প্রণয় আসক্তি পর্ব ১৬+১৭

#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ১৬

বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর্শ।মৃদু বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে তাকে।তার স্থির দৃষ্টি রাতের অন্ধকার শহর পানে।রাস্তার ১-২ টা গাড়ি চলাচলের শব্দ ও ঘরের সাউন্ড বক্সে চলা গানের মৃদু শব্দ তার কানে এসে লাগছে।বিষয়টি মন্দ লাগছে না তার।বরং ভালোই লাগছে।
আর্শি আজ সন্ধ্যাতে মিয়ামির বাড়ি গিয়ে তাকে নিজের সাথে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসেছে।শুধু যে মিয়ামিকেই সাথে নিয়ে এসেছে, এমনটি নয়।মিয়ামির সাথে মিয়ামির খালাতো দুই বোনকেও নিয়ে এসেছে।তাদের পরিকল্পনা ছিলো,আজ রাতে মেহেদী দেওয়া টা সেরে নেবে।সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন মেহেদী লাগানোতে ব্যস্ত মেয়েরা।আর আর্শের ছেলে কাজিনরা জোরে গান ছেড়ে নিজেদের মতো করে নিত্য প্রদর্শন করে চলছে।সেই সাথে বেশ কয়েক পদের খাবার-দাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে সেথায়।তবে এসব কিছুতে আর্শের অংশগ্রহণ বারণ।বিয়ের আগে নাকি বর-বউয়ের দেখা করা যাবেই না।কড়া নির্দেশ সবার।এর মাঝে কোনো যুক্তি খুঁজে পায় না আর্শ।এতো বছর ধরে তো সে মিয়ামিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখে নিয়েছে তবে বিয়ের আগে এমন নাটকের কোনো যুক্তি আছে কি?
মেয়েটিকে এক দফা দেখার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে আর্শের।কিন্তু এতো মানুষের ভীড়ে মেয়েটিকে একা পাওয়া টা অসম্ভব।ফলে উপায়ন্তর না পেয়ে সে বারান্দায় দাঁড়িয়েই অন্ধকার শহর পানে দৃষ্টি রেখে মিয়ামিকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে।
হটাৎই দরজা খুলার মৃদু শব্দ কানে এসে লাগে আর্শের।সে নিজের স্বপ্নের জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে কান খাঁড়া করে নেয়।এতো রাতে তো কারোরই তার কক্ষে আসার কথা নয়।তবে কে এলো!এটি ভাবার মাঝেই আর্শ আবারও দরজা লাগাবার শব্দ শুনতে পায়।এবার আর দেরি না করে সে বারান্দা হতে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়।
নিজের কক্ষে প্রবেশ করতেই মিষ্টি হাসি ঠোঁটে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শ্যামবতীর দেখা পায় আর্শ।শরীরে তার কালো রঙ এর জর্জেটের শাড়ি জড়ানো।শাড়িতে আবার কালো রঙ এর পাথর বসানো আছে যা অল্প আলোতেও জ্বলজ্বল করছে।মেয়েটি নিজের হাত জোড়া টান টান করে মেলে রেখেছে।দু’হাতের কনুই অব্দি মেহেদী দেওয়া তার।
আর্শ মুগ্ধ নয়নে নিজের প্রিয়কে দেখে নিয়ে ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে এক ব্রু উঁচু করে বলে ওঠে,
-আমাকে তো কড়া করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তোমার সামনে না যাবার।তবে তোমায় আমার রুমে আসতে দিলো কি করে?
-ওখানে এতো এতো হাস্যউজ্জ্বল চেহারার মাঝে গম্ভীর মুখো মানুষটির অভাব অনুভব করছিলাম।তাই আমার একমাত্র কলিজার বান্ধবী ও হবু ননদকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে তার সাহায্যে তোমার রুম অব্দি এলাম।
ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে কথাটি বলে ওঠে মিয়ামি।
উত্তরে আর্শ ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
-আমি গম্ভীর?
