#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৯
_______________________________
–‘শুনশান নীরবতা রাস্তায়,খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়াচ্ছি আমি,ভাগ্যক্রমে ছাড়া পেয়েছি স্নেহাদের বাসা থেকে।আমাদের বাসাটা মেন রোডের সাথে ছিল না, মহল্লা টাইপ,তাই রাস্তা টা একেবারে নিরব থাকে সচরাচর। তখন তো দুপুরের সময় ছিল,মানুষজন ছিল ই না একেবারে।দৌড়াতে যেয়ে সিড়ি থেকে পড়ে পা মচকে গিয়েছিল, কষ্ট হচ্ছিল অনেক দৌড়াতে কিন্তু কিছু করার ছিল না,পেছনে যে রিয়াদ আসছিল,তাকে দেখতে একদম হিং স্র হায়েনার মতো লাগছিল যেন ধরতে পারলেই খু ব লে খাবে।সর্বস্ব দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম।ভাগ্য সহায় ছিল,দাগ লাগেনি চরিত্রে।সামনে একটা মুদি দোকান ছিল,মানুষ ছিল চারজন আর তাদের মধ্যে আব্বুর পরিচিত একজন ও ছিল।তার চোখে পড়তেই সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। সেই দোকানে নিয়ে বসিয়েই জিজ্ঞেস করলো- ‘কী হয়েছে? রিয়াদ ততক্ষণে দোকান থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়েছে।তাকে দেখতেই তার দিকে ইশারা করে কোনোরকমে বললাম-‘সে আমার পিছু নিয়েছে।’রিয়াদ বুঝে গিয়ে উল্টো পথ ধরলো।বাকি যে দুজন ছিল তারা রিয়াদকে তাড়া করলেও পায়নি।সেদিক মানিক আঙ্কেল রিকশা করে নিজে সাথে করে নিয়ে বাসায় দিয়ে এসেছিলেন।নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছিল,কত বড় বিপদ থেকে ফিরে এসেছি।বাসায় আসার পর আম্মু বারবার জিজ্ঞেস করছিল কিন্তু এখনও বলিনি সত্যি টা।সোজা
ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়েছি,ধস্তাধস্তি তে শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আচড় লেগেছে।ভাবছিলাম যদি তার ছোয়াগুলো মুছে ফেলতে পারতাম।সারা শরীর জ্ব/লছিল,অসহ্য য ন্ত্রণা হচ্ছিল সারা শরীরে।বাইরে থেকে যেমন কাত রাচ্ছিলাম তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছিল ভেতরে।তবুও আম্মুকে বলতে পারিনি,বলিনি।বেচে গেলেও আমার আফসোস ছিল,আছে আর থাকবে।কখনো কোনো ছেলের সাথে জড়াইনি,হুট করে অঘটন হয়ে গেল বেহায়া মনের দ্বারা। অপবিত্র ছোয়ায় অপবিত্র হয়ে গেলাম আমি,আমার বরের আগে কেউ ছুয়ে দিল আমায়।সেদিনের ঘটনার পর টানা এক মাস ঘরবন্দী ছিলাম।প্রথম বাসা থেকে বেরোনো বন্ধ করেছি,তারপর রুম থেকে বেরোনো বন্ধ হলো।স্নেহার সাথে কথা হয়নি, সে যোগাযোগ করেনি, আমার করার ও অপশন ছিল না।ইচ্ছে ও হয়নি,ঘৃণা জমেছে তার প্রতি তীব্র। কিন্তু এইচএসসির শেষ পরীক্ষায় দেখা হয়েছিল তার সাথে।আবারও অতীত মনে পড়লো,আগেরদিন কল করেছিল,নাম্বার কোথায় পেয়েছিল জানিনা। বারবার মাফ চাইছিল। তাই…মন থেকে করিনি অবশ্য মন থেকে আসেও নি। কারণ মন থেকে তার জন্য ঘৃণা কমেনি কখনো,কমবেও না।কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করাটা ও আরেকটা ভুল ছিল।’
কিছুক্ষণ থামলো সূচনা। তার মাথাটা এখনও নিজের বুকে চেপে রেখেছে প্রণয়।সূচনা যে অনবরত কান্না করে যাচ্ছে তা ও বুঝতে পারছে প্রণয়।কিন্তু প্রণয় নিজের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত না, নিজেও বুঝতে পারছেনা তার এখন কেমন লাগছে।কিন্তু সূচনাকে নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে শক্ত করে।সূচনা প্রণয়ের বুক থেকে মাথা উঠাতে চাইলে ও পারলনা,প্রণয় আবারও বুকে চেপে ধরলো। সূচনা নাক টানতে টানতে আবারও বললো-
–‘বিকেলে তাকে দেখেছিলাম,ভেবেছিলাম সে দেখবে না আমায় কিন্তু যা হওয়ার তাই হলো।সে দেখে ফেলেছে, আর..আর একটু আগে কল করেছিল সে।আমার নাম্বার স্নেহা দিয়েছে তাকে,সেটা নিশ্চিত আমি।
প্রণয় চমকালো নাকি কে জানে,কিন্তু শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-
–‘কল দিয়ে কী বলেছে?
