প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব -২৩

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৩ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
গ্রামে যাবো অবশ্যই। কিন্তু কারণটা কি আম্মু? বিচলিত কন্ঠে জানতে চাইলো আয়মান।

তোর দাদী নেই বাবা। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল আয়মানের মা।

ওহ নো! কি বল? আয়মান ব্যস্তসমেত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। বলল,আমি আমার দিক দেখছি। তোমরা সবাই কাপড়চোপড় গুছিয়ে নাও। তিনদিন তো আমাদের থাকতেই হবে। তাইনা?

আয়মানের মা হ্যাঁ, বলেই চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো। পিয়াসা কই জানতে চাইলো। আয়মান বলল কি জানি দেখ। পিয়াসা যে রাতে আয়মানের সাথে ঘুমায়নি এটা মাকে বললনা। চিন্তা করলো, ঘর পোড়ার ভিতর আলু পোড়ার খবর বলা অহেতুক।

আয়মানের মা, আলিশা ও পিয়াসাকে তাড়া দিল তিনদিনের হিসেবে সব গুছিয়ে নিতে। আলিশা দাদীর জন্য খুব কাঁদল। পিয়াসার ও বেশ মন খারাপ হলো। তারা গ্রামেই গেলেই মৃতের দাফন সম্পন্ন হবে।

এক ঘন্টার ভিতরেই সবাই গোসল সেরে হালকা নাস্তা খেয়ে রওনা দিল। সায়েদাবাদ পৌঁছে গেল সিএনজি করে। বাসের টিকিট কেটে উঠে পড়ল। যথাসময়ে তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেল।

সারাবাড়িজুডে থমথমে শোকাতুর পরিবেশ। থেমে থেমে স্বজনদের মাতম চলছে। উঠানের একপাশে খাটিয়াতে লাশ রাখা আছে। আগেই গোসল করিয়ে সাজানো হয়ে গিয়েছে৷ আয়মানের মাকে কাছে পেয়েই বিলাপ জুডে দিল তার চাচাতো ভাই ও ননদেরা। সেও অঝোরে কাঁদলো চাচাতো শাশুড়ীর সাথে নানা স্মৃতি বিজড়িত মুহুর্তকে স্মরণ করে৷

আয়মান ঢাকা থেকে আসতেই কালো জিন্সের সাথে সাদা টুপি ও সাদা পাঞ্জাবি পরে এসেছে। এসেই জায়নামাজে শরীক হলো। আয়মানকে দেখতে বেশ স্নিগ্ধ ও নির্মল লাগছে। পিয়াসা আয়মানের দিকে একবার চেয়েই বিমুগ্ধ হয়ে গেল। সাদা পাঞ্জাবি সাদা টুপিতে এর আগে দেখেনি সে। ঢাকা প্রতি শুক্রবারে বা কোন অনুষ্ঠানে আয়মান কালারফুল পাঞ্জাবি পরে আর টুমি ও অন্য ব্রাউন কালারের পরে৷

দাফন শেষে হয়ে গেলে মাটিতে বিছানা পেতে বসে কয়েকজন নারী ও মেয়ে কোরান তেলওয়াত করতে লাগল সমস্বরে ।

পিয়াসার বাবার কথা মনে পড়ে গেল প্রবলভাবে। নিজের অজান্তেই বাবার জন্য দুচোখ জুড়ে কান্নারা নামল দল বেঁধে। বুকটা খাঁ খাঁ করছে তার। চারপাশ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। তবুও বুকের পিঞ্জরে একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব করে প্রায়। একান্ত প্রিয়জনরা নেই বলে শূন্যতারা তাকে পিষে মারে মাঝে মাঝেই।

