প্রহর শেষে আলোয় রাঙা পর্ব -১৭

#পর্ব_১৭
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
প্রহর ও সুদীপ্ত নাস্তা শেষে আগে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে যায়। সেনানিবাসে গিয়ে পরিকল্পনা আলোচোনা করে আজকে দুপুরের মধ্যেই রওনা করবে। সুদীপ্ত আর প্রহর এখন চা খেতে খেতে নেপালের রাস্তায় হাঁটছে। সুদীপ্তই প্রথমে বলে,
“আমার চাকুরী জীবনে প্রথম দিকে হিমালয় এলাকায় ট্রেনিং পরেছিল। প্রথমবার গিয়ে ট্রেনিং কি করব! ওখানকার আবহাওয়ার সাথে ট্যাকল করতেই সপ্তাহ খানেক লেগে গিয়েছিল। হিমালয়ের ছোটো পর্বতশৃঙ্গগুলোতে উঠেছি ট্রেনিং ও নিজস্ব মর্জিতে। মাউন্ট এভারেস্টে উঠার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আমার মায়ের কন্দনরত কণ্ঠেস্বরে আর পারলাম না।”

প্রহর হেসে বলে,
“ছেলে যতোই ক্যাপেবল হোক না কেনো মায়ের মনে সর্বদা ভয় বিরাজ করে। আমি যখন ছোটো ছিলাম আমার মাও এমন করতেন। কোনো রিস্কে যেতে দিতেন না। কারও সাথে যাতে ঝামেলা না লাগে তাই সবসময় বলতেন হাসিমুখে আপোষ করে নিতে। মায়ের একটা বাণী ছিল,
‘ছোটো জীবনে তিক্ততা বাড়িয়ে শুধু নিজেরই ক্ষতি করা হয়। স্মাইল ইজ দ্যা বেস্ট কিউর। কেউ তোমার প্রতি খারাপ বা হিংসা মূলক মনোভাব পোষণ করে বা করেই ফেলে তবে তার সাথে খারাপ ব্যাবহার না করে হাসিমুখে তাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিবে। অনেকসময় অনেকের রূঢ়তার মুক্ষোম জবাব হচ্ছে এক টুকরো হাসি। প্রতিপক্ষে আত্মগ্লানিতে ভুগাতে যথেষ্ঠ।’
মায়ের এই কথাগুলো সত্যি মানার চেষ্টা করি কিন্তু সবসময় হয়ে উঠে না। হিউম্যান নেচার বলে কথা।”

সুদীপ্ত হেসে বলে,
“তুমি যে তোমার মায়ের পদচারণা অনুসরণ করো তা অফিসার রাকিব আহমেদ আমাকে বলেছেন। স্যার আমাকে তোমার সম্পর্কে টুকটাক অবগত করিয়ে রেখেছেন। নিজের কোমায় যাওয়ার স্ত্রীকে একদিনের মধ্যে রেখে নিজের দায়িত্বে যোগদান করেছ এটা করতেও একটা ঠান্ডা মস্তিষ্কের প্রয়োজন।”

“ওখানে আমার বিশ্বস্তজন আছে। সেই সাথে আল্লাহর ভরসায় রেখে এসেছি।”

সুদীপ্ত মুগ্ধ হয় অতঃপর বলে,
“আচ্ছা প্রহর শোনো। আমরা আজকে রওনা করব। আগামীকাল সকালেই পাহাড়গুলোর পাদদেশে ওদের উপর আ*ক্রমণ করব। ওখানকার সেনারা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে খুঁজবে।”

প্রহর চিন্তিত হয়ে বলে,
“ওরা সংখ্যায় কতোজন তা তো জানিনা। ফো’র্স বেশি লাগবে সাথে টি’য়ার গ্যাস ও লা’ফিং গ্যাস নিয়ে গেলে বেটার হবে। প্রতিটা গুহায় ঢোকার আগেই এসব স্প্রে করা শুরু করলে ওরা পালটা আক্রমণ করতে পারবে না। আমাদের অবশ্যই প্রপার ভেন্টিলেশনের ব্যাবস্থা নিয়ে যেতে হবে। প্রাণহানি কমাতে গ্যাস স্প্রে করাটা আমার কাছে বেটার মনে হয়।”

“তোমার আইডিয়াটা দারুণ। আমি তবে হেডকোয়াটারে মেসেজ করে দেই এসবের ব্যাবস্থা করতে।”

“হুম।”
____________

রঞ্জনা খালা আলোর হাত-পা মুছিয়ে দিচ্ছেন। শিতল এসে বসলে রঞ্জনা খালা বলতে থাকেন,
“প্রহর যে কবে ফিরবে? সুস্থমতো সফল হয়ে ফিরে আসুক। আলোকে নিয়ে ভয় হয়। যারা ওর ক্ষতি চায় তারা যদি জানতে পেরে যায় প্রহর এখানে নেই তবে তো ওরা এসে হা*ম*লা করতে পারে।”

শিতল বাঁকা হেসে ওর মাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“চিন্তা করো না। কেউ জানবে না। নিয়াজকে প্রতিদিন নিয়ম করে প্রহরের হুডি পড়িয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়া করিয়ে রাখি। ভাগ্যিস নিয়াজ ও প্রহরের উচ্চতা সমান। তাছাড়া গুপ্তচর চয়নিকা তো….”

