#পরিণীতা
#পর্ব_৯
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম
[এই পর্বে “আমি” বলতে আদিবকে সম্বোধন করা হয়েছে*]
“ডাক্তার? ও কী সুস্থ হবে?”
“আমরা চেষ্টা করছি! অনেকটা ইন’জুরি হয়েছে”
“আচ্ছা প্লিজ চেষ্টা করুন”
——–
আদিব চোখ খুলতে দেখলো তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক। সে হাসপাতালে আছে। চারিপাশে প্রিয়জন হারানোর হাহাকার। ডাক্তারের দৌড়াদৌড়ি। আদিব বুঝতে পারলো তাদের গাড়ি এক্সি’ডেন্টের সকলকে এখানে আনা হয়েছে তাই সবার এতো হাহাকার!
সে শুনতে পায় কেউ ডাক্তারকে কেউ ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলছে। তার হঠাৎ বিহির কথা মনে হলো। সে দ্রুত উঠতে চাইলো কিন্তু মাথায় প্রচন্ড ব্যথা লাগলো। একজন তাড়াতাড়ি এসে বলল,
“আরে আরে কী করছেন কী! আপনার অবস্থা এখনো ভালো হয় নি শুয়ে থাকুন”
মনে হয় নার্স হবে। তাই ভেবে আদিব বলল,
“আচ্ছা বিহি কোথায়?”
“বিহি…কে বিহি?”
“আমার সাথে গাড়িতেই ছিল, একদম কোণায় বসেছিল”
“ওহ একই গাড়িতে ছিল? তার মানে হাসপাতালেই থাকবে। সবাইকে এখানেই আনা হয়েছে। তবে
..”
“দুই গাড়ির কয়েকজন.. স্পট ডে’ড”
“কীহ!”
এটা শুনে আদিবের দুনিয়া ওলট পালট হয়ে গেলো।
“আমি দেখতে চাই”
“এই অবস্থায় আপনি যেতে পারবেন না”
“আমাকে যেতে হবে প্লিজ!”
আদিব তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ডান হাতের কব্জিতে ব্যথা লাগে। সাথে সাথে “আহ!” করে উঠে।
“বলেছিলাম না যেতে পারবেন না!”
“কিন্তু”
“আপনি আমাকে বলুন। আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি”
“মা..রা গেছে তাদের মধ্যে মে..য়ে আছে?”
“হ্যাঁ”
“ক.. জন?”
কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“মনে হয় চারজন”
এটা শুনে আদিবের বুক ধুক করে উঠে। বিহি! না না এসব কি ভাবছি! কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ।
“আপনি খবর নিতে পারবেন?”
“হ্যাঁ আপনি ডিটেইলসে বলুন”
“দাঁড়ান আপনাকে ছবি দেখায়?”
বলে ফোন খুঁজতে লাগলো।
“আমার ফোন…”
“আপনার ফোন আপনার শার্টের পকেটে আছে কিনা দেখুন তো”
“এইতো পেয়েছি”
“এই যে এই মেয়েটা। নাম বিহি। কালো বোরকা পড়া ছিল”
নার্স কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“এই মেয়ে তো…”
“কী?”
“না কিছু না আমি দেখে এসে বলছি। আপনি শান্ত হয়ে বসুন”
নার্স চলে গেল। নার্সের অর্ধেক কথায় আদিবের মধ্যে তোল’পাড় চলছে।
প্রায় দশ মিনিট পর নার্স ফিরে এলো। আদিবের কলিজায় মনে হচ্ছে পানি নেই। নার্স চিন্তিত মুখ নিয়ে এসে বলল,
“স্যার ওখানে ইনি নেই!”
আদিব যেন প্রাণ ফিরে পেলো। ছোট্ট করে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো , “আলহামদুলিল্লাহ”
“এবার আপনি রেস্ট নেন আমি আসছি।”
আদিব নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে থাকলো। তবে বিহিকে একটু দেখে আসলে ভালো হলো। কেমন আছে ও? পরক্ষণেই মনে পড়লো খাদের কথা। বিহি যেদিকে ছিটকে গিয়েছিল সেদিকে তো খাদ ছিল। কিন্তু নার্স যে বলল সবাইকে এখানে আনা হয়েছে! হয়তো আমি বেশি ভাবছি। তার শরীরে একটুকু শক্তি না থাকায় সে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
দুইদিন পার হয়ে গেলো। আদিব আগের থেকে অনেক সুস্থ। আজ সে চলে যাবে। মনে হচ্ছে কতদিন বিহিকে দেখে না সে। সে খুশি খুশি মনে বেরোচ্ছিল এমন সময় নার্স আসলো।
“স্যার একটু সময় হবে একটা কথা ছিলো?”
