পূর্ণতা নাকি শূন্যতা পর্ব -০১

যেখানে আর মাত্র সাত দিন পর আমাদের বিয়ে সেখানে আজ কাজী অফিসে কেন বিয়ে করছি সিদ্ধাত ভাইয়া?

– চুপ একটাও কথা বলবি না। মেরে পুতে ফেলে দেবো। নে সাইন কর এখানে

সিদ্ধাত ভাইয়া রেগে কথা টা বলল। আমি ভয়ে আর কিছুই বলতে পারলাম না। কারন আমি জানি উনি এখন প্রচণ্ড রেগে আছেন। কেন রেগে আছেন তা জানি না। কিন্তু উনি রেগে গেলে উনার সামনে দাড়িয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। আর কোনো কথা বললাম না। বিয়ে টা হয়েই গেলো। কিন্তু এখন তো চিন্তা বাড়ির লোক কে নিয়ে। বাড়িতে কি বলবো? বড় মা বড় আব্বু কে কি বলবো আমি। আমার ভাবনার মাঝেই সিদ্ধাত ভাইয়া বলে উঠলেন,

– যাবি নাকি এখানেই থাকবি?

– এ‍্যাহ হ্যাঁ যাবো যাবো চলো।

গাড়ি তে উঠে পড়লাম। ভাইয়া ড্রাইভ করছে। আমি ভাইয়ার পাশে বসে আছি। মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে। কিন্তু ভাইয়া কে জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছি না।

চলুন পরিচয় পর্ব শেষ করি। হাই, আমি স্নেহা আফরিন ঈশা। অনার্স ফাস্ট ইয়ার। আমি আমার বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। আর এই যে আমার পাশে একটা রাক্ষস ড্রাইভ করছে ইনি হলেন সিদ্ধাত গ্রুপস অফ কম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকারি মিস্টার সিদ্ধাত চৌধুরী। এই রাক্ষস টাও আমার মত একা।মানে উনি ও বড় মা আর বড় বাবার একমাত্র সয়তান থুক্কু সন্তান। উনার প্রধান কাজ হলো আমাকে বকা দেওয়া। ঝাড়ি দেওয়া। বয়সে একটু বেশি ই ছোট বলে আমাকে কানে ধরে উঠায় আর বসায়। আমি কিছু বলতেও পারি না। কিন্তু মনে মনে বলতে কম করি না। খাটাস টা একটু আগে আমাকে বিয়ে করে নিলো। বদজ্জাত একটা। চেহারা মাশাল্লাহ্ আর ব্যবহার নাওজুবিল্লাহ। কিন্তু সেটা শুধু আমার সাথে।

আরে কি হলো এটা তো বাড়ি রাস্তা নয়। এর মধ্যে রাক্ষস টা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে? আর দেরি না করে জিজ্ঞাসা করে ফেলি,

– আমরা কোথায় যাচ্ছি সিদ্ধাত ভাইয়া?

-জাহান্নামে

-😒

এই ছেলে টা কি সোজা সুজি উত্তর দিতে পারে না। এমন ত্যারা ক্যান। আমি ওই খাটাসের সাথে আর কোনো কথা বললাম না। জানালা দিয়ে বাইরে দেখছি। কি সুন্দর চারিপাশ। আমাদের দেশ টা অনেক সুন্দর। সবুজ ঘেরা চারিদিক। প্রকৃতি দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেলো আমাদের ছেলেবেলা।

সেদিন আমাদের বাড়িতে সিদ্ধাত ভাইয়া,বড় মা, বড় বাবা আমাদের বাড়ি এসেছিলেন।
আর সেদিনের পর ১১ বছর কেটে যায়। যোগাযোগ ছিল না আমাদের দুই পরিবারের।
যোগাযোগ না রাখার কারণ টাও ছিল বেশ ছোট্ট।

১১ বছর আগে, সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে আমার খুব ভাব ছিল। ভাইয়া তখন এসএসসি দিয়েছে। কলেজে ভর্তি হন নি। অনেকটা সময় পেয়েছে তাই আমাদের বাড়ি তে বেড়াতে এসেছিল। ভাইয়া এলে আমার খেলার সাথী পেতাম। অনেক মজা করতাম। দুইজন মিলে দুষ্টুমি করতাম। বাইরে খেলতে যেতাম। আবার ভাইয়ার কোলেও উঠতাম। আমি যদিও তখন ছোট ছিলাম তবুও মনে পড়ে একটা দিনের কথা।

সেদিন খাবার টেবিলে বড় বাবা আব্বু কে একটা প্রস্তাব দেয়।

– বন্ধু একটা কথা ভাবছিলাম কিছুদিন ধরে কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।

-আরে বলে ফেলো। এত সংকোচ করছো কেন?