–‘ব..বলেছে আমি নাকি বেহায়া,বা জে মেয়ে আমি।বিয়ে করে ফেলেছে, দুই টা ছেলে হয়েছে এমন ছেলের জন্য বসে আছি আমি।লজ্জা করে না আমার যে এখনও তার খবর নেই।সে বলেছে আমি নাকি এখনও তার অপেক্ষা করছি।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি তাকে ভুলে গেছি, সেদিনের ঘটনার পর তার প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু ই আসেনি। আমি তাকে চাইনা,না তার অপেক্ষা করছি। আমি সত্যি তার খোজ নেইনি, স্নেহা ইচ্ছে করে তার কথা উঠিয়েছিল আর সে নিজেই বানিয়ে বানিয়ে বলেছে সব।আমার আপনাকে ছাড়া কাউকে চাই না,আপনাকে ছাড়া চলবে না আমার।আমার আপনাকে লাগবে মানে আপনাকেই লাগবে।আপনি ছেড়ে দিবেন না তো আমায়? এবার ম রে যাবো।
–‘হুশশশ…কী বললে?আবার বলো তো?
–‘ছে…ছেড়ে দিবেন না তো?
প্রণয় ধ মকের স্বরে বললো-
–‘আরেকদিন আবার এই কথা বললে ছেড়ে দিব নিশ্চিত।আর বলবে?
–‘ন..না।
–‘গুড।
–‘আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে?
–‘চলো ফ্রেশ হবে।
–‘কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?
–‘কোনো কথা ই ঘুরাচ্ছি না।চলো আগে ফ্রেশ করিয়ে দেই।
–‘প্রণয়?
–‘চুপ।
প্রণয় আবারও স্বগোতক্তি ধমকে উঠলো।সূচনা কেপে উঠলো,আবারও অভিমান হলো।কিছু বললো না আর।গুটি গুটি পায়ে প্রণয়ের সাথে এগিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে।প্রণয় নিজেই চোখে,মুখে পানি দিয়ে রুমে নিয়ে আসলো।সূচনা চুপচাপ বসে রইলো বিছানায়।প্রণয় রুম থেকে বেরিয়েছে,মিনিট খানেক পর হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে আসলো।নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে প্রণয়।সূচনা কিচ্ছুটি বলেনি,চুপচাপ শেষ করেছে সবটা।প্রণয় বলার আগেই নিজে থেকে যেয়ে শুয়ে পড়েছে সূচনা।প্রণয় সূচনার গায়ে কম্ফোর্টার টা টেনে দিতে গিয়েছিল, সূচনা তার আগেই টেনে আপাদমস্তক ঢেকে নিয়েছে। প্রণয় আর কিছু বললো না।রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
__________________________
–‘মিহু?
–‘হ্যা ভাইয়া বলো।
প্রণয় লম্বা শ্বাস নিল তাঁরপর বললো-
–‘সূচনাকে কবে থেকে জানিস তুই?
–‘হঠাৎ এই প্রশ্ন?
–‘কিছু না বল।
–‘আচ্ছা। কলেজের শুরু থেকেই।
–‘ওর সম্পর্কে সব জানিস?
–‘সব বলতে?
–‘রিয়াদ সূচনার সাথে কী করেছিল জানিস?
