#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ০৯
আজ ১৫ দিন চলছে মিয়ামি একটি বারের জন্যেও আর্শের দৃষ্টি সীমানার মাঝে কদম রাখেনি।একটি বারের জন্যেও আর্শদের বাড়ি আসেনি আর না আর্শকে একটি কল দিয়েছে।
অসহ্যকর যন্ত্রণা হচ্ছে আর্শের স্পন্দিত মাংসপিণ্ডের মাঝে।সে খুব করে চেয়েছিলো মিয়ামি তার জীবন থেকে চলে যাক।যাতে মেয়েটা একজন যোগ্য মানুষের সাথে জীবন পাড় করে সুখী হতে পারে।কিন্তু এই ১৫ দিনের দূরত্বই আর্শ সহ্য করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সেখানে সারাটি জীবন মিয়ামিকে ছাড়া বাঁচা টা কি তার পক্ষে আদৌও সক্ষম?
আর্শ অনেক অনেক ভাববার পরও বুঝে উঠতে পারছে না মিয়ামির এমন পরিবর্তনের কারণটি কি! মেয়েটি তো তাকে এক নজর না দেখে একটি দিন ও পাড় করতে পারে না।প্রতিদিন নিয়ম করে আর্শির কাছ থেকে তার খোঁজ খবর মেয়েটি নিবেই নিবে।আবার হুটহাট এসে তার কাছে বিভিন্ন আবদার করবে।মেয়েটির আরেকটি কাজ আর্শকে যেমন হাসায় তেমনই মুগ্ধ করে। তা হলো,মেয়েটি যখন কোনো কিছুতে কষ্ট পায় তখন অন্য কারো কাছে না গিয়ে সোজা তার সাথে দেখা করতে চলে আসে।চোখে টলমল করা পানি নিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে, “ভাইটু দেখো,আমার এই এই বাম পাশে ব্যথা করছে।একটু জড়িয়ে ধরবা না?”।প্রশ্নটি করে আর আর্শের উত্তরের অপেক্ষা করে না সে।সোজা আর্শের বুকে আলতো করে মাথা ঠেকায়।আর্শ ও তার মাথায় আলতো করে হাত রাখে।ব্যাস,এতেই মেয়েটির কষ্ট শেষ।
এখন কেনো মেয়েটি আসছে না তাকে একটি নজর দেখতে?কেনো আর্শিকে কল দিয়ে তার খোঁজ খবর নিচ্ছে না?কেনো নিজের কষ্টগুলোকে প্রশমিত করতে তার বুকে ঠাঁই খুঁজছে না?তবে কি আর্শ সফল আজ?সফল সে মিয়ামিকে কষ্ট দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরাতে?
ভাবতেই চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা দুঃখ কোণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো আর্শের।অভিমান মনে জায়গা নিয়ে বলে ওঠলো,
“তোমার ভালোবাসায় ভীষণ বিশ্বাস ছিলো আমার, মিয়ু।বিশ্বাস ছিলো তোমার অনুভূতিগুলো আমার প্রতি কোনোদিন শেষ হবে না।কিন্তু দেখো, কতো সহজেই তা শেষ হয়ে গেলো।আমি হয়তো তোমার আবেগই ছিলাম।”
কথা গুলো মনে মনে চলাকালীন চোখ দু’টি রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে আর্শের।সেই সাথে চোখ দু’টি মৃদু ঝাপসা হলেও দুঃখ দের বেরিয়ে আসার অনুমতি নেই।কারণ,ছেলেরা নিজেদের এ অনুমতি দেয় না।তারা দুঃখগুলোকে মনের এক কোণে যত্ন করে চাপা দিয়ে রাখে।যা পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজের মাঝে একটি।আর পুরুষেরা এ কাজটি করেই নিজেকে সমাজের মানুষের কাছে বলিষ্ঠ প্রমাণ করে।
“ভাই,আছো?”
আর্শির কন্ঠস্বর কানে আসতেই নিজের ঝাপসা হয়ে থাকা চোখ জোড়া ভালো করে মুছে নিয়ে অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে পরে আর্শ।আর্শি কক্ষে প্রবেশ করেই রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
-কি করেছো তুমি মেয়েটার সাথে?
ভ্রু জোড়া কুঁচকে আর্শ জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কার সাথে কি করেছি?
