নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৫৭+৫৮

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৭

মা হওয়া চারটে খানিক কথা নয়। সর্বপ্রথম নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। মাথা থেকে শুরু করে পা অব্দি সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। নিজের মাঝে আরেক অস্তিত্ব কে নিয়ে বাঁচতে হয়।
আইরাতের অন্তঃসত্ত্বার বয়স কেবল দু’মাস। তিনমাসে পরবে। তার মাঝেই কতো শত ভাবনা সবার। ছেলে হলে এটা করবে, মেয়ে হলে ওটা করবে। কত্তো কিছু। আইরাত শুধু বসে বসে সবার কথা শুনে আর হাসে। এখনো আইরাত কে দেখে বুঝা যায় না যে সে প্রেগন্যান্ট অর্থাৎ পেট এখনো বের হয়নি। নরমাললি সবই করতে পারে কিন্তু আব্রাহাম তাকে কিছুই করতে দেয় না। অফিসের সব কাজ গুলো বাসায় বসে বসেই সেরে ফেলে। আইরাত কে সিসিটিভি ক্যামেরার মতো সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। কোথায় যাচ্ছে, কি করছে আর স্পেশালি কি খাচ্ছে তার দিকে নজর দেয় বেশি। আর ইদানীং আইরাতের মাঝেও বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। আব্রাহাম আইরাত কে একজন গাইনোলজিস্টের আন্ডারে রেখেছে। প্রতি মাসে মাসে একবার হলেও চেকাপের জন্য। কোন কাজে হাত অব্দি দিতে দেয় না তাকে। আইরাত নিজে ইচ্ছে করে কিছু করতে গেলেও উল্টো কতোগুলো ধমক খেয়ে আসে। ইলার আচার বানানোর খুব শখ ছিলো এমনকি আছেও। বলতে গেলে বয়াম ভর্তি ভর্তি আচার ছিলো কিন্তু সেগুলো সব যেনো হাওয়ার গতিতে ফুরিয়ে যায়। ডক্টর হ্যালদি খাবার খেতে বলেছে তাকে সবসময়। কিন্তু আর হ্যালদি, ডিম দুধ এইসবের ধারে কাছেও আইরাত ঘেষতে চায় না। জানেই যে আব্রাহাম তাকে ধরে বেধে হলেও খাইয়ে দিবে তাই আগে ভাগেই পালিয়ে আসে। কতোগুলো মেডিসিন আছে। সেগুলো সাধারণতই বেশ তেতো প্রকৃতির। আইরাত তো মুখ বিষিতে তুলে ট্যাবলেট দেখলেই। কিন্তু আব্রাহামও নাছোড়বান্দা। ব্রেড, রুটি বা স্যুপের মাঝে মেডিসিন দিয়ে তারপর খাইয়ে দেয়। আইরাত বুঝেও না এতে। এই মেয়ে সারারাত ঘুমায় না। অর্থাৎ মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমায়। আব্রাহাম ঘুমানোর জন্য শুইয়ে দিয়ে গেলেও একটু কাজ করে বা ঘুরে এসে দেখে আইরাত ঘুমানো বাদ দিয়ে সুন্দর করে শুয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তার জন্য আব্রাহামেরও ঘুমের বারো টা বাজাতে হয়। আইরাতের পাশে বসে সারারাত তার বকবকানি শুনতে হয়। ভুলেও চোখের দুপাতা এক করা যাবে না তাহলেই বিপদ। ঘুমের মাঝে আব্রাহাম কে ঠেলে তুলে দেওয়া, হাজারো বাহানা দেওয়া আইরাতের নিত্যদিনের কান্ড। অর্থাৎ জ্বালিয়ে মারে। তবুও সে আব্রাহামের কলিজার টুকরা।


কিছু দরকারের জন্য আব্রাহাম কে একটু তার গেস্ট হাউজে যেতে হয়েছে। আব্রাহাম তো এখন নেই তাই আইরাত একটু ছুটি পায়। বিকেলের সময় এখন। তাই হাঁটতে হাঁটতে বাগানের দিকে যায়। দিয়া অবনির সাথে তার বাড়িতে গিয়েছে একটু বাদেই ফিরে আসবে। মা আর দাদি কে বলেই গিয়েছে। বাগানে গিয়ে দেখে টাফি আর সফটি একে ওপর কে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অর্থাৎ ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে আর তাদের সামনেই একটা কালো কালারের বড়ো আকৃতির কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। কুকুরের মুখটাই কেমন বাঁকানো। রাগে যেনো সে ফুসছে আর থেকে থেকে জোরে ঘেউ ঘেউ করে উঠছে আর তাতেই টাফি-সফটি ভয়ে শেষ। আইরাতের তো দেখেই মাথায় আগুন ধরে যায়।

আইরাত;; এইইইইইইইইইই কুত্তা!

