#পূর্ণতার_মাঝেও_অপূর্ণতার_ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১০
ওরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলো। অনিক অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল, -“দোস্ত তোর বোনকে না আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। ওকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিবি।”
অনুভব বলল “শুরু হলো অনিকের। ভাই তোর কি পছন্দের শেষ হবে না! যাকে দেখিস তাকেই তোর পছন্দ হয়। কি বলিস রাজিব!”
রাজিব বলল “হুম একদম ঠিক কথা বলছিস। ভালো হয়ে যা অনিক ভালো হয়ে যা।” বলেই রাজিব আর অনুভব হাসলো।
অনিক বলল “আমি কিন্তু এবার সিরিয়াস।”
অনুভব বলল “এই নিয়ে কতোবার তুই সিরিয়াস হবি।”
অভ্র ড্রাইভিং করছিলো। সে সামনের দিকে তাকিয়েই বলল “আগে শুভ্রার মনে মতো হওয়ার চেষ্টা কর। ওর যদি তোকে মনে ধরে তারপর আমি বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখবো।”
অনিক বলল “এটা কোনো ব্যাপার না। তুই খালি দেখতে থাক।”
অভ্র বলল “এতোও সহজ না চেষ্টা কর। এর আগে যারা প্রোপজ করছে ওকে তারা আর কেউ ভুলেও শুভ্রার নাম নেই না।”
আদিল বলল “কেন রে কি হয়েছিলো।” সবাই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অভ্র হেসে বলল “ওই তেমন কিছু না ওই ছেলে গুলোর মধ্যে কেউ পা নিয়ে,কেউ নাক নিয়ে,কেউ হাত নিয়ে চিন্তায় পরে গিয়েছিলো। যে তা কোনো দিন আবার স্বাভাবিক হবে নাকি।”
আদিল বলল “তোর বোন ওদের মারছে নাকি।”
অভ্র বলল “না ও নিজে মারে নি অন্যকে নিয়ে মার খাইয়েছে।”
অনিক বলল “আল্লাহ গো গুন্ডা তো তোর বোন।”
অভ্র বলল “হয় তো।”
আদিল বলল “চমলক্ক বেপার তো। শুভ্রার সঙ্গে তো ভাব জমাতেই হবে দেখছি।”
ওরা কথা বলতে বলতে গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। ওদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গিয়েছে। ওরা রিসোটে উঠলো। ওখান কিছুসময় রেস্ট নেওয়ার পরে ওরা ঘুরতে বের হলো। মাঝখানে খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়েছে ওরা। এই নিয়ে অনেকবার অনিক শুভ্রার সঙ্গে ভাব জমাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। কোনো না কোনো ভাবে হয় অনুভব না হয় আদিল না হয় সে নিজেই পিছ পা হয়ে যাচ্ছে। নুসরাতের সঙ্গে শুভ্রাদের আগে থেকেই পরিচয় থাকলেও ওতোটা ফ্রি ছিলো না তারা। তবে এখানে ঘুরতে এসে যেন তিনজন একদম কোন সময়কার প্রাণের বান্ধবী মনে হচ্ছে।
সবাই সবার মতো আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। শুভ্রাও একা একা হাটছিলো। হঠাৎ, আদিল তার পাশে এসে দাড়ায়। শুভ্রা সরে যেতে নিবে কিন্তু তার আগেই আদিলের কথায় দমে যায়। আদিল বলে –
“মিস শুভ্রতা যে নদীর পাড়ে ঘুরতে যায় সেটা কি বাড়ির লোকে জানে।”
শুভ্রা আমতা আমতা করে “কে বলছে আপনাকে যে আমি নদীর পাড়ে ঘুরতে যাই। আর আমার নাম শুভ্রতা না শুভ্রা।”
আদিল বলল “সে যেই বলুক চুপিচুপি সেখানে যাওয়ার কারণ কি শুনি। আর সবাই তো শুভ্রা বলেই ডাকে আমি না হয় শুভ্রতা বলেই ডাকি।”
শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলল “আমার নাম আপনার আবার অন্যরকম করে বলতে হবে কেন? আর আমি কোথায় যাই না যাই আপনাকে বলে যাবো নাকি। আপনি কে যে আপনাকে এগুলো আমি বলতে যাবো।”
আদিল এক বাঁকা হাসি দিয়ে বলল “কেউ না কিন্তু হতে কতক্ষণ।”
শুভ্রা বলল ” কি বললেন ঠিক বুঝতে পারলাম না!”
আদিল মিটমিট করে হেসে বলল “ও তুমি বুঝবে না। এখনো বোঝার বয়স হয় নি তোমার।”
শুভ্রা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আর বলল -“আমাকে কি আপনার এতোই ছোট মনে হয় যে আমি কিছু বুঝবো না।”
আদিল বলল “এতো রাগ করে না তাহলে আমি কিন্তু.!”
