প্রণয়াসক্ত হাওয়া পর্ব -০৩

#প্রণয়াসক্ত_হাওয়া`[৩]
#সুমাইয়া_মনি

রাত ঘনিয়ে এলো। বাহিরে এখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টিতে শীতের রেশ নামিয়ে দিয়েছে। রাবি বিকেলের পর থেকে রায়ার সঙ্গে কোনো প্রকার কথা বলেনি। অবশ্য রায়া চেষ্টা করেছিল কথা বলার। তবে রাবি এড়িয়ে গেছে।
সে আর চেষ্টা করল না কথা বলার। রুমে এসে রাবিকে দেখল না। এসেছিল সে ডিনারের জন্য ডাকতে। বারান্দার দরজাও বন্ধ ছিল। বেরিয়ে আসার পর পাশের কামরার লাইট অন দেখতে পায়। কাছে গিয়ে দরজায় হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে বুঝতে পারে ভেতর থেকে লাগানো। করাঘাত করতে গিয়েও সংকোচ বোধ এসে ভর করল। সে থামে এবং প্রস্থান করে।
ড্রাইনিং টেবিলে খাবার খাওয়ার পাঁচ মিনিট পর রাবি সেখানে উপস্থিত হয়। গুরুগম্ভীর মুখশ্রী দেখে রিনিকে গুঁ’তো দিয়ে রায়া রাবিকে দেখায়। রিনি ইশারায় মুখ বন্ধ রেখে খাওয়ার বার্তা জানায়। রাবি নৈঃশব্দে খাচ্ছে। রায়ার আগের রাবির খাওয়া শেষ হয়। দশ মিনিট পর রায়া তার উপস্থিতি জ্ঞাপনার্থে কৃত্রিম কাশির শব্দ করে ভেতরে প্রবেশ করল।
রাবি বিছানায় বসে দ্রুত গতিতে ল্যাপটপে টাইপিং করছিল। এক প্রেক্ষিতে তাকে ইগনোর লিস্টে যুক্ত করেছে রাবি।
সে রাবির সামনে এসে ফের গলা খাঁ কা রি দিয়ে তার উপস্থিতি বোঝালো। রাবি নাকের পাটা ফুলিয়ে টাইপিং অবস্থায় বলল,
‘ঢয়ারে কাশির ঔষধ আছে সেবন করো।’
রায়া সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
‘আমার কাশি হয়নি।’
‘তবে বার বার খাঁ কা রি দিচ্ছো, হোয়াই?’
‘ঘুমাব।’
রাবি এবার বিরক্তিকর নজর ফেললো রায়ার ওপর। নজর এক পলক ঘুরিয়ে পরপরই চেয়ে দু হাত দু পাশে ছড়িয়ে বলল,
‘এসো আমার কো লে ঘুমাও।’
রায়া নাকমুখ কোঁচকাল। গদগদকণ্ঠে বলল,
‘কী?’
রাবি ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। কা ঠি ন্য স্বরে বলে,
‘এত বড়ো বিছানায় আমি এক পাশে বসেছি। এতে তোমার ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে?’
‘বলেছি?’
‘বুঝিয়েছো ঘুমাবে কথাটি বলে।’
রায়া বিছানায় উঠতে উঠতে বলল,
‘তাহলে আপনারও এই রোগটি আছে।’
‘কী রোগ?’ আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো।
রায়া মাথা কিঞ্চিৎ সামনে এনে সুর তুলে বল,
‘বেশি বুঝাআআর!’
‘তুমিও ইরিটেট উইমেন।’
‘তারিফ করার জন্য শুকরিয়া।’ বলতে বলতে বালিশে মাথা রেখে অন্যপাশে মুখ করে ঘুমালো। রাবি তী ক্ষ্ণ নজর ফেলে চলে গেল বাহিরে। পরপর তিন কাপ কফি খেয়ে রুমে ফিরলো। ঘড়ির পানে আগে নজর ফেললো। এগারোটা পঞ্চাশ মিনিট বেজে গেছে। বলতে গেলে বারোটার কাছাকাছি। রায়া এপাশে ফিরে কোল বালিশ জড়িয়ে আরাম করে ঘুমচ্ছে। রাবি বালিশ ঠিকঠাক করে পাশে বসল। রায়ার আদলের পানে তাকিয়ে একটু ঝুঁকলো। বেশ মনোযোগ দিকে নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে দেখলো। তিনদিন আগেও সে অচেনা ছিল। আর আজ সামনাসামনি অর্ধাঙ্গিনীর পরিচয়ে তার রুমে তন্দ্রাচ্ছন্নতায় কাতর। বিড়বিড় করে মুখে কিছু আওড়িয়ে নজর ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।

