গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৭+২৮
লেখাঃ Mst_Liza
,
আজ ২০ বছর পর মিরা খুলনায় আসছে। সোহাগের কাছে। শেষ আশাটুকু নিয়ে। যদি জীবনের বাকি দিনগুলো সোহাগের সাথে কাটিয়ে দেওয়া যায়! তাহলে ভালোই হবে। আর তা না হলেও মিরার কোনও দুঃখ নেই। মানুষটা যে তারই। সে যতই অপমান করুক।তাকে ঘিরেই যে মিরার বসবাস।মায়ার পাঠানো সারপ্রাইজ গিফটটাতে বাবা, মেয়ের একসাথে তোলা ছবিগুলো দেখে মিরা আর লোভ সামলাতে পারলো না।চলে এলো খুলনায়।কারণ মিরারও ইচ্ছা করে স্বামী, সন্তান নিয়ে জীবনের একটা দিন অন্তত কাটাবে। আর কত দিনই বা মিরার হাতে আছে? তাই আজ এই শেষবারের মতো মিরা একবার হার মানতে চায়। হার মেনে দেখতে চায় মানুষটাকে পাওয়া যায় কিনা আর যদি না পায় তাহলে সেটাই হবে মিরার ভাগ্য।
মিরা এখন মির্জা প্যালেসের সামনে দাড়িয়ে।তার মনের ভেতরে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে।শুধু ভাবছে, এতোদিন পর নিজের বাড়িতে যাবে অথচ এ বাড়ির কিছুই এখন তার নেই।বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে চোখটা বন্ধ করলেই ভেসে আসে সেই পার্টির রাতটার কথা।কিভাবে সোহাগ ধাক্কা দিয়ে মিরাকে বাড়ি থেকে বের করে মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল?
দূর থেকে মিরাকে দেখে দারোয়ান রহিম মিয়া এগিয়ে আসে।
রহিম মিয়াঃ একি বৌরানী তুমি? কেমন আছো? আর এতোদিন কোথায় ছিলে?
মিরা প্রতিউত্তরে শুধু একটা কথাই জানতে চায়।
মিরাঃ রহিম চাচা উনি কি বাড়িতে আছেন?
রহিম মিয়াঃ হ্যাঁ, আছে।
মিরাঃ উনাকে একটু ডেকে দেবেন।আমি কথা বলব।
রহিম মিয়া মিরাকে বসতে একটা চেয়ার টেনে দিয়ে সোহাগকে ডাকতে বাড়ির ভেতরে যায়।আর মিরা সেখানে বসেই সোহাগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মিরার অপেক্ষা যেন শেষ হবার নয়।এক একটা মুহূর্ত যেন হাজার বছরের মতো লাগছে।ওদিকে সোহাগ মিরা এসেছে শুনে ছুটে আসে।বাইরে এসে আর মিরাকে পায় না।খুব ভেঙে পরে সোহাগ।এতোগুলো দিন পরে মুহূর্তের মধ্যেই এতো বড় ধক্কা সোহাগ নিতে পারছে না।
সোহাগ মির্জাঃ কোথায়? আমার মিরা কোথায় রহিম চাচা?
রহিম মিয়াঃ বিশ্বাস কর বাবা এখানেই ছিলো। এইমাত্র আমি বৌরানীর সাথে কথা বলে তোমাকে ডাকতে গেলাম।
সোহাগ মির্জাঃ তাহলে দেখছি না কেন?
রহিম মিয়াঃ সেটাতো আমিও বুঝতে পারছি না।
সোহাগ সেখানে বসে পরে।চিৎকার করে বলে, কোথায় তুমি মিরা? আসলেই যখন তখন চলে কেন গেলে?
।
মায়াঃ এই ছাড়ুন না
মাহিরঃ নাহ
মায়াঃ কটা বাজে খেয়াল আছে?
মাহিরঃ বাজুক! আজ আমার অফ ডে!
মায়াঃ আমাকে তো উঠতে হবে।
মাহিরঃ বললাম তো না! যতক্ষণ আমি উঠবো না এই ভাবে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকো।
মায়াঃ এমন কেন আপনি?
মাহিরঃ উহু ম-ম কথা বলো না।খুব শীত করছে আমার।
মায়াঃ হুমমম।
এমন সময় মায়ার ফোনটা বেজে ওঠে।
মায়াঃ এই ফোন বাজছে তো
মাহির মায়ার ফোনের স্কীনে তাকিয়ে দেখে মিরার ফোন।ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই ফোনের ওপাশ থেকে কেউ মাহিরকে কিছু বলে।মাহির কথাটা শুনেই থ হয়ে যায়। মায়াকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসে।
মায়াঃ এখন কি হলো?