-অনেকককক।
ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে মিয়ামি।মিয়ামির কথার উত্তরে আর্শ কিছু বলে ওঠার আগেই মিয়ামি স্বস্তি মাখা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে ওঠে,
-তর্ক পরে।আগে শোনো,আমি ভাবছি সব বান্ধবীদের উপদেশ দিবো যে,বিয়ে করলে বেস্টির ভাইকেই করা উচিৎ।নাহয় এমন সুযোগ খুঁজে সাহায্য কোন ননদে করে?
মিয়ামির কথায় শব্দ ছাড়াই হেসে ওঠে আর্শ।মিয়ামির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে সে বলে ওঠে,
-আচ্ছা আচ্ছা।
মিয়ামিও হাসি মুখে বলে ওঠে,
-জ্বি জ্বি।
আর্শ মিয়ামির কাছে এসে হাতে লাগানো মেহেদীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।মেহেদীর নকশায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে সে বলে ওঠে,
-সুন্দর।
আর্শের এই একটি শব্দেই টানা দু’ঘন্টা বসে থেকে কোমর ব্যথা করে মেহেদী দেওয়াটা যেনো মুহূর্তেই সার্থক হয়ে গেলো মিয়ামির।ঠোঁটে বড়সড় হাসি ফুটিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-ভাইটু,মেহেদীতে তোমার নামের অক্ষরগুলো লুকোনো আছে,পারলে খুঁজো তো!
আর্শ মিয়ামির দিকে এক ব্রু উঁচু করে তাকিয়ে ভাবুক কন্ঠে বলে ওঠে,
-উম, এই কাজটা না বাসর রাতে করতে হয়?
আর্শের কথায় মিয়ামি একটু চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে ঠোঁট উল্টে চিন্তিত স্বরে বলে ওঠে,
-হ্যা,তাই তো।তাহলে তো আজ মেহেদী টাও দেখানো উচিৎ হয়নি।ধুর!
বলেই মিয়ামি মেজাজ খারাপ করে বিপরীত দিকে ঘুরে দরজার দিকে অগ্রসর হয়।কক্ষ ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে।কিন্তু নিজের কোমরে কারো শীতল হাতের স্পর্শে থেমে যায় সে।
মিয়ামি শাড়ি পরে থাকায় সুবিধেই হলো আর্শের।সে আলতো করে মিয়ামির উন্মুক্ত কোমরে হাত রেখে তাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।কানের কাছে মুখ নিয়ে কানের পেছনের দিকটায় নাক ঘষে আর্শ মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-বাসর রাতে তো অনেক কাজ থাকবে।এই কাজটি নাহয় এখনই সেরে ফেলি?
আর্শের গরম নিঃশ্বাস ও স্পর্শে নিজের মাঝে এক অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করে মিয়ামি।এক সুন্দর অনুভূতি অনুভব হওয়ায় আবেশে নিজের চোখ জোড়াও বুজে নিয়েছে সে।এরই মাঝে আর্শের উক্তি কানে আসতেই একরাশ লজ্জারা এসে জায়গা করে নেয় তার মনে।
আর্শ মিয়ামির অবস্থা বুঝতে পেরে মৃদু হাসে।কোমরে রাখা হাতদুটো দ্বারা মিয়ামিকে আরো নিবিড়ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সে।ওমনি একটু কেঁপে ওঠে মিয়ামি।আর্শ মিয়ামির কানে মুখ লাগিয়েই মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-দেখি হাত দুটো একটু উপরে তোলো তো।
আর্শের কথামতো চোখ বুজে রেখেই হাতজোড়া মেলে ধরে মিয়ামি।
ছেলেটির স্পর্শে মিয়ামি এই মুহূর্তে যেনো নিজের মাঝেই নেই।তার মন আদর কুড়োতে ব্যস্ত হয়ে আছে।আর্শের এই অল্প স্বল্প স্পর্শে চুপটি করে নিজের মনে উৎপন্ন হওয়া এক অপরিচিত,সুন্দর অনুভূতি অনুভব করে চলছে মেয়েটি।
মিয়ামির ঘাড়ে মুখ ঠেকিয়ে কয়েক মিনিট তার হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে আর্শ বলে ওঠে,
-হাতের তালুতে আঁকা ঐ ফুলটির মাঝে ‘আ’ লেখা।আর ঐ যে অনামিকা আঙুলের মাঝ বরাবর ‘র্শ’ লেখা।
এতোক্ষণ চোখ বুজে রাখলেও,আর্শের উচ্চারিত বাক্য দু’টি কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায় মিয়ামি। অবাক কন্ঠে বলে ওঠে,
-এমন অল্প আলোতে আর এতো কম সময়ের মাঝে কি করে খুঁজে নিলে?