আইরাত কোমড়ে দুহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই টাফি আর সফটি দ্রুত দৌড়ে এসে আইরাতের পায়ের কাছে দাঁড়ায়।

আইরাত;; এই রাস্তার পাজি কুকুর গুলো এত্তো বাড় বেড়েছে যে কি আর বলবো। ভাগ এখান থেকে ভাগ। এইটা ভেতরে কি করে আসলো। গার্ড…

আইরাত হাতে একটা বড়ো পাথর তুলে নেয়। সেটা দিয়ে কুকুরের দিকে ছুড়ে মারে। এতে কুকুর কয়েক কদম পিছিয়ে তো যায় কিন্তু রাগও বেড়ে যায় তার। মৃদু স্বরে গর্জন করে ওঠে।

আইরাত;; এখনো যাইতাছোস না ক্যান! শালা ছেছড়া কুকুর। ভাগ এখান থেকে নির্লজ্জ কুত্তা।

এই বলেই আইরাত আশে পাশে আরো কিছু একটা খুঁজতে লাগে। দেখে আরো বড়ো পাথর। সেটা তুলতে যাবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম ভেতরে ফোনে কথা বলতে বলতে আসে। গাড়ি বাইরেই আছে গার্ড পার্ক করে দিবে। কিন্তু ভেতরে এসেই দেখে আইরাত ভারি পাথর উঠানোর চেষ্টা করছে। এটা দেখেই তো আব্রাহাম রেগে যায়।

আব্রাহাম;; আইরাত!

আব্রাহামের চিল্লানো তে আইরাত মাথা তুলে তাকায়। সে শুকনো কিছু ঢোক গিলে। আর ততক্ষণে এই শয়তান কালো কুকুর টাও ভেগেছে। আব্রাহাম তার শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসে। আইরাত তার হাত থেকে পাথর টা দ্রুত ফেলে দিয়ে হাত ঝেড়ে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; কি করছিলে কি তুমি?

আইরাত;; আরে আপনি জানেন ওই কু…….

আব্রাহাম;; চুপ একদম চুপ। না মানে বুদ্ধি হবে কবে তোমার? পাথরের সাইজ টা দেখেছো! এটা তুলতে পারবে তুমি তাও এই অবস্থায়? যেখানে ঘরে এক গ্লাস পানি অব্দি আমি তোমাকে নিজ থেকে নিয়ে খেতে দেই না সেখানে তুমি এই পাথর তুলছো। হ্যাভ ইউ গন মেড আইরাত!?

আইরাত;; কথা তো শুনবেন!

আব্রাহাম;; যা দেখেছি তাতে সব বুঝেছি আমি। ওই বড়ো কুকুর টা টাফি আর সফটি কে জ্বালাচ্ছিলো তাই তো!

আইরাত;; হ্যাঁ আর তাই আমি….

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আর তাই তুমি এতো বড়ো পাথর নিয়ে নিলে তাই না। গার্ড দের ডাকতে।

আইরাত;; না একবার ডেকেছিলাম তাদের কিন্তু পরে…..

আব্রাহাম;; একবার ডেকেছিলে তাও ওরা আসে নি। দাড়া আজ সবকটা কে ছাটাই করবো।

আইরাত;; এইযে শুরু হলো। আরে আপনি একটু থামেন।

আব্রাহাম;; চুপ। মাথামোটা একটা। এতো বড়ো পাথর তুলতে বসেছে। এখন আমি না আসলে তো তুলেই ফেলতে।

আইরাত;; সরি 😒

আব্রাহাম;; রাখো তোমার সরি। তুমি যে এই পাথর টা তুলে ওই কুকুর টার দিকে ছুড়ে মারতে চাইছিলে কিন্তু বদলে যদি কুকুর টা উল্টো ক্ষেপে তোমাকে ধাওয়া করতো তখন কি হতো!

আইরাত;; না না করতো না।

আব্রাহাম;; কেনো কর‍তো না?

আইরাত;; কারণ তার আগেই আমি পাথর তুলে কুত্তার মাথা ফাটায় দিতাম।

আব্রাহাম;; আরেএএএএএএএ।

আইরাত আর আব্রাহাম কথা কাটাকাটি করছে আর তাদের দিকে অবুঝের মতো তাকিয়ে আছে টাফি-সফটি। একবার আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে।

আব্রাহাম;; অনেক হয়েছে এবার থামো আর ঘরে চলো।

আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে যায় আর তাদের পেছন পেছন টাফি-সফটিও গুটি গুটি পা ফেলে যায়।

আব্রাহাম;; মা মা!

