প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব -০১

“তোর মতো একটা মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেয়, আমার সাথে বন্ধুত্ব রাখার। তুই ভাবলি কিভাবে তোর মতো একটা মেয়েকে মিহান ভালোবাসবে। মিহান শুধুমাত্র আমাকে ভালোবাসে শুধুমাত্র আমাকে। তুই আমার আর মিহানের মাঝে আসবি না, আর না আজ থেকে তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক আছে। গাঁইয়া মেয়ে একটা অসহ্য।”

কথাগুলো প্রানপ্রিয় বান্ধবী জিনিয়ার কাছ থেকে শুনে লজ্জায় অপমানে অতসীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করল।

জিনিয়া অতসীর চোখে পানি দেখে তীব্র চিৎকার করে উঠল আবারও….
– এই অতসী একদম নাটক করবি না। দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।

অতসী নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে, চারিদিকে একবার তাকাল, কলেজ ক্যাম্পাসের সকলেই ওর দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে। অতসীর নিজেকে সবার সামনে অপমানের পাত্র বলে মনে হল, লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। কিন্তু চুপচাপ অপমানিত হয়ে চলে যাবার কোনো মানেই হয় না।

জিনিয়া আবারো বলে উঠল…
– এখনো কেন এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস…

ঠাস ঠাস….কথাটা শেষ‌ করার আগেই জিনিয়ার গালে পরপর দুটো চড় পড়ল। জিনিয়া সহ গোটা ক্যাম্পাসের সকলেই হতবাক, হতভম্ব।

জিনিয়া গর্জে ওঠে বলল…
– তুই আমাকে থাপ্পর মা’রলি।
– হ্যা মা”রলাম আর একটা কথা বললে আবার মা’রব।
– তোকে তো আমি।
– কিছুই করতে পারবি না তাই চেষ্টা করেও কোন লাভ নেয়, আমি তোকে আমার বন্ধু ভেবেছিলাম কিন্তু তুই কি করলি আমার বন্ধুত্বটাকে খেলা করলি, বিশ্বাস করেছিলাম আমি তোকে, তুই আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছিস। প্রথম চড়টা মা’রলাম আমাকে সবার সামনে অপমান করার জন্য আর দ্বিতীয় চড়টা মারলাম আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করার জন্য। আমাকে আঘাত দেবার ফল তোদের পেতে হবে,আমি তোকে আর ওই মিহানকে ছাড়ব না কথাটা মনে রাখিস। আজ যে ক্যাম্পাসে তুই আমাকে অপমান করলি, একদিন এই ক্যাম্পাসেই তুই আমার কাছে ক্ষমা চাইবি। আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।

অতসীর এইরূপ দেখে জিনিয়া হতবাক। অতসী নিজের স্থান ত্যাগ করল জিনিয়াকে কোন কথা বলতে না দিয়ে। ক্যাম্পাসে সবাই কানাঘুষা করতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। সকলেই অতসীকে শান্ত প্রকৃতির জানে, ওর এইরূপ টা তাদের কাছে একেবারেই নতুন।

– কি হলো জিনিয়া তুই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

মিহানের প্রশ্ন শুনে জিনিয়া মিহানকে সবটা বলল। সবটা শুনে মিহান নিজেও অবাক।

– এইসব কি বলছিস তুই জিনি।
– হ্যা ঠিক বলছি ওই ছোটলোকের বা”চ্চাকে আমি ভালো থাকতে দেব না। প্রা”নে মে”রে ফেলব ওকে।
– কুল ডাউন জিনি,কুল ডাউন। তাড়াতাড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিস না সাবধানে করতে হবে সবটা।
– সব দোষ তোর। তোকে কে বলেছিলো ওর সাথে প্রেমের নাটক করতে।
– আরে ইয়ার জাস্ট ফান ছিলো। ওটা আমি কি জানতাম নাকি এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে আর না জানতাম তুই আমাকে ভালোবাসিস,,জানলে ট্রাস্ট মি আমি কখনোই এই কাজটা করতাম না। আমি তো শুধু তোকেই ভালোবাসি।

জিনিয়া মিহানকে জড়িয়ে ধরল। মিহান ও জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বাঁকা হাসল।

অতসী নিজেকে সবার সামনে স্ট্রং দেখালেও ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধাক্কাগুলো একসাথে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। প্রথমত, যাকে ভালোবাসলো সে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে প্রেমের নাটক করেছে ৩মাসের জন্য। আর এখন অতসীকে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, যাকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড ভাবতো তার সাথেই তার ভালোবাসার মানুষটির গোপনে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একই সাথে দুজন প্রিয় মানুষের দেওয়া ধাক্কাটা সামলে নিতে কষ্ট হচ্ছে অতসীর।

অতসী ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। কিছুই ভালো লাগছে না, এইদিকে পেটের কোনে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে কিন্তু রান্না করার মতো ইচ্ছা বা মন কিছুই নেয় বর্ষার।

———-

অতসী বাড়িতে একাই থাকে। নিজেই নিজের সমস্ত খরচ বহন করে, সকাল বিকাল করে ৩ টে টিউশনি পড়িয়ে মোটামুটি ভালো ভাবেই দিন চলে যায় অতসীর। ও অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী। সাধারন ভাবেই জীবন যাপন করতে ভালোবাসে। পরনে থাকে সুতির সালোয়ার কামিজ। তাই হয়তো সকলের কাছে গাঁইয়া, গরীব,ছোটলোক। পোশাক দেখেই কি মানুষের বিচার হয় প্রশ্নটা বারে বারে করেও উত্তর পাই না অতসী।

অন্যদিকে..

