#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১০
#writer_nahida_islam
ইফাজ বিছানায় শুয়ে আছে অতসী রুমে ডুকতে ই বললো,
-ভুলে ও বিছানায় এসে বসবে ও না, নিচে শুয়ে পড়ো। বিয়েটা করেছি কেনো জানো আমি কি তা তোমাকে বুঝানোর জন্য। কতো থাপ্পাড় যে তোমাকে খেতে হবে শুধু দেখবা। নয়তো আমি, এই ইফাজ তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতো নাকি।
-আমি যে আপনাকে বিয়ে করছি সাত কপালের ভাগ্য। আমার কোনো শখ নাই আপনার মতো বজ্জাত লোকের সাথে বেড শেয়ার করার।
-আমি এখন না বললে ঠিক ই এসে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়তে।
-আহা কী আমার সালমান খান উনার পাশে শুয়ার জন্য পাগল হয়ে আছি।
-আর একটা কথা বললে না রুম থেকে বের করে দিবো।
অতসী শুধু আড়চোখে তাকালো আর কোনো কথা বললো না। আলমারি থেকে বালিশ চাদর বের করে নিচে শুয়ে পড়লো।
সকাল বেলা,
অন্তুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে অতসীর। দ্রুত উঠে সব কিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় অতসী। অনিতা বেগমকে কিচেনে দেখে অতসী ও পাশে গিয়ে দাড়ায়,
-মা আমাকে দিন আমি বাকি রান্না করে নিচ্ছি।
-কয়টা বাজে?
-নয়টা বেজে গেছে অলরেডি।
-ক্লাস শুরু হয় কয়টায়।
-সাড়ে দশটা মা।
-তখন এখন কিচেনে কী করতে আসছো, যাও টেবিলল নাস্তা দেওয়া আছে তুমি খেয়ে অন্তুর সাথে কলেজে চলে যাও।
আমি আর কথা কিছু বললাম না, রুমে গিয়ে দেখলাম ইফাজ বজ্জাতটা এখন ও ঘুমাচ্ছে। মাথায় ভালো একটা বুদ্ধি আসলো। দৌড়ে নিচে কিচেনে গেলাম,
-আবার আসলে কেনো?
কাজ আছে মা, এইটুকু বলে হাতে অনেকটুকু লবণ নিলাম। রুমে ডুকে আমার জামাকাপড় গুলো এক হাতে নিলাম। আস্তে আস্তে বেডের পাশে গিয়ে ইফাজের মুখে লবণ পুরে দিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি রুমের বাহিরে বের হতে ই ইফাজের চিল্লানোর আওয়াজ শুনলাম। ঘুমটা ভাঙছে বেশ উচ্ছাস নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে রেডি হয়ে নিলাম। ইফাজের চিৎকার চেচামেচি এখনো থামেনি তাই রুমে উকি দিলাম,
-উকি দিচ্ছো কেনো চোরের মতো।
খুব ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে বললাম,
-আজব আমি আবার কী করলাম।
ইফাজ বিছানা থেকে উঠে এসে আমার হাত পিছনে নিয়ে দেওয়ালের সাথে আটকে ধরে,
-মুখে লবণ দিয়ে পালিয়েছো কেনো এতো শখ থাকলে পাপ্পা দিতে পারতে।
মুখে ভেংচি কেটে বললাম,
-সরি ব্রো আমার ও টেস্ট এতো খারাপ না।
ইফাজ একবারে মুখের কাছে চলে আসলো, ইফাজের প্রতিটা নিশ্বাসের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতে ই ইফাজ বললো,
-ফালতু কথা বললে এমন মাইর দিবো না, সব ভুলে যাবে।
অতসী রেডি হয়েছো তুমি টাইম চলে যাচ্ছে তো।
অন্তু আপুর কন্ঠ শুনে ইফাজ আমায় ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়ায়। আমি টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
কোনো রকম এসে শুধু ক্লাস রুমে বসেছি। রুহি অন্য বেঞ্চে বসা। ফার্স্ট ক্লাস শেষ হতে ই রুহি আমার বেঞ্চে চলে আসে।
-কি রে এতোদিন আসলি না কেন?
-বাসায় একটু প্রবলেম ছিলো এই জন্য।
-অহ্ যাচ্ছিস তো?
-কোথায় যাবো।
-কলেজ থেকে পিকনিকে যাচ্ছে তুই যাবি না।
-কিহ্
-কোথায় যাচ্ছে।
-সিলেট।
-সিউর না
-কেনো?