পিয়াসা শাশুড়ীর অনুমতিক্রমে তাদের সাথে শরিক হলো। তার শ্বাশুড়ি কোরান শরীফ আর রেহেল চেয়ে নিয়ে দিল ভাতিজা বউয়ের কাছ থেকে। একটু দূরে থেকেও পিয়াসার মিহি স্বরে কোরান তেলওয়াত এই প্রথম শুনল আয়মান। বাসায় তাকে নামাজ পড়তে দেখে। কিন্তু কোরান পড়তে দেখেনি। আয়মানের বুকের ভিতর অনাবিল প্রশান্তি বিরাজ করল। মনে মনে বলল, মাশাল্লাহ পিয়াসার তেলওয়াত এত সুমধুর! এত মিষ্টি! যেন কোকিলের কুহুতান।

আয়মানরা সবাই সেই চাচার ঘরেই আছে। দাদীর অতি প্রিয়জনদের বিহবল দশা। বাড়ির একপাশে দাদীর পরিবারের সবাইর জন্ন্য রান্না হচ্ছে আয়মানরা সহ।

আয়মান আলিশাকে খুঁজে বের করে আদেশ দিল,
কিরে তোর ভাবি কোরান তেলওয়াত করছে। তুই এদিক ওদিক ঘুরছিস কেন? যা ওযু করে ওদের সাথে গিয়ে তুই ও পড়।

আয়মানের মা পাশ থেকে মেয়েকে বলল,
কিরে হ্যাবলার মতো আমার গালের দিকে কি দেখছিস? ভাই কি তোকে মরতে বলছে? যা বলছি। এ দুনিয়ার রঙ তামাসা দুইদিনের। সব মিথ্যা। সব ফাঁকিবাজি। আসল রঙ তামাসা মাটির নিচে গেলেই দেখবি।

আলিশা বলল, আমি পড়লে সহী হবে এখন?

কেন সহী হবেনা। তোকে কোরান পড়া শিখাইনি বাসায় মসজিদের হুজুর রেখে?

আমার সেলোয়ার চেঞ্জ করতে হবে। সেটা বলছি আম্মু। এসে বাথরুমে যাইনি? বলি একটা বুঝ আরেকটা। বেজার মুখে বলল আলিশা।

তো চেঞ্জ করে নে । ড্রেস না চারটা আনলি তুই?

আলিশা তেমন আগ্রহ না থাকা সত্বেও অযু করে কোরান তেলওয়াতের মজলিসে যোগ দিল। পড়তে লাগল কোরান শরীফ যোগাড় করে।

আয়মান চলে গেল কাচারিঘরের সামনের উঠানে । চেয়ারে বসলো চাচা জেঠাদের পাশে। সেখানে যে যা পেরেছে চেয়ার পেতে রেখেছে পুরুষদের জন্য। নানান আলাপ আলোচনা করছে সবার সাথে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তাই কারো সাথেই কারো মুখোমুখি দেখা হয়না। এক মুঠোফোনে হায় হ্যালো হয় তাও কালে ভদ্রে টুকটাক।

আয়মানের এই দাদী তাদের বাড়ির জীবিতদের মধ্যে সবার মুরুব্বি। গ্রামের ভাষায় গাছবুড়া বলে যাকে। তাই ঢাকা থেকে সম্ভবপর অনেকেই এলো উনার জায়নামাজে শরীক হওয়ার জন্য। কবরে এক মুঠো মাটি দেওয়ার জন্য। উনাকে নিয়ে যার যেমন স্মৃতি রয়েছে তা মনে করে আফসোসের মাত্রা দীর্ঘ করতে লাগলো উপস্থিত সবাই।

তিনদিনের কুলখানির আগের রাতে সবাই কাজে হাত লাগালো। সারারাত তেমন কেউই ঘুমালোনা। কেউ পেয়াজ, কেউ রসুন, কেউ আদার খোসা ছাড়ালো। কেউ মসলা পিষে নিলো। এমন বড় আয়োজনগুলোতে যতই কাজ করার লোক থাকুক, তবুও নিজেদের মেয়েছেলেরা কাজে হাত লাগাতেই হয়। আর এমন কাজগুলো সবাই বেশ আনন্দ নিয়েই করে। কোন ক্লান্তি আসেনা। মুরুব্বিরা বলে এসময় খোদায় ক্লান্তি দূর করে দেয়। খাওয়াতেও বরকত দেয়। যতই মিসকিন খাওয়াক। শেষ হয়না।

