প্রাণস্পন্দন পর্ব ৫৬+৫৭

#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ৫৬
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

জোর হাওয়া বইছে। গাড়ির জানালা দিয়ে আসা সেই হাওয়া হানা দিচ্ছে আয়েন্দ্রির চোখে। সে নীরব,নিশ্চুপ। ড্রাইভিং সিটে মিশকাত। তার উদ্বিগ্ন, উদ্বেলিত মস্তিষ্কে চঞ্চল ফড়িং এর মতো টিকটক করছে প্রশ্নেরা। আয়েন্দ্রি তার নীরবতা ভাঙল। সরব গলায় বলল—

“প্রাণ ইন্টারসিটেন্ট এক্সপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। এটা একটা মানসিক রোগ। যার দরুন প্রাণ হুটহাট রেগে যায় আর ওর রাগের মাত্রা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটু বেশিই হয়। ও চিকিৎসা করালেই সুস্থ হয়ে যাবে।”

মিশকাত সন্দিগ্ধ গলায় ছোট্ট করে বলল—

“আর ইউ শিওর আয়েন্দ্রি? আমার তা মনে হয় না।”

আয়েন্দ্রি ঝনাৎ করে উঠে বলল—

“কেন মনে হয় না আপনার? আমি ওর রিপোর্ট দেখেছি। ঠিকমতো বিহাভিয়ার থেরাপি আর মেডিসিন নিলেই প্রাণ ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে এক্সপোজার এড রেসপন্স প্রিভেনশন পদ্ধতি ব্যবহার করলে ও দ্রুত সুস্থ হবে, এমনটা উল্লেখ আছে সেখানে।”

মিশকাত সন্দেহ নিয়ে হেয়ালি গলায় বলল—

“যদি তাই হয় তাহলে তুমি পালাচ্ছ কেন?”

আয়েন্দ্রি শক্ত কণ্ঠে ঘোষণা করল—

“কারণ, আমি ওর কাছে থাকলে এ কখনো বুঝতে পারবে না ও সত্যিই অসুস্থ। আপনারা প্লিজ ওর পিছু ছেড়ে দিন। ও কাউকে খুন করেনি। ওর পরিবারের মৃত্যু একটা অ্যাকসিডেন্ট ছিল। যেখানে ওর কোনো হাত নেই। রোমানকে ও ওর অসুস্থতার কারণে খুন করেছে। ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।”

“তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ নিষ্প্রাণ মানসিকভাবে অসুস্থ, কিন্তু সে সাইকোপ্যাথ নয়?”

আয়েন্দ্রি কঠোর গলায় বলল—

“হ্যাঁ। ওকে চিকিৎসা করালেই ও ঠিক হয়ে যাবে। আপনারা প্লিজ ওকে ওর মতো থাকতে দিন। ”

মিশকাত শ্লেষাত্মক গলায় বলল—

“রোমানের খুনের জন্যও কী ওর সাজা পাওয়া উচিত নয়? ও তো কারো সন্তান?”

আয়েন্দ্রি ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল—

“মানছি প্রাণ অন্যায় করেছে। কিন্তু ভাবুন তো, সেদিন প্রাণ না আসলে আমার কী হতো! কাকে মুখ দেখাতাম আমি? যে মানুষ এক দেখায় কোনো মেয়ের সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিতে চায়, না জানি আরো কত মেয়ে তার স্বীকার হয়েছে! আমি বলছি না প্রাণ ঠিক করেছে। কিন্তু, আপনার আইন কী আদৌ রোমানকে সাজা দিতে পারত?”

আয়েন্দ্রির অকাট্য যুক্তির নিকট চুপসে যায় মিশকাত। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। আয়েন্দ্রি মিথ্যে বলছে। নিষ্প্রাণ কোনোভাবেই কোনো ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত নয়। যদি তাই হতো তাহলে রোমানকে এমন করে মারা তার পক্ষে সম্ভব নয়। একজন মানসিক রোগীর হঠাৎ উদ্ভুত রাগ কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেলে তাৎক্ষণিক সে এমন কিছু করবে যা ওই মুহূর্তে ওই স্থানে সম্ভব। কিন্তু মিশকাত পুরো বিষয়টা শুনেছে সারকের কাছ থেকে, এমনকি আয়েন্দ্রির পরিবার এবং তার বন্ধু- বান্ধব থেকেও। যা ঘটেছে তা কোনোভাবেই সহসা ঘটা কোনো ঘটনা নয়। পুরোটাই ঠান্ডা মাথায় করা। যা একজন সাইকোপ্যাথ করে থাকে। যদি রাগের বশেই হয়ে থাকে তাহলে কেন সে তার চিকিৎসা করাইনি, তার কেন কোনো অনুতপ্ততা নেই? না, আয়েন্দ্রির যুক্তি মিথ্যে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

