প্রতিশোধ পর্ব ৩১+৩২

গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ৩১+৩২
লেখাঃ #Mst_Liza
,
সকলের উপস্থিতির এই শুভক্ষণে মিরা পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নেই।কাউকে যেন মিরা খুঁজছে।

মিরাঃ মা কোথায় রাইসূল?

রাইসূল মিরার ডাকে ছুটে এসে মিরার পাশে বসে।

রাইসূল সিকদারঃ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপু যে তুমি ফিরে এসেছো।

মিরাঃ মা আসে নি ভাই?

রাইসূল চুপ করে থাকে।

মিরাঃ কি হলো বল? মাকে কেন আনলি না? আমারতো মাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।

রাইসূল এবার মিরার কোলে মাথা ঠেকিয়ে কান্না জুড়ে দেয়।মিরা রাইসূলের মাথায় হাত ছুঁইয়ে বলে।

মিরাঃ এই বোকা কাঁদছিস কেন?

রাইসূলে মাথা তুলে মিরাকে জড়িয়ে ধরে হাও মাও করে কাঁদে।

রাইসূল সিকদারঃ এইভাবে আমাদের ছেড়ে কেন চলে গিয়েছিলে আপু? কতো খুঁজেছি তোমাকে যানো? অনেক মিস করেছি তোমাকে আমি।

মিরাঃ আমিও মিস করেছি তোদের।প্রত্যেকটা মুহূর্ত তোদের সবার কথাই শুধু ভেবেছি।

রাইসূল সিকদারঃ তাহলে এতোদিন কেন আসলে না?তুমি যানো? মা মৃত্যুর আগে বলেছিল তোমাকে একবার দেখবে।কিন্তু

কথাটা বলে রাইসূল থেমে যায়।আর কিছু বলতে পারে না।শুধু কাঁদে।

মিরাঃ কিন্তু কি? মৃত্যুর আগে মানে?

রাইসূল মিরার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।

রাইসূল সিকদারঃ মা আর আমাদের মাঝে নেই আপু।অনেকদিন আগেই মা মারা গেছে।

কথাটা শুনে মিরা একটা বড় ধাক্কা খায়।অনেকটা কস্ট হয় মিরার।কস্টে মিরা কাঁদে আর ভাবে, সে এতো অভাগী যে মায়ের মৃত্যুর আগে একটাবার মুখটা পর্যন্ত দেখতে পারলো না।এমন সময় মিরার বুকের ভেতর এক অসহনীয় ব্যাথা শুরু হয়।মিরা খুব জোড়ে কাশতে থাকে।কাশতে কাশতে মুখ থেকে খানিকটা রক্তও বেরিয়ে যায়।শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটা চেপে ধরে রাখে মিরা।যেন নিঃশ্বাসটায় বন্ধ হয়ে আসছে।সোহাগ এসে মিরাকে ধরে।মিরা সোহাগের মুখটার দিকে তাকায়।কিন্তু কিচ্ছু স্পষ্ট দেখতে পায় না।মিরার দু’চোখের সামনে সবকিছু ঝাঁপসা আধার নেমে আসে।

সোহাগ মিরাকে ঝাকাতে শুরু করে।

সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে তোমার?

মিরা দুলে পরে যেতে লাগে।

সোহাগ মির্জাঃ মিরা কথা বলো।কেউ আছো? রাইসূল, মাহির প্লিজ দেখও না! মিরা কেন এমন করছে?

তখনই মিরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সোহাগ মিরার রক্তাক্ত মুখটা ধরে ডাকে, এই মিরা ওঠো! ওঠো বলছি! ওঠো না!

রাইসূল আর মাহির এসে কিছু একটা ভেবে মিরাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গাড়িতে,

সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে মিরার?

রাইসূল আর মাহির চুপ করে আছে।দুজন একে অপরের চোখের দিকে তাকাচ্ছে আর নিরবতা পালন করছে।

সোহাগ মির্জাঃ কি হলো তোমরা তো ডাক্তার। বলো কি হয়েছে আমার মিরার?

মাহিরঃ বাবা হসপিটালে গিয়ে মিরা মায়ের কিছু টেস্ট করতে হবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সোহাগ মির্জাঃ মানে?