-ক্লাসে এতো কথা বলিস না পড়ে বলবো নে।
ক্লাস শেষ করে বাহিরে বের হতে ই দেখি ইফাজ সুমির সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে। আমাকে দেখে আরেকটু বেশি গা গেসে দাড়ালো ইফাজ। আমি তাদের সামনে দিয়ে যেতে ই সুমি আমাকে পিছন থেকে ডাকে,
-তোমার নাম অতসী তাই না?
-আপনি এতোই বলদ সামান্য নামটা মনে রাখতে পারেনা।
-ইফাজ দেখছো এই মেয়ে আমার সাথে কীভাবে কথা বলে।
-না ইফাজ দেখেনি ইফাজ কানা।
-এই মেয়ে এতো কথা বলতে বলছি তোমাকে, তাহলে এতো কথা বলো কেনো?
-আমি আপনাকে বলছি যে আমাকে পিছন থেকে ডাকেন, তাহলে আপনি ডাকলেন কেনো?
-ভারি বেয়াদব তো তুমি।
-আপনি কেমন আদবে ভরপুর তা আমার জানা আছে?
ইফাজ চোখ রাগিয়ে বললো, আসলেই তুমি বেয়াদব।
-বেয়াদব না হলে কী আর কারো ফ্যামিলি আমাকে অমানুষকে মানুষ বানানোর দায়িত্ব দেয়।
-তোমার এতো কথা শুনতে ডাকিনি, কলেজ পিকনিকে যাচ্ছো নাকি। আমি আর ইফাজ তো যাচ্ছি তাই না ইফাজ।
ইফাজ হেসে সুমির দিকে তাকিয়ে বললো,
-হে
-আপনারা জাহান্নামে যান আমি কী করবো।
-না কাউকে ম্যানেজ করতে পারছি না তো আমাদের পিক তুলে দেওয়ার জন্য, তুমি যদি যাও তো এই দায়িত্বটা তোমাকে দিবো।
-আমাকে পিক তোলার দায়িত্ব দিলে লাথি দিয়া পানিতে ও ফেলে দিতে পারি।
কথাট বলে ই চলে আসলাম। মনে মনে ভাবলাম ইফাজ বজ্জাতের বিচার টা করতে হবে।
বাসায় ডুকতে ই দেখলাম আমার শ্বশুর আব্বু আমার আগে হাজির। সালাম দিয়ে উপরে যাবে তখন ই বললো,
-অতসী মা, রেডি হয়ে এসো।
কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেনো বাবা?
-তোমাকে আর অন্তুকে নিয়ে শপিং এ যাবো। দুদিন পর তো পিকনিকে যেতে হবে। আমার দুই মেয়েকে জামাকাপড় কিনে দিতে হবে না।
আমি হাসি মুখে বললাম,
-শপিং করতে আমার ও খুব ভালো লাগে বাবা আমি রেডি হয়ে আসছি।
আমি উপরে চলে আসলাম ড্রেস চেঞ্জ করে একটা গ্রাউন পড়ে নিলাম সাথে মাথায় হিজাব পড়লাম।
রেডি হয়ে বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম। আমার বিয়ের পর থেকে বাবাকে আর ঐ বাসায় যেতে দেইনি।
-এসেছিস মা।
বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
-কেমন আছো বাবা। কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?
– না রে মা, অন্তু মা আমার খুব খেয়াল রাখছে। তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা এটা বল।
হাসি দিয়ে বললাম,
-তেমার মেয়ে কষ্ট পেলে তো সাথে সাথে এসে কান্না করে দিতো।
-পাগলি মেয়ে। কোথাও যাচ্ছিস বুঝি।
মাথা নাড়িয়ে হে বল্লাম।
-আচ্ছা তো।
বাবার থেকে বিদায় নিয়ে নিচে আসতে ই দেখি সবাই রেডি। সাথে ইফাজ ও আছে।
-ইফাজ তুই অতসীকে বাইক দিয়ে নিয়ে আস
-আমি অন্তুকে আর তোর মাকে নিয়ে আসছি।
মনে মনে বল্লাম এই শয়তানের সাথে আমি কোনো কালে ই যাবো না।
-বাবা আমি উনার সাথে যাবো না, আমি অন্তু আপুর সাথে যেতে চাই।
বাবা তুমি অতসীর কথা শুনো না, আমি অতসীকে নিয়ে আসছি।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না, ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিলো,এই হাসি দিয়েছে মানে মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি আটছে।
-কি বদরানি সকালে আমার মুখে লবণ দেওয়ার কথা মনে আছে,
কথাটা বলে ই আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে..
চলবে
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]