আয়েন্দ্রি পাশ ফিরে তাকায়। তার ভেতরটা দুমড়ে মুছড়ে যাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আবদমন করছে সে। তবুও পারল না। কী করে পারবে সে? নিজের সন্তানের কথা ভেবে যাকে ছেড়ে এসেছে আদৌ তাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে! যে হিংস্র মানুষটা বিনা দ্বিধায় মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় সে মানুষটার প্রাণ তার জঠরে নিয়ে ঘুরছে। ওই ভয়ংকর, প্রাণহীন মানুষটাকে ভালো না বেসে পারেনি সে। ঘৃণা করতে করতে কখন যে ভালোবেসেছে তা আয়েন্দ্রি নিজেও জানে না। কিন্তু কী করবে? কোনো মানুষ যদি নিজের অসুস্থতা বুঝতে না পারে তাহলে তাকে বুঝানো দায়। নিষ্প্রাণকে বুঝতে হবে তার এই রাগ, হিংস্রতা এই ভয়াল আগ্রাসন কোনো সাধারণ জীবনধারা নয়।
,
,
,
আয়েন্দ্রির ফুফু তাকে দেখে বিস্মিত। চট্রগ্রামে ছোট্ট এক এলাকায় তাদের বসবাস। তার ফুফু অনেকবার জানতে চেয়েছে ঘটনা। কিন্তু আয়েন্দ্রি কিছুই বলেনি। মিশকাতও মুখ খোলেনি। তিনি চিন্তিত। বসার ঘরে বসে আছেন আয়েন্দ্রির ফুফু লিমা। মিশকাত তার মেয়ের দেবর হয়। মিশকাত সারকের সাথে কথা বলেছে। আয়েন্দ্রির মিশকাতের নাম্বার দিয়ে ভোরেই তার বাবা-মাকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে যেন তারা চট্রগ্রাম তার ফুফুর বাসায় চলে আসে। এখান থেকে তারা রাঙামাটি চলে যাবে। সেখানে তাদের দুঃসম্পর্কের এক মামা আছে। নিষ্প্রাণের মোবাইল ড্রেসট্রয় করে রাস্তায় ফেলে দেয় আয়েন্দ্রি। এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়েছে তাদের। আয়েন্দ্রিকে জোর করেও কিছু খাওয়ানো যায়নি। অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে সে। বিকেল থেকে লাগাতার তার বাবার নম্বরে কল করছে মিশকাত। কিন্তু নট রিচেবল বলছে। সারক শহরের বাইরে ছিল। বলেছে ফিরলে কল করবে। কিন্তু তারও কোনো হদিস নেই। সন্ধ্যার দিকে চোখ লেগে এসেছে আয়েন্দ্রির। কাঁদতে কাঁদতে দু’চোখ বুজে আসে মেয়েটার।
,
,
,
কারো অগোছালো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় আয়েন্দ্রির। চকিতে নিষ্প্রাণের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখে ধক করে ওঠে তার বুক। যেন পলকেই তার কলিজা চলে এলো মুখের কাছে। আয়েন্দ্রি সশব্দে শ্বাস ফেলল। মেঝের উপর আসন পেতে একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো বসে আছে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রি ভয়কাতুরে গলায় বলল—

“তুতুতুই? তুই এখানে কী করে এলি?”

নিষ্প্রাণ বিগলিত হাসল। তার চোখ দুটো সুন্দর, নির্মল। আয়েন্দ্রির হঠাৎ মিশকাতের কথা মনে পড়ল। দৌড়ে উঠতে গেলেই নিষ্প্রাণ হাত টান দিয়ে তাকে বিছানায় ফেলে দেয়। আয়েন্দ্রির উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে উবু হয়ে বলল—

“ভয় পাস না। মিশকাতকে আমি কিছু করিনি। ওর সাথে আমার দ্বন্ধ নেই। ও পুলিশ। তাই ওর কাজ ও করেছে, আর আমার কাজ আমি।”

আয়েন্দ্রির বক্ষস্থল উঠানামা করছে সমানতালে। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার। নিষ্প্রাণ হৃদয় ভেজা হাসল।

“এত ভালোবাসা গো জান
রাখিও আঁচলে…..
দোলাও তুমি, দুলি আমি, জগত বাড়ি দোলে।”

নিষ্প্রাণ তার অধরের স্পর্শ আঁকে আয়েন্দ্রির গলদেশে। তার উপর থেকে সরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে সরল গলায় বলল—

” তোকে যেতে দেবো তুই ভাবলি কী করে? তুই এত কিছু করবি আর আমি জানব না?”

