প্রণয়াসক্ত হাওয়া পর্ব -০৪+৫

#প্রণয়াসক্ত_হাওয়া`[৪]
#সুমাইয়া_মনি

সংসার জীবন যেন তার ভাঙতে বসেছে। নিশির চিত্রটি দেখার পর তার মনমানসিকতা উদাসীনতায় ছেয়ে গেছে। হুটহাট রাবিকে জিজ্ঞেস করতে দ্বিধাবোধ কাজ করছে। রিমিকেও এমুহূর্তে চিত্রটির বিষয় জানাতে চাইছে না। তার অস্থিরতা যেন ক্ষণে ক্ষণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে বিছানায় বসল। ঘড়ির পানে চেয়ে দেখে বারোটা পঞ্চাশ। রিনির কাছে জানতে পারে একটার দিকে ইমাম শেখ ও রাবি বাড়ি ফিরবে। গোসল সেরে নামাজ আদায় করে নেয়। ইতিমধ্যে রাবিও বাড়ি ফিরেছে। সকালের ঘটনাটি নিয়ে রাবির এখনো কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন। রায়ার সঙ্গে কোনো প্রকার কথা বলল না। তার ইগনোর বুঝতে পেরে রায়া নিচে এলো। একত্রে খাবার খেয়েদেয়ে যে যার কামরায় বিশ্রাম নিচ্ছে। সোফায় বসে রাবি ফোন ঘাটছিল। রায়া সে-ই সময়ে ওর এক বন্ধু নয়নকে ভিডিও কল দিলো। নয়ন ফ্রী থাকায় কল পীক করল। রায়ার কানে ব্লুটুথ ছিল। ওর কথা শুনতে পেলেও নয়নের কথা সে শুনতে পাবে না।
‘দোস্ত তোকে খুব মিস করছি। তোর সঙ্গে কাটানো আগের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। এখন তো আমার ভার্সিটিতে যাওয়া হবে না। তাই আর দেখাও হচ্ছে না। চল না একদিন আমরা দেখা করি।’
রায়ার জোরেশোরে বলা কথাগুলো রাবি ঠের শুনতে পাচ্ছে।
তবে তার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে নিশ্চিন্তমনে ফোন ঘাটছে। রায়া এবার অন্য প্রসংগে আসলো।
‘দোস্ত ঐ গানটা গা তো। ঐ যে ওইটা। নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে। লা লা লা আকাশে।’
রাবি এবার তী র্য ক চোখে তাকালো। ক্ষি প্র হয়ে ঢয়ার থেকে সাদা রঙের ব্লুটুথ বের করে দু কানে লাগিয়ে নিলো। আড়চোখে রায়া এসব থেকে নিরুত্তর হয়ে যায়। উদাসী মনে দৃষ্টি নত রেখে আনমনা হয়ে ভাবতে লাগলো। নয়ন অপর প্রান্ত থেকে এবার জবাব দিলো,
‘কাহিনি কী? এতক্ষণ উল্টোপাল্টা বকবক করে এখন উদাস হয়ে আছিস যে? তুই খুশি আছিস ঐ বাড়িতে?’
রায়া মৃদু হাসি প্রধান করে বলল,
‘অনেক হ্যাপি আছি। শ্বশুর বাড়ির সবাই খুব ভালো।’
‘আর স্বামী? সে ভালো তো? তোকে ভালোবাসে, কেয়ার করে?’
এক পলক রাবিকে দেখে রায়া সরু নিশ্বাস ফেলে বলে,
‘সবার কপালে সব সুখ লিখা থাকে না। এক দিক থেকে তাকে অসুখী থাকতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক।’
‘কী বোঝাতে চাইছিস তুই?’
‘বোঝাতে চাইছি শ্বাশুড়ি আম্মা ডাকছে। পরে কথা বলব।’
নয়ন কিছু বলতে উদ্যোত হতেই কল বি চ্ছি ন্ন করে রায়া। ফোন রেখে কামরা থেকে বেরিয়ে রিনির কামরায় আসলো।
.