-মিমিকে নতুন আর কোন ভাবে কষ্ট দিয়েছো?আমি বুঝি না তুমি কি হৃদয়হীন কোনো প্রাণী?মিমি এতো ভালোবাসে তোমাকে তা কি একবারও তোমার হৃদয় স্পর্শ করে না?
আর্শ এবার মৃদু রাগী স্বরে বলে ওঠে,
-আমি তেমন কিছুই করিনি।
-তাহলে কি হয়েছে ওর?কেনো প্রতিদিন চোখ ফোলা নিয়ে কলেজে আসে?কেনো ও কারো সাথে হু,হা এর বেশি কোনো কথা বলে না?কেন মাত্র এ ক’দিনেই ওর চেহারাটা এমন শুকিয়ে গিয়েছে? তুমি কষ্ট না দিলে ও কখনো এতো ভেঙে পরতো না।কারণ তুমিই ওর মানসিক শক্তি ও প্রশান্তি,ভাই।
আর্শির কথাগুলো কানে আসতেই তার দিকে ফিরে দাঁড়ায় আর্শ।অবাক চাহনি নিয়ে অপলক আর্শির মুখ পানে তাকিয়ে আছে সে।
একটু থেমে আর্শি আবারও বলে ওঠে,
-ওকে আর কষ্ট দিও না, ভাই।আর যদি দেও তবে মনে রেখো তোমার বোনের সাথে তোমার সম্পর্ক ঠিক থাকবে না।
ভেতর ভেতরই আর্শ ভেঙে টুকরো হয়ে ছিলো।বোনের এ কথাটি কানে আসতেই আপনা আপনিই আর্শের একটি দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।সে মনে মনেই বলে ওঠে,
“তোর নজরে শুধু বান্ধবীর চোখের জলই এলো কিন্তু ভাইয়ের চোখের নিচে জমা হওয়া কালচে দাগ টা এলো না।”
!!
প্লেটে মিয়ামির জন্যে খাবার বারছেন মেহরিন বেগম।কপালে তার চিন্তের ভাজ পরে আছে।অবশ্য আজকাল প্রতিদিনই তিনি এ চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।সেদিন আর্শ এসে মিয়ামিকে নিয়ে যাবার পরের দিন রাতেই মেয়েটি বাসায় ফিরে আসে।আর ঐ দিন থেকে কেমন যেনো হয়ে গেছে মেয়েটি।নিজের কক্ষ থেকে বের হয় না,খায় না ঠিক মতো, ঘরের মধ্যেও সানগ্লাস পরে থাকে যা ভীষণ অদ্ভুত লাগে মেহরিন বেগমের।ভেবেছিলেন সানিয়া বেগম বা আর্শকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখবেন যে ওখানে খারাপ কিছু হয়েছে কিনা কিন্তু যতই হোক মেয়ের হবু শশুর বাড়ি তাই সোজাসাপ্টা তো কথাটা এভাবে জিজ্ঞেস করা যায় না।ভাবতে পারে যে, তাদের উপর বিশ্বাস নেই।
নিজের মেয়েকে এই ১৫ দিনে হয়তো ১৫০০ টা প্রশ্ন করে ফেলেছেন তিনি কিন্তু মিয়ামি যেনো মুখ সেলাই করে বসে আছে।কোনো কথার উত্তর নেই।
খাবারের প্লেট নিয়ে মিয়ামির কক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মেহরিন বেগম কিন্তু মাঝ পথেই বাঁধা প্রাপ্ত হন তিনি বাড়ির কলিং বেল টি বেজে ওঠায়।খাবার প্লেটটি আবারও খাবার টেবিলে রেখে সদর দরজার দিকে অগ্রসর হন তিনি।
দরজা খুলতেই আর্শের হাসিমাখা মুখ খানা নজরে পরলো মেহরিন বেগমের।তিনি অবাক কন্ঠেই বলে ওঠেন,
-আর্শ! এতো রাতে, হটাৎ?
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।আপনার হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল তাই চলে এলাম।
ঠোঁটে এক বিশাল হাসি ফুটিয়ে মেহরিন বেগম বলে ওঠেন,
-ভিতরে এসো,বাবা।
আর্শও হাসি মুখে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলে ওঠে,
-আজ রাতে কিন্তু থাকছি,আন্টি।সমস্যা আছে?
-আরে না না। কি যে বলো! তুমি তো আমার ছেলেই তাই এ বাড়িতে মিমির মতো তোমারও সমান অধিকার,বুঝলে?
