#পূর্নতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০২ ও ০৩
আমার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,
– নে যা তোর প্রেমিক তো তোর সামনেই আছে। এখনো যাচ্ছিস না কেন? যা
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমাকে এখানে ওর জন্য এনেছে? ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি করবো এখন। রাক্ষস টা কিভাবে জানলো আমি ওর সাথে মিট করতে চেয়েছিলাম। হায় আল্লাহ বাচাও আমায় এবারের মত। না হলে রাক্ষস আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। মনে মনে এইসব বিড় বিড় করছিলাম তখনই রাক্ষস টা আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
– কি করছো? হাতে লাগছে ছাড়ো সিদ্ধাত ভাইয়া প্লিজ। লাগছে তো
-নাও তোমরা কথা বলো আমি বাইরে আছি।
বলেই ভাইয়া আমাকে রেখে বাইরে চলে যায়। আমি থ হয়ে দাড়িয়ে আছি। চোখের সামনে সেই মানুষ টা যাকে আমি ভুল করে ভালোবাসে ফেলেছি। কিন্তু এই মানুষ টা সঠিক নয়। ভালোবাসার মানে আমাকে সিদ্ধাত ভাইয়া বুঝিয়েছে। আমি এখন বুঝি কোন টা ভালোবাসা আর কোন টা ভালো লাগা। কিছুক্ষণ পর আমি মেঘ ( আমার প্রাক্তন প্রেমিক) বললাম।
– বলো কেন দেখা করতে চেয়েছিলে?
মেঘ: কেমন আছো ঈশা
আমি: ভালো আছি। যা বলবে তারাতারি বলো। আমাকে যেতে হবে
মেঘ: খুব ব্যস্ত?
আমি: হ্যাঁ তোমার জন্য আমি সবসময় ব্যস্ত। আমার জামাই বাইরে দাড়িয়ে আছে। আমাকে যেতে হবে। তোমার কি আর কিছু বলার আছে?
মেঘ: বিয়ে টা তো এখনো হয় নি।
আমি: হয়েছে।
মেঘ: কবে? কাল ই তো বললে এখনো সাত দিন বাকি আছে
আমি: আজ বিয়ে টা হয়ে গেছে। আমরা বিয়ে করে এখানে এসেছি। আর কিছু বলার আছে তোমার?
মেঘ: বিয়ে করে ফেললে?
আমি : হ্যাঁ ফেললাম। যাকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করেছি।
মেঘ: আমাকে ভালোবাসো নি?
আমি: তুমি বেসেছিলে? লিসেন মেঘ, পুরোনো কথা তুলো না। আমি কিন্তু কিছুই ভুলি নি। ঠিক আছে? আর যোগাযোগ করবে না আমার সাথে। প্লিজ
কথা গুলো বলে আমি উল্টো ঘুরে হাটা দিলাম শুনতে পেলাম মেঘ বলছিলো,
– ভুল করেছি আমি। প্লিজ ঈশা ক্ষমা করে দাও। ফিরে এসো ঈশার। তোমার মত করে কেউ ভালোবাসে না।
আমি মেঘের কথায় কর্ণপার না করে চলে এলাম। বাইরে এসে দেখি মহাশয় সিগারেট টানছে। আমাকে দেখে বলল,
– কথা শেষ?
– হুম ( নরম সুরে)
– এতো তারাতারি?
