#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৫|
সফেদ রঙের ফাইল নিয়ে অনুরাগ সবে বসের কেবিনে প্রবেশ করল। বস তখন মোবাইলে ভিডিও দেখছেন। কাজের ফাঁকে একটুখানি অবসর বৈকি! অনুরাগকে দেখে বস সঙ্গেসঙ্গে ফোন বন্ধ করে ফেললেন। ফোনটি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে গলা কেশে গম্ভীর হবার চেষ্টা করে বললেন,
‘ টেক অ্যা সিট, অনুরাগ। ‘
অনুরাগ মুখে সৌজন্যতাস্বরূপ হাসি রেখে বসের সামনে রাখা চেয়ারে বসে। হাতে থাকা ফাইলটি বসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ এখানে নতুন যাদের হায়ার করার জন্যে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে, তাদের সবার লিস্ট আছে। কাইন্ডলি চেক করে নিন, স্যার। ‘
সজীব তালুকদার ফাইল হাতে নিলেন। উল্টেপাল্টে ফাইল দেখার ভান করে আবার জায়গায় রেখে দিলেন। অনুরাগের দিকে চেয়ে বললেন,
‘ কজন মেয়ে আসবে ইন্টারভিউতে? ‘
অনুরাগ ভ্রু কুঁচকে ফেলে। বলে,
‘ সরি স্যার, আমি বুঝতে পারিনি। মেয়ে বলতে? ‘
সজীব তালুকদার বেশ দম্ভ নিয়ে বললেন,
‘ মেয়ে বলতে নারী, স্ত্রী, সহধর্মিণী। ‘
অনুরাগ বিরক্ত হল ভীষন। সে জানে সজীব তালুকদার একজন প্যাভার্ট। তার যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে এই অফিসে মেয়েরা রিজাইন নিয়ে বেরিয়ে যায়। কোনো মেয়েই বেশিদিন টিকে থাকে না। বয়স হয়েছে, স্ত্রী সন্তান আছে। তবুও উনার মেয়ে লোভ ক্ষান্ত হয় না। তবে অনুরাগ নিজের বিরক্ত হওয়া মুখে প্রকাশ করল না। বরং বেশ নম্র ভাবে বলল,
‘ আমি জানি স্যার মেয়ে মানে কি! মেয়ে দিয়ে কি হবে? যে ভালো ইন্টারভিউ দেবে সেই চাকরি পাবে। এখানে মেয়ে আর ছেলে ম্যাটার কেন করবে? ‘
‘ আসলে কি বলো তো অনুরাগ! অফিসে মেয়েদের সংখ্যা কম। কিন্তু মেয়েরাই আজকে সারা পৃথিবী রাজত্ব করছে। মেয়েদের মধ্যে সেই পাওয়ার, সেজ এনার্জি আছে। আমি চাই আমাদের কোম্পানি অনেক বড় হোক। তার জন্যে দরকার মেয়েদের এই পাওয়ার, এই এনার্জিকে কাজে লাগানো। বুঝতে পেরেছ? ‘
অনুরাগ ক্ষুব্ধ হয়ে ভীষন। অথচ বেশ শান্ত স্বরে বলে,
‘ জ্বি স্যার, বুঝতে পেরেছি। আমি এখন আসি? ইন্টারভিউ শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যে। বাকি কাজ গোছগাছ করতে হবে। ‘
সজীব তালুকদার বললেন,
‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ। আসো। আর একটা কথা, ইন্টারভিউতে সবার আগে মেয়েদের পাঠাবে। ল্যাডিস ফার্স্ট। ছেলেদের ফাঁকে ফাঁকে একবার পাঠালেই হবে। ‘
অনুরাগের সহ্যের মাত্রা এবার যেন পেরিয়েই যাচ্ছে। সে বসের অগোচরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ সামলানোর বৃথা চেষ্টা করল। মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল,
‘ অবশ্যই স্যার। আপনি যা বলবেন। ‘
অনুরাগ বসকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল বসের কেবিন থেকে। অনুরাগ যাবার পর সজীব তালুকদার আবার ড্রয়ার থেকে ফোন বের করে ভিডিও দেখতে লাগলেন। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে নগ্ন নারী পুরুষের দৃশ্য। সেই নিষিদ্ধ দৃশ্য কামুকি চোখে পরখ করতে লাগলেন সজীব তালুকদার। বুকের ভেতর কামনা উপচে পড়তে লাগল। অবনতি হতে থাকল নৈতিকতার!
