প্রণয় আসক্তি পর্ব ২২+২৩

#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ২২

পড়ার টেবিলের পুরোটা জুড়ে বই-খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিয়ে পড়ছে আর্শি।অনেকে বলে,গণিতে ভালো ছাত্র-ছাত্রীরা নাকি বই-খাতা এমন অগোছালো করেই পড়ে।আর এরা নাকি সব ক্ষেত্রেই এমন অগোছালো হয়।এই উক্তিটির সাথে পুরোটাই অমিল আর্শির।সে ছাত্রী ভালো হলেও গণিত তার কাছে ভয়ের অপর নাম।এতে এটিই প্রমাণিত হয় যে,ঐ উক্তিটির আসলে কোনো ভিত্তি নেই নতুবা এমনও হতে পারে যে,আর্শি অনন্য।
পড়ার মাঝেই আর্শি নিজের বিছানাটার দিকে এক পলক তাকায়।বিছানার চাদর টা ঠিকঠাক বিছানো নেই,বালিশ গুলো পুরো বিছানাটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,উপন্যাসের ২-৩ টি বইও বিছানায় অগোছালো পরে আছে।এসবে চোখ বুলোতে বুলোতেই আর্শির বিহানের রান্নাঘরের কথাটি মনে পরে যায়।ছেলেটির রান্নাঘর দেখলে মনেই হয় না যে,ঐ টা কোনো এক ব্যাচেলর ছেলের রান্নাঘর।ছেলেটি বাসায় একাই থাকে।তার ঘর সবসময় গোছালো,পরিপাটি।আসলে পেশায় ডাক্তার হলেও নিজের বাবার সম্পদ ও পৈতৃক বাড়ি দেখাশোনার জন্য বিহান নিজের দেশের বাড়িতেই থাকে।সেই সাথে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের বিনে পয়সায় চিকিৎসাও প্রদান করে সে।তার মা ও বোন নিশি থাকে ঢাকায়।মাঝে মধ্যে বিহানের ঢাকায় আসা হয় বেড়াবার উদ্দেশ্যে।
ছেলেটি একা থাকলেও তার ঘরের অবস্থা দেখলে কেউ বলবে না যে এই বাড়িটিতে কোনো মহিলা বা মেয়ে ছাড়া শুধু মাত্র একজন পুরুষের বসবাস।খুব সুন্দর করে নিজের বাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে ভালোবাসে বিহান।আর বিহানের এমন হাজারো মনোমুগ্ধকর গুণে মুগ্ধ আর্শি।ছেলেটি অনন্য,অন্য সব ছেলেদের থেকে আলাদা।আর্শি আজ অব্দি কখনো বিহানের সাথে তার চেনা বা পরিচিত অন্য কোনো পুরুষের মিল পায়নি।তাই ই তো বিহানের প্রতি এতোটা আকৃষ্ট সে।