আয়মানের মা ঝিমুনি ধরলে ঘুমিয়ে যায়। পিয়াসা উঠে গিয়ে খাটের নিচ থেকে আরো পেয়াজ আনতে গেলে রুমে আয়মানের বুকের সাথে ধাক্কা খায়। আয়মান চোখ মেলে চাইলো পিয়াসাকে অচেনার মতো। পিয়াসা আয়মানের এই অপরিচিত চাহনি দেখে কিছুটা ভড়কে গেল। কি হলো উনার। মরা বাড়িতে ভূতে ধরলো নাকি। নাকি সেই রাগ পুষে রেখেছে মনের মধ্যে।

তিনদিনের কুলখানি শেষ করে আয়মানরা ফিরে এলো ঢাকায় নিজ গন্তব্যে। আয়মান এই ভিতরে পিয়াসার সাথে কোন কথাই বলেনি। গ্রামে নানান দৌড়ঝাঁপে কথা বলার সময় ও মানসিকতা হয়নি আয়মানের। আর কিছুটা রাগ ও আছে পিয়াসার উপরে।

কিছু সময় ও পরিস্থিতি মানুষকে বিপুলভাবে বদলে দেয়। চেতনাশক্তি হয় অনেক সচেতন ও বাস্তবধর্মী। নিজের মাঝে ধারণ করে ভারিক্কিভাব। চিন্তা ভাবনায় হয়ে উঠে আরো ব্যক্তিত্বময়, পরিপূর্ণ, ও পরিপক্ক।

পিয়াসা মাগরিবের আযান শেষে নামাজের বিছানায় বসে নিজে নিজেই গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। নিজের ভিতরে অপরাধবোধ হলো। চিন্তা করল মনে মনে , আমরা মুসলমান। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে একদিন সবাইকেই যেতে হবে। আমি এক নগন্য বান্দা৷ গুনাহ যে কত কামাচ্ছি।

স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য হক আদায় না করলে স্বামী যদি অসন্তুষ্ট থাকে। তাহলেও ফেরেশতারা নালত দিতে থাকে। আয়মান মনে হয় আমার উপরে ক্ষুদ্ধ। এটা অতি স্বাভাবিক। আর কত রাত অপেক্ষা করবে। অযথাই হেলামী করে নানা চালছুতোয় আয়মানকে এতদিন বঞ্চিত করেছি। আর নিজের পাপের বোঝা ভারী করেছি।

অথচ আমি কোথায় ছিলাম। কোথায় থাকতাম। এখন এলাম কোন স্বর্গ ভুবনে। আয়মানের মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে কি মহিমান্বিত জীবন উপহার দিল। নয়তো রাস্তার মানুষরূপী কুকুরেরা আমাকে ছিঁড়ে পুড়ে খেত। আমি হতাম শত পুরুষের ভোগের বস্তু। আর এখন কত মযার্দার সাথে আছি। কত ভালো মানুষ এরা সবাই। বিভেদের পৃথিবীতে এদের মতো মহান মানুষেরা আছে বলেই জগৎ আজো এতো সুন্দর। হে আল্লাহ। এই নগন্য বান্দাকে ক্ষমা করুন বলে পিয়াসা নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল।

আয়মান এতক্ষণ দরজার বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে খেয়াল করলো পিয়াসাকে। হালকা কাশি দিয়ে ভিতরে গেল। পিয়াসা সালাম দিল স্বামীকে। উঠে গেল মোনাজাতের শেষে। আয়মান ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে আলতো হাসি দিল।

খাটের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
বহুসময় ধরে দেখলাম মোনাজাতে ছিলে। দুইহাত তুলে কি চাইলে রবের কাছে?

মোনাজাতে স্রস্টার নিকট কি প্রার্থনা করে মানুষ?

