প্রণয়ের_পরনতি পর্ব

#প্রণয়ের_পরিণতি
#পর্ব_১৯
#Writer_Sadia_afrin_nishi

ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা রুম।একটু আলোর ছিটে ফোঁটাও নেই।ভয়ে ভয়ে বারবার ডোক গিলছে তনিমা। এখানে কীভাবে কোনো অফিসের কাজ হতে পারে। এই নিমফলের সবকিছুই অদ্ভুত ঠিক ওনার মতো।

কাব্যর দেওয়া ঠিকানায় এসে তনিমা দেখল বাড়িটা কেমন জানি পুরোনো। অনেক আগেকার বাড়ি হবে হয়তো।আর বাড়িটা শহর থেকে অনেকটা দুরে।তনিমা আস্তে আস্তে ভিতরে প্রবেশ করে কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় না। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন তাকে উত্তরের এই ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে বলে ওখানে বস আছে। লোকটা হয়তো এখানকার কাজের লোক।তনিমার ভীষণ ভয় করছে।এমনিতেই সে ভুতে খুব ভয় পায়। তার ওপর এই বাড়িটা, বাড়ির নিরবতা,বাড়ির মানুষ সবকিছুই কেমন জানি অতীব ভয়ংকর।তারপর এই রুমেটা তো পুরোই ডিফিকাল্ট।তনিমা আর একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরতে নেয় কিন্তু সাথে সাথে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়।তনিমার তো এবার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।এই অন্ধকার ঘরে ভুত ছাড়া কেউ থাকতে পারে না।নিশ্চয়ই ভুতই তাকে ধরেছে।এবার আর তার রক্ষা নেই। এবার এই ভুত তার ঘাঁড় মটকাবেই।তার কাব্যের অতো ভালো ব্যবহারের কারণটা আগেই বোঝা উচিত ছিল। এই লোকের মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করে সে এখানে চলে এলো।এখন তার কী হবে। হায় আল্লাহ কেউ আমায় বাঁচাও।এসব ভাবতে ভাবতে তনিমা এক চিৎকার দেওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছে যেই না চিৎকার দিতে যাবে সামনের লোকটি তার মুখটা স্বজোরে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে। তনিমা এবার কথাও বলতে পারছে না।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সামনের ভুতের গাঁ থেকে আসা ফ্রেগরেন্সটা তার বড্ড চেনা।এরই মধ্যে সামনের ভুতটা তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,কী রে এখানে কেন এসেছিস?মরার শখ জেগেছে নাকি?একা একটা মেয়ে এভাবে এখানে চলে এলি,শুধু মাত্র একটা ছেলের কথায় বিশ্বাস করে। তাও আবার যে কি না তোর চির শত্রু।
তনিমা এবার কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে চাইল।কিন্তু পারছিল না। তবুও অনেক কষ্টে তনিমা বলল,আআআআমি কীহহ করে জানবব যে ওই লোকটা আমাকে এইভাবে ফাঁসাবে।তনিমা পারে তো এবার কেঁদেই দেয়।সামনের ভুতটা তাকে এবার আবার বলছে,এই একদমই কাঁদবি না বলে দিচ্ছি। তাহলে কীন্তু সবার আগে তোর চোখটা তুলে সেটা দিয়ে মারবেল খেলবো।অ্যাঁহহহহহহহহ এবার তনিমা জোরে জোরে কেঁদেই দিল।আর সাথে সাথে সারা ঘর আলোকিত হয়ে উঠল।তারপর তনিমা তার সামনের ভুত নামক ব্যক্তিটিকে দেখে তার কান্না, ভয় নিমেষেই রাগে পরিণত হলো।

তনিমা:তারমানে এটা এই বজ্জাত নিমফলের কাজ(মনে মনে)
আপনি এখানে কী করছেন?আর আমাকে ছাড়ুন বলছি একদম আমাকে টাস করবেন না।এসব তাহলে আপনার প্ল্যান তাইনা। এজন্যই সকালে অতো ভালো ভালো কথা বলেছিলেন।এজন্যই তো বলি সূর্য কী আজকে পশ্চিমে উঠল নাকি?(রেগে আগুন হয়ে)

