প্রথম প্রেম পর্ব ১০

#প্রথম_প্রেম
১০ম পর্ব।

সন্ধ্যার পর পরই বাসায় কলিং বেল বাজলো, উর্মি দরজা খুলতেই দেখলো নানু এসেছেন। ভয়ে উর্মির হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল, অথচ নানু উর্মির খুব প্রিয় মানুষ। নানু আসলে উর্মি সব সময় খুব খুশি হয়, শুধু আজই ভয় লাগছে খুব।

রুনা খানম মাকে দেখে বললেন আজ আর যেতে দিব না, কাল উর্মির জন্মদিন।
– না, রে। আজ তোদের দেখতে আসলাম। চলে যাবো।
– আম্মা, আমি খুব কষ্ট পাব, তুমি গেলে।
– তোর মেয়ের বয়স ষোল হবে, এখন চোখে চোখে রাখবি।
– হ্যা মা। চা দেই?
– দেয়, মেয়ের মা হয়েছিস জানিস তো?
– কেন আম্মা হঠাৎ এই কথা বলছো?
– আমি ছয়জন মেয়ের মা ছিলাম, দুই চোখের সাথে নাক ও দুই নাক ও খোলা রেখেছি।
– আম্মা, সত্যি করে বল কি হয়েছে?
– কিছুই হয়নি, তুই মা হয়েছিস, তুই সাবধানে থাকবি, এজন্য বলেছি। আমি তোর রুমে যাই, তোর রান্নাঘর খুব গরম।
– আচ্ছা।

উর্মির ভেতর কাঁপছে, কি যে বলছে নানু কে জানে। তবে নানু খুব বুদ্ধিমতী মহিলা।

রুনা খানম চা নিয়ে এসে বললেন আম্মা, উর্মি কি তোমার বাসায় গিয়ে কিছু করেছে?
– না, কি করবে আমার বাসায় গিয়ে!
– তবে..
– সাবধানে থাকতে বলেছি, তোর মেয়ে আগুন সুন্দরী। মেয়ের মায়েদের চালাক হইতে হয়, মেয়ের বন্ধু হইতে হয়, দুনিয়া সমন্ধে জ্ঞান দিতে হয়। এজন্য বলেছি।
– বুঝলাম।
– আমি আজ যাই! ড্রাইভার বসে আছে।
– মা, কাল উর্মির জন্মদিন। আজ যেতে দিব না।
– উর্মি কোথায়? সে তো থাকতে বললো না!

রুনা খানম উর্মিকে ডাকছেন, এই উর্মি এদিকে আয়।

উর্মির ভেতর পুরো ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। সে মুখ খুব শক্ত করে বললো হ্যা আম্মু?
– তুই নাকি তোর নানুকে থাকতে বলিস নি, তাই থাকবেন না। যা, নানুকে বল, কাল তোর জন্মদিন, থাকতে।

উর্মির এতোক্ষণে মনে হয়েছে আজ ১৫ এপ্রিল, কাল তো তার জন্মদিন। অথচ, এবার সে প্রায় ভুলেই গিয়েছে।

উর্মি নানুকে রিকুয়েষ্ট করে রেখে দিল, ঠিক বারোটায় সাইয়ারা কল দিল, এবং উইশ করে বললো, তখন বাসার সবাই বসার ঘরে বসে আছে, কথা বলছে।
সাইয়ারা বললো তোর প্রিয়জন তোকে উইশ করবে দেখে,ওয়েট করে আছে।
– না, এখন না। আজ নানু এসেছেন, থাকবেন তো!
– ওহ, নানুর ফোনে কল দিবে?
-আরে না!
– এস.এম.এস?
– হ্যা। আমি দেওয়ার পর।
– কালকে ট্রিট দিবি।
– আচ্ছা।

নানু ঘুমানোর পর, উর্মি এস.এম,এস দিল, আজ কথা হবেনা, তুমি চাইলে একটা এস.এম.এস করতে পারবে। খুব মিস করছি! কবে, তুমি আমি এক হয়ে কেক কাটবো শাওন? কবে?
খুউব ভালবাসি।

শাওনের কখনো জন্মদিন পালন হয়নি, একবার ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা কেক কেটেছিল। তার জন্মদিন ৬ নভেম্বর এটাও কি রিয়েল কি না জানেনা! তবে আজ তার খুব আনন্দ লাগছে৷ কারণ আজ তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টির জন্মদিন। কিন্তু ভাগ্য এতো খারাপ যে, বারো টা এক মিনিটে ও কল দিতে পারলো না।

শাওন সুন্দর এস.এম এস দিল।

আমার উর্মিমালা, আমার ভালবাসা, জন্মদিনের শুভক্ষণে, পূরণ হোক তোমার সকল আশা। আমি আছি, আমি থাকবো, আজীবন ভালবাসবো।
শুভ জন্মদিন আমার প্রিয়তমা।

উর্মি এই লিখা ১০০ বার পড়লো। কত মধুর লাগছে পড়তে! আহা! কিন্তু শেষমেশ সে ডিলিট করে দিতেই হলো, কারণ এটা নানুর ফোন।

রুনা খানম একটা কেক অর্ডার করলেন, বাসায় বিরিয়ানি রান্না করে, কোয়ার্টারের সকল কে দাওয়াত করলেন। মুন্নি ও দুই ছেলে নিয়ে জন্মদিনে এসেছেন।

