#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৫
আলিজা দরজার সামনে যেতেই দেখে আরসাল বেরিয়ে যাচ্ছে, আরসালকে ডাকলে আরসাল পিছনে না তাকিয়ে সোজা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আলিজা কি করবে বুঝতে না পেরে নিজের রুমেই প্রবেশ করে। ভেতরে গিয়ে দেখে তিথি এখনও রুমে উপস্থিত।
এরপর প্রায় দশ মিনিট কেটে যায়, কারও তেমন চিৎকার বা কথা শোনা যাচ্ছে না দেখে নওরীন চলে আসে। কিন্তু রুমে ঢুকে যা দেখে তাতে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায় সাথে সাথে আম্মি’ বলে চিৎকার দেয়।
নওরীনের ডাক শুনে মি. নেওয়াজ এবং মোহনা দৌঁড়ে আসেন। রুমে এসে দেখেন আলিজা মাথা ধরে মেঝেতে বসে আছে , হাত র*’ক্তে লাল হয়ে আছে নিচে ফুলদানি পরে আছে। তিথি সেখানে নেই। তাহলে কি তিথি আলিজাকে এভাবে আ*ঘাত করে চলে গিয়েছে! মিসেস মোহনা তাড়াতাড়ি এসে নওরীন আর উনি আলিজাকে টেনে তুলে বিছানায় বসিয়ে দেন। অনেক র*’ক্ত ঝরেছে দেখে বোঝা যাচ্ছে। মি. নেওয়াজ এগিয়ে এলেন তাদের দিকে।
” ওই মেয়েটা এরকম করল? কোথায় গেল সে?
” ইশ কত র*ক্ত ঝরছে মেয়েটার তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে চলো ওকে।(মোহনা)
” পাগল হয়েছো নাকি, আলিজাকে এভাবে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওর এরকম কিভাবে হলো!
” তাহলে কি করবে? এভাবে তো রাখা যায় না তাই না?
” আমি আমাদের ডাক্তারকে কল দিচ্ছি সে আসবে। তোমরা রুমে থাকো আমি আসছি। নওরীন আরসালকে কল দাও ওকে বাসায় আসতে বলো। সে রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে চলে গিয়েছে আর কষ্ট পেতে হচ্ছে এই মেয়েটাকে। আলিজা মা একটু কষ্ট সহ্য করো ডাক্তারকে আসতে বলছি, এক্ষুনি চলে আসবে।
” ঠিক আছে বাবা।
” এই তো সোনা মা, থাকো। তুমি একটু সুস্থ হলে আমি কথা বলব এসে।
” ঠিক আছে।
*******
ডাক্তার এসে আলিজাকে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে যায় আর কপালে ব্যান্ডেজ দিয়ে যায়। মি. নেওয়াজ কিছুক্ষণ আলিজার সাথে কথা বলে চলে যায়।
ডাক্তার চলে গেলে সবাই নিজেদের রুমে চলে যায় তখন আরসাল আলিজার পাশে এসে বসে।। সে এতক্ষণ রুমেই ছিল, নওরীন ফোন দিয়ে আসতে বলায় সাথে সাথে চলে আসে। বাসায় এসে নিজের রুমে এসে দেখে আলিজার এই অবস্থা।
” খারাপ লাগছে তোমার?
” না, এত বেশি চিন্তা করবেন না তো।
” এখন বলো তো কি হয়েছিল?
” তেমন কিছু না।
” বলতে বলেছি।
” তিথি যাওয়ার সময় ধাক্কা দিয়েছে তাই খাটের কোণায় লেগে একটু….
” মিথ্যা বলবে না একদম। সত্যিটা বলো আমাকে।
” বাদ দিন না প্লিজ।
” বলতে বলেছি।
” রাগ দেখাচ্ছেন কেন? বলব না আমি।
” আচ্ছা রাগ দেখাবো না, বলো প্লিজ।
” আপনি চলে যাওয়ার পর আমি ভেবেছি সেও চলে গিয়েছে তাই রুমে চলে আসি। কিন্তু এসে দেখি তিথি দাঁড়িয়েই আছে। আমাকে দেখা মাত্র অনেক কথা শোনানো শুরু করে দেয়। আমি কিছু বললে সে আরও ক্ষেপে যায় ওখান থেকে ফুলদানিটা নিয়ে মাথায় আ*’ঘাত করে চলে যায়।
” ওকে তো আমি দেখে নেব, পাগল দেখেছে পাগলের পাগলামি দেখে নি, এবার দেখবে।
” না আপনার আর কিছু করতে হবে না। তিথি নামের কেউ যে আছে সেটা ভুলে যান প্লিজ। আমি আর চাচ্ছি না ওকে নিয়ে আমাদের মাঝে আবার কিছু হোক।
” তুমি রেস্ট নাও।
” আপনি কি করবেন?