মিয়ামির কথায় মৃদু হাসে আর্শ।মেয়েটির চুল থেকে ভীষণ সুন্দর ঘ্রাণ কানে এসে লাগছে তার।দেরি না করে মিয়ামির চুলে নাক ডুবিয়ে আর্শ মৃদু স্বরে থেমে থেমে বলে ওঠে,
-প্রিয় মানুষটিকে আমরা গভীর থেকে গভীরতম দৃষ্টিতে দেখি।তাই প্রিয় মানুষটির কোনো কিছুই এ গভীর দৃষ্টি হতে লুকিয়ে থাকতে পারে না।

!!
ভালোবাসার বিপরীতে ভালোবাসা না মিললে এ সুন্দর অনুভূতিটি জঘন্য লাগতে আরম্ভ করে।কারণ, এ অনুভূতিটি মানুষকে না নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে যেতে দেয় আর না মানুষটি তীব্র ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রিয় মানুষটির কাছে যেতে পারে।প্রিয় মানুষটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে অবহেলা নতুবা উপেক্ষা মেলে।আবার দূরে যাবার চেষ্টায় নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও কোনো লাভ হয় না।কারণ, হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয় মানুষটিকে ভুলে থাকা টা সম্ভব হয় না।মানুষটির চিন্তা মনের মাঝে ঘুরপাক করবেই।যেমনটি করে বিহানের চিন্তা রাত-দিন ২৪ ঘন্টাই আর্শির মনে ঘুরপাক খায়।মেয়েটির নিজের ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে বা কাজিনদের নিয়ে শত ব্যস্ততা থাকবার পরও এক মুহূর্তের জন্যও বিহানের কথা ভুলে থাকতে পারে না সে।কাজের মাঝেই ছেলেটির কথা বারংবার মনে পরে তার।ঠোঁটে সদা হাসি লেগে থাকলেও তার মনের দীর্ঘশ্বাস টি সবার দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে যায়।

আজকাল আর্শির ব্যাপারটি খুব ভাবাচ্ছে বিহানকে।মেয়েটির বয়স কম।সবে ১৭/১৮ হবে হয়তো।এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের মাঝে আবেগ কাজ করে অনেক।আর্শির অনুভূতিটিও তো আবেগ হতে পারে।আবার ভালোবাসাও তো হতে পারে।এ বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্দিহান বিহান।আর্শি কি তাকে আদৌও ভালোবাসে নাকি সে আর্শির আবেগ মাত্র?
তাদের শেষ কথপোকথনে বিহান কি একটু বেশিই বলে দিয়েছে?মেয়েটি কি খুব কষ্ট পেয়েছে তার কথায়?তার ওভাবে কথাটি বলা কি অনুচিত ছিলো?
এমন হাজারো প্রশ্ন ও চিন্তেরা এসে ভীড় জমাচ্ছে বিহানের মনে।কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারছে না এর সঠিক উত্তর কি এবং তার আসলে কি করা উচিৎ!

!!