“হ্যাঁ বলেন। একটু তাড়াতাড়ি বলবেন আমি আমার ওয়াইফ মানে বিহিকে খুঁজতে যাবো।”(হেসে)
“হুম”(জোর করে হেসে)
কিছুক্ষণ নিরব হয়ে তারপর বলল,
“সেদিন আপনি একজনের কথা বলেছিলেন না?”
“হ্যাঁ আমার ওয়াইফ বিহি!”
“হ্যাঁ আসলে”
“কী? ওনার কেবিন নং টা বলুন তো আমি দেখা করতে যাবো”
“হুম এই ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছি”
“ওর ব্যপারে! কী কথা?”
“আসলেই এই নামের আর আপনি যেই ছবিটি দেখিয়েছিলেন সেরকম কেউই এই হাসপাতালে নেই”
“কী বলছেন?”
“হ্যাঁ এরকম কাউকে আমরা পাই নি”
“আপনি যে সেদিন বললেন মৃ’তদের মধ্যে ও নেই!”
“হ্যাঁ কিন্তু সুস্থ বা আহতদের মধ্যে ও আমি খুঁজে দেখেছিলাম কিন্তু পাই নি। আপনি অসুস্থ ছিলেন তাই বলিনি আপনাকে”
আদিব নির্বাক হয়ে চেয়ে আছে। কী করবে সে? কোথায় খুঁজবে বিহিকে? ও কোথায় যাবে?
“আচ্ছা আপনারা কোথায় কোথায় খুঁজেছেন এক্সি’ডে’ন্টের সময় যারা ছিল তাদের?”
“আমরা যেখানে এক্সি’ডে’ন্টটা হয়েছে এর আশে পাশেই সবাইকে পেয়েছিলাম”
“তাহলে বিহি কোথায় যাবে?”
“আমি সেটা বলতে পারবো না স্যার”
“আমায় একটা সাহায্য করতে পারবেন?”
“চেষ্টা করবো বলুন”
“আমি তো এখানের স্থানীয় না কিছু চিনি না। আমার কেউ নেই এখানে। আপনি কিছু লোক আমার সাথে দিতে পারবেন? বিহিকে খুঁজে দেখতাম।”
“হ্যাঁ আমাকে একটু সময় দিন আমি ম্যানেজ করে দিচ্ছি। কিন্তু এরিয়া তো অনেক বড়! আপনি খুঁজবেন কী করে?”
“না পুরো এরিয়া খুজঁবো না। শুধু এক্সি’ডে’ন্টের আশে পাশে খুঁজবো। আমার বিশ্বাস ওখানেই পেয়ে যাবো”
“আচ্ছা আপনি বসুন আমি আসছি।”
বলে নার্স চলে গেল। আদিব মাথা চেপে বহে রইলো। কী থেকে কী হয়ে গেল। এতোক্ষণ যা আশা ছিল তাও শেষ হয়ে গেল। আদিবের চোখে পানি চলে এলো। সে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো। মোবাইল বের করে কল দিলো বাসায়। তার আরো দুদিন আগে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কাউকে কিছু জানাতে পারলো না। সবাই নিশ্চিত চিন্তা করছে। তাই সে কল দিলো। দুবার রিং পড়তেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো তার মায়ের কান্নার আওয়াজ।
“আদিব! কোথায় তোরা? তোদের তো দুইদিন আগে ফিরে আসার কথা ছিল! তারপর থেকে তো ফোনে কল ঢুকছে না। ঢুকলেও রিসিভ হচ্ছে না! কী হয়ছে কী?”
“আম্মু আম্মু শান্ত হও! আমি ঠিক আছি।”
“বিহি কোথায়?”
“আম্মু আসলে…”
“কী হয়েছে আদিব? এভাবে কথা বলছো কেন? বিহি কোথায়?”
“আম্মু সাজেকে আমাদের গাড়ি এক্সি”ডেন্ট হয়েছে”
“কী বলছিস এসব?”
