পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ১৯+২০

#গল্প :#পবিএতার_ছোঁয়া
#পর্ব :#19+20
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

________________________________

হঠাৎ করে আমি যা দেখলাম তা দেখে আমি বাকরুদ্ধ। চোখকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছি না। আমার বুকের মধ্যে দুমরে মুচরে গেল। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি পড়তে লাগল। আমি দেখলাম রিমি আপু আর স্যার রেস্টুরেন্ট বসে হেসে হেসে কথা বলছে।

তাই আমি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ভিতরে গেলাম আমাকে যে শুনতে হবে তারা কি বলছে। ভিতরে গিয়ে যা শুনলাম,

রিমি : দেখো তাহসিন মিহু ছোট মেয়ে, ওকে তুমি ছেড়ে দেও। তুমি নিজের সার্থের জন্য মিহুর জীবন টা নষ্ট করছ কেন? একটু বোঝার চেষ্টা কর আমি সেই ছোট্ট থেকেই তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

এরপর স্যার যা বললেন তা শুনে আমি নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না,,,

তাহসিন : আমি তো জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি অবশ্য ভূল কিছু বলো নি। হ্যাঁ তোমার কথা আমি রাখার চেষ্টা করব। আমি মিহুকে ছেড়ে দিব,,, আমি যে তোমাকে ভালোবা,,,

আমি আর কোন কথা শুনলাম না। শুনতে ইচ্ছে করছিলো না। দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম।

রাস্তা দিয়ে হেঁটেছি,, চারপাশের কোন আওয়াজ আমার কানে এলো না। আমার পা যে আর চলছে না। শুধু কানে স্যারের একটা কথায় বেজে চলেছে ‘আমি মিহুকে ছেড়ে দিব’।

কান্না করতে করতে বাসায় চলে এলাম। ঘরে এসে বাথরুমে ঢুকে ঝরনার নিচে বসে কাঁদতে লাগলাম,, কেন সে আমাকে বিয়ে করল।স্যার তো রিমি আপুকে ভালোবাসে তাহলে কেন আমাকে ঠকালো।
আমি তো তাকে বিয়ে করতে চাই নি। আমি কোন অধিকার ও চাইনি। রাত হলে কেন সে আমার কাছে আসে,,, আমি তো তাকে ভালোবাসাসে ফেলেছি। কখন ভালবাসে ফেলেছি তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। ভালোবাসা হতে যে এক সেকেন্ড ও সময় লাগে না,,, তা আমি এখন ভালোই বুঝতে পারছি। সে কেন আমার ছোট মনটা নিয়ে খেলা করল,,, কেন? কেন? [ চিৎকার করে]
||

শাদিয়া আজ আবিরদের বাড়িতে এসেছে,,,

শাদিয়া : আমাকে কেন আসতে বললে, আবির।

আবির : চুপ,,,

রিনা: এই মেয়ে তোমাকে একটা কাজ দিব যা তোমাকে করতে হবে?

শাদিয়া : কি কাজ ফুপি,,,

আবির: তুমি কী সত্যি আমাকে ভালোবাসো? আমি যা চাইবো তা দিবে?

শাদিয়া: হ্যাঁ তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। তোমার জন্য আমি সব করতে রাজি।

আবির : তোমাকে যে করেই হোক মিহুকে তাহসিনের জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে?

শাদিয়া : কিন্তু,, তাহসিন তো মিহুকে,,,

আবির: এই মেয়ে কিন্তু বলছিস কেন? তোকে তো করতে হবে। আমি আমার বোনের জন্য বিদেশ থেকে চলে এলাম। আর বলছিস তুই পারবি না,, [শাদিয়ার চুলের মুঠো ধরে]

শাদিয়া :আহহ।ছাড় আবির, আমি কখন বললাম পারব না। তুমি যা বলবে তাই আমি করব। [কান্না করে]

