প্রণয়ের সূচনা পর্ব -৩২

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_ Nazia_Shifa
#পর্ব_৩২
____________________________
–‘আমি একটা মেয়ের রে/প করেছি।মেয়েটা গরীব, পড়াশোনার জন্য ঢাকা তে থাকে। দেখতে পুরোই আ/গুন।তাই আর নিজেকে ক/ন্ট্রো/ল করতে পারিনি।সে আমার নামে মা/মলা দেয়ার হু/মকি দিয়েছে।আপনার কাছেই আসবে।এই নিন।কী করবেন জানেন তো।

সামনে বসে থাকা মাঝ বয়সী পুলিশ অফিসারের দিকে মাঝারি আকারের কালো রঙা একটা ব্যাগ টা এগিয়ে দিল ছেলেটা।বয়স তার ছাব্বিশ কি সাতাশ হবে।থুতনি তে হাত বুলাতে বুলাতে পুলিশ অফিসারটি
বললো-

–‘পুলিশ স্টেশনে বসে পুলিশ কর্মকর্তাকে আদনান হাসানকে ঘু/ষ দিচ্ছ।তোমার শা/স্তি কি হতে পারে জানো?

ছেলেটা অতি স্বাভাবিক গলায় বললো –

–‘ শা/স্তি কী সেটা জানি ভালো করে তবে আপনি যে শা/স্তি দিবেন না সেটাও আমি ভালো করে জানি।লোকমুখে আপনার কর্ম/কাণ্ডের কত সুনা/ম শুনেছি। টাকার বিনিম/য়ে তো মা/র্ডা/র কে সু/ইসা/ইড কে/স বানিয়ে দিতেও প/টু আপনি।সেখানে এটা তো ছোট্ট একটা জিনিস।করে দিন,আপনাও শান্তি আমারও শান্তি।

আদনান সাহেব কিয়ৎক্ষণ চুপ রইলেন।স্মৃতি হাতরা/লেন বোধহয়।বুঝতে পারলেন কথা বাড়ানো মানেই তার বি/পদ হতে পারে। তাছাড়া এসব তো আর নতুন না তার জন্য। রাজি হয়ে গেলেন।দু হাত টেবিলে রেখে ছেলেটার দিকে কিছুটা ঝু/কে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন –

–‘ কত আছে?

–‘নিজেই দেখে নিন খুলে।

ব্যাগটা টে/নে নিয়ে খু/লে দেখলেন।উল্টে পাল্টে গুন/লেন।বা/কা হাসি দিয়ে বললেন-

–‘হয়ে যাবে।ডিটেলস বলে দিও।

–‘হুম।
____________________________
–‘আনান সিদ্দিকী মানুষ রূপী পি/শাচ একজন।আমি
ওনার নিজস্ব ****** হসপিটালের ম্যানেজার।ওনার সব কু/কর্মের সাক্ষী আমি।এতবছর ওনার ভ/য়ে বলতে পারিনি।উনি হু/মকি দিয়েছিলেন আমার পরিবারের ক্ষ/তি করবেন বলেছেন। আমার মেয়েকে রে/প করার ও হুম/কি দিয়েছেন।বছর ছয়েক আগে আমাদের হসপিটালে একটা মেয়ের ডে/ড ব/ডি আনা হয়েছিল, সুই/সাইড করেছিল সে।মেয়েটা দেখতে ভা/রী সুন্দর ছিল।পোস্ট/মর্টেম করার দায়িত্ব স্যারেরই ছিল আর উনি সেই মৃ/ত মেয়েটাকেই রে/প করেছেন।যেখানে মৃ/ত একটা মেয়েই ছার পায়নি সেখানে আমার মেয়ে তো,,,বাবা হয়ে মেয়েকে বি/পদে ফেলতে পারিনি।হসপি/টালের মর্গের পাহারাদরকেও মে/রে ফেলেছেন।কত ফে/ক রিপো/র্ট বানিয়েছেন উনি। জীবনের ভয় তো সবারি আছে।আমার ও ছিল তাই চুপ ছিলাম।কিন্তু এখন এখন আর না।আমি সবকিছু বলে দিব, আমার শা/স্তি হলেও সমস্যা নেই। শা/স্তি মেনে নিব।শুধু এই শয়/তানটা শা/স্তি পাক।