শুভ্রা বলল “কিন্তু কি পুরো কথা না বলে থেমে যান কেন আজব তো।”
আদিল বলল “হুম আমি একটু আজবই। যাইহোক মজা করো আমি যাই।”
শুভ্রা মনেমনে বলে( যা না আমি কি ধরে আছি নাকি। ঢং যতসব। শুধু ভাইয়ার বন্ধু না হলে তোর অবস্থা খারাপ করে ছাড়তাম।) মুখে বলল “হুম যান”
আদিল মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।
সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সবাই গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনুভব বলল- ” চল সবাই মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলি।” সবাই ওর কথায় একমত হলো। খেলার প্রথমেই পালা এলো অনিকের। ও ডেয়ার নেওয়াতে সবাই ওকে গান গাইতে বলল। অনিক প্রথমে না করলেও শুভ্রার দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে গেলো। অনিক গান গাওয়া শেষ করতেই সবাই হাত তালি দিলো।
শুভ্রা বলল – “ভাইয়া আপনি তো ভালো গান গাইতে পারেন। জাস্ট ওয়াও।”
অনিক বলল, -” ভাই বলে মনটা ভেঙে দিলে। এই কষ্ট কোথায় রাখি বলো।”
এইদিকে আদিলের শুভ্রা আর অনিকের কথা বলা দেখে কেন যেন রাগ হচ্ছে। বেশি রাগ হচ্ছে শুভ্রার উপর। কেউ তো কিছু বলল না ওর কেন বলা লাগবে? আদিল ওদের আর কিছু বলতে না দিয়ে বলল, -“আবার খেলায় ফিরি তাহলে আমরা।”
নুসরাতের পালা এবার। ও ট্রুথ নিয়েছে। অনুভব বলল “কিরে তুই কি কাউকে পছন্দ করিস বা ভালোবাসিস। সত্যি কথা বলবি কিন্তু।”
নুসরাত মাথা নিচু করে বলল “হুম”
অনুভব বলল, -“কাকে বল আমরা একটু শুনি। কতোদিন একটু বিয়ে খাইনা বল বল কে সেই ব্যক্তি।”
নুসরাত বলল, -“প্রশ্ন কিন্তু ছিলো ভালোবাসি বা পছন্দ করি নাকি এই নিয়ে। কাকে করি এটা কিন্তু প্রশ্ন ছিলো না।”
অনুভব মুখ বাঁকিয়ে বলল – “যাহ তোর বলা লাগবে না। জানি আমি।”
নুসরাত বলল, -” হুম ভালো ”
এবার অনুভবের পালা। অভ্র হেসে বলল, -“তুই নাচবি, নাগিন ডান্স।” অনুভব অসহায় চোখে অভ্রের দিকে তাকাল আর কানে কানে বলল, -“দোস্ত এখানে মেয়েরাও আছে বুঝে শুনে ডেয়ার দে ভাই।” রাজিব বলল -“নে অনুভব শুরু কর।” আদিল ও বলল, -“হুম শুরু কর।”
অনুভব এবার কাদো কাদো মুখ নিয়ে অনিকের দিকে তাকালো। অনিকও মিটিমিটি হাসি দিয়ে ইশারায় শুরু করতে বলল। নুসরাত বলল- “ব্রো এতো ঢং না করে শুরু করো।”
অনুভব বাধ্য হয়ে নাচতে লাগলো। এইদিকে অনুভবে নাচ দেখে ওরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ।
এইদিকে অনুভবের তো মন চাচ্ছে অভ্রের মাথা ফাটাতে। রাজিব ডেয়ার নিয়েছে। নুসরাত বলল “ব্রো তুমি গিয়ে অনুভব ভাইকে দুটো থাপ্পড় মেরে আসো।” রাজিব দাঁত কেলিয়ে বলল – “এটা কোনো ব্যাপার।”
অনুভব রাগী চোখে নুসরাতের দিকে তাকালো। নুসরাত দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিলো। রাজিব অনুভবকে দিলো দুটো থাপ্পড়। অনুভব বলল “ভাই তাই বলে এতো জোরে।”
খেলতে খেলতে রাত হয়ে গিয়েছে। ওরা আবার রিসোটে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। শুভ্রার পাশে পাশে অনিক হাটছে। শুভ্রা বলল, -” আপনি কিন্তু সত্যি অনেক ভালো গান করেন।” অনিক বলল, -” ধন্যবাদ মেডাম,তো আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি!”( হাত বাড়িয়ে দিয়ে )
শুভ্রা হাত বাড়াতে নিবে তার আগেই আদিল এসে অনিককে টেনে ওর সঙ্গে নিয়ে গেলো। অনিক কি হয়েছে জিঙ্গাসা করতেই। আদিল মুচকি হাসি দিয়ে বলল “কিছু না।” অনিকও কিছু নি বলে আদিলের সঙ্গে রিসোটে গেলো।
নুসরাত পিছনে থেকে অভ্রকে বলছে “অভ্র ভাই একটু দাড়ান কথা আছে।”
অভ্রা দাড়ালো। নুসরাত অভ্রার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, – “ভাইয়া ভালো আছেন?”
অভ্র চোখ ছোট ছোট করে বলল, -“এই নিয়ে তুই কতো বার জিঙ্গাসা করলি কথাটা। তোর মতলবটা কি বল তো!”
নুসরাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমতা আমতা করে বলল,-“মতলব আবার কি হবে কিছুই না।”
অভ্র বলল, -” যাইহোক তো মতিগতি কখন কেমন হয় কিছুই বুঝিনা। বাদ দে চল এখন।”
দেখতে দেখতে…
( চলবে )
[