-তো? পিরিতের আলাপ করবো নাকি ওর সাথে যে অনেক সময় লাগবে? ( রেগে বললাম)
– করতেও পারিস
– বাড়ি যাবো।
সিদ্ধাত ভাইয়া এখনো রেগে আছে বুঝতে পারছি। কিন্তু উনি এখনো সেই রাগ টা আমার ওপর ঝারে নি। ভয়ে ভয়ে আছি কখন যে ঝড় টা উঠবে। কি যে হবে। আজকে মনে হয় আমাকে মেরেই ফেলবে। এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি তে উঠে বসলাম। ভাইয়া এখনো সিগারেট টানছে। রেগে গেলেই সিগারেট খায় খাটাস টা। এখনো খাচ্ছে। এদিকে যে আমার সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না সেটা মনে হয় ভুলে গেছে। উফ আমি আর সহ্য করতে পারছি না, বলতেও পারছি না। খালি ছটফট করছি। এর মধ্যেই দেখি রাক্ষস টা সিগারেট ফেলে দিয়েছে। মনে মনে বললাম,
– ওরে আমার রাক্ষস রে থুড়ি জামাই রে। বুঝে গেছো না আমার কষ্ট হচ্ছে হিহিহিহি। এত্ত গুলো ভালোবাসি রাক্ষস টা কে উম্মাহ
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ভাইয়া আমার সাথে কথাই বলছে না। আমি বেশিক্ষন চুপ করে থাকতে পারি না। পেটের ভিতর কেমন কেমন করে। এই যে দেখছেন না আপনাদের সাথে কত বকবক করছি। কিন্তু এই খাটাস টা একটা কথাও বলছে না। তাই না পেরে আমি ই বললাম,
– তুমি কি রেগে আছো রাক্ষস ভাইয়া থুক্কু সিদ্ধাত ভাইয়া?
– কি বললি? আবার বল
– বললাম তুমি কি রেগে আছো?
– না এটা নয়। আমি কি ভাইয়া?
– (এই রে শুনে ফেলেছে। এবার কি হবে। কি বলবো – মনে মনে) তু তুমি তুমি তো সিদ্ধাত ভাইয়া
– আমি যেন অন্য কিছু শুনলাম
– তুমি কানে যে একটু কম শোনো সেটা তো আমরা সবাই ই জানি। এখনো ভুল ভাল কি না কি শুনেছো
– শাট আপ । মুখ টা বন্ধ কর। তুই কি করেছিস আমি ভুলে গেছি ভাবছিস? ( রেগে)
– এমা!! ভুলবে কেন? ছোট থেকে বড় মা তোমাকে কত গুলো হরলিক্স খাইয়েছে কি ভুলে যাওয়ার জন্য?
– তুই কি চুপ করবি নাকি গাড়ি থেকে ফেলে দেবো।
আমি এবারও ঝাড়ি খেয়ে চুপ হয়ে গেলাম। খাটাস টা সব সময় এমন করে। বড় মা জিজ্ঞাসা করবো মুখে মধু কেন দেয় নি রাক্ষসের। ভাল্লাগে না। ভাবলাম ধুম ধাম করে বিয়ে করবো সব টা নষ্ট করে দিলো। বিয়ে কি মানুষ বার বার করে। আমার সব প্লান মাটি করে দিলো। আমার আর বউ সেজে ছবি তোলা হলো না। ফেসবুকে পোস্ট ও করা হলো না। এইসব ই ভাবছিলাম হঠাৎ দেখি আমাদের গাড়ি টা চলছে না।
– এমা গাড়ি চলছে না কেন? সিদ্ধাত ভাইয়া কই। সিদ্ধাত ভাইয়া ও সিদ্ধাত ভাইয়া? আরে এই সিদ্ধাত ভাইয়া আবার কই গেল। গাড়ি কে চালাবে। বাড়ি ফিরবো কিভাবে?
– তুই কি গাড়িতে থাকবি বলে ঠিক করেছিস?
সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন কড়া কথায় মাথা তুলে দেখি ভাইয়া এবারও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। আর আমাদের গাড়ি টা বাড়ির সামনে। আমি তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর দৌড় দেবো এমন ই একটা প্রিপারেশন নিচ্ছি। কিন্তু আমার প্রিপারেশনের চৌদ্দ টা বাজিয়ে মহাশয় আমার হাত ধরে ফেলল। আমি চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে মুখে জোর করে একটা হাসি এনে বললাম,
– আমি তোমাকে না নিয়ে যাবো নাকি। আমি তো দেখছিলাম আ…..