সকালে রাবির ডাকে রায়ার ঘুম ভা ঙে। চোখ ড লে বিছানায় বসতেই টেবিলের ওপর চা দেখতে পেয়ে খুশি হয়। তবে তার খুশি বেশিক্ষণ স্থানীয় হয় না। চায়ের কাপ রাবি হাতে তুলে চুমুক বসায়৷ রায়ার মুখ গুমোট হয়ে এলো। সে ভেবেছিল তার জন্যই ছিল চায়ের কাপ। রাবি আসন গ্রহণ করতে করতে ভা রী কণ্ঠে বলল,
‘চা তোমার জন্য ছিল না। উঠার আগে বিছানা গুছিয়ে উঠবে।’
সরু চোখে তাকাল রায়া। বিছানা গুছাতে যাওয়ার সময় কাথা সরাতেই একটি ছোট কালো রঙের সা প দেখে রায়া রাবির পানে তাকাল। এটি যে প্লাস্টিকের ছিল সেটা বুঝতে পারে রায়া। এটাও বুঝে নিশ্চিত রাবির কারসাজি। তাকে শা য়ে স্তা করার নতুন পরিকল্পনা। তবে সে এটা জানে না, রায়া এসবে ভ য় করে না। সে নির্ভয়ে হাতে তুলে রাবির গায়ের ওপর ছুঁড়ে দেয়। লাফিয়ে উঠতেই হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে যায়। খিলখিল করে হেসে দেয় রায়া। ভাঙার শব্দে রিনি নিচ থেকে ওপরে এসে রুমে প্রবেশ করল। ভাইকে ক্রো ধ দৃষ্টিতে ভাবির পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে সে নিশ্চয় কোনো কাণ্ড বাঁধিয়েছে। রায়া হাসতে হাসতে রিনির কাছাকাছি এলো। বলল,
‘আমাকে ভ য় দেখানোর জন্য সা’প’টি বিছানায় রেখেছিল। কিন্তু তোমার ভাইয়া জানে না আমি মোটেও ভয় পাই নি। উল্টো তার গায়ে ছুঁড়ে দিতেই লাফিয়ে উঠলো। বেচারা কাপটি নি হ ত হলো।’
রায়ার কথায় ছোট বোনের সামনে অ প মা নি ত বোধ অনুভব করে রাবি। ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করে।
রায়া হেসে পেটের ওপর হাত রেখে বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল,
‘এই প্লাস্টিকের সা প টি কোথায় পেয়েছে রিনি?’
‘এটা মাহাতিম এর৷’
‘কী হয় তোমার?’
‘আমার চাচাতো বোনের ছেলে। বিয়েতে এসেছিল। ভুলে রেখে গেছে।’
‘তোমার ভাইয়া কোথায় পেলো?’
‘মাহতিম এ রুমেই থেকেছে ভাইয়ার সঙ্গে। ওর আবার ভাইয়ার মতো শোরগোল পছন্দ না। তিনদিন ভাইয়ার রুমেই থেকেছে।’
‘তোমার ভাইয়াকে সবাই ভ য় পায়?’
‘হ্যাঁ, এটা বলতে পারো। তবে ভ’য়ে’র তুলনায় রেসপেক্ট বেশি করে।’
‘ওহ!’
‘এবার নিচে এসো। নাস্তা খাবে।’
‘আসছি। কিন্তু মজার বিষয় হলো তোমার ভাইয়া আমাকে শা য়ে স্তা করতে পারল না।’ দু’জনে একত্রে হেসে দেয়।

নাস্তা করার সময় ইমাম শেখ রায়ার ভার্সিটিতে যাওয়ার প্রসংগ তুলে। রাবি এতটা গুরুত্ব না দিলেও এতটুকু বলে,
‘প্রতিদিন যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এক্সামের ক’দিন আগে থেকে ক্লাস করলেই যথেষ্ট।’
‘বৌমা এতে তোমার কোনো আপত্তি আছে?’
রায়া মৃদু হেসে না সূচক জবাব দেয়। ইমাম শেখ অন্য প্রসংগ তুলে কথা বলতে শুরু করে ছেলের সঙ্গে। নাস্তা সেরে বাবা ছেলে এক সঙ্গে বের হয়। রায়া ব্যাগ থেকে কাপড়চোপড় গুছিয়ে আলমারিতে রাখছিল। আলমারির এক পাশে খালি জায়গা করে দিয়েছে রাবি। যাতে রায়া নিজের কাপড়চোপড় রাখতে পারে। সম্পূর্ণ গুছিয়ে ফেলার পর কিঞ্চিৎ আগ্রহ জাগে রাবির পাশের ঢয়ার খুলে দেখার। তার আগ্রহে প্রধান্য দিয়ে ঢয়ার খুলে অনেক যাবতীয় জিনিস সহ আরো বিভিন্ন কাগজ নজরে এলো। সেখানে একটি সবুজ রঙের ডায়েরী দেখে সেটি হাতে তুলে নেয়। মধ্যে কয়েক পৃষ্ঠা খালি দেখে পরবর্তী পৃষ্ঠা উল্টিয়ে মাঝ বরাবর এক রমণীর চিত্র দেখে নজর আটকে গেল। ডায়েরীটি বন্ধ করে চিত্রটির ওপর সরস নজরে তাকায়। দেখতে বেশ স্মার্ট। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। চেহারার কাঠিন বেশ ভালো। রায়ার মনের মধ্যে না ড়া দিয়ে উঠলো। চিত্রটি উল্টাতেই পিছনে ‘নিশি’ নামটি দেখতে পেল। নিঃসন্দেহে বলা যায় রমণীর নাম নিশি। সে যতটুকু জানে রাবি বিয়েতে রাজি ছিল না। তবে কী নিশির জন্যই তার আপত্তি ছিল বিয়েতে? নিশি কী তার বর্তমান প্রেয়সী? নাকি প্রাক্তন? জটিল গুমোট প্রশ্ন তার মনে বাসা বেঁধেছে!
.
.
.
#চলবে?

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here