প্রণয়সন্ধি পর্ব -০৮+৯

#প্রণয়সন্ধি– ০৮ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

মানুষের সব অতীত সুখানুভব হয় না! তাদের সফলতার পিছনে মস্ত বড়ো অতীত থাকে সেই জেদের জোরেই তারা সফলতা অর্জন করে! অতীতের সাথে থাকে একটা শক্ত খুঁটি বা বটবৃক্ষ। তাকে উন্নতির শিক্ষরে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই বোধ হয় সে আসে।
শানায়া আজ যে অবস্থানে এসে দাড়িয়েছে তার পিছনে মিরাজ হাসান আর শায়লা হাসানের অবদানের শেষ নেই তারা না থাকলে হয় তো ও আজ এখানে আসতে পারত না অথবা ওর অস্তিত্ব টাই থাকত না। তাদের খেয়ে, তাদের পড়ে, তাদেরই পিছনে ছু’রি মা’রবে? এতোটা অকৃতজ্ঞ শানায়া না! তাদের হয়ত ও শোধ করতে পারবে না কিন্তু কিছুটা হতেও তো ওদের সুখ দিতে পারবে। ও ভেবে ফেলেছে আর কত দিনই বা এই সংসারের বোঝা হয়ে থাকবে এবার এদের বোঝা হালকা করার সময় এসেছে। ও অনেক জায়গায় চাকরির আবেদন করেছে। ও যতসম্ভব ঢাকা থেকে অনেকটা দূরে চলে যেতে চায়।

শানায়ার কাজে মনযোগ নেয় এসব ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ছে। তখনি জুবরানের কেবিনে ডাক পড়ল।
–‘ জ্বি স্যার ডেকেছিলেন!’
–‘ শুনুন আজ একটা মিটিং আছে লান্সটা আমরা ওখানেই করব’
–‘ জ্বি স্যার কে কে যাবে!’
–‘ আমি, আপনি, রাহাত’
–‘ ওকে স্যার’
–‘ শুনুন… আগামী আধঘন্টার মধ্যে অফিসের কাজ শেষ করুন ঠিক সাড়ে বারোটার দিকে আমরা বের হবো’
–‘ ওকে স্যার’
শানায়া রাহাতের ডেক্সে গিয়ে বলল
–‘ রাহাত ভাই’
–‘ হুম’
–‘ স্যার সাড়ে বারোটার সময় একটা মিটিং আছে সেখানে যাবে তো আপনাকে, আমাকে নিয়ে যাবে যা কাজ আছে দ্রুত শেষ করতে বলেছে’
–‘ ওকে’
শানায়া চলে যেতে নিয়েও থেমে গেল। হঠাৎ মনে হলো রাহাতের কিছু হয়েছে এতো শান্ত ভালো মানুষ তো সে নয়! দরকারের বাইরে একটা কথাও বলল না সে তো অযথা কথা বলার ওস্তাদ।
–‘ আপনার কিছু হয়েছে রাহাত ভাই!’
রাহাত একটু চমকে তাকিয়ে বলল
–‘ কই কিছু হয় নি তো তোমার এমন কেনো মনে হলো’
–‘ অশান্ত মানুষ হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলে যে কারোই চোখে পড়বে’
–‘ শুধু তুমি খেয়াল করেছ আর তো কেউ খেয়াল করল না। কেউ জিজ্ঞাসা ও করল না কিছু হয়েছে কি-না! ‘
–‘ হয়ত!’
–‘ তোমাকে কারণটা বলায় যায় পরে বলব কাজ শেষ করে নেই তারপর’
শানায়া হেসে ডেক্সে এসে বসে নিজের কাজগুলো শেষ করতে লাগল।