– তোর মুখ কি কখনও বন্ধ হয় না?
– এই নাও বন্ধ হলো আমার মুখ ( মুখে আঙুল দিয়ে বললাম)
– শোন। আমরা যে বিয়ে করেছি সেটা যেন কেউ না জানে বাড়ি তে। জানলে তোর অবস্থা কি হবে বুঝতে পারছিস তো?
– কেন কেন??
– বড্ড বেশি প্রশ্ন করিস ঈশা। যা বলেছি সেটা মাথায় রাখবি। ওকে?
-ওক্কে রাক্ষস রাজা থুক্কু সিদ্ধাত ভাইয়া (জিভে কামড় দিয়ে)
– কি বলল? ( রাগী লুকে)
-এই রে সত্যি কথা বের হয়ে যায় খালি।
বলেই হাত ছাড়িয়ে দিলাম মেরাথন দৌড়। এক দৌড়ে বাড়ির ভিতরে। পিছনে শুনতে পেলাম রাক্ষস টা বলছিল,
– পালিয়ে যাবি কই। একবার ধরতে পারি বুঝাবো এই সিদ্ধাত কি জিনিস।
আমি রাক্ষস রাজার কথায় কর্ণপাত করলাম না। বাড়ি ঢুকেও দৌড়াচ্ছি দৌড়াচ্ছি ধরাম করে ধাক্কা খেলাম বড় মার সাথে। বড় মার হাতের ফুল গুলো সব পড়ে গেল। সাথে আমিও। জোরে চিল্লাই উঠলাম।
– চোখের মাথা খেয়েছো নাকি। দিলে তো কোমর টা ভেঙে? উবাবা গো। ফ্লোর টাও বদজ্জাত হয়েছে।কি শক্ত। বিয়ের আগেই বর টা আমার বিধবা হয়ে গেলো রে।
বড় মা: একি এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলি? দেখলি তো পড়ে গেলি। সাথে আমার ফুল গুলোও ফেললি।
আমি: তুমি আমাকে তুলবে নাকি আমাকে এভাবে জ্ঞান দেবে? এক্ষুনি তোমার বদজ্জাত ছেলে চলে আসবে তোলো আমায়।
সিদ্ধাত: আমি তুলবো?
ওরে বাবা গো। আমার ব্যাথা ভালো হয়ে গেছে। বলেই উঠে দিলাম আরেক দৌড়। সোজা নিজের রুমে। দরজা বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। আসার সময় সবার জোরে হেসে উঠার শব্দ পেয়েছি। সব কটা ভিলেন। বাবা গো কি ভয়ংকর ব্যাপার। এক্ষুনি ধরে ফেলত। আর বড় মা কে বলি হারি, কেন তোমাকে এখন আসতে হবে। আমি দৌড়ে আসছি আমি না হয় দেখি নি তুমিও কি দেখো না। ফুল গুলো ফেলে দিলো সব টা পড়লো আমার ওপর সিনেমার মত। উফফফ
আর ওদিকে নিচে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। বাড়ি টা সাজাচ্ছে। আসলে এক সপ্তাহ ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান চলবে। আজ শনিবার। আজ থেকেই শুরু। কি জানি আজ সন্ধ্যায় আবার কার শ্রাদ্ধ আছে থুক্কু বিয়ের কি জানি অনুষ্ঠান আছে। সবাই ব্যস্ত। আমার ক্রাইম পার্টনার দুইটা এক মাস আগে থেকেই আমাদের বাড়িতে। বাকি গুলো আজকে সন্ধ্যায় হাজির হবে মনে হয়। মেরাথনে আমি ই ফাস্ট হয়েছি এখন যাই ফ্রেস হয়ে আসি। উল্টো ঘুরে ওয়াসরুম যাবো এমন সময় চোখের সামনে এই জন্তু টা কে দেখার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না,,,
#চলবে_কি?
