পত্রলেখা কোথায় যাও পর্ব -০২ ও শেষ

#পত্রলেখা_কোথায়_যাও? (২য় এবং শেষ পর্ব)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

ভেবেছিলাম ইউএনও মশাই বাবার কাছে বি’চা’র দিবেন আমার নামে। তবে তেমন কিছু হলো না। তেমন কিছু হলো না বলেই আমার চিন্তা কেন যেন হুরহুর করে বাড়তে থাকে। কারণটা নিজের কাছেও খুব একটা স্পষ্ট নয়। মানে এমন, চিন্তা হচ্ছে এই আর কী! যাই হোক! এখন মূল কথায় আসি। আজকাল আমার বাহিরের বের হতে ভারি অসহ্য লাগে। বের হলেই একটা প্রশ্নের মুখে পড়ি সবসময়। সেটা নিয়েই বিস্তারিত বলছি।

নায়েব শাখাওয়াত অর্থাৎ সেই ইউএনও, তার সাথে প্রথম আলাপের পর আবার দেখা হলো দুইদিন পর। আমি অস্বস্তিতে গাট হয়ে তার বাসা অতিক্রম করছিলাম। আগে যেমন মনের মধ্যে রঙিন প্রজাপতি উড়ত তেমন উড়ল না। উড়ল মাছি। মাছি কানের পাশে কেবল ভনভন করছিল। সে এক য’ন্ত্র’না! একুশ বছরে এসে সতেরো বছরের কিশোরির মতো হাবলামি করার কু’ফল ভালোই টের পাচ্ছিলাম। সকাল দশটার মতো বা তার একটু বেশি বাজছিল তখন। অন্যদিনের তুলনায় সেদিন একটু দেরি করেই বের হয়েছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই উনার অফিসে থাকার কথা। আমি তবুও শান্তি পাচ্ছিলাম না। বাসার পাশেই অফিস। একেবারে নয়টা/দশটায় যে যাবে এমন তো নয়! যেখানে বা’ঘের ভ’য় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এই প্রবাদ গুলো আসলে আমার সাথে কেন অক্ষরে অক্ষরে পালন হয় আমি বুঝে পাইনা। তার বাসার গেইট পেরিয়ে আসছিলাম ওমনি পেছন থেকে ডাক এলো জোর আওয়াজে,
-‘পত্রলেখা, কোথায় যাও?’
আমি পুরো চমকে গিয়েছিলাম। পেছন ফিরে নায়েব শাখাওয়াত লোকটাকে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। একটু চমকে গিয়েছিলাম বটে। তবে মনের কোথাও একটু পুলকিত হয়েছিলাম। স্কাই ব্লু শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত সেই যুবককে দেখতে যে অতি সুদর্শন লাগছিল তা তো আমি আর অস্বীকার করতে পারিনা। নিঃসন্দেহে সে সুপুরুষ। তবে ব্যবহার! আর না বললাম। সেদিন কী অপমানটাই না করেছে আমায় এই ভেবে আবারও গর্জে উঠেছিল আমার মনের ভেতরটা। আমি আবার সামনের দিকে ফিরে হাঁটা শুরু করলাম। বিশেষ লাভ হলো না। তার পুনরায় ডাকে আবারও থামতে হলো। বর্তমানে সে উপজেলার মাথা তাকে তো আর এমন অবমাননা করার ক্ষমতা আমার নেই! সে বলল,
-‘তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম। উত্তর না দিয়ে এভাবে চলে যাচ্ছিলে কেন? ম্যানার জানো না?’
আবারও সে অপমান করল। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-‘স্যার আসলে আমি ঠিকভাবে শুনতে পাইনি। খুব তাড়া তো তাই আবার হাঁটা ধরেছিলাম।’
-‘তুমি যখন শুনতে পাও নি তখন উচিত ছিল পুনরায় ভদ্রভাবে কথাটা জানতে চাওয়া।’
-‘স্যরি স্যার।’
-‘কোথায় যাচ্ছিলে? কলেজে!’
-‘জি।’
-‘এত দেরি! তুমি দেখছি এসব ব্যাপারে খুব অলস। এমনিতে বান্ধবীর জন্মদিনের ফাংশনে আটটায় সেজেগুজে বের হও।’

একের পর এক অপমান! আমার মুখটা চুপসে গেল। তিনি বললেন,
-‘চলো।’
-‘কোথায়?’
-‘তোমাকে কলেজ পৌঁছে দেই।’
-‘না না। আমি নিজেই যেতে পারব। একটা রিকশা পেলেই হলো।’
-‘রিকশা তো আর খুব বেশি স্পিডে যেতে পারবেনা! ক্লাস শুরু হয় কয়টায় তোমার?’
-‘দশটায়।’
-‘অলরেডী দশটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট হলো। আর কত দেরি করবে? নাকি কলেজ যাবেনা অন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছ?’