কাব্য তনিমাকে এবার ঠাস করে ছেড়ে দিল।তনিমা গিয়ে পরল সোজা ফ্লোরে।

কাব্য:এবার ঠিক আছে। আমি তোমাকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম আর তুই কী না আমাকে কতো কিছু বললে?তোমাকে টাস করতে আমার বয়েই গেছে। এইতো লোহার মতো শক্ত শরীর। মেয়েদের শরীর এতো মোটা আর শক্ত হয় এটা আমি এই প্রথম জানলাম।এই তুমি মেয়ে তো নাকি উগান্ডার এলিয়েন(ভাব নিয়ে)

তনিমা:(ফ্লোরে বসে বসে)কী বললেন আপনি আমি উগান্ডার এলিয়েন,আমি মেয়ে নই,আমার শরীর শক্ত মোটা, এটা বলে তনিমা কাব্যকে সারা ঘরে দৌড় করালো।
দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় দুজনে গিয়ে পরল বেডের ওপর।তনিমা নিচে কাব্য তনিমার উপরে।

তনিমা তো চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।আর কাব্য তনিমার দিকে নিষ্পলক ভাবে চেয়ে আছে।তনিমার শ্বাস নেওয়াও দায় হয়ে পরেছে। পাঁচ বছর আগে কাব্য যখন তনিমাকে কোলে তুলে গাড়ি অব্দি নিয়েছিল তখনকার ফিলিংস আর আজকে কাব্য তনিমার উপর পড়ায় তনিমার সেই একই রকম ফিলিংস হচ্ছে। তনিমা অনেক কষ্টে একটু শ্বাস টেনে টেনে চোখ খুলে কাব্যের দিকে তাকালো।আজকে কাব্যর চোখে সে অন্যকিছু খুঁজে পেল।আজ আর কাব্য বিরক্ত হয়ে নেই।আজ কাব্যের চোখেও একরাশ মুগ্ধতা। কিন্তু পাঁচ বছর আগের সেই দিনে কাব্যের চোখে,মুখে ছিল প্রচুর পরিমাণে বিরক্তি,রাগ।

তনিমা:(তোতলাতে তোতলাত)আআআমারর ওপর থেকে সরুননন

কাব্য:যদি না সরি(দায় ছাড়া ভাবে)

তনিমা:মানেহহহ

কাব্য:তোমার শাস্তি এখনো কমপ্লিট হয়নি

তনিমা:আমার আবার শাস্তি কীসের?আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।

কাব্য:মিথ্যে কেন বলছ?আমি নিজের চোখে দেখেছি।তাই শাস্তিটাও নিজের হাতে তোমাকে দিবো

তনিমা:শাস্তি মানে কী শাস্তি দিবেন?আর আমার অন্যায়টা তো আগে বলুন(ভয়ে ভয়ে)

কাব্য:ওহ রিয়েলি তুমি জানো না তুমি কী করেছ?আচ্ছা তাহলে আমিই বলছি।অফিসের টাইম ওভার করে বিএফ নিয়ে বাইকে ঘোরাঘুরি কী অপরাধ নয়?

তনিমা:কীহহহ আমার তো কোনো বিএফই নেই(অবাক হয়ে)

কাব্য:আবার মিথ্যে বলছ(রেগে গিয়ে তনিমার কাঁধ চেপে ধরে)

তনিমা:সত্যিইইই বলছি। আমার কোনো বিএফ নেই। ওটা আমার ফ্রেন্ড ছিল। আমার দেড়ি হচ্ছে দেখে আমাকে পৌঁছে দিতে এসেছিল।

কাব্য:আবার মিথ্যে বলছো(চিৎকার করে)

তনিমা:নাহহ সত্যি বলছি।

তনিমার চোখে এবার পানি চলে আসে। এটা দেখে কাব্য আর কিছু না বলে উঠে আসে তনিমার ওপর থেকে।ছাড়া পেয়ে তনিমা তাড়াতাড়ি উঠে পরল।ওরনা ঠিক করতে করতে বলল,তা আপনার এতো এটা নিয়ে রাগার কী আছে?আমার যার সাথে ইচ্ছে ঘুরব?তাতে আপনার কী?আপনি আবার কোনো ভাবে জেলাস নয় তো?এই সত্যি করে বলুন তো ভালো-টালো বেসে ফেলেন নি তো আমাকে(সন্দেহের চোখে তাকিয়ে)

কাব্য এগুলো শুনে তনিমার দিকে যেই রাগি লুকে তাকালো তনিমা আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।তনিমা যাওয়ার পর কাব্য নিজের মনে হাসতে লাগল।এতক্ষণ সে সবকিছুই তনিমাকে ভয় দেখাতে করছিল।কোনো সিরিয়াস ভাবে নয়।

