পরিত্রাণ পর্ব ১৫

#পরিত্রাণ
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৫

ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট বয় শুভ। তার নামে এমন জঘন্য অপবাদ আনা হয়েছে শুনে খানিকক্ষণের জন্য বাক্যহারা হয়ে গেলো সে। বিভাগীয় প্রধান জনাব আবুল কালাম স্তম্ভিতমুখে গালে হাত রেখে বসে আছেন। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন তার অতিপ্রিয় ছাত্রটি এমন জঘন্য একটা কাজ করতে পারে! তাঁর ঠিক বিপরীতে চেয়ারে বসে আছে অনিক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুভকে ডেকে আনা হয়েছে। আবুল কালাম হাত ইশারায় অনিককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে বললেন। শুভর দিকে একপলক চেয়ে নড়েচড়ে বসলো অনিক। সূচালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’তোমার নামই তো শুভ?’

-‘জি।’, সংক্ষিপ্ত জবাব শুভর।

-‘কোন ইয়ার?’

-‘থার্ড ইয়ার!’

-‘আরিয়াকে চেনো?’

শুভ ধারণা করে নিলো যে মেয়েটি তার বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করেছে তাঁর নামই আরিয়া হবে। দুদিকে না-সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল,’জি না। এই নামের কাউকে আমি চিনি না।’

-‘চেনো না?’

-‘জি, না।’

-‘সত্যিই চেনো না?’

-‘বললাম তো না।’

-‘সে যে তোমার বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করেছে সেটা জানো?’

-‘এইমাত্রই জানতে পেরেছি।’

-‘কি নিয়েছে করেছে তা জানো?’

-‘জি।’

-‘তুমি চেনো না, জানো না এমন একজন কেন তোমার নামে শুধুশুধু এই ধরনের কমপ্লেইন করতে যাবে? ব্যপারটা অস্বাভাবাবিক না?’

-‘আমারও তো একই প্রশ্ন! উনার হয়ত বা কোথাও ভুল হয়েছে। আর নয়ত কেউ আমার নাম ব্যবহার করে উনাকে বিরক্ত করছে।’

অনিক খানিকটা ধমকের সুরে বললো,’ডিপার্টমেন্টে এত ছেলেমেয়ে থাকতে তোমার নাম ধরে কেউ কেন কাজটা করতে যাবে?’

-‘সেটা তো আমি জানি না।’

-‘তারমানে তুমি বলতে চাইছো তুমি কাজটা করো নি? কেউ তোমার নাম ধরে করেছে?’

-‘জি। আপনার বিশ্বাস না হলে আপনার বোনকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন।’

-‘জিজ্ঞেস করেই তো এসেছি। সে তো তোমার নামই বলেছে!’

-‘আমি তো বললামই কেউ হয়ত আমার নাম ব্যবহার করেছে। আমাকে দেখলে উনি নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পারবেন।’

অনিক কিছু বলার আগেই আবুল কালাম সাহেব বললেন,’ঠিক আছে শুভ, তুমি এখন ক্লাসে যাও।’

শুভ চলে গেলে আবুল কালাম সাহেব অনিককে উদ্দেশ্য করে বললেন,’আপনি বরং কাল আপনার বোনকে নিয়েই ডিপার্টমেন্টে আসুন মি.অনিক? আপনার বোনই ব্যপারটা ক্লিয়ার করতে পারবে। আমার মনে হয় আসলেই কোন একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। আমি আপনাকে লিখে দিতে পারি শুভর মত ছেলে এমন কাজ করতে পারে না। ডিপার্টমেন্টের সেরা ছাত্র সে। যারা তাকে চেনে,জানে তার সঙ্গে চলাফেরা করেছে তারাও ভুলে কখনো তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনতে পারবে না।

ছেলেটার কনফিডেন্সও তাই বলছে। মনে মনে তাঁর সাহসের তারিফ না করে পারলো না অনিক। কোথাও যেন একটা খটকা লাগছে তাঁর! উঠে দাঁড়িয়ে আবুল কালাম সাহেবের সাথে হ্যান্ডশেইক করে বললো,’ঠিক আছে আমি তবে আজ আসি স্যার। কিন্তু একটাই অনুরোধ ঘটনা যদি সত্যি প্রমাণিত হয় তবে আপনারা ছেলেটার যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন প্লিজ!’

-‘অবশ্যই, অবশ্যই। এটা তো আমাদের দায়িত্ব!’