পাপড়ি কাজ করতে গিয়ে ও কাজে মন দিতে পারছে না। ঘুরে ফিরে কাল বিকালের রায়হানের মায়ের কথাগুলো ঘুরছে।
কাল যখন রায়হানের মা কথাগুলো কানে আসল তখই থমকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। শায়লা হাসান আর শানায়ারও তখন আমতা আমতা করে কি উত্তর দিবে খুঁজে পাচ্ছে না। শানায়ার অতীত সম্পর্কে যে ওরা অবগত! পাপড়ি নিজেকে সামলিয়ে হাসি মুখে বলল
–‘ কী করছ সকলে…’
–‘ এই তো পাপড়ি চলে এসেছে। কেমন আছ মা?’
–‘ জ্বি ভালো। আপনি?’
–‘ আমিও। তা বিয়ে শাদি নিয়ে কি ভাবছ? পছন্দের কেউ আছে না-কি? ‘
–‘ জ্বি না আন্টি এসব নিয়ে এখন ভাবি নাই। নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস করছি। নিজেকে ভালো পজিশনে নিয়ে যাওয়ার প্লানিং আছে’
–‘ ও তা ভালো। বিয়ে শাদি নিয়েও ভাবো বয়স তো হচ্ছে এখন না ভাবলে কখন ভাববে! তাছাড়া তোমার ছোট বোনও আছে। ‘
–‘ জ্বি ভাববো। কিছু খেয়েছেন আন্টি’
–‘ হ্যা মা। তোমরা থাকো আমি যায় ভাবি আসি সন্ধ্যায় ছেলেটা বাসায় ফিরে’
রায়হানের মা যেতেই শায়লা হাসান বলল
–‘ ছেলে কিন্তু ভালোই একবার ভেবে দেখ’
–‘ আম্মু তোমার কি মাথা খারাপ? আমার অতীত জানলে যেকেউ রিজেক্ট করবে বিয়ে করতে চাইবে না তাছাড়া আমি আর কখনো বিয়ে নিয়ে ভাবতেও চাই না। আমি আমার মতো থাকতে চাই।’
–‘ কিন্তু দেখ মা আমরা তো আর সারাজীবন বেঁচে থাকব না। তুমি একটা সময় শূন্যতা অনুভব করবি…’
–‘ আম্মু বাসায় এসেছি শান্তির জন্য প্লিজ মাথাটা গরম করিও না’
শায়লা হাসান আর কিছু বলল না মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। শানায়া মজা করে বলল
–‘ তুমি যদি বলো তাহলে বাবাইকে আরেকটা বিয়ে দি কি বলো?’
শায়লা হাসান রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ মা’রব টেনে এক চ’ড়। আমার সংসারে আগুন লাগানো জন্য আমার বরের ভাগ আমি কাউকে দিব না’
–‘ আমি জানি তো তুমি খুব হিং’সুটে’
–‘ তবে রে…’
শানায়া দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা দিল। শায়লা হাসান চেচিয়ে বলল
–‘ তুই আজ শুধু রুম থেকে বের হ’
পাপড়ি রুমে গিয়ে যেনো বুকটা ধুকধুক করছিল। মন চাইছিল চিৎকার দিয়ে কান্না করতে। রায়হানের জন্য ওর মনে কিছু কাজ করে।
একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। বারবার তার পিছনে পড়ে থাকে তার অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন সে যতোই কঠিন হৃদয়ের মানুষ হোক না কেনো তার মনে ভালো লাগা কাজ করে। তাকে নিয়ে ভাবতেও ভালো লাগে। পাপড়ি যখন রায়হান আর শানায়ার বিয়ে কথা হচ্ছিল তখন মনের কোণে কষ্ট অনুভব করছিল। পাপড়ির কলিগের কথায় ভাবনার সুতা ছিঁড়ল।
–‘ তুমি কি আপসেট? ‘
–‘ নাহ!’
–‘ চলো একটা নিউজ এসেছে নিউজ কভার করতে যেতে হবে’

প্রেজেন্টেশন ভালো করে করে। করে একটা বড় ডিল হাতে পেলো। দুপুরের লান্স করে। রাহাত বলল
–‘ স্যার আমাদের কি অফিসে যেতে হবে আবার?’
–‘ না আজকের জন্য আপনাদের ছুটি’
–‘ ওকে থ্যাংকিউ স্যার।… শানায়া’
–‘ হুম’
–‘ তোমাকে কিছু বলতে চাইছিলাম’
–‘ হ্যা বলুন’
–‘ চলো আমাদের যেহেতু ছুটি পাশের পার্কে গিয়ে বসি’
জুবরান ভ্রু কুঁচকে ওদের কথা শুনছিল। শানায়া একবার আড়চোখে জুবরানকে দেখে বলল
–‘ চলুন’
জুবরানের ইচ্ছে করছে শানায়াকে দুটো চ’ড় মে’রে ধরে বেঁধে তার সামনে বসিয়ে রেখে মন ভরে দেখতে। আর বলতে ইচ্ছে করল ‘ এই মেয়ে তোর এতো ছেলেদের সাথে কি?’
কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেলো। মুখে আর বলতে পারল না। ওরা জুবরানের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