আর্শির ভাবনার মাঝেই মিয়ামি তার কক্ষে প্রবেশ করে।ঠোঁটে হাসি নিয়ে আর্শিকে ডেকে উঠে সে,
-দোস্ত?
মিয়ামির কন্ঠ কানে আসতেই ঠোঁটে হাসি টেনে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর্শি।মিয়ামি আর্শির পাশে এসে বসতেই আর্শি বলে ওঠে,
-এতো দিনে বরের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ননদের কাছে আসার সুযোগ হলো আপনার?
-আরেহ,শুধু কি বর?রুমে পরে থাকি তো পড়াশোনার জন্য। কত্তো পড়া জমে গিয়েছে আমাদের! তুই নিজেও তো রুম দিয়ে বের হোস না।
-হো,পড়া রেখে উঠার সময় কই? তা আমি ফুপু কবে হচ্ছি?
শেষের কথাটি বলেই মিয়ামির দিকে তাকিয়ে চোখ মারে আর্শি।উত্তরে মিয়ামি ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে,
-তোর নিরামিষ ভাই আর তা হওয়ার সৌভাগ্য দিবে বলে মনে হয় না।
মিয়ামির উত্তরে হেসে ওঠে আর্শি।হাসি না থামিয়েই বলে ওঠে,
-আগেই বলছিলাম এই নিরামিষরে দিয়ে তোর পোষাবে না!
-থাকুক না ও নিরামিষ! আমিষ হিসেবে আছি না আমি?তুই চিন্তা করিস না তোরে ফুপু বানানোর দায়িত্ব আমার।
মিয়ামির এবারের উত্তরে জোরেসোরে হেসে ওঠে আর্শি।বান্ধবীর মাথায় আলতো করে বারি মেরে সে বলে ওঠে,
-লজ্জা সরম নেই তোর?
-ঐটা আবার কি জিনিস?খায় না মাথায় দেয়?
উত্তরে আর কিছু বলে না আর্শি।তার ঠোঁটে সেই হাসি টা লেগে আছে।মিয়ামির ঠোঁটেও হাসি ফুটে আছে। কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই মিয়ামি তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-ওহ হো,গুরুত্বপূর্ণ কথাটিই তো জিজ্ঞেস করা হচ্ছে না! আচ্ছা, নিশির ভাই,বিহান ভাইয়াই তোর এফবির বিহান না?
উত্তরে মাথা উপর নিচ করে সম্মতি দেয় আর্শি।আর্শির সম্মতি মিলতেই ঠোঁটে বড়সড় হাসি ফুটে ওঠে মিয়ামির।সে উত্তেজিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-ওয়াও! বিহান ভাইয়াকে আমার অনেক ভাল্লাগছে। তোর জন্য একদম পারফেক্ট!
মিয়ামির কথায় একটু লজ্জা লজ্জা লাগলেও মন খারাপের সুরে আর্শি বলে ওঠে,
-উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।
-ভাইয়া কি এটা বলসে সোজাসাপটা বলছে তোরে?
-না কিন্তু ভালোবাসিও তো বলেনি।
-বলেনি তাতে কি? বলবেই বলবে।
মিয়ামির কথায় ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আর্শির।এ কথায় একটু ভরসা খুঁজে পাচ্ছে সে।তবে,বেশ কয়েক দিন ধরে বিহানের ব্যবহার কেমন যেনো ঠেকছে আর্শির।ছেলেটা কেমন অধিকার ফলায় তার উপর আবার মাঝে মাঝে এমন সব কথায়ও শেয়ার করে যা মানুষ নিজের খুব কাছের মানুষের সাথেই শেয়ার করে।এসবে আর্শির মনে একটু একটু আশা জেগেছে যে,ছেলেটি হয়তো তাকে ভালোবাসে।