সেদিন বাসায় গিয়ে আরিয়াকে এই সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করে নি অনিক। একদম চুপচাপ ছিলো। তার মনে মনে সন্দেহ হচ্ছিলো নিশ্চয়ই কোন গড়বড় আছে। আরিয়া সতর্ক হয়ে যাবে ভেবে কিছু জানায় নি। পরেরদিন তাঁকে পৌঁছে দিতে গিয়ে সোজা ফিনান্স ডিপার্টমেন্টে ঢুকলো অনিক। আরিয়ার পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। তবে কি ফিনান্স ডিপার্টমেন্টে সত্যিই শুভ নামের কেউ আছে? ইয়া আল্লাহ! এবার কি হবে? গতকাল রুমু সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা হয়েছিলো আরিয়ার। রুমু তাঁকে বারবার করে বলে দিয়েছিলো সে যেন অনিক জানতে পারার আগেই দ্রুত খোঁজ নেয় শুভ নামের কেউ আছে কি না! থাকলে তার সাথে আগেই এই বিষয়ে কথা বলে নেয়! কিন্তু অনিক তো রকেটের গতিতে ছুটছে! আরিয়া খবর নেওয়ার আগে সে সব খবর নিয়ে বসে আছে! এবার কি হবে? আল্লাহ তুমি রক্ষা করো! অনিক যদি সত্যিটা জানতে পারে তবে তো এই জীবনে আর কোনদিন আরিয়াকে বিশ্বাস করবে না সে।


আবুল কালামের চেম্বারে তাঁর মুখোমুখি বসে আছে অনিক এবং আরিয়া। শুভ এককোনায় মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। অনিক ইশারায় শুভকে দেখিয়ে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,’এই ছেলেটা?’

আরিয়া জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো। আবুল কালাম সাহেব তার ভীত মুখপানে চেয়ে কোমল কন্ঠে বললেন,’বলো মা? এই ছেলেটাই কি তোমাকে বিরক্ত করে?’

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু হয়ে গেলো আরিয়ার। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনিক অবাক হলেও ধীরেধীরে তাঁর মাথায় একটা হাত রেখে বললো,’বলো! কিচ্ছু হবে না। আমি আছি।’

অনিকের স্নেহভরা কন্ঠ শুনে আরিয়ার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। এই মানুষটা যখন জানবে আরিয়া তাঁকে মিথ্যে বলেছে তখন তো ঘৃণায় তাঁর দিকে আর ফিরেও তাকাবে না কোনদিন! এদিকে তাঁর কান্না দেখে শুভ ঘাবড়ে গেলো। এগিয়ে এসে অসহায় কন্ঠে বললো,’প্লিজ আপু। দয়া করে বলুন। আপনি না বললে আমার পুরো জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। আপনার ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। প্লিজ দয়া করে সত্যিটা বলুন।’

অনিক ইশারায় ওকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। আরিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,’কি হলো? চুপ করে আছো কেন? বলো এই ছেলেটাই কি তোমাকে ডিস্টার্ব করে?’

আরিয়া কান্নারত কন্ঠে ফুঁপিয়ে উঠে বললো,’না, উনি সেই ছেলে নন। আমি উনাকে চিনি না।’

স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো শুভ। হাসি ফুটে উঠলো আবুল কালামের মুখেও। অনিকের দিকে চেয়ে হাসিমুখেই বললো,’আমি বলেছিলাম না মি.অনিক। আমার এই ছেলে এমন কাজ করতেই পারে না!’

অনিক বিব্রতমুখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’আই অ্যাম সরি স্যার। এক্সট্রিমলি সরি!’ তারপর শুভর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,’সরি ব্রো! মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে। ‘

শুভও হাসিমুখে হাত মিলিয়ে বললো,’ইট’স ওকে। আপনার জায়গা থেকে আপনি ঠিক ছিলেন। তবে আমার মনে হয় কেউ আমার নাম করে নিশ্চয়ই উনাকে বিরক্ত করছে, নতুবা তিনি কখনোই এত ঘাবড়ে যেতে!’
অনিক রাগতচোখে একবার আরিয়ার পানে চেয়ে বেরিয়ে গেলো। তাঁর বুঝতে বাকি নেই আরিয়া মিথ্যে বলেছে। এসব ডিস্টার্ব ফিস্টার্ব একদম মিথ্যে কথা! সিমপ্যাথি পাওয়ার জন্য অনিককে ধোঁকা দিয়েছে সে! রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে অনিকের! এতবড় ধোঁকা! অনিককে বোকা বানানোর জন্য অন্য একটা ছেলের ক্যারিয়ার নিয়ে টানাহেঁচড়া! ছিহ্!

