অচেনা শহর পর্ব ১

প্রথমদিন ভার্সিটিতে পা রাখতেই রাগিং দলের শিকারে পরি আমি। কেউ ভয় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর কেউ মজা নিচ্ছে। চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে। মাথা নিচু করে আছি আর আমার সামনে একটা অসভ্য ছেলে আমার দিকে সিগারেট ধরে আছে। জলন্ত সিগারেট এটা নাকি আমাকে খেতে হবে। সিগারেটের গন্ধ আমি এমনিতেই সহ্য করতে পারি না এটা একটা আমার জন্য মারাত্মক গন্ধ এই গ্রন্ধ‌ আমি একটু সহ্য করতে পারিনা। হাত দিয়ে নাক মুখ চেপে ধরে আছি সামনের ছেলেটা আমার হাত টান মেরে হাতে সিগারেট ধরিয়ে দিল। আর হুমকি তো আগেই দিয়েছে আমি যদি সিগারেট না খায় তাহলে কান ধরে আজকে আমাকে কান ধরে এক পায়ে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে হবে। প্রতিবাদ করার মতো কেউ নাই।আমার পাশে একটা মেয়ে ওকে আমি চিনি না একটু আগেই ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে গেট দিয়ে ঢোকার সময়।।মেয়েটির নাম অন্তরা। ওই বলেছে এই ছেলেদের নাকি অনেক দাপট। ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টের এরা।ভার্সিটির নেতা বলা চলে এদের। ধনী বাবার একমাত্র ছেলে যে আমাকে সিগারেট দিল সে। তার দাপটের জন্য সাঙ্গোপাঙ্গ গুলো ও ভাব নিয়ে চলে। আমার সামনে কমপক্ষে আট নয় জনের মত দাঁড়িয়ে আছে।

আমি একবার শুধু মাথা উঁচু করে সবাইকে দেখেছিলাম আমাকে যে ছেলেটা সিগারেট দিয়েছে তার মুখে এখন অব্দি আমি দেখিনি। কারণ সে পেছনে বাইকে বসা ছিল। আর সামনে না হলেও চারজন ছেলে ছিল আর দুইটা মেয়ে ছিল।

আমি স্নেহা। আমার বসবাস গ্রামের ছোট থেকে গ্রামে বড় হয়েছে ।শহরে আসার সুযোগ কখনো হয়নি আর আত্মীয়-স্বজন ও তেমন ছিলনা এজন্য কখনোই শহরে আসা হয়নি। বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান আমি আমার একটা বড় ভাই আছে যে বিবাহ করে তার বউ নিয়ে আলাদা বাসা বেধেছে। ভাইয়াকে লেখাপড়া চাকরি টাকা দিয়ে আমরা একদমই দরিদ্র হয়ে পড়েছি।বাবার তেমন ইনকাম নেই আগে মাস্টারি করতো সে টাকা দিয়ে আমরা এতদিন চলেছি অসুস্থ থাকার কারণে বাবা অনেকদিন ধরে পড়ে আছে ঘরের কোণে। মা সংসারী করতো এখন আর পৃথিবীতে নেই।ভাইয়াকে সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য 10 লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়।বাবা এই চাকরিতে একটু সন্তুষ্ট ছিল না। কারণ নাকি বাবা আমার জন্য পাঁচ লাখ টাকা রেখেছিল আমার খরচ চালানোর জন্য।আমি তখন বাবাকে বললাম বাবা আমার টাকা লাগবোনা ভাইয়াকে দাও ভাইয়ের চাকরি হলে তো সেই টাকা দিয়ে আমরা চলতে পারব তাই না। ভাইয়া ও বললো হ্যা আমি চাকরি করে আমার বোনের যাবতীয় খরচ আমি দেব।মাস্টারি চাকরিতেও আর কয় টাকা বেতন ছিলো সব সময় আমরা টেনেটুনে চলে আসছিল ভাই একটা ভালো চাকরি করলে আমাদের কষ্টের দিন যাবে একটা ভালো দিন আসবে। কিন্তু সেই দিন আর এলোনা আমাদের আশার আলো নিভিয়ে অন্ধকার করে ভাইয়া একটা বিয়ে করে ফেললো তাও সবার অজানায়। সবাইকে রেখে ভাইয়া একা একটা ধনী বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করল।মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দরী ছিল বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে এসে উঠে প্রথমে মা-বাবা রাজি না হলেও পরে ছেলের কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়।

