প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব -০৫

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৫)

ম**দ্য পান করে বেশ রাতে ফিরেছে আদ্রিশ,নে**শা এত চড়েছে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছে না সে।হেলেডুলে কোনোরুপ হেঁটে নিজের কক্ষ অব্দি পৌঁছাল,অগোছালো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে রিদিকা,উপুড় হয়ে শুয়ে আছে শাড়ি অনেকটা বিচ্যুত হয়ে পিঠের নিচের অংশটা বেশ ভেসে আছে,সাথে পেটের অনেকটা অংশও বেড়িয়ে আছে,হুট করে কক্ষে ঢুকেতেই সেই নে*শা*ক্ত পুরুষের চোখ পরল তার উপর যা তাকে আরও নে**শা**ক্ত করে তুলল,কিছু আর না বলে সোজা গিয়ে রিদিকার পি*ঠ থেকে পে*ট অব্দি হাত বুলিয়ে নিয়ে গেল,ওপর হাতে রিদিকার কাঁধের উপর থেকে চুল সরিয়ে তার ঘা*ড়ে নাক ডুবিয়ে দিল।স্বামীর হঠাৎ এমন ছোঁয়া তাকে যেন মুহুর্তেই প্রায় উ*ন্মা*দ করে তুলল,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন খুশিতে নেচে উঠল,দিনশেষে যে তার স্বামী তার কাছেই ফিরে এসেছে।অদ্ভুত শিহরণ খেলা করছে তার সমস্ত শরীর জোরে,এদিকে নে**শা**ক্ত স্বরে বলছে আদ্রিশ।

আমি জানতাম আমার ফুলপরি দিনশেষে আমার কাছে ফিরবেই,সে যে শুধুই আমার,কে ভালোবাসবে বলো তোমাকে আমার মত,জীবনে যেই এসে যাক তোমার অবস্থান সবসময় আলাদাই থাকবে আমার কাছে।আজ তোমাকে এভাবে ভালোবাসবো যে কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায়ও আসবে না,আ*দ*রে ভরিয়ে দিব তোমায় আমি আজ।

কথাগুলো কর্ণপাত হতেই শরীর জ্ব**লে উঠল রিদিকার,অতি ক্ষো**ভে খামছে ধরল বিছানার চাদর,তবুও কিছু বলছে না,স্বামীর এই আদরের ভাগটা ছাড়তে চায় না রিদিকা,ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে তাকে নিজের দিকে ফেরালো আদ্রিশ,চেহারায় চোখ যেতেই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেল সে,চট করে উঠে বসল রিদিকার উপর থেকে,ঝটফট জেরা করল তাকে।

″তুমি এখানে কি করছ!আঁখি কোথায়?″

″আঁখি এ রুমে আর আসেও নি,ছাঁদ থেকে সোজা মায়ের রুমে ঢুকেছিল,ওখানেই আছে।″

মৃদ্যু স্বরে উত্তর দিলো রিদিকা আর কোনো কথা বাড়াল না আদ্রিশ উঠে গেল মায়ের রুমের দিকে,দরজাতে ধা*ক্কা*নো শুরু করল,গ**র্জে গ**র্জে বলছে।

দরজা খুলো আঁখি,দরজা খুলো বলছি।

আঁখি তার শাশুড়ির কোলে মাথা গুঁজে শুয়ে আছে,শুভ্রতা তার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে,আঁখি মানা করেছে দরজা না খোলে দিতে তাই শুভ্রতা আর দরজা খোলে দেয় নি।

এদিকে আদ্রিশ চিৎ**কা**র করে বলছে,কত লুকাবে আঁখি আমার থেকে?কত দূরে থাকবে?ঘুরে ফিরে তোমায় আমার কাছেই আসতে হবে,দেখে নিও।