রিনা: আবির এতো রাগিস কেন? ছেড়ে দে,,

আবির সাথে সাথে শাদিয়াকে ছেড়ে দিল।

আবির: সরি,, তুমি তো জানো আমি আমার বোনকে কতটা ভালোবাসি,,,

শাদিয়া : নিশ্চুপ,,

রিনা: শোন শাদিয়া তুমি তো যথেষ্ট বুদ্ধিমান মেয়ে। দেখ তাহসিনের জন্য কিন্তু তোমার বোনের ও ক্ষতি হবে।

শাদিয়া : হ্যাঁ আন্টি ।আপনি বলেন আমাকে কি করতে হবে। আমি তাই করবো।

রিনা বেগম শাদিয়াকে সবকিছু খুলে বললেন। শাদিয়া শুনে অবাক কিন্তু শাদিয়াকে যে ওর ভালোবাসার জন্যে করতেই হবে,,,

শাদিয়া : আমার কি তাহসিনকে ঠকানো ঠিক হবে। [মনে মনে]

আবির: চিন্তা করো না শাদিয়া। রিমি আর তাহসিনের বিয়ের পরেই আমরা বিয়ে করে ফেলব।
_________________________

তাহসিন ওর বৃষ্টিপাখির জন্য চুরি কিনা নিয়েছে। তাহসিনের মনটা আজ অনেক ভালো। সে অনেক খুশি। রিমি যে তাকে বলেছে, রিনা বেগমকে বুঝিয়ে বলবে মিহু আর ওর বিয়ের কথা। যাতে মিহুকে রিনা বেগম মেনে নেয়। রিমি যে তাকে কথা দিয়েছে, তাহসিনের জন্য রিমি সব করবে। মিহু আর তাহসিনের জীবন থেকে সে চলে যাবে।
তাহসিনের নিজেকে বড্ড হালকা লাগছে। রিমির জন্য তার মনে ভয় ছিল। রিমি তাকে সবার সামনে প্রোপস করেছিল, রিমি বলতো তাহসিকে না পেলে রিমি মরে যাবে। তাহসিনের ভাবতেই পারছে না রিমি এতো সহজে ওর বিয়েটা মেনে নিবে। আর যে বাধা রইল না তাহসিনের। এখন শুধু মিহুর বড়ো হওয়ার উপেক্ষা।

___________________

সেই কখন থেকে তাহসিন মিহুকে ডেকেই চলছে কিন্তু মিহুর কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না।তাহসিনের কাছে আগে থেকেই মিহুদের বাসার ডুবলিকেট চাবি থাকে। তাই তার আসতে সমস্যা হয় নি।তাহসিনের এখন চিন্তা হতে লাগলো,, মিহুর মা যে তাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিল। কিন্তু রিমির কারনে আসতে পারেনি।

তাহসিন : মিহু দারজা খুলো।দেখো তোমার জন্য কী এনেছি।

আমি চুপ করে শুনছি। সে কেন এসেছে। আমি খুলব না দরজা,,,

তাহসিন: মিহু তুমি যদি এখন দরজা না খুলো তাহলে কিন্তু আমি দরজা ভেঙে ফেলব,,, [রেগে]

আমি দরজা না খুলেই বললাম,

মিহু : চলে যান আপনি। আপনি কেন এসেছেন। সকাল হলে তো আমাকে ভূলে যান। তাহলে রাতে কেন আমার কাছে আসেন? [কান্না করতে করতে]

তাহসিন মিহুর আওয়াজ পেয়ে শান্তি পেল। কিন্তু তাহসিন বুঝতে পারলো না, কেন মিহু রাগ করেছে.,,

তাহসিন : মিহু কি হয়েছে তোমার? আমি যদি কোন ভূল করে থাকি তাহলে সরি,, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ,,,

