#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৭
চেয়ারম্যান বাড়ির বড় দোয়াড়ে মানুষের আনাগোনা,,তপ্ত রোদের মধ্যে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।দোয়াড়ে মোট আটটি চেয়ার পাতানো হয়েছে।চেয়ারম্যান সাহেব একটা চেয়ারে বসে আছেন,তার পাশেই মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটা গার্ড।সামনে অনেক মানুষ আছে,কত কত মহিলারা মুখে কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,সবাই আগ্রহ নিয়ে আছে চেয়ারম্যান সাহেব কি উক্তি দেন।পাশেই তিনটে চেয়ারে তিনজন লোক বসে আছে,যাদেকে কেন্দ্র করেই আজকের এই বিচার বসবে।
পুতুলের বাবা চোখ উঁচিয়ে একবার সবার দিকে চোখ ঘুড়িয়ে নিলেন।তারপর হালকা কেশে সামনে বসে থাকা তিন জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-হুম তো বলো তোমাদের কি সমস্যা!
সামনের চেয়ার থেকে একটা মহিলা পাশেই বসা তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-চাচা এইযে এই জা’নো’য়া’র’টা আমার জীবনটা নষ্ট করেছে তো করেছেই এখন আবার আমার বোনের দিকে নজর দিয়েছে,,
পাশ থেকে ওই লোকটা হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,
-না চাচা আমি আশাকে বিয়ে করেছি,আমাদের মধ্যে কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই,যেখানে আমি বলছি তাদের দু বোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো সেখানে ওর কথা বলার কোনো প্রশ্নই আসেনা।আর আশাও আমাকে খুব ভালোবাসে।
দুজনের কথা শুনে,পুতুলের বাবা মাটির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
-যদি তুমি আশাকেই ভালোবেসে থাকো তাহলে তার বড় বোন সম্পাকে কেনো বিয়ে করলে?
-চাচা আমার আব্বা আম্মা আমাকে সম্পার সাথে বিয়ে দিয়েছিলো,তখন আমি আশাকে চিনতামনা।আমাদের বিয়ের পর আশা প্রায় সময় আমাদের বাসায় থাকতো।তখন আস্তে আস্তে আমাদের ভাব ভালোবাসা হয়।তারপর আমরা বিয়ে করি,
শেষের কথাটুকু মাথানিচু করে বলে,সম্পা কিছু বলার জন্য উদ্যোগ হতেই চেয়ারম্যান হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে আশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
-তুমি তো জানতে যে সে তোমার বড় বোনের বর,তাও কিভাবে তুমি এই সম্পর্কে আগালে?কি করে তোমার বোনের সংসার নষ্ট করলে?
প্রতিউত্তরে আশা কিছু বলে না,মাথা নিচু করেই হাত ডলতে থাকে।ওভাবেই অনেক্ক্ষণ কথা বার্তা বলার পর তাদের বিচার শেষ হয়।
সবাই আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে,পুতুলের বাবাও বাড়িতে যাওয়ার জন্য চেয়ার থেকে উঠতে যাবে তখন আতোয়ার মোল্লা নিজের চেয়ার থেকে উঠে তার পাশে গিয়ে বসে,মাথার ছাতাটা বন্ধ করে হাতে নিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দেয়।পুতুকের বাবা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।আতোয়ার মোল্লা মুখে সেই হাসি বজায় রেখে বলে,,