আর ঠিক ২ দিন বাদেই আর্শ ও মিয়ামির বিয়ে।আগামী কালই তাদের হলুদ।কাজিনরা আগে চলে এলেও এবার পালা বড়দের আগমনের।গত কালই বিয়ের কার্ড তৈরি করা সম্পন্ন হয়েছিলো।বিয়ের কার্ডটি সম্পূর্ণটাই মিয়ামি,আর্শ ও আর্শির পছন্দে বানানো হয়েছে।কার্ড গুলো হাতে আসতেই তা সকল আত্মীয় সজনদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আর্শের বাবা আরহান সাহেব ও মিয়ামির বাবা মুজিব সাহেব।
এখন বলতে গেলে ঘরের বড়রা সবাই ই বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।মিয়ামি বৌ হওয়ায় তাকে কেউ কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না।তার এখন শুধু দু’টি কাজ।প্রথমটি হচ্ছে,ঘুম এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে রূপচর্চা।
আর উভয়ের মাঝে কোনোটই ঠিক মতো করছে না মিয়ামি।নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে যাবার আনন্দে ও উত্তেজনায় ঘুমই আসে না তার।আর রুপচর্চা করা টা বেশ বিরক্তির তার কাছে।কারণ,আর্শ তো তাকে নতুন করে দেখছে না।তার প্রকৃত রূপ আর্শ এতো বছর ধরে তো দেখে আসছেই তাই এখন এতো রূপচর্চা করা টা মিয়ামির কাছে সময়ের অপচয় মাত্র।তবুও নিজের মা-খালা ও কাজিন বোনদের সাথে পেরে না উঠে একটু-আধটু রূপচর্চা তাকে করতেই হচ্ছে।

এখন ঠিক মধ্য দুপুর,নিজের কক্ষে জোরে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে মুখে একটি হারবাল প্যাক লাগিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে মিয়ামি।কিছু একটা চিন্তা করে সে নিজের ফোনটি হাতে নিয়ে নিজের কোচিং এর বান্ধবী নিশিকে কল দেয়।
“হ্যালো,মিমি?”
ফোনটি ধরে কথাটি বলে ওঠে নিশি।উত্তরে মিয়ামি ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে,
-বিয়েতে আসছিস তো?
-হ্যা,হ্যা আসছি।আর্শি আগেই দাওয়াত দিয়ে দিয়েছে।
-খুবই খুশি হলাম।আচ্ছা শোন,তোর ভাই মেডিসিন ডাক্তার নাহ?
-হ্যা।
-মেডিসিন ডাক্তার রা তো সব রোগ সমন্ধেই ধারণা রাখে তাই না?
-হ্যা।কিন্তু তুই কেনো জানতে চাইছিস?কোনো সমস্যা?
-আরেহ না না।আমার পরিচিত একজন মেডিসিন ডাক্তার এর খোঁজ চাইছিলো তো তাই তোর ভাইয়ের কথা মনে পরলো।তা তোর ভাইয়ের চেম্বার টা কোথায়?
-সালাউদ্দীনে।চিনিস তো?
-চিনি।
#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ১৭

পেটিকোট ও ব্লাউজ পড়া অবস্থায় নিজ কক্ষের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিয়ামি।আজ তার হলুদের অনুষ্ঠান।বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত থাকায় নিজের শাড়ি তার নিজেকেই পরতে হবে।চোখ-মুখে বিরক্তি স্পষ্ট ফুটে আছে তার।একা একা শাড়ি পড়া টা প্রচন্ড বিরক্তির তার কাছে।আর নিজে নিজে শাড়ি পড়া টা যথেষ্ট কষ্টসাধ্যও বটে।
উপায়ন্তর না পেয়ে বিছানা হতে শাড়িটি হাতে নিয়ে আবারও আয়নার ঠিক সামনে বরাবর দাঁড়ায় মিয়ামি।এ সময়েই তার কক্ষের দরজাটি খোলার একটু শব্দ কানে এসে লাগে তার।চমকে উঠে বুকের উপর শাড়িটি জড়িয়ে ধরে দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতেই কিছু বলার জন্য মুখ খুলে সে।তবে দরজার কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে চোখ পরতেই তার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ উচ্চারিত হলো না।বরং বিস্ময়ে তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।বিস্ফারিত চোখে সে তার সামনের মানবটির দিকে তাকিয়ে আছে।

মিয়ামির কক্ষের দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে মিয়ামির দিকে ফিরে দাঁড়ায় আর্শ।ধীর কদম ফেলে মিয়ামির অনেকটা কাছে এসে দাঁড়ায় সে।তার ও মিয়ামির মাঝে এখন এক হাত পরিমাণ দূরত্বও অবশিষ্ট নেই।
আর্শ মিয়ামির এতোটা কাছে আসতেই বিস্মিত কন্ঠে মিয়ামি বলে ওঠে,
-তুমি এখানে কি করছো?