” এখন আর বাহিরে যাব না। রুমেই আছি।
” ঠিক আছে। তাহলে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিন।
” এখনই লাগবে?
” এখনই লাগবে মানে? প্রতিদিন লাগবে, সবসময় লাগবে।
আরসাল আর দেরি না করে আলিজাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে দেয়। আলিজা মুচকি হেসে আরসালের বুকে মাথা রাখে, আরসালও কোনো দ্বিধা ছাড়াই বুকে জড়িয়ে নেয়।
*******
এরমাঝে কেটে যায় বেশ কিছুদিন আরসাল আর আলিজার মাঝে আর কোন দূরত্ব নেই, তারা এখন বিবাহিত জীবনে সুখী। সেদিন তিথি বাসায় না আসলে হয়তো তাদের সম্পর্কটা এত জলদি ঠিক হতো না। কিন্তু সেদিন ওই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আরসাল নিজে তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিথিকে খুঁজেছে কোথাও পায় নি। বাসায় খোঁজ লাগিয়ে জানতে পেরেছে তিথির নাকি ইন্ডিয়া যাওয়ার কথা ছিল, হয়তো ওখানেই চলে গিয়েছে। এরকম সামান্য একটা ঘটনা ঘটিয়ে ওখানে চলে গিয়েছে এটা আরসালের কেমন যেন বিশ্বাস হয় নি, ওর হয়তো অন্য কোন কারণ আছে।
আরসাল রেডি হচ্ছে কলেজে যেতে হবে। আলিজা খাবার নিয়ে এসে বসে আছে। আজকে আরসালের কাজ উল্টো হয়ে গিয়েছে। অন্যদিন খাবার খেয়ে রেডি হয়ে বের হয় কিন্তু আজ সে আগেই রেডি হয়ে নিচ্ছে।
” প্রতিদিন খাওয়া দাওয়া করে রেডি হও কিন্তু আজকে খাওয়া দাওয়া রেখে আগে রেডি হওয়া শুরু কেন করলে বলো তো?
” বউ খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে, এটা দেখতে দারুণ লাগছে।
” তাই না! খাওয়া বাদ দিয়ে এসব উপভোগ করা হচ্ছে? থাকো তুমি, আমি গেলাম।
” আরে আরে রাগ কেন করছো! দাও খাইয়ে দাও।
” এখন আবার খাইয়ে দিতে হবে?
” হ্যাঁ একটু খাইয়ে দিলে কি হবে?
” কি আর হবে, নিন খেয়ে নিন।
” বউ খাইয়ে দিলে খাবারের স্বাদ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
” জানিয়ে খুব উপকার করলেন, এবার ঘড়ির দিকে দেখুন আর তাড়াতাড়ি খেয়ে নেন।
” হ্যাঁ বেরিয়ে যাব এখনই।
” অনেকদিন বের হওয়া হয় না আমার। বিকেলে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে?
” আচ্ছা তৈরি হয়ে থেকো।
” ঠিক আছে। কোন রঙের শাড়ি পরব?
” তোমার যেটা ইচ্ছে।
” আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না।
” আকাশী-নীল শাড়িটা পরবে।
” প্রথমে বলতে কি হয়!
” আচ্ছা মাফ করে দিন ম্যাম।
” জি তাড়াতাড়ি বাসায় এসো, কয়টা বাজবে?