অনুরাগ এই কোম্পানির ম্যানাজার। প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছে সে এখানে। তাই কোম্পানির সকল কাজ তার নখদর্পণে। অনুরাগ রিসিপশনিস্টকে বলে দিল, ইন্টারভিউতে আসা সবাইকে যেন ১২টার পর ডাকা হয়। অনুরাগ নিজের কেবিনে এসে ফাইল দেখতে লাগল। বসের কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। না জানি আজ কোন মেয়ের কপাল নষ্ট হবে।
_________________
প্রিয়ন্তি তৈরি হচ্ছি। একটা ভালো কোম্পানির খোঁজ পেয়েছে সে। আজই তার ইন্টারভিউ। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নাকেমুখে খাবার পুড়ে তৈরি হল ও। সবার থেকে দোয়া নিয়ে সকল সার্টিফিকেট রাখা ফাইল নিয়ে বেরিয়ে পরল ঘর থেকে।
প্রিয়ন্তি বেশ হন্তদন্ত হয়ে অফিসে প্রবেশ করল। রিসিপশনিস্টের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,
‘ ইন্টারভিউ কি শুরু হয়ে গেছে? ‘
রিসিপশনিস্ট বলল,
‘ না, আধা ঘণ্টা পর শুরু হবে। আপনি ওখানে বসে অপেক্ষা করুন।’
প্রিয়ন্তি যেন প্রাণ ফিরে পেল। নাহলে প্রথমদিনই দেরি করার কারণে তার মান যেত। প্রিয়ন্তি পাশে তাকাল। অনেক লোক ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কেউ বসে আছে। প্রিয়ন্তি একটা খালি চেয়ারে বসল। এদিকে ওদিক চেয়ে দেখল। বেশ বড়সড় অফিস। ইন্টিরিয়র ডিজাইন চমকপ্রদ। ইন্টার্ভিউ শুরু হয়েছে খানিক পর রিসিপশনিস্ট এসে ডাক দিল প্রিয়ন্তিকে ইন্টারভিউর জন্যে। প্রিয়ন্তি মুখ ভরে শ্বাস টেনে শান্ত হবার চেষ্টা করল। তারপর এগিয়ে গেল সামনে।
বসের কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করল প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি মৃদু স্বরে বলল,
‘ মে আই কাম ইন? ‘
সজীব তালুকদার ফাইল থেকে মাথা তুলে প্রিয়ন্তিকে দেখলেন। প্রিয়ন্তিকে আগাগোড়া দেখে তার মাথা গরম হয়ে গেল। প্রিয়ন্তির নেশা ধরানো ফিগারের দিকে চেয়ে বললেন,
‘ ইয়াহ, কাম ইন। ‘
প্রিয়ন্তি ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারে বসল। সজীব তালুকদার তখনো প্রিয়ন্তির বুকের দিকে চেয়ে। প্রিয়ন্তি সেই কামুক চাউনি দেখে অস্বস্থিতে জমে উঠল। পরনের ওড়না ঠিক করে কাধ ঢেকে নিল। মুখে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে তাকাল। সজিব তালুকদার নিজেকে সামলে নিলেন। খানিক গম্ভির হবার চেষ্টা করে বললেন,
‘ ইউর নেইম? ‘
‘ প্রিয়ন্তি জাহান। ‘
‘ এইজ? ‘
‘ ২৪। ‘
‘ সার্টিফিকেট? ‘
প্রিয়ন্তি তার সার্টিফিকেট এগিয়ে দিল বসের দিকে। সজীব তালুকদার দেখলেন সার্টিফিকেট। এসব তো শুধু বাহানা মাত্র। প্রিয়ন্তি নামের এই আকর্ষণীয় মেয়েকে তার ভীষন মনে ধরেছে। যে করেই হোক তিনি এই মেয়েকে তার অফিসে রাখবেন। এমন সোনায় গড়া মেয়েকে কি হাতছাড়া করা যায়? সজীব তালুকদার ফর্মালিটি স্বরূপ বেশ কয়েকটা সহজ প্রশ্ন করলেন। প্রিয়ন্তি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিল। সজীব তালুকদার বললেন,
‘ আপনি ভীষন মেধাবী একটি মেয়ে। আপনারা আপনার ইন্টারভিউর ফলাফল মেইলে জানিয়ে দেব। ইউ মে গো নাও। ‘
