#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
#পর্ব_২৯
অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো লালচে বর্ণ ধারণ করলো মুহুর্তেই। প্রহরের চোখে পানি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সৌহার্দ্য। প্রহর বরাবরই শক্ত মনের অধিকারী। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ওর। তার এই জীবনে সৌহার্দ্য কখনো প্রহরকে কাঁদতে দেখেনি। ঠিক কতটা আঘাত পেলে প্রহরের মতো একটা মানুষ কান্না করতে পারে, তা ঠিকই টের পেয়েছে সৌহার্দ্য।
“কী হয়েছিল তোর সেদিন তাহলে? কেন আমাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে হারিয়ে গিয়েছিলি?”
কান্নামাখা মুখশ্রীতেই হাসির রেশ ফুটে উঠলো প্রহরের। তাচ্ছিল্যের হাসি! সৌহার্দ্য সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা বিদ্রূপটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো। প্রহর বার কয়েক পলক ফেলে সৌহার্দের দিকে তাকালো। বললো,
“তোরা ভাই-বোন দুটো একই পদার্থ দিয়ে তৈরি, জানিস? তোদের দুজনের সাথে দেখা করার আগে আমি ভেবেছিলাম, তোর আমাকে দেখে অন্তত একবার জিজ্ঞেস করবি যে, আমি এতোদিন কোথায় ছিলাম? কেন আমি সেদিন কাউকে কিছু না বলে চলে গিয়েছিলাম? কিন্তু না! তোরা আমার মুখের দিকে একবারের জন্য তাকিয়ে আর দ্বিতীয় বার তাকাসনি। এতো ঘৃণা আমার প্রতি! এতো অসহ্যকর হয়ে গিয়েছি আমি! আচ্ছা, তোদের মনে কি একবারের জন্যও প্রশ্ন জাগেনি? জাগবেই বা কেন? আমি তো ঠকিয়েছি তোদের! আমি তো প্রতারক! আর প্রতারকদের কাজের পেছনে কোনো কারণ থাকতে নেই। তাই না?”
সৌহার্দ্য নির্বাক হয়ে গেল। আসলেই সে কখনো জানার চেষ্টা করেনি, প্রহর কেন হুট করে দেশ ছেড়েছিল! একটা অনুমানের উপর ভিত্তি করে সে সবসময়ই প্রহরকে দোষারোপ করে এসেছে। তাহলে কী তার ধারণাটা ভুল ছিল? চিন্তিত ভঙ্গিতে সে বললো,
“তুই চলে যাওয়ার কয়েক দিন পর মধুও বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল। কোথায় গেল, কেন গেল কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। শুধু একটা চিরকুটে লিখে গিয়েছিল ‘আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। আমি আর কখনো ফিরবো না।’ নিজের মনকে মানাতে পারিনি আমি। মধু অবাধ্য ছিল। বাবা ওকে প্রচুর শাসন করতো। কিন্তু ওকে যে আমরা কতটা ভালোবাসতাম, তা ও হারিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারি। একমাত্র মেয়ের শোকে বাবা স্ট্রোক করে। আমি অনেক খুজেছি ওকে, জানিস? কিন্তু যে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যায়, সে আর ফিরে আসে না। যে ইচ্ছে করে নিজেকে আড়াল করে রাখে, তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। মধুর জন্য বাবা-মায়ের হাহাকার গুলো নিজের চোখের সামনে দেখতে প্রচুর কষ্ট লাগতো। মধুর একটা ভুল সিদ্ধান্ত সবাইকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই সেদিন-ই আমি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, আমার বাবা-মাকে আমি আর কোনোদিনও কষ্ট পেতে দেবো না। কয়েকমাস পর জানতে পারি, তুই ভার্সিটির লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছিস; আবার নিজের প্যাশনকেও ছাড়িস নি! তোর বাবার ইনভেস্টিগেশনের জবটাও নিয়েছিস। আমি ভেবেছিলাম, নিজের ক্যারিয়ার গোছানোর জন্যই তুই কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়েছিস স্বার্থপরের মতো।”
প্রহর বিমর্ষ ভঙ্গিতে হাসলো। বললো,
“ঠিক। ঠিকই বলেছিস তুই। আমি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের পরিবারের জন্য নিজের ভালোবাসাকে পি/ষে মে/রে ফেলেছিলাম। কিন্তু এতে আমার মন যে কতবার ভে*ঙে*ছে, সেটা শুধু আমি-ই জানি।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বললো,
“পরিবারের জন্য মানে? তোর মা আর বোন তো রাজী-ই ছিল বিয়েতে! আর এখন তো তারা ভালোই আছে! তুই না সেদিন বললি অর্থী কানাডাতে পড়াশোনা করছে। তোর মা-ও ভালো আছে। তাহলে?”