মিহু : আমি কোন ভূল বুঝি নি,, এতো দিন ভূল বুঝতাম। আপনি চলে যান। আপনি যদি আর একটাও কথা বলেন, তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন। [কান্না করতে করতে]
||
তাহসিন সব কথায় মানতে পারতো। কিন্তু মিহু যা বলল তা শুনে তাহসিনের বুকে তীরের মতো বিধল। সে যে তার বৃষ্টি পাখিকে অনেক ভালোবাসে। তাহসিন সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো তার মাকে। সে তো তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু মিহুর যদি কিছু হয়ে যায়, তাহসিন যে বেঁচে থাকতে পারবে না।

তাহসিন কথা বলার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে। সে তার আকা বাঁকা দাঁতের মলিন হাঁসি দিয়ে মিহু দারজা সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। তাহসিন আর কোন কথায় বললো না।

||
আমি ভাবছি স্যার চলে গেছেন। তাই মুখের উপর বালিস নিয়ে কাঁদতে লাগলাম।আমার ভালোবাসা আপনি বুঝলেন না। আপনি তো রিমি আপুকেই ভালোসেন। আমি আপনাদের মাঝখানে থেকে অনেক দূরে কোথাও চলে যাব,,,

________________________
সকাল হতেই দরজার চাপানোর আওয়াজে তাহসিন সেদিকে তাকালো। তাহসিন সারা রাত ঘুমোতে পারে নি।চোখ গুলো লাল হয়ে রয়েছে। মিহুর মাকে দেখে সে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল।

মিহুর মা: তাহসিন তুমি ঘরের বাইরে কেন? রাতে কোথায় ছিলে। আমি রাতেই আসতে চেষ্টা করেছি কিন্তু মিহুর মামি আসতে দেয় নি।

তাহসিন : এমনই আন্টি। আমি মিহুকে ডাকতে এসেছিলাম। আপনি চলে এসেছেন তাহলে আমি এখন আসি,,,

মিহুর মা: ঠিক আছে।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

মিহুর মা তাহসিনকে মিহুর ঘরের বাইরে বসে থাকতে দেখেছিলেন। তাই তিনি আর কোন কথা বাড়ালেন না।

মিহু মা মনে মনে ভাবছেন, কিছু তো একটা হয়েছে। আমার কাছে তাহসিনকে অদ্ভুত দেখতে লাগছে। ছেলেটার চোখগুলোও দেখে মনে হলো যে ছেলেটা আমার কাছে থেকে কিছু লুকিয়েছে। আমকে যে সব কিছু জানতেই হবে। মিহুই সবকিছুর উওর দিতে পারবে।

মিহুর মা মিহুকে না ডেকে রান্নাঘরে চলে গেলেন। নাস্তা তৈরি করলেন। নাস্তা তৈরি করে যখনি মিহুকে ডাকতে যাবেন তখনি মিহুর বাবা চলে এলেন,,,

মিহুর বাবা: তুমি কি দিন দিন কেয়ারলেস হয়ে যাচ্ছ মিহুর মা।

মিহু মা: কি হয়েছে তোমার তুমি অফিস থেকেই ফিরেই আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?

মিহুল বাবা: তুমি কেনো মিহুকে একা রেখে তোমার ভাইকে দেখতে গেলে? আমি কয়দিন বাসায় ছিলাম না তাই তুমি আমার মেয়েকে দেখে রাখতে পারোনি? [রেগে]

মিহুর মা: সরি। ভূল হয়ে গিয়েছে।কি হয়েছে?

মিহুর বাবা: কাল রাতে মিহু আমাকে ফোন করেছিল,,,

এমন সময় শাদিয়া বাড়িতে প্রবেশ করে,,,

শাদিয়া : মামা কেমন আছো?

মিহুর বাবা : ভালো। তুই কেমন আছিস?

শাদিয়া : ভালো। মামা তোমাদের সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল,,,

মিহুর বাবা: কি কথা?