-চেয়ারম্যান সাহেব আমি আপনেরে অনেকদিন ধইরা খুজতাছি কিন্তু আপনি বাড়ি থাহেন না,ব্যস্ত মানুষ তো তাই।আচ্ছা যাই হোক দেহেন আমি জানি ওই ইয়াসিন তার ফটকা পোলা ইমনের লোগে আপনের সোনার টুকরা মেয়ার বিয়া দিতে চায়,,এহন হেরা তো ভালো না তাই আপনেরা না কইরা দিছেন।তয় যাই হোক এহন আসল কোথায় আসি,আমার ছোট পোলারে চিনেন না?ওইযে আনোয়ার!কিছু মনে না করলে আমার ছোট পোলার আর আপনার মাইয়ার হাত এক কইরা দিতে চাই চেয়ারম্যান সাহেব।আপনি টেনসন কইরেন না,মাইয়া আপনার রানীর হালে থাকপো।সব কাম আমার ওই বড় পোলার বউই করবো।
হাত নারিয়ে নারিয়ে কথা গুলো বলল আতোয়ার মোল্লা।পুতুলের বাবা তার সবটুকু কথা মন দিয়ে শুনলেন,তিনি জানতেন এই কথাটা বলার জন্যই এতোদিন ধরে উসখুস করছিলেন আতোয়ার মোল্লা ।পুতুলের বাবা হালকা মুচকি হেসে বলা শুরু করলেন,
-দেখেন আতোয়ার মোল্লা,আমি জানি আপনারা খুব ভালো মানুষ!আপনার ছোট ছেলেকেও আমি চিনি সেও খুব ভালো,তবে আসল কথা হচ্ছে কি আমার মেয়ে এখনো ছোট! সবে মাত্র স্কুলে পড়ে।আর আমি চাইনা এতো ছোট বয়সে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে,আর আপনার ছেলে আর আমার মেয়ের বয়সেরও পার্থক্য অনেক।আপাতত এই বিষয় নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না,আশা করি বুঝতে পেরেছেন।এইবার আমি আসি।
কথাটা বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে বাড়ির ভেতর চলে আসেন তিনি।চেয়ারে বসা আতোয়ার মোল্লাও বুঝতে পারলো কিছুতেই তার মেয়েকে এখানে বিয়ে দিবে না,কিন্তু সে তো হাফ ছাড়ার ব্যক্তি নন!যে করেই হোক এই মেয়েকে তার বাড়ির বউ করে আনবেন এবং এ বাড়ি অর্ধেরক সম্পত্তির তাদের নামে হবে।
___________
বাইরে প্রচন্ড রোদ দিয়ে মানুষকে ক্লান্ত করলেও এতো গাছগাছালির মধ্যে যেনো সূর্য মামা হেরে গেছে এই ঘরে সূর্যের তাপ দেওয়ায়,এই ছায়া দিয়েই ঢেকে আছে বাড়ির অর্ধেকটা
জানলার সামনেই বসে আছে পুতুল!বড় বড় গাছের জন্য আকাশের এই গরম সূর্যর তাপটা তার ঘরে পৌছাতে পারছে না।হাতে তার সেই চিরকুটটা,স্পষ্ট হাতের লেখায়া লেখা তিনটি লাইন বার বার পড়ছে সে,যেখানে ছোট ছোট করে খুব সুন্দর করে লেখা
“কালো গোলাপ পেয়ে এতো খুশি হয়ো না,এটা আমার গাছের না।
এই গাছের ফুল নেওয়ার অধিকার কোনো সাধারণ মানুষের নেই।
একদিক পবিত্র ফুলের কাছে আমি এই পুরো গাছটাই তুলে দিবো।”
