পুরোনো ডাকবাক্স পর্ব -১৭ ও শেষ

#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৭(অন্তিমপর্ব)

( আজকের পর্ব বেশি বড় হয়েছে, ২ পর্বের মতো করে দিয়েছি, মেইন ফেসবুক দিয়ে পড়বেন, লাইট দিয়ে পড়া না-ও যেতে পারে)

” বাসায় আমরা শুধু তিনটা মেয়ে থাকতে পারব? তোমার কি যেতেই হবে?

আলিজার কথা শুনে ব্যাগ গোছানো ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল আরসাল।

” বাধ্যতামূলক না হলে যেতাম না, আমাকে আরেকটা স্যারকে এই ট্যুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন আমি যদি না যাই না বলতো?

” আচ্ছা ঠিক আছে।

” আবার মন খারাপ করছো?

” না তোমার যাওয়া তো জরুরী, যাও তুমি সাবধানে থেকো।

” আচ্ছা ঠিক আছে।

আরসাল এবার ব্যাগ গোছানোতে মন দেয়। আলিজা ও পাশে থেকে সাহায্য করছিল।

” শোনো..

” হুম বলো।

” তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে।

” কি গুড নিউজ শুনি?

” না এখন বলবো না, তুমি ফিরে আসলে বলবো।

” এখন বললে কি হবে?

” তোমার যেতে ইচ্ছে করবে না।

” কি এমন খবর? যেটা শুনলে আমার যেতে ইচ্ছা করবে না!

” তুমি ফিরে এসো তখন বলব, তবে আরেকটা খবর আছে।

” সেটাও বলা যাবে না?

” হ্যাঁ বাবার জায়গা আমি পাচ্ছি।

” মানে! তুমি রাজনীতিতে পা রাখতে চাচ্ছ?

” হ্যাঁ, রাখলে ক্ষতি কি?

” তুমি দেখনি এসবের জন্য তুমি তোমার বাবাকে আর আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি?

” তুমি ভেবোনা আমি থাকবো না অন্য কেউ থাকবে কিন্তু আমার কথায় সবকিছু হবে।

” তোমার কথায় কিছু হতে হবে না।

” ভালো সুযোগ একটা পেয়েছি ঠিক হবে না।

” আমি এসে এসব নিয়ে কথা বলব।

” এসব নিয়ে আর কথা হবে না, তুমি আসার পর অন্য কিছু নিয়ে কথা হবে।

” আচ্ছা দেখা যাবে, এখন আমি আসছি আম্মিকে দেখে রেখো।

” আচ্ছা ঠিক আছে।

” তুমিও সাবধানে থেকো খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হচ্ছে।

” যাওয়ার সময় জড়িয়ে ধরবে কে?

” ধরতেই হবে?

” জি মশাই।

” এসো জড়িয়ে ধরি, আবার ধরতেই পারব কিনা!

” এমন কেন বলছো?

” বাহিরে যাচ্ছি না! কি হয় না হয় বলো তো যায় না তাই না!

” আরসাল একদম বাজে কথা বলবে না।

” আচ্ছা বাদ দাও এসো একবার জড়িয়ে ধরি।

আলিজা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আসসালকে জড়িয়ে ধরে।

******

নওরিন আজকাল কারো সাথে তেমন কথা বলে না। বাড়ির সবাই কেমন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মোহনা ও এখন একদম চুপচাপ থাকেন। উনার চুপচাপ থাকা স্বাভাবিক কিন্তু নওরিন কিছুদিন হলো একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। আলিজার সাথে ও আগের মতো ভালো সম্পর্কে নেই। আলিজাও নওরিনের রুম খোলা পায় না আবার তার আশেপাশেও দেখেনা।
আলিজা রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে অচেনা নম্বর দেখে প্রথমে রিসিভ করতে চায়না পরে কিছু একটা ভেবে কলটা রিসিভ করে।
ফোনে কথা বলার পর আর এক মিনিট দেরি না করে বাসায় কাউকে না বলেই একা বেরিয়ে যায়। আলিজাকে বেরিয়ে যেতে দেখে নওরিন টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে নিজেও বেরিয়ে যায়। বাসার সামনে আসতেই দেখে আলিজা রিকশাতে উঠলো। নওরীন ও একটা রিকশা নিয়ে উল্টো আর একটা রাস্তায় অগ্রসর হয়। রাস্তায় কাউকে ফোন করে জানিয়ে দেয় বিষয়টা।

” হ্যালো (নওরীন)

” হ্যাঁ বলো।

” কোথায় আছো তোমরা?

