#প্রহেলিকা
#পর্ব_৪০ (অন্তিম)
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–
জেহের আজ নিজ হাতে ইনশিতাকে সাজিয়ে দিলো। পিওর হোয়াইট শাড়িতে স্টোনের কাজ করা। স্লিভলেস ব্লাউজ। ডায়মন্ডের সিম্পল নেকপিস, নোসপিন, আর পাতলা দুটি ইয়াররিং। দুহাতে ডায়মন্ডের চিকন চুড়ি। খোলা চুলগুলো নিচে দিয়ে কার্ল করা, পাতলা পেলব ঠোঁটে লিপগ্লসের ছোঁয়া, আর চোখে হালকা করে কাজল। জেহের নিজে সাজিয়ে নিজেই হতবাক। চোখ সরানোর দৃঢ় চেষ্টা করলেও বেহায়া চোখ বারবার রোজের দিকে চলে যাচ্ছে। তার হার্টবিট কয়েকটা মিস হচ্ছে বোধহয়। ইচ্ছে করছে রোজকে চোখের সামনে বসিয়ে রাখতে, কিন্তু যেই সারপ্রাইজটা দেওয়ার কথা ছিল সেটা তাহলে আর দিতে পারবে না।
ইনশিতা সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে দেখছে জেহেরকে। এত রাতে তাকে সাজানো হয়েছে কেন? আবার জেহের নিজেও তার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পোশাক পড়েছে। জেহের সাদা শার্ট, উপরে ব্লেজার আর ডেনিম প্যান্ট পরেছে। শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা। উন্মুক্ত হয়ে আছে বুকের উপরিভাগ। চুলগুলো সেই এলো করেই কপালে ছেড়ে দেওয়া। হাতে রোল্যাক্সের দামী বিগ ডায়ালের ঘড়ি। অ্যাজ ইউজুয়াল জেহেরকে যেমন মোহনীয় দেখাতো তার চেয়েও বেশি মোহময় লাগছে এখন। সাদাতে জেহেরের ফর্সা চেহারা আরো ফর্সা হয়ে ফুটে উঠেছে!
তার ভাবনার ছেদ ঘটালো ফোনের আওয়াজ। জেহের ফোন বের করে দেখে জেসমিন চৌধুরী। সে ইনশিতার দিকে বাড়িয়ে দেয়। ইনশিতার সাথে কথা বলার মাঝে তিনি বলেন,
-“জেহের কোথায়? জেহেরকে একটু দাও মা।”
ইনশিতা জেহেরকে ফোন দিলে সে খানিকটা ইতস্তত করেই নেয়। জেসমিন চৌধুরীর সব প্রশ্নের জবাবে সে শুধু হু হু করছে। শেষে ফোন রাখার সময় সে বলে,
-“ওকে, বাই মম।”
তার কথায় ইনশিতা চমকে উঠে। ফোনের ওপাশে আর কোনো কথা না শুনতে পেয়ে জেহের কেটে দেয়। ইনশিতাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখের সামনে তুড়ি বাজায় সে।
-“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
বিস্মিত কন্ঠে ইনশিতা বলে,
-“আপনি কী বললেন একটু আগে? মাকে…”
ইনশিতার কথা শেষ না করতে দিয়েই জেহের পকেট থেকে রুমাল বের করে তার চোখ বেঁধে দেয়।
-“আ-আরে, চোখ বাঁধছেন কেন?”