#পূর্নতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৩
আমার চোখের কয়েকটা পলক ফেলে ভালো করে দেখি না আমি ভুল দেখছি না। এটা সেই জন্তু টাই। এবার কি হবে আমার। কই পালাবো এবার? ঈশা আজকে তুই শেষ। আজকে তোকে নিছে রে ঈশা ভাগগগ…..
উল্টো ঘুরে পালাবো তখনই বদজ্জাত টা খপাত করে হাত ধরে এমন এক টান দিলো তাল সামলাতে না পেরে পড়লাম বুকের ওপর। আমার হাত দুটি ঘুরিয়ে পিঠের সাথে ধরলো শক্ত করে।
-আউউচ ( জোরে )
– চিল্লাস কেন? ( রেগে)
– তুমি এখানে কেন?
– বুঝতে পারছিস না কেন এখানে আমি?
– না ( ঠোঁট উল্টে)
– পার পেয়ে যাবি ভেবেছিস? পালিয়ে যাওয়ার প্লান করেছিলি তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে?
– কিহ? পালিয়ে যাবো তাও আবার মেঘের সাথে? নেশা করেছো নাকি?
– একদম ফালতু কথা বলবি না। ( দাতে দাত চেপে) কাল রাতের সব কথা আমি শুনেছি।
– যদি সব কথা শুনতে তাহলে একথা বলতে না। ছাড়ো লাগছে হাতে।
এবার সিদ্ধাত ভাইয়া অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আর আরো শক্ত করে হাত চেপে ধরলো। আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম
– আউউউ
– সত্যি কথা বল। এখনো সময় আছে।
– আমরা কোনো পালানোর প্লান করি নি সিদ্ধাত ভাইয়া।
– সত্যি কথা বলতে বলেছি। সত্যি বল না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। খুব খুব খারাপ
আমি এবার কেদেই দিলাম একে তো হাতে খুব ব্যাথা পাচ্ছি আর তার ওপর এই ব্যবহার। কি ভয়ংকর দৃষ্টি। মায়াবী চোখ গুলো ভয়ংকর আকার ধারন করেছে। রাগে ভাইয়া ফোস ফোস করছে। উনার রাগ হলে উনি কি করতে কি করে নিজেও বুঝে না। কিভাবে ধমকে কথা বলছে। আমি ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে বললাম,
– আ-আ-আমরা শুধু মিট করতে চেয়েছিলাম।
আমার একথা শুনে সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে এক ধাক্কায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরলে বলে,
– কেন?
– মেঘ বলেছিল দেখা করতে চায়। শেষ বারের মত। তাই
– তাই তুই দেখা করতে রাজি হয়ে গেলি? পুরোনো প্রেম জেগে উঠেছে?
বলেই দেয়ালে দুটো ঘুসি মারে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেই। অতঃপর উনি আবারও বলে,
– এনসার দে
– ন- না।
– তাহলে কেন যেতে চেয়েছিলি?
– তোমার আমার সম্পর্ক কে পূর্ণতা দিতে
– #পূর্নতা_নাকি_শূন্যতা ? কোনটা?
– পূ-পূর্নতা
– পূর্ণতা দেওয়ার জন্য দেখা করার কি দরকার ছিল?
– আ-আমি চেয়েছিলাম শেষ বারের মত সামনাসামনি কথা বলে বুঝিয়ে বলি। আর আমাদের সম্পর্কের কথাও বলি। তাই
– সত্যি?