মাহিরঃ মায়া
মায়াঃ কি?
মাহিরঃ মিরা মায়ের এক্সিডেন হয়েছে।
মাহিরের কথা শুনে মায়ার মুখটা এক নিমিষেই মলিন হয়ে যায়।মায়া পারে না নিজেকে সামলাতে।শুধু ভাবে মাহির কি বলছে এটা? যেই মাকে না জিজ্ঞেসা করে মায়া একটা কাজও করতে পারে না সেই মায়ের এক্সিডেন্ট? কথাটা শুনেই যেন মায়ার ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাহিরঃ এভাবে চুপ করে আছো কেন?
মায়া সমস্ত নিরাবতা আর চিন্তা কাটিয়ে উঠে মাহিরকে ঝাকিয়ে জানতে চায়,
মায়াঃ আপনি মিথ্যা বলছেন বলুন?
মাহিরঃ নাহ
মায়া কাঁদতে থাকে।
মায়াঃ আমাকে এক্ষুণি আমার মায়ের কাছে নিয়ে চলুন।
মাহিরঃ মিরা মা আমাদের হসপিটালে আছে।
মায়াঃ মা খুলনাতে?
মাহিরঃ হুমমম। তুমি কি যানতে মিরা মা আসবে?
মায়াঃ না।মা হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিল।কাল আমি মাকে সারপ্রাইজ গিফট পাঠিয়ে ছিলাম বলে।
মাহিরঃ তাই হবে হয়তো
মায়াঃ কিন্তু এক্সিডেন্ট টা কিভাবে হলো?
মাহিরঃ একটা ছোট বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে মিরা মা নিজে ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়েছে।এখন ও.টি চলছে।কল লিস্টের লাস্ট কলটা তোমার ছিল বলে তোমাকে ফোন করে জানিয়েছে।
মায়াঃ দেখেছেন? এভাবেই সারাটা জীবন আমার মা সকলের কথা ভেবেছে। সকলের ভালো চেয়েছে। অথচ দেখুন এই সমাজ কখনও তাকে একটু সম্মান দেয় নি। এতো অপমান আর অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকে আমার মা।আজ আমার মায়ের এই অবস্থা আমি পারছি না মেনে নিতে।
মাহির মায়াকে বুকে টেনে নিয়ে শান্তনা দেয়।
মাহিরঃ ওসব কথা ভেবে নিজেকে আর কস্ট দিও না।আমাদের এখন হসপিটালে যেতে হবে।মিরা মায়ের কাছে।যাবে না?
মায়াঃ হুমম।যাবো।
চলবে….
গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৮
লেখাঃ #Mst_Liza
,
মায়া আর মাহির তখনই হসপিটালে চলে আসে।কিছুক্ষণ পর মাহিরের বাবা-মাও আসে।মাহির এখন ও.টির মধ্যে আছে। ও.টির সামনের বেঞ্চটাতে মায়াকে নিয়ে বসে আছে মুফতি খান আর সাহেদ খান।
মায়া তার শ্বাশুড়ি মায়ের কাধেঁ নাথা রেখে কাঁদছে আর বলছে,
মায়াঃ এতো করে বললাম উনাকে আমি ভেতরে যাব, উনি শুনলেনই না।
মুফতি খান মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে থাকে।
মুফতি খানঃ কাদিঁস নারে মা।বেয়ানের কিচ্ছু হবে না।ওই আল্লাহর রহমতে একদম সুস্থ হয়ে উঠবে।মাহির তো আছে ভেতরে।ওঠিক পারবে দেখিস।
তারপর সকলে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে কখন অপারেশন থিয়েটার থেকে মাহির ভালো সংবাদ নিয়ে বের হবে।এমন সময় মাহির ও.টি থেকে বেরিয়ে আসে। মাহিরকে দেখেই সবাই উঠে দাড়ায়।মায়া তো ছুটে গিয়ে মাহিরের সামনে দাড়িয়ে জানতে চায়, মা কেমন আছে? মাহির কোনও কথা বলে না।মায়া আবার বলে, আমার মা কেমন আছে? মাহিরের কোনো উত্তর না পেয়ে মায়া কলারটি চেপে ধরে মাহিরকে জোড়ে জোড়ে ঝাকাতে থাকে।
মায়াঃ বলুন আমার মা কেমন আছে? বলুন না?
মায়া মাহিরকে জিজ্ঞেসা করতে করতে কেঁদে দেয়।যার জন্য একটা সময় পর মায়ার কান্না আর চিৎকারে গলাটা শুকিয়ে যায়।মায়া বিরবির করে বলে,
মায়াঃ আমি কিছু জানতে চাচ্ছি? চুপ করে থাকবেন প্লিজ। বলুন আমার মা কেমন আছে?
