায় ব্যান্ডেজ। আব্রাহাম এগিয়ে গিয়ে আইরাতের দিকে ঝুকে পরে। বেশ সময় আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে থাকে। খুব মায়া লাগছে আব্রাহামের। কেমন এক অতি চঞ্চলমুখর মেয়ে আজ এভাবে শান্ত, এটা যেনো মানা যায় না। বেশ সময় এক নজরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টুপ করে এক ফোটা অশ্রুবিন্দু আব্রাহামের চোখ থেকে আইরাতের মুখে পরে যায়। চোখে বন্ধ করে ফেলে সে। আইরাতের কপালে আস্তে করে চুমু এঁকে দেয়। তারপর আইরাতের একটা হাত নিজের দুহাতের ভাজে নিয়ে তার পাশেই বসে থাকে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে আর কয়েক সেকেন্ড পর পরই তার হাতে চুমু খাচ্ছে।





চলবে~~

(দেরি করার জন্য দুঃখীত ❤️)



চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here