– না মানে আসলে

-কি না মানে আসলে কি হয়েছে বলো

– দেখো ঈশা তো আমাদের অতি আদরের। ঈশা কে যদি আমার ছেলের বউ করে আনি তাহলে তোমার মেয়ে তোমার ই থাকলো। আর আমারও বউমা হলো। আর মেয়ে কে অন্য বাড়িতে থাকতেও হলো না। মানে আমাদের ঈশা আমাদের ই থেকে গেলো।

– দেখো আমার মেয়ে অনেক ছোট। এইসব নিয়ে এখন নয় পরে ভেবে দেখবো। আর তোমার ছেলে কে আগে বলো আমার মেয়ের যোগ্য হতে। তার পর সমন্ধ করা যাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছো।

কথাগুলো বলে আব্বু উঠে গেল। আর আমরা সবাই চুপচাপ বসে রইলাম। সেদিন বুঝি নি তাদের কথা গুলো। আজ বুঝতে পারছি। এর পর সিদ্ধাত ভাইয়া কে শুধু একটা কথাই বলেছিলো,

– মেয়ে কি বড় হবে না? কত টা যোগ্য হতে হবে ও? সব টা হয়ে দেখাবো। এটা সিদ্ধাতের প্রমিজ।

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়াও হন হন করে চলে যার। এর পর আর আসে নি আমাদের বাড়ি তে। যোগাযোগ ও হয় নি। কেটে যায় ১১ টা বছর।
ভাইয়া তার প্রমিজ রেখেছে। আজ আমাদের দুই পরিবার থেকে আমাদের বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু বদজ্জাত রাক্ষস টা কেন যে কাজী অফিস থেকে বিয়ে করলো বুঝলাম না। হটাৎ গাড়ি জোরে ব্রেক কষলো। আমি ধরাম করে সামনের দিকে ঝুকে পড়লাম। বেরিয়ে এলাম ভাবনার জগত থেকে। এমা একি সিদ্ধাত ভাইয়া কই?

– সিদ্ধাত ভাইয়া ও সিদ্ধাত ভাইয়া কোথায় গেলেন। রাক্ষস টা গেল কই? দেখতে পাচ্ছি না কেন। নেমে গেল? কিন্তু কখন গেল।

-রাক্ষস টা এদিকে।

ভাইয়া জানালার পাশে এসে কথা টা বলল। আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। ভাইয়া আবারও বলল,

– নামবি নাকি কোলে করে নামাতে হবে

আমি তারাতারি নেমে দাড়ালাম। ভয়ে ভয়ে সিদ্ধাত ভাইয়ার মুখের দিকে তাকালাম। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। ও মা গো। খিচ ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম। মনে মনে ভাবছি এভাবে কেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে এখনি আমাকে সত্যি সত্যি মেরে পুতে ফেলবে। ও আম্মু,আব্বু,বড় মা?বড় বাবা বাচাও। এর মধ্যেই মনে হলো আমি শূন্য ভাসছি। চোখ খুলে দেখি রাক্ষস রাজা আমাকে কোলে তুলে হাটছে।

– আমাকে কোলে নিয়েছো কেন? নামিয়ে দাও বলছি এক্ষুনি নামাও। বলছি না নামাও কথা কানে যাচ্ছে না?

– যদি সখ না হলে মুখ টা বন্ধ রাখ। না হলে এই উচু পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দেবো।

আমি চুপ হয়ে গেলাম। কি আর করার রাক্ষস রাজার মুখের ওপর কথা বলি কিভাবে। কিন্তু রাক্ষস টা আমাকে নিচ্ছে কোথায়? মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। রাক্ষস টা হাটছে তো হাটছে। পথ কি শেষ হয় না। ধুরু বাবা ভাল্লাগে না। এই ফাস্ট টাইম নয় আমি রাক্ষসের কোলে। সকাল বিকাল তার কোল উঠা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। সেই ফিটার খাওয়ার বয়স থেকে এখনো পযর্ন্ত। ভালোই লাগে রাক্ষসের কোলে উঠতে হিহিহি। আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর দেখতে উনি। গায়ের রং ফর্সা, মুখের গঠন টাও জোস, চোখ গুলোতে অদ্ভুত মায়া রয়েছে। আর সবচেয়ে যেটা সুন্দর সেটা হলো উনার হাসি। উফফ উনার ওই হাসি টাই পাগল করে আমাকে। কত মেয়ে যে ওই হাসির প্রেমে পড়েছে তার যদি হিসাব করতাম তাহলে আমার অঙ্কের নোট খাতা টা শেষ হয়ে যেত। উনার অ‍্যাটিটিউড আর স্টাইল টা আরো সুন্দর। আমি মূলত উনার ওই অ‍্যাটিটিউডের প্রেমে পড়ি বার বার। কিন্তু ভাবছি খাটাস টা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এতোক্ষন যে কোল নিয়ে আছে হাত ব্যাথা করছে না। আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে রাক্ষস রাজা আমাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য সুরে বলে,

– সারপ্রাইজ জান

আমি সামনে তাকিয়ে যা দেখি তারপর পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে রয়েছি। এই জন্য সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। মাথা টা ঘুরছে। মনে হচ্ছে হচ্ছে এখনই পড়ে যাবো। আমি কাপা কাপা গলায় ভাইয়া কে বললাম,

– ও ও এ এখানে

– কেন। মিট করতে চেয়েছিলি না। নে নিজে নিয়ে এলাম ওর কাছে। হ্যাপি হস নাই?

আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার হাত জড়িয়ে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি। আর বার বার ঢোক গিলছি। কি হলো এটা? কি করবো এখন আমি। ভাইয়া কি আমাকে মারবে? নাকি সত্যি সত্যি এখান থেকে ফেলে দেবে। আমার ভাবনার মধ্যেই ভাইয়া……….
.
.
.
.
.
.
.

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০১

চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here