মাহির কলার থেকে মায়ার হাতটি ছাড়িয়ে শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে রাখে।তারপর নিচু গলায় মায়াকে শান্ত হতে বলে।
মাহিরঃ শান্ত হও মায়া। আমরা ডাক্তার। আমাদের হাতে যতোটুকু সম্ভব আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেস্টা করি।তবুও কিছু ব্যাপার আমাদের হাতে থাকে না।
মায়াঃ মানে? কি হয়েছে আমার মায়ের?
মাহিরঃ মায়া…. মিরা মা!
মায়াঃ কি?
মাহিরঃ কোমায় চলে গেছে।
মায়া কথাটা শুনে অনেক বড় একটা ধাক্কা খায়।ঠিক সেই মুহূর্তেই এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মায়া।
মাহির মায়াকে পরে যেতে দেখে ধরে বসে।মায়াকে ডেকে দেখে মায়ার কোনও সারা নেই।তাই মায়াকে নিয়ে নিজের কেবিনে যায়। চোখে মুখে পানির ছিটা দিলে মায়ার জ্ঞান ফেরে।জ্ঞান ফিরতেই মায়া খুব উত্তেজিত হয়ে পরে।আর উত্তেজনায় আবল তাবল বকতে থাকে।মাহির মায়াকে শান্ত করার চেস্টা করে।কিন্তু পারে না।তাই বাধ্য হয়ে মায়ার গালে ঠাসসসস করে একটা চর বসিয়ে দেয়।তখন গিয়ে শান্ত হয়।নিশ্চুপ হয়ে গালে হাত দিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে মায়া।যা দেখে মাহিরের চোখেও পানি চলে আসে।মাহির মায়ার গাল থেকে হাতটি নামিয়ে দিয়ে একটা চুমু একেঁ দেয়।
মাহিরঃ সরি মায়া।বিশ্বাস করো তোমাকে আমি চর মারতে চায় নি?
মায়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,
মায়াঃ আপনি পারলেন না আমার মাকে সুস্থ করে দিতে?
মাহির মায়ার হাত দুটো ধরে চেয়ারটা টেনে মায়ার সামনে মুখোমুখি হয়ে বসে।তারপর মায়াকে বোঝায়।
মাহিরঃ ডাক্তার হলেই কি সব পারা যায়? কিছুদিন পর তো তুমিও ডাক্তার হবে। একটাবার আমার জায়গাটায় নিজেকে রেখে দেখো, তাহলে বুঝবে আমার পরিস্থিতি টা কি।আমারও যে খুব কস্ট হচ্ছে তোমাকে এই অবস্থায় দেখে।
মায়া মাহিরকে জড়িয়ে ধরে।জোড়ো জোড়ে কাঁদতে থাকে।
মায়াঃ এমনটা কেন হলো বলুন তো? আমার মা কি দোষ করেছিলো যে আজ একটা জীবিত লাশের মতো তাকে এভাবে পরে থাকতে হবে? আমি যে এখন একা হয়ে গেলাম। আমার আর কেউ থাকলো না।
মাহিরঃ কে বলেছে তুমি একা? আমি তো সবসময় ছায়ার মতোন তোমার পাশে আছি।তাহলে এমন কথা কেন বলছো তুমি?
।
রাইসূলের কেবিনে,
।
রাইসূল সিকদারঃ হোয়াট?
ডা. মানহাঃ জ্বী স্যার, আমার কাছে তো প্রমাণও আছে।ওদের অন্তরগ্ন অবস্থার থাকা কিছু ছবি তুলে এনেছি।এই দেখুন স্যার হসপিটালের রুলসের কোনও তোয়াক্কা করে না ডা.মাহির খান। শেষ পর্যন্ত কিনা একটা স্টুডেন্টের সাথেই ছিঃ
কি লজ্জা! কি লজ্জা!
রাইসূল ডা. মানহার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছবিটা দেখে যেই ছবিতে মায়ার গালে মাহির চুমু এঁকে দিচ্ছে। তাছাড়াও মায়াও মাহিরের জোড়িয়ে ধরে রাখা আরও অনেক ছবি তুলে এনেছে ডা.মানহা।
ডা.মানহাঃ আরও আছে স্যার!
ডা.মানহা ফোনের স্ক্রীন টেনে টেনে রাইসূলকে ছবিগুলো দেখায়।
ডা.মানহাঃ স্যার এদের কিন্তু একটা বড় ধরনের শাস্তি দেওয়া উচিৎ।
চলবে…….