পুতুল চিরকুটের সারমর্মটা পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও কিছুটা বুঝতে পেরেছে।’এখানে পবিত্র ফুল মানে কি উনি ওনার অর্ধাঙ্গিনীকে বুজিয়েছে?হতেও পারে,কিন্তু কি এমন জিনিস আছে এই গাছে যে যাকে তাকে দেওয়া যাবে না?আর উনি কি আমাকে সরাসরি অপমান করলো!থাক লাগবে ওনার গাছের ফুল আমার।দিক উনি উনার পবিত্র ফুলকে,আমার কি?আর কখনো ওনার সামনে যাবো না আমি।কোনোদিনো ওই ফুলের দিকে নজর তো দূর ভাববোও না।
সন্ধ্যার দিকে পুতুল রান্না ঘরে কেক বানাচ্ছিলো,ইচ্ছে ছিলো ভাইয়া ভাবির বিবাহ বার্ষিকীতে ছোট খাটো একটা অনুষ্ঠান করার।কিন্তু হঠাৎ ভাইয়ার এই অবস্থার কারনে,সব ইচ্ছে ভেস্তে যায়।আপাতত ভাইয়া একটু ঠিক আছে তাই,ভাবির হাজার মানার পরেও রান্না ঘরে এসে কেক বানাচ্ছে সে,পাশেই মা বিরিয়ানি রান্না করছে।ভাবিকে আজকে আর রান্না ঘরে আসতে দেওয়া হয় নি।স্নিগ্ধা একটু পর পর এসে দেখে যাচ্ছে কে কি করছে।কেকের পেস্ট তৈরি করে ওভেনে রেখে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হয় পুতুল।ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে বাবা আস্তে আস্তে করে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকছে মুখে কেমন মলিনতার ছায়া,কিছুক্ষণ আগেই বাহিরে গিয়েছিলো একটু হাটাহাটি করতে,তখন তো বেশ ফুরফুরে মেজাজ ছিলো এখন আবার কি হলো?হয়তো এতক্ষণ হাটাহাটি করে খুব ক্লান্ত।
পুতুলের বাবা সোফায় বসতে বসতে পুতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-মা এক গ্লাস পানি দে তো,
পুতুল কিছু না বলে পেছন ঘুরে দৌড়ে পানি আনতে যায়,এক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই আবার দৌড়ে বাবার কাছে এসে বলে,
-বাবা শরবত এনে দিবো, দুপুরে ভাইয়ার জন্য বানিয়েছিলাম।
-দে,,
পুতুল আবার দৌড়ে গিয়ে গ্লাসে শরবত এনে বাবাকে দেয়।পুতুলের বাবা এক নিশ্বাসে সবটুকু শরবত খেয়ে পুতুলের হাতে গ্লাসটা দেয়।পুতুল গ্লাসটা হাতে নিয়ে বাবাকে বলে,
-কি হয়েছে বাবা তোমার মুখটা এরকম ভার হয়ে আছে কেনো?
পুতুলের বাবা একবার চোখ তুলে তার মেয়ের দিকে তাকায়।’আর কেও বুঝুক আর না বুঝুক তার মনের খবর ঠিকি তার মেয়ে ধরে ফেলতে পারে,কিন্তু এখন তাকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না’,তাই কথা কাটানোর জন্য বলে,
-নারে মা কিছু হয় নি এমনি খুব ক্লান্ত লাগছিলো এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে,,তোর মা কই?
-আম্মু তো রান্না করছে ডেকে দিবো?
-না থাক লাগবে না,আমি বরং ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেই।
-আচ্ছা!
রাতে তারা সবাই মিলে কেক কাটে,খুব আনন্দ করে।সবাই খাবার খেয়ে যার যার মতো শুতে যাবে,তখব পুতুলের বাবা সবাইকে একটু থেকে যেতে বলে,,সবাই গোল হয়ে সোফায় বসে,স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে পড়েছে,তাই তাকে ঘরে রেখে আসে শ্রেয়া।প্রণয় বলে,
-কি হয়েছে বাবা সবাইকে এমন জরুরি তলব দিয়ে ডেকে আনলে কেনো?কিছু কি হয়েছে?