জেহের ইনশিতার ঠোঁট আলতো চেপে বলে,
-“শসসহ। কোনো কথা নয়।”
তারপর ইনশিতাকে কোলে উঠিয়ে নিলো। চমকে গিয়ে ইনশিতা জেহেরের গলা জড়িয়ে ধরে।
ইনশিতাকে কোলে নিয়ে জেহের সমুদ্রের কাছে আসে। পানির গর্জন শুনতে পাচ্ছে ইনশিতা। এখন বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। আকাশে মস্ত বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে। নীলচে আকাশ আর সমুদ্রের মিলনস্থলে চাঁদটা অবস্থিত। জোৎস্নারা চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। দূর দূরান্তে এই চাঁদের আলো আর দূরের রিসোর্টের আলো ছাড়া আর কোনো আলো নেই। সমুদ্রের গাঢ় নীল জলে চাঁদের চকচকে দ্যুতি ছড়ানো। পুরো পরিবেশটা বলতে গেলে যে কাউকেই রোমাঞ্চিত করতে বাধ্য। ইনশিতাকে নামিয়ে চোখটা খুলে দিলো সে। চোখ ডলে ইনশিতা সামনে তাকালে অবাক হয়ে যায়। এত সুন্দর পরিবেশ দেখে সে যারপরনাই অবাক। চোখের তারা বিস্ময়ে জ্বলজ্বল করে উঠে। মনে হচ্ছে সারা শরীরে জোৎস্না মাখিয়ে জোৎস্না স্নান করছে সে।
জেহের ইনশিতাকে আরেকপাশে তাকাতে বললে সে দেখে কতগুলো ফানুস উড়ে যাচ্ছে সারিবদ্ধভাবে। সেখানে happy birthday my love লেখা। আজ তার মনেই ছিল না জন্মদিনের কথা। ইনশিতা অবাক হয়ে মুখে হাত দেয়। চোখের কোলে টলমল করে উঠে জল। সমুদ্রের উপর হলুদ কমলা রঙের ফানুস স্বপ্নের মতো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। এভাবে যে কেউ তাকে উইশ করতে পারে এটা তার ভাবনার বাহিরে ছিল। জীবনে প্রথম কেউ তার জন্মদিনে এত সুন্দর করে উইশ করল। তাও আবার তার ভালোবাসার মানুষ। ইনশিতা জেহেরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। অনেক কথাই বলতে চাইল কিন্তু মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না। জেহের রোজের চুলে হাত বুলিয়ে আদুরে মুখটা তু্লল দুহাতে।
-“এইদিনেও মানুষ কান্না করে? চোখ মুছে ফেলো। কী হলো? রোজ!”
ইনশিতা চোখ মুছে কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলল। জেহের ইনশিতাকে নিয়ে একটু পিছনে আসলো। ইনশিতা এবারে খেয়াল করল বেশ সুন্দরভাবে ছাউনির মতো সাজানো টেবিলের চারপাশ। গোল টেবিলের দুপাশে দুটো চেয়ার। সামনে অসংখ্য গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। ছোট ছোট ল্যান্টার্ন চারপাশে টাঙানো। টেবিলটা গোলাপ দিয়ে মোড়ানো, তার উপর রাখা চকলেট কেকে উইশ করে মাই লাভ লেখা। পাশে রিবন দিয়ে সাজিয়ে রাখা ছুরি আর ড্রিংসের বোতল। জেহের ইশারা করল কেক কাটার। কেক কাটলে জেহেরকে খাইয়ে দিতে চাইলে সে হাত থেকে কেক নিয়ে ইনশিতার গালে ঠোঁটে চিবুকে লাগিয়ে দেয়। ইনশিতাকে বাহুবন্ধনে শক্ত করে জড়িয়ে সেখান থেকেই খেয়ে নেয়। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে ইনশিতা।
তারা যেখানে বসেছে সেখান থেকে চাঁদ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সেখানেই ডিনার সেরে জেহের ইনশিতাকে ড্রিংকস অফার করে। ইনশিতা না করে না। সে খুশিমনে গ্লাস হাতে নিয়ে খেয়ে মুখ কুঁচকে ফেলে। এটা কোকাকোলা! সে তো ভেবেছিল কোথায় একটু মদটদ খাবে। এত বড় ধোঁকা!
