পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ১৫

#গল্প:#পবিএতার_ছোঁয়া
#পর্ব :#15
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

_______________

আমি ওড়না খুলে বিছানায় রাখলাম। অনেক গরম লাগছে। তার মাথায় হাত দেওয়ার জন্যে আরো বেশী গরম লাগছে,,, হঠাৎ করে এক বিপত্তি ঘটল স্যার,,,,
||

স্যারের জ্বর বেড়ে গেলো। আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। আম্মু কে কী ডাকবো। আম্মু যদি আমাকে বকা দেয়,,,,

আমি আম্মুকে আর ডাকলাম না। আমি স্যারের পাশে থেকে উঠলাম।আস্তে করে উঠলাম যাতে সে বুঝতে না পারে,,,

ওয়াশরুম থেকে এক বাটি পানি আনলাম। তারপর মাথায় পট্টি দেওয়ার জন্যে কাপরের টুকরো খুজলাম কিন্তু পেলাম না। তাই নিজের ওড়নার একপাশে ভিজিয়ে তার মাথায় দিলাম,,,,

কিছুক্ষণ পরই জ্বর কমে এলো।রাত প্রায় তিনটার কাছাকাছি, আর পারছি না। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। অন্য ঘরে না যেয়ে স্যারের পাশেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
____________________

টিপ টিপ করে তাহসিন চোখ খুলল। মাথা চেপে ধরে উঠে বসল। তাহসিনের মাথাঠা ভার হয়ে আছে। চারপাশে তাকিয়ে দেখল সব কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। কিছুখন পর রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। তার তো জ্বর এসেছিল,,,

তাহসিন : ওহহ নো। আমি কিভাবে এত কেয়ার লেস হলাম। আমার তো উচিত ছিল রাতে বাড়িতে চলে যাওয়া।[মনে মনে]

হঠাৎ করে তাহসিনের চোখ পড়ল মিহুর উপর। গুটিশুটি মেরে খাটের একপাশে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মুখের উপর ছোট ছোট চুলগুলো বাতাসে খেলা করছে। গায়ে উপর কোনো ওড়না নেই। জামাকাপড় এলোমেলো হয়ে রয়েছে। তাহসিন বেশিখন তাকিয়ে থাকতে পাড়ল না।

তাহসিন : ছিঃ আমি কী ভাবছি। মিহু তো এখনো অনেক ছোট। এই মেয়েটা তো জাস্ট আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলবে। আমার উচিত ওকে নেগলেট করা। আমি যদি ওর সামনে শক্ত না থাকি, তাহলে এই বাচ্চা মেয়েটা আবেগে পড়ে যাবে। তখন তো মিহু নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। আমার নরম হলে চলবে না। মিহু কবে যে তুমি বড়ো হবে। আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না,,,,

তাহসিন বেশিখন তাকিয়ে না থেকে মিহুকে ঠিক করে শুয়ে দিল। তারপর মিহুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল,,,,

||

সকালে আমার ঘুম ভাঙতেই স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম স্যার নেই। তারমানে চলে গিয়েছে। নিজেকে বিছানায় শুয়ে থাকা দেখে আমি অনেকটা অবাক হলাম। আমি তো বিছানায় শুয়ে ছিলাম না।তারমানে স্যার,,, দূর কোনদিন সম্ভব না। কিন্তু ভালোভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম জামাকাপড় একদম ঠিক নেই। তারমানে স্যার আমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছে। আল্লাহ আমার তো এখন লজ্জা লাগছে। কেন যে এই ঘরে থাকতে গেলাম,,, তারমানে স্যার চলে গেলেন । কখন গেলেন। বলে গেলেন না কেন। সারা রাত ঘুমতে না দিয়ে এখন না বলেই চলে গেলেন । আমার কথা একটুও ভাবলেন না। আমার যে চিন্তা হচ্ছে। আম্মু ডাকে আমার ধেন ভাঙল,,,

আম্মু : কিরে মিহু, কী ভাবছিস?

আমি:কিছু না,,,তুমি কখন এলে?

আম্মু :এই মাত্র। শোন রাতে কি তুই আমার ঘরে গিয়েছিলি?

আম্মু কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আম্মু কী স্যারকে দেখ ফেলেছে,,,

আমি : না,,, কেন কি হয়েছে? [ভয়ে]

আম্মু : না তেমন কিছু হয় নি। আমার মনে হয়েছে কেউ আমার ঘরে এসেছিল।

আমি :ওহহ।

আম্মু :খেতে চল। আজকে স্কুলে যাবিনা?

আমি : না আম্মু। আমি একটু ঘুমবো।

আম্মু : ওই তুই না এখন ঘুম থেকে উঠলি। তাহলে আবার কেন ঘুমবি?

আমি :এমনেই। রাতে ঘুম ভালো হয়নি তাই,,,

আম্মু :ঠিক আছে।আগে খাবার খেয়ে নে। তারপরে যা করার করবি।
||

আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেলাম। খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে এলাম।তারপরে একটু পড়তে বসলাম। পড়ায় আর মন বসছে না। ভাবছি, কখন কোচিং যাব। তখন স্যারের সাথে দেখা হবে। আজকে কি স্যার কোচিং এ আসবে। স্যারের সামনে মুখ দেখাবো কি করে। আমি তো ইচ্ছে করে এই ঘরে ঘুময়নি। স্যার কি আমাকে খারপ ভাববে। যাই হো আমাকে বলে গেলো না কেন। আমাকে ডাকলেও তো পারতো। আমি কেন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর একটু ঠিক মতো ঘুমলেই তো হতে,,,
আর পড়লাম না।রান্না ঘরে চলে গেলাম। মাকে হেল্প করার জন্যে।
__________________________

তামিম সাহেব: তাহসিন তুমি কী ঠিক আছো?

