প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব -০৪

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৪)

আঁখি আসতে নিলে হঠাৎ তার সামনে আদ্রিশ প্রকট হয়,তাকে দেখে ঘৃ**ণা**য় শরীর রিরি করে উঠল আঁখির, পাশ কেটে যেতে নিলে হাত পা*ক**ড়াও করল আদ্রিশ।

″এতটা পর হয়ে গেলাম যে আজ দেখেও না দেখার ভান করছ!″

″পর তো তুমি করে দিয়েছ আমি তো শুধু তা মেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছি মাত্র।″

″কেন এমনটা করছ আঁখি,কারণ বশত আরেকটা বিয়েই তো করেছি,দিন রাত তো অন্য না*রীতে মেতে থাকি নি,প্রবিত্রভাবে একজনকে ঘরে এনেছি যে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুখটা এনে দিতে পারবে।ওকে মেনে নিয়েও তো জীবনে এগুতে পারি আমরা।এমনটা তো নয় যে কেউ কখনও দু’টা বিয়ে করে নি আর কারো দুই স্ত্রী কখনও একসাথে হয়ে থাকে নি।″

আদ্রিশের বলা কথাগুলো শুনে আঁখি হেসে উঠল বেশ শব্দ করে,অতঃপর জবাব দিলো।

″তুমি কোন যুগে আছো আদ্রিশ,বর্তমানে নারীদের যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হলেও তোমাদের মত কিছু পুরুষের জন্যই
সমাজটা পুরুষ শাসিতই থেকে গেল।আমার তো এখন ডাউট হচ্ছে তুমি আদোও শিক্ষিত কি না,বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষিতের হার নেই বললেই চলে আর তুমিই জ্ব**ল**ন্ত প্রমাণ কথাটার।হাত ছাড়ো, আমায় আজ অনেক কিছুই করতে হবে।″

″দেখ আঁখি আমি শুধু বিয়েটা বাচ্চার জন্য করেছি,তোমার অবস্থান আমার জীবনে কখনও কম হবে না,প্লিজ তুমি এমনটা করো না,আমি রিদিকাকে ওর কক্ষে পাঠিয়ে দিয়েছি, আমার কক্ষে শুধু তোমার অধিকার,আমরা দুজন ওখানে থাকব।″

″ইশ তুমি আমায় নিয়ে কত ভাব,কত বড় পাওনা পাইয়ে দিলে তুমি আমায় আমি তোমার ঋণ কিভাবে শোধব?″তাচ্ছিল্য করে বলল আঁখি কথাগুলো।

″এমনভাবে বলছ কেন তুমি আঁখি?

″তো আর কিভাবে বলব,আর ইউ সিরিয়াস আদ্রিশ,তুমি এখনও আশা করছ আমি তোমার সাথে থাকব।ছিঃ শ্যা**ম ওন ইউ।তোমার সাথে কথা বলারও কোনো আগ্রহ নেই আমার।

টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে আঁখি চলে যেতে নিলে জো*র করে আদ্রিশ তাকে পাজকোলে নিয়ে নিল।

″কি করছ আদ্রিশ ছাড়ো আমায়!ভালো হবে না বলে দিলাম।″

″ছাড়ব না তোমায় আমি যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে।তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে, আমার কথা শুনতেই হবে।″

″আমি বাধ্য নই তোমার কাছে, ছাড়ো আমায়।″

আদ্রিশ আঁখির কথায় কান না দিয়ে ওকে নিয়ে যেতে শুরু করল নিজের কক্ষের দিকে,এদিকে আঁখি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছে,ড্রয়িংরুমে তখন বসে ছিল রিদিকা,সাথে সেখানে শুভ্রতাও ছিল,কাজের লোক সহিত ওরা দু’জন সবাই আদ্রিশের এমন কান্ড দেখছে,এদিকে আদ্রিশের চোখে যেন কাউকেই লাগছে না তার মাথায় এখন আঁখি ব্যতীত কোনো ভাবনাই নেই।তবে মুহুর্তটা মেনে নিতে পারছে না রিদিকা একদম,কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়াও করছে না,শুধু হাতের মুঠো শক্ত করে চোখের নো*না*জ*ল ত্যাগ করতে শুরু করেছে,বুকের ভিতরখানা বড্ড ক*ম্প*ন করছে রিদিকার,নিজের সদ্য বিবাহিত স্বামী অন্য নারীর পিছন পা**গ*ল হয়ে পরে আছে মানতে পারছে না রিদিকার ব্যাকুল মন,আদ্রিশ কক্ষের ভিতর ঢুকে দরজাটা সজোরে বন্ধ করল তার শব্দে পুরো শরীরে একটা ক*ম্প*ন দিয়ে উঠল রিদিকার,তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টায়ই থাকল সে।শুভ্রতা তাচ্ছিল্য করে বলল।