বাসায় ফিরে আরিয়াকে নিয়ে মুখোমুখি বসলো অনিক। গাড়িতে বসে অনেক্ষন ভেবেছে সে, তাঁর কেন যেন মনে হচ্ছে আরিয়া নিজের বুদ্ধিতে এসব করে নি। রুমু এর সাথে যুক্ত আছে। আরিয়ার দিকে চেয়ে ধমকের সুরে বললো,’সত্যি করে বলোতো, তোমাকে এইসব শয়তানি বুদ্ধি কে দিয়েছে?’

নাশতা নিয়ে উপরে উঠছিলো রুমু। দরজার বাইরে থেকে অনিকের গলা শুনতে পেয়ে থমকে গেলো! হায়! খোদা! অনিক এসব কেন জিজ্ঞেস করছে? সে কি সব জেনে গেছে? তবে তো আজকে রুমুর বারোটা বাজিয়ে দেবে! এদিকে অনিকের ধমকের ওপর ধমক খেয়ে আরিয়ার মুখ দিয়ে রুমুর নাম বেরিয়ে গেলো।

শুনে খুব বেশি চমকালো না অনিক। হতাশভাবে মাথা নাড়ালো। তাঁর ধারণাই ঠিক! রুমুর বুদ্ধিতেই আরিয়া এসব করেছে! গম্ভীর গলায় বললো,’যাও! তাঁকে ডেকে আনো। দুজন মিকেই যখন এসব করেছো তখন একসঙ্গে দুজনেরই হিসেব নেবো।’

আরিয়া কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে অনিকের দিকে চাইলো কিন্তু অনিকের মায়া হলো না। এই দুই মহিলা শয়তানকে আজকে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে সে! কতবড় সাহস! অনিককে বোকা বানায়! তাও আবার অন্য একটা ছেলের রেপুটেশন নিয়ে তামাসা বানানো!

আরিয়া রুম থেকে বেরোনোর আগেই রুমু নাশতার ট্রে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দরজার বাইরে আড়িপেতে সবই শুনেছে সে। আরিয়াকে উদ্দেশ্য করে কৃত্রিম কান্নার সুরে বললো,’এভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিলে তুমি? আমি কার জন্য এসব করেছি? তোমার জন্যই তো?
আরিয়াও ভয়ে কেঁদে উঠে কিছু বলতে যাচ্ছিলো,অনিকের ধমক শুনে চুপ করে গেলো। রুমুর মুখ দেখেই অনিকের বুঝতে বাকি নেই আবার নতুন করে একটা নাটক শুরু করার পায়তারা করছে সে। মোটেও আরিয়ার ওপর রেগে নেই রুমু। অনিকের হাত থেকে বাঁচার জন্য রেগে যাওয়ার ভান করছে! কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না। অনিক গম্ভীর গলায় রুমুকে উদ্দেশ্য করে বললো,’তোমার ড্রামা বন্ধ করো রুমু। আমিই বোকা! তাই গাধার মত আবার জিজ্ঞেস করছিলাম! আমার তো আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো এইসব শয়তানি বুদ্ধি কেবল তোমার মাথা থেকেই বেরোতে পারে! তুমি হচ্ছো নাটেরগুরু!’

-‘হ্যাঁ। এখন সব দোষ আমার! আমি কি জানতাম আরিয়াকে কেউ ডিস্টার্ব করে শুনলে তোমার এত গায়ে লাগবে? আমি তো এক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছিলাম?’

রুমুর এসব নাটকীয় কথাবার্তার সামান্যতম প্রভাবও পড়লো পড়লো না অনিকের ওপর। থমথমে গলায় বললো,’তুমি বুঝতে পারছো না রুমু আমার মেজাজ খারাপ? এইসব ফালতু কথা বলে কেন আমার মেজাজ আরো খারাপ করে দিচ্ছো তুমি? তুমি প্লিজ এইমুহূর্তে আমার সামনে থেকে সরে যাও। তুমি সাথে কোন কথা বলতে চাই না আমি। শুধুমাত্র তোমার এইসব ফালতু বুদ্ধির জন্য আজকে একটা ছেলের ক্যারিয়ার ধ্বংস হতে বসেছিলো!’

