প্রণয় আসক্তি পর্ব ১০

#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ১০(রহস্য স্পেশাল)

মৃদু বাতাস বয়ে চলছে।আকাশের অর্ধ চাঁদ তার সৌন্দর্য প্রদর্শনে ব্যস্ত।আর ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন নর-নারী।উভয়ের মাঝেই বিরাজ করছে পিনপতন নীরবতা।
মিয়ামি আড় চোখে একবার তাকায় আর্শের দিকে।ছেলেটি ভাবুক মনে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। আর্শের মতিগতি দেখে বিন্দু পরিমাণ মনে হচ্ছে না যে ছেলেটি এই নিরাবতার অবসান ঘটাবে।তাই মিয়ামিই নিরাবতা ভেঙে অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠে,
-তুমি কি ভাবছো, তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি?মোটেও নাহ।একটা বউ শব্দে আমি এতো দিনের কষ্ট ভুলবো না।
বলেই মিয়ামি আর দেরি না করে স্থান ত্যাগ করার উদ্দেশ্য অগ্রসর হয় কিন্তু কারো হাতের বাঁধনে বাঁধা প্রাপ্ত হয় সে।একটি শক্ত হাতের মুঠোয় বন্ধী তার বাম হাতটি।শক্ত হাতের অধিকারী মানবটি এক হেঁচকা টানে তাকে নিজের বুকে নিয়ে আসে।হাতের বাঁধন হতে মুক্ত করে দু’হাতে মিয়ামির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সে।অতঃপর ধীরে ধীরে মিয়ামির কানের কাছে মুখ এনে বলে ওঠে,
-খুব অভিমান জমেছে?
আর্শের গরম নিঃশ্বাস কানে এসে লাগতেই চোখ বুজে নেয় মিয়ামি।মিয়ামির কোনো সাড়া না পেয়ে আর্শ তার হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে মিয়ামিকে আরো নিবিড়ভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-হু?
এবার মিয়ামি আর্শের বাহু শক্ত করে খামচে ধরে মৃদু কাঁপা স্বরে বলে ওঠে,
-হু।
-আদর দিলে কমবে না?
মুহূর্তেই একরাশ লজ্জা এসে জায়গা করে নিলো মিয়ামির মন জুড়ে।লজ্জায় পুরো মুখ লাল হয়ে এলো তার।অতি সুখ মানব হৃদয় সহজে মানিয়ে নিতে পারে না।তাদের শরীরে স্পন্দিত হওয়া মাংসপিন্ডটি অস্বাভাবিক আচারণ করে।যেমন এই মুহূর্তে মিয়ামির হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।মেয়েটি নিজেই নিজের হৃৎস্পন্দন শুনতে পারছে এমন অবস্থা।চুপটি করে চোখ জোড়া বুজে আর্শের বাহু খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে।
মিয়ামির মুখের দিতে তাকাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে আর্শের।কিছু দিন আগেও মেয়েটি তার কাছে, “চুমু চাই,চুমু চাই,চুমু চাই” বলে বায়না করছিলো আর এখন আদরের কথা শুনেই সে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।নারী মন বিচিত্র।তাদের মন বোঝা আসলেই দায়!
আর্শ, ঠোঁটে হাসি নিয়েই মিয়ামির মাথা নিজের বুকে আলতো করে চেপে ধরে বলে ওঠে,
-মিয়ু, আজ তোমায় মনে জমে থাকা অনেক কথাই বলবো। মনোযোগ দিয়ে শুনবে তো?
আর্শের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ঠোঁট এক চিলতে প্রশান্তিময় হাসি নিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-হু।
আর্শ একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,
-সময়টি ছিলো শিক্ষা জীবনে আমার বিবিএ ১ম বর্ষ। ভার্সিটি জীবনের প্রথম বছর,নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নতুন ক্লাসরুম,নতুন শিক্ষক সেই সাথে নতুন সহপাঠী ও বন্ধু-বান্ধব।মানুষের চেহারা দেখে মানুষটি কেমন তা নিয়ে সঠিক ধারণা করে নেওয়ার গুণটি আমার নেই।তাই কিছু ভুল মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলি।বন্ধুত্বের প্রথম দিকে যখন বন্ধুরা সবাই মিলে বাইরে যেতাম তখন ওরা অর্থাৎ রাজ,আয়াশ,ইভান তিন জনই একটি কাগজে কিছু একটা এনে খেতো।বলতে গেলে প্রতিবার,যখনই আমরা বাইরে যাই তখনই ওরা এটি খাবেই খাবে।আমার বিন্দু পরিমাণ ধারণা ছিলো না যে ওরা কি খেতো।আমি জিজ্ঞেস করলেও ওরা মিটিমিটি হেসে কথাটি এড়িয়ে যেতো।