অনামিকা;; হ্যাঁ বাবা।

আব্রাহাম;; ওকে বাইরে যেতে দিয়েছো কেনো?

অনামিকা;; না ও তো বললো যে রুমে ভালো লাগছে না তাই বাগান দিয়ে ঘুরে আসি। আমিও আর আটকাই নি। যেতে দিলাম।

আব্রাহাম;; ও বাইরে গেলে সাথে কাউকে পাঠাবে। নয়তো কখন কি করে বসে কে জানে?

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে রুমে চলে যায়। সেই সময় টুকু এভাবেই যায়। আস্তে আস্তে রাতের সময় ঘনিয়ে আসে। অন্যদিকে জমকালো একটা ক্লাবে বসে ড্রিংকের ওপর ড্রিংক করে যাচ্ছে আশফাক আহমেদ। চোখে যেনো রাগ উপচে পরছে। আশেপাশে তার কিছু লোক বসে আছে। তারা আশফাক কে থামাতে গেলে সে আরো রেগে ওঠে। অনেক বেশিই মদ্যপানে ডুবে রয়েছে সে তাই একজন গিয়ে আশফাকের ড্রিংক এ হাত দিয়ে আকুতির স্বরেই এবার থামবে বলে। কিন্তু আশফাক এতে রেগে গিয়ে হাত থেকে কাচের গ্লাস টা এক আছাড় দিয়ে রেগে উঠে দাঁড়িয়ে পরে।

আশফাক;; এত্তো অপমান, এত্তো অবমাননা নিয়ে থাকা যায় না। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আমাকে অনেক বেশিই যা তা বলেছে। যথেষ্ট অপমান করেছে। এগুলো ঠিক সহ্য করার মতো না। হজম হয় না। আমি দেখে নিবো ওকে। ওর থেকে আমি ওর সবকিছু কেড়ে নিবো। নিবোই।

আরেকটা গ্লাস হাত থেকে ছুড়ে ফেলে সে। এবার পুরো একটা এলকোহলের বোতল নিয়ে তা গিলতে গিলতে চলে যায় আশফাক।


রাতে বিছানার ওপর বসে বসে টিভি দেখছে আইরাত আর হাতে রয়েছে একটা ড্রাইফুডের বক্স। পাশেই আব্রাহাম বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। চোখে রয়েছে মোটা ফ্রেমের চশমা। আইরাত থেকে থেকে আড়চোখে আব্রাহাম কে দেখছে।

আব্রাহাম;; এভাবে চোখ বাঁকা করে না দেখে সোজা হয়েও তো দেখতে পারো নাকি!

আইরাত;; দেখার কি আছে!

আব্রাহাম;; দেখার কিছু নেই তাহলে দেখছো কেনো?

আইরাত;; এখন দেখলেও দোষ!

আব্রাহাম;; যাহ বাবা, তো আমিও তো সেটাই বললাম।

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম ঘড়ির দিকে তাকায় দেখে এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট। ল্যাপটপ টা বন্ধ করে পাশে রেখে দেয়। চোখ থেকে চশমা টা খুলে ফেলে। আইরাত কে হালকা করে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে পরে। আইরাত তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামও তার চোখে চোখ রাখলে আইরাত ইচ্ছে করেই ড্রাইফুড আরো জোরে জোরে চিবুতে লাগে। আব্রাহাম আইরাতের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়। আস্তে করে আইরাতের হাত থেকে ড্রাইফুডের বক্স টা নিয়ে নেয়।

আইরাত;; আমি খাবো তো!

আব্রাহাম;; ড্রাইফুড এতো বেশি খেলে আবার পেটে সমস্যা হবে। এখন রেখে দাও কাল খেয়ো। এখন ঘুমাও।

আইরাতের ঠোঁটে চুমু এঁকে দিয়ে তাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর দুজনেই ঘুমিয়ে যায়। ঘড়ির কাটা যখন ঠিক রাত আড়াই টার কাছাকাছি তখন আইরাত পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। দেখে সে আব্রাহামের বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। আইরাত হালকা করে মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। কি ভোলাভালাই না দেখতে লাগছে তাকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। আইরাত আস্তে করে কিছুটা ওপরে উঠে আব্রাহামের নাকে নিজের নাক হালকা করে ঘষা দেয়। এতে আব্রাহাম কিছুটা নড়াচড়া করে ওঠে আইরাতের কোমড়ে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু আইরাত তো মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে দেয়। আব্রাহাম কে ডাক দিবে কি দিবে না তা নিয়ে এক দোটানায় পরে যায়। অবশেষে আইরাত তাকে ডাক দিয়েই ফেলে।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হুমমম।

আইরাতের একবার ডাক দেওয়াতে আব্রাহাম উঠেও পরে।

আব্রাহাম;; কিছু হয়েছে জানপাখি?