উত্তরে একটু হাসে আর্শ।
মেহরিন বেগম, আর্শকে সোফায় বসতে দিয়ে দ্রুতপদে মিয়ামির কক্ষে প্রবেশ করেন।
মিয়ামি চুপটি করে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে আছে। মেহরিন বেগম মেয়ের পাশে বসে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিন্ম স্বরে বলে ওঠেন,
-মিমি?মা ওঠ।আর্শ এসেছে।দেখা করবি না?
উত্তরে মিয়ামি নিশ্চুপ।চোখজোড়াও বুজে রাখা।মেহরিন বেগম ভাবেন তার মেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।তাই আর ডাকেন না কিন্তু মেয়েটি না খেয়ে ঘুমিয়েছে তা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেলো তার।অতঃপর ধীর গতিতে মেয়ের কক্ষ ত্যাগ করেন তিনি।
মেহেরিন বেগম কক্ষ ত্যাগ করতেই চোখ মেলে তাকায় মিয়ামি।লাল হওয়া চোখজোড়া নিজের মাকে দেখাবার সাহস তার হয় না।তাই সানগ্লাস নতুবা ঘুমের আশ্রয় নেয় সে।
!!
রাত ঠিক ১২ টা।মেহরিন বেগম ঘুমিয়ে পরেছেন।শুধু ঘুম নেই প্রেমে ব্যথিত দুটি হৃদয়ের।একজনের চোখে অশ্রু তো অন্য জনের মনে চাপা কষ্টের দীর্ঘ শ্বাস।
“জানি তুমি জেগে আছো।আগামী ১০ মিনিটের মধ্যে তোমাকে ছাঁদে দেখতে চাই।”
আর্শের নাম্বার থেকে এমন একটি ম্যাসেজ দেখে অবাক হয় মিয়ামি।আর্শ কেনো তাকে ডাকছে?তার থাকা না থাকায় তো আর্শের কিচ্ছুটি যায় আসে না তাহলে কেনো এসেছে আর্শ তার বাসায়।
ফোনটাকে আবারও তার জায়গায় রেখে দিয়ে মিয়ামি তার দুঃখবিলাসে মনোনিবেশ করে।
১০ মিনিট পাড় হতেই মিয়ামির ফোনে আর্শের কল আসে।মিয়ামি এক নজর সেদিকে তাকিয়ে আবারও নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।এভাবেই একটি নয় দু’টি নয় বরং পাঁচটি কল দিয়েও যখন মিয়ামির তরফ থেকে কোনো সাড়া মিললো না তখন আর্শ আরেকটি ম্যাসেজ পাঠায়,
“এখনই যদি ছাঁদে না আসো তাহলে আমি তোমার রুমে চলে আসবো।দরজা না খুললে জোরে জোরে ধাক্কাবো।এতে আন্টি উঠে গেলে তার প্রশ্নের উত্তর তুমিই দিবা।”
এবার ভীষণ রাগ হয় মিয়ামির।ছেলেটা চাইছে টা কি? এখনো সে নিজেকে সামলে নিতে পারেনি এর মাঝে ছেলেটাকে একবার দেখলে সে আবারও বেসামাল হয়ে যাবে।কিন্তু এই মুহূর্তে উপায় না পেয়ে মিয়ামি নিজের ভিজে চোখজোড়া মুছে নিয়ে ছাঁদে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।এভাবে লুকিয়ে না থেকে সোজাসাপ্টা কিছু কথা সে আজ আর্শকে বলবেই বলবে।
!!
মিয়ামির পায়ের শব্দ কানে আসতেই আর্শ তার চোয়াল শক্ত করে কঠিন চোখ নিয়ে মিয়ামির দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।কিন্তু মেয়েটির মুখপানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সাথে সাথেই রাগ উরে যায় তার।এক চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে সে নিজের বুকের বাম পাশটায়।
ফোলা চোখ,পুরো মুখটি লাল হয়ে আছে।কেমন যেনো একটু শুকিয়েও গিয়েছে।
মিয়ামি অনুভূতিহীন চোখে আর্শের মুখ পানে তাকিয়ে আছে।ছেলেটির চোখের নিচে জমা হওয়া কালিটি দৃষ্টি এড়ায়নি তার।কিন্তু এসব নিয়ে না ভেবে সে কঠিন কন্ঠে আর্শকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আমাদের বিয়ে টা আর হবে না।আমি কিছু দিনের মাঝেই আম্মুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো।এতোটুকুই বলার ছিলো আমার।যাচ্ছি!