” তোমাকে যে জায়গার কথা বলেছিলাম ওখানেই আছি।

” আমিও রাস্তায় এখনই আসছি।

” ঠিক আছে চলে এসো।

” কাজ তো হয়ে গিয়েছে তাই না?

” হ্যাঁ সব ঠিক আছে।

” কি যে সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমাদের আলিজার জন্য, হিহিহি।

” বেচারি আজকের ধামাকা সহ্য করতে পারবে তো?

” আরে পারবে মানে, সহ্য করে নিয়ে দৌঁড়াবে।

” তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

” হ্যাঁ আসছি।

” জি ম্যাম, তুমি আসলে তখন আবার আমরা সবাই মিলে আলিজার জন্য অপেক্ষা করব।

” অবশ্যই, একটু অপেক্ষা করো আমি এসেই গিয়েছি।

” হ্যাঁ এসো।

******
আলিজা গাড়িতে থাকা অবস্থায় আবার কল আসে। সে তড়িঘড়ি করে কলটা রিসিভ করে।

” হ্যালো, আমার মামা ঠিক আছে তো? আমি প্রায় চলে এসেছি আপনার দেওয়া ঠিকানা।

” আপাতত তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। আপনাকে ঠিকানা টেক্সট করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে চলে আসুন।

” মামার সাথে একটু কথা বলা যাবে? কথা বলতে পারবে?

” দাঁড়ান, ফোন ধরিয়ে দিচ্ছি।

” হ্যাঁ একটু দিন।

ওপাশ থেকে কল কেটে দেওয়া হয়। দুই মিনিটের মধ্যে আবার কল আসে, আলিজা সাথে সাথে কল রিসিভ করে।

” হ্যালো মামা!

” হ্যাঁ রে মা, তুই কতদূর আছিস?

” এই তো মামা আমি চলে এসেছি প্রায়। তুমি চিন্তা করো না আমি এসেই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।

” ঠিক আছে।

আলিজা কল কেটে দিয়ে মেসেজ চেক করে ঠিকানা পেলে সেখানেই বাড়ির সামনে নেমে যায়। মেসেজে দ্বিতীয় তলায় যেতে বলা হয়েছে। আলিজা সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। ওপরে একটা ফ্ল্যাট শুধু, দরজার সামনে গিয়ে দেখে কলিং বেল নেই। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল দিলেই চোখ মুখ ঢাকা এক মহিলা এসে দরজা খুলে দেয়। আলিজার মামা কোনদিকে সেটা জিজ্ঞেস করলে হাতের বামসাইডের রুমটায় যেতে বলে। আলিজাও ব্যাসায় আর কাউকে না দেখে সেদিকেই চলে যায়। রুমের দরজায় নক করতেই “কাম ইন” কথাটা শুনতে পায়। কথাটা শুনেই সে চমকে যায় কারণ গলাটা তার চিরপরিচিত। তবুও সে ভেতরের দিকে অগ্রসর হয় আর ভেতরে যাদের দেখে তাদের একসাথে দেখে যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ার মতো অবস্থা। ভেতরে ঢুকতেই বাহিরের মহিলাটি এসে দরজা আটকে দিয়ে মুখের ওপর থেকে ওরনা সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসে।

” কি আ লি জা ভালো আছো? আমাকে চিনতে পেরেছো তো তাই না?

” ত তু তুই?

” কে আমি?

” আরসাল, এই মেয়ে তোমাকে কিছু বলেছে? যদি বলে থাকে তবে সব মিথ্যা কথা বলেছে। প্লিজ তুমি ওর কথায় বিশ্বাস করো না।

একপাশে চেয়ারে বসেছিল আরসাল। পাশেই নওরীনও বসে ছিল।

” তুমি কিভাবে জানলে যে সে কিছু বলেছে? কি বলতে পারে সে মিস মীরা?

” নওরীন তুমিও এখানে! আর তুমি আমাকে মীরা কেন বলছো? আমি তোমার বউমণি আলিজা।

” একদম চুপ করো আর তোমার নাটক বন্ধ করো।

” কি বলছো কি নওরীন! তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারছো!

” আমি তো শুধু কথা বলছি আর তুমি কি কি করছো বলো তো? মনে তো হচ্ছে তোমাকে আমি….