হুট করে শিতল থেমে যায়। মুখ ফসকে বলে ফেলতে নিয়েছিল। এখন মনে মনে নিজেই ব*কতে লাগল। রঞ্জনা খালা সন্দিহান কণ্ঠে বলেন,
“চয়নিকা কি? কি বলতে চাইছিলে তুমি?”

শিতল ঈষৎ ঢোক গিলে হালকা হেসে বলে,
“প্রহর না বলল চয়নিকাকে ওর বাড়িতেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি জানতে পেরেছি ওর মা থানায় নিঃখোঁজ ডায়েরি করেছে শুনেছি। পুলিশরা সন্দেহ করছে ওর বাসার কাছের রাস্তায়ই ওর অ্যা*কসি*ডেন্ট হয়েছে। ওখানটায় কোনো সিসিটিভি নেই এমনকি সেটা থেকে উত্তর দিকে যাওয়ার রাস্তায়ও সিসিটিভি নেই। তাই কি হয়েছে বলা যাচ্ছে না। রাস্তার কিনারেই গভীর খাদ। জলস্রোত প্রচণ্ড।”

রঞ্জনা খালা আফসোস করে বলেন,
“কর্মফল! সবই কর্মফল। মানুষ যা করবে তা ভুগবে।”

“বাদ দাও মা। চলো হাতে হাতে কাজ এগিয়ে রাখি।”

রঞ্জনা খালা সায় দিয়ে আগে আগে যাচ্ছেন। শিতল লম্বাশ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“ভাগ্যিস নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। প্রজাপতি না জানলেই হলো।”

___________

হিমালয়ের এলাকায় গিয়ে দূরবীন দিয়ে আশেপাশের জায়গা পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে। অনেকগুলো গুহা আছে। সেগুলোর প্রায় বেশিরভাগ আকারে ক্ষুদ্র। সেখানে হিমালয়ের প্রাণীগুলো থাকে। যেমন শ্বেত ভা*ল্লুক এসব। প্রহর বলে,

“আগে সামনের কয়েকটাতে বেশি ফোর্স করে নিয়ে যাই। যদিও সামনের গুলোয় থাকবে বলে মনে হচ্ছে না।”

“টিয়ার ও লাফিং গ্যাস প্রথমে অল্প করে স্প্রে করতে হবে নয়তো আসল জায়গায় গিয়েই টান পরে যাবে।”

প্রহরও সম্মতি দেয়।
“কোনো গো*লাগু*লি করবেন না আপনারা। শত্রুপক্ষ আ*ক্রমণ না করা পর্যন্ত ফা*য়ার করা হবে না। জনমানবহীন পাহাড়ের এক গুহায় ফায়ার হলে অন্য গুহাগুলোতেও সেই শব্দ পৌঁছে যাবে। তাই সাবধান থেকে কাজ করতে হবে। সবাই তো বু*লেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা আছেই।”

সবাই সব শুনে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। পথটাও অতো সুগম না। বরফে আচ্ছাদিত পথ সাথে হিমশীতলতা। সময়টা তুষার ঝড়ের না বলে রক্ষে। আস্তে আস্তে সামনের সবগুলো বড়ো গুহা পর্যবেক্ষণ করা হয়ে গিয়েছে। পিছনের গুলোতে যাওয়ার আগে প্রহর ও সুদীপ্ত পাশের দিকে নিচে কোনো লুকানো গুহা আছে কীনা দেখে নিচ্ছে। দুজন দুইদিকে এবং ওরা ওয়ারলেসের মাধ্যমে সংযুক্ত। উত্তরপাশে নিচের দিকে ঝুঁকে দেখার সময় হঠাৎ দেখে প্রায় অনেকটা নিচে একটা হলুদ কিছু দেখা যাচ্ছে। প্রহর তাৎক্ষনিৎ সুদীপ্তকে বলে। সুদীপ্ত উত্তেজিত হয়ে বলে,
“দূরবীন দিয়ে দেখো ওটা কি?”