বলেই মিয়ামি চলে যেতে নেয় কিন্তু আর্শ তার হাতটি শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
-কেনো?
-জ্বি?
-কেনো বিয়ে হবে না আমাদের?
-তুমি তো এটিই চাইতে।আমাকে হাজার বারের মতো বলেছো বিয়ে টা ভেঙে দিতে কিন্তু আমিই শুনতাম না।
-শুনতে না তাহলে এখন কেনো শুনছো?
এবার মিয়ামি আর্শের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে ওঠে,
-তোমার মানবতাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করছিলাম তখন।মনে আছে সেদিন যখন আন্টি তোমায় বললো আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে। তখন প্রথম মানা করে দিলেও পরে ঠিকই পিছু পিছু আমার বাসা অব্দি এসেছিলে সেটিতে আমি তোমার ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছিলাম।তারপর সেদিন যখন দূর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো তখন যে তুমি আমাকে নিজের বুকে টেনে নিয়েছিলে আবার আমার হাত শক্ত করে ধরেছিলে সেটিতেও আমি ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছিলাম।এমন হাজারো সময় আমি তোমার মাঝে নিজের জন্য ভালোবাসা খুঁজে নিতাম কিন্তু আফসোস তা তোমার ভালোবাসা ছিলো না বরং মানবতা ছিলো।
একটু থেমে মিয়ামি আবার বলে ওঠে,
-সেসব মানবতা হলেও আমি মেনে নিতাম।তোমাকে ভালোবেসে যেতাম অনন্ত কাল।কিন্তু যে তুমিতে আমি ছাড়া অন্য নারীর এক সরিষা দানা পরিমাণ জায়গা আছে সে তুমি এক দানা পরিমাণও আমার নও।
কথাটি বলতেই চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো মিয়ামির গাল বেয়ে। আর্শ চুপটি করে সবটি শুনে বলে ওঠে,
-অন্য নারী?
এবার এক তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-একবার বলতা তুমি অবন্তী আপুকে পছন্দ করো তাহলে তো অনেক আগেই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতাম।বলোনি কেনো?
অবাক চোখে আর্শ আবারও প্রশ্ন করে ওঠে,
-আমি অবন্তীকে পছন্দ করি?
-বাহ!নিজেই জানো না?অবন্তীকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে ৩২ দাঁত বের করে হেসে গল্প করো, ঘুরতেও যাও।কই আগে তো কোনো মেয়ের সাথে এভাবে দেখিনি তোমাকে।অন্য মেয়েদের কথা বাদ দিলাম আমার সাথে কখনো ওভাবে হেসে কথা বলেছো?আমরা ঘুরতে গেলেও সব সময় আর্শিকে সাথে নিয়েছো কিন্তু অবন্তী আপুর বেলায় শুধু তাকে নিয়েই ঘুরতে গেছো।যেদিন আমরা ৩০ ফিট এ ঘুরতে গেলাম সেদিন কি কি করেছো তা মনে নেই?আমাকে আর আর্শিকে উবারে বসিয়ে দিয়ে অবন্তী আপুকে নিজের বাইকে করে নিয়ে গিয়েছ।তোমাকে অনেক আগেই আমি বলেছিলাম তোমার বাইকে আমি,আর্শি ও আমাদের মা রা ব্যতীত অন্য কোনো নারী যেনো না বসে কিন্তু আমার কথাটা তুমি রাখোনি।হয়তো তোমার, আমার এ কথাটি মনেই নেই।তারপর ৩০০ ফিট যাওয়ার পর প্রতিটা মূহুর্ত তোমরা দু’জনে আলাদাভাবে উপভোগ করছিলে যেনো আমি আর আর্শি তো তোমাদের সাথে ছিলামই না।অবন্তী আপু কি খাবে কোথায় বসবে, কোন দিকে ঘুরবে এসব নিয়েই ব্যস্ত ছিলে তুমি।কিন্তু সাথে তো আমি ও আর্শিও ছিলাম।আমাদের দিকে কোনো খেয়াল ছিলো তোমার।আর্শির হাতে ওর ক্যামেরা ছিলো।ও ছবিও তুলছিলো কিন্তু অবন্তী আপুর সব ছবি তুমি নিজ হাতে তুলে দিয়েছিলে।কেনো?আর্শি খারাপ ছবি তোলে?আর যদি খারাপই তোলে তাহলে আজ অব্দি আমার একটি ছবিও তুমি তুলে দেওনি কেনো?