– তোমার ঈশা মিথ্যে বলে না সিদ্ধাত ভাইয়া
এবার আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি হাত দুটি দেখছি। রক্ত জমে নীল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। খুব কষ্ট লাগছে। রাক্ষস টা একটু বকলেই কেদে দেই। আর সেখানে আমাকে কি চেহারাই না দেখালো। আমাকে কাদতে দেখে সিদ্ধাত ভাইয়া এগিয়ে এসে শক্ত গলায় বলল,
– কান্না বন্ধ কর। একদম কেদে মন গলানোর চেষ্টা করবি না। নাটক বন্ধ কর ঈশা।
শেষের কথা টা ধমক দিয়ে বলে। ভাইয়ার ধমকে আমি লাফিয়ে উঠি। কান্না থামাতে পারছি না। কি করবো উনার দেওয়া কষ্ট গুলো যে খুব কাদায় আমাকে। এর মধ্যে সিদ্ধাত ভাইয়া আবারও বলে,
– কথা কি কানে যাচ্ছে না? চুপ করতে বলেছি আমি ( চিৎকার করে)
আমি এবার ফুপিয়ে কেদে দিলাম। আমার কান্না দেখে ভাইয়া দেয়ালে সজোরে কয়েকটি ঘুসি মেরে রুম ত্যাগ করে। ভাইয়ার ঘুসি তে পুরো রুম কেপে উঠে। সাথে আমিও। ভাইয়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে ওয়াসরুমে চলে যাই। সাওয়ার অন করে বসে পড়ি। ঘন্টা দুয়েক পর বের হলাম। মাথা টা ঝিম ঝিম করছে। কিছু ভালো লাগছে না। বিছানায় গা এলিয়ে দিতে রুমে প্রবেশ করলো আমার ক্রাইম পার্টনার নোভা আর ইতি। রুমে ঢুকছে আর বক বক করছে।
নোভা: এই ঈশা মরলি নাকি। এখনি মরিস না। বিয়ের পরে মর। বিয়ে টা খাইতে দে।
ইতি: না না বিয়ের পরেও মরিস না। আমাদের কে খালামনি বানায়ে তার পর মর। না না তাও মরিস না, না হলে তোর বাচ্চার পটি কে পরিষ্কার করবে। বাচ্চা কে বড় করে তার পর মর।
ওদের কথা শুনে দিলাম এক লাথি।
আমি: যাবি তোরা নাকি আরো দুই চারটা খাবি?
নোভা: একি এটা কি অবস্থা তোর? চোখ মুখ ফুলে গেছে কেন?
ইতি: দোস্ত তুই কি কাদছিস?
আমি: না ( গম্ভীর স্বরে)
নোভা: তোমারে চিনাতে হবে না আমাদের। কেন কাদছিস সেটা বল
আমি: বললাম তো কাদি নাই
নোভা: এই ইতি দরজা টা লক কর তো
ইতি গিয়ে দরজা লক করে দিলো। নোভা আমাকে গালে হাত দিলে বলে,
নোভা: কি হয়েছে ঈশু। বল আমাদের।
আমি এবার কেদেই দিলাম। ওরা আমাকে স্বান্তনা দিচ্ছে। অনেক ক্ষন পর উঠে ওদের কে সব টা বললাম। ওরা আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে যেন মরেই যায়। কি হলো বুঝলাম না। এখানেই হাসির কি আছে। এদুটোও আচ্ছা বদ হয়েছে। মরার হাসি হাসতেছে।
আমি: ওই কুত্তা গুলো থামবি তোরা?
ইতি: ঈশু প্লিজ একটু হাসতে দে। তোরা এমন কাজ করবি আর আমরা হাসবো না?
আমি: তোরা হাসতেই থাক। গেলাম আমি
বলেই নিচে চলে আসছি। এখনো দুপুরের খাবার খাই নি। সেটাও কেউ বলল না। সব গুলো এক একটা ভিলেন। আমি যে না খেয়ে বসে আছি সেটা খেয়াল করে নি হুহ। কথাই বলবো না কারো সাথে। রুমে দুইটা ভিলেন রেখে আসছি আর নিচে এসে দেখি আরো দুটো ভিলেন। বড় মা আর আম্মু। আমাকে কিচেনে যেতে দেখে আম্মু বলল,
আম্মু: কি রে ওদিকে কই যাস?