উত্তরে আর্শ নিরব চাহনি নিয়ে মিয়ামির ঠোঁটে আলতো করে নিজের শাহাদাত আঙুলটি ছুঁইয়ে ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করে।ছেলেটির ঠোঁটে এখনো সেই বাঁকা হাসিটি লেগে আছে।মিয়ামির চোখে চোখ রেখে কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত করেই আর্শ হুট করে এক টানে মিয়ামির হাত থেকে শাড়িটি নিজ হাতে নিয়ে নেয়।সেটির ভাজ খুলে এক পাশ হাতে নিয়ে আলতো করে মিয়ামির কোমরে তা গুঁজে দেয় সে।ছেলেটির এমন আলতো স্পর্শে কেঁপে ওঠে মিয়ামি।আর্শ তার ও মিয়ামির মাঝের দূরত্ব আরও কমিয়ে নেয়। আঁচলের অংশ টুকু মেয়েটির কাঁধে রেখে নিজে হাঁটু গেরে তার সামনে বসে পরে।আর্শের মুখটি মিয়ামির পেটের কাছে থাকায় তার নিঃশ্বাস একটু একটু নিজের পেটের উপর এসে লাগাটা অনুভব করছে মিয়ামি।শিহরণে হৃৎস্পন্দনেরা বেড়ে চলছে তার।
মেয়েটির কুঁচির অংশ টুকু নিজের হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কুঁচিটি করে নিজেই মিয়ামির পেটের মাঝ বরাবর কুঁচিটি গুঁজে দেয় আর্শ।পেটে ছেলেটির হাতের স্পর্শে আবারও কেঁপে ওঠে মিয়ামি।লজ্জা ও শিহরণে চোখজোড়া বুজে নেয় সে।

মিয়ামি পেটিকোটটি বেশ উপরে উঠিয়ে পড়ায় তার নাভী দৃশ্যমান নয়।অল্প যেটুকু পেট দৃশ্যমান তার মাঝ বরাবর অর্থাৎ কুঁচির উপরের দিকে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় আর্শ।এবারের শিহরণে আরও একবার কেঁপে উঠে আর্শের কাঁধ দু’হাতে খামচে ধরে মিয়ামি।
মিয়ামির এমন প্রতিক্রিয়ায় ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আর্শের।সে আরো একবার সেই একই জায়গায় ঠোঁট ছুঁইয়ে মিয়ামির পেটের কাছ থেকে সরে উঠে দাঁড়িয়ে পরে।আঁচল টি ঠিক করে সেথায় একটি সেফটি পিন লাগিয়ে দেয়।অতঃপর মেয়েটির পা হতে মাথা অব্দি চোখ বুলিয়ে নেয় সে।
মিয়ামি এখনো তার চোখ বুজেই রেখেছে।হৃৎস্পন্দন বেশ বেড়ে গিয়েছে মেয়েটির।নড়াচড়া করার মতো মানসিক শক্তিটি যেনো সে হারিয়ে ফেলেছে।তাই চুপটি করে স্থির দাঁড়িয়ে আছে সে।
মিয়ামিকে দেখে নিয়ে আর্শ ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে মেয়েটির কোমর দু’হাতে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।কপালের মাঝ বরাবর ঠোঁট ছুঁইয়ে নিম্ন স্বরেই বলে ওঠে,
-মাত্রাতিরিক্ত গরম!