প্রিয়ন্তি ভীষন খুশী হয়। চাকরির পরীক্ষাটা ভালো হয়েছে। চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। প্রিয়ন্তি বেশ হাসিখুশি মুখে বের হয় কেবিন থেকে। বেরিয়ে যেতে লাগল হঠাৎ সামনে এসে যায় অনুরাগ। অনুরাগ প্রিয়ন্তিকে দেখে অবাক হয়। তেমনি প্রিয়ন্তিও অনুরাগকে দেখে ভীষন অবাক হয়। অনুরাগ বিস্ময় স্বরে বলে,
‘ আপনি এখানে? ‘
অনুরাগকে দেখে এই অফিসের কর্মচারি মনে হচ্ছে। তাই প্রিয়ন্তি যথাসম্ভব ভদ্র উত্তর উত্তর দেবার চেষ্টা করে,
‘ ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম। ‘
অনুরাগ শুনে তাচ্ছিল্য করে বলে,
‘ ওহ, চাকরী করতে পারবেন এখানে? কারণ এই অফিসে চাকরী করার একটা মূল শর্ত আছে। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। আই থিঙ্ক ইন্টারভিউ দেবার আগে রুলস পড়েছেন আপনি? ‘
প্রিয়ন্তির রাগ হয়। সেদিনের কথা মনে করে এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে! ছেলেটা অফিসের ম্যানেজার, তার গলায় ঝুলানো অফিস কার্ডে দেখাচ্ছে সেটা। তার সাথে পাঙা নিলে চাকরী হাত থেকে ফসকে যাবে। তাই প্রিয়ন্তি বেশ শান্ত থাকার চেষ্টা করে বলে,
‘ সরি সেদিনের রাফ বিহেভিয়ারের জন্যে। তাড়া ছিল, আর সেই সময়েই এমন অঘটন ঘটল। তাই রাগ করে উল্টাপাল্টা বলেছি। আম সরি ফর দ্যাট। ‘
অনুরাগ এসব সরির গীত কানে তুলে না। বরং বলে,
‘ ভালো ব্যবহার করাও একটা আর্ট। এটা যাকে তাকে দিয়ে হয় না। ‘
কথাটা বলে অনুরাগ আর অপেক্ষা করে না। প্রিয়ন্তিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। প্রিয়ন্তি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। রাগ গিজগিজ করতে থাকে তার মস্তিষ্ক। কতগুলো কথা শুনিয়ে গেল খারাপ ছেলে। রাগে ইচ্ছে করছে ছেলেটার মাথা ফা”টিয়ে ফেলতে। কিন্তু এত বড় কোম্পানিতে চাকরীর জন্যে প্রিয়ন্তি সেই ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখল। সময় তারও আসবে। তখন দেখা যাবে।
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৬|
প্রিয়ন্তি সবে অফিস থেকে বেড়িয়েছে। মাহতিম কল করেছে, জরুরী ভিত্তিতে দেখা করতে চায়। চাকরির বিষয় নিয়ে কথা বলবে। প্রিয়ন্তি মানা করেনি। মাহতিমের কথামত ক্যাফেতে এসেছে। ওই তো কাছেই, মাহতিম বসে আছে। ক্যাপাচিনো কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর বারবার ঘাড় কাত করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। প্রিয়ন্তিকেই খুঁজে যাচ্ছে হয়ত। প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে এগিয়ে আসে।
‘ হঠাৎ জরুরি তলব? ‘
প্রিয়ন্তি কথাটা বলতে বলতে চেয়ার টেনে বসে। সার্টিফিকেট ধারণকৃত ফাইল আলগোছে টেবিলে রাখে। পাশে ব্যাগটাও রাখে। মাহতিম বলে,
‘ কিছু খেয়ে কথা বলি? ক্লান্ত নিশ্চয়ই! ‘
প্রিয়ন্তি সত্যি বেশ ক্লান্ত ছিল। চোখ ধিমে আসছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তি বলল,
‘ আপাতত পানি হলে চলবে। ‘