বিস্ফো/রিত নয়নে ক্লিপটা দেখছিলেন আনান সাহেব।ক্লিপটা তে কথাগুলো বলেছেন হাসিব সাহেব।সে কল্পনাতেও আনতে পারেননি হাসিব সাহেব এমন কিছু করবেন।রা/গে, চিন্তায় রীতিমতো কা/পতে লাগলেন উনি।বয়সও তো কম হয়নি। টেনশন এখন নেয়া দায় তার।

–‘কী ভাবছেন ডাক্তার সাহেব?(প্রণয়)

–‘ এসব কিছু মিথ্যা,ফা/সানোর চেষ্টা করছো।আমাকে বো/কা মনে হয়।

–‘আপনি নিজেও জানেন।তাই আপনার সাথে কথা বাড়াবোনা।কালকে সকালের মধ্যে এই ভিডিও ক্লিপটা ভাইরাল হয়ে যাবে শুধু। হাসিব সাহেবের সাথে থাকুন আপনি,তন্ময় চলো।
_____________________________

~অলস মেঘলা মন, আমার আবছা ঘরের কোণ
চেয়ে রইত,ছুঁতে চাইতো, তুমি আসবে আর কখন
শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক,ধুলো মাখা বইয়ের তাক
যেন বলছে,বলে চলছে, থাক অপেক্ষাতেই থাক।

–‘বাহ আমার বির/হে দেখছি কা/তর হয়ে গেছ।

রাতের আকাশে মেঘের ভেলা।কার্তিক মাস এটা,একটা সময় পুরো কার্তিক মাস জুড়ে বৃষ্টি হতো তুমু/ল বেগে।কিন্তু এখন তেমন হয়না।অবশ্য আজকের আকাশ যেন বৃষ্টির বার্তা দিচ্ছে। মেঘেদের মিলন হয়েছে আকাশে,বাতাসের বেগও বাড়তি।দেখে মনে হচ্ছে তুমুল বর্ষণ হবে আজকে। সেই সময়টাতেই ব্যালকনিতে দাড়িয়ে গুন-গুন করছিলো উপরোক্ত গানটুকু।তখনই কানে এলো বাক্যটা।চকি/তে পাশে তাকাতেই দেখা গেল, আসমানী রঙা টি-শার্ট আর কালো রঙ এর ট্রাউজার পরে গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে প্রণয়।প্রথমবারের মতো সূচনা এবার আর বো/কা বনে গেল না। আবারও তার কানে আসলো-

–‘আমার বির/হে যে তোমার এই অবস্থা হয়েছে জানতামনা।

আনমনে ই সূচনা বললো-

–‘জানবেন কিভাবে? আপনি তো আর আমার খবর রাখেননি।

–‘ কে বলেছে খবর রাখিনি?তুমি আমাকে কত মিস করেছো আমি কিন্তু জানি।এমনকি কল্পনাও করো আমায় ঠিক যেমনটা এখন করছো।

–‘আপনি ঠিকই বলেছেন,আমি মিস করছি আপনাকে।আপনার বির/হে সত্যি কা/তর।শূন্য লাগে আপনাকে ছাড়া,কোনো কিছুতে মন বসতে চায়না,খালি বসে থাকতেও ভালো লাগেনা।তৃষ্ণা জেগেছে চোখে, যে তৃষ্ণা আপনাকে না দেখে মি/টবে না।আপনি আসবেন না সত্যি সত্যি?আপনি তো,,

বাকিকথা মুখেই রয়ে গেল,তার কল্প প্রণয় নেই।মি/লিয়ে গেছে কল্পনা তেই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সূচনা।এতক্ষণ যেন কোনো ঘোরের মধ্যে ছিল সূচনা।আমি কি সত্যি ই আপনাকে মিস করছি?চোখ বন্ধ করে মনকে প্রশ্ন করলো সে।উত্তর আসলো-