–‘ শানায়া ভালোবাসার অনুভূতি কেমন?’
–‘ কিছুটা অন্য রকম। তবে ভালোবাসা সুন্দর, স্নিগ্ধ’
–‘ আর…?’
–‘ ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটার সব কিছু ভালো লাগে তার হাসি, কথা বলা, কান্না…’
–‘ আমি বোধহয় কাউকে ভালোবেসে ফেলেছি’
শানায়া অবাক চোখে রাহাতের দিকে তাকালো রাহাত তা দেখে হেসে বলল
–‘ কিন্তু কি যেনো আমি তাকে হার্ট করে ফেলেছি। আমি তার কাছে ফিরতে পারছি না’
–‘ ভালোবাসলে তাকে কষ্ট দিতে নেই যত্ন করে আগলে রাখতে হয়’
–‘ তার সাথে আমার কথা হয়েছে ১ মাস যানো কিন্তু যেই প্রপোজ করলাম ওমনি কথা বলা অফ করে দিল’
শানায়া ভেবে বলল
–‘ তাহলে তো আপনি হার্ট করেন নি!’
–‘ উহুম করেছি!’
–‘ কীভাবে?’
–‘ ভালোবাসার কথা বলে ওতো আমাকে শুধু ফেন্ড ভাবত ও যদি জানে ওর সাথে আমি টাইমপাস করার চেষ্টা করেছি ও তো হার্ট হবেই’
শানায়া হেসে বলল
–‘ চেষ্টা চালিয়ে যায় নিশ্চয়ই সফল হবেন। তা ভাবীর ছবিটা কি দেখাবেন’
রাহাত মুচকি হেসে ফোনের ওয়ালপেপার ছবি দেখাল শানায়ার হাসি উড়ে গেলো…

চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রণয়সন্ধি– ০৯ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

রাত তিনটার দিকে রুমের বাইরে মানুষজনের কথার আওয়াজ পেয়ে শানায়ার ঘুম ভেঙে গেলো। সবকিছু বুঝতে সময় নিয়ে হুড়মুড় করে রুমের বাইরে আসল। এসে মিরাজ হাসানের বিদেশে থাকা ছেলে হাবিব হাসানকে দেখে আর্শ্চয্য হয়ে গেলো। তার সাথে তার পুত্র ও আছে। শানায়াকে দেখে থমথমে মুখে বলল
–‘ ও আচ্ছা। তাহলে এই মেয়েকে সম্পত্তির ভাগ দিচ্ছ?’
শানায়া হাবিবের মুখশ্রী দেখে বুঝল শানায়া ওর মটেও ভালো লাগে নি। মিরাজ বলল
–‘ আমার সম্পত্তি যাকে খুশি তাকে দিব তাতে তোমার কি?’
–‘ বাবা এইসব মেয়েদের ফাঁদে পা দিবে না এরা হচ্ছে সবকিছু নিয়ে ভেগে যায়’
–‘ সেটা তোমাকে বুঝতে হবে না’
–‘ আমি বুঝব না তো কে বুঝবে? আপনি আমার ভাগ ওকে দিচ্ছেন আমাকে তো বুঝতেই হবে। আর এই মেয়ে যত তাড়াতাড়ি পারো এখান থেকে চলে যা-ও নাহলে কিন্তু তোমাকে পুলিশে দিব!’
শানায়ার মন খারাপ বাড়তে লাগলো। ও তো চলে যেতোই থাকত না তাই বলে মিথ্যা অপবাদ দিবে! মিরাজ হাসান হুংকার দিয়ে বলল
–‘ ভদ্র ভাবে কথা বলো রাতে বেলা চিৎকার চেচামেচি কিসের ও এখানে থাকবে না-কি চলে যাবে তুমি বলার কে?’
–‘ আমি তোমার ছেলে বাবা আমার অধিকার আছে’
–‘ রাখ তোমার অধিকার। বাবা-মা’র খোঁজখবর রাখ কিছু মরে গেছে না-কি বেঁচে আছে। এখন সম্পত্তির ভাগ নিতে এসেছ?’
শায়লা হাসান নরম মনের মানুষ তিনি বলল
–‘ থাক বাদ দাও। ওরা এতো দূর থেকে এসেছে যা তোরা রুমে যা কিছু খাবি দিব?’
–‘ নাহ। আমরা খেয়েই এসেছি’