সোহাগ রাইসূলের দিকে তাকিয়ে দেখে রাইসূল মাথাটা নিচু করে শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছছে।মায়া তার মায়ের হাতের তলা ডলতে ডলতে মাকে ডাকছে।অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে আছে সোহাগ।

হসপিটালে এসে মিরাকে খাটনিতে শুইয়ে দিয়ে ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।সোহাগ মিরার হাতটি ধরে আছে।একটা নার্স এসে সোহাগের থেকে মিরার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে মিরাকে ভেতরে নিয়ে যায়। সবাই বাইরে বসে আছে।সোহাগ কাঁদছে। আর মনে মনে বলছে,

সোহাগ মির্জাঃ আজ তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার ছিল মিরা।শুধু তুমি নও আমিও যে তোমাকে খুব ভালোবেসে এসেছি।তোমার সব ভুল ধারণাগুলো আজ ভেঙে দেব আমি।একবার সুস্থ হও।তোমাকে বলব আমার মনের ভেতরে জমিয়ে রাখা কথা গুলো। তুমি বলতে না আমায়? আমার এই চোখ, মুখ, ঠোঁট, নাক আর এই বাঁকা স্বভাব। সব কিছুকেই তুমি ভালোবাসো! তাই তো আমি এতোগুলো বছর ধরে এই সবকিছুই তোমার জন্য তুলে রেখেছি।তোমার আমানত হিসেবে।এগুলো যে অন্য কাউকে কক্ষনও ছুঁতে দেয় নি আমি। একটা সময় তোমার সামনে হিংস্র মানুষ হয়ে দাড়াতে চেয়েছিলাম।তোমায় কস্ট দেব বলে।তোমার প্রতি প্রতিশোধ নেব বলে।কিন্তু তার মানে এই নয় তোমার অধিকারটা আমি অন্য কাউকে দিয়ে দেব।তুমি যা দেখতে সব ভুল। ওগুলো তোমাকে দেখাতাম কস্ট দেব বলে।

সোহাগ বসে থেকে কথাগুলো মনে মনে বলতে থাকে।এমন সময় মায়া এসে নিচে বসে সোহাগের হাঁটুতে মাথা রাখে।সোহাগ তাকিয়ে মায়াকে দেখে মায়ার হাত রেখে বলে,

সোহাগ মির্জাঃ আচ্ছা মায়া! সবকিছুই তো ঠিক হয়ে গিয়েছিলো।তাহলে এমনটা কেন হলো?

মায়া মুখ তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বাবার চোখে পানি টলমল করছে।মায়া উঠে বাবার পাশে বসে চোখ থেকে পানি মুছিয়ে দেয়।

মায়াঃ কেঁদো না বাবা।সব ঠিক হয়ে যাবে।ওই আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।সে নিশ্চয় ভালো মানুষের সাথে খারাপ কিছু করতে পারে না।আমার মা তো ভালো তাই না?

সোহাগ মির্জাঃ হুমমমম

সোহাগ মায়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

মাহির বেড়িয়ে আসে ও.টি থেকে।সবাই মাহিরকে দেখে এগিয়ে যায়।মাহির সোহাগ আর মায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।

সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে মাহির? মিরাকে দেখেছো? ও এখন ঠিক আছে তো?

মাহির মাথাটা নিচু করে আছে।

মায়াঃ কি হলো বলুন?

মাহিরঃ মায়া, বাবা যে কথাটা এখন আমি আপনাদের বলব, প্লিজ আপনারা ভেঙে পরবেন না।

সোহাগ মির্জাঃ এভাবে কেন বলছো বাবা? মিরার কি কঠিন কোনও অসুখ হয়েছে?

মাহির মাথাটা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।

মাহিরঃ মিরা মায়ের শরীরে ক্যান্সার ধরা পরেছে।এখন লাস্ট স্টেজে আছে।

চলবে…….