পুতুলের বাবা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করে,,
-বিকেলে যখন আমি হাটতে বের হই তখন মাঝ রাস্তায় ইয়াসিন আর তার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিলো আমার।আমি কোনো কথা না বলে চলে আসতে যাচ্ছিলাম তখন ইয়াসিন আমার পথ আটকে ধরে বলে, ইমনের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে না দিলে আমাদের নিউ প্রজেক্টটা নষ্ট করে দিবে,তোকে তো ওই ইমনের চ্যালাপেলারাই মেরেছে,আরো অনেক ধরনের হুমকি দেয়,কিন্তু আমি এগুলো মাথায় না নিয়ে হেসে উড়িয়ে দেই,কিন্তু ওরা পুতুলের ক্ষতি করবে এটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।আমি মরে গেলেও ওই জা’নো’য়া’রের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিবো না।তাও আমি আমার মেয়ের জীবন নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না,সামনে ইলেকশন।সব দিক বুঝেই তারা আমাদের এই সময়ে এট্যাক্ট করেছে।এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না,তাই ভেবেছি কয়দিনের জন্য পুতুলকে কোথাও পাঠিয়ে দিবো।
বাবার কথা গুলো শুনে প্রণয়ের মাথায় র’ক্ত চরে বসে,চোখ লাল হয়ে যায়।বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়,হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
-ওই কু’ত্তা’র বা’চ্চা’দের মাংস যদি আমি রাস্তার কু’কু’রদে না খাইয়েছি তাহলে আমার নামো প্রণয় নয়।কি ভেবেছে তারা আমার বোনকে দিয়ে তারা পুতুল খে’লা খেলবে আর আমি তাদের ছেড়ে দিবো?আর কেনো বাবা ওদের জন্য আমি আমার বোনকে কেনো অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিব কেনো?
পুতুলের বাবা প্রণয়কে শান্ত করানোর জন্য বলে,
-দেখ বাবা সবার আগে আমার মেয়ে!পুতুলকে এখানে রেখে আমাদের কিছু করাই সম্ভব হবে না,যা করতে হবে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।আর পুতুলকে সেইফ যায়গায় রেখেই করতে হবে,নাহলে ওরা বার বার আমাদের দুর্বল যায়গায় আ’ঘা’ত করবে।
পুতুল এতক্ষণ সব শুনছিলো,’বাবা ভাইদের কথা শুনে সে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।এতোদিন সে শুধু জানতো ইমন তাকে পছন্দ করে,কিন্তু তার পেছনে যে বাবাদের এতো থ্রেট দিয়েছে এতো ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে তা সে কল্পনায়ো ভাবতে পারে নি।তার জন্য তার পরিবার এতো বড় ঝুকিতে আছে আর সে কিনা চিল মুডে আছে।’একদম স্তব্ধ হয়ে যায় পুতুল।
প্রণয় আবার সোফায় বসে বাবাকে বলে,
-এখন কি করবে তুমি?পুতুলকে কে সেইফ রাখবে?
-এখন তো আর তাকে বিদেশ পাঠানো সম্ভব না,আমার মতে পুতুলের থাকার মতো একমাত্র সেইফ যায়গা হলো এমপিদের বাড়ি!তাদেএ বাড়ির সবাই খুব ভালো আর পুতুলকে আদর করে,আমার মনে হয় না ও বাড়িতে থাকলে পুতুলের কোনো বিপদ হতে পারে,,আমি ফায়াজকে সব খুলে বলেছি সেই আমাকে এই কথাটা বলেছে।
এতক্ষণ চুপ থাকলেও এমপিদের বাড়ির ক্থা শুনে এইবার মুখ খুলে পুতুল।
-কেনো বাবা জানা নেই চেনা নেই আমি কেনো একজনের বাড়িতে গিয়ে থাকবো?
-দেখ মা তুই যদি জানা শোনার দিকে যাস তাহলে ন্বিসন্দেহে ও বাড়ি তোর জন্য সেইফ।আর সব তোর তোর সেইফটি জন্যই করছি মা,আগে যদি জানতাম আমাদের একটা ভুল ডিসিশনের জন্য তোর এতো বোর ক্ষতি হবে তাহলে আমি কখনোই এই পদটা বেছে নিতাম না।
পুতুল আর কিছু বলে না,কেনো যেনো সব অচেনা লাগছে মুহুর্তেই তার বুকে ভয়ের ঢেউ খেলে যাচ্ছে,না জানি এই সুন্দরময় জীবনে কি ঝড় আসে।
চলবে..!#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৮
কয়দিন ধরে কি হলো কে জানে।মনটা সারাক্ষণ খারাপ থাকে,একদম যেনো কালো মেঘে ঢাকা।লাষ্ট কবে যে মন খুলে নিশ্চিন্তে হেসেছে তা খেয়াল নেই তার।হুদা হুদাই এতো মন খারাপ কই থেকে ঘীরে ধরে তা সব অজানা তার,কিন্তু আজকে যেনো একটু বেশিই মন খারাপ।নিজেকে আজ খুব দোষারোপ করতে মন চাচ্ছে,শুধু মাত্র আমার জন্য এতোদিন আমার বাবা ভাইরা এতো লড়াই করে যাচ্ছে আর সে কিনা আমি জানিনা?