লোকটা আমায় এই কথা দ্বারা কী বোঝাতে চাইল? আমি বিএফ নিয়ে ডেটিংয়ে যাচ্ছি? বিতৃষ্ণায় মুখ কুঁচকে গেল।
-‘গাড়িতে ওঠো।’
আমি তবুও ঠাঁই দাঁড়িয়ে। তার সাথে আরো দুইজন ছিল। খেয়াল করলাম তারা ভ্যাবলার মতো চেয়ে আছে। তারাও বোধহয় অবাক হচ্ছে। নায়েব শাখাওয়াত এবার সেই লোকগুলোর উদ্দেশ্য বলল,
-‘আপনারা বরং অন্য গাড়িতে আসুন। আমি একটু ব্যক্তিগত কাজ সেরে আসছি।’
আমার তখন চোয়াল ঝুলে যাওয়ার উপক্রম! ব্যক্তিগত কাজ মানে! এই লোক এমন কেন করছে?
অগত্যা সেদিন তার মেরুন রঙের পাজেরো গাড়িতেই যেতে হলো। কলেজ গেইটে যখন গাড়ি থেকে নামছিলাম চারিদিকে উৎসুক জনতা। ইউএনওর গাড়ি থেকে নামছি আর এটা নিয়ে তারা বুঝি ভাববে না? রাস্তার পাশে চায়ের স্টলে শিহাবকেও দেখলাম। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি আর মাথা ঘামানোর সময় পাইনি। কারণ সেখানে যে একজনই কিলবিল করছিল তখন! এত্তগুলো অপমান করেছে তার একটা প্রতিশোধ কীভাবে নিব সেই চিন্তা করছিলাম কেবল।

এরপর একদিন বিকেলে রেস্টরন্ট যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। সামনে যেতেই তার দেখা। তিনি মাঠে কিছু একটা করছিল হয়তো। আমাকে দেখেই বললেন,
-‘এই পত্রলেখা, কোথায় যাও?’
-‘ঘুরতে।’
-‘কেন? ওইদিন গিয়েছিলে না! আবার কেন যাচ্ছ?’
-‘আমার কাজ ঘুরাঘুরি করা। তাই সবসময় ঘুরি।’
-‘পড়ালেখায় তো শুনেছি বেশি একটা ভালো না। তা এসব রেখে পড়তে বসো। সেটা ভালো হবে। এখন যাচ্ছ যাও। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।’
সেইদিন এতটুকুই কথা হলো।

তারপর আবার একদিন দেখা হয় পলাশ কাকের বাসার সামনে। তখন সকাল সাতটা বাজে। আমার সেদিন প্রাইভেট ছিল। স্যার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক দেখিয়ে দিবেন বলেছিল। কারণ আমার পরীক্ষা ছিল তখন। পড়ার খুব চাপ। ওহ বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমি কিন্তু অনার্সে পড়ছি ইন্টারে নয়। আমাদের এখানকার সরকারি কলেজে পড়ি। তো আমি সকালের আবহাওয়া উপভোগ করছিলাম আর হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি তিনিও সামনে থেকে আসছেন। দেখে মনে হচ্ছে হাঁটতে বের হয়েছে। আমাকে দেখে বললেন,
-‘কী ব্যাপার পত্রলেখা? কোথায় যাও?’
উফফফ! পত্রলেখা কোথায় যাও! এই কথাটা শুনলে গা জ্বলে যায় আমার। আমি বললাম,
-‘প্রাইভেটে যাচ্ছি।’
-‘কোথায়?’
-‘মেইন রোডে।’
-‘একা একাই যাচ্ছ?’
-‘জি।’
-‘এত সকালে একা একা যাওয়ার কোনো মানে হয়! তাও আবার মেইন রোড! আচ্ছা চলো। আমি পৌঁছে দেই।’
-‘না না। আপনি কেন কষ্ট করবেন অযথা। আমি নিজেই যেতে পারব।’
-‘কষ্ট তোমাকে কে বলল? আমি তো হাঁটতেই বের হয়েছিলাম।’
-‘কিন্তু এখন হেঁটে গেলে তো খুব দেরি হবে। তাছাড়া আমি গেইটের সামনে গেলে রিকশা পাবো।’
-‘তাহলে রিকশা করেই যাব।’
-‘না না। আমি আপনার সাথে যাব না।’
-‘কেন? আমার সাথে গেলে কী হবে!’
এবার অনেক দিনের ক্ষোভ বের করে ফেললাম। বললাম,
-‘কী হবে আর না হবে আপনি বুঝদার হলে বুঝতেন। আর তাছাড়া আমি যাব না বলেছি তো! আপনি কে এত জোর করার?’
-‘এভাবে কথা বলছ কেন তুমি?’
-‘তাহলে কীভাবে বলব? মানছি আমি এক ভুল করেছিলাম। আপনার নাম ব্যবহার করে। তাই বলে দিনের দিন এটা কেমন টর্চার করছেন! বাসা থেকে বের হতে পারিনা। সেই এক কথা, “পত্রলেখা কোথায় যাও?” আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে আমি যেতে পারি। আমি এ’ডা’ল্ট। আপনি পারেন না বারবার এমন করতে। আপনার আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানোর অধিকার নেই। আপনি এত শিক্ষিত আর এটা বোঝেন না? আমি না হয় মজা করে বলেছি একটা কথা। আপনি কী সেটা সত্যি মনে করে নিয়েছেন! নিজেকে আমার বাগদত্তা ভাবা শুরু করেছেন! আপনি বুঝি আমার মতোই পা’গ’ল? আমি না হয় বেকুবের মতোন বললাম। সেসব তো আর হতে যাচ্ছেও না। দেখুন! অনেকদিন এসব সহ্য করেছি। আর পারব না। আপনার এসব এবার বন্ধ করা উচিত। আপনি কী বুঝতে পারছেন!’