বাকিরাত টুকু শানায়ার আর ঘুম হলো না দুঃশ্চিন্তায় কাটল। বারান্দায় বসে চাঁদে দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে বলল
–‘ আম্মু তুমি বিহীন দুনিয়াটা এতো কঠিন কেনো?’

সকালে শুধু চা খেয়েই অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেলো। রাতে না ঘুমানোর আর কান্নার জন্য চোখ ফুলে গেছে মাইগ্রেনের ব্যথায় চোখে চশমা দিল। সচারাচর ও চশমা খুব একটা ব্যবহার করে না যখন অতিরিক্ত সহ্যর সীমা পেরিয়ে যায় তখনি ওর চশমার কথা মনে পড়ে। শায়লা হাসান শানায়ার অবস্থা দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন কোনো প্রশ্ন করল না।

শানায়া অফিসে এসে দুইটা ফাইল রেডি করতে বলছিল জুবরান দুইটাই ভুল করছে তার দরুন ঝাড়ি খেয়ে আবার ফাইল রেডি করে। অন্যমনস্ক হয়ে কেবিনে নক করে ডুকতে ভুলে গিয়ে। দেখল জুবরান একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে। দরজা খোলার শব্দে ওরা দুজন দুজনকে ছেড়ে দুরত্ব রেখে দাড়াল। মেয়েটা রেগে বলল
–‘ এই মেয়ে তোমার মধ্যে ম্যানাজ নাই। বসের রুমে নক করে ডুকতে হয় জানো না? কিসব স্টাফ রাখছিস জুবরান’
–‘ মিনা তুই…’
শানায়ার বুক অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। কান্না পাচ্ছে। জুবরানকে অন্য মেয়ের সাথে ও কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। জুবরানের কথা শেষ না করতে দিয়ে শানায়া কাঁপা কণ্ঠে বলল
–‘ সরি স্যার, সরি ম্যাম স্যার ফাইলগুলো রেখে গেলাম। চেক করে বলবেন ‘
কথাটা বলে আর একদন্ড দাঁড়ালো না শানায়া হুড়মুড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। ডেক্সে বসে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে না পেরে ওয়াসরুমে পানি ছেড়ে হু হু করে কেঁদে দিল।