পালঙ্কে দুই হাটুর উপর থুতনি দিয়ে নীরব হয়ে বসে আছে পুতুল!হাত দিয়ে বিছানার চাদরে আঁকিবুঁকি করছে,পাশেই পুতুলের কাপড় ভাজ করে ব্যাগে রাখছে শ্রেয়া।আজ সেও নীরব তারো খুব মন খারাপ।যে ননদীর জন্য বাবার বাড়ি গিয়ে দু দন্ড থাকা যেতো না ভায়ের আগে সে বেশি পাগল হয়ে যেতো তাকে বাড়ি আনার জন্য।তাকেই আজ কোনো অচেনা বাড়িতে রেখে আসতে হবে!যার সাথে খুনশুটি একদম বন্ধুর মতো আচরণ করে সারাদিন পাড় করতো,তাকে ছাড়া থাকতে হবে কত দিন।সবই ছিলো পরিস্থিতির শিকার,
-আমাকে আগে কিছু বললে না কেনো ভাবিপু?
আকস্মিক কথায় মাথা ঘুড়িয়ে পুতুলের দিকে তাকায় শ্রেয়া,তার প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারে না সে।মুচকি হেসে পুতুলের দু হাত ধরে বলে,
-সত্যি কথা বলতে আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না।যেদিন তোর জ্বর হয়েছিলো সেদিনকে রাত্রে তোর ভাই আমাকে বলেছিলো।জানিনা এরকম অচেনা যায়গায় গিয়ে তুই কিভাবে থাকবি তবে একদিনের পরিচয় হয়ে আমি যা বুঝলাম ও বাড়ির মানুষ গুলো সত্যি খুব ভালো আর যাই হোক তোর দায়িত্ব নিয়ে কোনো হেলাফেলা করবে না।ভালো থাকিস বনু,আমরা সকলেই তোকে খুব মিস করবো কয়দিন পর দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে আমরা আবার আগের মতো একসাথে থাকতে পারবো।
পুতুল আর কিছু বলে না,,’পড়ে যা হবে দেখা যাবে।বাবা আমার জন্য এতোদিন এতো বিপদের উপর দিয়ে গিয়েছে আর আমি কিনা এতটুকু করতে পারবো না?’