মিহু অবাক হলো, চকিতে তাকালো প্রণয়ের দিক। বললো-
–‘তার মানে সূচি বলে দিয়েছে সব?
–‘হুম।
–‘আমি আগেই বলেছিলাম বলে দিতে যাক বলে যেহেতু দিয়েছে ভালোই করেছে।
–‘তুই আমাকে পুরো সত্যি টা জানাসনি আগে।শুধু বলেছিলি ও রিয়াদ নামে কোনো ছেলেকে ভালোবাসতো।কিন্তু রিয়াদ কি করেছে তার সাথে তা বলিসনি।
–‘কারণ আমি চেয়েছিলাম তোমার আর সূচির মধ্যে এমন একটা সম্পর্ক হোক যেন সূচি নিজে ই তোমাকে সবটা বলতে পারে।
–‘আগে বললে কী হত মিহু?
মিহু কপাল কুচকালো,জিজ্ঞেস করলো –
–‘কেন?আগে জানলে কী হত?
প্রণয় জবাব না দিতেই মিহু পুনরায় জিজ্ঞেস করলো-
–‘তোমার স্ত্রী কে তোমার আগে কেউ ছুয়েছে,তোমার আগেও অন্য কেউ তার মন ছুয়েছে,অন্য কারো প্রতি অনুভূতি জন্মেছে সেগুলো জেনে কী তোমার আফসোস হচ্ছে ভাইয়া?
প্রণয় সচকিত হয়ে তাকালো মিহুর দিকে।গম্ভীর কণ্ঠে বললো-
–‘পরে কথা বলছি, তন্ময়কে কল দিতে বলিস।
কথাটুকু বলেই কল কে টে দিল প্রণয়। রা গে শরীর জ্বলছে তার।মাথার চুল গুলো দু’হাতে খামচে ধরলো প্রণয়। সে ভুল করেও তো ভাবেনি তার স্ত্রীর সাথে এমন কিছু হয়েছে।সূচনার সাথেই এমন হতে হলো কেন?ছাদের রেলিং এর হাতল এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে প্রণয়।দৃষ্টি অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশপানে,দেখা যাচ্ছে না তেমন কিছু ই।কুয়াশা যে প্রচুর।ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভঙ্গ হলো প্রণয়ের।পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো প্রণয়। তন্ময়ই কল দিয়েছে, ফোন কানে নিতেই শোনা গেল তার ব্যস্ত কণ্ঠ-
–‘ভাই মিহু যা বললো সেসব..
–‘সত্যি..
–‘ভাই ঔ নাম্বারটা রেহান আদনান নামে রেজিষ্ট্রেশন করা হলেও ঔটা রিয়াদ ব্যবহার করে।আর এটাই সেই রিয়াদ,মিহু বলেছে।রিয়াদের কথা শুনে ছবি দেখতে চেয়েছিল সে,আর ও নিশ্চিত করেছে এটা ই রিয়াদ আর ও ই আনান সিদ্দিকীর ভাগ্নে।
–‘দুজনের একই শ ত্রু।
–‘ হ্যা।
–‘কী করবে এখন?
–‘জানিনা,আমার মাথা কাজ করছেনা,অসহ্য লাগছে সব।
–‘রিল্যাক্স ভাই।
–‘রাখছি।
–‘আচ্ছা, মাথা ঠান্ডা করো।
কল কে টে দিল প্রণয়, ছাদে দাড়ালো না আর।দ্রুত পায়ে ত্যাগ করলো ছাদ।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।প্রণয় পা টিপে টিপে রুমে আসলো।সূচনা যেভাবে শুয়েছিল সেভাবেই শুয়ে আছে।প্রণয় ধুপধাপ পা ফেলে সূচনার পাশে যেয়ে দাড়ালো। টেনে উঠালো তাকে,সূচনা চমকে গিয়েছে একদম,চোখ জোড়া অবাধ্য অশ্রু তে সিক্ত তার।প্রণয় যা ভেবেছিল, সূচনা কাদছিল।চোখমুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। সূচনা এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল।এমন ব্যবহার কেন করছে প্রণয়?অভিমানের চেয়ে বেশি বুক ভার হয়ে গেল তার।প্রণয় কী ভুল বুঝছে তাকে?
#চলবে