তাহসিন : মানে?

তামিম সাহেব :তুমি কালকে মিহুর কাছে গিয়েছিলে কেন?

তাহসিন :নিশ্চূপ,,

তামিম সাহেব : গিয়েছিলে ভালো কথা কিন্তু ওখানে রাত থাকতে গেলে কেন?

তাহসিন : বাবা আসলে আমি বুঝতে পারি না। আমি চলে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু,,,

এমন সময় রিনা বেগম ঘরে প্রবেস করেন,,,

রিনা : কিরে তাহসিন শুনলাম কালকে রাতে তুই বাড়িতে ছিলি না। কোথায় ছিলি?

তামিম সাহেব : মিহুর কাছে,,

রিনা : মানে কি। মিহু কে। আর ও কেন মিহুর সাথে থাকবে?তাহসিন [রেগে ফুসতে ফুসতে]

তামিম সাহেব : তাহসিন তুই বাইরে যা। রিনা তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

তাহসিন বাইরে চলে গেলো,,,

রিনা: আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও,,,

তামিম সাহেব :হ্যাঁ, তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব। মিহু হচ্ছে তাহসিনের স্ত্রী।

তামিম সাহেব সব ঘটনা রিনা বেগমের কাছে বললেন। সব শুনে রিনা রাগে ঘরের জিনিস পত্র ভাংচুর শুরু করলে। রিনা বেগম মানতে পারছে না। এত সুন্দর করে সব কিছুর প্ল্যান করল।

রিনা:আমি কিছুতেই তোদের এক হতে দিব না। তাহসিন তোকে রিমিকেই বিয়ে করতে হবে। তা না হলে যে আমার সব প্ল্যান ভেজতে যাবে।আমাকে যে কিছু একটা করতে হবে। [মনে মনে]

||

দুপুরে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সাড়ে তিনটে বাজে। তাই আর শুয়ে না থেকে রেডি হতে শুরু করলাম। কারন চারটা বাজে কোচিং।দেরি করলে চলবে না, আজকে যে তাহসিন স্যারের ক্লাস আছে।
তারাতারি রেডি হয়ে আম্মুকে বলে কোচিং এর জন্য বের হলাম।
||
কোচিং গিয়ে দেখলাম এখনো স্যার ক্লাসে ঢুকে নি। আমি যেয়ে বেন্সে বসলাম। তমার কথা মনে পড়তে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম। তমা আজকে আসে নি। মনে মনে অনেক খুশি হলাম। ভালো হয়েছে ও আসে নি। আসলে তো আমাকে প্রশ্ন করতে করতে শেষ করে ফেলত।

একটূ পর স্যার ক্লাসে চলে এলো। স্যার ক্লাসে আসার সাথে সাথে সবাই চুপ হয়ে গেল।

তিথি: দেখ মিহু স্যারকে কত কিউট লাগছে।

আমি তিথির কথা শুনে ভালো করে স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। সত্যি অনেক কিউট লাগছে। এই লোকের এতো ডং করে আসার দরকার কি।[মনে মনে]

তিন্নি: স্যার আমাদের পরীক্ষার খাতা দিবেন কবে।

তাহসিন : কালকে দিব। যারা কম পাবে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।

তিথি: মিহু আমার পরীক্ষা তো অনেক খারাপ হয়েছে আমার যে ভয় হচ্ছে।

আমি : আমারো,,

আমি ভালো করে স্যারকে ফলো করলাম। স্যার যে কালকে এতো অসুস্থ ছিল কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। কি যে ভাব দেখছে যে, আমাকে চিনে না। কাল রাতের কথা এত তাড়াতাড়ি ভূলে গেলেন। স্যারের যে আরো কতো রূপ আছে কে যানে।মনটা খারাপ হয়ে গেলো,,,

মন খারাপ করে করেই সব ক্লাস শেষ করলাম । ক্লাস শেষে বাসায় চলে এলাম।

||

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম। আব্বু ফোন দেওয়া জন্য আম্মু আমার রুম থেকে চলে গেল। আম্মু চলে যাবার পর পড়তে বসলাম। কারন একটু পরেই স্যার চলে আসবে। টেবিলে বসে ভাবতে লাগলাম, কেন স্যার এত রাগী। হাসে না কেন। কালকে রাতের মতো ব্যবহার করলেই তো পারে। এত ভাব নেয় কেন?

একটু পরেই স্যার চলে এলো। স্যারের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। স্যার হাতে অনেক গুলো চকলেট। আমি তো খুশি শেষ। চকলেট তো আমার অনেক প্রিয়। আমার মন ভালো হয়ে গেলো। বলে ফেললাম,,,

আমি : এগুলো কি আমার। [খুশিতে]

তাহসিন : একদম না। আমি তোমার সামনে খাব আর তুমি দেখবে,,,

আমি: কেন?

তাহসিন :তোমার শাস্তি। তুমি রাফির কাছে থেকে কেন চকলেট নিতে। আবার চুমুও দিতে,,,

আমি: তখন তো আমি ছোট্ট ছিলাম,,,,,

তাহসিন : দিতে পারি তবে এক শর্তে।আমাকে,,,,
(#চলবে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here