প্রণয়সন্ধি পর্ব -১০+১১

#প্রণয়সন্ধি– ১০ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

শানায়া ও বাড়িতে আর ফিরবে না। ফোন করেও জানিয়ে দিয়েছে এতো অপমানের পর আত্মসম্মান খুয়ে ওখানে থাকার কোনো মানে হয় না। শায়লা হাসান আর মিরাজ হাসানের অনেক বুঝিয়েও কাজ হয় নি। শানায়া আজ জুনের ফ্ল্যাটে এসেছে ওর বাবা-মা বাড়িতে নেয় জুনের বাবার বন্ধু অসুস্থ দেখতে গেছে। এর ওপরের ফ্ল্যাটেই সিয়াম থাকে। অবশ্য তার কান অবধি এখন শানায়ার আসার খবর যায়নি। জানলে এতোক্ষণে নাচতে নাচতে আড্ডা মা’রতে চলে আসত।
শানায়া আশা অবধি একটা কিছু মুখে দেয় নি চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে জুনের বারান্দায়। জুনের কাছে শানায়াকে স্বাভাবিক লাগছে না। তাই তারাতাড়ি সিয়ামকে এসএমএস করে জানালো সবটা সিয়ামও বান্ধবী অবস্থার কথা শুনে ছুটে এলো। জুন আর সিয়াম কিছুক্ষণ ফিসফিস করে কথা বলে নিল।