প্রহরের চোখ দুটো অশ্রুর ব্যাপকতায় টলমল করে উঠলো। ঈষৎ কম্পিত কণ্ঠে সে বললো,
“আমার মা আসলেই অনেক ভালো আছে, শান্তিতে আছে। হয়তো আমার মতো অযোগ্য ছেলের থেকে সারাজীবনের জন্য দূরে চলে গিয়ে অনেক শান্তিতে আছে! আমি তো পারিনি আমার মাকে কোনো সুখ দিতে! বাবা মা”রা যাওয়ার পর থেকে শুধু কষ্ট-ই পেয়ে গেছেন উনি। শেষ মুহুর্তে বাঁচাতেও পারিনি আমাকে। আমি আসলেই অপদার্থ, খারাপ, প্র*তা*র*ক, স্বার্থপর!”
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে প্রহর নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল। সৌহার্দ্য নির্বাক, হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো। প্রহরের মা আর বেঁচে নেই! ছেলেটার জীবন থেকে মা-বাবা দুজনেই হারিয়ে গেল! বুকের ভেতর মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো সৌহার্দ্যের। যেই ছেলেটা ওর দুঃসময়ে পাশে ছিল, নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবেসেছে, আগলে রেখেছে, তার এতো অসহনীয় যন্ত্রণার দিনে সে পাশে দাঁড়াতে পারেনি। একবার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। দেখা হওয়ার পর থেকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেই চলছিল সে।অথচ প্রহর নিজের ভেতরে সবকিছু চেপে রেখে হাসি মুখে সকল অপমান, কটুবাক্য গায়ে মেখে নিয়েছে। সৌহার্দ্যের শত অভিযোগের বিপরীতে নিজের মনে সহস্র অভিযোগ থাকলেও, একবারও তা মেলে ধরেনি কারো সামনে। আজ অপারগ হয়ে সত্যটা প্রকাশ করলো প্রহর।
“স্যার চলে গিয়েছেন গাড়ি নিয়ে। আপনি বের হলে কেবিনটা লক করে দিতাম আর কি!”
ভাবনার মাঝে এমন কথায় চমকে উঠলো সৌহার্দ্য। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো, প্রহরের এ্যাসিস্ট্যান্ট রিয়াদ চাবি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্য অসহনীয় বিমর্ষ মনে বললো,
“তোমার স্যারের বন্ধুত্বের কাছে হেরেই গেল আমার বন্ধুত্ব। ও যেভাবে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে আমাকে দেখেছিল, সেভাবে হয়তো আমি ওকে দেখতে পারিনি কোনোদিন!”
রিয়াদ মলিন হেসে বললো,
“স্যারের মনে এমনিতেই অনেক দুঃখ, জানেন? এর ওপর আপনারা অনেক কথা শুনিয়েছেন ওনাকে। আপনাদের দোষ দেওয়া যায় না, কারণ এটাই স্বাভাবিক। আপনাদের এমন আচরণ করাটাই নরমাল বলে ভেবে নিয়েছিলেন স্যার। এজন্য আপনাদের কথার পৃষ্ঠে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া দুঃসহ ঘটনাগুলো প্রকাশ করেননি। সেদিন ওনার আসলেই কোনো উপায় ছিল না। কোনো ছেলেই পারে না নিজের মায়ের মুমূর্ষু অবস্থা দেখার পরেও বিয়ের আয়োজনে মত্ত থাকতে। মায়ের মৃত্যুতে তিনি যতটা আঘাত পেয়েছিলেন, অর্থী ম্যাম আরো বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। এরকম পরিস্থিতিতে স্যার দুনিয়া-ই ভুলে গিয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে সবটা স্বাভাবিক হয়েছে কিছুটা। স্যার সুযোগ বুঝে আপনাদেরকে ঘটনাটা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। আপনাদের মনে স্যারের প্রতি রাগ, ঘৃণা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তবুও তিনি আশায় ছিলেন, আপনারা হয়তো একবার তাকে বোঝার চেষ্টা করবেন, তার ওপর অধিকার খাটিয়ে সবটা জানতে চাইবেন। কিন্তু সেই আশাটাও আজ ভেঙে দিলেন! স্যারের ভাগ্য দেখে আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে। সারাজীবন প্রিয় মানুষ গুলোর কাছ থেকে আঘাত-ই পেয়ে গেল শুধু মানুষটা!”