অনেক কিছুইতো বলে।

আমিও অনেক কিছুই বলছি।

কি কি বললে শুনি? দুষ্টমির ছলে আয়মান জানতে চাইলো।

বলা যাবেনা। টপ সিক্রেট।

আয়মান বলল,
দেখলে? মানুষ তার পরিবেশ দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়? গ্রাম থেকে আসার পর তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছ। এটা যেন অব্যাহত থাকে আমার কেশবতী।

দোয়া করবেন আমার জন্য । আপনার কেশবতী হয়েই বাঁচতে চাই আমি। জীবনের শেষ নিঃস্বাসটুকু যেন আপনার বুকেই ফেলতে পারি।

আমিন। এমনওতো হতে পারে,তোমার আগে আমিই তোমাকে ছেড়ে চলে যাব।

পিয়াসা হেলে পড়ল আয়মানের বুকে। মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরলো। প্লিজ অমন অলুক্ষনে কথা ভুলেও কর্ণ গোচর করতে চাইনা আমি। ভুলেও না।

আচ্ছা আচ্ছা। তাই হবে। আয়মান পিয়াসার পিঠের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে নিল তার মায়াময় বাহুডোরে। পিয়াসার হাতের পিঠে কয়েকটি চুমু খেল। বলল তোমার হাতের স্পেশাল চা বানিয়ে নিয়ে আস। কফি মগে এনো। বেশীই খাব।

চায়ের সাথে টা আনব?

নো নিড। টা তোমার মাঝেই আছে।

আস্ত একটা বদমাইস বলে পিয়াসা চলে গেল চা বানাতে৷

আয়মান তার কাজে মন দিল আনন্দভরা চিত্ত নিয়ে।

পিয়াসা চা বানিয়ে শ্বাশুড়ি,ননদকে দিল। শুভ পড়াতে আসবে একটু পরে। তারজন্য ও রাখল। শুভকে রোজ নাস্তা আলিশাই নিয়ে দেয়। তার আম্মু ভিতর থেকে ট্রেতে সব রেডি করে দেয়।

পিয়াসা আয়মানকে কফি মগে করেই চা নিয়ে দিল। এই চা গ্রম। চা গ্রম চলে এলো। লাগবে স্যার? লাগবে? মজা মজা।

আয়মান বলল,
এইই মেয়ে, তুমি হকার হলে ভালো জমাতে পারতে। ট্রেন থামলে জানালার পাশে এসে ডিম, ডাব,বাদাম,চানাচুরওয়ালারা সেইম এভাবেই হাঁক দিয়ে ডাকে৷ ভালই তো রপ্ত করলে। ট্রেনে করে যেতে নাকি গ্রামে?

পিয়াসা হোঃহোঃহোঃ হিঃহিঃহিঃ করে উচ্চস্বরে হেসে গড়াগড়ি খেল। পিয়াসার চুড়ি ভাঙা হাসিতে আয়মান আত্মহারা হয়ে গেল।

পিয়াসা বলল,এই কর্তা বাবু চা জুডিয়ে জল হচ্ছে যে। খান। আর বাস ভাড়া বেশী বলে ট্রেনেই করেই আমরা গ্রামে যেতাম।

বুঝলাম। আসো খাই দুজনে।
আমি পরে খাব। ইচ্ছে করছেনা এখন।

তোমার জন্য বানাওনি? দুধ নেই?

আছে। বানিয়েছি সবার জন্যই। পরে খাব।

আমি এত চা খাই? এখানে দুকাপ হবে।

হুম হবে। আপনি না বললেন মগে করে চা দিতে?

বলছি এজন্য। দুজন একসাথে খাব বলে।

এটাও কি আপনার প্রণরের রোমান্টিসিজমের অংশবিশেষ?