–‘তোমার অ/সুখ করেছে, যেই সেই অসু/খ না।মনের অসু/খ, হৃদকোমলের অসু/খ।সে অসু/খ সারাতে হলে তোমার তাকেই প্রয়োজন যে এই অসু/খের সূচনা ঘটিয়েছে।

ফট করে চোখ মেলল সে।দু হাতে মাথা চেপে ধরে নিজেই নিজেকে বললো-

–‘উফফফ পা/গল হয়ে গেছি আমি,সত্যি ই পা/গল হয়ে গেছি।একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কখনোই এমন আচরণ করে না।কিন্তু প্রেমে পড়লে কোনো মানুষ কি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে? তাদের ব্যবহারে তো পরিবর্তন আসে, প্রেমের ছোয়া লাগলে।হায়!দম বন্ধ/কর অনুভূতি। এবার সত্যি শ্বাস আ/টকে যাবে বোধহয়।

ব্যালকনি থেকে এসে সোজা রুমে এসে শুয়ে পড়ল বিছানায়।মেঘ গর্জে উঠাল আচ/মকা।চ/মকে উঠল কিঞ্চিৎ সূচনা।হুট করে চিন্তা জে/কে বসল মনে।আনমনে ই বললো-

–‘উনি এখন কোথায়?কোনো কাজে বাহিরে নাকি হোটেলেই আছেন?ঠিক আছেন তো?

পরমুহূর্তে নিজেই নিজের মাথায় চা/টি মে/রে বললো-

–‘ সে বাচ্চা না,নিজেকে সামলাতে জানে।সামলে নিবে।

কাথা টে/নে টান হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়।আজকে ঘুম ভালো হবেনা।হবে কীভাবে মন টা যে আজকাল ফাজ/লামো শুরু করেছে।কথা শোনেনা।তার মন অথচ পড়ে থাকে অন্য জায়গায়।
__________________________________
কানে কিছুর শব্দ আসতেই ঘুম হালকা হয়ে গেল সূচনার।চোখ বন্ধ করে রাখতে পারলা না। পিটপিটিয়ে চাইলো।কিসের শব্দ ঠাহর করতে কিয়ৎপরিমাণ সময় লাগল।অতঃপর যা বুঝল, বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ। হ্যা,,তাই তো মনে হচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে তাহলে।কাথার ভেতর থেকে মুখ বের করে তাকালো।ড্রিম লাইট জ্বলছে রুমে।হাত বের করে বেড সুইচ টি/পে লাইট অন করলো।ফোনে সময় ও পরখ করে নিল।ভোর পাচটা প্রায়।আযান দিবে দিবে সময়। এখন ঘুমাতে গেলে আর উঠতে পারবেনা, নামাজ ও পড়া হবেনা।তাাই আর না শুয়ে উঠে দাড়ালো। বৃষ্টি হচ্ছে তাই ব্যালকনির উদ্দেশ্যেই পা বাড়ালো। ব্যালকনিতে পা রাখতেই বৃষ্টিট পানির ঝা/পটা আর হাওয়া ছুয়ে গেল সমস্ত কায়া, সাথে মনও।চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো।আর একটু এগিয়ে যেয়ে গ্রীলে দুহাত রেখে রাস্তায় রাখল দৃষ্টি। জন শূন্য রাস্তা, মানুষ নেই একটাও।এখনও ভোরের আলো ফুটে/নি সম্পূর্ণ। রাস্তায় সোডিয়াম বাতি গুলো এখনও জ্ব/লছে।চারপাশে চোখ বুলাতে যেয়ে একটা জায়গা তেই স্থির হয়ে গেল চোখ।সূচনা হতবিহ্বল এর ন্যায় তাকিয়ে রইলো সেদিকে।কী দেখছে সে? পরমুহূর্তেই মনে পড়লো আবারও হেলুসিনেশন হচ্ছে তার।ধূর।এই হেলুসিনেশনের জ্বা/লায় এখন কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে সেটাই ভোলার পথে।ব্যালকনি থেকে রুমে এসে সোজা গেল ওয়াশরুমে। ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়ালো।নামাজ শেষে আবারও ব্যালকনিতে যেয়ে দাড়ালো। মিনিট পাচেক পার হতেই ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেল।চম/কালো সে।এই সাত সকালে তার রুমে কে আসলো?রুমেট দরজা তো ল/ক করা।তাহলে?ভী/রু মনে ঘার ঘুরে তাকালো পেছনে।অস্ফুটে স্বরে উচ্চারণ করলো-