মাহতিম ওয়েটার ডেকে পানি দিতে বলল। সঙ্গে ক্যাপাচিনো কফি। ওয়েটার আগে পানি দিয়ে গেল। প্রিয়ন্তি এক ঢোক সমস্ত পানি খেয়ে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,
‘ এখন বলো কি বলবে। শুনছি। ‘
মাহতিন গম্ভির হয়ে আসে। টেবিলে নখ দিয়ে খুঁটে অযথা শব্দ করে। বলে,
‘ আচ্ছা, চাকরি না করলে হয় না? চাকরি করে কে কি করে মহা অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে, হু? ‘
‘ বোকার মত কথা বলবে না। তোমার বাবার বয়স হয়েছে। তোমার ভাইয়া একা আর কত সংসার চালাবে? নিজে এবার দায়িত্ত্ব নিতে শেখো। ‘
ইতিমধ্যে ক্যাপাচিনো কফি এসে গেছে। মাহতিম নিজের জন্যে আবারও একটা কফি অর্ডার করেছে। সেটাও এসেছে। মাহতিম প্রিয়ন্তির কথা শুনে হেসে বলে,
‘ চাকরি করলে কি তোমাকে পাব? অযথা কষ্ট। ভাইয়া তো আছেই। ভাইয়া না পারলে তখন নাহয় দেখব চাকরি ব্যাপার। ‘
প্রিয়ন্তি আর কথা বাড়ায় না। পাগলকে বুঝালে বুঝে। কিন্তু মাহতিম হচ্ছে মহা পাগল। একে বোঝানো হচ্ছে দুনিয়ার অসাধ্য। প্রিয়ন্তি কথা বলছে না দেখে মাহতিম জিজ্ঞেস করে,
‘ ইন্টারভিউ কেমন হলো? ‘
কথা বলতে বলতে মাহতিম টেবিল থেকে প্রিয়ন্তির সার্টিফিকেট হাতে নিল। ভ্রু কুচকে সার্টিফিকেটে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। প্রিয়ন্তি নিজের মত করে বলে,
‘ ভালো হয়েছে। তবে বসটা কেমন যেন! একটু অদ্ভুত। চোখটা সারাক্ষন কেমন যেন হয়ে থাকে। ওভারঅল কোম্পানি ভালো লেগেছে। চাকরি হয়ে যাবে বোধহয়। বেতনও ভালো। তুমি এখানে ট্রাই করতে পারো, মাহতিম। আমার মনে হয় তোমারও হয়ে যাবে এখানে। অনেক সহজ প্রশ্ন করে, জানো? ‘
মাহতিম শেষের কথাগুলো শুনেনি। বরং প্রথম কথা শুনেই তার চোখ লাল হয়ে গেছে। প্রিয়ন্তির অগোচরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। শান্ত স্বরে বলে,
‘ বসের চোখ কেমন? ভালো না খারাপ? ‘
প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়,
‘ খারাপ না, আবার ভালোও না। অদ্ভুত! আমার একবার মনে হয়েছিল তিনি আমাকে স্ক্যান করেছে। পরে দেখলাম আমাকে করেনি। আমার পেছনে কি একটা দেখছে। ”
মাহতিম শুনে। অযথা হাসে,
‘ তোমার মধ্যে দেখার মত কি আছে? ওই দুই চোখ, আর নরম গাল, আর হাসি। আর কি দেখবে? ‘
প্রিয়ন্তি চোখ পাকায়,
‘ এগুলো কি দেখার মত কিছু না? ‘
‘ এগুলো দেখেছে বলে তো মনে হচ্ছে না। দেখলে শরীরটাই দেখবে। আমার মত তো আর সবাই ভালো মানুষ না, তাইনা? ‘
মাহতিম হাসছে। প্রিয়ন্তি মিথ্যা রাগ দেখাল। মাহতিম আগের চেয়ে প্রিয়ন্তির সঙ্গে সহজ হয়ে এসেছে। মজা করে, হাসে, অযথা প্রশংসা করে না। প্রিয়ন্তির কথামত এখন শুধু বন্ধুর মত আচরণ করে। তাদের বন্ধুত্ত্ব এই দুই মাসে আগের চেয়ে বেশ দৃঢ় হয়েছে। প্রিয়ন্তি নিজে এখন মাহতিমের সঙ্গে কথা না বললে ভালো লাগে না। মন খারাপ হলে প্রিয়ন্তি মাহতিমকে কল করে। কথা বলে, হাসে, মাহতিম প্রিয়ন্তির সঙ্গে নানা মজাদার কথা বলে। প্রিয়ন্তির মন খারাপ তখন হুহু করে পালিয়ে যায়। নিপা, দৃষ্টি যেমন প্রিয়ন্তির ভালো বন্ধু, তেমনি এখন মাহতিমও প্রিয়ন্তির ভালো বন্ধু হয়েছে। প্রিয়ন্তির মনে এখন আগের মত অপরাধবোধ হয় না। মাহতিমের সামনে গেলে অস্বস্থিতে জমে যায় না। বরং প্রিয়ন্তি-মাহতিমের সম্পর্ক বেশ সহজ হয়ে উঠেছে। তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের! শুধুই বন্ধুত্বের।