চোখ দিয়ে সমানে পানি পরছে মিয়ামির।এতে সে খুবই বিরক্ত।কথাগুলো সে কঠিন স্বরে বলতে চেয়েছিলো আর বলেছেও কিন্তু এই চোখের জলগুলো তো তাকে আর্শের সামনে দূর্বল প্রমাণ করে দিলো যা সে বিন্দু পরিমাণ চাইছিলো না।মিয়ামি নিজের চোখের জলগুলো দু’হাতে মুছে নিয়ে কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে,
-এখনো বলবে,অবন্তী আপুকে ভালোবাসো না?
আর্শ এতোক্ষণ চুপচাপ মেয়েটির কথাগুলো শুনছিলো।আর অনুভব করছিলো মেয়েটির ভালোবাসার গভীরত্ব টা।তার আর অবন্তীর এসব বিষয়গুলো কত গভীরভাবে লক্ষ্য করেছে মেয়েটি আর ভুল বুঝে হলেও কতখানি কষ্ট পেয়েছে সে যে আর্শকে ছাড়তে পর্যন্ত প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে।আর্শ একটু সময় নিয়ে নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-ছোটবেলা দিয়ে চিনি ওকে।ভালো বন্ধুত্ব আমাদের।এতো বছরে না কোনো যোগাযোগ আর না কোনো দেখা-সাক্ষাৎ।তাই সৌজন্যতা রক্ষার্থেই ওর সাথে হেসে বা ভালো করে কথা বলা,যত্ন নেওয়া।দু’দিন থেকে চলে গিয়েছে।এই দু’দিনে সে যেনো আমাদের কাছ থেকে কোনো খারাপ ব্যবহার বা যত্নে কোনো ত্রুটি না পায় সেটিই আমার লক্ষ্য ছিলো।আর সেদিন আমি অবন্তীর সাথে আর্শিকেও নিয়ে বেরোতে চেয়েছিলাম কিন্তু আর্শির ইচ্ছে ছিলো না।আর বাইকে উঠার বিষয়ে অবন্তী আমাকে অনুরোধ করেছিলো।ওর নাকি বাইকে ঘুরতে ভাল্লাগে।
কথা গুলো বলে একটু থামে আর্শ।তারপর আবারও মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-আমার কাছে আর্শি যেমন অবন্তীও তেমনই।দু’জনই বোন।
টলমল করা চোখজোড়া নিয়ে আর্শের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মিয়ামি বলে ওঠে,
-আর আমি? আমি কি হই তোমার?
উত্তরে নিরব চোখে মিয়ামির দিকে তাকিয়ে আছে আর্শ।এ মেয়েটিকে তার লাগবেই লাগবে।একে ছাড়া আর্শ নিঃশ্বাস নিয়ে যাবে কিন্তু বাঁচতে পারবে না।তা এই ১৫ দিনে সে খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছে।তাই এখন আর নিজের অনুভূতি লুকাবার কোনো মানেই হয় না।এসবই ভাবনার মাঝেই আর্শের কানে আবারও মিয়ামির কন্ঠস্বর ভেসে আসে।মেয়েটি আবারও জিজ্ঞেস করে,
-বলো?আমি কি হই তোমার?
-বউ।বউ হও আমার।
আর্শের উচ্চারিত শব্দ গুলো কানে আসতেই মিয়ামির চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু কণা গড়িয়ে পরছে।ঠোঁটে ফুটে উঠেছে এক বৃহৎ প্রশান্তির চিহ্ন।
চলবে।
[কালই রহস্য নিয়ে হাজির হচ্ছি! “কেনো আর্শ এতো দিন মিয়ামিকে কষ্ট দিয়েছে”এর উত্তর ইন শাহ আল্লাহ কাল পাবেন।সবাই অপেক্ষায় থাকেন।
বেশি বেশি কমেন্ট না করলে আমি কিন্তু আগামী কাল আমি গল্প দিবো না।তাই পাঠক-পাঠিকাদের কাছে অনুরোধ সবাই প্লিজ কমেন্টে জানাবেন কেমন হয়েছে পর্ব টা।]