রুমু জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে ফেললো। ঘটনাটা এতদূর গড়াবে সে ভাবতেই পারে নি! মাঝখান থেকে আরিয়ার শুভর নাম বলেই বোকামিটা করে ফেলেছে। কি দরকার ছিলো নাম বলার? অনিক যখন জিজ্ঞেস করে ছিলো তখন জানি না বললেই তো হতো! অনিকের ধমক খেয়ে চোখে পানি চলে এলো তাঁর। অনিক তখনো রাগে দিশেহারা। রুমুকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে আবারো সজোরে ধমক দিয়ে বললো,’কি হলো তোমাকে আমি আমার সামনে থেকে সরে যেতে বলেছি না?’

রুমু ফ্যালফ্যাল করে অনিকের মুখের দিকে চাইলো। সে জানে সে ভুল করেছে! বোকার মত কাজ করে ফেলেছে! কিন্তু আরিয়ার শুভর নামটা না বললে তো আর এত ঝামেলা হতো না! আচ্ছা ঝামেলা হয়েছে ভালো কথা। অনিক তাঁকে সাবধান করে দিতে পারতো! কিন্তু তাই বলে,এভাবে আরিয়ার সামনে তাকে ধমকাবে? এটা যে সে বিশ্বাসই করতে পারছিলো না। কতবড় মুখ করে আরিয়াকে বলেছিলো সে,’তোমার ভাইয়া আমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি কোন চিন্তা করো না, আমি বুঝিয়ে বললে সব বুঝতে পারবে সে!’ কিন্তু অনিক তো তাঁকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। এই তাঁকে ভালোবাসে অনিক? অশ্রুসজল কন্ঠে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’সরি! আমার ভুল হয়ে গেছে!’

-‘তুমি বেরোও আমার সামনে থেকে!’

আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না রুমু। সঙ্গে সঙ্গেই আরিয়াকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। অনিক রাগ সামলাতে পারছে না। রুমুর মত মেয়ে এতটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারে? রাগের চোখে ওয়াশরুমে ঢুকে মাথায় পানি ঢাললো সে।

দুপুর থেকে আরিয়ার ঘরেই বসে আছে রুমু। দুজনেই কাঁদছে। রুমু বেশি কাঁদছে। আরিয়ার সামনে তাঁকে খুব ছোট করে দিয়েছে অনিক!বিষয়টা আত্মসম্মানে লেগেছে তাঁর! আরিয়ারও খারাপ লাগছে। সে রুমুর নামটা বলতে চায় নি অনিককে, ধমকের চোটে মুখফস্কে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু বলার পরে ভেবেছিলো রুমুর নাম শুনলে নিশ্চয়ই অনিক শান্ত হয়ে যাবে! কিন্তু এখন তো ঘটলো উলটো! অনিক তো রুমুকেই বেশি করে ধমকেছে!

এদিকে রুমু বেরিয়ে যাওয়ার পর অনিকের মেজাজ আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে! অস্থির লাগছে তাঁর! রুমু দুপুর থেকে একবারও রুমে আসে নি। নিজের ওপর রাগ লাগছে অনিকের! এই অবস্থায় তাঁকে এতটা বকাবকি করা একদমই উচিৎ হয় নি! তাও আবার আরিয়ার সামনে! হ্যাঁ খানিকটা বোকামি হয়ত সে করে ফেলেছে কিন্তু তাই বলে এতটা ধমকানোটা না ঠিক হয় নি। ধমক খেয়েই কান্না করে দিয়েছিলো, তবুও যে কেন রাগ সামলাতে পারলো না অনিক! আজকে নিশ্চয়ই আর ঘরে আসবে না রুমু!


রাত আটটা! খাটের ওপর বসে আছে আরিয়া। তাঁর হাতে বই। কালকে পরীক্ষা। কিন্তু পড়ায় একফোঁটাও মন বসছে না। রুমুর জন্য খুব খারাপ লাগছে। বেচারি বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে।

অনিক দরজার বাইরে থেকে টোকা দিলো। তাঁকে দেখে বই রেখে সোজা হয়ে বসলো আরিয়া। ভয়ে ভয়ে তাঁর দিকে চাইলো! অনিক কি এখন আবার ধমকাবে? ভয়ে বুকের ভেতর আবার দুপদাপ শুরু হয়ে গেলো। তাকে অবাক করে দিয়ে অনিক লাজুক হেসে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, রুমু তাঁর ঘরে আছে কি না!