অফকোর্স মধুবালা। তুমি এক চুমুক খাবে দেন আমি এক চুমুক খাবো। এভাবে চুমুকে চুমুকে আমরা আমাদের প্রেমকে মহান করে তুলব। স্মৃতিময় হয়ে এগুলো স্মৃতির সিন্দুকে জমা পড়ে রইবে আদি থেকে অনাদিকাল পর্যন্ত। আমরা যখন বুড়ো-বুড়ি হব। আমাদের দাম্পত্যের এসব টুকিটাকি রোমান্স ও প্রেম যাপনের সময়গুলো মনে করে করেই ভালো থাকব আমরা ।

পিয়াসাকে আয়মান তার কোলে বসিয়ে নিল দু পা নামিয়ে দিয়ে। পিয়াসাও স্বামীর আবদার মেটাতে সদা প্রস্তত। সমভাগে দুজন চা খেয়ে শেষ করলো।

পিয়াসা কোলে বসা থেকেই আয়মানের গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির উপর পাঁচ আঙুল বুলিয়ে নিল। বলল, আমি মরে যাই আপনার প্রেম দেখলে আমার প্রতি। ভালোবাসাকে জিইয়ে রাখতে আপনার কত শত মুগ্ধকর আয়োজন।

ভালোবাসি আপনাকে। পিয়াসার মুখ দিয়ে শব্দ দুটো বের হতেই,
আয়মানের শিরশির অনুভূতিরা দাপাদাপি শুরু করলো। এই কি বললে যেন শুনতে পাইনি?

পিয়াসা আয়মানের কান বরাবর নিজের দুঠোঁট চেপে ধরলো। ফিসফিসিয়ে বলল, ওরে বয়রা স্বামী আমার। বলছি আপনাকে আমি ভালোবাসিইইই।

আয়মান পিয়াসার শুষ্ক অধর ভিজিয়ে দিয়ে বলল,
তাহলে আজ রাতে প্রমান দিও৷ মুখের কথার কি গ্যারান্টি। আমি আবার কাজে বিশ্বাসী ।

পিয়াসা কোল থেকে উঠে গিয়ে বলল। হ হ। প্রমাণ দিব রজনীতে। আমার দাঁত কিন্তু অতিশয় ধারালো ও নিখুঁত। ওয়ে ওয়ে.. ওওও….। দুষ্ট মিষ্ট হাসি আর চোখ পাকিয়ে পিয়াসা চলে গেল বাসার অন্য কাজে।

শুভ পড়াতে এল। এই তিনদিন আসেনি। ফোন করে মানা করে দিয়েছে গ্রামে যাওয়ার সময় আলিশা। শুভ আলিশার থেকে তার দাদীর ও তাদের গ্রামের খোঁজ খবর নিল।

তাদের প্রেমের কোন ইশারা ইঙ্গিত ও ঠোকাঠুকি হলনা আজ দুজনের দিক থেকে। বাক্য বিনিময় হলনা বোবা ভাষায়। সব সময় পরিবেশ বুঝে প্রেম রোমান্স ভিতর থেকে আসেওনা। জীবনের মানে শুধু এই নয় ভালোবাসাবাসি।

একটা আস্ত জীবনে একজন মানুষকে সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়েও চলতে হয়। কেননা একটা জীবনের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে আরো অনেকগুলো জীবন। অনেককিছুই মেইনটেইন করে চলতে হয় একজন মানুষকে। আলিশা উঠে গিয়ে চা নাস্তা এনে দিলে শুভ খেয়ে চলে গেল।

রাত হলো। পিয়াসা রান্নাঘরের সব কাজ সেরে ঘুমাতে গেল। আয়মান আগেই ঘুমিয়ে গেল নিত্যরাতের মতো। নিয়মমাফিক তার সকালে উঠে কলেজে যেতে হয়। পুরো সংসার তার একার আয়ে নির্ভরশীল। দায়িত্বের জায়গায় সে বদ্ধ পরিকর। পিয়াসার সান্নিধ্য আয়মান ঘুমের মাঝেও টের পেল। তবুও সে কোন নড়চড় করলনা।

পিয়াসা আদুরে বিড়ালছানার মতো আলুথালু হয়ে আয়মানের বুকের ওমে ঢুকে গেল। আয়মানের প্রতি এক দরিয়া ভালোবাসা নিয়ে মিশে গেল নিবিড়ভাবে।

চলবেঃ ২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here