নওরীনকে জায়গা ছেড়ে উঠতে দেখে আরসাল খপ করে নওরীনের হাতটা ধরে নেয়। নওরীন আরসালের দিকে তাকালে আরসাল নওরীনকে মাথা নেড়ে এসব করতে না বলে চুপচাপ নিজের জায়গায় বসতে বলে। নওরীনও আর কথা না বাড়িয়ে পাশে গিয়ে বসে।

” আরসাল তোমার তো ট্যুরে যাওয়ার কথা ছিল তাই না? তুমি এখানে কেন বলো তো?

” তোমার কি মনে হয় তুমি একাই চালাক আর আমরা সবাই খুব বোকা?

” কি বলছো কি আরসাল?

” তো মিসেস আলিজা উফ ভুল বলে ফেললাম মিসেস আলিজা ওরফে মিস মীরা বসুন দাঁড়িয়ে কেন আছেন বলুন তো?

” আমি আলিজা, আমি মীরা নই। ও মীরা, আমি নই বিশ্বাস করো।

” বিশ্বাস এখনও করতে বলছেন? বিশ্বাস আপনাকে! কখনও না। মেয়ে হয়ে কিভাবে বাবাকে খু*’ন করতে পারেন আপনি?

” কি বলছো এসব তুমি? আমি কেন আমার বাবাকে খু*’ন করব?

” নিজের বোনকে তুরস্কে মানুষ ঠিক করে আটকে রেখে নিজে আলিজা সেজে দেশে এসেছো, বাবাকেসহ কতজনকে খু*’ন করেছো আল্লাহ জানে।

” তোমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে আরসাল, আমার বিরুদ্ধে তোমাকে উ*’স্কে দেওয়া হয়েছে।

” আলিজা আপনি গিয়ে পাশের রুম থেকে তার পেয়ারে মামাকে নিয়ে আসুন তো।

” ওকে কেন আলিজা ডাকছো, আলিজা তো আমি।

” একদম চুপ থাকুন, নিজে খু*নী নিজের নামেই খু*নী থাকুন।

” কথায় কথায় খু*’নী বলা বন্ধ করো।

আলিজা গিয়ে পাশের রুম থেকে হাত-মুখ বাধা তাদের মামাকে নিয়ে আসে। আরসাল গিয়ে সরাসরি তার মাথায় ব*’ন্দুক ঠেকায়। মীরা এবার ভয় পেয়ে যায়।

” প্লিজ এরকম করবে না, আমার মামার কিছু করবে না প্লিজ।

” আপনি বলবেন নাকি এটাকে এখানেই শেষ করে দেব?

” সব জেনেই গিয়েছো তাহলে!

” হ্যাঁ সব জেনে গিয়েছি এখন শুধু আপনার মুখে জানার অপেক্ষা।

” আমার তো তাহলে আর কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন পরলো না তাই না?

” সম্পর্ক আপনার সাথে যা ছিল সব ভুল।

” আমি তোমাকে ভালোবাসি।

” ভালোবাসা, থু।

” আরসাল!

মীরা এগিয়ে গিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে বন্ধুক বের করে নওরীনের মাথায় ধরে। পরিস্থিতি এবার অস্বাভাবিক হয়ে যায়।

আলিজা এবার মীরার দিকে নিজের বন্দুক তাক করে।

” তুই হয়তো জানিস না এই বাসা ঘিরে রাখা হয়েছে তুই কিছুতেই পালাতে পারবি না।

” আমি তো পালাবোই সাথে তোকেও শেষ করে দেব। তুই আমার পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিস।

” তুই নওরীনকে ছেড়ে দে নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

” একদম চুপচাপ থাক। কি আরসাল জানতে চেয়েছিলে না আমি কি কি করেছি? বলছি শোনো….