সন্ধ্যার পর রিনি সকলের জন্য পাস্তা বানায়। নামায আদায় করে সকলে ড্রইংরুমে আসলেও রাবি আসে না। শ্বাশড়ির নির্দেশে রাবিকে ডাকতে আসে। রুমের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রায়া জোর বেগে হাঁচি দেয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তার সামনে দাঁড়ানো রাবির মুখশ্রীতে এসে হাঁচির সঙ্গে বের হওয়া তলর আবরণ ছিঁকটে গায়ে লাগে। নাকমুখ কুঁচকে বলে,
‘ড্যা ম, আমার সামনে এসেই দিতে হলো।’
‘দেখিনি আপনি আমার থো’ত’মা’র সামনে ছিলেন।’
‘হোয়াট থো’ত’মা?’ কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল।
রায়া আহাম্মক হয়ে চেয়ে রইলো রাবির পানে। ভুল মানুষের সামনে ভুল বাক্য উচ্চারণ করে ফেলেছে ভুলবশত ভাবে। এখন এটার সঠিক ভাষা জানালে নিখাদ ওঁকে ক্ষ্যা ত উপাধি দিবে এতে কোনে ভুল নেই। রায়া বিষয়টি ঘুরিয়ে বলল,
‘আপনি আমার সামনে ছিলেন। ও হ্যাঁ! রিমি আপনাকে ডাকছে নিচে আসুন।’ বলতে বলতে দ্রুত গতিতে হাঁটা ধরল।
রাবি ওঁকে থামাতে গিয়েও পারল না। সে তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পায়নি। বিরক্ত বোধ নিয়ে বেসিনে এসে মুখ ধুয়ে নেয়। তারপর নিচে আসে। পাস্তা রাবির পছন্দের।
টেবিল থেকে এক বাটি নিয়ে সোফায় বসে খেতে লাগলো একত্রে। টিভি চলছে। খবর দেখতে ব্যস্ত সকলে। রায়া খাওয়া শেষে কামরাতে এলো। সোফার ওপর রাবির ফোন দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নিলো। পাওয়ার বাটন ক্লিক করে পাসওয়ার্ড প্যাটার্ন দেখে ফোন আগের স্থানে রেখে দিল। ভেবেছিল নিশির সম্পর্কে খুটিনাটি আরো বিষয় খবর নিবে ফোনের মাধ্যমে। কিন্তু তা আর হলো না। পায়ের শব্দশুনে বুঝতে পারে রাবি আসছে। সে ফোন রেখে নিজের ফোন থেকে ইউটিউবে নিশিরাত নিয়ে গানের লিস্ট সার্চ দিয়ে বের করে গান প্লে করল। বিছানায় বসে গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গাইছে।
রাবি প্রবেশ করে ফোন হাতে নিয়ে রায়ার ওপর নজর ফেলে। এমনভাবে গানের লিপছি করতে দেখে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে বসে,
‘হঠাৎ নিশিরাতের টপিক মাথায় ঢুকলো কেন?’
‘আপনার সমস্যা হচ্ছে?’
‘ইউ নো, বেশি বোঝার রোগটি তোমারও আছে। আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছি।’ আঙুল তুলে বলল।
তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দেওয়ার ফলে রায়া থমথম খেয়ে যায়। মিনমিন স্বরে বলে,
‘আমার নিশিরাত পছন্দ।’
‘বারান্দায় গিয়ে গানের চর্চা করো। একদম পারফেক্ট হবে।’
‘না গেলে কী করবেন?’
‘আমি তোমাকে জোর করছি না। শুধু বলছি। আচ্ছা তুমি এত কথা কীভাবে বলো?’
