#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২০ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
” তুমি চাইলে আমার কলাবতীকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। ইচ্ছে আছে কলাবতীকেই বিয়ে করব। টাকা পয়সা কম খরচ হবে তাকে বিয়ে করলে। কারণ সে বেশিরভাগ সময় নাস্তা সেরে নেয় পাকা কলা দিয়ে। আর কাঁচা কলার বিভিন্ন রেসিপি দিয়ে লাঞ্চ ডিনার সেরে নেয়।”
আলিশা খুক করে হেসে ফেলল শুভ’র কলাবতীকে চিনে ফেলায়। কিন্তু কোন রিপ্লাই দিলনা শুভ স্যারের মেসেজের। ঘুম আর এলনা তার আঁখিকোণ জুড়ে। ফাগুনের উদাম বৃক্ষে নবপল্লবিত শাখার মতই তার হৃদয়ের প্রণয়ডালগুলো গজাতে লাগল রঙ বেরঙ ছড়িয়ে।
কবে যে শুভ স্যারের সাথে চুটিয়ে প্রেম করব। স্যার এমন কেন। কেমন যেন খিঁচ মেরে থাকে। আমি মেয়ে হয়ে আর কত বেহায়া হব। এমনিতেই স্যারের প্রেমে বেহায়ার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছি। প্রেম যে মানুষকে কত বেহায়া বানিয়ে ছাড়ে তা এখন বুঝি। পরশু আসুক স্বাদহীন কাঁচকলাটা আমার।
শুভ দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও আলিশার রিপ্লাই পেলনা। বুঝে নিল আলিশা হয় মেসেজ দেখেনি। নয়তো দেখেও ভুল বুঝে ফুঁসে আছে কলাবতী অন্য মেয়েকে মনে করে।
আজ শুক্রবার। বিকেলে আয়মানকে ডেকে তার মা বলল,
আমি আর আলিশা একটু বের হচ্ছি। তোরা থাক।
কোথায় যাচ্ছ তোমরা?
ফোন এলো একটু আগে। আমার চাচাতো বোন সাহেরার জামাই ব্রেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে। তাই দেখতে যাচ্ছি।
পিয়াসা পাশ থেকে বলল,
মা আমিও যাব আপনাদের সাথে।
তুমি নতুন বউ। হুট করে এভাবে নিয়ে যাবনা আমি। থাকো তোমরা। নাস্তা কিছু বানিয়ে খেও দুজনে।
আলিশা পাশ থেকে একগাল সরস হাসি হেসে বলল,
তোমরা টম এন্ড জেরি ডিংকা চিকা ডিংগা চিকা করো খালি বাসায়। নয়তো ডুগডুগি খেল।
তারা মা মেয়ে চলে গেল। পিয়াসা বাসার গেট বন্ধ করে দিল। ফ্রিজ খুলে দেখল কি আছে সন্ধ্যার নাস্তার জন্য। এরপর কিচেনে গেল।
পিয়াসা আসছেনা কেন রুমে, এটা ভেবেই আয়মান ও কিচেনে চলে গেল।
রসপূর্ণ গলায় জিজ্ঞেস করলো,
বাসার গেট বন্ধ করতে এত সময় লাগে?
পিয়াসা কপাল ভাঁজ করে,
আজব চিজতো আপনি। বাসার গেটতো কয়েক সেকেন্ডেই লাগানো হলো ।
তাহলে আমার কাছে আসছনা কেন?
আর তাদের সাথে তুমি যেতে চাইলে কেন আমাকে একা রেখে?
বলেছি একটা কারণে? মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল পিয়াসা।
ফাঁকিবাজি? আমাকে ঠকানো? আমি বুঝিনা কিছু নাহ? এখন এর ডাবল উসুল করেই ছাড়বো।
ওরে বাবারে বলে পিয়াসা লুকালো ডাইনিং টেবিলের নিচে।
পিয়াসা বের হও বলছি। আচ্ছা কিছুই করবনা প্রমিজ।
সত্যিতো?
তিন সত্যি।
পিয়াসা বের হয়ে এলো। বলল কিচেনে চালের গুড়া দেখলাম। তেলের পিঠা বানাতে পারি। মানে পোয়া পিঠা৷ অবশ্য মাটির খোলা থাকলে চিতই ও বানাতে পারতাম। কিন্তু এই পিঠা খেতে কুরানো নারকেল দরকার। নারকেলতো বাসায় নেই। আবার মধু হলেও চলতো। মধু দিয়ে এই পিঠাটা খেতে দারুণ লাগে। আমি এভাবে অনেক খেয়েছি নানুদের বাড়িতে ছোটবেলায়।
আয়মান সাথে সাথেই বলল,
এই পিয়াসা মধু আছেতো। একদম খাঁটিটাই আছে৷ আমাদের বাসায় তুমি আসার আগে আম্মুর অনেক কাশি হলো। তখন আগোরা সুপার শপ থেকে এক বয়াম কিনে এনেছি।
তাহলে ডিম দিয়ে খোলাজালি বানাই? মধু দিয়ে খাব দুজনে।
আয়মান একটুক্ষণ চুপ হয়ে রইলো। কিচেনে গিয়ে মধুর বয়াম ও একটি চামচ হাতে নিলো। বলল পিঠা বানাতে হবেনা। অন্য লিকুইড নাস্তা খাব।
মানে। বুঝলাম না? বলল পিয়াসা।
আরে মধু খাব মধু মধু করে।
এটা বেশী খাওয়া যায়? কাশি চলে আসেনা?