শাদিয়া : তোমরা আগে মিহুকে ডেকে নিয়ে এসো।

মিহুর বাবা একবার শান্ত দৃষ্টিতে মিহুর মায়ের দিকে তাকিয়ে মিহুকে ডাকতে লাগল,,,

মিহুর বাবা: মামনি, দরজা খোলা। দেখ তোমার বাবা এসে পড়েছে।

||

বাবার কথার আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেল। কাল রাতে কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যানি না। এতদিন পর বাবার মুখে মামুনি ডাক শুনে আর বসে থাকতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে বাবাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।

মিহুর বাবা: মামুনি কি হয়েছে তোমার। কান্না করছ কেন? তোমার বাবা তো চলে এসেছে এখন সব ঠিক করে দিবে। কান্না বন্ধ করো,,

মিহু : আমি বাবার কথা শুনে আরো জরে কেঁদে ফেললাম।

শাদিয়া : মিহু কান্নাকাটি করিস না। তোমারা একটু বসো তোমাদের একটি জিনিস দেখবো,,

শাদিয়া আপুর কথা শুনে আমি কান্না থামিয়ে আপুর দিকে তাকালাম,,,

এরপর আপু যা দেখালো তা দেখে আমরা সবাই অবাক। আমার তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছে। ছবি দেখে যে কেউ বলে দিবে তাহসিন স্যার আর রিমি আপুর মধ্যে সম্পর্ক আছে।

মিহুর বাবা: শাদিয়া তুই আমাদের আগে বললি না কেন? [রেগে]

শাদিয়া : মামা আমি তো কিছুই জানতাম না।

মিহুর মা: আমার বিশ্বাস হচ্ছে না শাদিয়া,,

মিহুর বাবা:তুমি চুপ করো। মিহু আমাকে ক্ষমা করে দে,,

আমি : নিশ্চুপ,,,

শাদিয়া: মিহু আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন, তুই তো তাহসিনকে ভালোবাসিস না। বোঝার চেষ্টা কর তাহসিন রিমিকে ভালোবাসে। তোর সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। তুই আবেগ নিয়ে কষ্ট পাস না।

আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি কিভাবে সবাইকে বোঝাবো আমি স্যারকে অনেক ভালোবাসি। আমি যে তাকে রিমি আপুর সাথে দেখতে পারবো না।কেন খেলা করলেন আমার মন নিয়ে। আমাকে যে তার থেকে অনেক দূরে যেতে হবে। তাই আমি বাবাকে বললাম,,

আমি: বাবা আমি তোমার কাছে কোনদিনও কিছু চায়নি। সবসময় তোমার কথা শুনার চেষ্টা করেছি। এখন আমি যা চাইবো তা কি আমাকে দেবে?

মিহুর বাবা: বল মা তোর কী চাই? আমি দেবো,,

আমি: বাবা আমি এখনে আর থাকতে চায় না। আমি আর স্যারের সাথে দেখা করতে চায় না। আমাকে কোথাও পাঠিয়ে দেও। আমি আজকে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে চায়,,

শাদিয়া : হ্যাঁ মামা।মিহু ঠিক বলছে। মিহু যদি এখানে থাকে তাহলে তাহসিন ঝামেলা করতে পারে। তুমি ওকে বিদেশে ছোট মামার কাছে পাঠানো ব্যবস্থা করো।

মিহুর বাবা: হ্যাঁ। কিন্তু আমি আমার মামুনিকে ছাড়া কীভাবে থাকব। আর ওর তো পাসপোর্ট করতে হবে। আজকের মধ্যে তো করা যাবে না। কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগবে।

আমি : বাবা আমি আজকেই এ বাড়ি থেকে চলে যেতে চাই।

মিহুর বাবা: ঠিক আছে মা।আমি দেখছি কি করা যায়।

মিহুর মা: কিন্তু আমারা কি করে মিহুকে ছাড়া থাকবো,, [কান্না করে]

শাদিয়া : মামি কান্না কর কেন, মিহু তো শুধু পড়ালেখা করতে যাচ্ছে। কয়েকদিন পরে তোমরাও বিদেশ চলে যেও।

আমার মা আর কিছু বললেন না। বাবা কিছুক্ষণ পর কাকে যেন ফোন করল।

মিহুর বাবা: শাহিন বাবা কেমন আছো?