এতগুলো কথা বলে আমার দম ফুরালো যেন। তিনি কিছুই বললেন না। তার চোখে মুখে বিস্ময়। আমি এবার একটু নরম হয়ে বললাম,
-‘স্যরি। এভাবে বলা ঠিক হয়নি। তবে আমি ভুল কিছু বলিনি। মনে কিছু নিবেন না।’

এই বলে চলে এলাম সেদিন। ভেবেছিলাম তার গায়ে কথা গুলো লাগবে। কিন্তু কু’কু’রের লেজ যেমন সোজা হয় না আমাদের ইউএনও সাহেবের টেরাবাঁকা কথা আর কাজর্কমও কখনো সোজা, সুন্দর আর সহজ, সরল হবে না। এরপরেও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। সে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলত, ‘পত্রলেখা কোথায় যাও?’ তবে আমি আর কিছু বলতাম না। আমি তাকে সোজা মেইন গেটের রোডে দেখলে মসজিদ সংলগ্ন রোড হয়ে চলে যেতাম। আবার কখনো কখনো তাকে মসজিদের রোডে দেখলে আমি সোজা রোডে চলে যেতাম। মানে তার ঐ বিরক্তিকর প্রশ্নের সম্মূখীন হওয়া যাবে না। কোনো মতেই না!

বেশ কিছুদিন এভাবে জীবন যখন পার হচ্ছিল আমি তখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। চারপাশ অসহ্য কর লাগত। একদিন বিকেল বেলায় ছোট বোনকে নিয়ে ফুসকা খেতে বের হয়েছিলাম। সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় এসে দেখি গ্রাম থেকে চাচা এসেছেন। শুধু চাচা নয়, ছোট মামাও এসেছেন। বলে রাখা ভালো, আমরা এখন যেই উপজেলাতে আছি এটা কিন্তু আমাদের স্থায়ী ঠিকানা। কেবল এখন কোয়ার্টারে থাকি এটাই হলো তফাৎ। আগে নিজস্ব বাড়িতেই ছিলাম তবে বাবার আর আমাদের স্কুল কলেজ আসা যাওয়ার সমস্যার কারণে আর পড়ালেখার একটু অগ্রগতির জন্যই কোয়ার্টারেই বাসা নিয়েছি। এখান থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ির দূরত্ব বেশি হলে ত্রিশ মিনিট। সি এন জি তে আসা যাওয়া করা হয়। তো চাচা আসে মাঝেমাঝে স্বাভাবিক। তবে ছোট মামাকেও দেখলাম। তাও আবার সব যেন গোল বৈঠকে বসেছে। মুখ ভঙ্গি অন্যরকম। আমি সালাম দিলাম, ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে রান্নাঘরে ঢুকলাম। মা একদিকে চুলায় চা বসিয়েছে আরেকদিকে মনোযোগ সহকারে আপেল কাটছে। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,
-‘কী ব্যাপার আম্মু? আজ হঠাৎ ছোট মামা আর চাচা একসাথে।’
-‘এমনিতেই এসেছে। তোর আব্বু ডেকেছিল।’
-‘ওহ।’