‘মুখ থেকে বলি।’ চটজলদি বলে ফেললো।
রাবি বিরক্তিতে চোখ হালকা বন্ধ করে খুলে বলে,
‘আমি এটা বোঝাতে চেয়েছি তুমি এত কথা কেন বলো? কম কথা বলতে পারো না।’
‘এইযে মাত্র খেয়ে আসলাম। সেগুলো হজম করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। কথার মাধ্যমে পরিশ্রম করে খাবার হজম করছি।’
‘ইরিটেট লজিল! ক্যারি অন।’ বিরক্ত স্বরে বলে প্রস্থান করল।
রায়া গান বন্ধ করে ম্লান হাসলো। তার সাথে বাক্যব্যয় করতে বেশ ভালোলাগে। কিন্তু রাবি বেশিরভাগ সময় ফোন বা কাজে জন্য ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাকে সময় দেওয়ার ফুরসতও তার যেন নেই। তবে সে এভাবেই রাবির সঙ্গে বিরক্তিকর কথাবার্তা, কর্মকাণ্ড করবে। যাতে করে সে একটু হলেও তার সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজে পায়।

রাবির এখানে তেমন বন্ধু নেই। যদিও থাকে তবে আমেরিকায় রয়েছে। এজন্য সে একা একা ফুটপাত দিয়ে নিরবে হেঁটে চলেছে। কাল থেকে বাবার কাপড়ের ফ্যাক্টরির দায়ভার নিতে হবে। সব দায়িত্ব আজ তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে ইমাম শেখ।
এতে তার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। তবে সে তার শখকেও প্রধান্য দিবে। ফুরসত পেলেই ড্রেসের ডিজাইন আঁকবে।
সেগুলো মানসম্মত ভাবে তৈরী করাবেন। এবং প্রচার করার জন্য মডেলদের অফার দিবেন। এসব পরিকল্পনা আগেভাগে করে রেখেছে। আপাতত ক’দিন এ কাজে মন দিতে চায়।
বাড়িতে ফিরার পথে দুই বক্স চকলেট কিনে রায়া ও রিনির জন্য। আগে বাহিরে বের হলে রিমি ও বাবা-মায়ের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যেত। আজও নিয়েছে তবে একটা বেশি।
বাড়িতে ফিরে রিনিকে তার চকলেট বক্স দিয়ে রায়াকে তারটি দেয়। তবে সে কিছু বলে না। রায়া চকলেট বক্সটি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রাবি সেটি খেয়াল করেছে। ভেবেছিল চকলেট পেয়ে রায়া খুশি হবে। তবে তার ভাব’মূর্তি তেমন দেখতে পেল না। সে অতোটা মাথাঘামালো না। ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসতেই রায়া রুমে ফিরলো। তবে খালি হাতে। চকলেটের বক্সটি হাতে ছিল না। রাবি রায়ার পানে নজর ফেলে সরস স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘চকলেট কোথায়?’
‘বাবা-মা’কে দিয়ে এসেছি।’
‘ঐগুলো তোমার জন্য এনেছি।’
‘তখন বললেন না যে।’
‘বলতে হবে, বুঝো না তুমি? তোমার হাতে দিয়েছি মানেই তোমার।’
‘একদম না। ঘরে যদি কিছু নিয়ে আসেন হোক সেটি সল্প সবার জন্য আনবেন। রিনি ও আমার জন্য এনেছেন ভালো কথা। তাহলে বাবা-মা কী দো ষ করল?’
‘আজব, এখানে দো ষ শব্দটি আসছে কেন?’
‘কথার কথা বলেছি। এখন থেকে কিছু আনলে সবার জন্য আনবেন।’
রাবির কী বলা উচিত বুঝতেছে না। রায়ার পানে কিঞ্চিৎ বি স্ম য় ক র আকৃ’তিবিশিষ্ট আদলে তাকিয়ে আছে। ওর কথাগুলো সঠিক এবং ভালো লেগেছে। তবে চকলেট গুলো তার জন্য এনেছে এটা না বলাতে কিঞ্চিৎ অপরাধী অনুভব করল নিজেকে। বাহিরে দাঁড়িয়ে মনোয়ারা বেগম রায়ার কথাগুলো শুনে বেশ আনন্দ অনুভব করে অন্তরে। সে চকলেট গুলো ফিরিয়ে দিতে এসেছিল। এতগুলো চকলেট তো আর তারা একা খেতে পারবে না। দরজার সামনে আসতেই তাদের কথপোকথন কর্ণকুহরে আসার ফলে সাময়িক ভাবে থামলো সে এবং সব শুনলো। সে গর্বিত! ছেলের জন্য উপযুক্ত মেয়েই এনেছে। যে কি-না তার ছেলের পাশাপাশি সকলের উপর যত্নশীল ও দায়িত্বশীল। নিঃসন্দেহে রায়া বৌমা হিসাবে প্রশংসনীয়!
.
.
.#প্রণয়াসক্ত_হাওয়া`[৫]
#সুমাইয়া_মনি

‘রায়া আমার প্যান্ট কোথায়?’ চিল্লিয়ে বাথরুমের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল রাবি।
‘বাথরুমে নিয়ে এসেছি পড়ার জন্য।’ মেকি রা’গ নিয়ে বলল রায়া।
‘বাঁ’কা জবাব দেওয়া কী খুব জরুরী?’