আর্শের কথা টি কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায় মিয়ামি।তার ও আর্শের মাঝে কেবল কয়েক ইঞ্চির দুরত্ব।আর্শের নিঃশ্বাস তার মুখের উপর আছড়ে পরছে।সেই সাথে ছেলেটির শরীর থেকে ভেসে আসা পারফিউমের সুঘ্রাণে মুগ্ধ হচ্ছে মিয়ামি।হৃৎস্পন্দনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েই চলছে তার।এ মুহূর্তে আর্শের বুকে মাথা রেখে খুব খুব শান্তি কুড়াতে মন চাইছে তার।তবুও ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আর্শের চোখে চোখ রেখে মিয়ামি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
-এতো গরম লাগছে কেন তোমার?আমার তো লাগছে না।এসি কি ছেড়ে দিবো?
মিয়ামির কথায় মেয়েটিকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে আর্শ।আলতো করে নাকে নাক ঘষে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-আগুনের দলাটা তো নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছি।তাই তো এতো গরম লাগছে।
আর্শ দুষ্টু চাহনি নিয়ে কথাটি বলায় মিয়ামির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আর্শ আসলে কি বুঝাতে চাইছে।মনে লজ্জারা এসে ভীড় জমাতেই সে আর দেরি না করে আর্শের বুকে আশ্রয় খুঁজে নেয়।মৃদু হাসি ফুটিয়ে আর্শও মিয়ামিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।
কয়েক সেকেন্ড এভাবে পাড় হতেই মিয়ামি বলে ওঠে,
-তুমি এ বাড়িতে কি করে এলে?
-হলুদ নিয়ে।
-মানে?
-মানে আর্শি সহ আমার সব কাজিন তাদের হবু ভাবীর জন্যে হলুদ নিয়ে এসেছে।পেছন পেছন আমি ও চলে এলাম।
অবাক কন্ঠে মিয়ামি বলে ওঠে,
-কেউ বাঁধা দেয়নি তোমায় আসতে?
-কেউ দেখেইনি।
-রাস্তায় নাহয় দেখেনি কিন্তু বাসায় ঢুকার সময়?
-কাজের ব্যস্ততায় দরজা যে খোলা তাতে কারো খেয়াল নেই।সেই সুযোগ টা নিয়েছি।
উত্তরে ঠোঁটে হাসি নিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-আর এতোসব করার কি দরকার ছিলো?
-বাহ রে! আমার বউকে আমি বিশেষভাবে হলুদ লাগাবো না?
আর্শের কথায় সাথে সাথে তার কাছ থেকে সরে আসে মিয়ামি।বিস্মিত চোখে আর্শের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-ভাইটু তুমি ঠিক আছো তো?
মিয়ামির হটাৎ এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ বোধগম্য না হওয়ায় উত্তরে ব্রু কুঁচকে আর্শ বলে ওঠে,
-ক্যান?
-তোমার মতো নিরামিষ মানুষ এতো রোমান্টিক কথা বলছে?এ দিনও আমি দেখছি!!!
মিয়ামির কথার উত্তরে ঠোঁটে একটু দুষ্টু হাসি টেনে নেয় আর্শ।নিজের পকেট হতে পলিথিনে পেচিয়ে আনা হলুদটি বের করে নিজের হাতে নিয়ে সে মিয়ামির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-আরও বহু কিছু দেখার আছে।
আর্শের চাহনি,ঠোঁটের হাসি ও উচ্চারিত উক্তি সবটাই কেমন যেনো রহস্যময় লাগছে মিয়ামির।সে আর্শের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বুঝতে চাইছে যে, আসলে ছেলেটা কি করতে চাইছে!
নিজের কথাটি শেষ করে আর্শ মিয়ামির দিকে এক কদম অগ্রসর হয়।ওমনি সাথে সাথেই মিয়ামি দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
-তুমি এখন হলুদ লাগালে তো বাইরে গেলে সবাই দেখে প্রশ্ন করবে।তখন কি বলবো?