খটকা তবুও দূর হলো না। বারবার মনে হচ্ছিল কোথাও গন্ডগোল হয়েছে। বেশিক্ষণ মাথা ঘামাতে হলো না। চাচা আর মামা আমার রুমে এলেন। পেছন পেছন আব্বু আম্মুও এলো। কেন যেন তাদের সবাইকে এভাবে আসতে দেখে আমার বুকের ভেতরটা কাঁ’ম’ড়ে উঠল। অজানা আ’শ’ঙ্কা হলো। চাচা আমার বিছানায় বসলেন। বললেন,
-‘পত্র, শোনো তোমার সাথে একটা জরুরী কথা আছে।’
-‘জি চাচা বলেন।’
-‘আসলে তোমার জন্য একটা ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আগেও অনেক এসেছে এমন বিয়ের প্রস্তাব। বেশ ভালো জায়গা থেকেই এসেছিল। তখন আমরা তোমাকে জানাই নি। এটা জানানোর কারণ হলো সবদিক থেকেই যুৎসই। ছেলের গ্রামের বাড়ি আমাদের দুই এলাকা পরে। কাছে ধারেই। তবে ছেলে যখন ছোট ছিল তখন বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই মিলে তারা ঢাকা চলে যায়। বর্তমানে সেখানে নিজস্ব বাড়ি, গাড়ি আছে। খুব ভালো বংশও তাদের। ছেলেরা ভাই-বোন সবকয়টা শিক্ষিত। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। এইবার প্রমোশন পেয়ে এইখানে মানে নিজের পৈতৃক উপজেলায় এসেছে। তুমি তাকে চিনবে। এখানকার ইউএনও, নায়েব শাখাওয়াত। ছেলে অত্যন্ত ভালো, ভদ্র। দেখতেও সুন্দর। বয়স খুব একটা বেশি নয়। ছাত্র ভালো তাই প্রথমবারেই প্রশাসন ক্যাডারে টিকে গেছে। বয়স ধরো ত্রিশ বা একত্রিশ হবে। বয়স আমাদের মতে ওতটা বেশিও না। মানাবে ভালো। ছেলের বাবা-মা তোমার বাবার কাছে বেশ বিনীত ভাবে প্রস্তাবটা দিয়েছে। মূলত ছেলের পছন্দ হয়েছে তোমাকে। তারাও চাইছিল ছেলের বিয়ে দিতে বয়স পার হয়ে যাচ্ছে যে। আর আমরাও সবদিক বিবেচনা করে দেখলাম এর থেকে ভালো প্রস্তাব আর হয় না! বিয়ে হলেও তুমি আপাতত এইখানেই তো থাকবে। কাছে ধারে। তাই বর্তমানে দূরে যাওয়ার সেই চিন্তাও নেই। আমরা তাই তাদের একটু আগে কল করে জানিয়েছি যে আমরা রাজি আছি। তুমি কী বলো! তোমার কোনো কিছু বলার থাকলে বলো!’

এতক্ষণ চুপ করে কান্না আটকে রাখছিলাম। এবার আর পারলাম না। চোখের অশ্রুকণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। তারা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে। কনফার্ম করে দিয়েছে। এখন বলছে কীনা তোমার কিছু বলার থাকলে বলো। মানে কী! ছোট মামা আমার চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
-‘শোন, ছেলে ভালো, প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দেই কীভাবে! সবাই তো তোর ভালো চায়। এমনটা ভাবিস না বিসিএস ক্যাডার তাই বিয়েতে রাজি হয়েছি। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ও প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তাদের যোগ্য মনে হয়নি। তাছাড়া পাশের এলাকা চেনা জানার মধ্যে। তোর চাচারা চিনে ছেলেদের বাড়ি। সেখানকার মানুষজন কেমন তারা জানে। আর তুই তো সারা দেশ ঘুরতে চেয়েছিলি। এমন একজনকে বিয়ে করতে পারলে তুই তখন সব সুন্দর সুন্দর জায়গায় দুই তিন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে থাকতে পারবি। এরা দেখিস না একবার এক জায়গায় ট্রান্সফার হয়ে যায়! কত নতুন নতুন জায়গা দেখবি। মন খারাপ করিস না। বিয়ে তো আজ বা কাল এমনিতেও দিতাম।’

আমার তো সেটা নিয়ে কষ্ট নয়। মামাকে কী করে বোঝাই যে আমি এই লোককে বিয়ে করব না। এবার টাকলা ইউএনও হলেও সমস্যা নেই। তবুও এই লোক না। এই লোককে তারা ভালো বলল কেন? এটা আস্ত অ’ভ’দ্র। আমি জানি এর আসল রূপ। আমাকে নাকি পছন্দ হয়েছে! বিয়ে করবে! শখ কত! করব না বিয়ে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম না। ভ্যা ভ্যা করে কাঁদলাম। আম্মু আব্বু বোঝালো যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কাঁদার মানে হয় না। বড় হয়েছি এখন নাকি বিয়ে করার সময় কত কথা যে বলল! আমি শুধু ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতেই থাকলাম। ভাবতেও অবাক লাগে এই লোককে একসময় দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতাম। আর এখন যখন তার সাথে বিয়ে ঠিক হলো তো সহ্য করতেই পারছিনা।