” খুব বেশি হলে তিনটা।
” ঠিক আছে।
আরসাল খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে যায়, আজকে দেরি হয়ে গিয়েছে।
******
আরসাল কলেজে থেকে বের হয়ে কলেজের সামনে একটা ফুলের দোকানে যায়। ফুলের দোকানে গিয়ে কিছু ফুল কিনে নেয়। অনেকদিন পর তারা দুজন একসাথে আবার বের হবে। ব্যস্ততায় দুজনে বের হতে পারে না। কলেজের ক্লাস, প্রাইভেট সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত এখন সে। আর আজকে আলিজা নিজে থেকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছে, না গেলে সে ভীষণ মন খারাপ করবে। শাড়ি পরলে তাকে একটু বেশিই ভালো লাগে আর সাথে যদি খোপায় আর হাতে ফুল থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই। দোকান থেকে ফুল নিয়ে, ফুলের দাম দিয়ে পিছনে ঘুরতেই কাউকে দেখে।
” তুমি? এখানে কেন?
” আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে?
” মানে কি বলছো তুমি? কথা বলার জন্য এখানে কেন আসতে হবে তোমার? তুমি আমাকে ফলো করছিলে?
” আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেব স্যার, প্লিজ একটু আমার সাথে আসবেন? এখানে দাঁড়িয়ে আপনার সাথে কথা বলা যাবে না।
” কোথায় যেতে হবে শুনি? আর আমি তোমার স্যার হলাম কবে থেকে হ্যাঁ?
” সব বলব, আমার সাথে চলুন প্লিজ।
আরসাল তার পিছনে পিছনে চলে যায়। ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে, সে তাকে কোথায় নিয়ে যায়!
****
আলিজা শাড়ি পরে রেডি হচ্ছে এমন সময় নওরীন রুমে আসে। এসেই দেখে আলিজা শাড়ি পরে রেডি হচ্ছে। সে বিছানার ওপর গিয়ে বসে।
” কি গো, কোথায় যাবে হুম?
” ঘুরতে যাব, যাবে?
” তোমাদের জামাই বউয়ের সাথে গিয়ে আমি কি করব শুনি? তোমরাই যাও, সুন্দর করে সাজুগুজু করো।
” আমি কি অসুন্দর? এত সাজুগুজু কেন করতে হবে?
” তাও ঠিক, তুমি এমনিতেই সুন্দর।
” এখন মনে হলো?
” এখন মনে হবে কেন? কয়েকমাস ধরে তো তোমার জামাইয়ের সাথে আমিও দেখছি হিহিহি।
” হয়েছে হয়েছে এবার বলো কেমন লাগছে?
” একটা পরী চলে এসেছে আমাদের বাড়িতে।
” আচ্ছা তাই নাকি!
” জি।
” যাক ননদিনীর তো পছন্দ হলো।
” ইয়েস, তারপর তোমার জামাইয়ের তো কোন খোঁজই নেই।
” হ্যাঁ জামাইটা আসছে না কেন বলো তো! তার তো আজকে তাড়াতাড়ি আসার কথা।
” দেখো হয়তো চলে আসবে এখনই। আমি তাহলে রুমে যাই থাকো।
” ঠিক আছে যাও। তোমার কিছু লাগলে বলো বাহিরে তো যাচ্ছিই।
” উমমম আসার সময় আইসক্রিমের বড় বক্সটা নিয়ে এসো তাহলেই হবে।
” আচ্ছা পেয়ে যাবে।
” আহ, সুন্দরী বউমণিটা আমার।
নওরীন রুম থেকে যাওয়ার পরেই আরসাল ফুল হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। আলিজা বসে বসে অপেক্ষা করছিল। আরসালকে দেখেই উঠে দাঁড়ায় সে।
” এত দেরি হলো কেন?
” ভার্সিটির এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়েছিল। সে টেনে নিয়ে গিয়েছিল আড্ডা দিলাম একটু তাই দেরি হয়ে গেল। তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর বের হব।
” কোন ফ্রেন্ড?
” সে তুমি চিনবে না। থাকো আমি আসছি।
” ঠিক আছে।
আরসাল ওয়াশরুমে চলে গেলে আলিজা ভাবতে থাকে আরসাল কি তার থেকে কিছু লুকোচ্ছে? কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে দেখতে, আরসাল ঠিক আছে তো!
চলবে….
আজকে অনেক ছোট হয়েছে জানি এটাই দুদিন লেগেছে লিখতে। আমি একটু অসুস্থ, দোয়া করবেন সবাই আমার জন্য।
অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো আজকের পর্ব।