উত্তরে আর্শ কোনো বাক্য ব্যয় না করে তার ঠোঁটের দুষ্টু হাসিটি ধরে রেখেই মিয়ামির কাছে এগিয়ে যায়।তাদের মাঝের দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে মিয়ামির সামনে এক হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পরে আর্শ।মিয়ামি এক নজরে আর্শের দিকে তাকিয়ে থেকে আর্শের মতলব টা বুঝার চেষ্টা করে চলছে।
আর্শের ডান হাতে হলুদ।বাম হাতটি দিয়ে মিয়ামির পেটের কাছ থেকে আলতো করে শাড়ি সরায় সে।সাথে সাথেই নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় মিয়ামি।তবে কিচ্ছুটি বলে না।
আর্শ পেটের কাছ থেকে আঁচলটি সরিয়ে নিজের ডান হাতে থাকা হলুদটি মিয়ামির পেটে লাগিয়ে দেয়।ছেলেটির হাতের স্পর্শে আবারও কেঁপে উঠে চোখ বুজে নেয় মিয়ামি।আর্শ ধীরে ধীরে মিয়ামির পেটের অনেকটা জায়গাতেই হলুদ লাগিয়ে দেয়।লাগানো শেষে মিয়ামির পেটে আলতো করে নিজের গাল ঘষে নিজের গালেও হলুদ লাগিয়ে নেয় সে।
আর্শের খোচাখোচা দাঁড়ি মিয়ামির পেট স্পর্শ করতেই মিয়ামির পুরো শরীরে যেনো এক তীব্র শিহরণ বয়ে গেলো।মেয়েটি সহ্য করতে না পেরে আর্শের চুল দু’হাতে মুঠোবন্দি করে নেয়।
আর্শ ধীরে ধীরে মিয়ামির সামনে হতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।দু’হাতে মেয়েটির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মেয়েটির কপালে কপাল ঠেকিয়ে সে বলে ওঠে,
-সম্পন্ন হলো আমাদের “হলুদ”।

!!
দিনটি মোটামুটি ব্যস্ততায় পাড় করে রাতে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই মিয়ামির কিছু একটা মনে পরে।তড়িঘড়ি করে সে নিজের ফোনটি হাতে নিয়ে একটি নাম্বারে ডায়াল করে।দুবার রিং হলেই কলটি ওপাশ থেকে রিসিভ হয়।ওপাশের ব্যক্তিটি কিছু বলে উঠার আগেই মিয়ামি বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম,ভাইয়া।আমি মিয়ামি বলছি, নিশির ফ্রেন্ড।একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই আপনাকে বিরক্ত করা।দুঃখিত এভাবে রাতে কল দেওয়ার জন্যে।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।সমস্যা নেই,তেমন রাতও হয়নি এখন।কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাইছিলা?
-আসলে ভাইয়া আগামী পরশু কি আপনি ফ্রী আছেন?যদি একটু দেখা করতে পারতেন?একটি বিষয়ে আপনার একটু পরামর্শ প্রয়োজন।
-কাল তোমার বিয়ে আর পরশুই দেখা করতে চাইছো।ব্যাপার টা অবশ্যই ছোটখাটো কিছু নয়।
চিন্তিত কন্ঠে কথাটি বলে ওঠে নিশির ভাই।উত্তরে মিয়ামি বলে ওঠে,
-জ্বি ভাইয়া।ব্যাপারটা আমার জন্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু একটি অনুরোধ,প্লিজ আমার এ বিষয়টি আপনি কেউকে জানাবেন না,নিশিকেও না।
-ঠিক আছে,জানাবো না।
-ওয়াদা করছেন?
-করছি।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।তবে পরশু কোনো একটি রেস্টুরেন্টে দেখা হচ্ছে?
-ঠিক আছে।সময় আর লোকেশন জানিয়ে দিবো।
-অনেক ধন্যবাদ।বিয়েতে আমাদের দোয়া দিতে আসছেন তো?’না’ উত্তরটি কিন্তু কোনোভাবেই গৃহীত হবে না।
উত্তরে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নিশির ভাই বলে ওঠে,
-আসবো ইন শাহ আল্লাহ।

চলবে

।🤧]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here