——————
আমরা গ্রামের বাড়িতে এসেছি আজ সকালে। সব কাজিনরাও এসেছে। আমার ফুপিরা আর বড় খালামণি আর মামারা সবাই এসেছেন। এখানে আসার আগেও আমি জানতাম না পরশু আমার বিয়ে। এসেই জানতে পারলাম। আমি যখন জানলাম তখন থেকেই দাদির রুমে বসে আছি। মৌমি আপু এলো আমার কাছে। মৌমি আপু আমার মামাতো বোন। গত বছর তার বিয়ে হয়েছে। বোন কম আমরা বন্ধু বেশি। মৌমি আপু বলল,
-‘কীরে! তুই নাকি বিয়ে করতে চাইছিস না! আমি আরো ভাবলাম তুই বুঝি বিয়ের আনন্দে পা’গ’ল হয়ে গেছিস। তাই তো একটাবার নিজে থেকে কল করে বললি না কিছু!’
আমি ঝাপসা চোখে তার দিকে তাকালাম। এবার বোধ হয় তার টনক নড়ল কিছুটা। বলল,
-‘কীরে! বিয়েতে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? তোর তো তোর ক্রাশের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। তোর এতক্ষণে হৈ হুল্লোর করে চারিদিক মাতিয়ে রাখার কথা ছিল।’
আমি নড়ে চড়ে বসলাম এবার। মৌমি আপুকে বললাম,
-‘উনি যে আমার ক্রাশ ছিল তা তুমি ছাড়া আর কেউই জানেনা। তাই আস্তে কথা বলো।’
-‘ছিল মানে কী? এখন নেই! ওহ্ এখন তো জামাই হবে।’
-‘কিচ্ছু হওয়া লাগবেনা। ওটা একটা ব’দ লোক। আমি এখন আর তাকে একটুও পছন্দ করিনা। একটুও না।’
-‘কেন? হয়েছে কী!’

আমি সব বিস্তারিত বললাম তাকে। সবটা শুনে মৌমি আপু বলল,
-‘বাহ! ইউএনও সাহেব তো এক্কেবারে রোমিও টাইপ। কী সুন্দর তোর কেয়ার করেছে আবার তুই এত কিছু বললি তোকে কিছুই বলল না। উল্টো বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিল। ইশ! এমন একটা যদি আমার কপালে জুটতো!’
-‘তোমার সিদ্দিক ভাই এ ঠিক আছে। ওইরকম একটা জুটলে বুঝতে কত ধানে কত চাল।’

পরদিন সকাল বেলা সব কয়টা কাজিন ফেইস প্যাক লাগিয়ে বসে ছিল। আমাকেও জোর করে লাগিয়ে দিল। অনেক্ষণ রূপ চর্চা করার পর দেখলাম বেলা হতেই ওয়েডিং প্ল্যানারের লোকেরা হাজির। তারা এসে চারিদিক সাজাতে লাগল। মন খারাপ থাকলেও সবার এই অতিরিক্ত আদরে নিজেকে স্পেশাল স্পেশাল লাগল। সন্ধ্যায় পার্লার থেকে মহিলা দুইজন আসে। একজন আমাকে সাজায় আরেকজন তাকে সহযোগিতা করে পাশাপাশি আমার বোনদের সাজিয়ে দেয়। হলুদ অনুষ্ঠানে আমি কিন্তু গানের তালে একটু আধটু গা দুলিয়েছি। গান বাজলেই আমার নাঁচতে ইচ্ছা করে। হলুদ অনুষ্ঠানেই আমার মেহেদি হলো। দুই হাত রাঙিয়ে ছিল মেহেদির রঙে। ‘নায়েব’ নামটা সেই হাতে সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠছিল। তখন আমি সত্যিই লজ্জা পেলাম।