প্রহর তাই করে দেখে ওটা একটা কলার খোসা। সুদীপ্ত জানার পর বলে,
“কেউ কলা খেতে নিশ্চয়ই পাহাড়ের পাদদেশে যাবে না! তাছাড়া যারা পর্বত আরোহণ করে তারা নিজেদের ব্যাবহার্য ময়লা নিজেদের কাছেই রাখে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে না। ওগুলো দিয়ে আ*গু*ন জ্বালিয়ে তাপ নেয়।”

প্রহরও তাল মিলিয়ে বলে,
“একজেক্টলি। এটাই বলতে চাইছিলাম। তাহলে ওখানে আমাদের খুব ধীরে ও সতর্কতা অবলম্বন করে যেতে হবে। কিন্তু যেতে যেতে ঘণ্টা খানেক তো লাগবেই। খাড়া পথও আছে। রিস্ক কম না। ওখানে হয়তো নেটওয়ার্কও পাবো না।”

সুদীপ্ত চিন্তিত হয়ে বলে,
“এখানেই তো ঠিক মতো নেটওয়ার্ক পাচ্ছিনা। ওখানে পাওয়াটা দূরহ। আর যদি ডঃ আরমান শেখকে পেয়েও যাই তবে তাকে নিয়ে ব্যাক করাটাও টাফ হবে।”

“আপনি হেডকোয়াটারে খবর দিন। ঘণ্টা দেড়েকের পর যেনো দুই-তিনটা হেলিকাপ্টার পাঠায়। এর মধ্যে আমাকে ওখানে পৌঁছে সব চেক করতে হবে। আমার গাটফিলিং বলছে স্যারকে ওখানেই পাবো।”

____________

“স্যার, আরমান শেখের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেন সাপ্লাইও কম। দেড়-দুইদিন চলার মতো।”

অচেনা লোকটা বলে,
“দুইদিনের মধ্যেই আমরা জায়গা পরিবর্তণ করে নেপাল ত্যাগ করব। কাশ্মীরের দিকে যাব।”

“কিন্তু স্যার উনাকে এখন কি করব?”

“সে কি কিছু খেয়েছিল?”

“জি স্যার। রেডিমেট কর্ণসূপে গরমা পানি দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের খাওয়া দেখে খেতে চাইছিল।”

অচেনা লোকটি রেগে চিৎকার করে বলে,
“ই*ডি*য়েট সবগুলা। এতো বছরেও দেখেছ তাকে কখনও ভুট্টার কোনো খাবার দিতে? আজ কেনো দিলে? সে চাইলেই দিতে হবে? এখন যদি স্যার বেশি সিক হয় তখন কি করবে? উনার ভুট্টাতে এ*লার্জি।”

“সরি স্যার। আমরা জানতাম না। আর কখনও এমন ভুল হবে না। এবারের মতো মাফ করে দিন। প্লিজ স্যার। জানলে কখনোই দিতাম না।”

“তাকে ইমিডিয়েট এ*ন্টিহিস্টামিন ই*নজেক্ট করো। এভেইলেবল আছে? তোমাদের বলা হয়েছিল সব ধরণের প্রাথামিক চিকিৎসার মেডিসিন ও ইনজেকশন রাখবে।”

“জি স্যার আছে। এখনি দিচ্ছি।”

অচেনা লোকটি খট করে কল ডিসকানেক্ট করলে তখনি ডঃ আরমান শেখের পাহাড়ায় নিযুক্ত করা চারজনের একজন তাড়াহুড়ো করে হাতে থাকা কলার খোসাটা ডাস্টবিনে না ফেলে গুহার বাহিরে ছুঁড়ে মা*রে। তাদের তাড়াহুড়োতে করা ভুলই তাদের কাল হয়েছে।

খাড়া পথটা খুব ধীরেধীরে পার করতে হয়েছে। কোনোভাবে যদি পা ফসকে যায় তবে শব্দ তো হবেই সাথে একটু এদিক সেদিক হলে একদম খাদে। এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে গুহার কাছাকাছিতে আসতে। এখন গুহার ভেতর থেকে খুব ক্ষীণ শব্দ আসছে। মনে হচ্ছে কেউ বেতারে কিছু শুনছে। প্রহর বলে,
“ওরা নেটওয়ার্ক ডিভাইস লাগিয়েছে। ওখানে গেলে আমাদের যদি কিঞ্চিত নেটওয়ার্ক থাকেও সেটাও শূণ্য হয়ে যাবে।”

সুদীপ্ত বলে,
“আগে ফো’র্স না পাঠিয়ে আমি ও তুমি আগে যাব। ফো’র্সরা আমাদের থেকে তিন হাত দূরত্বে থাকবে। হাতে গ্যাস কন্টেইনার নিয়ে নাও প্রহর।”

প্রহরও এই প্রস্তাবে রাজি হয়। দুইজনে দুটো গ্যাস কন্টেইনার নিয়ে নেয় অতঃপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ডিসেম্বর মাস মানেই তো পরীক্ষা এসব। আমার এখন ল্যাবগুলোর ভাইবা, ফাইনাল ও ক্লাসের কুইজ, এসাইনমেন্ট/প্রেজেন্টেশন চলছে। ফাংশন তো আছেই। বছরের শেষ সপ্তাহে সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here