সোফায় বসে বসে প্রণয়ের সাথে কথা বলছে সামির!সামনে পুতুলের বাবাও আছে,,তার হাতে ধোঁয়া উঠানো দুধ চা।পুতুলের বাবা চিন্তিত স্বরে সামিরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
-দেখো সামির বাবা,আমার মেয়েটা খুব ছোট!গ্রামের প্রায় অনেকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ওকে কিন্তু আমি দেয় নি।ইমনকে হয়তো তুমি চিনো না তবে ও খুব ডেঞ্জারাস লোক ইমন হয়তো আমার মেয়েকে ভালো বাসে কিন্তু তার বাবা ইয়াসমিন শুধু মাত্র আমার সম্পত্তির জন্য এইসব করছে,যখন আমার বাবা এই চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তখন থেকেই ইয়াসিন অনেক ফাঁদ পেতেছে আমাদের ক্ষতি করার জন্য।তারা জানে আমাদের দুর্বল যায়গায় হলো পুতুল,তাই পুতুলকে ব্যবহার করে তারা সব হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে।আর কোন বাবা মা চায় যেনে শুনে খারাপ ছেলের সাথে বিয়ে দিতে?তাই এই কিছুদিন আমি আমার মেয়েকে তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি দোয়া করে তোমরা আমার মেয়েকে আগলে রেখো।তার কিছু হলে বা ব্যথা পেলে সে কাউকে বলতে চায় না,আশা করি তোমরা সব দিক সামলে নিবে।আমি সারাজীবন তোমাদের কাছে ঋণী থাকবো বাবা।
পুতুলের বাবার লম্বা বক্তব্য শুনে,সামির নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো ‘তার মানে এই সেই ইমন যার জন্য তাকে ইমনের চামচা বলেছিলো’
-না না আঙ্কেল আপনি একদমি চিন্তা করবেন না,আমাদের বাসায় গিয়ে আপনার মেয়ের কোনো অসুবিধা হবে না,সম্পুর্ন গার্ড দিয়ে তাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবো।আর আপনাদের ব্যপারে আমিও সাহায্য করবো।সামনে তো ইলেকশন আপনি বেশি টেনশন নিয়েন না,সবটা আমি আর প্রণয় সামলে নিবো।
সামিরের কথা শুনে প্রণয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে,
-হ্যা বাবা তুমি কোনো চিন্তা করো না, সামনে যা হবে ভালোর জন্যই হবে। আর সামির তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না,আজ তুমি আর তোমার পরিবার না থাকলে যে আমার বোনটার কি হতো,থ্যাং গড!
-আরে না না,তোমার বোন মানেই তো আমার বোন তার সকল প্রটেকশনের দায়িত্ব আমার?একটা আঁচ ও লাগতে দিবো না তার গায়ে,নিশ্চিত থাকো।
সামিরের কথায় প্রণয় মুচকি হাসে,সামির বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাত ঘরির দিকে তাকিয়ে বলে,
-আঙ্কেল এইবার পুতুলকে আসতে বলেন আমাদের বেড়ুতে হবে।
একটু পর শ্রেয়ার হাত ধরে পুতুল ঘর থেকে বের হয়,একবারো চোখ তুলে কারো দিকে তাকায় না।কেউ আর কথা বলার ভাষা খুজে পায় না,যাওয়ার সময় সামির প্রণয়ের কাধে হাত দিয়ে চিন্তা না করতে বলে।পুতুল গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়,একটা গার্ড দৌড়ে আসে গাড়ির দরজা খোলার জন্য, কিন্তু তার আগেই সামির ডোর খুলে দেয়।পুতুল বিনা বাক্যে গাড়িতে গিয়ে বসে,গাড়ি স্টার্ট করার আগে শুধু একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।স্নিগ্ধা তো হা করে তাকিয়ে আছে শুধু সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার ফুপি কথায় যাচ্ছে।পুতুল তার পানিতে টুইটুম্বর হওয়া চোখ নামিয়ে নেয়,
ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়।একটানে একদম বাড়ির মেইন গেইট থেকে অনেকটা দূরে চলে যায়,মাথা ঘুড়িয়ে একবার পেছনের কাচ দিয়ে দেখে নেয় তাদের বাড়ি,আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। ‘জানা নেই আবার কবে ফিরবে এই বাড়ি’
সামিরদের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই পুতুলের মা হু হু করে কেঁদে দেয়।শ্রেয়া মায়ের কাধে হাত রেখে শান্তনা দেয়,,বাবার কোলে থাকা স্নিগ্ধা হঠাৎ বলে উঠে,
-মা মা নানু,ফুপির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?ফুপি কি ওই সামির আঙ্কেল বাড়ি গিয়েছে?সামির আঙ্কেল কি আমার ফুপা হয়ে গিয়েছে?
স্নিগ্ধার কথায় সবাই তার দিকে তাকায়,শ্রেয়া ধমকের স্বরে বলে,
-তোকে কে বলেছে তোর ফুপির বিয়ে হয়েছে?