!!
আর্শ কেমন যেনো নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে।কাজের গতি আগের মতো নেই তার।কেমন যেনো উদাসীন ভাব বিরাজমান তার মাঝে।
সে প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে এ একটি অফিসেই কাজ করে চলছে।কাজে তার দক্ষতা, বিচক্ষণতা,নিষ্ঠা ও মনোযোগ দেখে অফিসের বস আর্শকে ভীষণ পছন্দ করেন।কিন্তু গত ২০-২৫ দিন ধরে তিনি যেনো এক ভিন্ন আর্শকে দেখছেন।এমন উদাসীন,নিস্তেজ আর্শকে তো তিনি চেনেনই নাহ।
বেশ কিছু টা সময় নিয়ে তিনি কিছু একটা ভেবে আর্শকে নিজের ক্যাবিনে ডাকেন।
প্রায় ৫ মিনিটে বসের ক্যাবিনে এসে উপস্থিত হয় আর্শ।
-আসসালামু আলাইকুম বস,ডেকেছিলেন?
-হ্যা আর্শ।বসো,কথা আছে তোমার সাথে।
বসের কথায় সম্মতি দিয়ে একটি চেয়ার দখল করে বসে পরে আর্শ।সময় অপচয় না করে বস বলে ওঠেন,
-তুমি যেমন সৎ,তেমনই পরিশ্রমী একটি ছেলে।হয়তো তুমি নিজেও বোঝো যে,তোমার এসব গুণ আমার কতো টা পছন্দনীয়।তোমার প্রতি আমি আস্থা রাখি,আর্শ।কিন্তু গত বেশ কয়েকদিন যাবত আমি লক্ষ্য করছি তোমার কাজের গতি কেমন যেনো ধীর হয়ে গিয়েছে।তুমি নিজেও কেমন যেনো ঝিমাও।এভাবে চললে তো সামনের প্রমোশন টা তুমি পাবে না।
এতোটুকু বলে থামেন বস।আর্শ মাথা নিচু করে সবটি শুনছে।নিজের সাথে সে যে কি এক গুরুতর যুদ্ধে লিপ্ত তা কেউ বুঝতে সক্ষম হবে না।যতোই যুদ্ধ ভেতরে ভেতরে চলুক তার কিছু প্রভাব বাইরেও তো প্রকাশ পাবেই।
একটু নিরব থেকে বস একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠেন,
-আমি তোমার ভালোটাই চাই,আর্শ।আর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তোমায় উপদেশ দিবো যে,কিছু দিনের জন্যে তুমি ছুটি নিয়ে বাইরে দিয়ে কোথায়ও ঘুরে আসো।দু’সপ্তাহের ছুটি আমি দিয়ে দিচ্ছি।কোথায় ঘুরতে যাবা আমায় জানাও,সব খরছও আমিই বহন করবো।তবুও আমি আমার সেই আগের পরিশ্রমী,নিষ্ঠাবান,মনোযোগী স্টাফটাকে চাই।বুঝেছো?
-ধন্যবাদ স্যার,আমাকে শুধু ছুটি টা দিলেই অনেক উপকৃত হবো।ঘুরার খরচ টা বহন করবার কোনো প্রয়োজন নেই,ইট’স এন রিকুয়েষ্ট স্যার।
বস ঠোঁটে হাসি টেনে আর্শের কথায় সম্মতি দিলেন।

!!
ঘড়িতে থাকা ঘন্টার কাটাটি এখন বারোর ঘরে অবস্থান করছে।রাতের এ সময় টিকে গ্রামে বলা হয়,”রাতদুপুর”।
বারান্দায় থাকা দোলনাটায় বসে আছে মিয়ামি।তার কোলেই মাথা রেখে শুয়ে আছে আর্শ।মিয়ামি আলতো করে আর্শের মাথায় হাত বুলিয়ে চলছে।এতে আরামে নিজের চোখজোড়া বুজে রেখেছে আর্শ।আর এদিকে,মিয়ামি দু’চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে নিজের প্রিয়কে।এই মানুষটিকে যতই দেখুক মন তো ভরবে না তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি।
আর্শ চোখবুঁজা অবস্থাতেই বলে ওঠে,
-পলক ফেলো এবার,চোখে পানি জমে গিয়েছে।
অবাক হয় মিয়ামি।পলক ফেলতেই এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে তার চোখ বেয়ে।কই সে তো কাঁদছে না তাহলে পানি কিসের! পর মুহূর্তেই মনে পরলো সে এতোক্ষণ এক দৃষ্টিতে ছেলেটিকে দেখায় ব্যস্ত ছিলো।ফলে অনেকটা সময় ধরে পলক না ফেলায় চোখে পানি জমে গিয়েছে।
কিন্তু আর্শ তো চোখ বুজে আছে তাহলে সে কি করে বুঝলো!এমনটি ভেবে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মিয়ামি আর্শের দিকে।প্রশ্ন করবার জন্যে সে মুখ খুলতেই যাবে তার পূর্বেই আর্শ সোজা হয়ে শোয়া থেকে নিজের বাম দিকে অর্থাৎ মিয়ামির দিকে ফিরে শোয়।বাক্য ব্যয় না করে মেয়েটির পেটে নাক ডুবিয়ে দু’হাতে তার কোমর জড়িয়ে ধরে সে।জামার উপর থেকে দু-তিনবার আলতো করে মেয়েটির পেটে নাক ডলতেই শিহরণে আর্শের কাঁধের কাছে শার্টের একটুখানি অংশ খামচে ধরে মিয়ামি।
ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে আর্শ মিয়ামিকে আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-বন্ধ চোখেও তোমায় অনুভব করতে জানি,মিয়ু।