এভাবে ৩ মাস পাড় হয়।একদিন আবারও বাইরে আড্ডা দেওয়ার সময় আগের মতোই কাগজে মোড়ানো কিছু একটি এনে ওরা তা খেতে আরম্ভ করে।আর এবারই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে আমার।সেদিন জোর দিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করি যে ঐ জিনিসটি আসলে কি! উত্তর না দিয়ে ওরা কিছু একটা ভেবে ঐ কাগজে মোড়ানো জিনিসটি আমায় খেতে বলে।প্রথম দিকে আমি রাজি না হলেও ওরা সবাই ২-৩ বার করে সাধার পর নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে অল্প একটু মুখে নেই।টেস্ট জঘন্য হলেও এর দ্বারা এক অদ্ভুত মানসিক শান্তি মেলে, মিয়ু।ওরা পরে আমায় বলেছিলো,সেটি নাকি মানুষিক শান্তির একটি ঔষধ।যা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই নাকি ওরা খায়।
কথা গুলো বলে একটু থামে আর্শ।একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলে ওঠে,
-তখন সবে ১৯ বছর বয়স ছিলো আমার।টিভি,ফোন কোনোটিই বেশি চালাইনি।তেমন বেশি কোনো মানুষের সাথেও কখনো মিশা হয়নি আমার।ছোটবেলা দিয়েই খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিলাম আমি।পড়াশোনার বই আর উপন্যাসের বই ই ছিলো আমার সঙ্গী।তাই বাহ্যিক দুনিয়ার এসব জটিলতা তখন এতো বুঝতাম না।আর বন্ধুদের বিশ্বাসও করতাম অনেক। এসব মিলিয়ে খুব সহজেই ধোঁকা খেয়ে গেলাম।স্বীকার হলাম প্রতারণার।
আর্শ এতোটুকু বলে থামতেই মিয়ামি তার বুক থেকে মাথা উঠায়।এক হাতে আর্শের গাল স্পর্শ করে চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,
-কি হয়েছিলো?
আর্শ মিয়ামির চেহারা পানে কয়েক সেকেন্ড অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।অতঃপর তার থেকে দূরে সরে আবার ছাঁদের রেলিং এ দু’হাতে ভর দিয়ে আর্শ বলে ওঠে,
-ঐ জিনিস টা খাওয়ার পর বেশ আরাম অনুভব হতো।তাই ওদের সাথে সাথে আমিও তা নিয়মিত সেবন করতে আরম্ভ করি।কয়েক মাসের মধ্যেই অনুভব করি ওটা না খেলে আমার নিজের মধ্যে কেমন যেনো অশান্তি অনুভব হতো।কেমন যেনো মাথা কাজ করতো না।এর এক-দু মাস পর একদিন দেখা হওয়ার জায়গায় আমি পৌঁছাতে দেরি করে ফেলি আর ওরা আমাকে ছাড়াই সেই জিনিসটি খেয়ে শেষ করে ফেলে।যখন আমি পৌঁছে এই খবর পাই তখন মুহূর্তেই আমি নিজের উপর সকল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।মাত্রাতিরিক্ত রাগ উঠে যায় আমার এবং আমি সেখানের সব কিছু ভাঙচুর করতে আরম্ভ করি।এতো রাগ এর আগে আমার কখনো হয়নি।কেনো যেনো তখন আমার মাথা কাজ করছিলো না।সেদিন অনেক কষ্টে ওরা আমাকে সামলায় এবং ঐ জিনিস আমাকে সেইদিনই আবার এনে দেয়।ওটা খাওয়ার পরই আমি পুনরায় স্বাভাবিক হই।এ ঘটনাটির পর আমি ৯০% নিশ্চিত হয়ে যাই যে এটি কোনো ঔষুধ নয়।
আর্শের এতোটুকু কথা বলে শেষ করতেই মিয়ামি বলে ওঠে,
-নেশা দ্রব্য ছিলো?
মিয়ামির প্রশ্নে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর্শ।এক নজর তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-এ ঘটনার পর ওদের অনেক প্রশ্ন করার পর ওরা বিষয়টি স্বীকার করে।এটি কোনো ঔষুধ নয় বরং ড্রাগ ছিলো।আর আমি ড্রাগ এডিক্টেড।
শেষের কথাটি বলার সময় আর্শের কন্ঠ কেমন যেনো কাঁপা কাঁপা শোনা যায়।সেই সাথে মিয়ামির হৃদয়ও কেঁপে ওঠে। কি শুনছে সে! আর্শ নেশা আসক্ত? মিয়ামি আর দেরি না করে আর্শকে নিজের দিকে ফিরিয়ে আর্শকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে ওঠে,
-কষ্ট পাচ্ছো?

চলবে

[আমি আজ ভীষণ ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম।বাসা ভর্তি মেহমান। তাও আপনাদের কথা রাখতে তাড়াহুড়ায় লিখেছি।হয়তো সুন্দর হয়নি পর্ব টা।নেক্সট পর্ব ইন শাহ আল্লাহ,সুন্দর করে লিখার চেষ্টা করবো।দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here