রাজি হয়ে বাবা ছেলের বউকে ছেলের ব‌উয়ের স্বীকৃতি দেয়। এক মাসের মতো ভালো চল ছিলো তখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ পরি। প্রথমে ভাবিকে খুব ভালোই মনে হয় সবার সাথেই হেসে খেলে কিন্তু কাজ কাম করে না। সে নাকি পারে না মা আর তেমন কিছু বলে না ধনী ঘরের মেয়ে শুনেছে সে কাজ কাম না পারাটা স্বাভাবিক । মা তাকে দেখে কাজ শেখানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে কাজ শিখে না । কোন কাজ করবে না শুধু খাবে দাবে আর শুয়ে বসে টিভি দেখবে। মাঝে মা অসুস্থ হয়ে পড়ে আমি লেখাপড়া নিয়ে বিজি বাবা তো আগেই অসুস্থ কিন্তু ভাবি একটা কাজও করেননা।তখন মা ভাইয়াকে বলে যে তোর বউকে একটু কাজ করতে বল আমি তো এখন পারছিনা রান্না টা পর্যন্ত ভাবি করেনা আমাকে মাঝেমাঝে করতে হয়। আমি অবশ্য কাজকাম আগে থেকে পারতাম। কারণ আম্মু বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকতো কিন্তু ঘরে পড়ে না সে কাজ করে আবার মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যায় তখন আমায়‌ই করতে হতো।

ভাইয়া মনে হয় এই নিয়ে তার বউয়ের সাথে ঝামেলা করে। তারপরের দিনই ভাবি কাজ করতে যায়। একটা-দুইটা কাজ করে।তারপর একদিন কাজ করতে যেয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলে একদিন হাত কেটে ফেলে এভাবে প্রতিদিন একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দেখে ভাইয়া বলে তার বউ কাজ করতে পারবে না। কি হয় জানিনা তাদের মাঝে। ভাইয়া অশান্তি করে বাড়িতে সেদিন ভাবি কে নিয়ে কিছু কথা বলে ভাইয়া। আমরা নাকি তার বউকে অত্যাচার করি। কিন্তু কি অশান্তি করলাম কি অত্যাচার করলাম আমি আর মা কিছুই বুঝতে পারিনা। ভাবি তখন সেই পুরা গা
দেখায় এটা নাকি আমার মা তাকে ইচ্ছে করে পরিয়েছে এতদিন বসে বসে খেয়েছে বলে মা নাকি তার সুদ তুলেছে। এটা শোনার সাথে সাথে মায়ের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে। ভাবী নিজেই গরমপানি করতে গিয়ে সেটা অসাবধানতায় হাতে ফেলে নিজের হাত পুড়ে ফেলেছে মা তখন আমার ঘরে ছিলো আমার সাথে। ভাইয়াকে সত্য বললে ও বিশ্বাস করে না। ভাবি সে কি কান্না কান্না করতে করতে বলে এবাড়িতে থাকবে নাকি আর চলে যাবে।আর ভাবি এটাও বলে ভাইয়া যদি তার সাথে না যায় তাহলে নাকি তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ভাইয়া ভাবির সাথে চলে যায়। ভাবির সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন না আমাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে।আগে যাও ভাইয়া কম বেশি টাকা দিতে বাসায় ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আমরা একদম নেতিয়ে পড়ি‌।