!!
আগের মতোই এখনো বিহানের সাথে আর্শির সেই সকাল থেকে রাত অব্দি কথা হয়।আর্শি আজকাল অনুভব করছে যে,সময়ের সাথে সাথে সে ও বিহান উভয়ই ধীরে ধীরে একে-অপরের আরো কাছে চলে আসছে।অর্থাৎ তাদের দু-হৃদয়ের মাঝের দূরত্বটা ধীরে ধীরে কমছে।আর্শি তো ভেবেছিলো সে বিহানের থেকে দূরে চলে যাবে।সেই সাথে বিহানকে সে শুধু একজন ভালো বন্ধু ভাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।কিন্তু তার পরিকল্পনার উল্টো হচ্ছে সব।যেখানে সে দুরত্ব বাড়াতে চেয়েছিলো সেখানে দুরত্ব কমেই চলছে।বিহানকে ঘিরে তার অনুভূতিগুলো ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলছে।
কিন্তু বিহানের মনে কি চলছে?সে তো জানে আর্শি তাকে ভালোবাসে তাহলে সে কেনো আর্শির থেকে দূরে চলে যাচ্ছে না?সে কেনো আগের থেকে এখন আর্শির বেশি যত্ন নিচ্ছে? কেনো অধিকার ফলাচ্ছে? ছেলেটি কি ভালোবাসে আর্শিকে? যদি ভালোবেসেই থাকে তবে তা মুখে স্বীকার কেনো করছে না?
বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসবই ভেবে চলছে আর্শি।এমন হাজারো প্রশ্ন এই মুহূর্তে তার মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।কিন্তু একটি প্রশ্নেরও উত্তর জানা নেই তার।বিহানকে প্রশ্ন করার ইচ্ছেটিও নেই তার কাছে।কিন্তু প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাটাও তো খুব প্রয়োজন।কি করা উচিৎ তার?
#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ২৩

এ এক সুন্দর সকাল! যে সকালে ঘুম হালকা হয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই একরাশ ভালোলাগারা এসে মনে জায়গা করে নেয়।সকালের মিষ্টি রোদ্দুরেরা জানালার পর্দা ভেদ করে অন্ধকার ঘরে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে এক নতুন সকালের বার্তা নিয়ে আসে।
মিয়ামির জন্যে সত্যিই এ সকাল টা এক নতুন সকাল।যে সকালে জীবনের কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের ন্যায় দিনগুলো শেষে এক মিষ্টি রোদ্দুরের ন্যায় সুন্দর,উজ্জ্বল দিনের আরম্ভ হতে চলেছে।
আর্শের বুকের উপর চোখবুঁজে শুয়ে আছে মিয়ামি।ঠোঁটে তার মুচকি হাসি লেগে আছে।আজকের দিনটা বিশেষ তার কাছে।তাই তো এ সকাল টাও বিশেষ।
চোখবুঁজা অবস্থাতেই নিজের ডান চোখের উপর নিজের অর্ধাঙ্গের ঠোঁটের স্পর্শ পায় মিয়ামি।ঠোঁটের হাসিটি আরো প্রসস্থ হয় তার।বন্ধ চোখজোড়া পিটপিট করে মেলে আর্শের মুখ পানে তাকায় সে।ছেলেটি ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মিয়ামির দিকে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে আর্শ বলে ওঠে,
-কি ব্যাপার?সকাল সকাল পিচ্চিটার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি টার কারণ কি?
-ভুল প্রশ্ন!’কি’ না ‘কে’ হবে।তোমার পিচ্চিটার ঠোঁটের হাসির কারণ টা তুমিই।
মিয়ামির কথার উত্তরে ব্রু কুঁচকে আর্শ জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-আমি আবার কি করলাম?
উত্তরে মিয়ামি কিছু না বলে নিজের ঠোঁটের হাসিটি ধরে রেখে নিজের মুখ আর্শের মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে গালে একটি চুমু বসিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-ওঠ তো জলদি। ঘুরতে বেরোবো না?
কথাটি বলে মিয়ামি আর দেরি করে না।আর্শের উপর থেকে সরে বিছানা ত্যাগ করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।এদিকে অবাক নয়নে মিয়ামির দিকে চেয়ে ছিলো আর্শ।সকাল সকাল মেয়েটার হলো টা কি!