আসুক কাশি। তবুও মধুপান করব এক নিরালায়। রুমে আস।
দূর আমি কেন যাব?
আরেহ আস বলছি। মধু দিয়ে মধু মধু প্রেম করব। রোমান্স করব।
নাহ যাবনা আমি। ভয় করে।
কিসের ভয়। খেয়ে ফেলব নাকি। আমি না তোমার প্রেমিক?
সেটা আগে ছিলেন। এখনতো অন্যকিছু।
ওরেহ! বলে কি সুইটহার্ট। সেটা হলেতো জোর করে সব ছিনিয়ে নিতে পারি। আয়মান পিয়াসার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেল।
পিয়াসাকে খাটের কিনারায় বসিয়ে দিল। নিজে হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসল। পিয়াসার পাঁচ আঙ্গুল চুবিয়ে ধরল মধুর বয়ামের ভিতরে। একে একে সব আঙ্গুল থেকে আয়মান তার মুখে পুরে নিয়ে চুষে চুষে মধু খেল।
পিয়াসা নুয়ে আসা কণ্ঠে,
এই নাস্তায়তো মন ভরে। কিন্তু পেট ভরেনা৷ আপনি এত রোমান্টিক পুরুষ। সরেন বলছি। ফাজিল। অসভ্য।
আয়মান ঘোর লাগা চাহনিতে বলল,
পেট ভরার নাস্তা বাইরে কিনতে পাওয়া যাবে। কিন্তু মন ভরার নাস্তাতো তোমার হৃদয় কোষাগারেই বহুল পরিমাণে সঞ্চিত। আচ্ছা প্রণয়ের অতল সুখ কি শুধু আমি একাই উপভোগ করছি। আমার প্রেমিকাটা করছেনা? মিথ্যা বলবানা বলছি।
পিয়াসা লাজুক লাজুক চোখে অন্যদিকে চেয়ে রইলো। আয়মান পিয়াসার দুগাল তার দুহাত দিয়ে চেপে ধরল। দুচোখের পাতায় নরম চুমু খেল।
পিয়াসা বলল আমি এবার যাই?
আমি এখানে। তুমি যাবে কোনখানে?
একটু মধু খেয়ে আমার কিছুই হয়নি। আরো খাব।
বয়াম তো টেবিলেই আছে। নিয়ে খান। আমার কাছে কি?
শোন, “দাম্পত্য টা হলো একটা আর্ট। প্রতিদিন তাকে নতুন করে গড়বার চাই। ”
এটা কে বলেছে জান?
না জানিনা।
এটা কবিগুরু তার শেষের কবিতা উপন্যাসে বলছে। চমৎকার একটি রোমান্টিক উপন্যাস। দর্শনে মাখামাখি। তোমাকে গিফট দিব। পড়ে নিও। মজা পাবা।
আচ্ছা দিয়েন। যাই?
আবার যাই যাই করে। ভাবখানা এমন যেন বাঘের খাঁচায় বন্ধী। যে কোন সময় বাঘ হালুম বলে কড়মড়িয়ে খেয়ে ফেলবে।
আপনি না মধু খাবেন। খাচ্ছেন না কেন?
মধু খাব বলেই তো এই উদাহরণ টানতে হলো। শৈল্পিকভাবে পরিবেশন করলে যে কোন খাবার খেতে বেশী রুচিবোধ হয়। খাওয়া ও যায় বেশী। এই বলে আয়মান পিয়াসাকে খাটের মাঝ বরাবর চিৎ করে শুইয়ে দিল। পিয়াসা হকচকিয়ে গেল। বলল,
কি করবেন আমাকে?