আমাদের আর নাম শুনে চিনতে ভূল হলো না যে বাবা কার সাথে কথা বলছে। শাহিন ভাইয়া আমাকে ক্লাস সেভেনে পড়াতেন। তিনি সবসময়ই আমাকে বোনের মতো দেখতেন। মাঝে মাঝে আমি ভাবতাম তার মতো ভাই সবাই পায় না।আমি অনেক ভাগ্যবান যে তার মতো একটা ভাই পেয়েছি,,

বাবা শাহিন ভাইয়াকে সব খুলে বললেন। ভাইয়া শোনার পর বাবাকে বকা দিলেন।

শাহিন ভাইয়া : আঙ্কেল আপনি মিহুকে আমার বাসাই পাঠিয়ে দেন। আপনারা এতো সচেতন মানুষ হয়ে কিভাবে ভূল করতে পারলেন?

মিহুর বাবা: নিশ্চুপ,,,

শাহিন ভাইয়া:চিন্তা করবেন না। আমি আর তনু আজকে আসবো মিহুকে নিতে। যে কয়দিন না মিহুর পাসপোর্ট হচ্ছে, সে কয়েকদিন মিহু আমাদের কাছে থাকবে,,,

মিহুর বাবা: তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি যে কী উপকার করলে তা বলে বোঝাতে পারব না।

ভাইয়া : কি যে বলেন আঙ্কেল। মিহুর জন্যই তো আমি তনুকে পেলাম। আর তাছাড়া মিহু আমার বোনের মতো। ওর যায়গাই যদি আমার বোন থাকতো তাহলে কি আমি ফেলে দিতে পারতাম।

বাবা ভাইয়া সাথে অনেক কথা বললেন। আমি শুধু ভাবছি তাকে না দেখলে আমি কিভাবে থাকব। চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,আমি যে আপনাকে অনেক ভালোবাসি,,

||

সারা রাত ঘুম না হওয়ায় কারনে তাহসিনের মাথায় প্রচুর ব্যথা করছে। কিন্তু মনের ব্যথার কাছে যে তার মাথা ব্যাথাকেও হার মানতে হচ্ছে ,,,

(#চলবে)

[আজকে পর্বে আপনাদের কি মন ভরেছে? আশা করি কেমন হয়েছে জানাবেন]

#গল্প :#পবিএতার_ছোঁয়া
#পর্ব :#20
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

||

সারা রাত ঘুম না হওয়ায় কারনে তাহসিনের মাথায় প্রচুর ব্যথা করছে। কিন্তু মনের ব্যথার কাছে যে তার মাথা ব্যাথাকেও হার মানতে হচ্ছে। তাহসিন বুঝতে পারছে না কেন তার বৃষ্টি পাখি তাকে ভূল বুঝলো। সে কি কোনো অন্যায় করে ফেলেছে,,

তাহসিন : আমাকে যে জানতে হবে কি হয়েছে তোমার। আমি কী কোন ভূল করে ফেলেছি। তুমি কেন বোঝা না বৃষ্টি পাখি তোমার কান্না যে আমি সহ্য করতে পারি না।
||

আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। বাবা গম্ভীর মুখে বসে আছেন। শাদিয়া আপু আমার কাপড় গোছায়,,,

শাদিয়া : মিহু তুই ভালো করে পড়াশোনা কর। বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তাহসিনের মতো বাজে ছেলের জন্য নিজের কোন ক্ষতি করিস না। নিজেকে শক্ত রাখ,,,

মিহুর বাবা: আমি কিভাবে এত বড় ভূল করলাম। মিহু মা আমাকে ক্ষমা করে দে,,

শাদিয়া : চিন্তা করবে না মামা। আমারা মিহুকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিব।

আমি শুধু সবার কথা শুনছি। আপু যে বলল আমাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। কিন্তু আমার মনে তো একজন গেঁথে আছে। আমি বিয়ের পর থেকেই স্যারকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছেলাম।তাহলে কেন স্যার আমাকে ঠকালেন। আমি যে আর সইতে পারছি না। আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসি,,,

চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগল।কান্না আর থামিয়ে রাখতে পারলাম না। মাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম,,,

মিহুর মা: কাঁদিস না মা । তোর কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।

মিহুর বাবা: মামুনি কান্না করো না। তোমাকে ভেঙে পরলে চলবে না। তুমি শুধু দেখ তোমার বাবা কী করে,,

শাদিয়া : কি করবে,,

মিহুর বাবা: তাহসিন কে যে আমার মেয়েকে ঠকানোর শাস্তি পেতেই হবে। একবার আমার সামনে আসুক,,, [রেগে]

||

রিমি: ফুপি তোমার প্ল্যান তো কাজে লেগে গেল। [ জরে হেসে]

আবির : হ্যাঁ ফুপি।শাদিয়া যে আমাদের কথা শুনে কাজ করবে, আমি ভাবতেই পারি নি,,

রিনা: এখন আমাদের দ্বিতীয় প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে,,,

রিমি: হ্যাঁ ফুপি,,

রিনা: আবির তুই কী শাদিয়াকে ভালোবাসিস,,

আবির: তোমার কি মনে হয় আমি শাদিয়াকে ভালবাসি, কোনদিন ও না।আবির চৌধুরী ওরকম মেয়েদের প্রেমিকা হিসেবে রাখে কিন্তু বউ হিসেবে না,,, [হেসে]

রিমি: ভাইয়া আমার আগে থেকেই তাই মনে হয়েছিল,,

রিনা: আবির তুই কিন্তু শাদিয়াকে ছেড়ে দিস না। যতদিন পর্যন্ত তাহসিন আর রিমির বিয়ে না হয় ততদিন তকে শাদিয়ার সাথে প্রেম করতে হব। বুঝতে পেরেছিস,,

রিমি: হ্যাঁ ভাইয়া ।আমারো তাই মনে হয়,,

আবির: তা আমি জানি। কিন্তু মেয়েটা বিয়ে করবে বলতে বলতে আমার কানটা শেষ করে ফেলল,,

রিনা: আর কয়টা দিন অপেক্ষা কর। আমি তাহসিনকে যে করে হোক বিয়েতে রাজি করাবো,,

রিমি: আই লাভ ইউ ফুপি।তুমি পৃথিবীর বেস্ট ফুপি,,

রিনা: পাগলি মেয়ে আমার,,,

||

তাহসিন কালো শার্ট আর কালো জিন্স পরে বের হচ্ছে। দুপুর হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখনো সে খাবার খায় নি। তার যে গলা দিয়ে ভাত নামছে না। তাহসিন কে যেকরে হোক বৃষ্টি পাখির মন ভালো করতে হব। তাহসিন ভেবছে আজকে সে বৃষ্টি পাখির জন্য অনেক গুলো করে চকলেট, চুরি আর শাড়ি কিনবে। তাই সে না খেয়েই বেড়িয়ে গেল,,

||

দুপুর বেলা শাহিন ভাইয়া চলে এসেছে। এখন বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে। আমি রেডি হয়ে বসে আছি,,

ভাইয়া : কেমন আছো মিহু,,

আমি: নিশ্চুপ,,

মিহুর মা: বাবা আমার মেয়েটার খেয়াল রেখো,, [কান্না করে]

মিহুর বাবা: তোমাকে যে আমি কিভাবে ধন্যবাদ দিব,,,

ভাইয়া : চিন্তা করবেন না আঙ্কেল, আমি আমার বোনর ঠিক মতো খেয়াল রাখব।

আমি আর বাবা মায়ের কান্না সহ্য করতে পারছি না। তাই আমি ভাইয়ার গাড়িতে যেয়ে বললাম। যাওয়া আগে শাদিয়া আপুকে বলে গেলাম,,

আমি:আপু তোমার বন্ধুকে বলে দিও আমি তাকে কোনদিনও ক্ষমা করব না। ভালো থেকে আপু,, বলেই গাড়িতে উঠলাম।

শাদিয়া : নিশ্চুপ,,,

||

তাহসিন মিহুর পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকল।

তাহসিন : আঙ্কেল কেমন আছেন?