___________

এয়ারপোর্ট থেকে নেমে গাড়িতে চেপে বসল প্রিসা।তার আর দেড়ি সইছে না। কতদিন পর সে তার মনের মানুষকে দেখবে।ভাবতেই অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে তার ভেতরে। লন্ডন থেকে আসার সময় রিশান একটি বার প্রিসাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করল না তার ওপর এই ক’বছরে তার একটি ফোন,টেক্সট কোনোকিছুর রিপ্লাই দেয়নি।এবার গিয়ে তাকে সে আচ্ছা মতো বকে দেবে।তাকে ইনগোর করার মজা দেখিয়ে দেবে।

(এই হলো প্রিসা।পুরো নাম প্রিয়ন্তি প্রিসা।ওর বাবা বাংলাদেশি কিন্তু মা বিদেশি।ওরা বিদেশেই সেটেল।প্রিসার বাবা আগে বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান মাফিয়াদের মধ্যে একজন ছিলেন।তারপর সে এখান থেকে লন্ডন চলে যায়। সেখানে গিয়ে প্রিসার মাকে বিয়ে করে। প্রিসার মা ও ছিলেন একজন মাফিয়ার মেয়ে।প্রিসার বাবা প্রিসার মায়ের বাবার সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাজ করত।একদিন প্রিসার নানা মারা যায় তখন থেকে সবকিছু প্রিসার বাবাই সামলায় আর সেখান থেকেই প্রিসার মাকে সে বিয়ে করে। তারপর তাদের জীবনে প্রিসা আসে।প্রিসা তাদের একমাত্র মেয়ে। বাবা মায়ের চোখের মনি।ছোটো থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে প্রিসা।খুবই জেদি,একগুয়ে,বদমেজাজি টাইপের মেয়ে প্রিসা।রিশান যখন লন্ডনে পড়তে যায় তখন থেকেই প্রিসার সাথে তার দেখা। আর সেই থেকেই প্রিসা রিশানের পেছনে পরে আছে। প্রিসা রিশানের সাথে একই কলেজে পরত তবে রিশানের এক ব্যাচ জুনিয়র সে।লন্ডন থেকে পড়াশোনা শেষ করে রিশান চুপিচুপি বাংলাদেশ চলে আসে। সে ভেবেছিল একবার বাংলাদেশ চলে এলে এই মেয়ের হাত থেকে সে রক্ষা পাবে।কিন্তু না প্রিসা সেই থেকেই কল,মেসেজ দিতেই থাকে। একদিনও মিস দেয় না। কিন্তু রিশান কোনো রিপ্লাই দেয় না। এভাবে ভালোই চলছিল কিন্তু একদিন প্রিসা একটা মেসেজে জানায় সে বাংলাদেশে খুব শীঘ্রই আসছে এবং তারা তারপর দু’জনে বিয়ে করবে।এটা শুনে রিশান খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তারপর সে তার পরিবারকে সবটা জানায়। তার মা,বাবা তখন তাকে তনয়াকে বিয়ে করে নিতে বলে।
কারণ রিশান যে তনয়াকে মনে মনে পছন্দ করে তারা সেটা বুঝতো।কিন্তু তনয়া তো বড় লোকদের বিয়ে করবে না। এটা রিশান জানত তাই সে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।আর সেই সুযোগটা সে পেয়েও যায় তনয়ার মার অপারেশনের সময়। তনয়াকে তার কন্টাক্ট মেরেজ করার কারণ হলো একমাত্র তাকে বিয়েতে রাজি করানো।রিশান ভেবেছিল এই কন্টাক্টের সময়ের মধ্যে সে তনয়ার মনে তার জন্য জায়গা করে নেবে।তখন আর কন্টাক্টের কোনো ভ্যালুই থাকবে না। আর প্রিসার হাত থেকে ও সে মুক্তি পাবে।রিশানের এখন শুধু এই একটাই বিপদের চিন্তা। প্রিসা তার বিয়ের খবর শোনার পর ঠিক কী করবে।সবকিছু মেনে নিয়ে ফিরে যাবে তো?নাকি তার জীবনটা তছনছ করে দিয়ে যাবে?)

চলবে,
(রিচেক করা হয়নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here