গল্পঃ #প্রতিশোধ
পর্বঃ ৩২
লেখাঃ #Mst_Liza
,
তখন মাহিরের কথা শুনে সোহাগ স্ট্রোক করে।দুইদিন ধরে আই.সি. ইউ তে ছিল।এখন কেবিনে শিফট করা হয়েছে।সোহাগ চোখ মেলতেই পাগলের মতো হয়ে যায়। না কোনো ওষুধ খেতে চায় আর না নিজের যত্ন নিতে চাই।মুখে শুধু একটায় নাম মিরা। মিরার কাছে যাব, মিরাকে দেখব আরও কত কি।মায়া মাহিরকে অনেক অনুরোধ করে সোহাগকে একটাবার মিরার কাছে নিয়ে যাবে বলে।কিন্তু মাহির না করে দেয়। কারণ মাহির যানে এটা করলে সোহাগের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।তাই মায়া কাউকে কিছু না বলে সোহাগকে কথা দেয় রাতে চুপিচুপি মায়ের কাছে নিয়ে যাবে।সোহাগ মায়ার কথায় অনেক খুশি হয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।রাত তিনটার সময় সোহাগ ঘুম থেকে উঠে দেখে মায়া তার মাথার কাছে ঘুমিয়ে আছে।সোহাগ উঠে বসে ফিসফিসিয়ে মায়াকে ডাকে,

সোহাগ মির্জাঃ মায়া! এই মায়া ওঠ! আমাকে তোর মায়ের কাছে নিয়ে যাবি না?

মায়া চোখ মেলে বাবার দিকে তাকায়।বাবার এমন মায়ের প্রতি ব্যাকুলতা দেখে নিজের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে।

সোহাগ মির্জাঃ কি হলো কাঁদছিস কেন? চল তোর মায়ের কাছে!

মায়া মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।বাবাকে রেডি করে চুপিচুপি কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।তারপর বাবাকে নিয়ে মায়ের কাছে যাওয়া ধরে।

সোহাগ মির্জাঃ একি মা ওদিকে কেন যাচ্ছিস?

মায়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,

মায়াঃ প্লিজ বাবা গেলে চলো।নইলে কিন্তু আমি যাব না বলে দিলাম।

সোহাগ আর একটাও কথা বলে না।মুখে আঙুল দিয়ে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকে।তারপর মায়া সোহাগের চোখে কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে মিরার কাছে নিয়ে যায়।

সোহাগ মির্জাঃ আচ্ছা মায়া মিরাকে কি বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে? এতদূরে কেন আনলি আমাকে?

মায়া আস্তে করে সোহাগের চোখ থেকে কালো কাপড়টা খুলে দেয়। সোহাগ চোখমেলেই সবকিছু অন্ধকার দেখতে থাকে।

সোহাগ মির্জাঃ কিছুই তো দেখতে পারছি না।এখানে এতো অন্ধকার কেন?

মায়া ফোনের ফ্লাশলাইট টি জ্বালিয়ে সোহাগের সামনে ধরে।সোহাগ এবার সামনে তাকাতেই একটা বড় সড় ধাক্কা খায়।যেন সোহাগের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।

সোহাগ মির্জাঃ এ আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস তুই?

মায়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,

মায়াঃ মায়ের কাছে।তুমি মাকে দেখতে চাচ্ছিলে না বাবা? ওইতো দেখ মা কতো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।

সোহাগ কেঁদে দেয়।

সোহাগ মির্জাঃ এসব তুই কি বলছিস মায়া?

মায়াঃ সত্যি বলছি বাবা! মা আর নেই।

সোহাগ সেখানে বসে পরে মিরার কবরের সামনে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।আর মিরাকে বলে, এ তুমি আমায় কি শাস্তি দিলে মিরা? তুমি ছাড়া যে এই পৃথিবীতে আমি একা হয়ে গেলাম। আমার যে আর বেঁচে থাকার মানে নেই।আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেলে তুমি।

সোহাগের সাথে মায়াও কেঁদে চলেছে।কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুছে সোহাগকে সামলানোর চেস্টা করে মায়া।