–‘প্রণয়?
_____________________________
–‘ মি.আদনান আপনাকে সাস/পেন্ড করা হয়েছে আর আপনাকে আদালতে তোলা হবে।শা/স্তি আদালত ই ঠিক করবে।

–‘মজা করছেন,, আপনি জানেন আমি কবে থেকে এই স্টেশনে আছি।

–‘ আপনি যখন থেকেই থাকেন না কেন সেটা দেখার বিষয় না আমাদের। আপনি আইন ল/ঙ্ঘন করেছেন।সাধারণ মানুষ পুলিশ কে বিশ্বাস করে তাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসে আর আপনি সেই মানুষদের সাহায্য দেয়ার বদলে টাকা খেয়ে অপরাধীদের অপরা/ধ ঢেকে নিরপ/রাধীদের ই শাস্তি দেন।

–‘কীসের দায়ে বলছেন আপনি?প্রমাণ আছে?

–‘ আছে দেখেই তো বলছি এই নিন দেখুন।

একটা ক্লিপ ছাড়া হলো আদনান সাহেবের সামনে।যেখানে দেখা যাচ্ছে উনি মাঝরি আকারের কালো রঙা ব্যাগ থেকে টাকা গুনছেন।কালকের সেই ছেলেটাই তো দিয়েছিল।কিন্তু এটা তো তার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র অংশ। আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।রা/গে হাত মুঠ হয়ে এলো তার।

–‘থানায় চলুন আমাদের সাথে।

–‘আমি একজনকে কল করতে চাই।সেই অনুমতি আছে জানি।সময় দিন।

–‘ঠিক আছে যান।

একটু দূরে যেয়ে কল লাগালো সেই ছেলেটাকে।কল দিতেই সাথে সাথে রিসিভ হলো যেন কলের অপেক্ষা তেই ছিল।ফোন রিসিভ হতেই কর্কশ গলায় আদনান সাহেব বললেন –

–‘ কু**** বা**চ্চা কী করেছিস তুই?কেন করেছিস?কে পাঠিয়েছে তোকে?

–‘স্যার বিশ্বাস করেন আমি নিজে থেকে কিছু করিনি। আমাকে হু/মকি দিয়েছিল উনি।

–‘কে?

–‘ডঃ আনান সিদ্দিকী।

আদনান সাহেব চম/কে উঠলেন।অবাকের চরম পর্যায়ে উনি।কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ বললো-

–‘সময় শেষ স্যারের আরও কাজ আছে।চট্টগ্রাম যেতে হবে।

–‘কে,,কেন?

–‘****** হসপিটালের ওনাড় ড.আনান সিদ্দিকি বারোতলা থেকে পড়ে মা/রা গেছেন।সেই কে/সের যাচ করতেই যাবেন।

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম।আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার করব পরবর্তী পর্ব গুলোতে।এখনই কেউ কিছু মনে করবেন না। কাউকে ছোট করে বা অসম্মান করে লিখছি না আর না লিখব সে বিশ্বাস রাখুন।আর একটা প্রশ্ন🤐বলুন তো এবার প্রণয় সত্যি ই এসেছে নাকি আবারও কল্পনা করছে সূচনা?বেশি বেশি রেসপন্স করুন।ভালোবাসা সবাইকে।হ্যাপি রিডি।দোয়ায় রাখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here