গল্প:প্রণয়ের পরিনতি
লেখিকা:সাদিয়া আফরিন নিশি
পর্ব:২
সেদিনের পর থেকে তনয়ার জীবনটা ভালোই চলছে। তার মনের অজানা ভয় দুর হয়ে গিয়েছিলো পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে। অফিসে সবাই খুব ভালো তাই তার কোনো অসুবিধা হয়নি।শুধু একটা মেয়ে তাকে বেশি পছন্দ করত না। মেয়েটির নাম ইমা। সে এমডির পিএ ছিলো।সবসময় তনয়াকে ছোটো করার চেষ্টা করতো।কিন্তু তনয়া বেশি পাত্তা দিতো না। সে মনে করে এসব মেয়েদের সাথে কথা বলা মানে বোকামি।এদেরকে এদের মতো চলতে দেওয়াই ভালো। এভাবে তার দিন চলছে।
আজ হলিডে তাই তনয়া খুব ভোরে উঠে তাদের বাড়ির পাশে একটা পার্কে হাটতে বের হয়।সকালের মিষ্টি বাতাস গাঁয়ে মাখতে তার ভীষণ ভালো লাগে। তাই ছুটির দিনে হাটতে হাটতে এখানে চলে আসে। আজকেও এসেছে। পার্কে এক সাইডে সারিবদ্ধ ভাবে বেঞ্জ রাখা তার সামনেই একটি স্বচ্ছ লেক।তনয়া বেঞ্জে বসে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। হঠাৎই কিছু বাচ্চার চেঁচামেচিতে তার চোখ যায় কিছুটা দুরে লেকের অন্য প্রান্তে। সেখানে কিছু বাচ্চা একটি ছেলেকে গোল করে ঘিরে চেচাঁমেচি করছে। কী বলছে তা দুরে হওয়ায় বুঝতে পারছেনা তনয়া।
ছেলেটিও বাচ্চাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে হেসে হেসে কী জেন বলছে। তনয়া শুধু মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছেলেটির হাসি দেখছে। ছেলেটির পড়নে সাদা জগিং ড্রেস। অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ। আর খুবই স্মার্ট। তনয়া এক ঘন্টা যাবত তাদের হাসি মজা করে খেলা দেখলো।হঠাৎই ছেলেটির ফোনে একটা ফোন আসায় ছেলেটি কিছুটা দুরে গিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো।বাচ্চারা চুপটি করে দাড়িয়ে রইলো। ছেলেটির সুদর্শন মিষ্টি হাসিমাখা চেহারা মুহূর্তেই রক্তিম বর্ণধারণ করলো।এটা দেখে তনয়া ভরকে গেল।সুদর্শন ছেলেটিকে এখন তার কাছে হিংস্র মনে হতে লাগলো।কেন জানি তনয়ার খুব ভয় লাগলো। সে আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে বাড়িতে চলে গেল।
*******
বাড়িতে গিয়ে চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসলো তনয়া।তনিমা, তৃপ্তি ওরাও এলো।সবাই ব্রেকফাস্ট করছে এরমধ্যে তৃপ্তি বললো,
তৃপ্তি: আজকে আমরা সবাই মিলে শপিংয়ে গেলে কেমন হয়। আমার আবার কাল কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান আছে। সবার জন্য নীল ড্রেস সিলেক্ট করা হয়েছে। আমার তো তেমন কোনো ভালো নীল ড্রেস নেই তাই আরকি।
তনিমা:হুম ভালোই হয় তাহলে।
আমি ভাবছি পড়াশুনার পাশাপাশি একটা জব করবো।পত্রিকায় একটা জব অফার দেখলাম।কাল যাবো দেখি কী আছে কপালে।
তনয়া:আচ্ছা ঠিক আছে। আমিও যাব। কাল আবার আমাদের নতুন এমডি আসবে।আতিক স্যারের বড় ছেলে।স্যারের বয়স হয়েছে তাই ছেলের ওপর দায়িত্ব দিতে চান। মা তুৃমিও চলো না আমাদের সাথে। আর তনি তুই তাহলে কাল গিয়ে দেখ কী হয়। একটা জব পেলে তো আরো ভালোভাবে আমাদের সংসারটা চালানো যাবে।
তনয়ার মা:আরে না না আমি যাব না তোরা যা।আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।
তনয়া:সে কী মা তোমার শরীর খারাপ। কী হয়েছে ডাক্তার ডাকবো?