বি*না*শ*কা*লে বুদ্ধি বিকৃত হয় কিছু লোককে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।অতঃপর শুভ্রতা স্থান ত্যাগ করে।রিদিকা বুঝতে পারে শুভ্রতা ওকে ইংগিত করে কথাটা বলেছে, তবে তারও কোনো জবাব দেওয়া জরুরি মনে করল না।

দরজা লাগিয়ে আঁখিকে নিজের কথায় আনার সমস্ত প্রচেষ্ঠা করছে আদ্রিশ।

″আঁখি তুমি জানো আমি তোমায় কত ভালোবাসি।তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিলে আমি থাকতে পারব না।আর আমি তোমাকে আমায় পর করতেও দিব না,তোমাকে এখানেই থাকতে হবে জীবনভর আমার সাথে,আমাকে মেনে নিয়ে।″

″আঁখি আর যাই হোক শরীরের টা**)নে অন্যত্র গমণ করা পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারে না।″

″বলেছি তো বিয়েটা আমি বাচ্চার জন্য করেছি″

″এনাফ আদ্রিশ, আমাকে তুমি বোকা কবে থেকে ভাবতে শুরু করলে,ভুলে যেও না আমি একজন ডাক্তার,আজকাল নিজের বাচ্চা নেওয়ার হাজারটা পথ খোলা আছে, চাইলে আমরা সহজেই আমাদের বাচ্চা নিতে পারতাম কিন্তু না তোমার তো অন্য নারীর দেহে মো**হ ছিল।আচ্ছা তোমাকে কি কোনো ডাক্তার বলেছিল আমি মা হতে পারব না?কোনো টেস্ট করিয়েছিলে,ওহ মনে পরেছে আমরা তো টেস্ট করিয়েছিলাম তোমার বিয়ের আগেরদিনই,আর তুমি বাবা হবার জন্য এতটাই এক্সাইটেড ছিলে যে টেস্ট রিপোর্টেরও অপেক্ষা করো নি,হঠাৎ বিয়ে করে বউ নিয়ে উপস্থিত হলে,আর এখন বলছ বাচ্চার জন্য বিয়ে করেছ।এমনও তো হতে পারত সমস্যা আমার নয় তোমার,নয়ত কারোই কোনো সমস্যা নেই ঠিক সময়ে এমনিতেই বাচ্চা হত,কিন্তু তোমার তো তস সইছিল না নতুন না**রী**তে মত্ত হওয়ার।″

″আঁখি….″

″ব*লিও*ম ডাউন আদ্রিশ,আমি কোনো অ*ব*লা বউ না যে তোমার ধ*ম*কে ভ*য় পেয়ে চুপসে যাব।জানো সেদিন যখন ড.আদৃতকে হারিয়ে গিয়েছিলাম আর যখন তুমি আমায় সামলেছিলে তখন ভেবেছিলাম ভালোই হয়েছে ড.আদৃত চলে গেছেন,না হলে তোমার মত পার্ফেক্ট কেউ কিভাবে পেতাম,যে আমায় এত ভালোবাসে,উনি আমার ভালোবাসার মর্ম দেন নি বাচ্চামো ভেবে হয়ত আর তুমি আমায় পা*গ*লের মত ভালোবেসেছ।কত গর্ব করতাম তোমাকে নিয়ে আর আজ সেই ভালোবাসার কথা ভাবতেও লজ্জা হয় আমার,ছিঃ কেন আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম,এটা তো জরুরি ছিল না যে একজনকে ভুলতে অন্যজনের সা*হা*রা নিতে হবে।যে দিনটার কথা ভেবে একসময় মনে তৃপ্তি পেতাম সেই দিনটার কথা ভেবে এখন শুধু ঘৃ**ণা হয়।কেন সেদিন ড.আদৃতের জায়গায় তোমাকে কল্পনা করতে শুরু করেছিলাম,কেন সেদিন উনার মত একজন আদর্শ ব্যক্তির পরিবর্তে তোমার মত একটা কা**পু*রুষ কপালে জুটেছিল।″

″আঁখি….″

আঁখির মুখে আদৃতের কথা শুনে আদ্রিশের মাথায় র**ক্ত চরে গেল মুহুর্তে, আঁখিকে যে সে কখনোই অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারে না আর আদৃতের সাথে কোনো মুল্যেই না,তাই অতি রা**গে আঁখির উপর হাত উঠাতে গিয়েও থেমে যায় আদ্রিশ।

র**ক্তচ**ক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে নির্ভয়ে আঁখি আদ্রিশের দিকে।

কি হলো আদ্রিশ থেমে গেলে কেন?উঠাও হাত,দিয়ে দাও কাপুরুষতার প্রমাণ।

আদ্রিশ হাত নামিয়ে চোখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল,তবে রা**গে এখনও ফুঁ*স*ছে।