সৌহার্দ্য নিজের মাথার চুল আঁকড়ে ধরলো। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে তার। নিজের মনের ওপর ঘৃণা লাগছে! তার মনে এটা আসলো কী করে যে, প্রহর স্বার্থপর হবে!
“স্যার কিন্তু দূর থেকে আপনাদের খেয়াল রেখেছে সবসময়ই। মাধুর্য ম্যামকে নিয়ে স্যার প্রচুর পজেসিভ। চব্বিশ ঘণ্টা চোখে চোখে রাখেন ওনাকে। আপনার পরিবারের প্রতিটি মানুষের স্যার এক্সট্রা সেইফটির ব্যবস্থা করেছেন। আপনার বাবা এক্সিডেন্টের কেসটাও আনঅফিশিয়ালি ইনভেস্টিগেট করছেন উনি। আগে জানতাম না এসবের পেছনের কারণটা কী! এখন বুঝতে পেরেছি।”
সৌহার্দ্য বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নাহ্! প্রহর ওর জন্য যা করেছে, সেটার মূল্য সে আজীবনে চুকিয়ে উঠতে পারবে না। কিন্তু তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, তাকে ততটুকু চেষ্টা করতেই হবে।
সৌহার্দ্য বেরিয়ে এসে নিজের গাড়িতে উঠতেই তার ফোন বেজে উঠল। তরী কল দিয়েছে। সৌহার্দ্য কল রিসিভ করতেই তরী বললো,
“তুমি কোথায়? প্রহর ভাইয়া ঠিক আছেন? সবকিছু ঠিক আছে তো?”
সৌহার্দ্য চোখ বন্ধ করে নিজের কপালের ঘাম ঝাড়লো। বললো,
“কিচ্ছু ঠিক নেই, তরী! কিচ্ছু না। তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। মধুর পিছু পিছু তখন গেলে না তুমি! আমি একটা লোকেশন পাঠাচ্ছি। মধুকে নিয়ে সেখানে চলে এসো।”
তরী হতভম্ব হয়ে বললো,
“কিন্তু আমওও তো এই মাত্র বাসার কাছে এসে পৌছলাম! কী হয়েছে বলো তো!”
সৌহার্দ্য তরীকে সবটা খুলে বলতেই তরী তড়িৎ গতিতে বললো,
“তুমি চিন্তা করো না। আমি আবার মধুর হোস্টেলে যাচ্ছি। মধু ওখানেই আছে। আমি ওকে নিয়ে প্রহর ভাইয়ার বাসায় পৌছে যাবো যত তাড়াতাড়ি পারি!”
সৌহার্দ্য কিছুটা স্বস্তি পেল। কোমল কন্ঠে বললো,
“সাবধানে যেও। আমার প্রাণের খেয়াল রেখো!”
তরী অবুঝের মতো বললো,
“আপনার প্রাণের মানে?”
সৌহার্দ্য অতৃপ্তির হাসি হাসলো। জড়ানো কন্ঠে বললো,
“বলবো। খুব শীঘ্রই বুঝিয়ে বলবো তোমাকে!”
সৌহার্দ্য কল কা*ট*তেই তরী তড়িঘড়ি করে আবার বেরিয়ে পড়লো। পেছন থেকে সুজাতা আর সৌহার্দ্যের দাদী অনেক বার ডাকলো। তরী সেদিকে না তাকিয়ে শুধু একটা বাক্য-ই বললো,
“পরে এসে বলছি!”