তনয়ার মা:আরে না না ডাক্তার লাগবে না। এমনিতেই ভালো লাগছে না তাই বললাম
তনয়া:আচ্ছা, নিজের খেয়াল রেখো।আর কোনো সমস্যা হলে বলবে।
ব্রেকফাস্ট শেষে সবাই কিছুক্ষণ গল্প করে তনয়া আর তনিমা আজকে লাঞ্চটা রেডি করতে গেল।
আর তৃপ্তি বসে বসে কার্টুন দেখছে। মেয়েটা একদম বাচ্চা স্বভাবের।
*****
বিকেলে,
তিন বোন মিলে শপিং করতে গেল।শপিংমলে ঢোকার সময় ঘটলো এক বিপত্তি।সেই শপিংমলেই শপিং করে বের হচ্ছিলো কাব্য আহমেদ।আহমেদ গ্রুপ অব কোম্পানির বর্তমান এমডি সে।
(কাব্য দেখতে অতুলনীয়। কিন্তু মেয়েদের তেমন পাত্তা দেয় না। খুবই এটিটিউড তার। কাব্যর একটা ছোটো বোনও আছে নাম কাশরিয়া আহমেদ কণা। এবার নবম শ্রেণিতে পড়ে। অত্যন্ত রুপবতী কিউট বাচ্চা মেয়ে। চুলগুলো পিঠ অব্ধি তবে একদম স্ট্রেইট।মা,বাবা,দাদা,আর বোনকে নিয়ে কাব্যের পরিবার।কণা হলো কাব্যের প্রাণ)
বর্তমান ঘটনা,
ঘটনা চক্রে পায়ে স্লিপ কেটে পড়ে যায় অনিমা।আর একেবারে কাব্যের গাঁয়ের উত্তর।
কাব্য:Who the hell are you
এই মেয়ে তুমি চোখে দেখতে পাও না।উঠো বলছি আমার ওপর থেকে। ছেলে দেখলেই শুধু গাঁয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। সারা পাবলিকের সামনে আমার ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে দিলে।
এই বলে কাব্য তনিমাকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে জামাকাপড় ঝাড়তে লাগল।
যদিও তনিমা কাব্যকে সরি বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু কাব্যের কথায় তনিমার রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেল।
তনিমা:এই কী বললেন আপনি। লুচু ছেলে কোথাকার। আপনি ইচ্ছে করে আমাকে পা বাজিয়ে ফেলে দিয়েছেন। যাতে আমি আপনার গাঁয়ের ওপরে পড়ি।
আমার বয়েই গেছে আপনার মতো বাঁদরের গলায় ঝুলতে।
(যদিও তনিমা জানে ভুলটা তার কিন্তু কাব্যকে কীছুতেই জীততে দেওয়া যাবেনা। তাই তো এসব বলছে)
কাব্য:কীহহহহহ,আমি বাঁদর। অসভ্য মেয়ে তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে লুচু বলো,বাদঁর বলো।তুমি জানো আমি কে? কাব্য আহমেদ আমার নাম। আর তুমি আমাকে এসব কথা বলো।
তনিমা:আপনি যেই হোন না কেন।আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি একশো বার বলবো
লুচু,বাদর,ইঁদুর, বিড়াল, গরু,ছাগল,পাগল,
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই,
কাব্য:Shut uppppppp বলে চিৎকার করে উঠলো।
রাগে কাব্যের মাথা ফেটে যাচ্ছে।
তনিমা আরও কিছু বলতে গেলে তৃপ্তি ওকে টেনে নিয়ে গেল।আর তনয়া গিয়ে কাব্যের কাছে সরি বলে চলে যেতে লাগলো।
কাব্য:তোমাকে তো আমি পরে দেখে নেবো অসভ্য মেয়ে।
তনিমা:যেতে যেতে,হুমম দেখবেনই তো আমি দেখতে অনেক সুন্দর। টিকিট কেটে এসে দেখে যাবেন কেমন।
কাব্য:স্টুপিড গার্ল
তারপর তিন বোন মিলে শপিং করে বাড়িতে চলে গেল। সারা রাস্তা তনিমা রাগে চুপ করে বসে ছিলো। কারও সাথে কোনো কথা বলেনি।
বাড়িতে ফিরে তনয়া তার মাকে ডেকে সবকিছু দেখালো আর আজকের ঘটনা বললো সব।
তনিমা নিজের ঘরে চলে গেলো।
তৃপ্তি নতুন ড্রেস দেখতে ব্যস্ত।
রাতে সবাই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লো।তনয়ার না চাইতেও বারবার পার্কের ওই ছেলেটির কথা মনে পড়তে লাগলো।আর তনিমার কাব্যের কথা। এভাবে দুবোন দুজনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল।
*********
পরের দিন,
তৃপ্তি সকাল সকাল রেডি হয়ে কলেজে চলে গেল তনিমা গেল চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আর তনয়া গেল অফিসে।
রয়েল কলেজ,
তৃপ্তি আজকে নীল কুর্তী পড়েছে সাথে নীল হিজাব, চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। এতেই ওকে অপুর্ব দেখতে লাগছে।
তৃপ্তি কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে ওর ফ্রেন্ড নীতিকে ফোন করলে।
তৃপ্তি:কীরে কোথায় তুই। তোর না গেটের কাছে থাকার কথা ছিল?
নীতি:আরে দোস্ত ভেতরে চলে আয়। আমি ফাংশনের কাছে আছি সাজানো দেখছি।
তৃপ্তি:আচ্ছা আসছি।
*******
আহমেদ কোম্পানি,
তনিমা বসে বসে অপেক্ষা করছে কখন তাকে ডাকবে।সবাই একে একে ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। একুশ জনের পরে তনিমার ডাক পড়ল।
তনিমা তো ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকলো।
তনিমা:May i come in,sir..
এমডি:Yes, come in
বলে চেয়ার ঘুরিয়ে সামনে তাকালো।
এমডি এবং তনিমা দুজন দুজনকে দেখে পুরোই অবাক।দুজনই একসাথে বলে উঠলো আপনি।
*******
চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিস,
তনয়া সবার সাথে দাড়িয়ে আছে নতুন এমডিকে ওয়েলকাম করতে।আর দু মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে তিনি।কিন্তু তনয়ার মনে কোনো চিন্তা নেই।কারণ আতিক চৌধুরী এতো ভালো তার ছেলেও নিশ্চয়ই ভালো হবে। এটা ভেবে মনে মনে সে খুব খুশি।
এসব ভাবতে ভাবতে এমডি প্রবেশ করলো।তনয়া তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এমডির দিকে তাকালো
আর সাথে সাথে তনয়ার সব চিন্তা ভাবনা নিমেষেই পাল্টে গেল।রীতিমতো তনয়ার হাত পা কাঁপতে লাগলো।
এমডি সোজা তার রুমে চলে গেল।আর তনয়া হা করে দাঁড়িয়েই রইলো।
চলবে,
(কাব্য ভাইয়ের কথা রেখে নায়ক একজনের নাম কাব্য দিলাম)
(সবাই সবার মতামত জানাবেন)