তোমার সাথে আর আমার কোনো কথা নেই,কথা বলতে হলে আর আদালতে কথা বলতে এসো,ডিভোর্স পেপার রেডি কালকেই মুক্ত করব তোমায়।

কথাটা বলে আঁখি যেতে গেলে আবারও তার হাত পা*ক*ড়াও করে আদ্রিশ,তবে এবার বেশ নরমভাবে ধরল আর মৃদ্যু স্বরেই বলল।

আমাকে প্লিজ ছেড়ে যেও না,একটা সুযোগ দাও অন্তত।

এবার আর আঁখি নিজেকে সামলাতে পারল না,পিছন ফিরেই আদ্রিশের গাল বরাবর একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিল।থা*প্প*ড় টা এত জোরালো ছিল যে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের কানে স্পষ্ট গেল,ঘরের সকল লোক তাদের ঝগড়ার আওয়াজে ততক্ষণে কক্ষের বাহিরে উপস্থিত হয়েছিলেন,মা রোহানা মজুমদার একপাশে দাঁড়িয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে চোখের জল ফেলছেন,শুভ্রতা তার তিন বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রিদিকা একপাশে দাঁড়িয়ে শুধু হাতে হাত মলছে,কাজের লোকগুলো ও সেখানে দাঁড়িয়ে।এদিকে আঁখি প্র*খ*ড় এক জবাব দিল।

আমাকে আমার আসল রুপে আসতে বাধ্য করো না আদ্রিশ,স্বামী হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেছি তোমায় আমি সবসময় আর ডিভোর্সের আগ অব্দি তা রক্ষা করার সুযোগটা দিবে আশা করি।নয়ত তোমার ভালো জ্ঞান আছে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে।তোমার মত ১০ টা আদ্রিশ একা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি আমি ভুলে যেও না কথাটা।

অতঃপর দরজা খোলে ছাঁদের পানে ছুটতে শুরু করল আঁখি,আদ্রিশ আবারও ছুটে গেল তার পিছন,আঁখি ছাঁদের দরজা লাগিয়ে নিল তার ভিতর থেকে,বাহির থেক বেশ কয়েকবার লা**থি দিল সে দরজায় আদ্রিশ তারপর ওটা ভাঙতে না পেরে চি**ৎ*কা*র করে বলতে লাগল।

তোমাকে আমি কখনোই ছাড়ব না আঁখি,তোমাকে মৃত্যুর আগ অব্দি আমার সাথেই থাকতে হবে,এখন আমি বিয়ে ১ টা করি বা ১০০ টা,তুমি আমার ছিলে আর আমারই থাকবে দেখে নিও।

তারপর সেখান থেকে সোজা বাড়ির বাইরের দিকে বেড়িয়ে গেল আদ্রিশ।রিদিকা শুধু তাকিয়ে দেখল ওদের সমস্ত কার্যকলাপ।

আঁখি ছাঁদের দরজার গায়ে লুটে পরে চিৎকার করে কাঁদছে।

কেন আল্লাহ, কেন এমন লোককে আমার জীবনে আনলেন?যদি আমাকে এতই ভালোবাসত তবে অন্যের মোহে পরল কিভাবে,সত্য ভালোবাসা তো এমন হয় না।আমার কিশোরী মনের প্রথম প্রেম ছিলেন ড.আদৃত,তাকে তো খুব করে চেয়েছিলাম কিন্তু পেলাম না তার বদলে আপনি আমায় আদ্রিশ দিলেন,ড.আদৃতকে ভোলতে গিয়ে তাকে মন দিলাম বা**ধ্য হয়ে আর আজ যখন ওর ভালোবাসায় পা**গল হয়ে ওকে হারানোর ভ*য়ে সব ছাড়লাম তখন কেন ও এমনটা করল?কই ও জীবনে আসার পর তো আমি কখনো কারো দিকে সেভাবে তাকাই নি,কারো প্রতি আকৃষ্ট হই নি,এমনকি ড.আদৃতের কথাও আর দ্বিতীয় বার ভাবি নি,তবে ও কেন এমনটা করল?শরীরের টান কি ভালোবাসার থেকেও বড় হয়।কেন এমন হল রাব্বুল আলআমিন?কেন?কি এমন পাপ করেছিলাম যে তার সাজা আজ এভাবে পেতে হল আমায়।কিভাবে সে আশা করতে পারে আমার কাছ থেকে যে তার পাশে আমি অন্য নারীকে মেনে নিই।যেখানে অন্য পুরুষের অল্প কথাও আমার মুখে কখনই সে মেনে নেয় না।কেন?আজ নারী হয়ে জন্ম নেওয়ায় কি আমার এ হাল?নারী রূপে জন্ম নেওয়া কি ভুল?

চলবে……

আরোহী নুর…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here