মায়াঃ বাবা ওঠো! চলো! একটু পরে সকাল হয়ে যাবে।

সোহাগ যেতে চায় না।হাওমাও করে কাঁদে।আর আবল তাবল বকে, দেখ না মায়া কত শান্তিতে ঘুমোচ্ছে তোর মা।ও কি দেখতে পাচ্ছে না আমার কস্ট হচ্ছে, আমি কাঁদছি। কেন চলে গেল আমায় ছেড়ে ও? কেন আমি একটাবার কথা বলতে পারলাম না ওর সাথে? পারলাম না ওকে বোঝাতে কতটা ভালোবাসি।আমি জানি আমি কাঁদলে মিরা কস্ট পাবে।কস্ট পেয়ে চলে আসবে আমার কাছে? আমি এখানে ওর জন্য অপেক্ষা করি।ও আসলে ওকে নিয়ে বাড়ি যাব।

৬ বছর পর,

আবিরঃ তারপর কি হলো মায়া?

আবিরের কথায় মায়ার ধ্যান ভাঙে, চোখের পানি মুছে আবিরের দিকে তাকায়।

মায়াঃ বাবাকে আমি সামলিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছিলাম।হসপিটালের সামনে পৌঁছাতেই কোথা থেকে যেন মনা আন্টি এসে বাবার বুকে ছুড়ি বসিয়ে দেয়।বাবার বুকটা রক্তাক্ত ছুড়িতে আঘাত করে পৈচাশিক নিয়মে হাসতে থাকে।আর বলে বাবার প্রতি তার প্রতিশোধ পূর্ণ হয়েছে।
অনেক চেস্টা করেও বাবাকে বাঁচানো যায় নি।মায়ের মতো বাবাও চলে গেছে আমাদের ছেড়ে।

আবিরঃ আর মাহির?

মাহিরের নামটা শুনেই মায়া থমকে যায়।বুকের ভেতরটায় এক চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হতে থাকে মায়ার।এমন সময় মায়ার ছোট্ট মেয়ে মিরা দৌড়ে আসে।মায়ার সামনে হাত পেতে বলে,

মিরাঃ মাম্মাম দাও না দশটা টাকা! আইসক্রিম খাব!

মায়া রাগি দৃস্টিতে মিরার দিকে তাকায়।

মায়াঃ এইমাত্র বাবাই তোমাকে আইসক্রিম খাওয়ালো না?

মিরাঃ হুমমম খাইয়েছে তুমি তো আর খাওয়াও নি।

মায়াঃ কি বললে তুমি?

আবির পকেট থেকে দশ টাকা বের করে মিরার সামনে ধরে।আর মিরা টাকাটা নিয়ে আবিরের গালে একটা পাপ্পি দিয়ে বলে,

মিরাঃ আমার বাবাই কত্ত ভালো।মাম্মাম পঁচা ভ্যাআআ।

মায়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙিয়ে দৌড়ে পালায় মিরা।

মায়াঃ আপনি ওকে টাকা কেন দিলেন? এতো আইসক্রিম খেলে অসুস্থ হয়ে পরবে তো আমার মেয়ে!

আবিরঃ তোমার মেয়ে?

আবিরের মনটা খারাপ হয়ে যায়।

মায়াঃ না মানে।আমি ওইভাবে বলতে চায় নি।

আবিরঃ নাহ ঠিক আছে।সত্যি তো এটাই মিরা তোমার আর মাহিরের সন্তান।

মায়াঃ এভাবে কেন বলছেন? মিরাতো আপনাকে ওর বাবাই বলে জানে।

আবিরঃ জানা আর সত্যিকার বাবা হওয়াটা এক নয়।আমার খুব ভয় করে মায়া মাহির যদি আবার ফিরে আসে তোমার জীবনে?

মায়াঃ আসবে না।

আবিরঃ আমি কখনও তোমার কাছে কিছু জানতে চায় নি আজ চাইছি একটা কথার উত্তর দেবে?

মায়াঃ কি?

আবিরঃ কি এমন ঘটেছিলো যে মাহিরকে ছেড়ে চলে আসলে তুমি? না মানে তুমি যদি বলতে না চাও তাহলে ঠিক আছে।

আবির মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মায়ার প্রতিউত্তর কি হয় তায় শোনার জন্য।মায়া কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবিরকে আবার বলে।

মায়াঃ এতোগুলা বছর আমাকে আর মিরাকে আপনি আশ্রয় দিয়েছেন এটুকু জানার অধিকার আপনার আছে!