আইরাত;; আসলে আমার, আমার না। আসলে…

আব্রাহাম;; ক্ষিদে পেয়েছে?

আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; উঠে বসো।

আব্রাহাম আইরাত কে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; আমি আসছি।

আইরাত কে বলে আব্রাহাম নিচে চলে যায়। দশ মিনিট পর আব্রাহাম ফিরে আসে। হাতে তিন থেকে চারটে প্লেট। একটা তে মোমো’স, একটা তে নুডুল”স, একটা তে খিচুড়ি আর একটা তে পেস্ট্রি কেক। সবগুলো এনে আইরাতের সামনে রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; হুমম খাও।

আইরাত;; আপনি কষ্ট করে আনতে গেলেন কেনো? আমি নিচে গেলেই হতো।

আব্রাহাম;; কোন দরকার নেই সিড়ি বেয়ে নিচে নামার। তুমি এখানেই খাও।

আইরাত খাওয়া শুরু করে। আব্রাহাম হাতে তার ফোনটা নিয়ে সোফাতে গিয়ে বসে পরে। আইরাত তো একের পর এক খেয়েই যাচ্ছে। যেনো তার বাকি কোন কিছুর খেয়াল নেই। মাঝে মাঝে আব্রাহাম আইরাত কে দেখছে। পেস্ট্রি কেক আর মোমো খাওয়া শেষ হলে আব্রাহাম তার দিকে পানির বোতল টা এগিয়ে দেয়। আইরাত ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। অবশেষে খাওয়া প্রায় শেষের দিকে তার। নুডুল”স খাচ্ছে সে। শেষের একটু ছিলো তখন আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; এইযে!

আব্রাহাম;; বলো বেবিগার্ল।

আইরাত;; খাবেন? কখন থেকে সাধছি। খেলে খান।

আব্রাহাম;; না।

আইরাত খেতে গিয়েও আবার একটু থেমে যায়।

আইরাত;; এইযে এটাই কিন্তু শেষ। পরে আর চাইলেও পাবেন না। খাবেন?

আব্রাহাম;; না জানপাখি তুমি খাও 😊

আইরাত ঘাপুস ঘুপুস করে খেয়ে নেয় সব। খাওয়ার পর্ব শেষ হয়। আব্রাহাম সবগুলো প্লেট নিয়ে কিচেনে রেখে আসে। রুমে এসে দেখে আইরাত বিছানাতে হেলান দিয়ে এক হাত পেটের ওপর রেখে দিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; পেট শান্তি?

আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; এবার ঘুমাই আমরা?

আইরাত;; কিন্তু আমার তো ঘুম নেই।

আব্রাহাম;; মানে এখন জেগে থাকতে হবে! 😑

আব্রাহামের ফেইস দেখে আইরাত হেসে দেয়। বুঝতে পারে আব্রাহামের অবস্থা টা।

আইরাত;; আপনাকে জেগে থাকতে হবে না। আপনি এদিকে আসুন। আমার কাছে আসুন।

আব্রাহাম ক্লান্ত ভঙ্গিতে আইরাতের দিকে যায়। আইরাতের কোলে সে মাথা রেখে শুয়ে পরে। আইরাতও হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আব্রাহাম আবার মাথা তুলে আইরাতের পেটের ওপর এক গাঢ় চুমু দিয়ে দেয়। আইরাত হেসে দেয়।আব্রাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। এভাবেই তাদের বাকি রাত টুকু পার হয়।
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna_Islam
#পর্বঃ ৫৮

পরের দিন সকালে আইরাতের আগে আব্রাহাম ঘুম থেকে উঠে পরে। নিজের পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত পরম আবেশে ঘুমিয়ে আছে। আব্রাহাম মুচকি হাসে তাকে দেখে। তারপর আস্তে করে উঠে পরে।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল উঠে পরো। সকাল হয়ে গেছে। নাকি আরো ঘুমাবে!

আইরাত কোন সাড়াশব্দ করে না।

আব্রাহাম;; ব্যাপার কি! অন্যান্য দিন তো আমার আগে উঠেই আমাকে টেনে তুলে দাও আজ ডাকছি তাও শব্দ নেই। আইরাত!