‘তো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আমি বাথরুমে এসেছি। তবুও কেন জিজ্ঞেস করছেন।’
‘হোয়াট লজিক। এট লিস্ট সেখান থেকে বলতে তো পারো কোথায় রেখেছো।’
‘জানি না।’
‘আই নো, তুমি এটাই বলবে।’
‘জানেন যখন খুঁজে নেন।’
নাকের পা টা ফুলিয়ে রাবি অগ্রসর হয় আলমারির নিকট। তার প্যান্ট যদি কেউ না ধরে থাকে তাহলে সেটি কী উধাও হয়ে যাবে? বুঝতে পারছে না। রায়া বের হয়ে দেখে রাবি এখনো প্যান্ট খুঁজতে ব্যস্ত। সে হ্যাংঙারের নিকট এগিয়ে সেখান থেকে প্যান্টটি নিয়ে রাবির হাতে দেয়। রাবি চোয়াল শ ক্ত করে বলল,
‘এখানে তুমি রেখেছিলে?’
‘হ্যাঁ! বাহির থেকে এসে চেঞ্জ করে ওখানে রেখেছিলাম।’
‘স্ট্রেঞ্জ! ভালোভাবে বললেই তো হয়। নিজেকে টেনে বলছো কেন? হয়তো আমি ভুলে গেছি।’
‘কথায় কথায় প্রশ্ন ছুঁড়েন কেন? পেয়েছেন, খুশি হয়েছেন, এবার আসতে পারেন।’
রাবি বিনাবাক্যে প্যান্ট নিয়ে বাথরুমে গেল। রেডি হয়ে বাবা ছেলে বের হয় নিজেদের গন্তব্যে।
রিনিও চলে যায় কলেজে। বাড়িতে শ্বাশুড়ি ও বউ রয়ে যায়৷ ড্রইংরুমে বসে মনোয়ারা বেগম তরকারি কাটছিল। রায়া তাকে সাহায্য করে। তাদের মধ্যে বেশ সুন্দর একটি বন্ডিং তৈরি হয়। শ্বাশুড়ির আচরণ বন্ধুদের সমতুল্য। তাদের আলাপন বেশ জমে উঠে।
‘রাবি আমেরিকায় থেকেছে ঠিকিই। তবে ও বাংলাদেশের কালচার ভুলেনি সবই জানে।’
‘একটুও না। সেদিন কী হয়েছে শুনুন মা।’ নানি সম্প্রতি ঘটনাটি জানায় তাকে। এবং খুটিনাটি অনেক কিছু জানায়। এতে করে মনোয়ারা বেগম বুঝতে পারে ছেলের সম্পর্কে তার ভুল ধারণা ছিল। তিনি বললেন,
‘তুমি তাহলে আস্তেধীরে শিখিয়ে দিবে।’
‘আপনার খা’টা’স ছেলের কথার মধ্যে নেই কোনো র স ক ষ। আছে শুধু ইগো, ইগো, ইগো।’
মৃদু হাসলেন তিনি। বললেন,
‘একটু মানিয়ে নিও।’
‘তার সব কিছু মেনে নিবো মা। কিন্তু তার প্রেমিকাকে কীভাবে মানিয়ে নিবো জানি না।’ মনে মনে বলল রায়া। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ হয়ে রয়। মনোয়ারা বেগম আরো অনেক কথা বললেন। রান্না শেষ হয়। রিনিও ইতিমধ্যে কলেজ থেকে এসেছে। বাবা-ছেলের আসতে বিকেল হবে। তারা একত্রে খেয়ে নেয়।
_
বিকেলে শ্বাশুড়ির দেওয়া চকলেট বারান্দায় দাঁড়িয়ে খাচ্ছিল রায়া। এরিমধ্যে রাবি রুমে এসে রায়াকে না দেখতে পেয়ে বারান্দায় উঁকি দেয়। খোলা চুল মেলে দিয়ে রেলিঙে হাত দ্বারা ভর রেখে ঝুঁকে গুনগুন করে গান গাইছিল। মৃদু শীতল হাওয়ায় খোলা চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উঠছে। রাবি স্নিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে শার্টে ওপরের দুটি বোতাম খুলে এগোয় রায়ার নিকট। সে একটু কাছে এগিয়ে ঠোঁট কুঞ্চিত করে জিভের সাহায্যে বাঁশির মতো তী ক্ষ্ণ শব্দ তুলে শিস বাজালো।
আ ক স্মি ক শিসের শব্দে রায়া চমকে উঠে পিছনে ঘুরে তাকায়। রাবির ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দেখা গেল। ভী তি ক র চোখে তাকিয়ে বুকে তিন বার ফু দিলো। মৃদু রা গ নিয়ে বলল,
‘এভাবে ভ য় দেখালেন কেন?’