পরদিন ভোর চারটা থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। আমি ঘুমে বিভোর ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি। পাঁচটার পর যখন ঘুম ভাঙে তখন তো এই অবস্থা দেখে আমি থ বনে গেলাম। ভাগ্যিস ওয়েডিং প্ল্যানার এর লোকেরা শুরু থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল তাই সাজ সজ্জার কিছু হয়নি। সব ঠিক ছিল। সমস্যা হলো বাড়ির মোড়ের কর্দমাক্ত রাস্তা গুলো নিয়ে। তবে সেটারও সমস্যা হলো না আর। ছোট মামা পরে ট্রাক এনে বালু আর ইটের কণা ফেলেছে রাস্তায়। বাকিটা পথ তো আমাদের বাড়ি পর্যন্ত পাকা করা আছে। আমাদের বাড়িটা দোতালা পুরোনো ধাচের বাড়ি। ওত পুরোনো ও না আবার। দুই হাজারের পরে হয়েছে। আমার দাদা এই বাড়ির মালিক। তিনি ই’ন্তে’কাল করেছেন চার বছর আগে। আমি থাকি দাদির রুমে। দাদি আমাকে একটা কারণে খুব বেশি স্নেহ করে। কী কারণ সেটা পরে বলব। এখন মূল কথাতে আসি। আমি নামায পড়ে যখন মোবাইল হাতে নিয়েছিলাম তখন দেখি একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। কৌতূহল বশত মেসেজটা পড়লাম। বাংলা অক্ষরে লিখা আছে,
“তুমি নাকি বিয়ে ভাঙার জন্য শেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে হাড়িতে ভাত খেয়েছ। তাও আবার চেটেপুটে! দ্যাখো, তুমি যত যা-ই কর না কেন আমি কিন্তু তোমার পিছু ছাড়ছি না। বিয়ে তো আমি করেই ছাড়ব। আরো বেশি বৃষ্টি হলেও হোক। আমি নাহয় লুঙ্গি দিয়ে ভালোভাবে গুজ দিয়ে, স্পেশাল ওই প্যান্টটা পরেই যাব, এই কাঁদামাটি পেরিয়ে। তবুও আমি আজ যাব। আর হাড়িতে ভাত খাওয়ার জন্য তোমার একটা কঠিন শা’স্তি প্রাপ্য। মনে রেখো।”

আমি মেসেজটা পড়ে দিশেহারা হয়ে গেলাম। এটা কোন পা’গ’লের পাল্লায় পড়লাম! আর আমি কখন হাড়িতে ভাত খেয়েছি! তারপর মনে পড়ল গ্রামে গঞ্জে একটা প্রচলিত বাক্য আছে, বিয়ের সময় বা আগে বৃষ্টি হওয়া মানে বউ পাতিল চেটেপুটে খাবার খেয়েছে। আর এই পাজি লোক এখন সেই প্রবাদ আমার উপর ঝারছে! আরে আমি তো কাল মিষ্টি আর কেক খেতে খেতে হাড়ির খবর কী সেটাই জানতে পারলাম না। আর সেখানে নাকি চেটেপুটে খেয়েছি! নাম্বার টা তাৎক্ষণিক শা’স্তিস্বরূপ টুস করে ব্ল্যা’ক’লিস্টে ফেলে দিলাম।

এগারোটায় আমাকে আবারও পার্লার থেকে সাজাতে এলো। আমার সাজতে সাজতে একটা বেজে গেল। দেড়টার পর বরপক্ষ হাজির! বেশ তাড়াতাড়ি এসেছে বলা যায়। এখন আমি বসে আছি দাদির ঘরে জানালার ধারে। বান্ধবীরা আর কাজিনরা সব জোট হয়ে বসে আছে। তারা কথা বলছে গেইট থেকে কত টাকা তুলেছে সেই ব্যাপারে। আমি তাকিয়ে আছি আমার চাচাতো বোন নিনিতা আর আমার দাদির দিকে। নিনিতা দাদিকে সানগ্লাস পরিয়ে দিচ্ছে আর দাদি তাই হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন। দাদির দাঁত মাত্র দুইটা! একটা উপরে একটা নিচে। হাসলে যে দারুন লাগে। মনে হয় আট বছরের ফোকলা দাঁতের মেয়ে হাসছে। আমার হঠাৎ করেই কান্না পেয়ে গেল। আমার দাদিটার যে বয়স কমে যাচ্ছে। বুড়ো হওয়া যে বয়স বাড়া নয় মূলত বয়স কমা। দিন দিন জীবনের অন্তিম দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমি তখন তো বলিনি দাদি কেন আমাকে বিশেষ ভালোবাসেন। দাদির মা আমার বড় মা আর কী! উনার নাম ছিল পত্রলেখা। দেখতে নাকি খুব সুন্দর ছিলেন। লম্বা চওড়া ফর্সা রঙের সেই পত্রলেখার চোখগুলো আমার সাথে ভীষণ মিলে নাকি। আমার দাদি আমি হওয়ার পর আমাকে কোলে তুলে নেওয়ার পর বললেন ‘এই তো আমার আম্মা আমার কাছে আবারও আসছে।’ দাদি শখ করে নাম দিলেন পত্রলেখা। পুরোনো আমলের নাম। তবে আমি মনে করি পুরোনো আমল হলেও এখনকার আমলে এই নাম সবচেয়ে নতুন এবং সবচেয়ে ইউনিক। এই নাম রাখার জন্য আমি আমার দাদিকে ভালোবাসার থেকেও আরেকটু বেশি ভালোবাসি। তবে সেটা বোধ হয় কোনোদিন বলা হবে না।