গতকালই অফিসের বসের উপদেশ অনুযায়ী ঘুরার উদ্দেশ্যে সাজেক এসেছে আর্শ ও সাথে মিয়ামিও! সত্যিই বসের কথানুযায়ী,এখানে আসার পর থেকেই আর্শের অনেকটা ভালো লাগছে।মাথা ঝিমঝিম করা,অস্থিরতা,ক্লান্তভাব ইত্যাদি অনুভূতিগুলো কিছুটা প্রশমিত হয়েছে তার।

!!
বেলা ১১ টা বাজে কিন্তু এখনো সকাল হয়নি আর্শির।ঘুমে বিভোর হয়ে আছে সে।এদিকে কেউ একজন ‘গুড মর্নিং’ ম্যাসেজ সেন্ড করে রেখেছে তার প্রায় ২ ঘন্টার বেশি হতে চললো।ছেলেটি আর্শির ম্যাসেজের অপেক্ষা করে চলছে আর রিপ্লাই পেতে দেরি হওয়ায় সময়ের সাথে সাথে তার রাগের পরিমাণ টাও বাড়ছে।
ঘড়িতে ঘন্টার কাটা ১১ এবং মিনিটের কাটা ৬ এ স্থির হতেই ঘুম ভাঙে আর্শির।মেয়েটি ধীরে ধীরে নিজের এক চোখ খুলে তড়িঘড়ি করে নিজের মুঠোফোন খুঁজে তা হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করতেই বিহানের ম্যাসেজটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার।এবার চোখ দুটোই খুলে দ্রুত গতিতে বিহানের ম্যাসেজের উত্তরে সেও ‘গুড মর্নিং’ লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়।
প্রায় ৫ মিনিট পর বিহানের রিপ্লাই আসে,
-কি দরকার উঠার,আরো ঘুমাও।
বিহানের এমন কথার পেছনে লুকায়িত রাগটা ভালোই বুঝতে পারছে আর্শি।উত্তরে সে বলে ওঠে,
-অনেক বেশি স্যরি।টেরই পাইনি কখন এতো বেজে গেলো।
-৩৬৫ দিন এভাবেই কাটে তোমার।
-স্যরি তো।
উত্তরে কিছু না বলে একটি লাইক সেন্ড করে দেয় বিহান।আর্শি ভালোই বুঝতে পারছে বিহান বেশ রেগে আছে।এখন তার নিজেরই খারাপ লাগছে এতো দেরি কেন উঠে সে! সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো কাল থেকে এলার্ম দিয়ে তবেই সে ঘুমুতে যাবে।
এখন রাগারাগির বিষয়টি এড়িয়ে যেতে আর্শি জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কি করেন?
-কাজে।
-খেয়ে বের হইছেন?
-না।
-সকালে না খেয়ে বেরোতে নিষেধ করছি না?
-সময় ছিলো না রান্না করার।
-এই জন্যেই বলি, বিয়ে করে ফেলেন।বউ থাকলে তো রান্না সে ই করে রাখতো।
-হ্যা খুব।ঘুমায়ে কুল পাইলে তো রানবে!
বিহানের ম্যাসেজটি পড়তেই আর্শির হৃদয়ে কেমন যেনো এক শীতল হওয়া বয়ে গেলো।মুহুর্তেই ঠোঁটে একটু হাসিও ফুটে উঠলো তার আর চোখে বিস্ময়! ছেলেটি কি এ উক্তি দ্বারা আর্শিকে নিজের বউ বললো?ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আর্শি।তবে যদি সত্যিই বিহান কথাটি আর্শিকে নির্দেশ করে বলে থাকে তাহলে আর্শির জন্যে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?