কিভাবে কি চলবে বুঝতে পারিনা তখন থেকে আমাদের একদম কঠিন জীবন পার হয়। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর মা একদম অসুস্থ হয়ে পড়ে।এতটা অসুস্থ হয় যে দুই মাসের ভেতরে মা মারা যায়।অন্ধকার নেমে আসে আমাদের জীবনে বাবা-মার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে না সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমি এতটাই ভেঙে পরি লেখাপড়া আশা বাদ হয়ে যায়।নিজে ভেঙ্গে পড়ি একদম কিন্তু তবুও নিজের মনটাকে শক্ত করার চেষ্টা করে বাবার জন্য। নিজেকে শক্ত রেখে বাবার সেবা যত্ন করতে থাকি। এক মাস পর একদিন ভাইয়া ছুটে আসে বাসায় হয়তো মার খবরটা কোন ভাবে তার কানে গিয়েছে। আমাদের কাছে ক্ষমা চায় আবার ফিরে আসতে চায় আমাদের কাছে। সেদিন বাবা ভাইয়াকে একটা ঠাস করে চড় মারে গালে। তারপর বাবায় ভাইয়াকে বাসা থেকে বের করে দেয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয় বাবা। ভাই আমার কাছে এসেছিলো আমি ভাইয়া দিকে একবার তাকিয়ে শুধু একটা কথাই বলি।
——-নিজের মার থেকে তুমি বউকে বেশি বিশ্বাস করেছিলে তার ফলাফল এই হলো ভাইয়া। সারা জীবনের জন্য মা আমাদের ছেড়ে চলে গেল।তোমার মুখ আমি কোনদিনও দেখতে চাই না আমার একটা বড় ভাই ছিল এটা আমি কোনোদিন মনেই রাখতে চাইনা তুমি দয়া করে কোনদিন আমার সামনে এসো না। তাহলে আমি তোমাকে মায়ের খুনীর জন্য জেলে পাঠাতে বাধ্য হব। খুনটা তুমি করেছো মাকে তুমি যদি সেদিন মাকে অপমান করে এইভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে না যেতে তাহলে মা আজকে আমাদের ছেড়ে যেত না।

ভাই আর কিছু বলে না কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। এখন পরে টাকা সমস্যা এদিকে বাবাই স্টক করে। টাকা লাগবে ৩০হাজারের মতো কোথায় পাব টাকা সব টাকা তো ভাইয়েরে আগেই দিয়ে দিয়েছি হাতে কোন টাকায় নেই। মা অসুস্থ ছিল তখন জমা কিছু টাকা শেষ।
তখন ভিটাবাড়ি টুকু বিক্রি করতে বাধ্য হই।বাবা সেগুলো কিছুই জানেনা বাবাকে সুস্থ করে বাসায় নিয়ে আসি হাটা চলা বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে পা দুটো নষ্ট হয়ে গেছে আর হাঁটতে পারবে না কখনো। লেখাপড়া ছেড়ে দিতে চাই কিন্তু বাবা তখন একটা আশার আলো দেয়। বাবার নাকি একটা অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে এক লক্ষ টাকা আছে। সেটা গোপন রেখেছিল। সে টাকা এনে ভিটাবাড়ি যার কাছে বিক্রি করছিলাম তাকে আবার 30 হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দিই। আমার চাচা তার কাছে আমি বাড়ি বিক্রি করি কিন্তু সে আমাকে বলে 30,000 টাকা নিয়ে তার বাবাকে সুস্থ কর যদি টাকা হয় আবার টাকা ফেরত দিয়ে বাড়ি নিয়ে নিস। সেই টাকা দিয়ে দিস।আমি মাঝে টিউশনি করেছি আমার পাড়ার ছোট্ট চাচতো ভাই বোনদের। এখন ভার্সিটিতে ভর্তির সময়। গ্রামে কোন ভার্সিটি নেই এজন্যই ঢাকা শহরে আসা। বাবাকে নিয়ে ঢাকা শহরে চলে আসে। এখানে এসে ভার্সিটি এডমিশন হয় আর একটা বাসা ভাড়া নেই। ভার্সিটি আরো দুইদিন আগে শুরু হয়েছে কিন্তু আমি কালকে ঢাকায় এসেছি। এজন্য আজকে ভার্সিটিতে এলাম। মনে হাজারো স্বপ্ন বুনে ভাসিটির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকি। ভার্সিটিতে পরবো এটা আমার স্বপ্ন অনেক লেখাপড়া করব।ভার্সিটি দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যায় বিশাল বড় একটা মাঠ কত ছেলে মেয়ে ঘটছে আড্ডা দিচ্ছে। এই সবার মাঝে আমিও থাকব ভাবতেই খুশিতে মনটা নেচে উঠছে। দুই কদমে এগুতেই কেউ আমার হাত টেনে ধরে দেখে একটা মেয়ে। হ্যাঁ মেয়েটা আমাকে টেনে পিছিয়ে আসে আর বলে,,
— আমাকে বাঁচাও??