ভাইয়ের এমন লাজুক, ভীত চেহারা দেখে আরিয়া বেশ অবাক হলেও হজম করে নিলো। নিঃশব্দে বারান্দার দিকে দেখিয়ে দিলো সে।

এবার অনিক ইচ্ছে করেই রুমুকে শোনানোর জন্য গলা চড়িয়ে বললো,’আসিফ ইকবালের মেয়েটা কি তোমার ঘরে আছে আরিয়া? তাঁকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না!’

আরিয়া হেসে ফেললো। মুচকি হেসে বললো,’আছে।’

অনিক ভেতরে ঢুকে বারান্দায় যেতেই দেখলো মেঝেতে চুপচাপ বসে আছে রুমু। হাটুমুড়ে তাঁর পাশে বসে পড়লো সে। অনিক জানে ছোঁয়া মাত্রই কারেন্টে খাবে সে! তাই হাত না লাগিয়েই ভয়ে ভয়ে বললো,’মেঝেতে বসে আছো, ঠান্ডা লেগে যাবে না?’

রুমু জবাব দিলো না। যেন শুনতেই পায় নি! এবার অনিক সাহস করে তার একটা হাত ধরতে নিলো, সঙ্গে সঙ্গেই রুমু ঝাড়া মেরে বললো,’ছোটলোক! ধরবে না তুমি আমাকে!’
রাগে রুমুর মুখটা গোল হয়ে আছে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে একেবারে গোলুমলু হয়ে গেছেভসে! খুব কিউট লাগছে।অনিক মুচকি হাসলো।

অনিক কখনো ভাবতেই পারে নি তার মত ছন্নছাড়া মানুষেরও একদিন বউয়ের রাগ ভাঙ্গানোর প্রয়োজন পড়বে! বড়ই বিচিত্র এই মানবজীবন কিন্তু তার চেয়ে বেশি বিচিত্র হলো নারীজাতি আর তাদের প্রেম! আলেকজান্ডারের মত অনিকেরও বলতে ইচ্ছে করছে,’সত্যিই সেলুকাস! কি বিচিত্র এই প্রেম!’ নতুবা দোষ করবে এক সর্বনাশীনি আর ক্ষমা চাইতে হবে প্রেমিকের। হায় কপাল! ধৈর্যহারা অনিক মানভাঙ্গানোর প্রাথমিক পর্যায় গুলো সববাদ দিয়ে একেবারে রুমুর গালে চুমু খেয়ে বললো,’ রুমে চলো। কতবার তোমাকে বলেছি, তুমি রুমে না থাকলে আমার ভালোলাগে না! তবুও এখানে এসে বসে আছো!’

রুমু সঙ্গে সঙ্গেই গাল মুছে ফেললো! মুখ ভেংচি কেটে বললো,’আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে এখন ভালোবাসা দেখাতে এসেছো। আমার কোন মানসম্মান নেই?’

-‘কে বলেছে তোমার মানসম্মান নেই? আসিফ ইকবাল সাহেবের একমাত্র আদরের মেয়ে তুমি? তোমার মানসম্মান থাকবে না তো কার থাকবে? আগে ঘরে চলো তারপর কানে ধরে উঠবস করবো আমি!’

রুমুর খুব হাসি পাচ্ছে ! হাসি ঠেকাতে মুখ লুকিয়ে নিলো সে! বরফ একটু একটু করে গলছে বুঝতে পেরে অনিক দুষ্টুহেসে তাঁর মুখভঙ্গি অনুকরণ করে বললো,’আজকে বললে না যে, ছোটলোক! কোন সাহসে তুমি আমার বাবা নাম ধরে ডেকেছো?’

এখানে আর কিছুক্ষন বসে থাকলে রুমু হাসি চেপে রাখতে পারবে না। খুব শীঘ্রই হেসে ফেলবে সে। কিন্তু এতসহজে অনিককে মাফ করতে চায় না সে! তাই বারান্দা থেকে উঠে সোজা আরিয়ার পাশে গিয়ে বসে পড়লো। অনিকও পেছন পেছন গেলো। বোনের সামনেই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে বললো,’ঘরে চলো রুমু!’.

-‘না যাবো না।’

এভাবে কাজ হবে না বুঝতে পেরে অনিক মুচকি হেসে আরিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,’তুমি একটু চোখবন্ধ করো তো আরিয়া! আমি তোমার ভাবির রাগ ভাঙ্গাবো!’
আরিয়া হেসে ফেললো। রুমু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো, রাগের ভান করতে গিয়েও হেসে ফেললো সে।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here