আব্রাহাম এবার কপাল কুচকে তাকায়। আইরাত কিছু বলছে না। আব্রাহাম তার কাছে গিয়ে গালে ধরে ডাকতে লাগে তবুও আইরাতের কোন হাবভাব নেই। আব্রাহামের মনে কেমন যেনো একটু মোচড় দিয়ে উঠলো। আইরাতের নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখে তার নিঃশ্বাসও তেমন একটা বুঝা যাচ্ছে না। কলিজাতে কেমন কামড় দিয়ে ওঠে। আরো বেশ কয়েক বার তাকে ডাক দেয় কিন্তু কোন রেসপন্সই নেই। আইরাতের ওপরে একটা চাদর ছিলো। আব্রাহাম তা একটানে সরিয়ে ফেলে আর যা দেখে তাতে যেনো আব্রাহামের মাথায় পুরো আকাশ ভেঙে পরে। ভেতর টা মুহুর্তেই কেমন হাহাকার করে ওঠে। আইরাতের কোমড় থেকে শুরু করে একদম পায়ের পাতা অব্দি শুধু রক্ত আর রক্ত। পানির পরিমানও রয়েছে। জামার আনাচে কানাচে রক্ত লেগে আছে। আব্রাহামের দম ভারি হয়ে আসে। এখন তো আর আইরাত শুধু একা না। তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরেকটা ছোট্ট প্রাণ। আব্রাহাম দেয় এক গগন কাপানো চিৎকার।

আব্রাহাম;; আইরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াত। আইরাত ও আইরাত। সোনা কথা বলো। চোখ খুলো। আইরাত, আইরাত! না না এটা হতে পারে না। আইরাত আইরাত জান আমার কথা বলো। এতো রক্ত কি করে কীভাবে এলো। আইরাত এই আইরাত। আর আমিই বা বুঝলাম না কেনো। আইরাত! মা, দাদি, অয়ন।

বাড়িতে প্রায় সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলো। কিন্তু ওপর থেকে আব্রাহামের রুমে এমন চিল্লানোর আওয়াজ পেয়ে সবাই কেমন আৎকে ওঠে। তাই সবাই দ্রুত ছুটে আসে।

দিয়া;; কি হলো জিজু?

অনামিকা;; কি হলো?

ইলা;; আব্রাহাম সোনা কি হয়েছে?

অয়ন;; দাভাই কি হয়েছে চিল্লাচ্ছিস কেনো? সব ঠিক আছে তো। বউমনি ঠি……..

সবাই হুড়মুড়িয়ে রুমে গিয়ে দেখে আব্রাহাম আইরাত কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আইরাতের কোন জ্ঞান নেই শুধু রক্ত রয়েছে গা ভর্তি।

অনামিকা;; আমার আইরাত!

অনামিকার মাথা ঘুরে যায় আইরাতের অবস্থা দেখে। দিয়া অনামিকা কে কোন রকমে ধরে।

অয়ন;; বউমনির কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; আমি জানি না। জানি না আমি কিচ্ছু জানি না।

আব্রাহাম আইরাত কে কোলে নিয়ে দ্রুত যেতে থাকে। মনে-প্রাণে আল্লাহ কে ডাকছে। আল্লাহ যাই হয়ে যাক আইরাত যেনো সুস্থ থাকে। কৌশল সবার চিল্লাপাল্লা তে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। ড্রোইং রুমে এসেই দেখে এই হাল। সব ছেড়ে ছুড়ে বাইরে গিয়ে দ্রুত গাড়ি বের করে। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে গাড়ির পেছনে বসে পরে। আর অয়ন ড্রাইভ করে। বাড়িতে আইরাতের মা কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল। ইলার অবস্থা একই। দিয়া, অবনি সবাই কে বাসায় রেখে যায়। আর এভাবে বাড়ি ফাকা করে গেলে তো আর হয়না। একজন ছেলে মানুষ কে তো রেখে যেতেই হয় বাসায় তাই কৌশল কে রেখে যায়। আর ওদিকে আব্রাহাম আইরাত কে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেছে। বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে। আইরাত তার পাশেই ছিলো তবুও সে কেনো একটুও টের পেলো না। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র দোষ নেই। অয়ন হাওয়ার বেগে হস্পিটালে আসে। আইরাত যে ডক্টরের আন্ডারে ছিলো তার কাছেই আসে। হস্পিটালে গেলে আব্রাহাম আইরাত কে কোলে করেই ভেতরে নিয়ে যায়। আব্রাহামের আগে ভাগেই অয়ন ছুটে যায় তারপর ডক্টর কে ইমারজেন্সি বলে নিয়ে আসে। আইরাতের গায়ে এতো রক্ত দেখে ডক্টরেরও চোখ কপালে। দ্রুত আইরাত কে নিয়ে যায়। আব্রাহাম ভেতরে যেতে চায় কিন্তু অয়ন তাকে এটা ওটা বলে চুপ করিয়ে কোন রকমে সামাল দেয়। চিন্তায় আর ভয়ে রীতিমতো ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম। একটা মিনিটেও জন্যও বসে নি বা চুপ করর দাঁড়ায় নি। শুধু পায়চারি করে যাচ্ছে। আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। অয়ন এক বোতল পানি নিয়ে আব্রাহামের সামনে ধরে কিন্তু আব্রাহাম তা হাত দিয়ে আস্তে করে সরিয়ে দেয়।