যখন আমরা জমজ হলাম মা বিদায় নিলো। বাবা আমাদের দুজনকে একসাথে না নিয়ে ওকে একা নিয়ে গেল। সে বড় হয়েছে আরাম আয়েসে আর আমি! আমাকে ইচ্ছে হলে কিছু দিয়েছে তাহলে দেয়নি। সব জানার পর তো মনে হয় উনি আমার মাকে যথাযথ যত্ন না করায়, ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ায় আমার মা মা*’রা গেছে। খুব কষ্টে মানুষ হতে হয়েছে আমাকে। চারপাশে সবাইকে দেখতাম ফ্যামিলির সাথে কত আনন্দ মজা করত আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। সবকিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে আমার মনটা বিষিয়ে যায়। তাই ঠিক করি সবকিছু শেষ করে দেব। প্রথমে নেওয়াজ আংকেলকে ঠিক করি তারপর তিনি সবকিছু ব্যবস্থা করে দিলে আমি তুরস্ক চলে যাই। কয়েকদিন থাকার কারণে আমি আলিজার বিষয়ে সব জানতে পারি। তারপর নেওয়াজ আঙ্কেলকে জানালে তিনি সব টাকার ব্যবস্থা করে দেন আর আমি লোক ঠিক করে আলিজাকে ওখানে আটকে রাখি। বাবাকে ফোন করে বলি আমার ওখানে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে ব্যাস বাবা তার আদরের মেয়েকে খুব ভালোবাসেন তাই আর দেরি না করে আমাকে দেশে নিয়ে আসলেন। উনাকে খু*’ন করার সবকিছু আগে থেকে প্ল্যান করা ছিল। তাই কাজটা সেরে ফেলতে বেশি বেগ পেতে হয়নি আর হ্যাঁ উনাকে খু*’ন করতে আমার এক বিন্দু কষ্টও হয়নি। তারপর সব প্ল্যান যেভাবে করা ছিল সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছিল। মাঝখান দিয়ে আপনাকে আমার ভালো লেগে যায়, কিন্তু প্রথম দু এক দিন যেতেই আমি বুঝতে পারি আপনি কাউকে ভালবাসেন। আমি সব খোঁজখবর নিয়ে সব জানতেও পারি। তারপর একটা সুন্দর দেখতে ছেলেকে তার পেছনে লাগিয়ে দেই। তাকে যেভাবে যেভাবে বলি সেও সেই ভাবেই কাজ করে। যা যা বলতে বলি সে আপনার কাছে গিয়ে সেই কথা বলে আর প্রমাণ দেখায়। আপনিও তখন ওকে ভুল বুঝতে শুরু করেন আর আমার কাছাকাছি হয়ে যান। শেষ যেদিন ওই মেয়েটা আমাদের বাসায় এসেছিল আপনি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি রুমে যাই। ওর সাথে ঝামেলাটা আমিই করি আমি ওকে ভয় দেখাই আর ওর সামনেই আমি ফুলদানি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে নেই। তারপর আপনার বাবাই ওকে গু*’ম করেছে। সব ঠিকঠাক চলছিল যখন বাবার অবস্থানের কথাটা আসলো আমি বলেছিলাম আমি সেই জায়গায় যাব কিন্তু না আপনার বাবা বললেন তিনি বসবেন সেই পজিশনে। আমার এত দিনের ইচ্ছে আমি কি করে তার হাতে ছেড়ে দেই! ব্যাস তাকেও শেষ করে দিলাম। আমার পথে যারা যারা বাধা হয়ে এসেছে সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি এতে আমার কোন আক্ষেপ নেই।

আরসাল এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিল। এই মেয়ে তার ভালোবাসাকেও শেষ করে দিয়েছে! এটা সে জানতো না যে এই মেয়েটা তিথিকেও শেষ করে দিয়েছে অথচ এতদিন ভুল বুঝে আসছিল।

” তিথী! আপনি তিথীকেও ছাড়লেন না?

” তোমাকে আমার পেতেই হতো তাই তিথীকে সরিয়ে দিতে হতো। তাকে আর কখনও পাবে না তুমি।

” আমার জীবনের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে আমি ধোঁয়াশায় হারিয়ে ফেললাম, কত বোকা আমি!

” আমি এখন বুঝতে পারছি আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি কিন্তু এতগুলোর মধ্যে একটা সত্যি হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি ওই সত্যগুলো না হয় নাই জানতে আরসাল, তাহলে আমাদের সব ঠিক থাকতো।

” সেদিন ফুল কিনতে গিয়ে সত্যিকারের আলিজাকে দেখে ভেবেছিলাম আমার ঘরের আলিজা পিছু নিয়ে চলে গিয়েছে কিন্তু কথা বলার পর বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না কেউ আমাকে এভাবে ঠকাতে পারে। ধীরে ধীরে সন্দেহ হতে থাকে আর আজ! যে মেয়ে নিজের বাবা সহ এতগুলো মানুষকে ছাড়েনি সে ভালো মানুষ হবে কিভাবে? বেচারা বিনা দোষে মেয়ের হাতে খু*’ন হলো। এতগুলো মানুষের জীবন নষ্ট করার দায়িত্ব আপনাকে নিতেই হবে মীরা!