চুপ। একদম চুপ। জাস্ট ফিল করো দুচোখ বন্ধ করে। পিয়াসা চুপ হয়ে গেল। নিজের দুইহাত দিতে মুখ ঢেকে ধরল লজ্জায়।
আয়মান পিয়াসার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নিল। মনে মনে বলল,
আম্মুকে ধন্যবাদ পিয়াসাকে এই কয়দিন বাসায় শাড়ি পরতে আদেশ দেওয়ার জন্য। পিয়াসার উদাম পেটে এক টেবিল চামচ মধু ঢেলে দিল৷
পিয়াসা টের পেয়ে চোখ মুখ বন্ধ রেখেই চেঁচিয়ে উঠল। আমি গোসল করেছি না? আমার পেট আঠালো হয়ে যাবেনা এখন ? এটা কেমন মধু মধু প্রেম? রোমান্স? আমার পছন্দ হচ্ছেনা এতটা।
আয়মান কড়া গলায়,
এই যুবতী থামো বলছি। ইসসস! ন্যাকা। পছন্দ না উনার। মেয়েদের বুক ফাটে মুখ ফাটেনা। এটা ঢের জানি আমি। উপর দিয়ে বলেন না না। সরে যাও৷ ভিতর দিয়ে বলে আরো চাই। আরো।
আমি মধু তোমার পেটে ঢালিনি। সুন্দর একটি ছোট্ট বাটিতে ঢেলেছি। উহু! আমার পরিবেশনা প্রসংশার দাবিদার। সাদা বাটির ভিতরে লাল গাঢ় মধু। ছবি তুলে নিচ্ছি। তোমাকে দেখানোর জন্য।
আয়মান পিয়াসার উদাম পেটের ছবি তুলে নিল। তার পরে জিভ দিয়ে সব মধু চেটে চেটে খেল। পিয়াসা এবার টের পেল স্বামী তার নাভিতেই ঢেলেছে মধু।
আয়মানের গরম জিভের উষ্ণতায় পিয়াসা অস্থির হয়ে গেল। আয়মানের ঘন চুলগুলো দুহাত দিয়ে খামচি দিয়ে ধরল। আয়মান পিয়াসার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। লাল হয়ে আসা দুচোখ দিয়ে পিয়াসার চোখে চোখ রাখল।
তুমি আমার এক পৃথিবী উষ্ণতা। তুমি আমার বুক ভরা সুখ। তুমি আমার অমাবস্যা রাতের জোনাকিপোকা। তুমি আমার জোছনা রাতের মায়াবি চাঁদ।
যাও লাভলী। ছেড়ে দিলাম। আর কিছু করবনা। আয়মান পিয়াসার চুল মোছার পাতলা তাওয়েলখানি বারান্দা থেকে নিয়ে আসল। তাওয়েলের এক কোন বেসিন থেকে ভিজিয়ে নিল। পিয়াসার পেটের চারপাশ মুছে দিল। লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথে যুক্ত হউন দারুণ স্বাদের সব গল্প পেতে৷
আমার তাওয়েল ভিজালেন কেন? নিজের আকাম পরিশুদ্ধ করার জন্য অন্যের তাওয়েল ভেজানো ঠিক হয়নি। আমি এখন আপনার তাওয়েল ভিজিয়ে দিই?
দাও। কোন মানা নেই। আমার সব ভেঙ্গে চুরে গুড়ো গুড়ো করে দাও নিষ্ঠুর প্রিয়তমা।
পিয়াসা উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে দাঁড়িয়ে রইলো। তার ঘন নিঃশ্বাস উঠানামা করছে। ছন্দ হিল্লোল তালে উপর নিচে একি তালে দুলে দুলে উঠছে উইপোকার ঢিবির মতো বুকের দুটো ঢিবি। বেসামাল সুখে মরে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষের স্পর্শ, কথা,দুষ্টমি, রাগ,অভিমান,আবদার, জোর খাটানো, কামুক চাহনি এত ভালো লাগে কেন। এত সুখ কেন। ও ঠিকই বলছে। মেয়েদের বুক ফাটে মুখ ফাটেনা। উফফস! অসহ্য সুখে অসুখ হয়ে যাবে মনে হয় আমার। আর পারছিনা থাকতে।
আয়মান মধুর বয়াম আর চামচ ধুয়ে নিদিষ্ট স্থানে রেখে দিল।
আজ শনিবার। শুভ পড়াতে এলো আলিশাকে। আলিশা আগের দিনের মতই মুখ গোঁজ করে রইলো। অংকের বিষয় ছাড়া অতিরিক্ত কোন শব্দই মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলোনা।
শুভ মুখেই জিজ্ঞেস করলো। কেমন আছ?
আলিশা চুপ রইলো।
শুভ অংকের নিচে লিখলো। রাতে মেসেজ পেয়েছ? আমার কলাবতীকে নিয়ে লিখা।
পেয়েছি স্যার। আপনার কলাবতী হোক আর মধুমতী হোক। তাকে নিয়ে রাতে বিরাতে আমাকে মেসেজ করবেন না। এটা লিখে আলিশা খাতা ছুঁড়ে মারার মতই ঠেলে দিল শুভ’র সামনে।
খাতা ছুঁড়ে মারাতে শুভ অপমানবোধ করল। রেগে গেল।
আচ্ছা দিবনা। কিন্তু তোমার কাউকে ভালোলাগা ও ভালোবাসার মানে এই নয় যে,
তুমি তাকে অশ্রদ্ধা করবে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আচরণ করবে। মনে রেখ,
” শ্রদ্ধার মাঝেই প্রকৃত প্রেম নিহিত। যার প্রতি যত প্রেম, তার প্রতি তত শ্রদ্ধা। ”
এটা আমাদের দেশের বিখ্যাত এক প্রজ্ঞাবানের মুখ নিঃসৃত অমর বাণী। গুগল করে দেখবে বলে,
আয়মান একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে গেল।
আলিশার অসমাপ্ত অংক পড়ে রইল। রয়ে গেল প্লেট ভর্তি নাস্তা। ফ্যালফ্যাল ভেজা আঁখিতে আলিশা শুভ’র যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।
চলবে ঃ ২০
( উপন্যাসটা শেষ করে দিতে চাচ্ছি।)