জেহের ইনশিতাকে নিয়ে তার পাশের আরেকটা ছাউনিতে গেল। উপর দিয়ে খোলা থাকায় পুরো আকাশ দেখা যায়। শুধু চারপাশ দিয়ে চারটা খুঁটি গেড়ে তাতে ফিনফিনে পাতলা সাদা পর্দা জড়ানো। হালকা বাতাসে সেই পর্দা গুলো উড়ছে। দুটো নরম গদির মতো বিছানো ভেতরে, সেখানেও ছড়িয়ে আছে অসংখ্য গোলাপের পাপড়ি। দুটো সাদা বালিশ আর কতগুলো কুশন চারপাশে ছড়িয়ে। সমুদ্রের গর্জন, স্নিগ্ধ বাতাস, চাঁদের জোৎস্না সবকিছু মিলিয়ে মোহময় একটা দৃশ্য। সাথে রয়েছে তার মোহময় জেহের। জেহের ল্যান্টার্নগুলো অফ করে দিলে পুরো জায়গাটা অন্ধকার হয়ে যায়। এখন শুধু জোৎস্নায় আলোকিত চারপাশ। চাঁদের আলোতেও সবকিছু দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।
জেহের ইনশিতাকে সেখানে বসিয়ে নিজেও বসলো। জেহেরের হাতে রাখা জিনিসটি দেখে ইনশিতা হা হয়ে গেল। গিটার!
-“গিটার কেন?”
-“গিটার দিয়ে কী করে?”
-“গান করে, আপনি…”
বলতে গিয়ে থেমে গেল ইনশিতা। চাপা উত্তেজনা নিয়ে সে বলল,
-“আপনি গান গাইবেন?”
-“ইয়াহ। স্পেশালি তোমার জন্য শিখেছি।”
ইনশিতা যেন কথাটি বিশ্বাসই করতে পারছে না। এক মাসেই আগেই তো জেহের বলল সে নাকি গান জানে না। জেহের ইনশিতাকে নিজের খুব কাছে টেনে গিটারের তারে হাত চালালো। চোখ বন্ধ করে নিলো।
.
.
ফিনল্যান্ডে একটি শহর কেমি। সেই শহরের ছোট একটি এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বড় অট্টালিকার সমান ঘর। বাহির থেকে যতটা সাধারণ দেখতে তারচেয়েও বেশি অসাধারণ ভেতরটা। সেই অসাধারণের মাঝেই একটি রুম ঘোর অন্ধকারে আবৃত। তার মধ্যে হঠাৎ জ্বলে উঠল ম্যাচের একটি কাঠি। কাঠির মাথায় আগুনের শিখা ধীরে ধীরে জ্বালিয়ে দিলো একটি ক্যান্ডেলকে। কাঠিটা দূরে ছুঁড়ে দিয়ে মোমবাতির সামনে নিজের মুখ আনলো একটি যুবক। হাতে তার রেড ওয়াইনের বোতল আর আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট। ইজি চেয়ারে বসে সিগারেটে টান দিতে দিতে সে তাকাল ছোট্ট কেকটির উপর বসানো মোমবাতির শিখার দিকে। রেড ওয়াইনের বোতলটি রেখে সে উঠে সারা রুমে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো কতগুলো। নিমিষেই অন্ধকারকে তাড়িয়ে রুমটি দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। যুবকটি কেকের সামনে গিয়ে মোমবাতি ফু দিয়ে নিভিয়ে বার্থডে গানের সুরের মতো বলতে থাকে,