আমি : দেখো না আলিবাবার গুহায় যাইতেছি।
বড় মা: কি রে মা রেগে আছিস কেন?
আমি : তুমি একদম কথা বলবে না। তোমার জন্য সব কিছু হয়েছে। কে বলেছিলো তোমাকে ও ওই রাক্ষসের মা হতে?? না তুমি ওই রাক্ষসের মা হতে না আজ আমার এই দশা হতো
বলেই খাবার নিতে টেবিলে চলে গেলাম। আমার কথা আম্মু আর বড় মা চুপ হয়ে গেলো। একটু পরে বড় মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
বড় মা: আমার রাক্ষস ছেলে টা কি আবার কিছু বলেছে?
আমি আমার হাত দুটো বড় মার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
– এই দেখো। দেখো ভালো করে কি করেছে আমার হাত দুটোর। রাক্ষস একটা। গায়ে যেন মরা গরু খাওয়ার শক্তি।
বড় মা: একি তোর হাতের এ কি অবস্থা? কি করে হলো? দাড়া আমি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছি
আমি: চোখের সাথে সাথে কি কানের ও মাথা খেয়েছো? বললাম না তোমার ছেলে করেছে।
বড় মা: সিদ্ধাত!!! তুই কি কিছু দুষ্টুমি করেছিলি মা?
আমি: এই তুমি যাও তো। খেতে দাও। বকা ঝকা খেয়ে পেট ভরে না আমার। যাও যাও রাক্ষসের মা।
বড় মা: আচ্ছা তুই খেয়ে নে। আমি ঔষধ টা নিয়ে আসি
বড় মা চলে গেল। আমি খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবো তখনই দেখি রাক্ষস টা আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে। রাক্ষস কে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলাম কিন্তু বুঝতে দিলাম না আমি ভয় পেয়েছি। বুজতে দিলে পেয়ে বসবে কি না। তাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
রাক্ষস টা কিছু বলতে এসেছিল আমি পাত্তা ই দেই নি হিহি। বোকার মত দাঁড়িয়ে ছিল। বেশ হয়েছে। আসরের আজান দিয়ে দিলো। নামাজ পড়ে। ছাদে এলাম সাথে নোভা আর ইতি। ইতি, নোভা জন্মগত সিঙ্গেল। জীবনে একটা প্রেম ও করে নাই। নোভা,আমি আর ইতি আড্ডা দিচ্ছিলাম। সন্ধা হয়ে যায়। নিচে চলে আসি। নামাজ পড়ে উঠেছি তখনই আম্মু আর বড় মা রুমে আসে।
আম্মু: এই যে মহারানি। এই শাড়ি আর এই গহনা গুলো পড়ে জলদি নিচে আসেন।
আমি: কার শ্রাদ্ধ হবে?