তখন সেখানে আগমণ ঘটল আদিলের,আদ্রিশের বড় ভাই,বেশ গম্ভীরতা নিয়েই বলল আদিল।

আদ্রিশ তোর কি হি*তা*হিত জ্ঞান হ্রাস পেয়েছে?পা*গ*ল হয়ে আঁখিকে বিয়ে করলি।খেয়াল আছে তোর– ওকে জীবনে পেতে কত সাধনা করতে হয়েছে তোকে,তোর ওর জন্য ছটফট দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম আল্লাহ যেন তোকে তোর সুখ আঁখিকে পাইয়ে দেন,অবশেষে তুই আঁখিকে পেলি।আমার মনে হল পৃথিবীতে আর একটা সত্য ভালোবাসার জয় হল,কিন্তু কী করলি তুই রিদিকার মোহে পরে আঁখিকে কষ্ট দিলি,আর এখন আবার ওর শান্তিটাও নষ্ট করছিস,নতুন একজনকে যখন জীবনে জরিয়েছিস তখন পুরাতন টানে পরে থেকে কি লাভ,আঁখিকে ওর মত থাকতে দে।

দেখো ভাইয়া,এটা আমার জীবন, আঁখিও আমার স্ত্রী আর রিদিকাও,আমার যা ইচ্ছে তাই করব, আমি আমার জীবনে কারও হস্তক্ষেপ সহ্য করব না।কথাটা মনে রেখ।

কথাগুলো বলে আদ্রিশ আবার রুমের দিকে হাঁটা ধরল।

নির্বাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল আদিল,বড় ভাই হলেও আদ্রিশকে কিছু বলার বা কথা শুনানোর কোনো অধিকার নেই তার।বেকারত্বের অ**ভি*শা**প যে এমন-ই ভ*য়া*বহ যা বহণ করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয় না।যার খেয়ে পরে আছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তাকে কেমনেই বা শা*সা*বে আদিল,ভাবলেও যেন লজ্জা লাগে।

শাশুড়ির কোলে মাথা রেখে ঠোঁট কামড়ে কান্না করছে আঁখি,শাশুড়ি আর জা দু’জনেরই চোখ খালি নেই,জল যে তাদেরও চোখ আজ ছাড়বে না হয়ত পণ নিয়েছে।আঁখি নামক মেয়েটা যে কখনোই তাদের জা বা শাশুড়ি মনে করে নি, দিয়েছে মা ও বোনের দরজা,তাই আজ তার এই দূ*র্দি*নে আপন সে সম্পর্কের টানে জল ছাড়ছে না তাদেরও চোখ।শাশুড়ি এবার কাঁদতে কাঁদতে আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