এদিকে সৌহার্দ্য প্রহরের বাড়িতে পৌঁছে ছুটে ভেতরে ঢুকলো। মেইন ডোর খোলা-ই ছিল। সৌহার্দ্য ভেতরে ঢুকতেই প্রহরকে দেখতে পেল। ডাইনিং টেবিলে খাবার গোছাচ্ছে সে। হয়তো রাতের খাবার নিজেই রান্না করেছে। সৌহার্দ্যকে এমন হম্বিতম্বি করে ভেতরে ঢুকতে দেখে প্রহর মলিন হাসলো। বললো,
“এতো তাড়াহুড়োর কী আছে? হারিয়ে যাচ্ছি না আমি।”
সৌহার্দ্য ধীর গতিতে প্রহর কাছাকাছি এসে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। অদ্ভুত কন্ঠে বললো,
“ক্ষমা করবি আমায়?”
প্রহর মলিন হেসে জড়ানো কন্ঠে বললো,
“কীসের ক্ষমা? তুই তো কোনো ভুল করিসনি! অপরাধ আমার ছিল। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত!”
“অভিমান করেছিস আমার ওপর?”
“কিসের অভিমান? অভিমান তো তার ওপর করা যায়, যাকে মানুষ ভালোবাসে!”
“তুই ভালোবাসিস না আমায়?”
প্রহর দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পরাজিত সৈনিকের মতো বললো,
“বাসি।”
সৌহার্দ্য সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে বললো,
“যদিও তুই ভালোবাসিস না বললেও বিশ্বাস করতাম না! হা হা হা!!”
প্রহর কপাল কুঁচকে বললো,
“মজা কম করো আমার সাথে। আমি শুরু করলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
সৌহার্দ্য মেনে নিয়ে বললো,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে একটা শর্তে!”
“কী শর্ত?”
“ম্যেয় আই হাগ ইউ?”
বলেই সশব্দে হেসে দিলো সৌহার্দ্য। প্রহর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“হাগ? জুতো দিবো তোকে, শা*লা!”
বলেই নিজেও হেসে জড়িয়ে ধরলো সৌহার্দ্যকে। সৌহার্দ্য হাসতে হাসতে বললো,
“এই! ডোন্ট কল মি শা*লা!!”
“কেন বলবো না? সত্যিটা তো তোকে মেনে নিতেই হবে!”
সৌহার্দ্য কিছু বলতে যাবে, এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠল। তরী কল দিয়েছে। সৌহার্দ্য রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তরীর অস্থির কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
“মধু হোস্টেলে নেই। অথারিটির সবাই বললো, ও নাকি এখান থেকে একেবারের জন্য চলে গেছে!”
প্রহর সবটাই শুনলো। সৌহার্দ্য কিছু বলার আগেই প্রহর একজনকে কল দিয়ে বললো,
“এখন কোথায় আছে?”
“রেলস্টেশনের দিকে ঢুকতে দেখলাম।”
প্রহর ফোন রাখতেই সৌহার্দ্য বললো,
“এতোরাতে ও রেল স্টেশনে চলে গেল। আমাদের সেখানে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। কী করবো এখন!”
প্রহর লম্বা একটা শ্বাস নিলো। সৌহার্দ্যের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“আমি জানতাম ও আবার চলে যাবে। তুই চিন্তা করিস না। সবটা আমার ওপর ছেড়ে দে। আমার জন্য একবার মধুকে তোরা হারিয়েছিস। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবো না আমি।”
প্রহর বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। খাবারের টেবিলের ওপর গুছিয়ে রাখা খাবার গুলো আর মুখে তুলতে পারলো না সে। প্রহরের যাওয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো সৌহার্দ্য।
প্রহর যখন রেল স্টেশনে পৌঁছল, তখন স্টেশনের লোকারণ্য অনেকাংশেই কমে গেছে। প্রহর প্রতিটা মানুষের দিকে তাকিয়ে মধুকে খুঁজতে লাগলো। একটা ট্রেন-ই দাড়িয়ে আছে। সেটা রাত বারোটায় ছাড়বে। কিন্তু বারোটা বাজতে আর পাঁচ মিনিট বাকি। ট্রেনের তীক্ষ্ণ শব্দটা বারবার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রহরের হাতে আর বেশি সময় নেই। প্রহর তাড়াহুড়ো করে প্রতিটা কেবিনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিলো। ঝড়ের গতিতে ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করলো। প্রহর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ট্রেনের যাওয়ার দিকে। হাহাকার করে বলে উঠলো,
“তোমাকে আমার আর এজীবনে পাওয়া হলো না, মধু! আমার ধরা-ছোয়ার বাইরে চলে গেলে তুমি! ”
#চলবে……