উর্মির মুন্নি কে দেখে মেজাজ ধরেছিল, পরে আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়েছে।

জন্মদিনের রাতে, রুনা খানম উর্মিকে ডেকে বললেন,
উর্মি আজ তোর ১৬ বছর হলো, আর ১৬ বছর বয়েসে মা-মেয়ে বন্ধু হয়ে যায়। আর আরেকটা কথা বলি, সাইয়ারা কে বলবি পরীক্ষার আগে যেন এতো কল না দেয়, তোর বাবার মেয়েটিকে পছন্দ নয়, কাল নাকি একটা ছেলের সাথে রিকশায় দেখেছে।
– ও অনেক ভালো।
– আমি খারাপ বলিনি। তবুও বলবি, মাঝে মাঝে কল দিতে, প্রতিদিন যেন কল না দেয়। আর ভালো করে পরীক্ষা দেয় মা, আমার কত সপ্ন তোকে নিয়ে!
– হুম।
– শাওন কে কল দেওয়ার চেষ্টা করিস?

উর্মির যেন, হঠাৎ নাম টা শোন রক্ত হিম হয়ে গেল।
– না।
– এসব ভুল মানুষের চিন্তা মাথায় আনবিনা, ভার্সিটি তে গেলে দেখবি, কত রাজপুত্র দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
– হুম।

উর্মির আজকের মতো এতো প্রিয় একটা দিনে অপ্রিয় কথা শুনে মন খুব খারাপ হয়ে গেল।

নানু সেদিন রাতে থাকায়, উর্মি এক এস.এম.এস করে সব জানিয়ে দিল, যে আর রেগুলার কথা হবেনা।

পরের দিন উর্মি সকালে বাসায় বসে পড়ছে, আজ থেকে ক্লাস সাস্পেন্ড হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা সামনে এজন্য।

উর্মি দেখলো সেই বুয়া এসেছে, বাসায়। যাকে শাওন চিনে, এবং আগে একবার চিঠি দিয়েছিল।

রুনা খানমের সাথে এসে গল্প করছে সে, উর্মি চিন্তা করছে, সে কি তার কাছে কোন চিরকুট নিয়ে এসেছে। নাকি এমনি ঘুরতে এসেছে।

এক ফাঁকে উর্মির রুমে এসে তার বইয়ের সামনে কাগজ রেখে বললো, আপা শাওন ভাই সক্কালে এই কাগজ দিয়া গ্যাছে, আমার বাসায়। আমি অহন যাই আফনার নানি যানি কেমন কইরা থাকায়, ভয় লাগে।

উর্মি সাথে সাথেই কাগজ তালা দিয়ে রাখলো।
যখন নানু গোসলে গেলেন, তখন উর্মি চিঠি খুললো। ছোট্ট চিঠি।

উর্মি,
তুমি এস.এস.সি পরীক্ষা মনোযোগ দিয়ে দিবে। যেন খুব খুব ভালো রেজাল্ট হয়, যেন সম্পর্কের কথা বলে৷ কেউ কটু কথা না বলে। সপ্তাহে এক দিন আমরা দুই মিনিট কথা বলবো। বেশি কথা বলে সমস্যা করে লাভ নাই, আমি তোমার আছি৷ তোমারই থাকবো।
ইতি
তোমার শাওন।

আজ উর্মির ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষা। এই দুই মাসে মাত্র ৮ বার কথা হয়েছে, মাত্র দুই মিনিট করে। এরকম করে কি প্রেম হয়? দেখা নাই, কথা নাই, এ কেমন প্রেম?

আজ উর্মি পরীক্ষার হলে বাবার সাথে গাড়ী দিয়ে যাওয়ার সময় তোফায়েল সাহেব বললেন, পানির বোতল কোথায় উর্মি?
– বাসায়।
– পানি লাগবে তো, তিন ঘন্টা পরীক্ষা দিবে।এই ড্রাইবার সাহেব গাড়ী রাখেন, পানি কিনবো।
-স্যার আমি আনি?
– না।

ঠিক তখনই উর্মি দেখলো শাওন রিকশা করে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, সাথে শ্যামলা করে একটা মেয়ে বসে আছে। উর্মির শাওন কে দেখে খুব আনন্দ লাগছিল, কিন্তু মেয়েটিকে দেখে ভালো লাগেনি। মেয়েটি কি শাওনের বোন নাকি? অন্য কেউ? নাকি তার নতুন প্রেমিকা। আর শাওন কেনই বা তার জন্য অপেক্ষা করবে, তার সাথে কথা বলার সুযোগ নাই, দেখা হওয়ার সুযোগ নাই, তাই হয়তো প্রেমিকা নিয়ে ঘুরছে। উর্মির চোখে পানি চলে আসছে! তবে কি শাওন আর তাকে ভালবাসেনা। নাকি উনি তার আত্নীয়!

তবে, সে ভালো করেই পরীক্ষা দিবে শত মন খারাপ নিয়ে কারণ শাওন বলেছে সে আছে। সত্যি কি আছে? কতশত প্রশ্ন মাথায় নিয়ে পরীক্ষার হলে যাচ্ছে উর্মি…..

চলবে…

আন্নামা চৌধুরী।
২৯/০৭/২০২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here