জিনিয়া বড়লোক বাবার আদরের মেয়ে। দেখতে সুন্দরী, কথাবার্তা সুন্দর, মার্জিত। বড়োলোক বাবার মেয়ে, স্মার্ট হওয়া সত্ত্বেও পোশাক- আশাক যথেষ্ট মার্জিত। জিনিয়া আর অতসীর বন্ধুত্ব অর্নাস ফাস্ট ইয়ার থেকে হয় ,ভালোই চলছিলো কিন্তু মাঝে বিপত্তি ঘটে মিহান নামক ব্যক্তিটিকে নিয়ে।

মিহান জিনিয়ার কাজিন। বড়লোক বাবার সন্তান হওয়াতে একটু বেশিই বেপরোয়া স্বভাবের। পার্টি, টাকা ওড়ানো এইগুলো ওর কাছে কোনো বিষয় নয়। তবে সবটাই পরিবারের সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে, সকলের কাছে মিহান খুব ভালো ছেলে। মিহানের মতো ছেলে হয়না, পরিবারের সকলের চোখের আড়ালে মিহান নানান ধরনের কু’কাজ করে বেড়ায়।

_______

জিনিয়া আর অতসীর থেকে মিহান একবছরের সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও জিনিয়ার কারনে ওদের তিনজনের মাঝে ভালোই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। জিনিয়া মিহান কে ভালোবাসতো ছোটবেলা থেকেই, তবে বিষয়টা কখনোই মিহানকে জানায় নি। ৩ মাস আগে মিহান বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে অতসীকে প্রোপজ করে এবং নানাভাবে ইমপ্রেস করে অতসীর সাথে রিলেশন গড়ে তোলে। যদিও সবটাই জিনিয়ার চোখের আড়ালে। জিনিয়া অতসীর কাছে ওদের রিলেশনের বিষয়টা জানার পরে নিজের মনের কথা মিহানকে জানায় তখন মিহান সত্যিটা জিনিয়ার কাছে স্বীকার করে এবং অতসীর চোখের আড়ালে দুইজনে রিলেশন শুরু করে।

অসী প্রথম প্রথম না বুঝতে পারলেও পরে বুঝতে পারে জিনিয়া আর মিহানের মাঝে কিছু একটা চলছে। তাই ওদের ফলো করে,আর সত্যিটা জানতে পারে। সেইদিন খুব অবাক হয়েছিল ,, ভালোভাবেই জিনিয়ার কাছে প্রশ্ন করেছিল…
– জিনি আমি যেটা শুনছি ওটা কি সত্যি কথা।
– কি শুনেছিস তুই।
– তুই আর মিহান নাকি প্রেম করছিস।
– হ্যা ঠিকই শুনেছিস। আমি আর মিহান একে অপরকে ভালোবাসি।
– এসবের মানে কি জিনি তুই তো জানতিস আমি আর মিহান রিলেশনে আছি তাহলে কিভাবে তুই এটা আমার সাথে করতে পারলি। আমি তোকে আমার বেস্টফ্রেন্ড ভাবতাম,আর তুই এটা আমার সাথে করলি।
– বন্ধুত্ব মাই ফুট।
– জিনি।
– তোর মতো একটা মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেয় আমার সাথে বন্ধুত্ব রাখার। তুই ভাবলি কিভাবে তোর মতো একটা মেয়েকে মিহান ভালোবাসবে মিহান শুধুমাত্র আমাকে ভালোবাসে শুধুমাত্র আমাকে। তুই আমার আর মিহানের মাঝে আসবি না, আর না আজ থেকে তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক আছে। গাঁইয়া মেয়ে একটা অসহ্য।

পরের ঘটনাগুলো সকলেই জানেন। কি হবে এরপর। মিহান আর জিনিয়া কি ভালো থাকবে অতসীকে কষ্ট দিয়ে? আর অতসীই বা কি করবে এর পর?

#চলবে…

চলে আসলাম নতুন গল্প নিয়ে। #সর্বনাশা_অঘ্র্যান গল্পটির সাথে এই গল্পটিও চলবে ইনশাআল্লাহ 🌸💚।

সকলের রেসপন্স চাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

||আসসালামু আলাইকুম||

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_১

গল্প সংক্রান্ত সমস্ত আপডেট পেতে জয়েন করুন আমার পাঠক পরিবারে তানুর গল্পকাহন 💝

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here