বড় মা: এসব কি বলিস তুই। দে তোর হাত টা দে তো। ঔষধ এনেছি লাগিয়ে দেই
আমি: এতো আদিক্ষেতা করা লাগবে না। ছেলে কষ্ট দিবে আর মা ঔষধ লাগাবে। লাগবে না আমার যাও
আম্মু: সিদ্ধাত তো অকারণে কিছু করে না। তুই কি করেছিলি সেটা বল
আমি: ( হ্যাঁ বলে মরি। মেঘের কথা জানলে তো তোমরা আরো দু’ঘা বসিয়ে দিবা – মনে মনে) আ-আমি কিছু করি নি
আম্মু: হ্যাঁ সেটা বুঝতেই পারছি তোমার এই আ-আমি বলাতে।
আমি: তোমারা যাবে নাকি আমি যাবো এখান থেকে
বড় মা: না না আমরা ই যাচ্ছি। তুই রেডি হয়ে চলে আয়।
বলে বড় মা আর আম্মু চলে যায় আমি দরজা লক করে দিয়ে শাড়ি টা পড়ে নেই। উফফ এই সিদ্ধাত ভাইয়ার ভক্ত গুলো কখনোই আমাকে বুঝবে না। ধুর কেউ বুঝে না আমাকে। সবাই খালি সিদ্ধাত সিদ্ধাত করে। রাক্ষস একটা। কেন সবাই ঈশা ঈশা করে না। বড় বাবাই ভালো। বিচার দেবো আজকে বড় বাবার কাছে।শাড়ি পরাতে আমি বেশ পটু। কারন শাড়ি পড়তে আমার ভীষন ভালো লাগে। শাড়ি আমার অনেক অনেক প্রিয়। আর সবাই বলে শাড়ি তে নাকি আমাকে খুব সুন্দর লাগে। তাই আরো বেশি প্রিয় হিহি। শাড়ি তো পরা শেষ। জুয়েলারি বক্স টা খুলে দেখি ওয়াও কি সুন্দর এই সেট টা। খুবই সিম্পল একটা জুয়েলারি সেট। চট জলদি পরে নিলাম। হাতে দুটো চুড়ি একটু মোটা ডিজাইনের। কিন্তু গলার টা পরতে পারছি না। উফফফ অসহ্য এটাও একটা ভিলেন।
– উফফ চুলের সাথে বেধে গেছে। আউচ খুলতেই পারছি না। পরতেই পারছি না। ধ্যাত ভাল্লাগে না।
চেষ্টা করেই যাচ্ছি সেই কখন থেকে। পারছিই না। আরে আবার দরজায় কে এলো। উফফ ঈশা তোর জালার শেষ নেই রে। গেলাম দরজা টা খুলে দেখি আমার দুই পেত্নি। আমাকে দেখে দাত কেলিয়ে হাসছে
আমি: দাঁত কেলানো বন্ধ কর। আর এটা ছাড়িয়ে দে। ( চুলের সাথে আটকে থাকা হুক দেখিয়ে বললাম)
নোভা আমার হুক ছাড়িয়ে দিচ্ছে। আর ইতি আমাকে দেখে তো সেই পুরোনো ডায়লগ শুরু করে দিছে।
ইতি: ঈশু রে তোরে যে কি লাগতেছে কি বলবো ঈশুউউউ। আজকে সিদ্ধাত ব্রো শেষ।
আমি: থাম তো। ওই টার সংবিধানে না আছে রোমান্টিকতা, না আছে ভালোবাসা। শুধু যেটা আছে সেটা হলো আমাকে বকা, দেওয়া ঝাড়ি দেওয়া আর রাগ দেখানো। অসহ্য।
নোভা: এই নে খুলে দিয়েছি
আমি: উম্মাহ জানটুস টা
ইতি: চল তুই তো এখন পুরোই রেডি।
আমি: ওই আমি রেডি কেমনে? আমি সেজেছি এখনো? মাত্র শাড়ি আর আর জুয়েলারি পরেছি।
নোভা: জানু তোমার আর সাজের দরকার নেই। যে রূপ দেখাচ্ছো শাড়ি চুড়িতেই তাতেই আমাদের দুলাভাইয়ের অবস্থা নাজেহাল হবে বেশ বুঝতে পারছি।
আমি: হোক। একদম ওই রাক্ষস টা কে নিয়ে কোনো কথা বলবি না। আমি আইলাইনার দিবো ব্যাস আর কিছু না। এক্ষুনি হয়ে যাবে দাড়া।
আমি আয়নার সামনে গিয়ে দেখি ওমা এটা কে? এটা আমি? ওয়াও কি সুন্দর লাগছে আমাকে। ইসস আমি তো আসলেই সুন্দর হিহি। চট জলদি আইলাইনার দিয়ে নিলাম।