অয়ন;; দাভাই বিশ্বাস রাখ। কিচ্ছুটি হবে না বউমনির।

আব্রাহাম;; আমি মরে যাবো কিছু হলে। আমি আব্রাহাম সোজা মরে যাবো।

অয়ন;; এমন করে বলিস না। কিচ্ছুই হবে না দেখিস।

আব্রাহাম;; তাই যেনো হয়।

প্রায় ৪০-৫০ মিনিট পর ডক্টর হাতের গ্লাপ’স খুলতে খুলতে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। তবে একজন নার্স কে দিয়ে আব্রাহাম কে ডক্টরের কেবিনে ডেকে পাঠায়। আব্রাহাম কেবিনে গিয়ে বসে সাথে অয়নও।

ডক্টর;; আব্রাহাম স্যার দেখুন আসলে….

আব্রাহাম;; ডক্টর আমার আইরাত কে চাই। বাচ্চা,, সরি টু সে তবে বাচ্চার যদি কিছু হয় তাহলে হোক। আমার বাচ্চা চাই না এখন। বাচ্চা আবার নেওয়া যাবে পরে। কিন্তু আমার আইরাত কে চাই তাও আবার সহি-সালামত।

ডক্টর;; কুল ডাউন স্যার। আইরাত ম্যাম আর বেবি সবাই আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছে।

আব্রাহাম এক চাপা শ্বাস ফেলে এবার অয়নের হাত থেকে পানির বোতল টা নিয়ে তা থেকে পানি খেয়ে নেয়। আব্রাহাম শ্বাস টা ছাড়লো এভাবে যেনো সেই কখন থেকেই তার ভেতরে এটা দমানো ছিলো। এতোক্ষণে গিয়ে শান্তি আসলো।

আব্রাহাম;; কিন্তু ডক্টর এভাবে এই অসময়ে ব্লিডিং হওয়ার মানে কি? আইরাতের যথেষ্ট কেয়ার আমি আর ফ্যামিলির বাকিরা করে। চাইলে আরো করবো। কিন্তু এভাবে ব্লিডিং কেনো? এতে তো আইরাত উইক হয়ে পরবে। আমার জানা মতে প্রেগ্ন্যাসির এই সময়ে ব্লিডিং হওয়ার কোন কারণই নেই।

ডক্টর;; একদম ঠিক বলেছেন আপনি। না আমি এটা বলছি না যে ব্লিডিং একেবারেই হয় না। ব্লিডিং আসলে হয় তবে তা প্রেগ্ন্যাসির একদম প্রথম অংশের দিকে হয়। তখন সেটাকে ‘রোপন রক্তপাত’ বলে থাকে। তবে এখন তো কয়েক মাস হয়ে গেছে সাধারণত এখন এমন টা হয় না। যদিও কারো কারো ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। সবার শারিরীক গঠন বা তারতম্য এক না। এক একটা পক্রিয়া এক একজনের দেহে বিভিন্ন মাত্রায় কাজ করে। হয়তো আইরাত ম্যামের প্রেগ্ন্যাসির প্রথম অংশে এই রক্তপাত টা হয়নি। তাই এখন হয়ে গেলো। আরো ক্লিয়ার হবে ম্যামের মুখ থেকে পরিষ্কার শুনতে পারলে। উনার আগে জ্ঞান ফিরুক। আর রইলো দূর্বলতার কথা তো বেশি বেশি করে একটু খেলে আর যত্ম নিলেই একদম ঠিক। বেবি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছে। এই ব্লাড যাওয়ার সাথে তার কোন কানেকশন নেই। আগের মতোই আছে। কিছু মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছি আর হ্যাঁ ম্যামের রক্তটা পরিমাপের চেয়ে অনেক বেশিই গিয়েছে। তাই হয়তো একটু ব্যাথা করতে পারে তার জন্যও মেডিসিন দিচ্ছি। স্যার আগেই বলে দেই এগুলো কিন্তু খুব তেতো আর ম্যাম কে খাওয়ানোর দায়িত্ব আপনার।

আব্রাহাম;; তা আর বলতে।

ডক্টর;; চিন্তা করার কোন কারণ নেই। হ্যাঁ হুট করেই এমন পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া টাই স্বাভাবিক তবে এখন সবই ঠিক। স্যার আপনারা বসুন।