আমি হাঁ করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। বাঁচাও মানে কি বলছি মেয়েটা।

—কি হয়েছে তোমার এরকম করছ কেন এত ভয় পাচ্ছ কেন?
—আমাকে বাঁচাও প্লিজ? ওরা আমাকে ধরে ফেলেছে এবার আমাকে দিয়ে কিনা কি করাবে? আমার আপু বলেছে এরা নাকি প্রচন্ড ডেঞ্জারাস লোক খারাপ খারাপ কাজ করায় সবার সামনে হাসির পাত্র বানায়। আমি এজন্যই আগে জাইতে চাচ্ছিলাম তবুও তারা আমাকে দেখে ফেলেছে এবার আমাকে ডাকছে ওই দেখো ওই যে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এখন আমি কি করব??তুমি নিশ্চয়ই ফার্স্ট ইয়ারের না তাই না তোমাকে তো কিছু বলবে না তুমি একটু আমার হয়ে কথা বলে দাও না ??

স্নেহা কিছুই বুঝতে পারছেনা হা করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটার চোখের ইশারায় তাকিয়ে দেখে কয়েকজন ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।‌ সবাই ওদেরকে সেখানে যেতে বলছে।

—আমিও ফার্স্ট ইয়ারের আপু আপনি ও কি ফার্স্ট ইয়ারের?আমাদের ডাকছে বড় ভাইয়ারা চলেন যাই শুনে আসি কি জন্য ডাকছেন?

—কি বলছ কি তুমি জেনেশুনে বাঘের খাঁচায় ধরা দিতে যাচ্ছ?

—মানে ঠিক বুঝলাম না আপনার কথাটা?

—আরে ওরা রাগিং দল ওরা কি করে জানো ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে মেয়েদেরকে দিয়ে ওরা আজেবাজে কাজ করিয়ে হাসি তামাশা করে। ওরা খুব ডেঞ্জারাস আর তুমিও তো ফার্স্ট ইয়ার তাহলে তো তোমাকে এখন আমার কি হবে ??

বলেই এই মেয়েটা কান্না করে দিল। মেয়েটার কথা শুনে এবার আমার ভয় করছে। আমি তো এসব বিষয় কিছুই জানতাম না। হঠাৎ একটা চিৎকার শব্দ এলো যা শুনে ভয়ে ভয়ে দুজনেই দুজনের হাত ধরে তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

—এই মেয়ে তোমাদের কখন থেকে ডাকছি এতো লেট করে এলে কেন? একজন বললো ওখান থেকে

—আরেকজন বলল; তোমরা কি ফার্স্ট ইয়ার?