আয়েন্দ্রি কোনো উত্তর করল না। সে স্থির দৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে রইল। নিষ্প্রাণ উঁচু হয়। আয়েন্দ্রির দিকে ফিরে হাতের কনুইতে ভর দিয়ে মাথা রাখে। আত্মবিশ্বাসী গলায় বলল—

“তোর শ্বাসে আমি, তোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার বসবাস। তোর প্রতিটি পলকে আমি, তোর শিরায় শিরায় আমার জয়গান। তোর প্রতি লোমকূপে আমি, তোর হৃৎকম্পনে আমার ত্রাস। সেই তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছিস? ধ্রুবতারা, তুই এখনো আমাকে বুঝতে পারলি না।”

নিষ্প্রাণ দৈবাৎ ওঠে দাঁড়ায়। আয়েন্দ্রির হাত টেনে এক ঝটকায় তাকে দাঁড় করায়। আয়েন্দ্রি থমকে যায়। নিষ্প্রাণের বাড়ন্ত পদযুগল রুখে যায়। নিষ্প্রাণ পেছন ফিরে তাকায়। চোয়ালের পেশি শক্ত করে বলল—

“চল।”

আয়েন্দ্রি দাঁপিয়ে উঠে বলল—

“যাব না আমি।”

নিষ্প্রাণের মস্তিষ্কে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হলো। তবে নিজেকে শান্ত রেখে বলল—

“ঝামেলা করিস না ধ্রুবতারা। চল আমার সাথে।”

“বললাম তো যাব না আমি। মুক্তি দে আমাকে। বাঁচতে দে আমাকে।”

“আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবি?”

মেঘের আঁধার জমে গেল আয়েন্দ্রির মুখে। তার অন্তঃকরণে ঝড় শুরু হলো। প্রলয়কারী ঝড়! কিন্তু উপরিভাগ নির্মেঘ আকাশের মতো ঝকঝকে। শান্ত গলায় বলল—

“পারব। পারতে হবে আমাকে। তুই চলে যা এখান থেকে। ”

নিষ্প্রাণ শ্লেষমিশ্রিত হেসে বলল—

“কিন্তু আমি তো তোকে ছাড়া থাকতে পারব না। আমার সন্তানকে ছাড়া থাকতে পারব না। আসলে কী বলতো, তুই কখনো আমাকে ভালোবাসিসনি। তুই আমাকে তারাকে ভুলে যেতে বলেছিস। আমার তারা মরে গিয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আর তুই! কী করিনি আমি তোর জন্য? তুই ভালোবেসেছিস এক কলের পুতুলকে। যাকে তুই তোর দখলে রাখতে চেয়েছিস। কিন্তু আমি তা নই। ”

ফোঁস করে দম ছাড়ল নিষ্প্রাণ। ক্রুর কণ্ঠে বলল—

“তারাকে আমি নিজ হাতে মেরেছি। ওকে এই পৃথিবী থেকে মুক্তি দিয়েছি। কিন্তু তোকে! তোকে আমি মারিনি। আমার তারা বলেছে তুই আমাকে ভালোবাসিস। তারা মিথ্যে বলে না। ”

“তোর তারা মিথ্যে বলেছে। আমি তোকে ভালোবাসি না। চলে যা তুই এখান থেকে।”

নিষ্প্রাণের প্রতিটি শিরায় রক্তেরা তড়িৎ বেগে ছুটতে লাগল। দাঁত, মুখ খিঁচে গরগর করে আবার নিজেকে শান্ত করে নিল নিষ্প্রাণ।
মোহনীয় গলায় বলল—

“মেনে নিলাম। তবুও তোকে আমার সাথেই যেতে হবে। আমার সাথেই আমৃত্যু থাকতে হবে।”

আয়েন্দ্রি খেঁমটি মেরে বলল—-

“বললাম তো যাব না আমি।”

নিষ্প্রাণ অনুদ্বেগ চোখে তাকায়। নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে বিছানায় বসে। মোবাইল বের করতেই আয়েন্দ্রি ভয়ার্ত শ্বাস ফেলে। নমনীয় চোখে হাস্যোজ্জ্বল গলায় নিষ্প্রাণ বলল—

“আমার মোবাইলটা ফেলে দিয়েছিস তাই না? তুই কী ভেবেছিলি মোবাইল ছাড়া আমি তোকে খুঁজে বের করতে পারব না?”