ডক্টর এই বলেই চলে যায়। আর আব্রাহাম চেয়ারে নিজের মাথা টা এলিয়ে দেয়।

অয়ন;; বলেছিলাম না যে কিছুই হবে না। আমার বউমনি কে দেখে যম অব্দি ভয় পায় জানিস তো! যে ঝগড়ুটে আর তেজি।

অয়ন এই বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে যে কি বলতে কি বলে ফেললো। সে ভেবেছিলো আব্রাহাম তাকে বকবে। কিন্তু হয় তার উল্টো, আব্রাহাম হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; ঠিকই বলেছিস। ভাইরে ভাই আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো আইরাতের দেহ অর্ধেক রক্তে মাখা দেখে। মানে ভাবতে পারিস তুই! মাঝ রাতেও ওকে দেখলাম একদম চটপটে। আর সকালে উঠে চাদর সরিয়ে দেখি এমন হাল। মানে আমি না বলতে পারবো না যে এই ঘন্টা খানেক সময় আমি কিসের মাঝে ছিলাম। যমের বাড়ি আমি ঘুরে এসেছি। যাই হোক এবার জলদি বাড়ি ফোন লাগা আর সবাইকে বল যে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে কেউ যেনো চিন্তা না করে। মা কে কান্নাকাটি করতে মানা কর নয়তো উনি অসুস্থ হয়ে যাবেন আবার।

অয়ন;; হ্যাঁ।

অয়ন নাম্বার ডায়াল করতে করতে বাইরে চলে যায় কেবিনের। আর আব্রাহাম উঠে আইরাতের কেবিনের দিকে যেতে লাগে। আইরাতের কেবিনে সামনে দাঁড়াতে যাবে তখনই ভেতর থেকে একজন নার্স আসে। তার চোখে মুখে হাসি হাসি ভাব। আর তার সামনেই আব্রাহাম পরে।

নার্স;; ওহহ স্যার ভালো হয়েছে আপনি এসেছেন।

আব্রাহাম;; কেনো?

নার্স;; আমি ডক্টর কেই ডাকতে যাচ্ছিলাম আসলে….

আব্রাহাম;; সবকিছু ঠিকঠাক!?

নার্স;; ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে।

আব্রাহাম কিছু না বলে সোজা কেবিনের ভেতরে ঢুকে পরে। গিয়েই দেখে আইরাত এক হাত পেটের ওপর রেখে শুয়ে আছে। গায়ে হস্পিটালের স্কাই ব্লু কালারের ফ্রোক। জামা তো রক্তে ভিজে গিয়েছিলো তাই জামা চেঞ্জ করতে হয়েছে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পাশে বসে পরে। আইরাতের ডান হাত টা তার এক হাতের ভাজে নিয়ে আরেক হাতে আইরাতের মাথায় বুলিয়ে দেয়। হালকা ঝুকে আইরাতের মুখে হাজারো চুমু খায়। আইরাত বুঝলো আব্রাহাম এতোক্ষন এক দমবন্ধ অবস্থায় ছিলো।

আব্রাহাম;; না আমাকে মনে করো কি তুমি হ্যাঁ!

আইরাত;; মাফিয়া!

আব্রাহাম;; ধুর ছাই। মাফিয়া বলেই এই না যে আমি মানুষ না আর আমি ভয়ও পাই না। শুধুমাত্র তোমার বেলায়।

আব্রাহাম কিছুটা রেগেই এই কথা বলে ওঠে। কপাল কুচকে ভারি দম ফেলতে ফেলতে কিছুটা ঝুকে আইরাতের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে নিয়ে বলে….

আব্রাহাম;; ভয় লাগে রে ভয়। অনেক বেশিই ভয় লাগে। হারানোর তোমায়। পুরো দুনিয়া গোল্লায় যাক তুমি ঠিক থাকো ব্যাস আর কিচ্ছু লাগবে না আমার। সবার কাছে আমার এক ভিন্ন রুপ থাকলেও আমি তোমার কাছে-তোমার ওপর প্রচন্ড ভাবে দূর্বল আইরাত। ভয় লাগে যদি কিছু হয়ে যায় এই ভেবে। ভয়টা পেতাম না কিন্তু তুমি তো কিছুদিন পর পর আমাকে অহেতুক ভয় দেখানোর ঠ্যাকা নিয়ে রেখেছো তাইনা। আর এখন তো ভয়টা দ্বিগুণ।

আইরাত;; সমস্যা নেই শুনুন আমার কথা। বেবির কিছুই হবে না আলহামদুলিল্লাহ ভালোই থাকবে ও। তো আমার যদি কিছু হয়েও যায় তাহলে আপনি বেবি কে নিয়ে নিবেন আরেকটা বিয়ে করে নিবেন বুঝলেন। এইতো আবার হ্যাপি ফ্যামিলি।

আব্রাহাম আইরাতের গাল আর গলার মাঝ বরাবর হাত রাখে। তার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে গালে স্লাইড করে দিতে লাগে। ঠোঁটে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে….