তিনটার মধ্যে বিয়ে পড়ানো হলো। ভাগ্যের লিখন মেনে নিয়ে নতুন জীবনে পা রাখলাম। আমি চাইলে বিয়েটা ভাঙতে পারতাম হয়তো। তবে বাবা আর চাচার মুখের উপর এত বড় কথা বলার ক্ষমতা আমার কোনো কালেও ছিল না।

নায়েব নামের ব’দ লোকটাকে দেখলাম ঘী রঙা শেরওয়ানী পরে এসেছে। আমি ভেঙচি কাটলাম। যদিও সুন্দর লাগছিল। তবে সেই সুন্দর আমার চোখে লাগল না। এই লোক আমাকে কম অপমান করেনি। কম জ্বালায়নি! আজ সকালেও একটা আলতু ফালতু মেসেজ পাঠিয়েছিল। বিদায় বেলায় খুব কান্না করেছিলাম। খুব খুব খুব। এত কষ্ট যে হবে তা আমি বুঝতেই পারিনি।

শ্বশুর বাড়িতে যখন গেলাম তখন দেখলাম সেখানে এলাহি কান্ড। তাদের বিরাট বড় বাড়ি। তবে এটা তার বাবারা চার ভাই মিলেই করেছে। একটা সুন্দর রুমে আমাকে বসিয়ে সব কয়টা চলে গেল। আমি উপলদ্ধি করলাম শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা ভীষণ ভালো। এমনকি ননদটার ব্যবহার দেখেও বুঝলাম আমাদের জমবে ভালো। তবে জা কে দেখিনি এখনও। দেখলেও হয়তো চিনতে পারিনি। অনেক লোকের ভীড়ে চেনা মুশকিল। আর সে আসেনি পরিচিত হতে। তবে ভাসুরকে দেখেছি। নম্রতা ছিল তার আচার, আচরণে। ইউএনও মশাই এসেছেন যখন তখন আমি ঘুমে ঢুলু ঢুলু করছি। তিনি এসেই আমার পাশে বসলেন। বললেন,
-‘এগুলো পরে এখনও বসে আছো কেন? যাও এসব চেঞ্জ করো।’
আমি তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালাম। সে বলল,
-‘কী! বলেছিলে না আমাদের মধ্যে কখনো কিছু হওয়ার নয়! এখন হলো তো? তুমি আমার বউ আর আমি তোমার স্বামী!’
আমার রাগে দুঃখে কান্না এসে গেল। এখন থেকেই খোঁচা মারা কথা শুরু! সে বলল,
-‘আগে ফ্রেশ হয়ে এসো। কোনো কিছু করার আগে রিল্যাক্স ফিল করতে হবে শুরুতে। যাও যাও।’

আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। বললাম,
-‘আপনি কেন গা থেকে এটা খুলছেন না?’
-‘খুলে ফেলব!’
-‘হুম।’
-‘আমি আরো ভাবলাম তুমি আমাকে এভাবে দেখে কাটিয়ে দিতে চাও সারারাত। তোমার মনে যে অন্য কিছু চলছে তা আমি জানব কীভাবে!’
-‘কী চলবে!’
-‘ওই বাসর রাত আর কী ..
-‘ছিঃ আপনি একটা অসভ্যও দেখছি।’
-‘বৌয়ের সাথে অসভ্যতা জায়েজ আছে।’