আয়েন্দ্রি কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। নিষ্প্রাণ শিমুল কে কল করে বলল—

“হ্যালো, শিমুল!”

আয়েন্দ্রি ছোঁ মেরে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল—

“তুই শিমুল কেন কল করছিস? আমার বাবা-মা কোথায়? কী করেছিস তাদের সাথে তুই?”

নিষ্প্রাণ বিগলিত হেসে বলল—

“এত টেনশন কেন করছিস? কিছুই করিনি। কত রাত হয়েছে দেখেছিস? শিমুলকে বলব তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে। না খেয়ে থাকবে না কি তারা? তোর জন্য সেই সন্ধ্যা থেকে আমার বাড়িতে বসে আছে।”

আয়েন্দ্রি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। গুমোট শ্বাস ফেলে বলল—

“কেন করছিস এসব? প্লিজ আমার বাবা-মাকে ছেড়ে দে।”

“ফিরে চল আমার সাথে। আমি শুধু দেখতে চেয়েছি তুই আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য কী করতে পারিস। সুযোগ দিয়েছি তোকে আমি। নাহলে এই পর্যন্ত কী করে আসতি তুই? এবার তো চল। আমার থেকে দূরে যেতে দেবো না আমি তোকে। আজ অনেক খাটনি করিয়েছিস তুই আমাকে। কল সেন্টার, কবরস্থান, চট্টগ্রাম! ”

আয়েন্দ্রি শ্বাসরুদ্ধ করে বলল—

“কবরস্থান কেন?”

নিষ্প্রাণ অনুভূতিশূন্য গলায় বলল—

“দাদু আর নেই ধ্রুবতারা। ”

আয়েন্দ্রি চিৎকার করে উঠে বলল—

“তুই, তুই দাদুকে মেরে ফেলেছিস?”

নিষ্প্রাণ অনঢ় গলায় বলল—

“না। বিশ্বাস কর। আমি দাদুকে মারিনি। দাদু তোর চলে যাওয়া সহ্য করতে পারেনি।”

“তুই মিথ্যে বলছিস!”

নিষ্প্রাণ ওঠে দাঁড়ায়। আয়েন্দ্রির কপালে অধর ছুঁইয়ে বলল—

“তোকে ছুঁয়ে বলছি। আমি কিছু করিনি।”

আয়েন্দ্রির বুক কেঁপে ওঠল। তার কারণে বুড়ো মানুষটা এভাবে মারা গেল!

আয়েন্দ্রির হাত মুঠোবন্ধি নিষ্প্রাণের। তাদের পথ আগলে দাঁড়ায় মিশকাত। বাঁকা হাসল নিষ্প্রাণ। সজীব গলায় বলল—

“যেতে দিন মিশকাত।”

আয়েন্দ্রির ফুফু লিমা চোখ গোল গোল করে বলল—

“ওকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছ?”

“আমার বউ। আমার বাড়ি ছাড়া কোথায় যাবে! ধন্যবাদ ওর খেয়াল রাখার জন্য। বিয়েটা হুট করে হয়েছে। তাই আপনাদের সাথে দেখা হয়নি। বাসায় আসবেন। দাওয়াত রইল। আপনিও আসবেন মিশকাত আর অবশ্যই সারককে সাথে নিয়ে আসবেন। আসি। চল ধ্রুবতারা।”

থানায় গিয়ে মিশকাতের নাম্বার নিয়েছিল নিষ্প্রাণ। মিশকাতের কল লিস্ট থেকে বাকিসব। সব জেনে বুঝেই আয়েন্দ্রিকে তার পরিকল্পনায় সফল হতে দিয়েছে নিষ্প্রাণ। কারণ ধ্রুবতারা জানে না, প্রাণ তার স্পন্দনকে কোথাও যেতে দেবে না।
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ৫৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

বাসায় ঢুকতেই ঝুমা মেয়েকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। আয়েন্দ্রিকে জড়িয়ে ধরে ভেজা গলায় বললেন—

“কী হয়েছে তোর আয়ু? কোথায় ছিলি তুই? তোর এই অবস্থা কেন?”