আর্শির ম্যাসেজের রিপ্লাই টা দিয়েই ম্যাসেন্জার থেকে বেরিয়ে নিজের ফোনের স্ক্রিন অফ করে দেয় বিহান।উদ্দেশ্য এখন সে কিছু রোগ সমন্ধে খুটিনাটি আরো স্টাডি করবে।কিন্তু তা আর হলো না।বই হাতে নিতেই তার ফোনটি বেজে উঠলো। ব্রু কুঁচকে ফোন হাতে নিতেই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ‘মিয়ামি’ নামটি চোখে পরলো বিহানের।দেরি না করে কলটি রিসিভ করে সে।
-আসসালামু আলাইকুম,ভাইয়া।(মিয়ামি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,মিয়ামি।কেমন আছো।
-আলহামদুলিল্লাহ অনেক অনেক অনেক ভালো।
মিয়ামির কথায় হেসে ওঠে বিহান।ঠোঁটে হাসি নিয়েই বলে ওঠে,
-বাহ! এতো ভালো থাকার কারণ?
-ভাইয়া,আজ ১ মাস পূর্ণ হলো আর্শ ড্রাগস নেয়নি।প্রথম প্রথম ও অল্পতে রেগে যেতো,কেমন অস্থির অস্থির বিহেভ করতো,রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারতো না ছটফট করতো।তখন মাঝে মাঝে আমি সামলে নিতাম আর মাঝে মাঝে সামলাতে ব্যর্থ হলে আপনার দেওয়া ঘুমের ঔষধ টা দিতে হতো।এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর ধীরে ধীরে ও একটু নিজেকে সামলে নিতে শুরু করলো।এরপর শুরু হলো ওর মাথায় ঝিমঝিম ভাব,নিস্তেজ থাকা,সেই সাথে কেমন যেনো বিহেভ করতো।এভাবেই আরো কিছু দিন চললো।এর মাঝে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি ওকে মানসিক সহযোগিতা করতে,সাহস দিতে।এরপর গতকাল এলাম সাজেকে।এখানে আসার পর থেকে এই একমাসে প্রথম ওকে দেখে অনেকটা ফ্রেশ,ফুরফুরে মেজাজে মনে হচ্ছে। সত্যি বলতে আজ আমি অনেক খুশি। আর এর জন্যে ধন্যবাদ টা আপনার প্রাপ্য,ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ আমাদের গাইড করার জন্যে এবং আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করবার জন্যে।
মিয়ামির কথায় এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো বিহানের ঠোঁটে।সে এক প্রশান্তিময় নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে বলে ওঠে,
-ধন্যবাদ আমার নয় বরং তোমার প্রাপ্য।আর্শের ড্রাগস সেবন না করার দৃঢ় সংকল্প,তোমার সহযোগিতা ও আল্লাহর হুকুমেই এটি সম্ভব হয়েছে।আমি সত্যিই খুব খুশি তোমাদের জন্যে।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
-তবে মিয়ামি, আরেকটি বিষয় নিয়ে তোমায় একটু সতর্ক করতে চাইছি।
বিহানের কথায় মিয়ামির চোখে-মুখে চিন্তের ছাপ ফুটে ওঠে।সে চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-জ্বি ভাইয়া,বলুন।
-একজন ড্রাগস আসক্ত মানুষ কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর যখন সে নেশা ছাড়া কিছুদিন থাকে, তখনই আবার নেশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যাকে রিল্যাপ্‌স বলা হয়।তাই অবশ্যই এ বিষয়ে খেয়াল রাখবে।এতোদিন যেভাবে আগলে রেখেছো এখন প্রয়োজন হলে আরো বেশি আগলে রেখো।
-জ্বি আচ্ছা।চেষ্টায় ইন শাহ আল্লাহ কোনো কমতি থাকবে না।