-“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার মাই জান,
হাপি বার্থডে টু ইউ।”
তারপর নিজে কেক কেটে হাতে ধরে বসে রইল। খেলো না। চোখের ঝিমিয়ে আসা লালচে দৃষ্টি নিবদ্ধ কেকের ওপারে থাকা একটি মেয়ের হাসিমুখের ছবির দিকে। ছবিটি অর্ধেক দেয়াল জুড়ানো। সেটার সামনে গিয়ে ছবিটিতে সে চুমু খেল একবার। একধ্যানে তাকাতে তাকাতে বলল,
-“তোমার থেকে দূরে চলে আসলেও তোমার জন্মদিন পালন না করে থাকতে পারিনি। তোমার স্মৃতি নিয়ে আমি বাঁচতে চাই। সি, আমার পুরো রুম জুড়ে তোমার ছবি টাঙানো, সব স্মৃতি।”
সে একবার পুরো রুমে চোখ বুলাল। দেয়াল জুড়ে ইনশিতার হাজারো রকমের ছবি আছে যেগুলো সে দু’বছরে লুকিয়ে তুলেছিল। নানা অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা। রুমের টেবিলের উপর শ্যাম্পেইন, ওয়াইনের বোতল কতগুলো। আর সিগারেটের ফিল্টারে ভর্তি হয়ে আছে টেবিলের চারপাশ। যেগুলো তার নিত্যদিনের সঙ্গী। টেবিলের সাথে হেলান দেওয়া গিটারটি তুলে নিলো সে। তারপর বড় ছবিটির দিকে তাকিয়েই নেশাতুর কন্ঠে বলল,
-“আ’ম ডেডিকেটিং দিজ সং টু ইউ মাই ইতুপাখি।”
অযত্নের চুল গুলোয় একবার হাত বুলিয়ে ঠিক করে নিলো। চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। সুর তুলল গিটারে।
bekhayali mein bhi tera
hi khayaal aaye
kyun bichhadna hai zaroori
ye sawaal aaye
teri nazdeekiyon, ki khushi
behisaab thi
hisse mein faasle, bhi tere
bemisaal aaye
main jo tumse duur hoon
kyun duur main rahoon
tera guroor hoon
aa tu faasla mita
tu khwaab sa mila
kyun khwaab tod doon…
চোখ খুলল জেহের। ইনশিতার মনে হচ্ছিল সে এতটা সময় গানের নেশায় পড়ে ছিল। জেহের এত সুন্দর করে সুর তুলে গান গাইল যে, কেউ বলবেও না এই ছেলেটি একমাস আগেও গানের ‘গ’ ও জানত না। জেহের গিটারটা একসাইডে রেখে ইনশিতাকে একহাতে জড়িয়ে ধরল।
-“হাউ ওয়াজ ইট?”
-“আপনি সত্যি গেয়েছেন? একটা চিমটি কাটুন তো!”
জেহের ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
-“তাকিয়ে আছেন কেন? কাটুন, চিমটি কাটুন। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো। কাটুন।”
জেহের চিমটি কাটল। তবে অন্য উপায়ে। ইনশিতা কিছুক্ষণবাদে জেহেরকে ঠেলে দূরে সরিয়ে ঠোঁটে হাত দিলো। রাগ নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
-“রাক্ষস একটা। ছিঁড়ে ফেলছে একদম। উফফ!”