তাদের দুজনের কথা বলার মধ্যে কফি শেষ হয়। প্রিয়ন্তি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে। দুজন অর্ধাঅর্ধি টাকা দেবে। এটা তারা সবসময়ই করে আসছে। মাহতিম প্রথম প্রথম মানা করত। নিজে টাকা দিতে চাইত। তবে প্রিয়ন্তির যুক্তির কাছে বরাবরই হার মানত। তাই এখন থেকে দুজন যা বিল আসে তার অর্ধেক করে দেয়। দুটো ক্যাপাচিনো ২২০ টাকা হয়েছে। প্রিয়ন্তি ১১০ টাকা বের করে, মাহতিমও ওয়ালেট থেকে ১১০ টাকা বের করে। ওয়েটার এসে বিল নিয়ে যায়। প্রিয়ন্তি ব্যাগ কাধে তুলে ফাইল হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মাহতিম ওয়ালেট পকেটে পুড়ে এগিয়ে আসে প্রিয়ন্তির দিকে।
প্রিয়ন্তি বাস খুঁজছে। মাহতিম পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে গেমস খেলছে। খেলছে বললে ভুল হবে। খেলার ফাঁকে ফাঁকে প্রিয়ন্তিকে দেখছে। যার জন্যে বারবার খেলায় হেরে যাচ্ছে সে। তবে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। এখন আর মাহতিম প্রিয়ন্তির দিকে সরাসরি তাকায় না। তাদের বন্ধুত্বের খাতিরে। এই দুই মাসে প্রিয়ন্তির দিকে আড়চোখে তাকানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তার। প্রিয়ন্তি বাস পাচ্ছে না। মাহতিমকে খেলতে দেখে তার ভীষন বিরক্ত লাগছে। প্রিয়ন্তি বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে না থেকে চলে যাচ্ছ না কেন? ‘
মাহতিম গেমস খেলতে খেলতে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয়,
‘ বাইক আনিনি। ‘
‘ কেন? ‘
‘ নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিক করাতে দিয়েছি। ‘
সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বাইক মোটেও নষ্ট হয়নি। বরং বহাল তবিয়তেই আছে। কিন্তু প্রিয়ন্তির সঙ্গে রোদ গায়ে মেখে বাসের জন্যে অপেক্ষা করা, আবার বাসে একসঙ্গে বাসায় পৌঁছানো এই সুযোগগুলো মিস করতে চায়নি মাহতিম। বাইক আনলে প্রিয়ন্তি কখনোই মাহতিমের বাইকে চরবে না। মানা করবে দু হাত দিয়ে। তাই একসঙ্গে বাসে যাবার জন্যে এই মিথ্যা বাহানা বানাল। কিন্তু সরাসরি তো এই কথাগুলো প্রিয়ন্তিকে বলা যাবে না। খারাপ শুনাবে।
প্রিয়ন্তি গরম লাগছে ভীষন। গায়ের কামিজ ঘামে চুপচুপ। প্রিয়ন্তি ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিল। একটু পর বাস এল। প্রিয়ন্তি দৌঁড়ে গেল। মাহতিম ফোন পকেটে রেখে নিজেও এগিয়ে গেল। ঠেলাঠেলি করে প্রিয়ন্তি বাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। প্রিয়ন্তির গায়ের সঙ্গে যেন কোনো ছেলের গা না মেশে তাই মাহতিম প্রিয়ন্তির দেহের সামনে হাত দিয়ে আগলে প্রিয়ন্তিকে বাসে তুলে দিল। নিজেও এক ফাঁকে বাসে উঠে পরল। ঘামে ভেজা চুল ঝেড়ে মৃদু হেসে এগিয়ে এসে বসল প্রিয়ন্তির পাশে।
#চলবে