আয়েন্দ্রি থমথমে গলায় বলল—

“কিছু হয়নি আমার।”

আয়েন্দ্রি আলফাজ সাহেবের কাছে এগিয়ে গেল। তিনি নির্বিকার, নীরব। আয়েন্দ্রি বাবার বুকে মাথা রেখে ক্লান্ত শ্বাস ফেলল। আলফাজ সাহেব নিজের অক্ষমতায় জর্জরিত। এক হাত রাখলেন আয়েন্দ্রির পিঠের উপর। চিবুক লাগিয়ে রাখলেন আয়েন্দ্রির শিয়রে। আরাজ, আরিশা বোনের বুকে পড়ল। কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলল আরিশা। ছোট্ট মেয়েটি ভীষণ ভীত। নিষ্প্রাণ স্বাভাবিকভাবেই ঘরে প্রবেশ করল। তার তীক্ষ্ম, শান্ত, সপ্রতিভ চাহনি। কারো সাথে বাক্য বিনিময় হলো না তার। নিষ্প্রাণ সোজা চলে গেল উপরে।

কাবার্ড থেকে তোয়ালে বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে নিষ্প্রাণ। ঘড়ির কাটায় তখন মধ্য রাত। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল আয়েন্দ্রি দাঁড়িয়ে আছে। চট করেই প্রশ্ন করে আয়েন্দ্রি—

“বাবা-মাকে কেন এনেছিস এখানে?”

নিষ্প্রাণ ভেজা চুলের পানি শুঁষে নিল তোয়ালে দিয়ে। গায়ে পরল একটা পাতলা টিশার্ট। আয়েন্দ্রির দিকে তাকিয়ে তরল গলায় বলল—

“তোকে অনেকদিন দেখেনি তাই। তুই ভাবছিস, তোর কল পেয়েও কেন তারা চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারেনি?
কারণ, আমি যেতে দেইনি। শিমুলের কথা ভুলে গেলি কী করে? ও সবসময় তোদের বাড়ির আশেপাশেই ছিল।”

আয়েন্দ্রি নিষ্প্রভ চোখে চেয়ে আছে। তার বিতৃষ্ণা ভরা চোখে টলটল জল। নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির কাছে এসে দাঁড়াল। তার গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল—

“ফ্রেশ হয়ে নে। আর একদম তৈরি হয়ে নিচে আসবি।”

আয়েন্দ্রির টানটান ভ্রুতে কুঞ্চন আসে। চোখের কোটর ক্ষুদ্র হয়। নিষ্প্রাণ প্রস্থান করে সেই স্থান।

আয়েন্দ্রি একটা গাঢ় মেরুন রঙের সুতি শাড়ি পরে। তার হাত ভর্তি সোনার চুড়ি। কানে ঝুমকো। ভেজা চুলে পিঠ জড়ানো। সদ্যস্নাত আয়েন্দ্রিকে অনেক বেশিই স্নিগ্ধ লাগছে! তার ফ্যাকাশে রঙটায় সহসা সোনাভাব ফুটে উঠেছে। আয়েন্দ্রি বিভ্রান্ত হয়। তার বাবা-মা কেউ নেই। চমকিত গলায় প্রশ্ন করে আয়েন্দ্রি—

“মা, বাবা কোথায়? আরাজ, আরিশা কোথায়?”

নিষ্প্রাণ নির্বিঘ্ন গলায় বলল—

“তাদের খাওয়া শেষ। অনেক রাত হয়েছে। তাই শিমুলকে বলেছি বাসায় পৌঁছে দিতে।”

আয়েন্দ্রি শ্বাস নিল। কোনো প্রতিক্রিয়া করল না।

“বস।”

খাবার বাইরে থেকে আনা হয়েছে। আয়েন্দ্রিকে নিজের সামনে বসায় নিষ্প্রাণ। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে কিয়ৎপল চেয়েই রইল। যেন থমকে গেল ধরণী। আয়েন্দ্রির ভেজা চুলের স্নিগ্ধতা, স্নিগ্ধ রূপের মোহনীয়তায়, তার কায়ার সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রির মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল—

“আর কত পালাতে চাস তুই আমার কাছ থেকে? তোর কেন মনে হয় আমি আমার সন্তানের জন্য সেফ নই? ভালোবাসি আমি তোকে ধ্রুবতারা। ঠিক যতটা না নিজেকে ভালোবাসি, তারচেয়ে বেশি।”

আয়েন্দ্রির ভাবিত চাহনির বিপরীতে নিষ্প্রাণ ফের বলল—

“আর কোনো সুযোগ আমি তোকে দেবো না। এরপরের বার এমন হলে আমি তোকে ক্ষমা করব না। মনে রাখিস।”