–‘ এটা কি করলি মিনা ওর সাথে এভাবে কেনো কথা বললি?’
–‘ কীভাবে কথা বললাম? ওকে জাস্ট ওর ভুলটা ধরিয়ে দিলাম’
–‘ সেটা তো ভালো ভাবেও বলতে পারতিস’
–‘ তুই ঐ মেয়ের জন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস?’
জুবরান রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ল। জোরে জোরে বার কয়েকশ্বাস নিয়ে বলল
–‘ ওটা আমার শানায়া ‘
মিনা বি*স্ফো*রিত চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ হোয়াট? শানায়া এখানে মানে তোর অফিসে? কিন্তু কীভাবে?’
–‘ কিচ্ছু জানি না আমি। ও নিশ্চয়ই ভুল বুঝেছে ‘
মিনা চোখ ছোট ছোট করে বলল
–‘ ওকে তোর লাইফে ফিরে পেতে চাস?’
জুবরান উত্তর দিলো না চুপচাপ বসে রইলো।
–‘ দেখ মেয়েটা তখন বাচ্চা ছিল না বুঝে না শুনে মজা করতে গিয়ে হয়ত তোর সাথে এমনটা করে ফেলছে’
জুবরান শক্ত কণ্ঠে বলল
–‘ নিজের স্বামী’কে অন্য কারোর বাচ্চার বাপ বানিয়ে দিল’
–‘ তুই এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেনো?’
–‘ ব্যাপারটা তখন কমপ্লিকেটেড ছিল। সবাই আমাকে ভুল বুঝে ছিল’
–‘ দেখ আমরা কিন্তু সবসময় যেটা শুনি বা দেখি তার পিছনেও কিন্তু একটা গল্প থাকে।’
–‘ মানে?’
–‘ মানে এখন তোর শানায়াকে ডাক ‘
জুবরান ভ্রু কুঁচকে বলল
–‘ কেনো?’
–‘ তোকে কেনো বলব তোর শানায়াকেই বলতে দে’
জুবরান শানায়ার ডেক্সের টেলিফোনে ফোন দিল বাজতে বাজতে কেটে গেলো। একজন স্টাফকে ডেকে বলল ‘শানায়াকে ডেকে দিতে’
শানায়া তখন শো-রুমে কালকের অর্ডার গুলো চেক করছে। মনের সব রাগ কষ্ট ঝেড়ে কাজে মন দেওয়ার অযথা চেষ্টা মাত্র। স্টাফ এসে বলল
–‘ স্যার ওনি শো-রুমে গেছেন।’
–‘ আসলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’
–‘ জ্বি স্যার’
মিনার মন খারাপ করে বলল
–‘ ইশশ। ফাস্ট দেখায় মেয়েটার সাথে মিসবিহেভ করে ফেললাম।’
জুবরান চুপ রইল।
–‘ বাসায় গেছিলি?’
–‘ নাহ!’
–‘ কেনো? কবে যাবি?’
–‘ ইচ্ছা নেই যাবার।’
–‘ কিন্তু শানায়া এখানে কীভাবে আসল?’
–‘ জানি না’
–‘ শুননিস নি?’
–‘ শুনলে ও বলবে না। ওকে আমি চিনি’
–‘ কোথায় থাকে ও?’
–‘ কারোর বাসায়’
–‘ হোয়াট! কার বাসায়?’
–‘ জানি না’
–‘ জানিস না মানে কী? তুই ওর খবর রাখিস নাই এতো দিন? আর এখন এসেও ইগো, অভিমানে পড়ে আছিস? মেয়েটা সেফ আছে কিনা খোঁজ রাখিস না’
–‘ বোধহয় ভালো আছে’
জুবরানের এমন গা ছাড়া জবাবে মিনা রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। রেগেমেগে বলল
–‘ এমন ভাবে উত্তর দিসিছ কেনো? মনে হচ্ছে শানায়ার যা কিছু হলে তোর কিছু যায় আসবে না। দেখ জুবরান আই থিংক তোর সবটা ঠিক করা উচিত ‘
–‘ আমাকেই কেনো সব করতে হবে?’
–‘ থাক তুই তোকে বোঝানোই বেকার। রাতে ডিনারে আমার বাসায় আসিস’

মিনা চলে যাবার পর পরই শানায়া নক করে কেবিনে এসে জুবরানের দিকে না তাকিয়েই বলল
–‘ স্যার ডেকেছিলেন?’
শানায়া জুবরানের দিকে না তাকিয়ে বুঝতে পারছে জুবরান ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
–‘ বসো কথা আছে’
শানায়া চমকালো। ‘তুমি’? তুমি শব্দে কথা বলল কেনো হঠাৎ? ঠিক শুনল? না-কি মনের ভুল? শানায়া সে কথার অগ্রহ্য করতে পারল না চেয়ার টেনে বসল।
–‘ আপনার কাজে ইদানীং এতো ভুল হচ্ছে কেনো শানায়া?’
আবার ‘আপনি’? তাহলে কি আগে ভুল শুনল? হয়ত!
–‘ স্যার ঠিক ভাবে করার চেষ্টা করব।’
জুবরান কিছু জিজ্ঞেসা করতে চেয়েও পারল না। চুপ করে তাকিয়ে রইলো শানায়ার মুখে দিকে মিনিটক্ষনেক পর বলল
–‘ আপনি কি অসুস্থ? ‘
–‘ ঠিক আছি’
আরো সময় গেলো। শানায়া বলল
–‘ আর কিছু বলবেন স্যার? নাহলে আসি কাজ ছিল’
–‘ যান’

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here