” নিজে মা*’রা যাবো তবু অন্যের দেওয়া শা*’স্তি মাথা পেতে নেব না।

” শা*’স্তি তো আপনাকে পেতেই হবে মীরা। এত অন্যায় করার পর আপনাকে ছাড় তো আর দেওয়া যাবে না।

” আপনি এত দিকে নজর না দিলেও পারতেন, সবকিছুর একটা কারণ ছিল।

” আপনার এখনো লজ্জা করছে না তাই না?

” ভালো না বাসলে হয়তো লাগতো।

” আপনার মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না। আলিজা অফিসারকে কল দিন ভেতরে আসতে বলুন, এই মীরাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না।

” হ্যাঁ আমি কল দিচ্ছি (সত্যিকারের আলিজা)

” আমাকে মাফ করা যায় না আরসাল?

” মাপ আপনাকে? কোনদিনই না। রিভলবার আমার বোনের মাথায় না ঠেকিয়ে আমাকে মে*’রে দিন। আপনাকে আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।

” আপনাকে অনেক ভালবাসি আরসাল।

” মুখটা বন্ধ রাখুন।

” আমি তোমার সাথে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। তুমি শুধু মাথাটা ঠান্ডা করো আর প্লিজ পুলিশ ফোর্সকে বলে দাও আমাদের কিছু হয়নি প্লিজ আরসাল।

” মীরা! আর না একদম চুপ অনেক হয়ে গিয়েছে আর একটা কথাও আমি শুনতে চাইছি না।(আলিজা)

” আমি তো অপরাধী, শা*’স্তিও পাব একটু কথা বলতে দাও না প্লিজ।

” আরসাল একদম ওর কথা শুনবেন না বাহিরের দরজায় সবাই চলে এসেছে।(আলিজা)

মীরা নওরীনের মাথা থেকে রিভলভার সরিয়ে নিয়ে আরসালের দিকে এগোতে থাকে। মীরা একদম আরসালের সামনে চলে আসে, আরসালের রিভলবার এখন মীরার কপালে ঠেকানো। মিরা সেটার পরোয়া না করে আরসালের হাত ধরে। আরসাল সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়। মীরা এবার আর সময় না নিয়ে আরসালকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পার্সেল বারবার ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু ছাড়াতে পারে না। আরসাল এতক্ষণ মীরার চোখের দিকে তাকিয়ে গভীর ভালোবাসা অনুভব করছিল কিন্তু সে তো অপরাধী তার দিকে মায়াভরা চোখে তাকানোও অপরাধ।

” আরসাল সত্যিই ভালোবাসি।

” ছাড়ুন বলছি।

” প্লিজ এক মিনিট সময় দিন আমাকে, যেভাবেই হোক এই বুকটা তো আমার জন্য ছিল। আজকেই শুধু এখানে মাথা রাখব, আর কখনো তো রাখা হবে না। আপনাকে একটা খবর দেব বলেছিলাম। আমি তো আর সময় পাব না আপনাকে জানানোর তাই এখনই বলে দেই। আপনি বাবা হতে চলেছিলেন, কিন্তু আমাদের মাঝে আর কিছু ঠিক হবে না বাচ্চাটাই বা আর কিভাবে এই পৃথিবীতে আসবে বলুন! তাই আমরা দুজনই বিদায় নিলাম, আসছি!

সাথে সাথে মীরার হাত থেকে রিভলবার মেঝেতে পড়ে যায়, সে নিজেও মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। আরসাল সাথে সাথে মেঝেতে বসে মীরার মাথা নিজের কোলের ওপর নেয়।

আরসাল আর কি বলবে বুঝতে পারছিল না। মীরা মা হতে চলেছিল! এতকিছুর পরও মীরার জন্য আরসালের চোখ টলমল করছিল।

” আপনাকে ভালোবাসার প্রমাণ এর চেয়ে ভালোভাবে দিতে পারতাম না আমি। যে হৃদয়ে আপনার ভালোবাসা পৌঁছাবে না সে হৃদয়ের হৃদক্রিয়ার অধিকার নেই সচল থাকার। ”

মীরার কথা শেষ হতেই পরিবেশ নীরব হয়ে যায়। কোথাও কোন সাড়াশব্দ নেই। আরসাল কান্নাজড়ানো কণ্ঠে চিৎকার দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় মীরাকে।

~সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here