আয়েন্দ্রির ছোটো ছোটো লোকমাগুলো গিলে নিচ্ছে। তার মধ্যে কোনো ভাবাবেশ হলো না। যেন সে জানে এসব।
,
,
,
সময় চলছে। চলছে ধারাবাহিক জীবন। জীবন থমকে যাওয়ার নয়। জীবন চলে তার আপন গতিতে। কেউ ছেড়ে গেলে তাকে মনে করে, আমরা আমাদের জীবন চলার রুটিন হয়তো দুইদিনের জন্য বদলে ফেলি। কিন্তু সময়ের সাথে আবার চলে আসি ফেলে আসা সেই ধরাবাঁধা নিয়মে। বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। অতীত শুধু মানুষকে পেছনে টেনে রাখে।

ডিভানের উপর গুটি মেরে শুয়ে আছে আয়েন্দ্রি। তার সংকুচিত, সচল, সচেতন দৃষ্টি সামনের সুদর্শন পুরুষটির দিকে। আজ নিষ্প্রাণ অফিসে যাবে। নতুন করে সব শুরু করবে সে। তাদের কোম্পানি একটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি।

একটা কালো রঙের স্যুট পরেছে নিষ্প্রাণ। তার ফর্সা চেহেরায় আজ অন্যরকম জৌলুস। আয়েন্দ্রির শান্ত মনে অশান্তের ঢেউ। তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। সবকিছু যেন সময়ের বেগে চলছে। তার মধ্যে প্রাণ নেই। নিয়মমাফিক ভালোবাসার আদান-প্রদান, তাতে নেই অনুরক্তি। আয়েন্দ্রির সামনের সুপুরষটিকে নিয়ে তার এখন আর ভাবতে ইচ্ছে হয় না। ভয় হয় তার। এক ডানাহীন পাখি সে। যাকে নিষ্প্রাণ তার বক্ষ পিঞ্জিরায় আবদ্ধ করে রেখেছে। নিষ্প্রাণ হাতঘড়িটা পরে নিয়ে আয়েন্দ্রির কাছে এগিয়ে আসে। আয়েন্দ্রির দিনগুলো এভাবেই কাটে। শুয়ে, বসে,ভেবে। খোলা আকাশ দেখা হয় না তার। স্বাদ নেওয়া হয় না মুক্ত বাতাসের। তার দিনের শুরু নিষ্প্রাণের শ্বাসে, তার রাতের শেষ নিষ্প্রাণে শ্বাসে।

হাঁটু ভাঁজ করে বসে নিষ্প্রাণ। আয়েন্দ্রির কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতেই তার শান্ত চোখজোড়ায় দৃষ্টিপাত হয় নিষ্প্রাণের।

” খারাপ লাগছে?”

আয়েন্দ্রি ছোট্ট করে উত্তর করে।

“উঁহু।”

আয়েন্দ্রির বাজুতে হাত দেয় নিষ্প্রাণ। কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে শরীর! নিষ্প্রাণ উঠে গিয়ে এসি অফ করে দেয়। জানালার থাইগুলো খুলে মুক্ত বাতাস আসার ব্যবস্থা করে। আয়েন্দ্রির কপালে হাত রেখে বলল—

“কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসব আমি। তোকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যাব। খাবার টেবিলে আছে। খিদে পেলে গরম করে খেয়ে নিস।”

আয়েন্দ্রি পলক ঝাঁকায়। নিষ্প্রাণ চোখে হাসে। এই স্বাভাবিক ব্যবহার কেন মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক হয়ে যায়?

“আমি গেলাম।”

“হু। ”
,
,
,
শরতের নীলাভ্র। সফেদ কাদম্বিনীর ভাঁজে ভাঁজে মুক্ত বিহঙ্গের উড়াউড়ি। মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে নীলাভ মায়া। মৃদুকম্পনে বইছে শীতল মলয়। মহীরুহতে উচ্ছ্বাস। তীব্র কোলাহল ধরণীতলে। শান্ত অম্বর।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আয়েন্দ্রি। নিষ্প্রাণ থাকলে হয়তো এই সুযোগ হতো না।তার কালো রঙের শাড়ির আঁচল দুলে যাচ্ছে মৃদু প্রভঞ্জনে। খোলা,অবাধ্য চুলে উঠেছে ঢেউ। আয়েন্দ্রিকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে আসে নিষ্প্রাণ। তার পায়ের আওয়াজেই ফিরে তাকায় আয়েন্দ্রি। নিষ্প্রাণ সরস গলায় প্রশ্ন ছুড়ে—

“এখানে কী করছিস?”