‘বেশি ভ য় পেয়েছো? গ্রামের লোকজন লোহাপোড়ার পানি সেবন করায়। তোমায় কী সেটা খাওয়াতে হবে?’
‘চুপ করুন।’ ঝা ড়ি দিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসল। রাবি রায়ার পাবে চেয়ে হেসে হেসে বাথরুম চলে এলো।
……….
সময়, দিন, মাস কেঁটে যায়। দেখতে দেখতে তিন মাস পেরিয়ে যায়। রাবি ও রায়ার মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক আগের মতোই রয়েছে। ঝ গ ড়া, খুনসুটি দৈনিক জীবনের রুটিংয়ে যেন পরিনত। রায়া নিশির ব্যাপারে বহুবার চেষ্টা করেছে জানার। তবে সে কোনো না কোনো কারণে ব্যর্থ হয়েছে। রচনা খাতুনের অসুস্থতার কথা শুনে রায়া এবাড়িতে এসেছে। ক’দিন এখানেই থাকবে। রাবি সঙ্গে আসেনি। রিনি ও রায়া একত্রে এসেছে। রাবি রায়ার যাওয়ার বিষয়টি জানতো না।
বাড়িতে এসে মায়ের কাছ থেকে জানে। বিকেলের দিকে রাবি রায়াদের বাড়িতে আসে রচনা খাতুনকে দেখতে। রাবিকে রচনা নানি একা পেয়ে তার কথার মাধ্যমে চে’পে ধরে।
‘শুনলাম তুমি নাকি এখনো বা স র সারো নাই নাতনির লগে?’
এমন লজ্জিত প্রশ্ন শুনে রাবি কিছুটা লজ্জা পেল। মিনমিন স্বরে বলল,
‘হয়ে যাবে একদিন।’
‘অন্য কোনো মাইয়ার চক্কর আছে নি? থাকলে কইয়া দেও। নাতনি কুমারী থাকতে থাকতে তোমার থেকা সারাইয়া লইয়া আমু।’
হতুম্বুবু হয়ে রাবি হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘এমন কোনো মেটার নেই নানু।’
‘তাইলে জলদি বা স র সাইরা হালাও। নয়তো আমারে তো চিনোই।’
‘ক্লিয়ারলি আমি আপনাকে চিনি নানু।’ গমগমে গলায় বলল।
‘মনে থাকে যেন।’
‘অফকোর্স!’
তাদের কথোপকথনের মাঝে রায়া আসলো। রাবি রায়াকে বাহিরে যেতে বলল তার সঙ্গে। ওঁকে রুমে নিয়ে আসলো রায়া। ঝটিতি আওয়াজে রাবি প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘তুমি নানুকে বলেছো আমাদের এখনো বা স র হয়নি?’
‘হ্যাঁ।’ লজ্জামিশ্রিত স্বরে ছোট করে জবাব দিলো।
‘হোয়াই?’
‘মিথ্যা বলা আমার পছন্দ না। সত্যিটাই বলেছি।’
‘তোমার মাথা খালি।’ চোয়াল শ ক্ত করে বলল।
রায়া রে গে যায়। কা ঠিন্য স্বরে জবাব দেয়,
‘আর আপনার মাথায় নিশির ভূ ত চড়া। জল্পনা-কল্পনা শুধু তাকে ঘিরেই। আমার মাথা খালি আছে ভালোই আছে। অন্যের ভূ ত তো আর নেই। আগে তার কথা জানালে অন্তত বিয়ের তিনমাসে কেউ বি চ্ছে দে র কথা ভাবতো না।’
‘হেই ওয়েট! তুমি বি চ্ছে দ… ‘
‘হ্যাঁ! শিগগিরই জানাব সবাইকে। আপনি আমার নানুকে দেখতে এসেছেন। তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এবার আপনি আসতে পারেন।’
‘তুমি যাবে না?’
‘নাহ!’ কথাটি বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রাবি আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। মাথায় খেলছে না নিশির সম্পর্কে রায়া কীভাবে জানলো?
.
.
.
#চলবে?

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
.
#চলবে?

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here