তোকে চুপ করানোর ক্ষমটাটুকুও আমি রাখি না রে মা,স্বামীর দেওয়া ক্ষ**ত**টা কতটুকু পী**ড়া দেয় তা শুধু একটা স্ত্রীই জানে,জানিস যেদিন একটা মহিলা দ্বারে একটা ৪ মাসের ছেলে সন্তান নিয়ে এসে বলল ওটা আমার স্বামীর অংশ আর সে না কি আমার স্বামীর অ*বৈ*ধ সম্পর্কের সাথি তখন বুকটা কতটুকু পরিমাণ কেঁপে উঠেছিল তা শুধু আমি জানি,তারপর সেদিনই তোর শ্বশুর মেয়েটিকে বিয়ে করেন,আমার তো কান্না ছাড়া কোনো উপায় ছিল না,আমার শ্বাশুড়ি মা সেদিন আমায় বলেছিলেন,ছেলে মানুষ না কি এমনই হয়,১০০ জায়গায় মুখ দেওয়া না কি তাদের স্বভাব, তাতে ঘর ছেড়ে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় না কি মেয়েদেরই অসম্মান, কোথাও জায়গা হয় না,মা বাবারও তেমন সম্পত্তি ছিল না তাই আর বাপের বাড়িও যাই নি,পরে ছিলাম এখানে শত জ্ব**লা মেনে নিয়েও।ওই মেয়েটা প্রায়ই নিজে থেকে ঝ*গ*ড়া করত আমার সাথে,তারপর উনার কাছে আমার নামে উল্টাপাল্টা বলত আর উনি আমায় অনেক মা*রতে*ন,তাও পরে থাকতাম দুইটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে, কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমার স*তী*নের জ**রা**য়ু তে ক্যা*ন্সার ধরা পরছে,শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে না আর,এতে ওদের মধ্যে প্রায়ই ঝ*গ*ড়া হত,তারপর থেকে উনি আর ওর পাশেও যেতেন না আমার সাথেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়,তাছাড়া বাইরেও উনার অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল জানতাম আমি,সবকিছুর পরও চুপ করে থাকতাম,হঠাৎ একদিন আমার স*তী*ন ইশিতা মা*রা যায়,ওর মৃত্যুর ৬ দিন আগে ওর ছেলেটা মা*রা যায় পানিতে ডুবে,মৃ*ত্যু*র আগে আমি ইশিতার অনেক পরিচর্যা করি,কিন্তু উনি ওর মুখ দেখতেও চাইতেন না তখন,ইশিতা ম**রা**র ৬ মাস পর উনার একটা এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয় যাতে তিনি প্যারালাইস্ড হয়ে যান,সব কিছুতেই অক্ষম, শুধু কথা বলতে পারতেন,তারপরও আমি উনাকে কখনও অস*ম্মা*ন করি নি আর না তো উনার পরিচর্যায় কোনো কমতি রেখেছি,অবশেষে উনিও একদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন,মৃ*ত্যু*র আগ মুহুর্তে ক্ষমা টা চেয়ে নেন আমার কাছ থেকে।হয়ত তুই ভাবছিস ঘটনাটা আমি তোকে কেন বললাম!হয়ত তোকে বোঝাতে চাইছি যে–যাই হোক স্বামীকে মেনে নেওয়া উত্তম,এটাই মেয়েদের কর্ম, আমিও আমার শাশুড়ির মত তোকে সব মেনে নেওয়া বাণী শোনাবো, তবে সেটা ভুল ভাবছিস মা,আমার শাশুড়ি নিজেই আমার শ্বশুরের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন,যে অন্যের কেঁড়ে নেয় সে কি জানে হারিয়ে যাওয়ার মর্ম,উনি মারা গেছেন তাই উনার কোনো দূর্নাম করতে চাই না আমি আর,শুধু বলব তুই চলে যা মা,নিজের জীবন আবার গুছিয়ে নে সুন্দর করে,কে**স কর ওই প**শু**টার নামে,এমন হাল কর ওর যাতে কখনও কোনো স্বামী স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর দিকে চোখ তোলার কথা ভাবতেও ভ**য় পায়।

আঁখি এবার চোখের জল মুছে উঠে বসে বলল।

মা গো,আমি ধন্য যে শ্বাশুড়ি রূপে তোমার মত এক জননী পেয়েছি,আমি আদ্রিশের জন্য মা–বাবা, ভাই, পরিবার সব ছেড়ে এসেছি,তবে আদ্রিশের মনে সেই আসল জায়গাটা করতে না পারলেও পরিবার রূপে তোমাদের পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট,আমি সফল।আর কথা রইল আদ্রিশের উপর কে**স করার,মা গো সারাজীবন তো ক**ষ্ট*ই করেছ,এই বয়সে তোমার কোনো কষ্ট হোক আমি চাই না,আল্লাহ সব দেখে নিবেন।

তাই বলে তুই ওই প*শু*কে ছাড় দিবি।

কে বলেছে ছাড় দিব মা,সুযোগে পেলে নিশ্চয়ই শো*ধ*টা নিব।তবে কে**স করে তোমাদের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলব না আমি,আদ্রিশ যে এই সংসারের খুঁটি সেটা ভুললে তো চলবে না,আর ও উকিল বিষয়টা মিডিয়াতে গেলে ওর আমার দু’জনেরই নাম খারাপ হবে সাথে আমাদের পরিবারদেরও তাই সবকিছু মাথায় নিয়ে চলতে হবে আমায়।তাছাড়া আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না জানোই তো।