“হ্যাঁ আম্মু দুইদিন আমি হাসপাতালে ছিলাম। কিন্তু বিহিকে পাই নি। আমি আজকে খুঁজতে বেরোচ্ছি।”
“কী করে হলো এইসব?”
আমি সব খুলে বললাম আম্মু কে। আম্মুর কান্না থামছে না। আম্মুকে শান্ত হতেই বলছি তার কোনো নাম নেই। কেঁদেই যাচ্ছে।
“আম্মু প্লিজ শান্ত হও! আমি ওকে খুঁজে আনবো। তোমরা চিন্তা করো না।”
আম্মুকে বুঝিয়ে কল রাখলাম। কিন্তু আদৌ কী পারবো ওকে খুঁজতে? কিছুক্ষণ পর সেই নার্সটি আমার কাছে এসে বলল,
“আপনার সাথে দুজন যাবে। ওরা হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছে।”
আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। এখন আমার টার্গেট বিহিকে খুঁজে বের করা।
আমি এক্সি’ডে’ন্ট করা জায়গাটাতে চলে গেলাম। এখানে তেমন গাড়ি চলাচল নেই বললেই চলে। আমি একটু সামনে এগোতে নিলে একজন চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
“ভাই ওদিকে যাবেন না। ওখানে বিশাল খাদ!”
আমি কিছু না বলে এগিয়ে গিয়ে কথাটা পরখ করলাম। তারপর আস্তে আস্তে পেছনে চলে এলাম। ভয়’ঙ্কর এক খা’দ এটা। কেউ এখানে পড়লে নিশ্চিত ম’রণ। যেন এক ম’রণ খা’দ! আমি বুঝতে পারছি না বিহি কী এখানে? নাকি অন্য কিছু?
“ভাই আপনাকে বারণ করা সত্ত্বেও কেন ওদিকে গেলেন?”
“আমি ধারণা করছি আমার ওয়াইফ এক্সি’ডে’ন্টের সময় এদিকে ছিটকে পড়ে গিয়েছিল”
“কী ব… বলছেন!”
“ধারণা!”
“আচ্ছা আমরা খুঁজে দেখতে নামবো।”
“রিস্ক হয়ে যাবে না?”
লোকটা হেসে বলল,
“ভাই আমরা ট্রেনিংপ্রাপ্ত মানুষ। খা’দে নামার কৌশল আমাদের জানা আছে”
“ওহ আচ্ছা বুঝতে পারলাম”
ওনারা বিহিকে খুঁজতে নিচে গেলো। আমি দোয়া করতে লাগলাম বিহির যেন কিছু না হয়।
খানিকক্ষণ পর ওনার উঠে আসলো,
“ভাই নিচে তো কারোর দেখা পেলাম না। পুরোটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। তবে..”
“তবে?”
“একটা আংটি পেয়েছি। এছাড়া কোনো মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই।”
“কোন আংটি দেখি?”
“এই যে”
ওনারা যেই আংটি টা আমার হাতে দিলো সেটা দেখে আমার মাথায় যেন বা’জ পড়লো। এটা তো বিহির আংটি। বিহির আঙুলে এটা একটু বড় হতো বিধায় সুতা বাঁধা ছিল। এটা বিয়ের পর আমি ওকে দিয়েছিলাম। তারমানে বিহি…?!
“ভাই চিনেন এই আংটি?:
“হ্যাঁ”(অস্ফুট স্বরে)
“তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার ওয়াইফ এখানেই পড়েছিল। আপনার ধারণা ঠিক। কিন্তু এখান থেকে কোথায় গেল?”
“এটাই চিন্তা করছি”
আমরা সেদিন পুরো দিন বিহিকে খোঁজাখুঁজি করলাম কিন্তু ফলাফল শূন্য! আমার মাথার ঠিক নেই। শেষমেষ আর না পারতে আমি চলে আসার চিন্তা করলাম। আমার মাথায় অন্য প্ল্যান ঘুরছে।
আমি চলে আসার জন্য গাড়ি ধরলাম। এসেছিলাম বিহিকে নিয়ে ফিরতে হচ্ছে এটা! এটাই হয়তো পরিণতি বিহি হয়তো এই গল্পের #পরিণীতা।
চলবে…?
(1111 শব্দের)