তাহসিনের কন্ঠ শুনে মিহুর বাবা তাহসিনের দিকে তাকাল,,

তাহসিন : শাদিয়া মিহু কোথায় রে,,

তাহসিন কে কোন কথা বলতে না দিয়ে মিহুর বাবা তাকে এক থাপ্পড় মারলেন,,

তাহসিন : আঙ্কেল মিহুকে একটু ডেকে দিন। আমি কী কোন অন্যায় করে ফেলেছি?

মিহুর বাবা: এই ছেলে তুমি জানো না তুমি কি অন্যায় করে ফেলেছ,? তুমি আমার মেয়েকে ঠেকিয়েছ,,

শাদিয়া : তুই চলে যা তাহসিন। মিহু তোর মুখ দেখতে চায় না।

তাহসিন : বল না মিহু কোথায়?

শাদিয়া : বাইরে যে গাড়িটা আছে ওখানে,,

তাহসিন আর দেরি না করে বাইরে বেরিয়ে এলো,,

তাহসিন : মিহু,, মিহু,,
||
ভাইয়া ওয়াসরূম গিয়েছে তাই আমি গাড়িতে বসে ছিলাম। মা বাবকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি আমার সামনে যেন না আসে। তাদের দেখলে তো আমার আর যেতে ইচ্ছে করবে না।

সেই চির চেনা কন্ঠে মিহু ডাক শুনে আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম,,

তাহসিন: মিহু, দেখ তোমার জন্য আমি কি এনেছি। বের হও গাড়ি থেকে। সবাই যে আমাকে ভুল বুঝছে,,

আমি তার কথা শুনেও বের হলাম নাহ।

তাহসিন : মিহু প্লিজ বের হও,,,

আমি তাও বের হলাম না। কিন্তু যখন দেখলাম ভাইয়া স্যারকে মারছে তখন আর থাকতে পারলাম না। গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম,,,

তাহসিন : মিহু, কি হয়েছে তোমার। বল না? [অস্থির হয়ে]

ভাইয়া আরো জরে তাকে মারতে লাগলেন। আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। মন চাইছে ছুটে গিয়ে তাকে ধরি। কিন্তু যখন ওই ছবির কথা মনে পড়ল, আমি আর কিছু করলাম না। আমি যে আর তাকে এমন অবস্থায় দেখতে পারছি না। তাই ভাইয়া কাছে যেয়ে বলাম,,

আমি: ভাইয়া ওনাকে আর মারবেন না। প্লিজ ভাইয়া। আপনি গিয়ে গাড়িতে বসুন। আমি এখুনি আসছি,,

ভাইয়া : কিন্তু,, ঠিক আছে। তারাতারি এসো। এই ছেলে শুনে রাখ আমার বোনের পিছনে যেন তোকে আর না দেখি।

তাহসিন : মিহু, কি হয়েছে?

আমি : আপনি জানেন না কি হয়েছে?

তাহসিন : দেখ তোমার জন্য আমি কি এনেছি?

আমি তার হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে ফেলে দিলাম,,

আমি : আপনার কোন কিছুর আমার দরকার নেই। আপনি চলে যান।

তাহসিন : তুমি আমাকে ভূল বুঝেছ, আমার কথা আগে শুনো তো,,

আমি: আমার আপনার কোন কথা শুনার ইচ্ছা নেই। আমি শুধু আপনাকে ঘৃনা করি। আই হেট ইউ।
আমি কথাগুলো বলে আর দেরি করলাম না। কান্না করতে করতে গাড়িতে এসে বসলাম।

তাহসিন : মিহু যেও না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।

বলেই তাহসিন মাটিতে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল,,,
#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here