তবে রাগটা মুহুর্তেই উবে গেল যখন জোৎস্নার আলোয় জেহেরের ঠোঁট টিপা হাসিটা দেখল। কেন জানি না, জেহেরের হাসিটা খুব ভালো লাগল তার। নিষ্পাপ লাগল।
ইনশিতাকে আবার কোলে নিয়ে জেহের হেঁটে চলল সমুদ্র তীরে। ফেনা তোলা ঢেউয়ে ইনশিতাকে নামাতেই হিম শীতল জলের স্পর্শে ইনশিতার শরীরে অন্যরকম শিহরণের স্রোত বয়ে গেল। ইনশিতাকে নিজের পায়ের উপরে রেখে দুহাতে ধরে রাখল জেহের। ঢেউ এসে ধাক্কা খাচ্ছে তাদের হাঁটুতে। চাঁদের কিরণ চিকচিক করছে ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আকাশে ধোঁয়াটে কালো মেঘ ভেসে চলছে চাঁদ ঘেঁষে। সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে ইনশিতার ঘোর লেগে এলো। নিজেকে মুক্ত পাখির মতো লাগছে। যেন এক্ষুনি চাইলেই পালক তুলে উড়ে যেতে পারবে। সে মোহিত চাহনি মেলে সামনের সুদর্শনের দিকে তাকাল। সেই সুদর্শনটিও পলকহীন নীল চোখে তাকেই দেখছে। তার গাঢ় নীল চোখ যেন আসমান আর সমুদ্রের মিশেলে তৈরি। বারবার ডুবে যেতে ইচ্ছে করে ইনশিতার।
অজান্তে ইনশিতার ওষ্ঠাধর এগিয়ে গেল জেহেরের খোলা বুকে। নিবিড় চুম্বনে ছুঁয়ে দিলো জেহেরকে। জেহেরের চোখেও এখন মাতাল দৃষ্টি। গাঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরল তার রোজকে। ইনশিতা চোখ তুলে চাইল জেহেরের দিকে। এই সুদর্শন জেহের এখন তার। সারাজীবনের জন্য। তাকে হারানোর ভয় থাকবে না আর। তাকে ছিনিয়েও নিতে পারবে না কেউ। ইনশিতার দেখা স্বপ্ন এখন পূরণ হতে যাবে এই জেহেরের হাত ধরে। ভালোবাসার স্বপ্ন।
জেহেরের গালে একটি হাত রেখে ইনশিতা ধীরকন্ঠে বলল,
-“আপনাকে খুব লোভনীয় লাগছে জেহের। একদম চকলেটের মতো। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। জেহের নামের সাথে বুঝি চকলেটটাই বেশ মানানসই।”
বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সে। হাসির ঝংকারে আলোড়িত হলো নিস্তব্ধ রাত। সমুদ্রের গর্জনের চেয়ে রোজের খিলখিল করা হাসি সুমধুর হয়ে প্রবেশ করল জেহেরের কানে। রোজকে প্রগাঢ় ভাবে কাছে টেনে মাথা ঝুঁকে রোজের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
-“জেহের নামের অর্থ কি জানো? পয়জন, বিষ। এই বিষ যে একবার গ্রহণ করে তার পরিত্রাণ নেই। তুমি করেছো, আমার বিষাক্ত হৃদয়ের বিষ। এবার তোমাকে আমার বিষে বিষাক্ত হতে হবে। আমার সমস্ত বিষ শুষে তোমার হৃদয়ে নিতে হবে। হতে হবে আমার মতো বিষাক্ত। গোলাপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকবে এই বিষ। তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকবো আমি, জেহের। রোজের জেহের।”
ইনশিতা জেহেরের বুকে মাথা গুঁজল। সে প্রস্তুত জেহেরের সমস্ত বিষ শুষে নিতে। জেহেরের বিষে বিষাক্ত হতে সর্বদা প্রস্তুত সে। সবসময়কার জন্য, সারাজীবনের জন্য।
দুটো মানব-মানবী সমুদ্রের ফেনীল ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের মাঝামাঝিতে থাকায় মনে হচ্ছে চাঁদের আলো তাদের চারপাশ ঠিকরে বেরোচ্ছে। আকাশ আর সমুদ্রের মিলনের মতোই তারা মিশে আছে একে অপরের মাঝে। জোৎস্নাকে গায়ে চাদরের মতো জড়িয়ে লেপ্টে আছে দুজনা।
বিষ যেভাবে দুঃখকে পায়ে পিষে মানুষকে নিমিষে শেষ করে দেয়, গোলাপ তার চেয়েও বেশি আনন্দ ছড়িয়ে আপন মানুষদের মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়। একজন বিনাশকারী আরেকজন ভালোবাসা বণ্টনকারী। সেই বিপরীত দুই মেরুর মানুষ আজ ভাগ্যের লিখনে একত্রিত হলো। তাদের নতুন নামকরণ হলো, জেহেরোজ।
______________সমাপ্ত______________