আবিরঃ তাহলে বল মায়া?

মায়াঃ আপনার মনে আছে আবির? হাদিচ পার্কে একদিন আমার সাথে আপনি দেখা করতে গিয়েছিলেন! সেদিন আমার আর আপনার কথা বলতে থাকা কিছু ছবি স্নিগ্ধা তুলে নেই।ওইদিন বাবার বাড়িতে পার্টি ছিল। উনি স্নিগ্ধাকে রাতে যখন পার্টিতে যাওয়ার জন্য আনতে যায় তখন স্নিগ্ধা পানির সাথে উনাকে নেশার ওষুধ মিসিয়ে খাইয়ে দেয়।তারপর আপনাকে আর আমাকে নিয়ে উনার মনের মধ্যে ভুল ধারণা ঢুকিয়ে উনার এতাটা কাছে স্নিগ্ধা চলে যায় যে স্নিগ্ধা উনার সন্তানের মা হয়ে যায়।

আমি তো কিছু যানতামই না।স্নিগ্ধা যখন তিন মাসের অন্তঃস্বত্বা তখন আমি উনার আর স্নিগ্ধা বলা কথাগুলো শুনে ফেলি।উনি স্নিগ্ধাকে বলেছিল বাচ্চাটাকে এবোশন করে ফেলতে কিন্তু স্নিগ্ধা চায় নি। সে ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে চেয়েছিল।আর যাই হোক স্নিগ্ধার কাছে বাচ্চাটা নিজের ভালোবাসার চিহ্ন।এমনিতেই স্নিগ্ধার ভাই, ভাবি, মা সবাই জেলে। এই অবস্থায় স্নিগ্ধাকে একা ছাড়া ঠিক হবে না।পরিস্থিতি ভেবে আমি আর চুপ করে থাকতে পারি নি।আমি চাই নি আর কোনও সন্তানের জীবন আমার মতো হোক।তাই আমি স্নিগ্ধাকে আর উনাকে বিয়ে দিয়েছি।নিজের হাতে আমি উনার আর স্নিগ্ধার বাসর ঘড় সাজিয়েছি।উনাকে স্নিগ্ধার ঘড়ে দিয়ে যখন আমি বাইরে আসি তখন মাথা ঘুরে পরে যায়।পরেরদিন হসপিটাল থেকে রিপোর্টগুলো হাতে নিয়ে খুলে দেখি আমিও মা হতে চলেছি। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করব তাই রাস্তায় বেরিয়ে অনমনা হয়ে হাটতে থাকি।হাটতে হাটতে একটা গাড়ীর সামনে চলে আসি।গাড়ীটা ধাক্কা দেওয়ার আগেই আপনি এসে আমাকে বাঁচান।ইচ্ছা ছিল ওইদিনই মরে যাব। কিন্তু আপনি পারি নি।

আবিরঃ এতোকিছু ঘটেছে তোমার জীবনে?

আবির মায়ার দিকে তাকায়।

আবিরঃ কেঁদ না মায়া।তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার যে খুব কস্ট হয়।

মায়া চোখ মুখ মুছে আবার বলতে শুরু করে।

মায়াঃ আমি অনেকবার চেস্টা করেছিলাম বাড়িতে ফিরে যাব।কিন্তু পারি নি।কারণ আমার বাড়িতে উনি স্নিগ্ধার সাথে থাকতো।

আবিরঃ কোন বাড়িতে?

মায়াঃ মির্জা প্যালেস আমার বাবার বাড়ি! উনি ছিল রাইসূল মামার আর রাইশা ফুপ্পির হারিয়ে যাওয়া সন্তান।নেহা নামের এক পুরোনো শত্রু উনাকে ভূমিষ্ট হওয়ার সাথেই উনার পালিত বাবা-মা মুফতি খান ও সাহেদ খানের কাছে তুলে দেয়।সাথে অনেকগুলো টাকা দেয় উনাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবার জন্য।তারা খুব ভালো ছিল।তাই নিজের সন্তানের মতো করে উনাকে বড় করে তুলেছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here