– এই তো এবার আমি পুরো রেডি চল।
নোভা: চলো জানু
বের হবো এই মূহুর্তে রাক্ষস টা আমার রুমে হাজির। রুমে প্রবেশ করতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে যায় দরজায়। আমারাও দাঁড়িয়ে পড়ি। হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে রাক্ষস টা। আমিও দেখছি। সুন্দর লাগতেছে মহাশয় কে। আমাদের তাকিয়ে থাকা দেখে ইতি বলে উঠে,
ইতি: চল রে নোভা আমরা যাই। ওদের দেখা শেষ হলে ওরা একাই চলে আসবে
নোভা : হ্যাঁ তাই ই চল
পেত্নী দুইটা চলে গেলো। মজা উড়াইতে উড়াইতে। আর ওদের কথাই আমরা চোখ নামিয়ে নেই। এর পর সিদ্ধাত ভাইয়া আমার সামনে আসে। কি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। কি কেমন চাহনি উনার। কি মায়াবী। মুখে মৃদু হাসি। উফফ কি সুন্দর লাগতেছে। এর পর সিদ্ধাত ভাইয়া এসে আমার কপালের চুল গুলো সরিয়ে কানে গুজে দিয়ে বলল,
– এতো রূপ নিয়ে নিচে গেলে অন্যেএ নজর লেগে যাবে।
– লাগুক। তাতে তোমার কি?
– আমারই সব।
-হুহ। তোমার ছাই। তুমি একটা আনরোমান্টিক।
– সময় হলে বুঝাবো রোমান্টিক নাকি আনরোমান্টিক ( ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে)
– উফফ! খালি উল্টা পাল্টা কথা। সরো তো সরো।
বলেই চলে আসবো তখনই ভাইয়া আমার হাত ধরে। আমি দাড়িয়ে যাই।
– কি হলো আবার
– চোখ বন্ধ কর
– কেন? মারবা নাকি?
– বড্ড বেশি কথা বলিস। চোখ বন্ধ করতে বলেছি কর
আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। ভাইয়া আমাকে কোমরে কি যেন পরিয়ে দিচ্ছে। ইসস কোমরে হাত লাগছে। উফফ নিজে পরানের কি আছে আমাকে বললেই তো আমি নিজেই পরে নিতাম। আল্লাহ গো উফফ কেমন জানি লাগতেছে। পরানো শেষে ভাইয়া বলল,
– নে দেখ তো কেমন লাগছে
আমি এবার চোখ খুললাম। আয়নায় সামনে গিয়ে দেখি সুন্দর একটা কোমর বন্ধনী। এটাও সিম্পল। আমার জুয়েলারির সাথে ম্যাচিং হয়ে গেছে। রাক্ষস টার চয়েজ আছে বলতে হয়।আমি তো খুশি তে চিৎকার করে বললাম,
– ওয়াও রাক্ষস ভাইয়া এটা কি সুন্দর
বলেই জিভে কামড় দিলাম। এই যে কি বললাম এটা? ইসস মুখ ফসকে খালি ভুল ভাল জায়গায় সত্যি কথা বের হয়ে যায়। সিদ্ধাত ভাইয়া তো রেগে ফায়ার।
– কি বললি তুই?
– চলো নিচে যাই।
– দাড়া। একটু আগে কি বললি?
– কই কিছু না তো
– ঈশা
– সিদ্ধাতা ভাইয়া
– আমাকে রাক্ষস কেন বললি? তখনও বলেছিলি
– রা-রা-রাক্ষস? আমি? এমা কখন? কই আমার তো মনে পড়ছে না
– ঈশা
– চলো নিচে যাই। সবাই অপেক্ষা করছে।
কথা টা বলেই আমি চলে আসছি। না হলে আমার যে কি হত। পিছে পিছে সিদ্ধান্ত ভাইয়া এ এলো। নিচে নামতে যাবো এমন সময় শাড়ি পেচিয়ে ধপাস করে পড়ে যাবো কিন্তু গেলাম না,,,,
.
#চলবে_কি?