তোমার মত মেয়েকে আদ্রিশ হাতে পেয়েও হারালো,ওর জন্য তো কোনো ধরনের প্রাশ্চিত্যও কম হবে না তুমি দেখে নিও।

আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে কথাটা বলল শুভ্রতা।

আদ্রিশ বিছানায় চিৎ হয়ে পরে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করছে।

তোমাকে আমি ছাড়ব না আঁখি,তোমাকে পেতে আমি কি কি করেছি তা শুধু আমি জানি,আমি তোমাকে হারাতে পারি না।তুমি আমারই থাকবে।

হঠাৎ কপালে কারো আলতো স্পর্শে চুপ করে গেল আদ্রিশ,চোখ খুলে দেখতে পেলো রিদিকা।স্বাভাবিক স্বরেই বলল।

″তুমি এখানে কি করছ?বলি নি তোমার কক্ষে যেতে?″

″আঁখি তো আর এখানে আসছে না,তাই আমার এখানে থাকতে ও তো সমস্যা নেই।″

″এটা আঁখির কক্ষ,ও এখানে থাকুক না থাকুক এখানে অধিকার ওরই থাকবে।″

″আর আমার অধিকারের কী?″

″ভুলে যেও না রিদিকা তুমি দ্বিতীয় জন আমার জীবনে,যতই প্রাধান্য তুমি পাও না কেন,তোমার অবস্থান আর অধিকার আঁখির পরই থাকবে।″

রিদিকার অভিমান আর অধিকার নিয়ে বলা কথাটার উত্তরে আদ্রিশ এভাবে ক**ঢ়া জবাব দিবে আশা করে নি সে,তাই এবার বেশ শব্দ করেই কেঁদে দিলো,আদ্রিশ অল্প বিরক্তি নিয়ে বলল।

দেখো রিদিকা এখানে কেঁদে কোনো ফায়দা নেই,আমি তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে ছাড়ব না,আমার জীবনে তোমারও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে,প্লিজ কান্না করো না,আমি ড্রিং**ক করেছি,নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারছি না,তোমার সাথে দূ*র্ব্য*ব*হা*র করতে চাই না,প্লিজ চলে যাও আমার প্রয়োজন মনে হলে নিজে তোমার কাছে আসব।এখন চলে যাও তুমি।

রিদিকা আর কিছু না বলেই সেখান থেকে ছুটে আসল।আদ্রিশ আবার চোখ বন্ধ করে বালিশে শায়িত হলো।

ফজরের নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করে নিল আঁখি,শ্বাশুড়ির কক্ষেই রাত্রী যাপন করল আজ সে,আজ আর কান্না করল না,পুরাতন গ্লানি মুছে দেওয়ার দিন আজ,আজ সে দূর্বল পরলে চলবে না।

সকাল ১০ টা হতে না হতেই ডিভোর্স পেপার হাতে চলে আসলো আঁখির,চারিদিকেই আঁখির বেশ নাম ডাক,ক্ষ*ম**তা*র বশে ডিভোর্স পেপারটা এত তাড়াতাড়ি করিয়ে নিতে পারল,তি**ক্ত এই টানটা বেশি সময় আর রাখবে না আঁখি,মুছে দিবে তা এক মুহুর্তেই,সাইনের জন্য ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিতেই হাত কাঁপতে লাগল আঁখির,ধীরে ধীরে গড়ে তুলা ভালোবাসার এক অট্টালিকা এক মুহুর্তে কিভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারবে আঁখি,তাতে যে প্রচুর সাহস আর ক্ষমতার প্রয়োজন,কিন্তু আঁখি তো ভিতু বা দূর্বলদের দলের কারো মধ্যে পরে না,তবে সে কেন পিছপা হবে আজ।না তাকে হার মানলে চলবে না,তাকে আত্নসম্মানের এ লড়াইয়ে জিততেই হবে।অতঃপর আর ভাবতে চাইল না সে,হাতে উঠিয়ে নিল কলম।

চলবে………

আরোহী নুর………।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here