!!
সাজেকে মেঘ প্রেমিরা তাদের প্রেমের টানেই যায়।আকাশে মেঘেদের ভেসে বেরানো দুচোখ ভরে একটুখানি দেখতে,একটু ছুঁয়ে দিতে আর কাছ থেকে অনেকটা অনুভব করবার জন্যেই প্রতিবছর হাজারো মেঘপ্রেমিরা ভীর জমায় এখানে।
রিসোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মেঘ দ্বারা সজ্জিত আকাশ পানে তাকিয়ে আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে মেঘপ্রেমি দলেরই একজন,মিয়ামি।সেই সাথে এই বিশেষ দিন টাকে কি করে আরো বিশেষ বানানো যায় সেটি ভেবে চলছে সে।
গোসল সেরে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় আর্শ।
গেঞ্জি,প্যান্ট পরিহিত এক নারীর কোমর অব্দি লম্বা চুল বাতাসে মৃদু দুলছে।আর দৃশ্যে মুগ্ধতা খুঁজে নিচ্ছে সে।কিছুটা সময় মিয়ামিকে পেছন থেকে দেখে নিয়ে ধীরে ধীরে তার দিকে অগ্রসর হয় আর্শ।এক হাত মিয়ামির পেটের কাছে নিয়ে গেঞ্জির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে পেটের মাঝ বরাবর হাত রেখে মিয়ামিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ছেলেটি।তার বুক ও মিয়ামির পিঠের মাঝে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই।সে মিয়ামির উন্মুক্ত কাঁধে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিয়ে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-কি করছে আমার বউ টা?
আর্শের স্পর্শ পেয়ে সুখানুভূতিতে চোখজোড়া বুজে নিয়েছে মিয়ামি।ছেলেটির প্রশ্নের উত্তরে সে নিম্ন স্বরে বলে ওঠে,
-আদর নিচ্ছে।
মিয়ামির উত্তরে মৃদু হেসে ওঠে আর্শ।মিয়ামির কানের নিচে তিন-চারটি চুমু বসিয়ে বলে ওঠে,
-ঘুরতে যেতে হবে না?রিসোর্টে পরে থাকলে হবে?
-উম,আজ না।আজ তুমি বাইরে যেয়ে আমার জন্য মজার মজার কিছু খাবার কিনে নিয়ে আসো।কাল আমরা এ জায়গায় ঘুরবো,ঠিক আছে?
-উহু,একা কেন থাকবা?চলো দুজনেই যাই খাবার কিনতে।
-না না না।তুমি যাও, আমার একটুও ইচ্ছে করছে না বাইরে যেতে।
মিয়ামির কথায় সম্মতি দেওয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আর জোর করলো না আর্শ।মিয়ামির কথাটিই মেনে নিলো সে।
এদিকে আর্শকে মানাতে পেরে মিয়ামি এতোক্ষণে চিন্তামুক্ত হতে পেরেছে এবং সেই সাথে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটে উঠেছে তার।আর্শ বাইরে গেলেই তো সে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করতে সক্ষম হবে।

চলবে

[এতো চেষ্টা করতেছি গল্প টা শেষ করার।কিন্তু হচ্ছেই না।ইন শাহ আল্লাহ, আগামী পর্বে শেষ করে দিবো।]
চলবে।

[আর কতো দুঃখিত বলবো! আসলে আমি লজ্জিত। কিন্তু আমি ইচ্ছে করে এমন দেরি করি না সত্যি 💔

আইসিটি ক্লাবে নাম দেওয়ার পরেও একটাবারও বই নিয়ে বসিনি।এই গল্পের পেছনে পুরো দিন গেলো আমার।এখন গল্প টা পোস্ট করে পড়তে বসবো🙃অনেক পড়া!ঠিক মতো কিছুই পড়তে পারতেছি না।আসলে একসাথে অনেক জমে যাওয়ায় এখন হিমশিম খাচ্ছি।কেউ বইকেন না প্লিজ।😞]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here