দুজনে মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালাম।

—বড় ভাইয়েরা ডাকাছে আর তোমরা তাদের কথা অমান্য করতে চাইছিলে। তোমাদের সাহস দেখছি অনেক। আরেকজন বলল;

–আরে আশিক দুজনেই তো দেখা যায় ভয়ে কাবু। কেমন কাঁদছে একজন তোকে দিয়েই শুরু করি। আরেকজন কাদবে কাদবে ভাব।

বলে সবগুলো ছেলেমেয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
—একটা মেয়ে আমাকে ইশারা করে বললো এই মেয়ে তুমি এই ভার্সিটিতে পড়ো?

আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানালাম!
সাথে সাথে মেয়েটার নাক কুচকালো মনে হয়।

—ছিঃ কি বাজে পোশাক গাইয়া হবে কোন গ্রাম থেকে উঠে এসেছে এই ভার্সিটিতে চান্স হলে কি করে বলতো? এ কি এই ভার্সিটিতে পড়ার যোগ্য না ক্লাস আছে যত্তসব গাইয়া।

বলে তার ফ্রেন্ডের দিকে তাকালো সেই মেয়েটা একইভাবে আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে লাগলো।

—এই মেয়ে তোমাদের নাম কি?

—স্নেহা…

—অন্তরা!! ভয়ে ভয়ে কথাটা বলল,

—-ওকে অন্তরা স্নেহা। অন্তরা তোমাকে দিয়ে আগে শুরু করি?

অন্তর আমার হাত খামচে ধরে জোরে জোরে কেঁদে দিল।

—এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন?

—আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন?

—ছেড়ে তো দেবই তার আগে আমাদের একটা সুন্দর গান শুনিয়ে যাও তো।

—-আমি গান পারিনা!
নাক টেনে বলল

—তাহলে তো আমরা যেতে দিতে পারব না! গান যদি না গাও তাহলে তোমার জন্য অন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে বেবি। আর এত ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদছে কেন তোমাকে কি আমরা মারছি নাকি ধরে?

আমি ভয়ে কথা বলতে পারছি না একবার অন্তরার দিকে তারপর ওই ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছি। আর এদিকে কিছুতেই অন্তরা গান গাইছে না অন্তরে কেঁদেই যাচ্ছে। ছেলেটা বারবার অন্তরে কাঁদতে মানা করছে কিন্তু অন্তরা শুনতে নারাজ। তাই কাউকে ডেকে উঠল,,

—-ছিধ কাদনি মেয়ে একটা এটাক আমি হ্যান্ডেল করতে পারবোনা। এই রাসেল আদ্র কে ডাকত। কি করবো জিজ্ঞেস কর? এই মাইয়া তো কিছুই কয় না খালি কানদে।

আদ্র নামের ছেলেটি এসেই অন্তরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে ।
—–এই মেয়ে কান্না অফ করো না হলে কিন্তু একটা চড় মারবো।
এতো জোরে চিৎকার করে কথাটা বলল যে সাথে সাথে অন্তরা কান্না অফ হয়ে গেল। স্নেহা তো ভয় অন্তরার হাত ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।এতক্ষণ ওকে নিয়ে সবাই বাজে মন্তব্য করছে গাইয়া নোংরা জামা কাপড় কম দামে জামা কাপড় এ জন্য লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না।
ও গরীব তাই বলে এভাবে সবার সামনে এভাবে কথাটা বলবে ভাবে নি। এই ড্রেসটা স্নেহার সবগুলো সবগুলো ড্রেসের থেকে দামি।নতুন আর দুইটা জামা তার মধ্যে এটা পনেরো শো টাকার থ্রি পিস।এই ড্রেসটাও ইন্টারে জিপিএ 5 পেয়েছে বলে বাবা পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। আর 700 টাকার থ্রি পিস আছে একটা। আজকে প্রথম বলে ভালো টাই পড়ে এসেছিল। তাও এইভাবে লজ্জিত হবে ভাবেনি।মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে ছিল মেয়েটা একটা শর্ট টপস আর প্যান্ট পড়ে আছে।গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা এতো ফর্সা যে চোখের ঝিলিক মারে।মেয়েটার ঠোটে লাল টকটকে লিস্টে যা মেয়েটা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে।কিন্তু ড্রেসটা স্নেহার পছন্দ হয়নি গলাটা একটু বেশি বড়। চুলগুলো ছেড়ে লেগেছে খুব একটা বড় না কাধ পর্যন্ত।আমি মাথায় ঘোমটা দিয়ে আছি এটা নিয়েও নানা কথা বলেছে মেয়েটা।আমি অপমান সহ্য করি না কিন্তু এতগুলা মানুষের সামনে কিছু বলতে চাচ্ছি না তাই চুপ করে আছি। আর আজকে ফার্স্ট দিন তাই কারো সাথে ঝামেলা করতে চাই না।