আব্রাহাম;; তোমার ভাগ্য ভালো যে এখন তুমি এমন অবস্থায় আছো আর আমি কিছু করতে পারছি না। নয়তো তোমার চাপার দাঁত আর একটাও বাকি রাখতাম না এখন। সবকটা থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দিতাম। আজ, এখন যা বলেছো বলেছোই নেক্সট টাইম যেনো এইসব ভিত্তিহীন কথা মুখে না শুনি নয়তো তোমার খবর খারাপ করতে আমার বেশি একটা সময় লাগবে বা।

মেকি হাসির মাঝেই আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে কেমন দাঁতের চোয়াল গুলো হুট করেই শক্ত করে ফেলে। আইরাত বুঝলো তার কথাখান আব্রাহামের ঠিক হজম হয়নি বরং উল্টো বদহজম হয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; ব্যাথা করছে?

আইরাত;; না তেমন না হালকা।

আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম;; পুরো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমায়।

আইরাত;; বাড়িতে ফোন দিয়েছিলেন আপনি! কথা হয়েছে?

আব্রাহাম;; অয়ন কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিতে বলেছি। সকালে তো সবার মরণ দশা শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

আইরাত;; আমরা বাসায় যাবো কখন?

আব্রাহাম;; ঘন্টা খানেক পরে।

এভাবেই সময় গড়িয়ে যায়। তারপর আইরাত কে আর হাঁটতে দেয় না। তাকে কোলে করেই বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। গাড়ি চেঞ্জ করা হয়েছে কেননা আগের টায় রক্ত লেগেছে। বাড়ি থেকে সবাই আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আব্রাহাম মানা করে দেয়। হস্পিটালে এতো বেশি মানুষ না থাকাই ভালো। অয়ন ড্রাইভ করে যাচ্ছে আর আব্রাহাম আইরাতের সাথে পেছনে বসে আছে। তবে তাদের হস্পিটাল থেকে যাওয়ার পর পরই আশফাক সেখানে আসে। সেও একটু দরকারেই হস্পিটালে এসেছিলো কিন্তু তার চোখ যেনো শকুনের চোখ। আব্রাহাম-আইরাত কে তার চোখে পরে। চোখ থেকে চশমা খুলে কপাল কুচকে সেদিকে এক নজর তাকায়। আব্রাহাম দের গাড়ি চলে গেলে আশফাকও সেখান থেকে হস্পিটালের ভেতরে চলে যায়।


বাড়ির বাইরে গাড়ি থামে। গাড়ির আওয়াজ পেয়ে সবাই ছুটে যায়। দেখে অয়ন বাইরে নেমে পরেছে। আর আব্রাহাম নেমে আইরাত কে কোলে তুলছে।

অনামিকা;; আইরাত ঠিক আছিস তো? ডক্টর কি বললো? বাচ্চা! বাচ্চা ঠিক আছে?

আব্রাহাম;; মা ঘাবড়িয়ো না। আলহামদুলিল্লাহ সবই ঠিক আছে।

ইলা;; যা যা আগে বাড়ির ভেতরে যা।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে হলরুমে যায়। সেখানে সোফার ওপর আস্তে করে বসিয়ে দেয়।

দিয়া;; কিরে এভাবে রক্ত গেলো কি করে? আর তুই জিজু কে ডাক দিবি না?

আইরাত;; আমি নিজেও জানি না। আমি তো জানি ঘুমিয়ে ছিলাম আর তার মাঝেই কখন এইসব কিছু হলো জানি না।

আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম সার্ভেন্ট কে বলে খাবার আনে এত্তোগুলো। এমনিতেই আইরাত এখন বেশিই খায়। আগে যেগুলো সে তিন থেকে চার বেলায় খেতো সেগুলো এখন সে এক বেলায় খেয়ে শেষ করে ফেলে। আর এখন তো খাবারের পরিমাণ আরো বাড়তি। আব্রাহাম তাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর সেও চুপচাপ খাচ্ছে। আবার আগের নিয়মেই সবকিছু চলতে লাগলো। আইরাতের কেয়ার, তার দেখভাল সবই। তবে আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে যে আইরাতের মাঝে বেশটুকু ভিন্নতা রয়েছে। সবই আবার আগের মতো স্বাভাবিক, হাসিখুশি হয়ে যায়। কিন্তু কে জানে কখন তাদের এই খুশিতে আবার কারো বদনজর লেগে যায়। এভাবেই দিন-সময় যেতে লাগে।





চলবে~~




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here