-না আমি তো জানি যাদের বিয়ে হয় তারা বাবা মাকে ছেড়ে বরের সাথে শশুর বাড়ি চলে যায়,ফুপিও তো নানা নানু কে ছেড়ে তার শশুর বাড়ি চলে গেলো।
-চুপ কর বেয়াদপ এইসব নিয়ে আর কোনো কথা বলবিনা,কেও জিজ্ঞেস করলে বলবি জানিনা!
স্নিগ্ধা শুধু মাথায় নাড়ায়,সবাই আবার বাড়ির ভেতরে চলে যায়,,
_______
চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে এমপিদের বাড়ি আসতে বেশি একটা সময় লাগে না,গ্রামের পাকা রাস্তা ছেড়ে হালকা উন্নত রাস্তার আসলেই এমপিদের বাড়ি।কিন্তু আশ্চর্য জনক ব্যপার হচ্ছে,ড্রাইভার বাড়ির মেইন গেইট দিয়ে না ঢুকে ঘুড়ে বাগান গেইটে এসে গাড়ি থামায় এতে সামনে বসা সামিরেরও কোনো হেলদোল দেখা যায় না।গেইটের সামনে আসতেই সামির চট করে গাড়ি থেকে নেমে পুতুলের সামনের দরজা খুলে দেয়।পুতুল চোখ উচিয়ে সামিরের দিকে তাকায়,সামির বলে “নামো” পুতুল আর কিছু বলে না সোজা হয়ে নেমে যায়,পুতুল রাস্তায় পা রাখার আগেই সামির পুতুলের হাত ধরে সামিনে নিয়ে যেতে থাকে,,পুতুল চোখে বড় বড় করে একবার সামিরের দিকে আরেকবার তার ধরা হাতের দিকে তাকায়।
সামির পুতুলকে কালো গোলাপ গাছের পাশ দিয়ে ঘেঁষে নিয়ে যায়।পুতুল শুধু দেখেই যায় কিছু বলে না,,বাড়ির ভেতরে যেতেই সামির পুতুলের হাত ছেড়ে দেয়।সামিয়া পুতুলকে ধরে কাছে নিয়ে বলে,,
-এইতো এসেছে আমার মা,কতক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করেছি তুই জানিস!আজ থেকে আমার আর একা একা লাগবে না,আয় মা বস এখানে,, নার্ভাস হস না।
পুতুল কিছু বলে না,শুধু মুচকি হাসে।সামির মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
-মা আসতে না আসতেই এতো প্রশ্ন করছো কেনো?চলে তো যাচ্ছে না!যাও ওকে ওর ঘর দেখিয়ে দাও ফ্রেশ হলে নাস্তা দিও।
বলেই সামির উপরে চলে গেলো,সামিয়া মুচকি হেসে পুতুলের কপালে একটা চুমু একে দেয়।পুতুলের হাত ধরে উপরে নিয়ে গিয়ে একটা ঘরে নিয়ে যায়,,পুতুলকে ওয়াশরুমে রেখে সামিয়া নিচে নাস্তা তৈরি করতে যায়।পুতুল ওয়াশরুম থেকে মুখ মছতে মুছতে বের হয়,একবার পুরো ঘরটা চোখ বুলিয়ে নেয়,সব একদম পরিপাটি পরিস্কার!হয়তো তার জন্য এই ঘরটা পরিস্কার করা হয়েছে,,পাশে একটা বারান্দাও রয়েছে।
পুতুল একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেলকনিতে যায়,এখান থেকে বাগান দেখা গেলেও ওই কালো গোলাপের গাছটা দেখে যায় না।পুতুল হতাশ হয়ে ঘরে চলে যায়
চলবে…!
(আজকের লেখাটা খুব অগোছালো হয়েছে,জানিনা কেনো!আশা করি পরের পর্বে ভালো কিছু পাবেন,কিছু সময় লাগবে।গল্পের সম্পর্কে ভালো খারাপ দু লাইন লিখে যাবেন।ধন্যবাদ!)