প্রতারক পর্ব ১

কবুল বলার মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড আগে আমার বান্ধবী মিমি এসে বললো আর্নিয়া বোন আমাকে বাঁচা!!তুই এই বিয়ে করিস না!!আমার গর্ভে আহির ভাইয়ার সন্তান।।
কথাটা শোনে চারদিকে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেলো কেউ বলছে বিয়েতে তো সিনেমার কাহিনী শুরু হয়ে গেছে।
আমার মনে হয় আমি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি।চারদিকে যেনো শুধু অন্ধকার।

হঠাৎ করে আহির বাবা অর্থাৎ আমার হুব শ্বশুর একটা চিৎকার দিয়ে মিমিকে বললেন এই মেয়ে কে তুমি??আর কোন মতলবে এসেছো??আমার ছেলেকে ফাঁসাতে চাইতেছ!!কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তা তুমি কোনো দিনও পারবে না।।

আহিরের বাবার কথা শোনে মিমি বললো আঙ্কেল বিশ্বাস করুন আমি কোনো মিথ্যে কথা বলছি না।আমার কাছে সব প্রমাণ আছে।এই বলে মিমি একটা ফাইল আমার দিকে ছুটে মারলো!!ফাইলটা খুলে একটা কাগজ দেখতে পেলাম।কাগজটা পড়ে আমি যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।রিপোর্টে পরিষ্কার লিখা আছে মিমি দুই মাসের আন্ত্বঃসত্ত্বা।আর রিপোর্ট পজিটিভ।তার মানে মিমি সত্যি বলছে।আর ফাইলে মিমি আর আহিরের কিছু অশ্লীল ছবি ও রয়েছে।
তখন আমি আহিরের দিকে তাকালাম আর ওকে জিজ্ঞেস করলাম আহির মিমি যা বলছে তা কী সত্যি??
আহির কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে ই দাঁড়িয়ে আছে।ওর চুপ থাকা আমাকে আরও অবাক করে দিলো।আমি চেয়েছি এইসব মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে যাক।কিন্তু আহির চুপ থেকে প্রমাণ করে দিলো ও আসলে দোষী।আর মিমি সব সত্যি বলছে।।
আহিরের ওপর আমার খুব রাগ হলো।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমি আহির কষে একটা চড় মারলাম।আর বললাম প্রতারক!!তুই এইভাবে একটা মেয়ের সর্বনাশ করলি!!আর অন্য একটা মেয়েকে ফাঁসাতে চেয়েছিস তোর প্রতারণার জালে।।তুই একটা প্রতারক!!
আহির কথাগুলো বলে আমি মিমিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলাম।।
,

,
ত্রিশ মিনিট পর মিমিকে নিয়ে বাসার ভেতর থেকে বের হলাম।আমাকে আর মিমিকে দেখে সবাই বেশ অবাক হলো।আসলে আমি আমার সমস্ত গয়না আর কাপড় মিমিকে পরিয়ে কনের সাজে স্টেজে নিয়ে এসেছি।
মিমিকে নিয়ে এসে আমি বললাম এইখানে উপস্থিত সবাইকে আমি বলছি বিশেষ করে আঙ্কেল আপনাকে(আহিরের বাবাকে)আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব নয়।তার চেয়ে বরং মিমিকে ই আপনার ছেলের বউ করে নিয়ে যান।এতে আপনার ছেলের পাপ কিছুটা হলেও কমবে!!আর যদি মিমিকে আপনি বা আপনার ছেলে কেউ স্বীকৃতি না দেন তাহলে আপনাদের সাথে কী হতে পারে তা একবার ভেবে দেখুন।।
আমার কথা শোনে আমার মা বললো আর্নিয়া!!তুই কী করছিস তুই জানিস!!
আমি বললাম মা আমি সব জানি।।আর আমি এটা ও জানি আমি ন্যায় বিচার করছি।প্রতারককে কোনোভাবে ই আমি জিততে দিবো না।।

আমার কথা শোনে আমার মা আর বড় ভাই আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।যেনো তারা অসহায় দর্শক।

——-আমি কাজী সাহেবকে বললাম আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিন।

——আমার কথা শোনে আহিরের বাবা বললো আমি এই বিয়ে কিছুতে ই মেনে নিবো না।এমন থার্ড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েকে আমি কোনোদিন ও আমার ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারবো না!!

—— নিজের বাবার কথা শোনে আহির বাবার পা ধরে বললো বাবা আমি সত্যি ই মিমিকে ভালোবাসি।আমি শুধু তোমার চাপে পড়ে আর্নিয়াকে বিয়ে করার জন্যে রাজি হয়েছি।আর্নিয়াকে বিয়ে করে আমি কোনোদিনও সুখী হতে পারবো না।।

——আহিরের কথা শোনে যেনো আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।এই কী বলছে আহির যার সাথে আমার পাঁচ বছরের সম্পর্ক।প্রথম যেদিন কলেজে গিয়েছিলাম সেদিন ই আহির আমাকে প্রপোজ করেছে।কিন্তু আমি পাত্তা দিই নাই।পুরো একমাস আমার পেছন পেছন ঘুরে আমাকে রাজি করিয়েছে।অথচ আজ সেই আহির বলছে আমাকে বিয়ে করলে নাকি সে কোনোদিন সুখী হতে পারবে না।দুনিয়াটা কী অদ্ভুদ তাই না!!!!
——-হঠাৎ ঠাসঃ ঠাসঃ শব্দে ভাবনার ঘোর কাটলো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম আহিরের বাবা আহিরকে চড় মারছে।।

——–আহিরের বাবা একটু চুপ করে কাজী সাহেবকে বললেন কাজী সাহেব আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।।

——কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো অতঃপর তিনবার কবুল বলে আমি প্রিয় মানুষটা অন্যকারো হয়ে গেলাম।

——-ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো আর আহির মিমিকে নিয়ে চলে গেলো!!আহিরের বাবা আমার সামনে এসে আমাকে কিছু বলতে চেয়ে ও বলে নি!!

——এতক্ষণ আমার সাথে যা হয়েছিলো তা যেনো আমার দুঃস্বপ্ন ছিলো।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না আহির একজন প্রতারক।না জানি আর কত মেয়ের সাথে ও প্রতারণা করেছে।আর কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।।

——-আমি দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেলাম।আমার ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছি।ইচ্ছা করছিলো চিৎকার দিয়ে কাঁদি।কিন্তু তাও পারছি না।হঠাৎ করে কেউ,,,,,,,,,,,,

চলবে

#প্রতারক
#পর্বঃ০১
#লেখিকাঃফারহানা_ইসলাম

গল্পটি পড়ে কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন।আর হ্যাঁ লাইক,কমেন্ট করে সবসময় পাশে থাকবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here