আয়েন্দ্রি প্রসন্ন হাসে। বলল—

“তোকে মুক্তি দিতে এসেছি।”

অনুপলেই চোয়াল শক্ত হয় নিষ্প্রাণের। চোখে জমে রক্ত। খরখরে গলায় বলল—

“কী ফাজলামো করছিস!”

আয়েন্দ্রি ফিক করে হেসে ফেলে। নিষ্প্রাণ এর কারণ বোঝে না। তার শরীরে কম্পন শুরু হয়েছে। চিত্তে উঠেছে ঝড়! আয়েন্দ্রি উদ্ভ্রান্তের মতো হেসে বলল—

“হুম। আজ তোকে আমি মুক্তি দেবো। এই জীর্ণ জীবন থেকে মুক্তি দেবো। এই মায়াজাল থেকে মুক্তি দেবো। তোর আর কোনো পিছুটান থাকবে না।”

নিষ্প্রাণ ফুঁসে উঠে বলল—-

“বাজে কথা বলবি না। সরে আয় ওখান থেকে।”

খলখলিয়ে হেসে ওঠে আয়েন্দ্রি। নিষ্প্রাণ পা বাড়াতেই চেঁচিয়ে ওঠে সে।

“ওখানেই দাঁড়া। না হলে কিন্তু আমি এখনই ঝাঁপ দেবো।”

“ধ্রুবতারা! আরেকবার এই কথা বললে জানে মেরে ফেলব তোকে আমি।”

আয়েন্দ্রি আবার হাসে। মুক্ত হাসি।

“আমি চাই না তোর হাতে মরতে। শান্তি পাবো না আমি। তুইও পাবি না। অনুশোচনা বড্ড পোড়ায় প্রাণ। তবে আমি বেঁচে থাকলে তুই শান্তিতে থাকতে পারবি না।”

আয়েন্দ্রি তার শাড়ির আঁচলের ভেতর থেকে একটা ধারালো ছুরি বের করে। নিষ্প্রাণের শ্বাস যেন এক মুহূর্তেই জন্য রুখে গেল। ছুরির দিকে তাকিয়ে তার চোখের কোটর থেকে চোখের মনি বেরিয়ে আসার যোগাড়।

আয়েন্দ্রি কোমল হাসে। ছুরিটার দিকে তাকিয়ে বলল—-

“অনেক মানুষকে মেরেছিস তুই তাই না প্রাণ? কারো জন্য তোর কষ্ট হয়নি। আজ হবে। আমি চাইলেও তোর কোনো ক্ষতি করতে পারব না। ভালোবেসেছি তো। ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু কামনা করা যায় না। কিন্তু নিজেকে তো মারতে পারব।”

নিষ্প্রাণের ভেতরটা নাড়া দিয়ে ওঠে। তার চোখ ভরে আসে। আয়েন্দ্রি গাঢ় দৃষ্টিতে চাইল সেই জল ভরা চোখে। আজ নিষ্প্রাণের চোখে প্রাণ দেখা যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে এসেছে নিষ্প্রাণের। শুষ্ক গলায় বলল—

“পাগলামি করিস না ধ্রুবতারা। প্লিজ ওটা ফেলে দে। আমার কাছে আয় প্লিজ। তুই পড়ে যাবি। ব্যাথা পাবি তুই। প্লিজ এমন করিস না। আমাদের সন্তানকে বাঁচতে দে ধ্রুবতারা। ”

নিষ্প্রাণ কথার ছলে পা আগায়। আয়েন্দ্রি তা টের পেয়েই চেঁচিয়ে ওঠে।

” একদম আগাবি না। আমি কিন্তু…।”

নিষ্প্রাণ আবার থমকে যায়। অদ্ভুত ভঙ্গিতে নিজের হাতের উপর ছুরি ঘোরাতে থাকে আয়েন্দ্রি। তার চোখে- মুখে কোনো ক্লেশ নেই। সে নিরুদ্বেগ। নিষ্প্রাণ শাসিয়ে উঠে—

“তুই যদি একটা আঁচড় দিস তোর গায়ে, তাহলে কিন্তু আমি তোর পরিবারের কাউকে ছাড়ব না।”

সশব্দে হেসে ওঠে আয়েন্দ্রি। বলল—

“কতজনকে মারবি তুই? সবাইকে মেরে ফেল। সবাই মরলে তুই কী করে বাঁচবি?”