—এই যে মেয়ে গান পারো না অন্য যা পারো তাই বলে শোনাও। কি হলো শোনাও?
আদ্রর চিৎকার শব্দ কানে আসতেই অন্তরা বলতে লাগে।

——” আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস,,,,,”

এইটুকু বলতেই চারপাশে থেকে অট্টহাসি কানে আসে আমি আর মাথা নিচু করে থাকতে পারিনা তীক্ষ্ণ চোখে সবার দিকে তাকিয়ে। সবাই এমন কেন সবাই মজা নিচ্ছে। এবার আমি মুখ খুললাম না এগুলো সহ্য করা যায় না।

মাথা উঁচু করে ওই ছেলেটার দিকে তাকালাম! একটা বাজে গন্ধ আমার নাকে এল? ভালো করে তাকিয়ে দেখি ওই ছেলেটা মানে আদ্র নামের ছেলেটা। স্মোকিং করছে সিগারেটের গন্ধ আমি একদম সহ্য করতে পারি না আমার গা ঘুলায়। ছেলেটার পরনে সাদা শাট হাতা হাতের কনুই পর্যন্ত উঠিয়ে রেখেছে। বুক পর্যন্ত তিনটে বোতাম খোলা সেখানে সানগ্লাস। বাদামি কালার প্যান্ট গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখতে খারাপ না কিন্তু স্বভাব চরিত্র খারাপ। আর হাতে সিগারেট যা একটু পরপর টান দিয়ে হাওয়া ছাড়ছে। কি অসভ্য লোক এভাবে কেউ কারো মুখের সামনে এসেছে স্মোকিং করে। স্নেহা নাক মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে তারপর ছেলেটাকে বলে।

—-দেখুন আমাদের যেতে দিন । এভাবে আমাদের হেনস্থা করতে পারেন না আপনারা।এখন যদি আমাদের সাথে আর কিছু করার চেষ্টা করেন আমরা কিন্তু প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করব আপনাদের নামে।

আমার কথাটা ছেলেটার কানে যেতেই ছেলেটা রক্ত লাল চোখ করে আমার দিকে ফিরল। এতক্ষণ অন্যদিকে ফিরেছিলাম আমি তার একপাশ দেখছিলাম ছেলেটা আমার দিকে সরাসরি তাকাতেই আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলো। কি ভয়ঙ্কর করে তাকিয়েছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আমাকে বষ্স করে দেবে। আমি তার তাকানো অগ্রাহ্য করে মনে আরেকটু সাহস নিয়ে বললাম!!

—আমাদের যেতে দিন প্লিজ!

—-কি বললে তুমি প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করব আমাদের নামে।

জোরে হুংকার দিয়ে কথাটা বলল। হুংকার শুনে আমার হৃদপিণ্ড চলাচল মনে হয় বন্ধ হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে আবার তাকালাম।
অন্তরার হাত শক্ত করে খামচে ধরে দুজন জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
চলবে♥️

#অচেনা শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১

[ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]
♥️মিষ্টি♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here