মিনা বাড়িতে ডিনারের আয়োজন করেছে ও দেশে ফেরা উপলক্ষে। সেখানে ওর চেনা পরিচিত বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনরা আছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তখন যে যার মতো গল্প করছে। জুবরানের গল্পে কোনো মন নেয়। কোল ড্রিংকস একটু একটু করে চুমুক দিচ্ছে আর গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। তানিয়া দু-বার শুনেছে কি হয়েছে জুবরান উত্তর দেয় নি। অতঃপর একপ্রকার জোর জরে জুবরানকে সাথে করে বাড়ি নিয়ে গেলো তানিয়া। ফ্রেশ হয়ে এসে জুবরানকে জোড়াজুড়ি করে জানতে চাইল কি হয়েছে? সাথে তানিয়ার স্বামী জাকি ও যোগ দিয়েছে।
–‘ আমার কিছু হয় নি অযথা টেনশন করিস না’
–‘ মিনা কিন্তু আমাকে বলছে। তুই শানায়ার জন্য আপসেট!’
–‘মোটেও না ওকে নিয়ে ভাববার সময় নেই আমার’
–‘ ওমা তাই না-কি! তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস তোর উচিত সবটা ঠিকঠাক করে চুটিয়ে সংসার করা বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করা তা না করে ইগো নিয়ে বসে আছিস?’
–‘ সবটা কেনো আমাকেই ঠিক করতে হবে!’
তানিয়া কথার প্যাচ ধরতে পেরে বলল
–‘ তারমানে তুই চাস সব ঠিক হয়ে যাক’
জুবরান উত্তর দিল না। তানিয়া বলল
–‘ তোর ফোনটা দে তো’
জুবরান ভ্রু কুঁচকে বলল
–‘ কেনো?’
–‘ আমার ফোনে ব্যালেন্স নাই তাই
–‘ কার কাছে ফোন দিবি?’
–‘ শানায়ার কাছে… কি হলো ফোন দে ‘
জুবরান চুপ থেকে বলল
–‘ নাহ’
তানিয়া বিরক্ত হয়ে বলল
-‘ জাকি তোমার ফোনটা দাও তো’
প্রথম বার ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো শানায়া ফোন ধরল না। জাকি বলল
–‘ ঘুমিয়ে গেল না-কি! ‘
তানিয়া বলল
–‘ আরেকবার দিয়ে দেখি আননোন নম্বর বলে ফোন নাও ধরতে পারে’
এবার বেশ সময় নিয়ে শানায়া ফোন ধরে ভাঙা গলায় ‘হ্যালো’ বলল।
ওপাশ থেকে চুপ করে রইলো। তানিয়া কি বলে সবটা শুরু করবে খুঁজে পেলো না। শানায়া আবার বলল ‘কে?’
তানিয়া কিছু বলতে নিবে তার আগে ওপাশ থেকে শানায়া কেউকে বলছে
–‘ কী করছিস? ‘
পুরুষ কণ্ঠে বলল
–‘ চুপ থাক যখন উত্তর চাইব দিবি’
জুবরান ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে প্রশ্ন উঁকি দিলো ‘এতো রাতে ছেলের সাথে কি করছে?’
সিয়াম শানায়াকে জুনের রুমের সোফায় বসিয়ে বলল
–‘ এবার বল কী হয়েছে তোর?’
–‘ আমার আবার কী হবে?’
–‘ সেটা তো তুই ভালো জানিস ‘
–‘ আমার কিছু হয় নি’
জুন বলল
–‘ তা তো আমরা দেখতেই পারছি কেঁদে কেটে চোখমুখ ফোলা কিছু হয় নি তো!’
শানায়া চুপ রইলো। সিয়াম বলল
–‘ দেখ তুই বলেই দেখ আমরা সলভ করে ফেলব’
শানায়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
–‘ তোদের কিছু করতে হবে না আমি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে ফেলেছি’
–‘ কিসের সিদ্ধান্ত? ‘
–‘ আমি ঢাকা থেকে চলে যাচ্ছি’
ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে বলল
–‘ চলে যাচ্ছিস মানে? কোথায় যাচ্ছিস? কেনো যাচ্ছিস?’
–‘ দেখ তোকে কোথাও যেতে দিব না। এসব কথা তুই মুখ তো দূরে থাক মনেও আনবি না’
ওদেরকে ব্যস্ত হতে দেখে শানায়া মলিন হেসে বলল
–‘ আমার লাইফটা কমপ্লিকেটেড নিজেকে বড্ড টক্সিন লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় দম আটকে ম’রে যাবো। জানিস আজ দু’দিন হলো আপু আমার সাথে কথা বলে না সেদিন বিকাল বেলা রায়হান ভাইয়ের জন্য পাত্রী হিসেবে আমার জন্য প্রস্তাব দিল সেটার পর থেকে ঠিক করে কথা বলে না বলতো আমার কি দোষ? দোষ না করেও আমি দোষী। কাল রাতে আমি ঘুমাতে পারি নি। আমার নিজেকে বোঝা মনে হচ্ছিল। ভাইয়ার কথা গুলো শুনে। আমি তো ভেবেই নিয়ে ছিলাম চলে যাব কিন্তু কি হলো? এভাবে আমাকে ও বাড়ি থেকে চলে আসতে হলো!’
কথাগুলো বলতে বলতে শানায়া কেঁদে ফেললো। তারপর পাগলাটে কণ্ঠে বলল
–‘ আচ্ছা আমি খুব খারাপ তাই না? আমাকে সে জন্য কেউ ভালোবাসে না সকলে ছেড়ে চলে যায়। ফুপি ঠিক বলেছিল আমি অলক্ষী, অপয়া। দোস্ত আমি না নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না খুব কান্না পাচ্ছে আমার ম’রলে সব বোধহয় ঠিক হয়ে যাবে’
জুন ভেজা চোখে শানায়াকে শান্ত করতে বলল
–‘ কিসব বলছিস তুই আমার লক্ষী বোন কাঁদে না আর ম’রার কথা একদম বলবি না’
সিয়াম বলল
–‘ তোকে কে কি বলছে বল শুধু দেখ আমি কি করি আমার বান্ধবীকে কথা শোনানো বের করছি’
শানায়া শান্ত হতেই সিয়াম বলল
–‘ দোস্ত তোর মাথা ব্যথা করছে? ঔষধ এসে দিব’
–‘ দরকার নেই রাত হয়েছে বাসায় যা’
–‘ সে-তো যাবো জুন তুই ওকে খাইয়ে দে আমি ঔষধ নি আসছি নাহলে ও আজ রাতেও ঘুমাবে না’
–‘ দেখ শুধু শুধু কষ্ট… ‘
–‘ তোর কাছে শুনতে চাইনি কিছু ‘
জুন জোর করে শানায়াকে খাইয়ে দিল।
জুবরান ফোনের ওপাশ থেকে সব শুনে শক্ত হয়ে বসে রইল। ফোন কেটে তানিয়া জাকিও স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। তানিয়া রেগে বলল
–‘ মেয়েটা কতটা কষ্টে আছে তুই বুঝতে পারছিস? মেয়েটার স্বামীর গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সার অভাব নেই আর সে কোনো অধিকার নিয়ে আসছে না। নিজের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে আর তুই? মেয়েটা ম’রে যাচ্ছে জুবরান তুই ইগো নিয়ে থাক।’
জুবরান কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো তানিয়া আটকালো না। যাক যা খুশি করুক।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here