উনি ফ্রেশ হতে গেলেন। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর উনি বের হয়ে এলেন। আমার পাশে বসে বললেন,
-‘তুমি কী আমাকে অপছন্দ করো?’
-‘হুম।’
-‘কেন?’
-‘আপনার কাজ কর্মের জন্য। আর আপনি কত বুড়ো লোক।’
-‘ওত একটা বুড়ো না। আচ্ছা থাক তুমি চাইলে বলতে পারো। এখন যেহেতু বউ হয়েছ যা ইচ্ছা তা বলতে পারো কোনো আপত্তি নেই।’
-‘এই আপনার লজ্জা নেই? আমি আপনার হাঁটুর বয়সী। আমাকে কীভাবে বিয়ে করেন! আপনি জানেন আমার মাত্র একুশ বছর! আপনি একত্রিশ বছর বয়সের বুইড়া এক লোক।’
-‘তখন তো কিছু বললে না। আর বয়স একটু বেশি হলেও মনের দিক থেকে আমি এখনও পঁচিশ বছরের আছি।’
-‘আহারে! পঁচিশ বছর! এই আপনি আর মেয়ে পান নি বিয়ে করার জন্য?’
-‘তোমার মত পাইনি।’
-‘আপনি আমাকে কবে থেকে পছন্দ করেন? কই আমাকে তো বলেন নি।’
-‘তুমি যেদিন শিহাবকে বলেছ আমি আর তুমি বিয়ে করতে চলেছি সেদিন থেকেই।’
-‘আজব ব্যাপার! এই এক মিনিট। আপনি জানেন কীভাবে যে শিহাবকে আমি এসব বলেছি?’
-‘তুমি হয়তো জানো না শিহাব আমার ফুপাতো ভাই। আজকে বিয়েতে ছিল। খেয়াল করো নি হয়তো। তবে কালকে দেখা হতে পারে। তো, তুমি যখন বললে আমাদের বিয়ে ঠিক করা তখন সে চমকে গিয়েছিল। স্বাভাবিক! আমার বিয়ে আর সে আমার ফুপাতো ভাই হয়ে জানবেনা! সেই রাতেই আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল সে। এসে সব বলল। কৌতূহল বশত আমি বললাম কোন মেয়ে। ছবি আছে কিনা। যেহেতু সে প্রেমিক মানুষ। তাই ছবি তার ফোনে ছিল। বিশ্বাস করো আমি তখন দেখেই তোমার প্রেমে পড়লাম। তবে ওকে বুঝতে দেইনি। এরপরদিন আমি তোমার জন্য নিজ থেকে অপেক্ষা করছিলাম। তোমার প্রতি এই এত পজেসিভনেস দেখিয়েছি সবটাই ওই ফিলিংস থেকেই। তবে যখন তুমি আমায় কথা শোনালে তখন আমার কষ্ট হয়েছে রাগ হয়েছে কিন্তু তোমাকে কিছু বলতে পারিনি। সেইরাত আমার ঘুম হলো না। শুধু মাথায় তোমার কথাটা ঘুরছিল। আমি কে! তখনই ভাবলাম আমার তোমার কিছু হওয়ার দরকার। মা কে কল করে পরদিন ঢাকা থেকে আসতে বললাম। মা এলেন দুইদিন পর। তারপর মা তোমাকে দেখলেন। পছন্দ হলো। তারপর তো…

আমি চুপ করেই রইলাম। ভালো লাগছে না কথা বলতে। রুমে যখন এসেছিলাম তখন বারান্দা দেখিলাম। সেই বারান্দার দিকে হাঁটা ধরলাম। পেছন থেকে তিনি বললেন,
-‘এই পত্রলেখা, কোথায় যাও?’

আমি পাত্তা দিলাম না। বারান্দায় ফ্লোরে পা ছিটিয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর রুমের আলো নিভে। উনি আমার পাশে এসে বসেন। মৃদু গলায় বলেন,
-‘পত্রলেখা? তোমাকে বোধ হয় ভুল ইনফর্মেশন দেওয়া হয়েছে।’
আমি চোখ তুলে তার দিকে তাক করলাম। সে শান্ত চোখে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল,
-‘আমি থার্টি টু, ওয়ান না।’
এবার আমি হুহু করে কেঁদে উঠলাম। সব দুই নাম্বারি কেন আমার সাথেই হতে হবে! তিনি আমার মাথা টেনে নিজের বুকে রাখল। বলল,
-‘থাক কাঁদেনা। বুড়ো বর’রা কিন্তু বেশি ভালোবাসতে জানে।’

আমার সেই কান্নার শেষই হয় না। এই লোকটাকে যে আমি নিজের করে পেয়েছি এটাই বিশ্বাস হয় না। এই লোকের একটু পাত্তা পাওয়ার জন্য আমি কত সেজে গুজে তার বাসার সামনে ঘুরঘুর করেছিলাম! আর এখন আমি তার বুকে মাথা গুজবার ঠাঁই পেয়েছি। অপরিচিতা গল্পের অনুপমের মত করে আমিও বলতে পারি, ‘এই তো আমি জায়গা পেয়েছি।’ আমার কান্না তো তার বুড়ো হওয়াতে নয়! আমার কান্না কেন তা আমার মনের গহীনে কোথাও লিখা রয়েছে। আজ আমার কাছে ‘পত্রলেখা কোথায় যাও?’ কথাটা এত মধুর কেন লাগছে?

পরদিন সকালে আমার শিহাবের সাথে দেখা হয়েছিল। আমাকে দেখে সে চোখ মুখ কেমন কালো করে ফেলেছিল। হয়তো আমার মশকরা টা সত্যি হয়েছিল বলেই সে আমার উপর রাগ করেছিল। কারণ সে আমাকে সত্যিই পছন্দ করত। আমি আরো আগে থেকেই তো সেটা জানতাম।

সমাপ্ত।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here