নিষ্প্রাণ আঁখুটে গলায় বলল—

“প্লিজ ধ্রুবতারা, এমন করিস না। তুই যা বলবি আমি করব। আমি অসুস্থ। আমি নিজের চিকিৎসা করাব। তুই আমাকে ছেড়ে যাস না। তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।”

আয়েন্দ্রি পৈচাশিক হাসে। কপট চমকিত গলায় বলল—

“কষ্ট হচ্ছে তোর? ওই মানুষগুলোরও কষ্ট হয়েছে তখন যাদের তুই মেরেছিস। মানছি ওরা দোষী। কিন্তু একবার ভাবতো, ওদের মধ্যে কেউ কেউ তো নিজেকে শুধরেও নিতে পারত! কিন্তু তুই তাদের সেই সুযোগ দিসনি প্রাণ। কারণ, তুই এক প্রাণহীন মানুষ। কোনো আবেগ তোকে ছুঁতে পারে না। মানুষ কেন সর্বশ্রেষ্ঠ জানিস? কারণ তাদের মনুষ্যত্ব আছে। তোর তা নেই।”

রাগে নিষ্প্রাণের ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে। টনটন করছে মস্তিষ্ক। বেপরোয়া রক্ত চলাচল। নির্বাক অন্তঃকরণে জলোচ্ছ্বাস। ভাসিয়ে নেবে সব। দুমড়ে যাবে ধরণীতল।
আয়েন্দ্রি ধরা গলায় বলল—-

“আমি না থাকলেই তুই সুস্থ হবি। নিজেকে বুঝতে শিখবি। যেমন তারা না থাকার কারণে তুই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলি! ”

“ধ্রুবতারা, আমি তোকে কথা দিচ্ছি। তুই যা বলবি আমি তাই করব। নিজের চিকিৎসা করাব আমি। তোর থেকেও দূরে থাকব। তবুও তুই এই পাগলামি করিস না। তো প্রাণ তার স্পন্দনকে ছাড়া বাঁচবে না।”

আয়েন্দ্রির বুকে চিনচিনে ব্যাথা হয়। গলা ফাটিয়ে তার কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই তার। নিষ্প্রাণ কোনোদিনও তাকে নিজের থেকে আলাদা হতে দেবে না। আয়েন্দ্রি নিমগ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নিষ্প্রাণের দিকে। আরেকটু পরেই এই মানুষটা থেকে অনেক দূরে চলে যাবে সে। দীর্ঘ দুই মাস নিজের সাথে লড়াই করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়েন্দ্রি। নিজের সন্তানকে সে জন্ম দিতে চায় না। নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির জন্য যা করছে, না জানি নিজের সন্তানের জন্য আরও কত অঘটন ঘটায় সে। চিকিৎসা ! হ্যাঁ, চিকিৎসার প্রয়োজন নিষ্প্রাণের। কিন্তু যতক্ষণ না সে অনুতপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ সে উপলব্ধি করবে না তার ভুল। আর এই উপলব্ধির একমাত্র উপায় আয়েন্দ্রির বিদায়। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আত্মাহুতি দিয়েই সে তার ভালোবাসাকে নতুন প্রাণ দিয়ে যাবে।

দৈবাৎ জোরালো বাতাস বইতে থাকে। আয়েন্দ্রির শাড়ির আঁচল আচমকা তার মুখের উপর এসে পড়ে। চট করে পা বাড়ায় নিষ্প্রাণ। কিন্তু বিঁধিবাম!
দ্রুত পা চালাতে গিয়ে পা পিচলে যায় নিষ্প্রাণের। আয়েন্দ্রিকে টেনে ছুড়ে ছাদের এপাশে ফেললেও নিজের শেষ রক্ষা করতে পারেনি নিষ্প্রাণ। দেয়াল ছিটকে পড়ে যায় নিচে।

আয়েন্দ্রি ছাদের পাটাতনে মুখ থুবড়ে পড়ে। কপালে আঘাত লাগার পরেও ঝাপসা চোখে পেছন ফিরে সে। কোথাও কেউ নেই। নিশ্চেতন হওয়ার আগ পর্যন্ত একটা শব্দই নির্গত হয় আয়েন্দ্রির ব্যাথামিশ্রিত গলা থেকে।

“প্রাণ!”

চলবে,,,

(বি.দ্র:
আগামী পর্বেই শেষ)
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here